সাহাবায়ে কেরাম রা. আল্লাহ কর্তৃক নির্বাচিত মানুষ। যাঁদের সাথে পৃথিবীর অন্য কোনো মুসলামানের তুলনা চলে না। তাঁদের সমালোচকরা যিন্দিক ও ইসলামের জঘন্যতম শত্রু। কিন্তু হেযবুত তওহীদ ইসলামের নাম বলে তাঁদের শানে কত জঘন্য উক্তি পেশ করেছে দেখুন-
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ সাহাবায়ে কেরামের রা. উপরে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে, তার সারনির্জাস হলো,
১. সাহাবারা রা. নবীজির সা. সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলেন ও নবীজির সা. লক্ষ-উদ্দেশ্য ভুলে গিয়েছিলেন:
২. সাহাবারা রা. মোমেন থাকতে পারেননি।
৩. সাহাবায়ে কেরাম বেঈমান হয়ে গেছেন।
৪. সাহাবারা জাহিলিয়াত ফিরিয়ে এনেছিলেন।
৫. নবীজির সা. ইন্তকালের পর ৩০ বছরের মধ্যেই বিকৃতি ঢুকেছিলো।
৬. পৃথিবীর সকল অন্যায় ও রক্তপাতের জন্য সাহাবারা দায়ী।
৭. উসমান রা. এর পর বিভাজন তৈরি হয়েছিলো।
৮. সাহাবাদের রা. জন্য মানবজাতী মুসলমান হতে পারেনি।
৯. নবিজির সাথে সাহাবাদের রা. বেয়াদবী।
১০. ওহুদের যুদ্ধে সাহাবীরা নবীজির সা. আনুগত্য লংঘন করেছিলেন।
১১. খলিফাদের ভাতা নির্ধারণ ইসলামের বিকৃতির ফল।
১২. সাহাবারা মুর্খ ছিলেন।
১৩. মেরাজের ঘটনায় অনেক সাহাবীর রা. ঈমান নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
১৪. মাক্কী জিবনে সাহাবারা রা. কোন আমল পাননি:
১৫. সওয়াবের আশায় সাহাবারা রা. কোনো আমল করেননি।
১৬. সাহাবাদের প্রধান চরিত্র ছিলো ভয়ংকর, দুর্ধর্ষ ও যোদ্ধা।
১৭. নবীজি সা. কী সাহাবাদেরকে রা. শুধু যুদ্ধই শিখিয়েছিলেন।
১৮. সাহাবাদের লক্ষ্যই ছিলো দেশ দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা।
১৯. সাহাবাদের থেকেও একদল সাধারণ মুসলমানের মর্যাদা বেশি।
২০. মুয়াবিয়া রা: নিয়ে সমালোচনা।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত অভিযোগসমূহ যদি কোনো সাধারণ মুসলমান পড়ে, তাহলে সাহাবাদের রা. প্রতি তাদের কী জঘন্য বিশ্বাস তৈরি হবে না? তাহলে এসব অভিযোগের জবাব কী? অবশ্য এ ব্যাপারে লিখতে গেলে আলাদা একটি পুস্তক লেখা জরুরি। তবুও সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বিষয় নিন্মে তুলে ধরছি।
ইসলাম কী বলে?
হেযবুত তওহীদের সাহাবায়ে কেরামের রা. সমালোচনা সংক্রান্ত বিষয়ে বুঝতে সর্বপ্রথম জানতে হবে এ কথা যে, মূলত হেযবুত তওহীদ সাহাবায়ে কেরামকে রা. অধিকাংশ সময় সাহাবা না বলে উম্মতে মুহাম্মাদী বলে অবিহিত করে থাকে। কারণ তাদের কাছে সাহাবায়ে কেরামের রা. ছাড়া আর কেউ উম্মতে মুহাম্মাদী নন। তারা লিখেছে,
শেষ নবী যে জাতি গঠন করলেন, যার নাম উম্মতে মোহাম্মদী। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৪৭
যতদিন ওই দায়িত্বপূর্ণ করা না হবে ততদিন তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব অপূর্ণ, অসমাপ্ত থেকে যাবে। তাই তিনি এমন একটি জাতি সৃষ্টি করলেন পৃথিবী থেকে তাঁর চলে যাওয়ার পরও সে জাতি তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য তাঁরই মত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। এই জাতি হলো তাঁর উম্মাহ, উম্মতে মুহাম্মাদী -মোহাম্মাদের জাতি’। -আকিদা, পৃষ্ঠা. ১২
সুতরাং বুঝতে পারলাম, হেযবুত তওহীদের কাছে সাহাবায়ে কেরামই হলেন উম্মতে মুহাম্মাদী। কারণ হেযবুত তওহীদের আকীদা বা বিশ্বাস হলো, ‘নবীজির সা. ইন্তেকালের পর ৬/৭০ বছর পরই ইসলেম বিকৃত হয়ে গেছে, ফলে সকল মুসলমান ঈমানহারা হয়ে গেছেন। তারা লিখেছে,
‘৬০/৭০ বছর পর থেকেই জাতি আর জাতি হিসেবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী ছিল না’।
সূত্র: বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৫৮
সুতরাং প্রথমত বুঝতে পারলাম, হেযবুত তওহীদের কাছে সাহাবায়ে কেরামের রা. উপাধী হলো উম্মতে মুহাম্মাদী। অন্যভাবে বললে ‘উম্মতে মুহাম্মাদী মানেই সাহাবায়ে কেরাম রা.’। চলুন এই উম্মতে মুহাম্মাদী বা সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের দাবিগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
এক. সাহাবারা রা. কী বিশ্বাসঘাতক ছিলেন?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, সাহাবারা নবিজির সাঃ দেওয়া দায়িত্ব ভুলে গিয়েছিলেন এবং নবিজির সাঃ সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তারা লিখেছে,
অর্ধেক পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার পরপরই ঐ জাতি করলো সর্বনাশা কাজ। হঠাৎ তারা ভুলে গেল তাদের উপর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের (দ:) অর্পিত দায়িত্ব। তারা সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ ত্যাগ করল যে কাজ করার জন্য এই জাতিটিকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭৯
এরপর (অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর) ঘটল এক মহা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ঐ জাতি হঠাৎ তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভুলে গেল। ভুলে গেল তার জন্ম হয়েছে কেন, ভুলে গেল তাকে গঠন কেন করা হয়েছিল, ভুলে গেল আল্লাহ রাসুল স্বয়ং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা জাতিতে কেন পরিণত করেছিলেন। জাতি ভুলে গেল যে কাজের জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সেই কাজ ছেড়ে দেওয়া আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। কিন্তু জাতির লোকদের আকিদা অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে ধারণা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় জাতি তাই করল, আল্লাহ দীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জেহাদ অর্থাৎ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সংগ্রাম ত্যাগ করল এবং ত্যাগ করে অন্যান্য রাজা-বাদশারা যেমন রাজত্ব করে তেমনি শান শওকতের সঙ্গে তাদের মতই রাজত্ব করতে শুরু করল।এই সর্বনাশা কাজের অর্থ কি, পরিণতী কী তারা উপলব্ধি করতে পারলেন না। -ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃষ্ঠা. ৭-৮
দুই. সাহাবারা রা. মোমেন থাকতে পারেননি:
‘কাজেই এই জাতির পথভ্রষ্ট লোকেরা যখন নীতি হিসেবে জেহাদ ত্যাগ করলেন, তখন তারা বুঝলেন না যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দৃষ্টিতে আর তারা মোমেন রইলেন না’।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃষ্ঠা. ৮
তিন. সাহাবায়ে কেরাম বেঈমান হয়ে গেছেন:
দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বনবীর ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর ইবলিস এই উম্মাহর আকিদায় বিকৃতি ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হল। যার ফলে এই জাতি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ ও ঐ ৫ দফা কর্মসূচী দু’টোই ত্যাগ করে ইসলাম ও উম্মতে মোহাম্মদীর দু’টো থেকেই বহিষ্কৃত হয়ে গেল। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৪৮-৪৯
চার. সাহাবারা জাহিলিয়াত ফিরিয়ে এনেছিলেন।
‘আল্লাহর রাসুল বিদায় নেওয়ার কিছু দিন না যেতেই আরবরা পূর্বের সে জাহিলিয়াতের মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ফিরিয়ে নিয়ে এলো। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১২০
পাঁচ. নবীজির সা. ইন্তকালের পর ৩০ বছরের মধ্যেই বিকৃতি ঢুকেছিলো:
রাসুল চলে যাওয়ার পরে জাতির খলিফাগণ এ উম্মাহর হাল ধরলেন তখন তারাই হলেন জাতির এমাম। এই খেলাফতের ধারাবাহিকতার সূত্র কখনো ছিন্ন হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তাই হলো। ৩০ বছরের মধ্যে জাতির আকীদায় বিকৃতি প্রবেশ করায় ইসলামের প্রকৃত খেলাফত লুপ্ত হয়ে গেল। জন্ম হল রাজতন্ত্রের। এ জাতির নেতারা সাম্রাজ্য বিস্তার ও পাশবিক ভোগবিলাসে লিপ্ত হয়ে জাহিলিয়াতে রাজা-বাদশাদের মতো জীবন যাপন করতে লাগল। সেই থেকে গত ১৩০০ বছরে জাতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বহীন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৩৮
ছয়. পৃথিবীর সকল অন্যায় ও রক্তপাতের জন্য সাহাবারা দায়ী:
তখন যদি তারা না থামতেন তবে সমস্ত পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা হবে মানবজাতির জীবন থেকে সমস্ত অন্যায় অবিচার অশান্তি রক্তপাত বন্ধ হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তায় ভরপুর হয়ে যেতো। তাদের ওই থেমে যাওয়ার ফলে মানবজাতির মধ্যে যত অশান্তি, অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার জন্য দায়ী তারা যারা নবীর ঐ প্রকৃত সুন্নাহ পরিত্যাগ করেছিলেন। -আকিদা, পৃ. ১৯
সাত. সাহাবাদের রা. জন্য মানবজাতী মুসলমান হতে পারেনি!
শেষ নবীর সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন অর্থাৎ তার নবুয়াত সমস্ত পৃথিবী পরিব্যপ্ত। তার উম্মাহর ব্যর্থতার জন্য তাঁর নবুওয়াত সমস্ত মানবজাতিকে এর অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি। যদিও সেটাই ছিলো উম্মতে মোহাম্মদীর উপর অর্পিত সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব। -শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ৫৮
জবাব:
প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ সাহাবায়ে কেরামকে রা. নিয়ে উপরোক্ত ৭ টি অভিযোগ যে করেছে, তার মূল কারণ হিসাবে তারা দেখিয়েছেন সাহাবারা রা. নবীজির সা. শেখানো যুদ্ধ ছেড়ে দিয়েছিলেন। আসলে কী তাই? সাহাবারা রা. কী জিহাদ ছেড়ে দিয়েছিলেন? এ ব্যাপারে হাদিস শরীফ পড়লে এমন কোনো তথা প্রমাণ মিলবে না যে, সাহাবায়ে কেরাম রা. নবীজি সা. শেখানো জিহাদ ছেড়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো সুস্থ ও হক্বপন্থী আলেম বা ঐতিহাসিকগণ এমন অভিযোগ করেননি, বরং দ্বীনের জন্য যখন যেসব বিধান সাহাবাদের রা. সামনে এসেছে, তাঁরা তা সাথে সাথেই অকপটে আমল করে গেছেন এবং নবীজির সা. কোনো লক্ষ বা উদ্দেশ্য সাহাবায়ে কেরাম রা. ভোলেননি। এটা শুধু আমাদের বক্তব্য নয়, খোদ হেযবুত তওহীদের বই থেকেও প্রমাণ মিলবে। তারাই লিখেছে,
তার সৃষ্ট জাতি কিন্তু ভুলে গেলেন না যে তাদের নেতার দায়িত্ব শেষ হয়নি, তার উপর আল্লাহ দেয়া দায়িত্ব হচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতেই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃষ্ঠা. ১১৭
প্রমাণ হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. নবীজির সা. শেখানো লক্ষ্য বা উদ্দ্যশ্য ভোলেননি। সুতরাং সাহাবায়ে কেরামের রা. উপর আনিত অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। এমনকি তারা ‘জিহাদই নবীজির সা. সুন্নাত’ প্রমাণ করতে গিয়ে লিখে ফেলেছে,
‘স্ত্রী-পুত্র পরিবার ত্যাগ কোরে, বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কোরে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য কোরে, অভিযানে বের হোয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। এই হল তার উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী তার প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭৫
প্রতিটি সাহাবা তাদের পার্থিব সবকিছু কোরবান করে স্ত্রী-পুত্রকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়ে বছরের পর বছর আরব থেকে বহুদূরে অজানা-অচেনা দেশের সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৪৮
নবীজির স: ও উম্মত উদ্দেশ্য সাধনের নিবেদিতপ্রাণ সেনাপতি উকবা বিন নাফে রা: আটলান্টিক মহাসমুদ্রে ঘোড়া নামিয়ে দিলেন এবং যতদূর পর্যন্ত ঘোড়ার পায়ের নিচে মাটি পাওয়া গেল না ততদূর এগিয়ে গেলেন এবং তারপর আসমানের দিকে দুই হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! এই মহাসমুদ্র বাধা না দিলে আমরা তোমার রাস্তায় আরো সম্মুখে অগ্রসর হতাম। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৪৫
প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ সাহাবাদের রা. সম্পর্কে এ সকল প্রশংসাগুলো লিখেছে তাদের বিভিন্ন বিষয় প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু এগুলো লিখে তারা যে সাহাবায়ে কেরামের রা. উপর আনিত মিথ্যা অভিযোগগুলোর সমাধান নিজেরাই দিয়ে ফেলেছেন, তা কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারেননি। হ্যাঁ। এটাই হলো সাহাবাদের রা. উপর আল্লাহ বিশেষ রহমত। কারণ বাতিল অপশক্তির মুখ থেকেও আল্লাহ সাহাবাদের প্রশংসা বের করে দেন। এটাই কী তার জলন্ত উদহরণ নয়? সুতরাং প্রমাণ হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. নবীজির সা. শেখানো কোনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভোলেননি এবং প্রয়োজনের সময় জিহাদকেও ছেড়ে দেননি। অতএব এই মিথ্যা দাবি তুলো সাহাবায়ে কেরামকে রা. বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান ছিলেন, জাহালাত ফিরিয়ে আনেছিলেন, সাহাবাদের রা. জন্য সমস্ত মানবজাতি মুসলিম হতে পারেননি, পৃথিবীর সকল রক্তপাত ও অন্যায়ের জন্য সাহাবাদেরকে রা. দায়ী করা নিছক শয়তানী চেতনা ও দাজ্জালীয় সভ্যতা।
আট. উসমান রা. এর পর বিভাজন তৈরি হয়েছিলো?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো উসমান রা. এর সময়কালে সাহাবায়ে কেরামের কর্ম সম্পর্কে সমালোচনা করা। তারা লিখেছে,
উসমান রা: এর পর থেকে জাতির মধ্যে শুরু হোল দুঃখজনক বিভাজন যে ইতিহাস সকলেরই জানা। কিন্তু এটা ঘটা উচিত হয়নি। রসুলুল্লাহর আদর্শ ও শিক্ষা মোতাবেক উচিত ছিল, তাঁর নিজের হাতে গড়া একটি জাতি উম্মতে মোহাম্মাদী ঐক্যবদ্ধ হোয়ে সংগ্রামের (জেহাদ) মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীকে আল্লাহর সত্যদীনের অধীনে নিয়ে আসা, তাহোলে রসূলের উপর আল্লাহ দেওয়া দায়িত্ব পুর্ণ হোত। উম্মতে মোহাম্মাদী সৃষ্টির উদ্দেশ্য সার্থক হোত। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০০
ইসলাম কী বলে?
উক্ত বক্তব্য দিয়ে হেযবুত তওহীদ মূলত হযরত উসমান রা. এর পরবর্তি জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফিনকে উদ্দ্যেশ্য করে মুসলমানদের মাঝে বিভাজনের টোটাল দায়টা চাপানোর চেষ্টা করেছে সাহাবাদের রা. উপর। অথচ এই শিক্ষিত অসাধুরা এতটুকু পড়াশোনা করেনি যে সেই যুদ্ধের পেছনে মূল ভূমিকা ছিলো ইহুদীদের সাবায়ী চক্রের। উসমান রা. এর বিরুদ্ধে জনগনকে ক্ষিপ্ত করা বা হযরত উসমানকে রা. শহীদ করা থেকে নিয়ে সমঝোতার সকল রাস্তায় ওৎ পেতে বসে থাকতো এই ইহুদীবাদী চক্রটা। যখনি বিবদমান দুই দলের মাঝে সন্ধি চুক্তির কোন কথা চলতো। তখনি মুনাফিক সাবায়ীরা রাতের আঁধারে পরস্পরের উপর হামলা করতো। আর হযরত আলী রাঃ কে বুঝাতো যে, আয়শা রাঃ এবং মুয়াবিয়া রাঃ এর বাহিনী হামলা করেছে। আর আয়শা ও মুয়াবিয়া রাঃ কে বুঝাতো যে, ওয়াদা ভঙ্গ করে আলী রাঃ এর বাহিনী হামলা করেছে। এমনভাবে বিষয়গুলো ভজঘট পাকিয়ে যায় যে, তাহকীক করার ফুরসতও পাওয়া যায় না। বরং যুদ্ধ বেঁধে যায়। এভাবেই সাবায়ীরা মুসলমানদের পরস্পর বিবাদে লিপ্ত রেখে শক্তি ক্ষয় করে নিজেদের উসমান হত্যার কিসাস থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
উক্ত বিষয়ে লিখতে গেলে অনেক বড় আর্টিকেল লিখতে হবে। তবে সংক্ষেপে এতটুকু জেনে নেওয়া উচিৎ ‘উক্ত বিষয়টার জন্য টোটালটাই দায়ী ইহুদীরা। সাহাবাদের রা. উভয়গ্রুপ ছিলেন সত্যের উপর অবিচল এবং তাঁরা উভয়ে দ্বীনের ফিকিরেই যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু যা ঘটার ঘটেছে সাবায়ী চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে। বিস্তারিত জানতে ইযালাতুল খাফা খ. ৪ পৃ. ৪২৮ মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ, খ. ৪ পৃ. ৭৫ তারীখে তাবারী, উর্দু খ. ২ পৃ. ৪৭-৪৮ ইত্যাদী কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে।
সুতরাং ইহুদিদের অপরাধ সাহাবায়ে কেরামের রা. উপর চাপিয়ে দেওয়া কতবড় অন্যায় ভেবে দেখেছেন কী? হেযবুত তওহীদ সেই অন্যায় চরমভাবে করেছে।
নয়. নবিজির সাঃ ঘরে সাহাবারা পাথর ছুড়েছেন?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. একবার তারাবীহের সালাতের জন্য নবীজি সা. ঘর থেকে বের না হওয়ায় ঘরের দিকে পাথর ছুঁড়েছিলেন। তারা লিখেছে,
রমজানে একবার নবীজি (তারাবিহের) নামাজ পড়লেন কিন্তু পরদিন আর আসলেন না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আসহাবগণ উচ্চস্বরে রসুলুল্লাহকে ডাকতে থাকেন এবং তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঘরের দরজায় ছোট ছোট পাথর ছুড়ে মারতে থাকেন। তাদের আচেণে রাগান্বিত হয়ে রসুলুল্লাহ বেরিয়ে এসে বলেন তোমরা এখনও আমাকে জোর করছ? আমার আশংকা তোমাদের জন্য আল্লাহ না ফরদ করে দেন। -সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ১৬
ইসলাম কী বলে?
কী হাস্যকর দাবি! কতবড় মিথ্যাচারী! কত বড় সাহাবা বিদ্বেষী হলে এমন ডাহা মিথ্যাচার করে সাহাবায়ে কেরামের রা. সমালোচনা করা যেতে পারে। চলুন আগে হাদিসটি দেখে নেওয়া যাক। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَصَلَّى بِصَلاَتِهِ نَاسٌ ثُمَّ صَلَّى مِنَ الْقَابِلَةِ فَكَثُرَ النَّاسُ ثُمَّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ “ قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ فَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلاَّ أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ قَالَ وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ .
এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তার সাথে কিছু সংখ্যক লোকও সালাত আদায় করল। পরের রাতেও তিনি মসজিদে সালাত আদায় করলেন। লোকজন সংখ্যায় অনেক বেশী হয়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতেও অনেক লোক এসে একত্ৰ হ’ল। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর তাদের সাথে যোগ দিলেন না। সকাল বেলা তিনি সবাইকে বললেনঃ (গত রাতে) তোমরা যা করেছ তা আমি দেখেছি। তবে শুধু এ আশঙ্কায় আমি তোমাদের সাথে যোগদান করিনি যে, তোমাদের ওপর তা ফারয (ফরয) করে দেয়া হতে পারে। তিনি (আয়িশাহ) বলেছেনঃ ঘটনাটি রমযান মাসে সংঘটিত হয়েছে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬১
প্রিয় পাঠক, উক্ত হাদিসে কোথায় আছে যে, সাহাবায়ে কেরাম রা. নবীজির সা. ঘরের দিকে পাথর মেরেছেন? এতবড় ডাহা মিথ্যাচারে শয়তানও কী লজ্জা পায় না? অথচ নবীজির সা. শানে যেন বিন্দু পরিমান বেয়াদবি না হয়, সেজন্য মহান আল্লাহ পাক আয়াত নাযিল করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
হে মুমিনগণ! নিজের আওয়াজকে নবীর আওয়াজ থেকে উঁচু করো না এবং তাঁর সাথে কথা বলতে গিয়ে এমন জোরে বলো না, যেমন তোমরা একে অন্যের সাথে জোরে বলে থাক, ফলে তোমাদের কর্ম বাতিল হয়ে যায়, তোমাদের অজ্ঞাতসারে। [সূরা হুজুরাত : ২]
এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরামের রা. অবস্থা কেমন ছিলো, তা নিন্মোক্ত দু’টি হাদিস থেকে জানা যায়।
হযরত আনাস ইবনু মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم افْتَقَدَ ثَابِتَ بْنَ قَيْسٍ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَنَا أَعْلَمُ لَكَ عِلْمَهُ فَأَتَاهُ فَوَجَدَهُ جَالِسًا فِيْ بَيْتِهِ مُنَكِّسًا رَأْسَهُ فَقَالَ لَهُ مَا شَأْنُكَ فَقَالَ شَرٌّ كَانَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَأَتَى الرَّجُلُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ قَالَ كَذَا وَكَذَا فَقَالَ مُوْسَى فَرَجَعَ إِلَيْهِ الْمَرَّةَ الْآخِرَةَ بِبِشَارَةٍ عَظِيْمَةٍ فَقَالَ اذْهَبْ إِلَيْهِ فَقُلْ لَهُ إِنَّكَ لَسْتَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَلَكِنَّكَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ
একদা নবী সাঃ সাবিত ইবনু কায়স রা. কে খুঁজে পেলেন না। একজন সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছে তাঁর সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর লোকটি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তাঁর ঘরে মাথা নীচু করে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কী অবস্থা? তিনি বললেন, খারাপ। কারণ এই (অধম) তার আওয়াজ নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আওয়াজের চেয়ে উঁচু করে কথা বলত। ফলে, তার ’আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তারপর লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে এসে খবর দিলেন যে, তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা বলেন, এরপর লোকটি এক মহাসুসংবাদ নিয়ে তাঁর কাছে ফিরে গেলেন (এবং বললেন) নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, তুমি যাও এবং তাকে বল, তুমি জাহান্নামী নও, বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৪৮৪৬
হযরত সায়িব ইবনু ইয়াযীদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كُنْتُ قَائِمًا فِي الْمَسْجِدِ فَحَصَبَنِي رَجُلٌ فَنَظَرْتُ فَإِذَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فَقَالَ اذْهَبْ فَأْتِنِي بِهَذَيْنِ فَجِئْتُهُ بِهِمَا قَالَ مَنْ أَنْتُمَا أَوْ مِنْ أَيْنَ أَنْتُمَا قَالاَ مِنْ أَهْلِ الطَّائِفِ قَالَ لَوْ كُنْتُمَا مِنْ أَهْلِ الْبَلَدِ لَأَوْجَعْتُكُمَا تَرْفَعَانِ أَصْوَاتَكُمَا فِي مَسْجِدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
আমি মসজিদে নাববীতে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমার দিকে একটা কাঁকর নিক্ষেপ করলো। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব রা.। তিনি বললেন, যাও, এ দু’জনকে আমার নিকট নিয়ে এস। আমি তাদের নিয়ে তাঁর নিকট এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কারা? অথবা তিনি বললেনঃ তোমরা কোন্ স্থানের লোক? তারা বললোঃ আমরা তায়েফের অধিবাসী। তিনি বললেনঃ তোমরা যদি মদিনার লোক হতে, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতাম। তোমরা দু’জনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলছো। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৪৭০
সুতরাং বুঝা গেলো, নবীজির সা. সামনে উচ্চ গলায় কথা বলাটাও সাহাবাদের রা. কাছে বড় অপরাধ হিসাবে পরিগনিত ছিলো। সেই ‘সাহাবারা রা. নবীজির সা. ঘরে পাথর ছুড়েছেন’ এমন ডাহা মিথ্যাচারীদের উপর আল্লাহর লা’নত।
দশ. ওহুদের যুদ্ধে সাহাবীরা নবীজির সা. আনুগত্য লংঘন করেছিলেন:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের উপর বিপর্যয় আসার মূল কারণ ছিলো নবিজির সাঃ অবাধ্যতা। দেখুন তারা কী বলে-
ওহুদের যুদ্ধে রসূলাল্লাহর আনুগত্য লংঘন করার কারণে মুসলিম বাহিনীর উপর সাংঘাতিক বিপর্যয় নেমে আসে। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ২০
অর্থাৎ তারা বলতে চায়, উহুদ যুদ্ধে যে সাময়ীক বিপর্যয় এসেছিলো, সেটা শুধু মাত্র সাহাবায়ে কেরাম রা. নবীজির সা. আনুগত্যতা লংঘন করার কারণেই।
ইসলাম কী বলে?
এ বিষয়ে জানতে আগে সংক্ষিপ্তসারে উহুদ যুদ্ধের ইতিহাস দেখা যাক-
বদরে পরাজিত হওয়ার সংবাদ যখন মক্কায় পৌঁছল তখন ঘরে ঘরে শুরু হল শোকের মাতম। যাদের আত্মীয়-স্বজন মারা গেছে তারা সকলে একত্র হয়ে আবু সুফিয়ানের নিকট এল। তারও নিকটজন বদরে মারা গিয়েছিল। তাছাড়া ঐ সময় তিনি ছিলেন কুরাইশের সরদার। তাই মুসলমানদের প্রতিশোধ নেওয়া ছিল তার লক্ষ্য। তার আদেশে সকল কুরাইশের নিকট থেকে চাঁদা তোলা হল এবং এক মহাযুদ্ধের প্রস্ত্ততি শুরু হল। পরের বছর ৩ হাজার সৈন্য মদীনা অভিমুখে রওনা হল। এ বাহিনী উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছে তাঁবু স্থাপন করল।
রাসুলুল্লাহ সাঃ বিষয়টি জানতে পেরে সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন এবং এক হাজার সাথী নিয়ে মোকাবেলার জন্য বের হলেন। পথে মুনাফিকদের এক বিরাট অংশ দলত্যাগ করল। নবীজীর সাথে তখন মাত্র ৭০০জন রয়ে গেলেন। লড়াইয়ের সময় ঘনিয়ে এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন দিকে-যেদিক দিয়ে কাফেরদের আক্রমণের প্রবল আশঙ্কা ছিল-পাহারার জন্য আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর নেতৃত্বে একটি দলকে নিয়োজিত করলেন। তাদেরকে বললেন, তোমরা এখানেই অবস্থান করবে। আমরা পরাজিত হই কিংবা জয়লাভ করি কোনো অবস্থাতেই তোমরা নিজেদের স্থান ত্যাগ করবে না।
মুসলমানগণ অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেন। কাফেররা পিছু হটল। এ অবস্থা দেখে পাহাড়ের পিছনের দিককার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত তীরন্দাজ দলটি গনীমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তাদের স্থান ফাঁকা দেখে খালিদ বিন ওলিদ, যিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি, সেদিক থেকে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে বসল। মুসলমানগণ গনীমত সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তাদের প্রতিহত করতে পারলেন না। ফলে অনেক মুসলমান শাহাদাত বরণ করলেন। এদিকে এই সংবাদও ছড়িয়ে পড়ল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহীদ হয়েছেন। এ সংবাদ শুনে মুসলমানদের মাঝে হতাশা ছড়িয়ে পড়ল এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে গেল। তবে অনেকের বীরত্ব ও সাহস আরো বেড়ে গেল। তারা সমানভাবেই যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এক সাহাবীর দৃষ্টি পড়ল। তিনি মুসলমানদের ডেকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে আছেন। এই ঘোষণা শুনে মুসলমানগণ প্রাণ ফিরে পেলেন। তারা সকলেই রাসূলের চারপাশে সমবেত হলেন। কাফেররা এ অবস্থা দেখে চতুর্দিক থেকে নবীজীকে ঘিরে ফেলল। কিন্তু মুসলমানগণ নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাফিরদের প্রতিহত করলেন। হযরত আবু দুজানা আনসারী রা. কাফিরদের তীরবৃষ্টির সামনে নিজের শরীর পেতে দিলেন। তাঁর শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গেল। হযরত তালহা রা. শত্রুর তলোয়ারের আঘাত নিজ হাত দিয়ে প্রতিহত করতে লাগলেন। এতে তাঁর হাত সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেল। এভাবে সাহাবীগণ নিজেদের জীবন দিয়ে নবীজীকে রক্ষা করতে লাগলেন। এরপরও নবীজী আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং জীবন উৎসর্গী সাহাবীদের সাথে পাহাড়ের চূড়ায় আরোহন করেন।
এ বিষয়ে সহিহ বুখারীতে এসেছে,
جَعَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى الرَّجَّالَةِ يَوْمَ أُحُدٍ وَكَانُوْا خَمْسِيْنَ رَجُلًا عَبْدَ اللهِ بْنَ جُبَيْرٍ فَقَالَ إِنْ رَأَيْتُمُوْنَا تَخْطَفُنَا الطَّيْرُ فَلَا تَبْرَحُوْا مَكَانَكُمْ هَذَا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ وَإِنْ رَأَيْتُمُوْنَا هَزَمْنَا الْقَوْمَ وَأَوْطَأْنَاهُمْ فَلَا تَبْرَحُوْا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ فَهَزَمُوْهُمْ قَالَ فَأَنَا وَاللهِ رَأَيْتُ النِّسَاءَ يَشْتَدِدْنَ قَدْ بَدَتْ خَلَاخِلُهُنَّ وَأَسْوُقُهُنَّ رَافِعَاتٍ ثِيَابَهُنَّ فَقَالَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ بْنِ جُبَيْرٍ الْغَنِيْمَةَ أَيْ قَوْمِ الْغَنِيْمَةَ ظَهَرَ أَصْحَابُكُمْ فَمَا تَنْتَظِرُوْنَ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ جُبَيْرٍ أَنَسِيْتُمْ مَا قَالَ لَكُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالُوْا وَاللهِ لَنَأْتِيَنَّ النَّاسَ فَلَنُصِيْبَنَّ مِنْ الْغَنِيْمَةِ فَلَمَّا أَتَوْهُمْ صُرِفَتْ وُجُوْهُهُمْ فَأَقْبَلُوْا مُنْهَزِمِيْنَ فَذَاكَ إِذْ يَدْعُوْهُمْ الرَّسُوْلُ فِيْ أُخْرَاهُمْ فَلَمْ يَبْقَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم غَيْرُ اثْنَيْ عَشَرَ رَجُلًا فَأَصَابُوْا مِنَّا سَبْعِيْنَ وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ أَصَابُوْا مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ يَوْمَ بَدْرٍ أَرْبَعِيْنَ وَمِائَةً سَبْعِيْنَ أَسِيْرًا وَسَبْعِيْنَ قَتِيْلًا فَقَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ أَفِي الْقَوْمِ مُحَمَّدٌ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَنَهَاهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُجِيْبُوْهُ ثُمَّ قَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ أَبِيْ قُحَافَةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ الْخَطَّابِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ أَمَّا هَؤُلَاءِ فَقَدْ قُتِلُوْا فَمَا مَلَكَ عُمَرُ نَفْسَهُ فَقَالَ كَذَبْتَ وَاللهِ يَا عَدُوَّ اللهِ إِنَّ الَّذِيْنَ عَدَدْتَ لَاحْيَاءٌ كُلُّهُمْ وَقَدْ بَقِيَ لَكَ مَا يَسُوءُكَ قَالَ يَوْمٌ بِيَوْمِ بَدْرٍ وَالْحَرْبُ سِجَالٌ إِنَّكُمْ سَتَجِدُوْنَ فِي الْقَوْمِ مُثْلَةً لَمْ آمُرْ بِهَا وَلَمْ تَسُؤْنِيْ ثُمَّ أَخَذَ يَرْتَجِزُ أُعْـلُ هُـبَـلْ أُعْـلُ هُـبَـلْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَلَا تُجِيْبُوْا لَهُ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوْا اللهُ أَعْلَى وَأَجَلُّ قَالَ إِنَّ لَنَا الْعُزَّى وَلَا عُزَّى لَكُمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَلَا تُجِيْبُوْا لَهُ قَالَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوْا اللهُ مَوْلَانَا وَلَا مَوْلَى لَكُمْ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের দিন ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবাইর রা. কে পঞ্চাশ জন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিয়োগ করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদেরকে পাখীরা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি তোমরা আমার পক্ষ হতে সংবাদ পাওয়া ছাড়া স্বস্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করবে না। অতঃপর মুসলিমগণ কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারাআ রা. বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিকদের নারীদেরকে দেখতে পেলাম তারা নিজ বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তখন ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবাইর রা. এর সহযোগীরা বলতে লাগলেন, ‘লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কেন?’ তখন ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবাইর রা. বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছো?’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমরা লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গানীমাতের মাল সংগ্রহে যোগ দিব।’
অতঃপর যখন তাঁরা স্বস্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন তাঁদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তাঁরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকেন। এটা সে সময় যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে পেছন থেকে ডাকছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বার জন লোক ব্যতীত অপর কেউই বাকী ছিল না। কাফিররা এ সুযোগে মুসলিমদের সত্তর ব্যক্তিকে শহীদ করে ফেলে। এর পূর্বে বাদার যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাঁর সাথীগণ মুশরিকদের সত্তরজনকে বন্দী ও সত্তরজনকে নিহত করেন। এ সময় আবূ সুফ্ইয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মাদ জীবিত আছে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল- ‘লোকদের মধ্যে কি আবূ কুহাফার পুত্র জীবিত আছে?’ পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র জীবিত আছে?’ অতঃপর সে নিজ লোকদের নিকট গিয়ে বলল, ‘এরা সবাই নিহত হয়েছে।’ এ সময় ‘উমার (রাঃ) ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওরে আল্লাহর শত্রু! আল্লাহর শপথ, তুই মিথ্যা বলছিস। যাঁদের তুমি নাম উচ্চারণ করছিস তাঁরা সবাই জীবিত আছেন। তোদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।’
আবূ সুফ্ইয়ান বলল, ‘আজ বাদারের দিনের প্রতিশোধ। যুদ্ধ তো বালতির মত। তোমরা তোমাদের লোকদের মধ্যে নাক-কান কাটা দেখবে, আমি এর আদেশ দেইনি কিন্তু তা আমি পছন্দও করিনি।’ অতঃপর বলতে লাগল, ‘হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক। হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক।’ তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা এর উত্তর দিবে না?’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কী বলব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে মর্যাদাবান, তিনিই মহা মহিমান্বিত।’ আবূ সুফ্ইয়ান বলল, আমাদের জন্য উয্যা রয়েছে, তোমাদের উয্যা নেই।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা কি তার উত্তর দিবে না?’ বারাআ (রাঃ) বলেন, ‘সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কী বলব?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ আমাদের সহায়তাকারী বন্ধু, তোমাদের কোন সহায়তাকারী বন্ধু নেই। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩০৩৯
উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝতে পারলাম, মূলত উহুদ যুদ্ধের সময় কতিপয় সাহাবাগণের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ বুঝতে ভুল হয়েছিলো। ফলে কিছুটা সময়ের জন্য মুসলমানদের অবস্থা কঠিন হয়ে যায়। অবশ্য পরবর্তীতের সাহাবায়ে কেরাম রা. সঠিকটা বুঝতে পেরে আবার ঘুরে দাঁড়ালে মুসলমানদের বিজয় হয় এবং এর উপর আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাজিল করে দিয়ে সেসব সাহাবাগণকে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
উভয় বাহিনীর পারস্পরিক সংঘর্ষের দিন তোমাদের মধ্য হতে যারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল, প্রকৃতপক্ষে শয়তান তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের কারণে পদস্খলনে লিপ্ত করেছিল। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম সহিষ্ণু। [সুরা আলে ইমরান : ১৫৫]
সুতরাং বুঝা গেলো, যেসকল সাহাবাদের ভুল বুঝাবুঝির কারণে যেসব বিষয়ের অবতারণা হয়েছিলো, সেসব তাদেরকে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে উক্ত সাহাবাগণকে দোষারোপ করা কুরআনের বিরোধীতা ছাড়া কিছু নয়। এমন সুষ্পষ্ট ক্ষমার আয়াত নাজিলের পরও উক্ত সাহাবাগণকে নিয়ে বিরোপ মন্তব্যকারীরা বক্র হৃদয়ের অধিকারী ছাড়া আর কী হতে পারে?
এগারো. সাহাবীদের ভাতা নির্ধারণ ইসলামের বিকৃতির ফল:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
শিক্ষক সাহাবীদের জন্য বায়তুল মাল থেকে নির্দিষ্ট পরিমান ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবি হলো,
এটা ইতিহাস যে ইসলামের প্রাথমিক যুগে শিক্ষকগণ বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করতেন। পরবর্তীতে ইসলাম কিছুটা বিকৃত হয়ে গেলে শিক্ষকগণকে তাদের সাংসারিক খরচ বাবদ বায়তুল মাল থেকে ভাতা দেওয়া হতো। -শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৫-৬
ইসলাম কী বলে?
এ সম্পর্কে অত্র কিতাবের ‘দীনের বিনিময় গ্রহণ করা হারাম পর্বে’ এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেখানে প্রমাণ করেছি যে, রাষ্ট্রীয় কাজ করিয়ে অর্থ প্রদান খোদ নবিজি সা. করেছেন, সাহাবায়ে কেরামও রা. করেছেন। সুতরাং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে সাহাবায়ে কেরামকে রা. সমালোচিত করার প্রচেষ্টা নিছক সাহাবাদের প্রতি ও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী আচরণ।
বারো. সাহাবারা মুর্খ ছিলেন:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের আরেকটা চরম ধৃষ্টতা হলো, ‘সাহাবায়ে কেরামকে রা. মূর্খ প্রমাণ করার ব্যার্থ প্রচেষ্টা। তারা সাহাবাদের রা. শানে লিখেছে,
সাহাবীদের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ। শিক্ষিত ছিলেন ৪০ জন। -ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ১৩
মহানবীর লেখাপড়া না জানা প্রায় নিরক্ষর একটি জাতী। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৩১
উক্ত বক্তব্য দিয়ে তারা জাতিকে সাহাবায়ে কেরাম রা. সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা দিতে চেয়েছে।
ইসলাম কী বলে?
আল্লাহ পাক সাহাবাদের উপর এমনভাবে রহম করেছেন যে, খোদ হেযবুত তওহীদের জবান থেকেই আল্লাহ তাঁদের শিক্ষা ও যোগ্যতার প্রমাণ বের করেছেন। নিন্মে দেখুন, তারা ধর্মের বিনিময় নেওয়ার বিষয়ে আলেম-উলামার সমালোচনা লিখতে গিয়ে লিখে ফেলেছে,
সাহাবারা নক্ষত্র সদৃশ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। ইসলাম সম্পর্কে তাদের থেকে কারও বেশি জানা কি সম্ভব? নিশ্চয়ই না। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৮
এ ব্যাপারে অগুনতি হাদিস উল্লেখ করা যায়, যাতে সংশয়ের কোন অবকাশ থাকে না যে, মহানবী জানতেন যে তিনি তার আসহাবদের প্রকৃত দীন শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১৮
সেই আসহাব যারা আল্লাহর রাসূলের পদতলে বসে ইসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, এর লক্ষ্য কি, এর সামরিক নীতি কি, এসব শিক্ষা করেছিলেন তারা ঠিক? নাকি কয়েকশ বছর পর যখন ইসলাম বিকৃত বিপরীত হয়ে পরিণামে শত্রুর গোলামে পরিণত তখনকার মানুষের অভিমত ঠিক? -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১২৮
প্রকৃত ইসলাম কি তা ঐ আসহাবদের চেয়ে বেশি কেউ জানতে বুঝতে পারতে পারে না, তা অসম্ভব। কারণ তারা আল্লাহর রসূলের সঙ্গে সর্বদা থেকে তার সঙ্গে অবিরত সংগ্রাম করে তার প্রতি সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে যে প্রকৃত শিক্ষা তার কাছ থেকে লাভ করেছেন, সে শিক্ষা পরবর্তীতে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১৮
প্রিয় পাঠক, সাহাবাদের রা. যোগ্যতা কেমন ছিলো, তা খোদ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত হলো। সুতরাং অভিযোগের জবাব যেহেতু তাদের বই থেকেই প্রমাণিত হলো, সেহেতু নতুন করে আমার আর কোনো প্রমাণ পেশ করতে হবে বলে প্রয়োজন মনে করলাম না। সুতরাং বুঝা গেলো, মাত্র ৪০ জন্য সাহাবা রা. শিক্ষিত ছিলেন, আর সবাই মুর্খ ছিলেন বিষয়টি নিতান্তই হেযবুত তওহীদের মূর্খতাসূলভ দাবি। মিথ্যুকদের উপর আল্লাহর লা’নত।
উপরন্তু যাঁদের বর্ণিত হাদিস ও যাঁদের আমল পড়ে আমরা আলেম হই, এমনকি হেযবুত তওহীদও দুকলম লিখতে পারে যাঁদের অবদানে সেই সাহাবাদেরকে অশিক্ষিত প্রমাণ করার হীন প্রচেষ্টা নিতান্তই হাস্যকর ব্যাপার।
তেরো. মেরাজের ঘটনায় সাহাবাদের ঈমান নষ্ট হয়েছিলো?
নবীজির সা. মোজেজার মধ্যে অন্যতম মোজেজা হলো, মি’রাজ। একই রজনীতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, আবার মসজিদে আকসা থেকে আরশে আজীম পর্যন্ত ভ্রমণ করে আসা।
হেযবুত তওহীদ কী বলে.
এ ঘটনার ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা পন্নী সাহেবের বক্তব্য হলো-
মেরাজের এই ঘটনা মো’মেনদের জন্য ছিল আল্লাহর পরীক্ষা-স্বরূপ।অনেক সাহাবী এই ঘটনা শুনে ঈমান হারিয়ে ফেলেছেন,অনেকে সন্দেহে পতিত হোয়েছেন। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৩৫/৩৬
আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সেদিন এক আবু বকর ছাড়া আর কেউ ছিল না যার মনে মেরাজের কথা শুনে সন্দেহ আসে নি। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৭৮
এমামুযযামানের নিজস্ব অভিমত হোচ্ছে, সেদিন আবু বকর (রা:) ছাড়া সম্ভবত আর কেউ ছিল না যারনে মে’রাজের কথা শুনে সন্দেহের ছায়াপাতও হয়নি। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৩৬
অর্থাৎ পন্নী সাহেবের দাবি হলো, মি’রাজের ঘটনায় অনেক সাহাবীর ঈমান চলে গিয়েছিলো এবং আবু বকর রা. ছাড়া সবার ভেতরে সন্দেহ ঢুকেছিলো।
ইসলাম কী বলে?
মি’রাজের ঘটনায় কোনো সাহাবী মুরতাদ হননি। এটাই সহিহ ও বিশুদ্ধ মত। যদিও হেযবুত তওহীদ একটি হাদিস নিয়ে দলীল পেশ করতে পারে। এজন্য হাদিসটি নিন্মে উল্লেখ্য করছি এবং তার জবাব কী সেটাও নিন্মে উল্লেখ্য করবো। ইনশাআল্লাহ। হাদিসটি হলো,
حدثنا محمد بن كثير الصنعاني، عن معمر بن راشد، عن ابن شهاب الزهري، عن عروة، عن عائشة قالت: لمّا أسري بالنبي صلى الله عليه وسلم إلى المسجد الأقصى، أصبح يتحدث الناس بذلك، فارتدّ ناس ممن كانوا آمنوا به وصدّقوه
অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সানআনী মা’মার ইবনে রাশেদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইবনে শিহাব যুহরী থেকে, তিনি উরওয়া থেকে তিনি আম্মাজান হযরত আয়েশা রা থেকে বর্ণনা করে বলেন, নবীজিকে সা. যেদিন (মি’রাজের রাতে) মসজিদে আকসায় নেওয়া হলো, সেদিন সকালে লোকজনও এ প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলেন এবং কিছু লোক মুরতাদ হয়ে গেলো, যারা নবীজির সা. উপর ঈমান এনেছিলো এবং নবীজিকে সা. সত্যায়িত করেছিলো। -মুসতাদরাকে হাকেম, খ. ৩ পৃ. ৬২-৬৩
উক্ত হাদিসটি যদিও ইমাম হাকেম রহি. তাঁর মুসতাদরাকে এনেছেন, কিন্তু শাইখাইন রহি. এমন সনদে কোনো হাদিস বর্ণনা করেননি, সুতরাং হাদিসটি সহিহ নয়, বরং হাদিসটি মুনকার। কারণ উক্ত হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সান’আনী থেকে। তিনি দূর্বল রাবী। শুধু তাই নয়, বরং মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সান’আনী যখন মা’মার সূত্রে কোনো রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন, তখন সেটা মুনকার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহি. এর মত উল্লেখ্য করা হলো-
قال عبد الله بن الإمام أحمد ذكر أبي محمد بن كثير فضعّفه جداً وضعّف حديثه عن معمر جداً وقال هو منكر الحديث
আব্দুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমাদ রহি. বলেন, আমার বাবার (আহমাদ ইবনে হাম্বল রহি.) সামনে মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সানআনীর প্রসঙ্গে কথা উঠলে তিনি তাকে খুবই দূর্বল বলে অভিহিত করেন এবং মা’মার সূত্রে তার বর্ণিত হাদিসকে আরও দূর্বল বলেন এবং তিনি বলেন, সে (মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সানআনী) তো মুনকারুল হাদিস। -তাহযীবুল কামাল, খ. ২৬ পৃ. ৩৩১
উল্লেখ্য মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনাটি মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সান’আনী বর্ণনা করেছেন মা’মার সূত্রে। সুতরাং উপরোক্ত হাদিসটি দিয়ে এটা বলার কোনো সুযোগ রইলো না যে, সাহাবায়ে কেরামের একটা অংশ মি’রাজের ঘটনায় মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন।
পাশাপাশি আরও যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেসব হাদিস থেকে এ কথা প্রমাণিত হবে না যে কোনো সাহাবী মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন, বরং সকল বর্ণনা থেকে কাফেররা তাদের কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন বলেই প্রমাণিত হয়। উপরন্তু মি’রাজের আগ পর্যন্ত যেসব সাহাবারা রা. ঈমান আনয়ন করেছেন, তাঁদের নাম ও জীবনী ইসলামী ইতিহাসের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু এমন কোনো সাহাবীর নাম কী হেযবুত তওহীদ উল্লেখ্য করতে পারবে যে অমুক সাহাবী মি’রাজের ঘটনায় মুরতাদ হয়েছিলেন বা সন্দেহ পোষণ করেছিলেন? নিশ্চয় তারা পারবে না।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব আরও বলেছেন,
আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সেদিন এক আবু বকর ছাড়া আর কেউ ছিল না যার মনে মেরাজের কথা শুনে সন্দেহ আসে নি। -আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৭৮
উক্ত কথাটি যে ডাহা মিথ্যাচার তা বলার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ সে সময় আবু বকর রা. ছাড়াও আম্মাজান খাদিজা রা. তখনও জিবিত ছিলেন। যিনি সর্বপ্রথম নবীজির সা. নবুওয়াতের বিষয়ে অবগত হয়ে মুসলমান হন, তিনিও কী সন্দেহ করতে পারেন? এটা কোনো সুস্থ মানুষের বিশ্বাস হতে পারে? পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাহাবী জিবিত ছিলেন, যাঁদের কারও ব্যাপারে এমন মন্তব্য পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেউ করেনি। কিন্ত পন্নী এই ডাহা মিথ্যাচার করে সাহাবাদের রা. ঈমানের প্রতি এমন ধারণা জনমনে সৃষ্টি করতে কেন চেয়েছেন, সেটাই হলো ভাবার বিষয়। আশা করি সচেতন মহল সেটা বুঝতে পেরেছেন।
চৌদ্দ. মাক্কী জিবনে সাহাবারা রা. কোন আমল পাননি:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো,
মক্কী জীবনে যেসব সাহাবী ইন্তেকাল করেন তারা ইসলাম বলতে কি পেয়েছিলেন? তারা নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত ঈদ কোরবানি কিছুই পেয়েছিলেন কি? তারা পেয়েছেন শুধুমাত্র তাওহিদ। -তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ১০
অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. মাক্কী জিবনে শুধু মাত্র তাওহীদ পেয়েছিলেন, অন্য কোনো আমল পাননি।
ইসলাম কী বলে?
আসতাগফিরুল্লাহ! কতবড় জাহালাত! কারণ মক্কী জিবনে নামাজ ফরজ করা হয়। অথচ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মক্কী জিবনে সাহাবারা নামাজও পাননি। অথচ নবুওয়াতপ্রাপ্তির পঞ্চম বছর মি’রাজ হয়। মি’রাজেই তিনি ফরজ নামাযের নির্দেশ পান। এর পর আমৃত্যু নবিজি সাঃ নামায আদায় করেছেন। সেই হিশাবে নবিজি সাঃ ১৮ বছর নামায পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। অবশ্য মি’রাজের পূর্বেও নবিজি সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রা. নামায আদায় করতেন। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় মি’রাজের রজনীতে। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন,
فُرِضتِ الصَّلاةُ على النَّبيِّ ﷺ بمَكَّةَ رَكْعتينِ رَكْعتينِ فلمّا خَرجَ إلى المدينةِ فُرِضَت أربعًا وأقرَّت صَلاةُ السَّفرِ رَكْعتينِ
নবিজির সাঃ উপর নামাজ ফরজ করা হয়েছিলো মক্কায় থাকাবস্থায় দুই দুই রাকাত করে। অতপর যখন তিনি মাদীনার দিকে হিজরত করেন তখন চার চার রাকাত করে ফরজ করা হয়। তবে সফরের হালতে দুই রাকাত ঠিক রাখা হয়। -সুনানে কুবরা বাইহাকী, হাদিস : ১৭৬৫
সা’দ ইবনু হিশাম ইবনে আমির বলেছেন, আমি উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. প্রশ্ন করলাম,
أَنْبِئِينِي عَنْ قِيَامِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَتْ أَلَسْتَ تَقْرَأُ ( يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ) قُلْتُ بَلَى . قَالَتْ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ افْتَرَضَ قِيَامَ اللَّيْلِ فِي أَوَّلِ هَذِهِ السُّورَةِ فَقَامَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ حَوْلاً وَأَمْسَكَ اللَّهُ خَاتِمَتَهَا اثْنَىْ عَشَرَ شَهْرًا فِي السَّمَاءِ حَتَّى أَنْزَلَ اللَّهُ فِي آخِرِ هَذِهِ السُّورَةِ التَّخْفِيفَ فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ فَرِيضَةٍ
আমাকে রসুলুল্লাহ সাঃ-এর রাতের ইবাদাত (কিয়ামুল লাইল) সম্পর্কে কিছু অবহিত করুন। তিনি এবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সুরা “ইয়া আইইয়্যুহাল মুয্যাম্মিল” পড়ো না? আমি বললাম- হ্যাঁ পড়ি। তিনি বললেন, মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ এ সূরার প্রথমভাগে “কিয়ামুল লাইল” বা রাতের ইবাদাত বন্দেগী ফারয (ফরয) করে দিয়েছেন। তাই এক বছর পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ রাতের বেলা ইবাদাত করেছেন। মহান আল্লাহ বারো মাস পর্যন্ত এ সূরার শেষাংশ আসমানে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন (অর্থাৎ বারো মাস পর্যন্ত এ সূরার শেষাংশ অবতীর্ণ করেননি)। অবশেষে (বারো মাস পরে) এ সূরার শেষে আল্লাহ তা’আলা রাতের ইবাদাতের হুকুম লঘু করে আয়াত অবতীর্ণ করলেন। আর এ কারণে রাত জেগে ইবাদাত যেখানে ফারয (ফরয) ছিল সেখানে তা নাফল বা ঐচ্ছিক হয়ে গেল। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৭৪৬
বুঝা গেলো, নামাজ ফরজ হওয়ার আগেও নবিজি সাঃ রাতের কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন। নবিজি সাঃ করতেন কিন্তু সাহাবারা করতেন না, এমন ধারণা মুর্খতা। সুতরাং ‘মাদীনায় হিজরতের আগে সাহাবারা তাওহীদ ব্যতিত কোনো আমল পাননি’ এটা নিছক মুর্খতা। সুতরাং বুঝা গেলো, মাক্কী জিবনে সাহাবায়ে কেরাম রা. নামাজের বিধান পেয়েছিলেন। এটা ছাড়াও মাক্কী জিবনে অসংখ্য বিধান প্রদান করা হয়েছিলো। কিন্তু হেযবুত তওহীদ মূর্খতার কারণে সেসব বিষয়ে জ্ঞান রাখে না।
পনেরো. সওয়াবের আশায় সাহাবারা রা. আমল করেননি:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের মতবাদ হলো,
রাসুলুল্লাহর নিকট থেকে সরাসরি ইসলাম শিক্ষার ফলে তাদের আকীদা অর্থাৎ লক্ষ্য ছিল সঠিক, এক ও অভিন্ন। তারা ইসলামের কোন কাজই উদ্দেশ্য না বুঝে কেবল সওয়াবের আশায় করতেন না, সবকিছুর উদ্দেশ্য তাদের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ছিল। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃষ্ঠা. ৫৮
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, সাহাবায়ে কেরাম শুধু সওয়াবের আশায় কোনো আমল করেননি।
ইসলাম কী বলে?
সাহাবায়ে কেরামের রা. প্রত্যেকটি আমল ছিলো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। নিন্মে কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হলো, মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ
আর তাদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালকর্তার এবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও আপনার দায়িত্বে নয় এবং আপনার হিসাব বিন্দুমাত্রও তাদের দায়িত্বে নয় যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন। নতুবা আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন। [সুরা আন’আম : ৫২]
বুঝা গেলো, সাহাবায়ে কেরামের রা. মূল টার্গেট ছিলো আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। সেজন্য আল্লাহ পাকও তাদের প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,
لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। [সুরা হাদিদ : ১০]
সুতরাং ‘সাহাবায়ে কেরাম রা. সওযাব বা প্রতিদানের আশায় আমল করেননি’ এটা সত্য নয়।
ষোলো. সাহাবাদের প্রধান চরিত্র ছিলো ভয়ংকর, দুর্ধর্ষ ও যোদ্ধা:
সাহাবায়ে কেরাম রা. ছিলেন নবীজির সা. আদর্শে আদর্শবান। নবীজির সা. সকল গুনাবলী তাঁদের ভেতরেও ছিলো।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা জনমনে এই ধারণা দিতে চায় যে, সাহাবাদের রা. মূল কাজই ছিলো যুদ্ধ করা। তারা লিখেছে,
আল্লাহ-রাসুলের সাহাবারা ছিলেন ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭৮
নিগ্রো উবাইদা আর বিশপকে বললেন, আমরা বেঁচেই আছি শুধু আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্য। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৪৫
বিশ্বনবী স: যে জাতি সৃষ্টি করলেন সেটার মূল চরিত্র হলো শুধু বহির্মুখী নয়, একেবারে বিস্ফোরন মুখী। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৩৩
মাত্র দশ বছরের মধ্যে আটাত্তরটি যুদ্ধ সংঘটিত করে, একটি দুর্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি গঠন করে তিনি তার প্রেরক প্রভুর কাছে চলে গেলেন। -ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃষ্ঠা. ৩৮
সাহাবীদের নাম শুনলে জালেমদের আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠতো? -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৪৬
উপরোক্ত বক্তব্যগুলো দিয়ে তারা বুঝাতে চায় যে, সাহাবাদের রা. মূল শিক্ষা ও কাজই ছিলো যুদ্ধ করা। নাউযুবিল্লাহ।
ইসলাম কী বলে?
সাহাবায়ে কেরামের রা. চরিত্র কেমন ছিলো, তা পবিত্র কুরআনে পরিস্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনও) রুকুতে, (কখনও) সিজদায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি সন্ধানে রত। তাদের আলামত তাদের চেহারায় পরিস্ফুট, সিজদার ফলে। এই হল তাদের সেই গুণাবলী, যা তাওরাতে বর্ণিত আছে। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত এই, যেন এক শস্যক্ষেত্র, যা তার কুঁড়ি বের করল, তারপর তাকে শক্ত করল। তারপর তা পুষ্ট হল। তারপর তা নিজ কাণ্ডের উপর এভাবে সোজা দাঁড়িয়ে গেল যে, তা কৃষকদেরকে মুগ্ধ করে ফেলে। এটা এইজন্য যে, আল্লাহ তাদের (উন্নতি) দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে মাগফিরাত ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। [সূরা ফাতহ, আয়াত : ২৯]
উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ নিজে রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কেরামের রা. চরিত্র কেমন ছিলো তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। সেখানে কী ‘সাহাবাদের রা. প্রধান চরিত্র ছিলো যোদ্ধার’ এমন কোনো কথা আল্লাহ বলেছেন? নিশ্চয় না, বরং তাঁদের চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়াদ্র। সুতরাং সাহাবাদেরকে শুধু যোদ্ধা বলা কতবড় গোস্তাখি ভেবে দেখেছেন কী?
সাহাবারা রা. কী শুধু যুদ্ধ করতেই জিবিত ছিলেন?
হেযবুত তওহীদ সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে জাতিকে এ মেসেজটা দিতে চেয়েছে যে, সাহাবায়ে কেরাম রা. শুধু যুদ্ধকেই মূল আমল মনে করতেন। অথচ সাহাবায়ে কেরামের রা. আমলগুলো একটু নজর দিন।
ইবনে মাসউদ রা. এর আমল:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর আমল সম্পর্কে ইমাম বাইহাকী রহি. বর্ণনা করেন,
وروينا عن بن مسعود أنه كان يختم القرآن في رمضان في ثلاث وفي غير رمضان من الجمعة إلى الجمعة وعن أبي بن كعب أنه كان يختم القرآن في كل ثمان وعن تميم الداري أنه كان يختمه في كل سبع
ইবনে মাসউদ রা. এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি রমাযান মাসে প্রতি তিন দিনে এক খতম কুরআন শরীফ পড়তেন, আর রমাযান মাস ছাড়া অন্য মাসে এক জুম’আ থেকে অন্য জুম’আর মধ্যে এক খতম করতেন। উবাই ইবনে কা’ব রা. প্রতি ৮ দিনে এক খতম করতেন, তামীম দারী রা. প্রতি সপ্তাহে এক খতম পড়তেন। -সুনানে কুবরা (বাইহাকী) বর্ণনা : ৪০৫৯
আবু হুরায়রা রা. এর আমল:
হযরত আবু হুরায়রা রা. এর আমল সম্পর্কে আবু উসমান রহি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
تَضَيَّفْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ سَبْعًا فَكَانَ هُوَ وَامْرَأَتُهُ وَخَادِمُهُ يَعْتَقِبُونَ اللَّيْلَ أَثْلاَثًا يُصَلِّي هَذَا ثُمَّ يُوقِظُ هَذَا
একবার আমি সাত দিন পর্যন্ত আবূ হুরায়রার মেহমান ছিলাম। (আমি লক্ষ্য করলাম) তিনি, তার স্ত্রী ও খাদেম পালাক্রমে রাতকে তিনভাগে বিভক্ত করে নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন সালাত আদায় করে আরেক জনকে জাগিয়ে দিলেন। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫৪৪১
হযরত ইবনে উমর রা. এর আমল:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর ইবাদত সম্পর্কে তাঁর খাদেম হযরত নাফে রহি. বলেন,
أنه كان يحيي الليل صلاة ثم يقول يا نافع أسحرنا فأقول لا فيعاود الصلاة إلى أن أقول نعم فيقعد ويستغفر ويدعو حتى يصبح
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. সারা রাত নামায আদায় করতেন। তিনি বলতেন, হে নাফে, ভোর হয়েছে কি? আমি (নাফে) বলতাম, না। এরপর তিনি আবার নামায শুরু করতেন। এভাবে আমি হ্যা বলা পর্যন্ত তিনি নামায পড়তে থাকতেন। ফজর হলে তিনি বসে বসে ইস্তেগফার করতেন। এবং সকাল পর্যন্ত দুয়া করতেন। -মু’জামে কাবীর (তাবরানী), হাদিস : ১৩০৪৩
তামীম দারী রা. ও উসমান রা. এর আমল :
হযরত তামীম দারী রা. এর আমল সম্পর্কে ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহি. লিখেছেন,
وقد كان عثمان وتميم الداري وعلقمة وغيرهم يقرؤون القرآن كله في ركعة وكان سعيد بن جبير وجماعة يختمون القرآن مرتين وأكثر في ليلة
হযরত উসমান রা, তামীম দারী রা, হযরত আলকমাসহ অন্যান্যরা এক রাকাতে সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করতেন। হযরত সাইদ ইবনে জুবাইর ও একদল তাবেয়ী একই রাতে দু’বার বা এর চেয়ে কুরআন খতম করেছেন। -আল-ইস্তেজকার, খ. ২ পৃ. ৪৭৫
এভাবে যদি সাহাবায়ে কেরামের রা. আমল বর্ণনা করতে শুরু করি তাহলে কিতাবটি দীর্ঘ হবে। সে কারণে কয়েকজন সাহাবীর আমল পেশ করলাম। আশা করি বুঝতে পেরেছেন, সাহাবাদের একমাত্র চরিত্র হিসাবে যুদ্ধকেই দাঁড় করানো নিতান্তই মিথ্যাচার ও বানোয়াট। তবে হ্যাঁ, সাহাবায়ে কেরাম রা. যখনই জিহাদ ফরজ হতো, তখনই তাঁরা সাড়া দিতেন। কিন্তু জিহাদই তাঁদের মূল কাজ বলে দাবি করা নিতান্তই মূর্খতা ও সাহাবায়ে কেরামকে রা. উগ্রপন্থী বানানোর অপকৌশল।
সতেরো: নবীজি সা. কী সাহাবাদেরকে রা. শুধু যুদ্ধই শিখিয়েছিলেন?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের আরেকটা দাবি হলো,
আল্লাহ রসুলের ইসলাম যে জাতি গঠন করেছিল সে জাতির চরিত্রে সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যোদ্ধার চরিত্র। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৬৬
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চাচ্ছে নবীজি সা. সাহাবায়ে কেরামকে শুধু যুদ্ধই শিখিয়েছেন।
ইসলাম কী বলে?
নবিজি সাঃ সাহাবায়ে কেরামকে রা. পূর্ণ দ্বীন হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। এমনকি বাথরুমে যাওয়া থেকে নিয়ে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জিবন, সামাজিক জিবন, জাতীয় জিবন, আন্তর্জাতিক জিবনের প্রত্যেকটি বিষয় খুলে খুলে শিখিয়েছেন। জিহাদও শিখিয়েছেন। কারণ জিহাদও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। কিন্তু প্রধানত জিহাদ শিখিয়েছেন এটা চরম ভ্রান্তি। রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহাবায়ে কেরামকে রা. গুরুত্বপূর্ণ একটি বায়’আত নেন। হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّهُ قَالَ إِنِّيْ مِنْ النُّقَبَاءِ الَّذِيْنَ بَايَعُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ بَايَعْنَاهُ عَلَى أَنْ لَا نُشْرِكَ بِاللهِ شَيْئًا وَلَا نَسْرِقَ وَلَا نَزْنِيَ وَلَا نَقْتُلَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ وَلَا نَنْتَهِبَ وَلَا نَعْصِيَ بِالْجَنَّةِ إِنْ فَعَلْنَا ذَلِكَ فَإِنْ غَشِيْنَا مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا كَانَ قَضَاءُ ذَلِكَ إِلَى اللهِ
হযরত উবাদাহ ইবনু সামিত রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঐ মনোনীত প্রতিনিধি দলে ছিলাম, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা তাঁরকাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলাম জান্নাত লাভের জন্য যদি আমরা এই কাজগুলো করি এই শর্তে যে, আমরা আল্লাহর সঙ্গেকোন কিছুকেই শরীক করব না, ব্যভিচার করব না, চুরি করব না। আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে না হক হত্যা করব না, লুটতরাজ করব না এবং নাফরমানী করব না। আর যদি আমরা এর মধ্যে কোনটিতে লিপ্ত হই, তাহলে এর ফয়সালা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৮৯৩
প্রিয় পাঠক, উক্ত হাদিসটি আরেকবার পড়ে দেখুন তো নবীজি সাঃ কি তাদের প্রধান শিক্ষা হিসাবে যুদ্ধ শিখিয়েছেন? নিশ্চয় না। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহাবাদেরকে রা. পারস্পরিক আচরণ কেমন হবে তাও শিখিয়েছেন। হযরত নু’মান ইবনু বাশীর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মু’মিনদের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৬০১১
সাহাবায়ে কেরাম রা. হলেন, দ্বীন ইসলামের পূর্ণ ধারক-বাহক। তাঁদেরকে শুধু যোদ্ধা ট্যাগ লাগানোর এই গভীর ষড়যন্ত্রের মূল টার্গেট হলো, দ্বীন ইসলামকে উগ্রপন্থী ধর্ম হিসাবে আখ্যায়িত করা। যা কখনই সফল হওয়ার নয়।
আঠারো. সাহাবাদের লক্ষ্যই ছিলো দেশ দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা বলতে চায়, সাহাবাদের সকল যুদ্ধের পেছনে মূল টার্গেট ছিলো দেশ দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। তারা লিখেছে-
উম্মতে মোহাম্মাদী যত যুদ্ধ করেছিলো সব রাষ্ট্রদখল করে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭
জাতির প্রতিটি মানুষের জীবনের লক্ষ্য ছিল সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীন সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭১
আল্লাহর নির্দেশে তাঁর রসূল যে উম্মাহ, যে জাতি গঠন করলেন সেটাকে একটি জাতি না বলে বরং একটি সামরিক বাহিনী বলাই যথার্থ। -ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ৬১
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, কোনো অন্যায় পাওয়া ছাড়াই সাহাবারা রা. নিজেরা অগ্রগামী হয়ে যুদ্ধ করতেন দেশ দখল করে ইসলাম কায়েম করার জন্য।
ইসলাম কী বলে?
ইসলামে অন্যায়ভাবে কারো উপর তরবারী উত্তোলন করা হারাম। এমনকি কোনো কাফের যদি ইসলামের বিরুদ্ধে তরবারী না তোলে তবুও তাকে হত্যা করা নিষেধ। সেখানে সাহাবায়ে কেরাম রা. রাষ্ট্র দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে দাবি করা কী বিকৃতি নয়? অথচ যুদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
وَقَاتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلاَ تَعْتَدُواْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبِّ الْمُعْتَدِينَ
যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ কর, তবে সীমালংঘন করো না। নিশ্চিত জেন, আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। [সূরা বাকারা : ১৯০
উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ত্বাকী উসমানী দা. বা. বলেন, ‘এ আয়াত সেই সময় নাযিল হয়, যখন মক্কার মুশরিকগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে উমরা আদায়ে বাধা দিয়েছিল এবং চুক্তি হয়েছিল যে, পরবর্তী বছর এসে তাঁরা উমরা করবেন। পরবর্তী বছর উমরার ইচ্ছা করা হলে কতিপয় সাহাবীর মনে আশঙ্কা দেখা দেয়, মক্কার মুশরিকগণ চুক্তি ভঙ্গ করে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে দেবে না তো? তেমন কিছু ঘটলে মুসলিমগণ সংকটে পড়ে যাবে। কেননা হারামের সীমানায় এবং বিশেষত যূ-কা‘দা মাসে তারা কিভাবে যুদ্ধ করবে? কেননা এ মাসে তো যুদ্ধ-বিগ্রহ জায়েয নয়। এ আয়াত নির্দেশনা দিল যে, নিজেদের পক্ষ থেকে তো যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে কাফিরগণ যদি চুক্তি ভঙ্গ করতঃ নিজেরাই যুদ্ধ শুরু করে দেয়, তবে সেক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্য যুদ্ধ জায়েয। তারা যদি হারামের সীমানা ও পবিত্র মাসের পবিত্রতাকে উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে বসে, তবে মুসলিমদের জন্যও তাদের সে সীমালংঘনের বদলা নেওয়া জায়েয হয়ে যাবে’।
সুতরাং বুঝা গেলো, কোনো কারণ ছাড়াই কারো উপর হামলা করা জায়েয নয়। তাহলে সাহাবায়ে কেরামের রা. ব্যাপারে এমন মন্তব্য করা যে, ‘সাহাবায়ে কেরাম রা. রাষ্ট্র দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যই যুদ্ধ করেছেন এটা কী পরোক্ষভাবে সাহাবাদেরকে আল্লাহর আইন লঙ্ঘনকারী হিশাবে প্রমাণ করার নামান্তর নয়?
উনিশ: সাহাবাদের থেকেও সাধারণ মুসলমানের মর্যাদা বেশি?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
সাহাবাদের রা. চেয়ে কারও মর্যাদা বেশি হতে পারে না। অথচ হেযবুত তওহীদ লিখেছে,
নবীজি বলেছেন আখেরি জামানায় একদল লোক এমন হবে যাদের অবস্থান (দরজা) তোমাদের থেকেও বহুগুন উর্ধ্বে হবে। -দাজ্জাল, পৃ. ৮১
ইসলাম কী বলে?
এমন ডাহা মিথ্যা কথা নবিজি সা. কোথাও বলেননি, বরং এ কথাটা পন্নী সাহেব হয়তো নেশাগ্রস্ত অবস্থায় লিখেছেন। কারণ সাহাবায়ে কেরাম রা. হলেন উম্মতের শ্রেষ্ট মানুষ। যাঁদের থেকে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া তো দূরের কথা তাঁদের সমপর্যায়েরও হওয়া সম্ভব না। খোদ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। [সুরা হাদিদ আয়াত : ১০]
হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত রিয়াহ ইবনুল হারিস রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كُنْتُ قَاعِدًا عِنْدَ فُلَانٍ فِي مَسْجِدِ الْكُوفَةِ وَعِنْدَهُ أَهْلُ الْكُوفَةِ فَجَاءَ سَعِيدُ بْنُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ فَرَحَّبَ بِهِ وَحَيَّاهُ وَأَقْعَدَهُ عِنْدَ رِجْلِهِ عَلَى السَّرِيرِ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ يُقَالُ لَهُ قَيْسُ بْنُ عَلْقَمَةَ فَاسْتَقْبَلَهُ فَسَبَّ وَسَبَّ فَقَالَ سَعِيدٌ مَنْ يَسُبُّ هَذَا الرَّجُلُ قَالَ يَسُبُّ عَلِيًّا، قَالَ أَلَا أَرَى أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَبُّونَ عِنْدَكَ ثُمَّ لَا تُنْكِرُ وَلَا تُغَيِّرُ أَنَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَإِنِّي لَغَنِيٌّ أَنْ أَقُولَ عَلَيْهِ مَا لَمْ يَقُلْ فَيَسْأَلَنِي عَنْهُ غَدًا إِذَا لَقِيتُه أَبُو بَكْرٍ فِي الْجَنَّةِ وَعُمَرُ فِي الْجَنَّةِ وَسَاقَ مَعْنَاهُ ثُمَّ قَالَ لَمَشْهَدُ رَجُلٍ مِنْهُمْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْبَرُّ فِيهِ وَجْهُهُ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمُرَهُ وَلَوْ عُمِّرَ عُمُرَ نُوحٍ
একদা আমি জনৈক লোকের নিকট কুফার মাসজিদে বসা ছিলাম এবং তার নিকট কুফার লোকজনও উপস্থিত ছিলো। এ সময় সাঈদ ইবনু যায়িদ আমর ইবনু নুফাইল রা. এলে তিনি তাকে সাদর সম্ভাষণ ও সালাম জানিয়ে খাটের উপর নিজের পায়ের কাছে বসালেন। অতঃপর কায়িস ইবনু আলকামাহ নামক জনৈক কুফাবাসী এলে তাকেও অভ্যর্থনা জানালেন। তারপর সে গালাগালি করতে লাগলো। সাঈদ রা. বললেন, এ ব্যক্তি কাকে গালি দিচ্ছে? তিনি বললেন, সে আলী রা. কে গালি দিচ্ছে। তিনি বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীকে আপনার সম্মুখে গালি দিচ্ছে অথচ আপনি তাকে নিষেধ করছেন না আর থামাচ্ছেনও না! আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি, আমি তাঁর সম্পর্কে এমন উক্তি করা থেকে মুক্ত যা তিনি বলেননি। অতঃপর কিয়ামাতের দিন যখন তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে তখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আবূ বাকর রা. জান্নাতী, উমার রা. জান্নাতী। বর্ণনাকারী অতঃপর অনুরূপ অর্থের বর্ণনা করলেন এবং তিনি বললেন, তাদের কোনো একজনের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ, যে সাহচর্যে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না তাও তোমাদের কোনো ব্যক্তির সারা জীবনের আমলের চেয়ে উত্তম, যদিও সে নূহ আ. এর মতো দীর্ঘ আয়ু পায়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৬৫০
অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,
لا تسبُّوا أصحابَ محمَّدٍ صلّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فلَمُقامُ أحدِهِم ساعةً خيرٌ مِن عمَلِ أحدِكُم عُمرَهُ
তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের মন্দ বলো না, তাদের এক মুহুর্তের সৎকাজ তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৩৩
হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেন,
خَيْرُ أُمَّتي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগণ)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীণ)। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৬৫০
হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
أكرموا أصحابِي فإنهم خيارُكم
তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব। -সুনানে তিরমিযি, হাদিস : ২১৬৫
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাঃ বলেছেন,
إن اللهَ اختار أصحابِي على العالمينَ سوى النبيينَ والمرسلينَ واختار لي من أصحابِي أربعةً يعني أبا بكرٍ وعمرَ وعثمانَ وعليًّا رحمهم اللهُ فجعلهم أصحابِي وقال في أصحابِي كلِّهم خيرٌ واختار أمتي على الأممِ
আল্লাহ তা’আলা আমার সাহাবীকে মনোনীত করেছেন বিশ্ববাসীর উপর। কেবল নবী-রাসূলগণ ব্যতীত, আমার সাহাবীগণ থেকে চারজনকে আমার জন্য মনোনীত করেছেন, তারা হলেন হযরত আবু বকর, রা. হযরত ওমর রা. হযরত ওসমান রা. ও হযরত আলী রা.। তাঁরা আমার শ্রেষ্ঠ সাহাবী। তবে আমার সকল সাহাবী উত্তম। সকল উম্মত থেকে আমার উম্মতকে মনোনীত করেছেন। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ১০ পৃ. ১৮
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি স: বলেন,
لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهباً ما أدرك مد أحدهم ولا نصيفه
তোমরা আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলোনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও দান করে,তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদাকা করার সমানও হতে পারেনা বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৬৭৩
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণ হলো, এই উম্মতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বরা হলে একমাত্র সাহাবায়ে কেরাম রা.। তাঁদের চেয়ে উত্তম বলে কাউকে স্বীকৃতি দেওয়া চরম পর্যায়ের মূর্খতা ও সাহাবা বিদ্বেষের শামিল।
কুড়ি. হযরত মুয়াবিয়া রা: নিয়ে সমালোচনা:
হযরত মুয়াবিয়া রা. ইতিহাসের পাতায় সবচে মাযলুম এক সাহাবী। যাঁকে ঘিরে সর্বপ্রথম ইহুদী সাবায়ী চক্র গভীরতম ষড়যন্ত্র করে। তাঁকে উম্মাহর সামনে জঘন্য মানুষ হিসাবে প্রমাণিত করতে চায়। ঠিক তাদের পেতাত্মারা আজও সে পথ বন্ধ করেনি। হেযবুত তওহীদও সে পথের অনুসারী হিসাবে লিখেছে,
রসুলাল্লাহর একজন নৈকট্যপ্রাপ্ত সাহাবি হুজর বিন আদী রা:। আলী রা: এর খেলাফতের সময় মাবিয়া রা: এর নেতৃত্বে যখন জাতির মধ্যে চরম বিভক্তি ও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তখনও হুজর বিন আদী আলির রাঃ থেকে তাঁর আনুগত্যের শপথ প্রত্যাহার করে নেন নি। এই কারণে মাবিয়া রা: হুজুরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তার কবর হয় সিরিয়ার দামেস্কে। এই দুঃখজনক নাটকের শেষ অংক অনুষ্ঠিত হয় গত ২ মে ২০১৩ তারিখে। ওহাবীরা তার কবর ভাঙার পর সেখানে হুজুর বিন আদী রা: এর অক্ষত দেহ মোবারক উদ্ধার করা হয়, যা তার শাহাদাত বরণের প্রমাণ বহন করে’। -শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ৮৮
উক্ত বক্তব্য দিয়ে হেযবুত তওহীদ কয়েকটা দাবি করেছে-
১. হুজর বিন আদী সাহাবী ছিলেন।
২. আলী রা. এর বায়আতে থাকার অপরাধে হুজর বিন আদীকে মুয়াবিয়া রা. হত্যা করেন।
ইসলাম কী বলে?
হেযবুত তওহীদের উপরোক্ত দু’টি বিষয়ের দাবি চরম ভ্রান্ত ও সাহাবীর রা. প্রতি চরম ধৃষ্টতার শামিল। চলুন একেক করে দু’টি বিষয়েই আলোচনা করা যাক।
এক. হুজর বিন আদী কী সাহাবী ছিলেন?
এ বিষয়ে বেশ মতপার্থক্য দেখা যায়। তবে সাহাবী ও তাবেয়ীদের জীবনীর উপর রচিত বইগুলির মধ্যে প্রাচীনতম বইটি হল তাবাকাতে ইবনে সা’দ রহি. এর রচিত আত-তাকাবাত আল-কুবরা। পরবর্তী শতাব্দীতে এ বিষয়ে আরও অনেক বই লেখা হয়েছিল, কিন্তু সবই ইবনে সা’দের বইয়ের উপর ভিত্তি করে। অতএব, সঠিক উপায় হল, যদি আমরা জানতে চাই যে, কোন ব্যক্তি সাহাবী আর কে সাহাবী না এ বিষয়ে দেখতে হলে তাবাকাতে ইবনে সা’দ দেখা। তো চলুন দেখা যাক হুজর বিন আদি রহি. সাহাবী ছিলেন কী না? এ ব্যাপারে ইবনে হাজার আসকালারী রহি. লিখেছেন,
أما البخاري وابن أبي حاتم عن أبيه وخليفة بن خياط وابن حبان فذكروه في التابعين وكذا ذكره ابن سعد في الطبقة الأولى من أهل الكوفة
ইমাম বুখারী, আবু হাতেম রাযী, খলিফা বিন খয়্যাত, ইবনে হিব্বান রহি. তাকে তাবেয়ীদেরকে অন্তুর্ভূক্ত করেছেন। এমনিভাবে ইবনে সা’দ রহি. তাঁর তাবাকাতে কুফাবাসী (প্রথম সারির তাবেয়ীনদের) অন্তর্ভূক্ত করেছেন। -আল ইসাবাহ (আসকালানী) খ. ১ পৃ. ৩২৯
আবু আহমাদ আল-আসকারী রহি. বলেন,
أكثر المحدثين لا يصححون له صحبة
অধিকাংশ মুহাদ্দিসদের নিকট তিনি সাহাবী হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে প্রমাণিত। -তারিখে দিমাশক, খ. ১২ পৃ. ২২৮
সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের প্রথম দাবি হুজর বিন আদীকে সাহাবী বানানোর বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়।
হুজর বিন আদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কেন?
হেযবুত তওহীদের দাবি ছিলো, হুজর বিন আদী আলী রা. এর বায়’আত থেকে সরে না আসার কারণে হযরত মু’আবিয়া রা. তাঁকে হত্যা করেন। নাউযুবিল্লাহ। এমন মন্তব্য কোনো ঐতিহাসিক আজ অবদি লেখেননি। এটা নিছক হেযবুত তওহীদের মিথ্যাচারের নমুনা। প্রথমত জেনে রাখুন, হুজর বিন আদীকে হত্যা করা হয়, নবিজির সা. হাদিসের উপর আমল করতেই। চলুন আগে হুজর বিন আদীর কর্মকান্ড সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। মূলত হুজর বিন আদী ছিলেন ঐ সকল লোক, যারা হযরত উসমান রা. ও মুয়াবিয়া রা. এর বিরোধী শক্তি ছিলো, তাদের মতাদর্শী। এ ব্যাপারে ইবনে আসাকীর রহি. সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নকল করেন,
ان حجرا جمع اليه الجموع واظهر شتم الخليفة ودعا الى حرب أمير المؤمنين وزعم ان هذا الامر لا يصلح الا فى آل ابى طالب و وئب المصر وأخرج عامل امير المؤمنين
হুজর ইবনে আদী তার কাছে জনগণকে জড়ো করতে থাকেন ও খলীফাকে গালিগালাজ করতেন এবং আমীরুল মুমিনিন (হযরত মুয়াবিয়ার রা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আহ্বান করতে থাকেন। আর তার দাবি ছিলো, আলী ইবনে আবু তালাবের রা. পরিবার ছাড়া খিলাফতের যোগ্য অন্য কেউ হতে পারে না এবং তিনি আর বিদ্রোহ করে আমিরুল মুমিনীনের গভর্ণরকে শহর থেকে বের করে দেন। -তারীখে ইবনে আসাকীর, খ. ২ পৃ. ৩৭৫
ইবনে কাসীর রহি. ইবনে জারীর সূত্রে বলেন,
وقد ذكر ابن جرير وغيره عن حجر بن عدي وأصحابه أنهم كانوا ينالون من عثمان ويقولون فيه مقالة الجور وينتقدون على الأمراء ويسارعون في الإنكار عليهم ويبالغون في ذلك ويتولون شيعة علي ويتشددون في الدين
হুজর বিন আদী ও তার সহযোগীরা উসমান রা. এর ব্যাপারেও অভিযোগ তুলেছিলেন এবং তাঁর ব্যাপারে যুলুম-অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন এবং তিনি উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, বিবিচারক ও শাসক কর্মকর্তাদের কঠিন সমালোচনা করতেন, তাঁদেরকে অস্বীকার করতে ত্বরান্বিত করছিলেন, এবং এ ব্যাপারে অনেক বাড়াবাড়ি করেছিলেন এবং ধর্মের ব্যাপারে অনেক বাড়াবাড়ি করতেন। -আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ১১ পৃ. ২৩৯
কুফায় যখন মুগীরা ইবনে শু’বাবা রা. ৫০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তখন হযরত মুয়াবিয়া রা. তার স্থলে যিয়াদকে কুফার গভর্ণর নিযুক্ত করেন। হুজুর বিন আদী এ নিয়োগের চরম বিরোধী ছিলেন। এ কারণে হযরত আলী রা. এর অনুসারী দাবীদার ব্যক্তিরা একে একে হুজুর বিন আদী এর দলে শামিল হতে থাকে। তখন তারা সকলে
و يسبون معاوية ويتبرون من
তারা খলীফা হযরত মুয়াবিয়া রা. কে গালমন্দ করতো, এবং চরম বিরোধীতা করতো। -আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ৮ পৃ. ৫০
ইবনে কাসীর রহি. বলেন,
وجعل زياد يقول في خطبته إن من حق أمير المؤمنين يعني كذا وكذا فأخذ حجر كفا من حصباء فحصبه وقال كذبت عليك لعنة الله
একদিন যিয়াদ ইবনে আবিহি কুফায় খুৎবা দিচ্ছিলেন আমিরুল মুমিনীনের হক সম্পর্কে। এমন সময় হুজর বিন আদী তার উপর পাথর নিক্ষেপ করেন এবং বলেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তোমার উপর আল্লাহর লা’নত। -আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ৭ পৃ. ৫৪
এরপর যিয়াদ বড় বড় বেশ কয়েকজন সাহাবীসহ ৭০ জন সাক্ষি সম্বলিত একটি চিঠি তৎকালিন সময়ের আমিরুল মুমিনিন হযরত মুয়াবিয়া রা. এর কাছে পাঠান। ফলে মুয়াবিয়া রা. তাকে গ্রেফতার করান। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমেই তিনি তাকে হত্যা করেননি, বরং সর্বপ্রথম তিনি পরামর্শ বৈঠকের আহ্বান করেন। যার বিস্তারিত বিবরণ তারিখে দিমাশকের মধ্যে এসেছে,
إنما استشار الناس في قتل حجر ومن معه فكان منهم المشير, ومنهم الساكت
মুয়াবিয়া রা. হুজর বিন আদী ও তার সহযোগীদের মমৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে পরামর্শ চান। কেউ কেউ পরামর্শ দেন, আবার কেউ নিরাবতা পালন করেন। তবে কেউ কেউ বলেন,
ومنهم من قال إن تعاقبهم فقد أصبت وإن تعفو فقد أحسنت
যদি আপনি শাস্তি দেন তাহলে সঠিক কাজ হবে। আর যদি মাফ করে দেন তাহলে দয়া হবে। -তারিখে দিমাশক, খ. পৃ. ২২৩
তাহলে বুঝা গেলো, হুজর বিন আদী তার কৃতকর্মের জন্য তিনি ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। উপরন্তু হযরত মুয়াবিয়া রা. ও হাসান রা. এর সন্ধিচুক্তির ভিত্তিতে সকল যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু কুফার যেই গ্রুপের কারণে হযরত উসমান রা. কে শহীদ করা হয়েছিলো, সেই গ্রুপ দ্বারাই প্রভাবিত ছিলেন হুজর বিন আদী। যার কারণে মুয়াবিয়া রা. ভয়ে ছিলেন যে, তার কারণে উম্মতের মধ্যে আবার গৃহ যুদ্ধ লেগে যায় কী না? সেজন্য উম্মতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টির অভিযোগে অসংখ্য সাহাবী ও তাবেয়ীনদের পরামর্শে তাকে হত্যা করা হয়।
মুয়াবিয়া রা. কী অপরাধ করেছিলেন?
ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব সীমাহিন। এই ঐক্য বিনাশী চিন্তা লালন করে মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে যারা ফাটল সৃষ্টি করে, তারা ইসলামী শরীয়াহ’র বিধান অনুযায়ী শান্তি পাওয়ার যোগ্য। এ ব্যাপারে দুটো হাদিস দেখুন। হযরত আরফাজাহ্ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃ-কে আমি বলতে শুনেছি,
إِنَّهُ سَتَكُونُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ ، فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيعٌ ، فَاضْرِبُوهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ
অচিরেই নানা প্রকার ফিৎনা-ফাসাদের উদ্ভব হবে। যে ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ উম্মাতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তোমরা তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে, সে যে কেউ হোক না কেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৫২
হযরত আরফাজা রা. হতে বর্ণিত, তিনি আরও বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি,
مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُرِيدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ فَاقْتُلُوهُ
তোমাদের এক নেতার অধীনে একতাবদ্ধ থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি এসে তোমাদের শক্তি খর্ব করতে উদ্যত হয় অথবা তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায় তাকে তোমরা হত্যা করবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৫২
সুতরাং এ হাদিস দু’টো থেকে বুঝা গেলো, হযরত মুয়াবিয়া রা. যা করেছেন, সেটা হাদিস অনুযায়ী করেছেন। কারণ হুজর বিন আদীর ভেতরে এই ঐক্য বিনাশী কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা চরম পর্যায়ে বিদ্যমান ছিলো।
আম্মাজান আয়েশার রা. সাথে মুয়াবিয়ার রা. মুলাকাত:
হযরত মুয়াবিয়া রা. একবার মাদীনায় আগমণ করলেন, অতপর আম্মাজান আয়েশা রা. এর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন না। বারবার পীড়াপীড়ির পর আয়েশা রা. অনুমতি দিলেন। অতপর আম্মাজান আয়েশা রা. তাঁকে প্রশ্ন করলেন,
انت الذي قتلت حجرا قال لم يكن عندي احد ينهاني
তুমি কী সেই যে হুজরকে হত্যা করেছে? তখন তিনি বললেন, আমাকে তো কেউ নিষেধ করেনি। (কারণ তিনি হত্যার উপযুক্ত অন্যায় করেছেন।) -তারিখে দিমাশক খ. ১২ পৃ. ২২৬
তিনি আরও বলেছিলেন,
يا ام المؤمنين اني رأيت قتلهم صلاحا لامة
হে উম্মুল মুমিনিন, আমি তাকে উম্মতের জন্য মঙ্গলজনক মনে করেই হত্যা করেছি। -তারিখে দিমাশক খ. ১২ পৃ. ২২৬
আব্দুল্লাহ ইবনে আবু মুলাইকাসহ অন্যান্যরা বলেন,
لما قدم معاوية المدينة دخل على عائشة فقالت: أقتلت حجرا؟ فقال: يا أم المؤمنين إني وجدت قتل رجل في صلاح الناس خير من استحيائه في فسادهم
বিশৃংখলার জন্য একজর মানুষ বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য তাকে হত্যা করা আমি মঙ্গলজনক মনে করেছি। -আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ খ. ৭ পৃ. ৫৮
সুতরাং বুঝা গেলো, নিজস্ব শত্রুতার কারণে মুয়াবিয়া রা. হুজর বিন আদী ও তার সহযোগীদেরকে কে হত্যা করেননি। এরপরও যদি ধরে নেওয়া হয় যে, মুয়াবিয়া রা. সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিলো না, তবুও মুয়াবিয়া রা. এ ক্ষেত্রে গুনাহগার হবেন না। কারণ তিনি এ কাজটি করেছিলেন মুসলমানদের মধ্যে পূনরায় যুদ্ধের সম্ভাবনার বিষয়টি বন্ধ করার জন্য। এটি ছিলো তাঁর ইজতিহাদ। মূলত এ কাজটি করে তিনি ফিৎনার মূলউৎপাটন করে দিয়েছেন। এটা যদি তাঁর ভুলও হয়, তবুও এটার জন্য তিনি পুরস্কৃত হবেন। হযরত আমর ইবনু ’আস রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ্ সাঃ-কে এ কথা বলতে শুনেছেন,
إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
কোন বিচারক ইজ্তিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তার জন্য আছে দু’টি পুরস্কার। আর বিচারক ইজতিহাদে ভুল করলে তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৭৩৫২
সুতরাং সর্বোপরি কথা হলো হলো, মুয়াবিয়া রা. কে হুজর বিন আদীর হত্যাকে কেন্দ্র করে যে সমালোচনা করা হয়, এটা নিছক তাঁর প্রতি বিদ্বেষ রাখার কারণেই। আল্লাহপাক উভয়কে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ আসনে আসীন করেন।
হযরত মুয়াবিয়ার রা. সম্মান:
হযরত মুয়াবিয়া রা. ছিলেন কাতিবে ওহী। অর্থাৎ যখন রাসুলুল্লাহ সা. এর উপর পবিত্র কুরআনের আয়াত নাযিল হতো, তখন যারা এ আয়াতগুলো লিপিবদ্ধ করতেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত মুয়াবিয়া রা.। একই সাথে তিনি ছিলেন নবীজির সা. আপন শ্যালক। উম্মুল মুমিনিন আম্মাজান উম্মে হাবিবার রা. ভাই। সাহাবী হিসাবে যে সম্মান সকল সাহাবার ঠিক সে সম্মান ও মর্যাদার পূর্ণ মালিক তিনিও। তাঁর শানে কথা বলার সময় এটা মনে রাখা উচিৎ তিনি নবীজির সা. খুব কাছের সাহাবী। ইমাম আজুররী নিজ সনদে জাররাহ আল-মু’সিলী থেকে বর্ণনা করেছে, তিনি বলেন,
سمعت رجلاً يسأل المعافى بن عمران فقال يا أبا مسعود أين عمر بن عبد العزيز من معاوية بن أبي سفيان فرأيته غضب غضباً شديداً و قال لا يقاس بأصحاب محمد صلى الله عليه وسلم أحد
আমি এক ব্যক্তিকে মুয়াফী ইবনে ইমরা রহ. কে প্রশ্ন করতে শুনলাম, সে জিজ্ঞাসা করলো, হে আবু মাসউদ, উমর ইবনে আব্দুল আজিজ উত্তম না কি মুয়াবিয়া রা.? আমি তাকে দেখলাম, তিনি খুবই রাগান্বিত হয়ে গেলেন। অত:পর বললেন, রাসূল স. এর সাহাবীদের সাথে কাউকে তুলনা করা যাবে না। -কিতাবুশ শরীআহ, বর্ণনা : ২০১৩
ইমাম আজুররী নিজ সনদে ইমাম আবু উসামা রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, তাকে একদা প্রশ্ন করা হলো,
أيهما أفضل معاوية أو عمر بن عبد العزيز فقال أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يقاس بهم أحد
হযরত মুয়াবিয়া ও উমর ইবনে আব্দুল আজির এর মধ্যে কে উত্তম? তিনি বললেন, রাসূল স. এর সাহাবীদের সাথে অন্য কারও তুলনা করা হবে না। -কিতাবুশ শরীআহ, বর্ণনা : ২০১১
উপরন্তু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রহি. কে হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
قد سئل عبد الله بن المبارك أيهما أفضل معاوية بن أبي سفيان أم عمر بن عبد العزيز فقال و الله إن الغبار الذي دخل في أنف معاوية مع رسول الله صلى الله عليه وسلم أفضل من عمر بألف مرة
একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রা. কে প্রশ্নর করা হলো, কে উত্তম? হযরত মুয়াবিয়া রা. না কি উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ.? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহর শপথ, রাসূল স. এর সাথে চলার সময় হযরত মুয়াবিয়া রা. এর নাকে যেই ধুলো প্রবেশ করেছে, সেটি হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ থেকে হাজারগুণ উত্তম। -ওফায়াতুল আইয়ান, (ইবনে খল্লিকান) খ. ৩ পৃ. ৩৩
সুতরাং এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবীর রা. শানে কথা বলার সময় সাবধান হয়ে কথা বলা। যাঁদের উপর আল্লাহ খুশি হওয়ার সু-সংবাদ খোদ কুরআনে মাজীদে বর্ণিত হয়েছে, তাঁদের উপর প্রশ্ন তোলা নিছক ইসলামদ্রোহীতার শামিল।
পরিশিষ্ট
প্রিয় পাঠক, পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পাকে সাহাবায়ে কেরামের রা. অনেক সম্মান ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। চলুন নিন্মে কয়েকটা আয়াত-হাদিস দেখা যাক-
এক. সাহাবাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট:
মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
হে নবী, আপনার জন্য এবং যেসব মুসলমান আপনার সাথে রয়েছে তাদের সবার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। [সুরা আনফাল : ৬৪]
দুই. সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত:
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয়নবি সাঃ বলেছেন,
إن اللهَ اختار أصحابِي على العالمينَ سوى النبيينَ والمرسلينَ واختار لي من أصحابِي أربعةً يعني أبا بكرٍ وعمرَ وعثمانَ وعليًّا رحمهم اللهُ فجعلهم أصحابِي وقال في أصحابِي كلِّهم خيرٌ واختار أمتي على الأممِ
আল্লাহ তা’য়ালা আমার সাহাবীকে মনোনীত করেছেন বিশ্ববাসীর উপর। কেবল নবী রাসূলগণ ব্যতীত, আমার সাহাবীগণ থেকে চারজনকে আমার জন্য মনোনীত করেছেন, তারা হলেন হযরত আবু বকর, রা. হযরত ওমর রা. হযরত ওসমান রা. ও হযরত আলী রা.। তাঁরা আমার শ্রেষ্ঠ সাহাবী। তবে আমার সকল সাহাবী উত্তম। সকল উম্মত থেকে আমার উম্মতকে মনোনীত করেছেন। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ১০ পৃ. ১৮
তিন. সাহাবায়ে কেরাম সফলকাম ও জান্নাতী:
মহান আল্লাহ বলেন,
لَـكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ جَاهَدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَأُوْلَـئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ أَعَدَّ اللّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
কিন্তু রসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হল বিরাট কৃতকার্যতা। [সুরা তাওবা : ৮৮]
চার. সাহাবায়ে কেরাম সত্যিকারের মুমিন:
মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ آوَواْ وَّنَصَرُواْ أُولَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী। [সুরা আনফাল : ৭৪]
পাঁচ. সাহাবাদের প্রতি আল্লাহ খুশি:
মহান আল্লাহ বলেন,
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা। [সুরা তওবা : ১০০]
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের উচ্চ মর্যাদা ও ফজিলত বয়ান করেছন। পাশাপাশি ঐ সমস্ত সাহাবাদেরকেও যারা মুহাজির ও আনসার সাহাবাদের অনুসরণ করেছেন এবং উম্মতের মধ্যে যারা নেককার দ্বীনদার শ্রেণী।
চার. সাহাবা বিদ্বেষ মানেই নবি বিদ্বেষ:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাঃ বলেন,
اللهَ اللهَ في أصحابي لا تتَّخِذوا أصحابي غَرَضًا مَن أحَبَّهم فبِحُبِّي أحَبَّهم ومَن أبغَضهم فبِبُغْضي أبغَضهم ومَن آذاهم فقد آذاني ومَن آذاني فقد آذى اللهَ ومَن آذى اللهَ يوشِكُ أنْ يأخُذَه
আমার সাহাবাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। যে তাঁদেরকে ভালবাসেন সে আমার প্রতি ভালবাসার কারণেই তাদেরকে ভালবাসেন এবং যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল। যে তাদেরকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লহ তা’য়ালাকে কষ্ট দিল আর যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তাকে পাকড়াও করবেন। -সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭২৫৬
সাত. সাহাবাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখা মুনাফিকের আলামত:
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুলালাহ সাঃ বলেন,
آيَةُ الإيمانِ حُبُّ الأنْصارِ وآيَةُ النِّفاقِ بُغْضُ الأنْصارِ
ঈমানের নিদর্শন হলো, আনসারী সাহাবীদের মহব্বত এবং মুনাফেকীর নিদর্শন হলো, আনসারীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৭৮৪
আট. সাহাবাদের সমালোচকদের করলে বেত্রাঘাতের নির্দেশ:
হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
مَن سَبَّ نبيًّا قُتِل ومَن سَبَّ أصحابَه جُلِد
অর্থঃ যে ব্যক্তি নবীকে মন্দ বলে,তাকে হত্যা করা হবে। আর যে সাহাবীকে মন্দ বলে তাকে প্রহার করা হবে। -মু’জামে সগীর (তবরানী) হাদিস : ৬৫৯
নয়. সাহাবা দুশমন নবির সাঃ দুশমন:
সাহাবাদের সাথে মহব্বত রাখা মানেই নবিজির সাথেই মহব্বত রাখা, পক্ষান্তরে সাহাবাদের সাথে দুশমনি রাখা মানেই নবিজির সাঃ সাথে দুশমনি রাখা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা: থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
الله الله في أصحابي لا تتخذوهم غرضاً بعدي فمن أحبهم فبحبي أحبهم ومن أبغضهم فببغضي أبغضهم ومن آذاهم فقد آذاني ومن آذاني فقد آذى الله ومن آذى الله يوشك أن يأخذه
আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাঁদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাঁদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাঁদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন। -জামে সগীর, হাদিস : ১৪৩৬
দশ. সাহাবাদের রা. সুন্নাত গ্রহণ করা:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَنْ كَانَ مُسْتَنًّا فَلْيَسْتَنَّ بِمَنْ قَدْ مَاتَ فَإِنَّ الْحَيَّ لَا تُؤْمَنُ عَلَيْهِ الْفِتْنَةُ. أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ ﷺ كَانُوْا أَفْضَلَ هذِهِ الْأُمَّةِ أَبَرَّهَا قُلُوْبًا وَّأَعْمَقَهَا عِلْمًا وَأَقَلَّهَا تَكَلُّفًا اِخْتَارَهُمُ الله لِصُحْبَةِ نَبِيِّه وَلْإِقَامَةِ دِيْنِه فَاَعْرِفُوْا لَهُمْ فَضْلَهُمْ وَاتَّبِعُوْهُمْ عَلى آثَرِهِمْ وَتَمَسَّكُوْا بِمَا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ أَخْلَاقِهِمْ وَسِيَرِهِمْ فَإِنَّهُمْ كَانُوْا عَلَى الْهُدَى الْمُسْتَقِيْمِ. رَوَاهُ رَزِيْن
যে ব্যক্তি কারো কোন ত্বরীক্বাহ্ (তরিকা) অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ (দীনের ব্যাপারে) ফিতনাহ্ হতে মুক্ত নয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ, যারা এ উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসেবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক দিয়ে এবং দূরে ছিলেন কৃত্রিমতার দিক থেকে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর প্রিয় রসূলের সাথী ও দীন ক্বায়িমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফাযীলাত ও মর্যাদা বুঝে নাও। তাদের পদাংক অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মজবুত করে আঁকড়ে ধরো। কারণ তাঁরাই (আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত) সহজ-সরল পথের পথিক ছিলেন। -মিশকাত, হাদিস : ১৯১
পরিশেষে ইমাম আবূ যুর’আ রহি. এর বক্তব্যটা ভালো করে বুঝে নিন। তিনি বলেন,
فإذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعلم انه زنديق، وذلك ان الرسول صلى الله عليه وسلم عندنا حق، والقرآن حق، وإنما أدى إلينا هذا القرآن والسنة أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، وإنما يريدون أن يجرحوا شهودنا ليبطلوا الكتاب والسنة، والجرح بهم اولى وهم زنادقة
তোমরা যখন কাউকে কোন সাহাবীর অবমাননা করতে দেখ, তখন বিশ্বাস করে নাও যে, সে যিন্দীক। তা এ জন্য যে, আমাদের নিকট রাসূল স: সত্য নবী,পবিত্র কুরআন সত্য; কুরআন হাদীস তথা পুরা দ্বীন যা আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, তার প্রথম যোগসূত্র হলেন সম্মানিত এ জামাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবাগণের সমলোচনা করবে, সে আমাদের বিশ্বস্ত সাক্ষীদের সমালোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দ্বীনকে অগ্রাহ্য বলে ঘোষণা করতে চায়। অর্থাৎ ইসলামের মূল ভিত্তি ধ্বংস করে দিতে চায়। সুতরাং এজাতীয় লোকদের সমালোচনা করা উত্তম বরং এরা হলো যিন্দিক। -আল কিফায়াহ, পৃ. ৪৯
আল্লাহ পাক আমাদেরকে সাহাবাদের রা. অনুসারী হয়ে জান্নাতে সাহাবাদের রা. সাথেই থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন!