বর্তমানে হেযবুত তওহীদ নামক কুফরী সংগঠনটি নাস্তিকদের সুরে সুর মিলিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন যে, নারী-পুরুষ এক সাথে শিক্ষা অর্জন করবে। অর্থাৎ তারা সহশিক্ষার পক্ষে তাদের সদস্যদের উদ্ভুদ্ধ করে চলেছেন। তাদের দাবি হলো,
‘‘মানবজাতির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। আমাদের সমাজে এই নারীরা সর্বক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ, এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধান একটি কারণ ধর্মীয় কুসংস্কার ও প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু প্রকৃত এসলামে নারীকে যে স্বাধীনতা দেয়া হোয়েছে সেটা মানব সৃষ্ট কোনো ব্যবস্থাতেই দেওয়া হয় নি। কিন্তু এসলামের অন্যান্য সকল দিক যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি নারী সম্পর্কে ইসলামের সঠিক আকীদার হারিয়ে গেছে। আজকের এসলাম প্রকৃত এসলামে সম্পূর্ণ বিপরীত।”
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই পৃষ্ঠা-১২
তারা আরো বলছেন,
“নারীরা মহানবীর সামনাসামনি বসে আলোচনা শুনতেন, শিক্ষা গ্রহণ করতেন, মহানবীকে প্রশ্ন করে জরুরি বিষয় জেনে নিতেন। অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এ সময়ে মহানবী ও মেয়েদের মাঝে কোনো কাপড় টাঙ্গানো ছিল এই ব্যাপারে কেউ কোন দলিল দেখাতে পারবে না”
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই পৃষ্ঠা-১৩
তারা আরো স্পষ্ট করে লিখেছেন,
“তার সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষা অর্জন করতেন কাজেই প্রকৃত ইসলামের নারী পুরুষ উভয়েই একই সঙ্গে শিক্ষা অর্জন করবে।”
সূত্র: শিক্ষাব্যবস্থা পৃষ্ঠা-৬
মানব জাতির মহান শিক্ষক নবী করিম (দ:) এর সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয় শিক্ষা অর্জন করতেন, কাজেই প্রকৃত ইসলামেও নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষকের সামনে বসে শিক্ষা অর্জন করবেন (Co-education System)।
সূত্র: চলমান সংকট নিরসনে হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা পৃষ্ঠা-৮
এগুলো হলো হেযবুত তওহীদের দাবি। চলুন এখন আমরা বিস্তারিতভাবে দেখি সহশিক্ষা নিয়ে বর্তমান বাস্তবতা ও ইসলামের বক্তব্য কি?
সহশিক্ষার পার্থিব কুফল:
তরুণ প্রজন্ম যেহেতু দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার, সেহেতু তাদেরকে অবশ্যই সৎ, মহৎ ও চরিত্রবান করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ তারাই ভবিষ্যত প্রজন্মকে নেতৃত্ব ও আদর্শ শিক্ষা দেবে। আর আদর্শ ও চরিত্রবান মানুষ গড়ে তোলার একমাত্র স্থান হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য-আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লক্ষ লক্ষ ছাত্র শিক্ষা লাভ করে দেশ-বিদেশে কর্মরত আছেন। এদের অনেককে দেখা যায় অসৎ চরিত্রের অধিকারী ও চরম দুর্নীতিবাজ।
ধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামী যদি খোঁজ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে সে একজন উচ্চ শিক্ষিত লোক। প্রশ্ন হল-উচ্চশিক্ষা লাভ করেও চরিত্রহীন হলো কেন? এর একটাই জবাব,আমাদের নষ্ট শিক্ষা ব্যবস্থা।
ছাত্রের কাছে ছাত্রী ধর্ষিতা, বাউফলে ক্লাস ওয়ানের ছাত্রীকে শিক্ষকের হাতে ধর্ষিতা,বছরের পর বছর ঘরে আটকে রেখে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার রেকর্ড রয়েছে আমাদের এ দেশেই। টি,এস,সির মোড়ে ছাত্রীর ওড়না ধরে টানাটানির ইতিহাস নিশ্চয় ভুলে যাবার কথা নয়। সিলেট বিশ্ববিদ্যলয়ে জাফর ইকবালের স্ত্রীর শাড়ি ধরে টানাটানির ইতিহাস কেমনে ভুলে যাবো আমরা? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণে সেঞ্চুরী করে মিষ্টি বিতরণ করার ইতিহাস কি করে ভুলবে দেশের আম জনতা?
আজও পত্রিকার পাতায় ধর্ষণের রিপোর্ট না আসাটা যেন পৃথিবীর ৮ম আশ্চর্য! প্রশ্ন হলো, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চরিত্রবান লোক বের হওয়ার কথা ছিল, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হচ্ছে চরিত্রহীন লম্পট, চলছে বিভিন্ন স্থানে চরিত্রহীনদের মহড়া। এসবের জন্য মূল দায়ী কে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? না।কখনই না। এসবের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনও দায়ী হতে পারে না, দায়ী করা যাবে না। দায়ী হলো, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা চালু আছে। সেই সহশিক্ষা নামক মরণব্যাধিই আমাদেরকে চরমভাবে কলুষিত করছে। সহশিক্ষাই ছাত্রছাত্রীদেরকে অতি অল্প বয়সে চরিত্রহীন করছে। সহশিক্ষায় রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীর অবাধ চলাফেরার ব্যবস্থা। একই স্থানে ছাত্র-ছাত্রীদের খেল-তামাশা, নৃত্য, নাচ-গান, নবীন-বরণ অনুষ্ঠান করার সুযোগ প্রদান। ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রেন্ডশীপ সেটা তো অতি সাধারণ ব্যাপার!
কোন প্রকার পর্দার বাধ্যবাধকতা তো নেই, বরং কেউ নেকাব পরে গেলে তাকে নিয়ে নিয়মিত হাসি-ঠাট্টা করার পাশাপাশি অপমান করে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কার করার মত খবর পড়তে হচ্ছে আমাদের। সহশিক্ষায় ইসলামের পর্দার বিধানকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়, আর যারা যত নগ্নভাবে চলে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া হয়।
সহশিক্ষার কারণে তরুণ প্রজন্ম মেধাহীন হচ্ছে:
মনে রাখা উচিৎ, গুনাহের কাজে লিপ্ত হলে স্বরণশক্তি লোপ পেয়ে যায়। এ সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী র: বলেন,
شَكَوتُ إِلى وَكيعٍ سوءَ حِفظي فأَرشَدَني إِلى تَركِ المَعاصي
وَأَخبَرَني بِأَنَّ العِلمَ نورٌ ونورُ اللَهِ لا يُهدى لِعاصي
অর্থ: আমার উস্তাদ ইমাম ওয়াকী (র.)-এর দরবারে ইলিম স্মরণ না থাকার অভিযোগ করলে তিনি গুনাহ ত্যাগ করার অসীয়ত করলেন। তিনি বললেন-‘ইলিম হচ্ছে আল্লাহর নূর। সেই নূর আল্লাহপাক কোন গুনাহগারকে দান করেন না।’
সূত্র: আসালিবুত তালিম পৃ:৩২
সহশিক্ষার সুবাধে ছাত্র-ছাত্রীরা অবাধে,বেপর্দা ভাবে চলাফেরা করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে ইভটিজিং নামক ঘৃণ্য পাপের মহড়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। আবাসিক হোটেল গুলো ভ্রাম্যমান পতিতালয় হয়ে যাচ্ছে এসব ছাত্র-ছাত্রীদের যৌনাচারে। ফলাফল, অনায়াসে সেসব ছাত্র-ছাত্রীদের স্মরণশক্তি লোপ পেয়ে যাচ্ছে। ফলে পরীক্ষার সময় আসে তাদের প্রথম কাজ হয় প্রশ্নপত্র ফাঁস আর তা না হলে পরীক্ষার হলে নকলের ছড়াছড়ি। এভাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যোগ্যতার কোমর ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে।
সহশিক্ষার কুফল এখানে সামান্য কয়েকটি তুলে ধরলাম। এ সম্পর্কে লিখতে গেলে বইটি অনেক বড় হয়ে যাওয়ার আশংকায় সংক্ষেপ করতে হচ্ছে।
সহশিক্ষা ও ইসলাম:
শিক্ষা অর্জন করা পুরুষের উপর যেমন ফরজ তেমনি নারীর উপরও শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। নারীদের উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলামের কোনো বাধা নেই। বরং ইসলাম সব সময় উৎসাহিত করে। তবে যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামের পর্দার বিধান লংঘন হয়, সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলাম সমর্থন করে না। নারী-পুরুষ আলাদা অবস্থানে থেকে পর্দা রক্ষা করে শিক্ষা অর্জন করবে-এটাই ইসলামের চিরন্তন বিধান। তবে নারীকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে। ইসলামের দিকনির্দেশনা গুলো নারী-পুরুষ সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সহশিক্ষার ফলে ইসলামের বেশ কয়েকটি বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
(১) পর্দা থেকে বের হওয়া।
নারীকে যথাসম্ভব ঘরে থাকা উচিত। একান্তই যদি তাকে ঘর থেকে বের হতে হয়,তাহলে পর্দা করেই বের হতে হবে। পর্দা থেকে বের হলেই,
عن عبدالله بن مسعود قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم المرأةُ عورةٌ فإذا خرَجَتْ اسْتَشْرَفَها الشيطانُ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সঃ) বলেছেন, মহিলারা হলো পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং, তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে আসে তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের দৃষ্টিতে) সুসজ্জিত করে দেখায়।
সূত্র: ১১৭৩ তিরমিযী মুসনাতে বাজ্জার-২০৬১ ইবনে খুযাইমা-১৬৮৫
(২)বেগানা (ছাত্রী/শিক্ষিকার) দিকে তাকানো:
মহান রব পবিত্র কালামে পাকে বলেন-
قُل لِّلۡمُؤۡمِنِینَ یَغُضُّوا۟ مِنۡ أَبۡصَـٰرِهِمۡ
অর্থাৎ হে নবী! আপনি ঈমানদার পূরুষদের বলে দেন তারা যেন (মহিলাদের দিকে তাকানো থেকে) নিজেদের চক্ষু অবনত করে রাখে।
সূরা নূর-৩১
(৩) বেগানা পুরুষের (শিক্ষক বা ছাত্র) দিকে তাকানো:
মহিলারদের জন্য বেগানা পুরুষের দিকে বিনা প্রয়োজনর তাকানো নিষেধ। মহান আল্লাহ বলেন,
وقل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم
অর্থ: আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে।
সুরা নুর আয়াত-৩১
উপরন্তু হাদিসে এসেছে,
عن أم سلمة هند بنت أبي أمية أنَّها كانتْ عند رسولِ اللهِ ﷺ ومَيْمُونةُ، قالَتْ: فبَيْنا نحن عندهُ أقْبلَ ابْنُ أمِّ مَكتومٍ فدَخَلَ عليه وذلكَ بعدَ ما أُمِرْنا بِالحجابِ فقال رسولُ اللهِ ﷺ احْتَجَبا مِنهُ فقُلتُ يا رسولَ اللهِ ألَيْسَ هو أعْمى لا يُبصِرُنا ولا يَعرِفُنا فقال رسولُ اللهِ ﷺ أفَعَمْياوانِ أنتُما ألَستُما تُبْصِرانِه
অর্থাৎ হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন আমি ও মায়মুনা একদিন নবিজির কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় (অন্ধ সাহাবী) আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাঃ নবিজির কাছে প্রবেশ করলেন।আর এ ঘটনা ছিল পর্দার আয়াত নাজিল হবার পর।নবি সঃ আমাদের বললেন যাও পর্দা করো।আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! সে তো অন্ধ, আমাদের দেখতে বা চিনতে পারবে না। নবি সঃ বললেন সে যদিও তোমাদের দেখতে পারবে না কিন্তু তোমরা কি দেখতে পারবে না? তোমরাও কি অন্ধ?
সূত্রঃ তিরমিযি হাদিস-২৭৭৮ আবু দাউদ হাদিস-৪১১২ মুসনাদে আহমাদ হাদিস-২৬৫৭৯ নাসাঈ হাদিস-৯২৪১ ইবনে হিব্বান হাদিস-৫৫৭৬
এখানে ভাবনার বিষয় যে, নবিজি সঃ স্ত্রীগণ আমাদের রুহানী মা। তারপরও তাঁদের সামনা সামনি গিয়ে দেখা-সাক্ষাত সাহাবীদের জন্যও মহান আল্লাহ নিষেধ করে দিলেন। নবিজি স: এর স্ত্রীগণ ও সাহাবাদের ব্যাপারে সামনা সামনি হওয়াও নিষেধ হয়।
এতগুলো আয়াত-হাদিসের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আজ হেযবুত তওহীদ ছেলে-মেয়ে সরাসরি সামনে বসিয়ে সহশিক্ষা জায়েয বলা কি কুরআন -হাদিসের প্রকাশ্য বিরোধিতা নয়?
একান্ত প্রয়োজন ও বর্তামান ব্যবস্থাপনা:
তবে একান্ত প্রয়োজন যদি হয়, অর্থাৎ বর্তমানে নারীদের জন্য গাইনী বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার প্রয়োজন ইত্যাদী কারণে যদি মেয়েদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে সে ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানে মেয়েরা পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা,
الضرورات تبيح المحظورات
অর্থাৎ জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়।
সূত্র: আলআশবাহ ওয়াননাযাইর খ: ১ পৃ:৭৮
তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়। কেননা, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
অর্থ: অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। সূরা তাগাবুন আয়াত-১৬
কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো বর্তমানে মেয়েদের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে বর্তমানে সহশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই। এজন্য আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,
اختلاط الطلاب بالطالبات والمدرسين بالمدرسات في دور التعليم محرم لما يفضي إليه من الفتنة وإثارة الشهوة والوقوع في الفاحشة ، ويتضاعف الإثم وتعظم الجريمة إذا كشفت المدرسات أو التلميذات شيئاً من عوراتهن ، أو لبسن ملابس شفافة تشف عما وراءها ، أو لبسن ملابس ضيقة تحدد أعضاءهن ، أو داعبن الطلاب أو الأساتذة ومزحن معهم أو نحو ذلك مما يفضي إلى انتهاك الحرمات والفوضى في الأعراض
অর্থ: বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম। কেননা, এটি ফেতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের সতরের কোনো অংশ খোলা রাখে কিংবা অন্যের সামনে পিনপিনে পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক আঁটসাঁট জামা পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্রা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে; যা সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়।
সূত্র: ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা খ: ১৭ পৃ: ৫৩
ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে আরো বলা হয়েছে,
فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك
অর্থ: সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।
সূত্র: ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা খ: ১২ পৃ: ১৫৬
নবিজীর স: যামানায় মহিলাদের শিক্ষাব্যবস্থা:
সহীহ বুখারী ও সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে,
عن أبي سعيد الخدري قال جاءَتِ امْرَأَةٌ إلى رَسولِاللَّهِ صَلّى اللهُ عليه وسلَّمَ فَقالَتْ يا رَسولَ اللَّهِ ذَهَبَ الرِّجالُ بحَديثِكَ فاجْعَلْ لَنا مِن نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فيهتُعَلِّمُنا ممّا عَلَّمَكَ اللَّهُ فَقالَ اجْتَمِعْنَ في يَومِ كَذا وكَذا فيمَكانِ كَذا وكَذا فاجْتَمَعْنَ فأتاهُنَّ رَسولُ اللَّهِ صَلّى اللهُعليه وسلَّمَ فَعَلَّمَهُنَّ ممّا عَلَّمَهُ اللَّهُ
অর্থ: হযরত আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তাত্থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তাঁরা একত্রিত হলেন এবং নবিজি: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাঁদের শিক্ষা দিলেন।
সূত্র: বুখারী হাদিস- ৭৩১০ মুসলিম-২৬৩৩
عن أبي هريرة قال أنَّ نسوةً مِن الأنصارِ قُلْنَ له يا رسولَ اللهِ إنّا لا نستطيعُ أنْ نأتيَك مع الرِّجالِ فقال رسولُ اللهِ ﷺ موعدُكنَّ بيتُ فلانةَ فجاء فتحدَّث معهنَّ
অর্থ: একবার কিছু সংখ্যক নারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মজলিসে পুরুষদের সাথে বসতে পারি না। আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করুন যাতে সেদিনটিতে আমরা আপনার নিকট আসতে পারি। তিনি বললেন,
موعدكن بيت فلانة
অর্থাৎ নির্ধারিত দিন অমুক মহিলার ঘরে জমায়েত হও। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত করলেন।
সূত্র: সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস-২৯৪১
উপরন্তু আমরা জানি নবিজী স: এর যামানায় মসজিদের নববীর পাশেই আসহাবে সুফফার সদস্যদের নিয়ে একটি আবাসিক মাদরাসা তৈরি করা হয়েছিল। হেযবুত তওহীদের কাছে প্রশ্ন, সেখানে নারী সাহাবারা লেখাপড়া করতেন কি?
সুতরাং সহশিক্ষার এতগুলো কুফল জেনে এবং বুখারী শরীফের হাদিসে নবিজি স: এর যামানার মহিলা সাহাবাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সুস্পষ্টভাবে জানার পরও হেযবুত তওহীদ কিভাবে দাবী করেন যে, নবিজির যামানায় মহিলা-পুরুষ এক সাথে শিক্ষা অর্জন করেছেন?
সকলের জেনে রাখা উচিৎ সহশিক্ষার মাধ্যমে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা উম্মুক্ত করতে নাস্তিক্যবাদ ও মুক্তমনারা আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছে।তাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য নিঃসন্দেহে নাস্তিকতাকে প্রমোট করা ছাড়া কিছু না। আল্লাহ তা’য়ালা হেযবুত তওহীদ নামক এ কুফরী সংগঠনের কালো ছোবল থেকে সকল মুসলিমকে হিফাযত করেন।আমিন!
লেখক:
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
পরিচালক- মাদরাসা মারকাযুন নূর বোর্ড বাজার,গাজীপুর।