Home > হিজবুত তাওহীদ > সংস্কৃতি প্রসঙ্গ:

সংস্কৃতি প্রসঙ্গ:

ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গভাবে জিবন ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি বিষয়ের বিধি-বিধান ইসলাম জানিয়ে দিয়েছে। ছবি অঙ্কন, মুর্তি-ভাষ্কর্য নির্মান ইত্যাদীকে ইসলামে পুরোপুরি হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সময়ের অন্যতম কুফরী সংগঠণের হেযবুত তওহীদ দাবি করছে ভিন্ন এক বিষয়। তাদের দাবিতে বলা হচ্ছে, যেহেতু ভাষ্কর্যের কথা কুরআনে বর্ণিত নেই। সেহেতু ভাষ্কর্য নির্মান নাজায়েয নয়। চলুন আগে তাদের মতবাদটা দেখে নেওয়া যাক।
১. গান-বাজনা হারাম নয়।
২. নবিজি সাঃ নিজেও গান-বাজনা শুনানোর জন্য বলতেন।
৩. নবিজি সাঃ-এর ঘরেও গান-বাজনা চলতো।
৪. চিত্রাঙ্কন করা হারাম নয়।
৫. ভাষ্কর্য তথা মূর্তি নির্মান করা বৈধ।
৬. নাচ-নৃত্য করা জায়েয।
৭. অভিনয়, চলচিত্র হারাম নয়।
৮. মুর্তি ভাঙ্গা যাবে না?
৯. প্রচলিত সকল দিবস পালন করা জায়েয।
১০. আরবের প্রচলিত সাংস্কৃতিক বিষয়ে নবিজি সাঃ উৎসাহিত করতেন।
১১. হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাজনাসহ গান গাইতে হবে।
১২. হা-ডু-ডু, ফুটবল, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদী করতে হবে।
১৩. মূর্তিপূজা বন্ধ করা, নাচ-গান, ভাষ্কর্য নির্মান নিষিদ্ধ করা জঙ্গিদের কাজ।

চলুন এবার প্রত্যেকটা বিষয়ে প্রমাণসহ আলোচনা করা যাক।

কোনো গান কী হারাম নয়?
যে গান মানুষকে আল্লাহ পাকের মহব্বতের সাগরে ভাসিয়ে দেয়, সে গান হারাম নয়। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন শিল্পিদের অহেতুক গান, যা মানুষকে আল্লাহ পাকের স্বরণ থেকে, দ্বীনি দায়িত্ব থেকে গাফেল করে দেয়, তা কখনই জায়েয হতে পারে না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, শুধু অশ্লীলতা না থাকলে সে গান জায়িয। এমনকি তারা বাজনাসহ গানকেও হালাল বলে থাকেন, বরং আলেমরা জোর করে এগুলো হারাম করেছে। দেখুন তারা কী বলে?
যে কোনো জিনিস হারাম কিনা তা জানার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কেতাব দেখতে হবে।কোরআনে যা কিছু নিষিদ্ধ করা হোয়েছে সেগুলি ছাড়া আর সবই বৈধ। এখন কোরআনে দেখুন গান, বাদ্যযন্ত্র, চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয়, নৃত্য, চিত্রাঙ্ক, ভাষ্কর্য নির্মাণ ইত্যাদি আল্লাহ হারাম কোরেছেন কিনা? যদি না কোরে থাকেন তাহলে এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ।আল্লাহ যেটিকে বৈধ কোরেছেন সেটিকে কোন আলেম,মুফতি,ফকীহ ,মোফাসসের হারাম করার অধিকার রাখেন না। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১২

ধর্ম কখনো গান-বাদ্য নৃত্যকে না জায়েজ করতে পারেনা। সনাতন ধর্ম সহ অনেক ধর্মেই এগুলি ঈশ্বরের সান্নিধ্য প্রাপ্তির মাধ্যম ছিল প্রকৃতপক্ষে স্বয়ং স্রষ্টাই সুর ও নৃত্য সৃষ্টি করেছেন। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

যদি শিল্পীর গান মানুষকে মানবতার কল্যাণে আত্মদান করতে উদ্বুদ্ধ করে সেই গান এবাদত। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

আল্লাহর পবিত্র কোরান কাব্যময়। সুতরাং মানব কল্যাণে যতরকম সুর-সংগীত মানুষ আবিষ্কার করতে পারে কোরুক। কেউ বাধা দিতে পারে না’। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫৭

আজান ইসলামের এক অনন্য সংগীত’। -গনমাধ্যমের করণীয়,  পৃ. ৫৯

অর্থাৎ তাদের দাবিমতে কোনো গানই হারাম হতে পারে না। এজন্য তাদের প্রতিষ্ঠাতা এমামও নিয়মিত গান গাইতেন। তারা লিখেছেন,
পন্নী নিজেও ছিলেন শুদ্ধ সংস্কৃতির একজন অনুরাগী ও পৃষ্ঠপোষক। রাগ সঙ্গীতে তার ছিল অগাধ জ্ঞান ও দখল? -মহাসত্যের আহ্বান পৃ:৫২

ইসলাম কী বলে?
যে গান মানুষকে দ্বীনি দায়িত্ব থেকে গাফের করে দেয়, সে গান শোনা জায়িয নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّـهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
কতক মানুষ এমন, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য খরিদ করে এমন সব কথা, যা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে দেয় এবং তারা আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। [সুরা লুকমান : ৬]

এ আয়াটির ব্যাপারে আল্লামা ত্বাকী উসমানী দা.বা. সুরা লুকমানের ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘কুরআন মাজীদের দুর্বার আকর্ষণের কারণে, তখনও যারা ঈমান আনেনি তারা পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে তার তেলাওয়াত শুনত এবং এর ফলশ্রুতিতে অনেকে ইসলামও গ্রহণ করত। কাফেরগণ এ পরিস্থিতিকে নিজেদের পক্ষে বিপজ্জনক মনে করত। তাই তারা কুরআন মাজীদের বিপরীতে এমন কোন আকর্ষণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাচ্ছিল, যাতে মানুষ কুরআন মাজীদ শোনা বন্ধ করে দেয়। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই মক্কা মুকাররমার ব্যবসায়ী নাযর ইবনে হারিছ, যে বাণিজ্য ব্যাপদেশে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করত, ইরান থেকে সেখানকার রাজা-বাদশাহদের কাহিনী সম্বলিত বই-পুস্তক কিনে আনল। কোন কোন বর্ণনায় আছে, সে ইরান থেকে ভালো গাইতে জানে এমন একজন দাসীও কিনে এনেছিল। দেশে ফিরে এসে সে মানুষকে বলল, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে আদ ও ছামুদ জাতির কাহিনী শোনায়। আমি তোমাদেরকে আরও বেশি আকর্ষণীয় কাহিনী শোনাব এবং শোনাব চমৎকার গান। এতে কিছু সাড়া পাওয়া গেল। লোকজন তার আসরে উপস্থিত হতে শুরু করল। আয়াতের ইশারা এ ঘটনারই দিকে। এতে মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে যে, মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ জায়েয নয়, যা মানুষকে তাদের দীনী দায়িত্ব পালন থেকে গাফেল করে তোলে’। এ প্রসঙ্গেই আয়াতটি নাযিল হয়েছে। ইবনে কায়্যিম জাওযী রহি. একি তাফসীর বয়ান করেছেন। -বাদায়িউত তাফসীর, খ. ২ পৃ. ৩১৬

উক্ত আয়াত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
هُوَ الرَّجُلُ يَشْتَرِي الَجْارِيَةَ تُغَنِّيهِ لِيْلًا ونهارًا
(আয়াতটি) ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে নাযিল করা হয়েছে, যে একজন গায়িকা ক্রয় করে দিনরাত তাকে গান শোনাতে। -বাদায়িউত তাফসীর, খ. ২ পৃ. ৩১৬

হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত আছে, উল্লেখিত আয়াতে ‘লাহওয়াল হাদীস’ বলতে গানকে বোঝানো হয়েছে এবং তিনি রীতিমত তিনবার শপথ করে এ কথা বলেছেন।  -তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ১১ পৃ. ৪৬

অপর আয়াতে মহান রব বলেন,
أَفَمِنْ هَذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ وَأَنتُمْ سَامِدُونَ
তোমরা কি এই বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ? এবং হাসছ-ক্রন্দন করছ না? তোমরা গান-কৌতুক করছ। [সুরা নাজম : ৫৯-৬১

উক্ত আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ في قَوْلِهِ: ﴿وأنْتُمْ سامِدُونَ﴾ قالَ: الغِناءُ بِاليَمانِيَّةِ، كانُوا إذا سَمِعُوا القُرْآنَ تَغَنَّوْا ولَعِبُوا.
এর অর্থ সঙ্গীত বা গান-বাজনা, যখন কাফিরেরা কুরআন শরীফ শ্রবণ করত, সঙ্গীত বা গান-বাজনা করত ও ক্রীড়া কৌতুকে লিপ্ত হত, এটা ইয়ামেনবাসীদের ভাষা। -তাফসীরে দুররে মানছুর, খ. ৭ পৃ. ৪৭০

উপরন্তু হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, নবি সাঃ বলেছেন,
الغناء ينبت النفاق فى القلب كما ينبت الماء الزرع
পানি যেরূপ জমীনে ঘাস উৎপন্ন করে, গান তদ্রুপ অন্তরে মুনাফেকী পয়দা করে। -সুনানে বায়হাকী, হাদিস : ৫১০০

হযরত আনাস বিন মালেক রা. কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
صَوْتَانِ مَلْعُونَانِ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ : مِزْمَارٌ عِنْدَ نِعْمَةٍ وَرَنَّةٌ عِنْدَ مُصِيبَةٍ
ইহ-পরকালে দুটি সুর অভিশপ্ত; সুখ ও খুশীর সময় বাঁশীর শব্দ এবং মসীবত-শোক ও কষ্টের সময় হা-হুতাশ ধ্বনি। -মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ৭৫১৩

নবি সাঃ আরো বলেন,
استماع الملاهى معصية و الجلوس عليها فسق و التلذذ بها كفر
গান শোনা গুণাহের কাজ, গানের মজলিসে বসা ফাসেকী এবং গানের স্বাদ গ্রহণ করা কুফরী। -রদ্দুল মুহতার, খ. ৯ পৃ. ৫০৪

সুতরাং বুঝা গেলো, যে গান মানুষের দ্বীনি দায়িত্ব বা আল্লাহ পাকের স্বরণ থেকে গাফেল করে দেয়, তা জায়িয হতে পারে না। উপরন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে বা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার নিকটবর্তী মেয়েদের পরপরুষের সামনে গজল গাওয়া যেমন জায়েজ নেই, তেমনি গায়রে মাহরাম কারো জন্য এসব মেয়েদের গজল শোনাও জায়েজ নয়। মহান রব বলেন,
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ ۚ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও;যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না,ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে,যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বরং তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। [সূরা আহযাব : ৩২]

সুতরাং তাহওহীদের লেভেল লাগিয়ে স্টেইজে যুবতী মেয়েদের তুলে দিয়ে নাচ-গান করিয়ে নিজেদেরকে মুজাহিদ পরিচয় দেওয়া এই হেযবুত তওহীদ থেকে এখনই সবাই সতর্ক হোন।

বাদ্যযন্ত্র কী হারাম নয়?
প্রিয় পাঠক, ইসলামে বাদ্যযন্ত্র হারাম করা হয়েছে। যার প্রমাণ পবিত্র কুরআন এবং হাদিস থেকে অহরহ পাওয়া যায়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
এতদ্বসত্বেও বর্তমানে হেযবুত তওহীদ গান-বাদ্যকে হালাল প্রমাণ করতে যুক্তি পেশ করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। আগে চলুন, দেখুন তারা কী বলেছে-
মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত সুর, বিভিন্ন তার যন্ত্রের ওপর আঘাত বা ঘর্ষণজনিত আওয়াজ,দফ, তবলা বা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও হারাম নয়’। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

মুসলিম শিল্পীরা অনেক বাদ্যযন্ত্র শুরলহরী উদ্ভাবন ও রচনা করেছেন একথা সকলেই অবহিত আছেন’। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

নবীগৃহে গান-বাজনা দেখে আবু বকর রা: কন্যা আয়েশাকে তিরস্কার করতে আরম্ভ করলেন। তখন মহানবী বলেলেন: আবু বকর! ওদেরকে বিরক্ত করো না। আজ ওদের উৎসবের দিন বুখারী-মুসলিম। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯৭

মদিনা জীবনের প্রতি ৩২ দিনে তাকে একটি করে যুদ্ধ সংগঠন করতে হয়েছিল। তাঁর পক্ষে সঙ্গীত, অভিনয় ইত্যাদি শিল্পচর্চা নিয়ে মেতে থাকা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তাই বলে কি তিনি এগুলো নিষিদ্ধ করেছেন? কখনোই নয়। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি বাদ্য সহযোগে গান শুনেছেন এমন ভুরি ভুরি উদাহরন তার পবিত্র জীবনে রয়েছে। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

আরবের বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে, বিবাহে, যুদ্ধে সর্বত্র গানের চর্চা ছিল। অথচ বর্তমানে কেবল হামদ-নাত জাতীয় সংগীত গাওয়াকেই আলেম কোন বৈধ বলে মনে করে থাকেন। তাদের পক্ষে স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি বা পহেলা বৈশাখের গান দূরে থাক, জাতীয় সংগীত গাওয়া ও কাম্য নয়। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চাচ্ছে, বাদ্যযন্ত্র হারাম নয়, নবি সাঃ-নিজেও গান-বাজনা শুনেছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন। এগুলো হারাম করেছেন আলেম-উলামারা। এগুলো ছাড়াও তারা তাদের বক্তব্যে বলে থাকেন, যে গান-বাদ্যে সমাজের উপকার হয়, সে বাদ্যযন্ত্রকে তারা শুধু হালাল নয়, বরং ইবাদত বলে মনে করেন। এজন্য তারা তাদের সদস্যদেরকে সেদিকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন, বরং তারা এটাকে তাদের আনুষ্ঠানিক রূপও দান করেছেন। তারা লিখেছে,
সেমিনারগুলিতে হেযবুত তওহীদের সদস্য সদস্যারা যন্ত্রানুসঙ্গ সহযোগে সংগীত পরিবেশন করে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১২৩

ইসলাম কী বলে?
বাদ্যযন্ত্র ইসলামে পরিস্কার হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। চলুন বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে ইসলাম কী বলে দেখে নেওয়া যাক। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে لهو الحديث অনর্থক কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। [সূরা লুকমান : ৬]

উক্ত আয়াতে لهو الحديث এর ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন,
اللهو الطبل
অর্থাৎ لهو الحديث হলো, ঢোল-তবলা। -তাফসীরে তাবারী, খ. ২০ পৃ. ১৩০

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রহি. বলেন,
وَقَالَ الْحَسَنُ الْبَصْرِيُّ أُنْزِلَتْ هذه الآية ‘وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْم’ فِي الْغِنَاءِ وَالْمَزَامِيرِ
অর্থাৎ এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে গান এবং বাঁশির ব্যাপারে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ৩ পৃ. ৪৫১

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ-বলেন,
إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيَّ أَوْ حُرِّمَ الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْكُوبَةُ
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন অথবা হারাম করা হয়েছে মদ, জুয়া এবং বাদ্যযন্ত্র। -সুনানে আবু দাউদ : ৩৬৯৬

হযরত আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ-বলেন,
لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ৫৫৯০

হযরত আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ-আরও ইরশাদ করেন,
ليشربَنَّ أُناسٌ من أمَّتي الخَمرَ يسمُّونَها بغيرِ اسمِها ويُضرَبُ على رءوسِهِمُ المعازِفُ والمغنِّياتُ يخسفُ اللَّهُ بِهِمُ الأرضَ ويَجعلُ منهمُ القردةَ والخَنازيرَ
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। -সুনানে বায়হাকী, খ. ১০ পৃ. ২২১

হযরত সাহল ইবনে সা’দ আস সায়েদী রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সা. বলেন,
سيكونُ في آخرِ الزَّمانِ خسفٌ وقذفٌ ومسخٌ قيل ومتى ذلك يا رسولَ اللهِ قال إذا ظهَرَتِ المعازفُ والقَيْناتُ واستُحِلَّتِ الخمرُ
অদূর ভবিষ্যতে শেষ যামানায় মানুষের চেহারা বিকৃতি,ভূমিধ্বস হবে।
সাহাবা রাঃ বললেন হে রাসুল সঃ সেটা কখন হবে? নবি সঃ বললেন যখন বাদ্যযন্ত্র,নর্তকী বেশি বেড়ে যাবে এবং মদকে হালাল মনে করা হবে। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ৮ পৃ. ১৩

হযরত আবু উমামা বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ-বলেন,
إنَّ اللهَ بَعَثَني رَحمةً للعالمينَ وهُدًى للعالمينَ وأمَرَني ربِّي بمَحقِ المَعازفِ والمَزاميرِ والأَوْثانِ والصُّلُبِ وأمْرِ الجاهليَّةِ
মহান আল্লাহ আমাকে বিশ্ববাসির জন্য রহমত এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং আমাকে আদেশ করেছেন যেন আমি বাদ্যযন্ত্র এবং মূর্তি,ক্রুশ এবং জাহিলী যুগের কর্ম ধংশ করে দিই। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৩০৭

বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফি রহি. বলেন,
سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ، مِزْمَارًا قَالَ: فَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى أُذُنَيْهِ، وَنَأَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَقَالَ لِي: يَا نَافِعُ هَلْ تَسْمَعُ شَيْئًا؟ قَالَ: فَقُلْتُ: لَا، قَالَ: فَرَفَعَ إِصْبَعَيْهِ مِنْ أُذُنَيْهِ، وَقَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ مِثْلَ هَذَا فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا
একদা হযরত ইবনু উমার রা. বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেয়ে উভয় কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা থেকে সরে গিয়ে আমাকে বললেন, হে নাফি‘! তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কান থেকে হাত তুলে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি এ ধরণের শব্দ শুনে এরূপ করেছিলেন। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৪৫৩৫

প্রিয় পাঠক, এমন প্রমাণ যদি দিতে থাকি, তাহলে বাদ্যযন্ত্র হারাম হওয়ার ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিস থেকে ভুরিভুরি প্রমাণ দেওয়া যাবে। এত প্রমাণ থাকার পরও কীভাবে বলা যায় যে, বাদ্যযন্ত্র হারাম নয়?

নবি সাঃ-কী গান-বাজনা শুনতেন?
হেযবুত তওহীদের সবচে বড় জঘন্য দাবি হলো, নবি সাঃ-নাকি নিজেই গান-বাজনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন!  তারা লিখেছে,
নবীগৃহে গান-বাজনা দেখে আবু বকর রা: কন্যা আয়েশাকে তিরস্কার করতে আরম্ভ করলেন। তখন মহানবী বলেলেন: আবু বকর! ওদেরকে বিরক্ত করো না। আজ ওদের উৎসবের দিন বুখারী-মুসলিম। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ.৯৭

নবী করিম স: আরবে প্রচলিত সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে উৎসাহিত করেছেন, মদিনায় থাকা অবস্থায় তিনি নিজে গান শুনেছেন, গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গুলো যেমন নাচ-গান, চিত্রকলা, ভাস্কর্য নির্মাণ ইত্যাদি ধর্মে অনুমোদিত নয়। মূলত অশ্লীলতার অনুপ্রবেশের কারণেই বিভিন্ন ধর্মবেত্তা আলেমরা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গান, নাটক, বাদ্য, অভিনয়, নৃত্য এগুলোকে হারাম বলে রায় দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ অনুচিত। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩৩-৩৪

মদিনা জীবনের প্রতি ৩২ দিনে তাকে একটি করে যুদ্ধ সংগঠন করতে হয়েছিল। তাঁর পক্ষে সঙ্গীত, অভিনয় ইত্যাদি শিল্পচর্চা নিয়ে মেতে থাকা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তাই বলে কি তিনি এগুলো নিষিদ্ধ করেছেন? কখনোই নয়। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি বাদ্য সহযোগে গান শুনেছেন এমন ভুরি ভুরি উদাহরন তার পবিত্র জীবনে রয়েছে। আরবের বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে, বিবাহে, যুদ্ধে সর্বত্র গানের চর্চা ছিল। অথচ বর্তমানে কেবল হামদ-নাত জাতীয় সংগীত গাওয়াকেই আলেম কোন বৈধ বলে মনে করে থাকেন। তাদের পক্ষে স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি বা পহেলা বৈশাখের গান দূরে থাক, জাতীয় সংগীত গাওয়া ও কাম্য নয়। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

নবীজি সা. নিজে মেয়েদের বলতেন, গাও, বাজাও। -লিংক- https://youtu.be/WTzw16My6Zc

অথচ হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাঃ-বলেন,
من جلسَ إلى قيّنَةٍ يسمعُ منها صبّ اللهُ في أُذنيهِ الآنِكَ يومَ القيامةِ.
যে ব্যক্তি গায়িকার পাশে বসে তার গান শুনবে, কিয়ামতের দিন তার কানে শিশা ঢেলে দেওয়া হবে। -আল মুহাল্লা, খ. ৯ পৃ. ৫৭

যে নবি সাঃ-নিজে গানের ব্যাপারে এমন কঠিন শব্দ উচ্চারণ করে গেছেন, অথচ তারা নবিজির সাঃ উপর মিখ্যা তোহমত লাগিয়ে বলে থাকে- যুদ্ধ থেকে ফিরে নবি স: মহিলাদের বলতেন গাও বাজাও। এমন জঘন্য মিথ্যুকদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সঃ বলেন-
مَن كَذَبَ عليَّ مُتعمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقعَدَه مِن النّار
নবিজি সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে সে তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেবে। -সহিহ বুখারী : হাদিস-১০৮

প্রিয় পাঠক! ইসলামে বাদ্যযন্ত্রসহ গান পরিস্কার হারাম। যা উপরোল্লিখিত আয়াত-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো। মনে রাখতে হবে হারামকে হালাল মনে করা কুফরী। এই কুফরীর দরিয়ায় সমস্ত মুসলমানকে তারা ডুবাতে চায়। এদের এ গভীর ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বিশ্বমুসলিম সতর্ক থাক।সে কামনা রইল।

নাচ-নৃত্য কী জায়েয?
প্রিয় পাঠক, নাচ-গান বা প্রচলিত সংস্কৃতি অমুসলিমদের কালচার। এটা আমরা সবাই জানি। অথচ হেযবুত তওহীদ সেটাকে পাইকারিহারে বৈধতা দিতে মরিয়া হয়ে গেছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, নৃত্য, নাচ ইত্যাদী ইসলামে হারাম করা হয়নি। দেখুন তারা কী বলেছে-
যুদ্ধ বিয়েসহ যেকোনো আনন্দ-উৎসবে মদিনায় নাচ ও গানের অনুষ্ঠান করা হতো’। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

আল্লাহ নাচকে হারাম করতে পারেন না এবং তিনি এগুলো হারাম করেনও নি। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩৪

ইসলাম কী বলে?
প্রথমত জানা দরকার মৌলিকভাবে তো নৃত্য হারাম নয়। কোনো প্রকার হারাম মিশ্রণ ছাড়া নৃত্য করা যাবে। যেমন স্বামীর সামনে কোনো স্ত্রী যদি বাদ্যযন্ত্র ও হারাম কোনো কিছু ছাড়া নৃত্য করে সেটাকে কেউ হারাম বলেনি, বলবে না। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত নৃত্যকে কোনো ভাবেই হালাল বলার উপায় আছে কী? চলুন আগে প্রচলিত নৃত্য কী সেটা জানা যাক।

নৃত্য কাকে বলে?
বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধানে নৃত্যের সংজ্ঞা বলা হয়েছে এভাবে- ‘গীতবাদ্যের ছন্দে অঙ্গভঙ্গির দ্বারা মঞ্চে চিত্ৰকল্প উপস্থাপনের ললিত কলা, নাচ’। -বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান, পৃ. ৭৫৮’

উপরোক্ত সংজ্ঞা মোতাবেক বুঝা গেলো, নৃত্য বলা হয় মঞ্চে বাজনার তালে বিশেষ অঙ্গভঙ্গিসহ যে নাচ প্রদর্শিত হয় কাকেই নৃত্য বলে। প্রচলিত এই নৃত্যের মধ্যে কয়েকটা নিষিদ্ধ বিষয় পাওয়া যায়-
১. বাজনাসহ গান।
২. পর্দার বিধান লঙ্ঘন।
৩. যৌনসুড়সুড়ি।
৪. অনর্থক কাজ:
আর এই চারোটা জিনিষ ইসলামে নিষিদ্ধ। চলুন প্রমাণসহ দেথো যাক-

বাজনাসমেত গান: কোনো বৈধ জিনিষের সাথেও যদি বাজনার মিশ্রণ থাকে, তাহলে সেটা আর বৈধ থাকে না। নবীজি সা. বলেন,
إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيَّ أَوْ حُرِّمَ الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْكُوبَةُ
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন অথবা হারাম করা হয়েছে মদ, জুয়া এবং বাদ্যযন্ত্র। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৯৬

সুতরাং যেহেতু বাদ্যযন্ত্র হারাম, সেহেতু এ বাদ্যযন্ত্রসহ গানের তালে তালে যে নৃত্য করা হয়, তাও হারাম।

পর্দার বিধান লঙ্ঘন: ইসলাম নারীদেরকে পর্দার বিধান দিয়েছে। গাইরে মাহরামের সামনে বেপর্দাসহ যাওয়া নিষেধ। এ পর্দা আদায়ে শরীর কতটুকু ঢাকতে হবে, তা ‘বোরখা ও ইসলাম’ নামক শিরোনামে এ বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে প্রমাণ করেছি, মহিলারা গাইরে মাহরামের সামনে মুখ খুলতেও পারবে না। মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ
অর্থ: হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [সূরা আহযাব : ৫৯]

উপরন্তু হাদিস শরীফে এসেছে, অর্থ:হযরত আয়েশা রাঃ বলতেন,
لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ (وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ) أَخَذْنَ أُزْرَهُنَّ فَشَقَّقْنَهَا مِنْ قِبَلِ الْحَوَاشِيْ فَاخْتَمَرْنَ بِهَا
যখন এ আয়াত وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ অর্থাৎ তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে’’ আয়াতটি যখন নাজিল হলো, তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল ঢাকতে লাগলেন। -সহিহ বুখারী হাদিস : ৪৭৫৯

সুতরাং বুঝা গেলো, গাইরে মাহরাম থেকে মহিলাদের পর্দা করতে সময় মুখও ঢেকে রাখতে হবে। কিন্তু নৃত্যানুষ্ঠানে কী সেটা সম্ভব? কখনই নয়, বরং মুখ তো খোলা থাকেই উপরন্তু নর্তকীরা এমন বিশ্রিভাবে নিজেকে প্রকাশ করে যা ভাষাই প্রকাশ করা যাবে না। তাহলে বেপর্দার কারণেও প্রচলিত এই নৃত্য হারাম।

যৌনসুড়সুড়ি: নৃত্যানুষ্ঠানে নর্তকীরা নিজেদের দেহকে এমন ভাবে প্রকাশ করে থাকে যে, যেকোনো পুরুষ তাদের দেহের প্রতি লালায়িত হতে বাধ্য। ফলে নৃত্যের মাধ্যমে পুনুষদেরকে যৌনসুড়সুড়ি দেওয়া হয়। অথচ প্রত্যেক মহিলাকে নিজের দিকে পুরুষকে আকৃষ্ট করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا نِسَاء النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاء إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। -সুরা আহযাব : ৩২

সুতরাং বুঝা গেলো, যেখানে যৌনসুড়সুড়ি দেওয়া কারণেও নৃত্যকে হারাম বলতে হবেই।

অনর্থক কাজ: এই নৃত্যের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর স্বরণ থেকে বিমুখ করে দেওয়া হয়। উপরন্তু এটাতে মানবজাতির উপকারে আসবে এমন কিছু নেই, বরং একটা অনর্থক বিষয়। পাশাপাশি সময়, সম্পদ ইত্যাদীর অপচয় তো আছেই। এসব বিষয় থেকেও মানবজাতিকে সতর্ক থাকতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে لهو الحديث অনর্থক কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। -সুরা লুকমান : ৬

নর্তকী ও নৃত্য সম্পর্কে নিন্মোক্ত হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে অবৈধ হওয়ার কথা বুঝা যায়। হযরত আবূ উমামা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ-বলেছেন,
لاَ تَبِيعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوهُنَّ وَلاَ خَيْرَ فِي تِجَارَةٍ فِيهِنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ
গায়িকা বিক্রয় কর না, ক্রয়ও কর না এবং তাদেরকে গানের প্রশিক্ষণও দিও না। এদের ব্যবসায়ের মধ্যে কোনরকম কল্যাণ নেই এবং এদের বিনিময় মূল্য হারাম। -জামে তিরমিযি, হাদিস : ১২৮২

প্রিয় পাঠক, গানের ব্যাপারে যদি নবিজি সাঃ-এত সতর্ক করতে বলেন, তাহলে নাচ ও নৃত্যের ব্যাপারে কতটা কঠিন ছিলেন, তা যেকোনো বুঝমান বুঝবেন। সুতরাং প্রচলিত এ নৃত্যকে কোনো আলেমরা জোর করে হারাম বলেননি, বরং হারাম হওয়ার কারণেই হারাম করেছেন উলামায়ে কেরাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, হেযবুত তওহীদ এগুলো হালাল করতে এত মরিয়া কেন? নিশ্চয় কোনো কারণ তো আছেই। এক কথায় মৌলিকভাবে সুস্থ সংস্কৃতি বৈধ, যেখানে ইসলামকে প্রমোট করা হয়। কিন্তু হেযবুত তওহীদ মহিলাদেরকে দিয়ে স্টেইজে যে নাচ-গান করে থাকে, এমনকি তারা এটাকে ইবাদতও মনে করে থাকে। এটা কী ইসলামের নামে চরম অপব্যখ্যা ও বিকৃতি নয়?

চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয় কী বৈধ?
বর্তমানের চলচিত্র, নাট্যকলা ও অভিনয় করা হয় ইসলামের বিধান উপেক্ষা করে। যার ফলে উলামায়ে কেরাম এটাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। কারণ অশ্লীলতা, বাজনা এবং মহিলাদের মাধ্যমেই বর্তমানে চলচিত্র, নাট্যকলা, অভিনয় তৈরি করা হয়, যা ইসলামে অনুমোদিত নয়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ‘নতুন নতুন গান নাটক ইত্যাদি তৈরি করা। আমাদের সদস্যদের মধ্যে যেন শিল্প প্রতিভা বিকশিত হয় সে জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস বা বিষয় উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩৪

লেখক, কবি, নাট্যকারদের অংশগ্রহণ এ সংগ্রামকে নিঃসন্দেহে অনেক ব্যবহার করতে পারে। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩০

নাটক, গান, অভিনয় ইত্যাদির মাধ্যমে সত্যটি জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে জেহাদ। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৪৭

ইসলাম কী বলে?
চলচিত্র, সিনেমা ইত্যাদী মহিলা ছাড়া করা হয় না। অথচ মহিলাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা আছে,
وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولي
অর্থাৎ তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। [সুরা আহযাব : ৩৩]

সুতরাং উলামায়ে কেরাম জোর করে এসব অভিনয় ও চলচিত্রকে হারাম করেছেন বলে হেযবুত তওহীদের দাবি চরম মিথ্যা ও উলামাদের প্রতি জাতির ঘৃণা তৈরি করার নামান্তর। উপরন্তু হেযবুত তওহীদ দাবি করেছে,
রসূলুল্লাহ স: যা করেননি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না’। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৪

প্রশ্ন হলো, নবি সাঃ-কবে, কোথায় অভিনয়,নাটক করে ইসলামের জিহাদ করেছিলেন? আশা করি হেযবুত তওহীদ জবাব দেবেন।

চিত্রাঙ্কন ও ভাষ্কর্য নির্মান কী হারাম নয়?
চিত্রাঙ্কন তথা ছবি আঁকা এবং ভাষ্কর্য তথা মূর্তি তৈরি করা ইসলামে পরিস্কার হারাম। যে ব্যাপারে অগণিত আয়াত ও হাদিস রয়েছে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এগুলোকে বৈধ বলে বিশ্বাস করে থাকে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, আলেমরা ফাতাওয়া দিয়ে চিত্রাঙ্কন বা ভাষ্কর্য হারাম করেছে, কিন্তু এগুলো আসলে হারাম নয়। দেখুন তারা কী বলে-
আলেম দাবিদার একটি শ্রেণী ফতোয়া দিয়ে থাকেন যে নাচ-গান চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি ইসলামে নিষিদ্ধ। তাদের এ ধারণা সত্য নয়, আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে নাচ, গান-বাজনা চিত্রাঙ্কন, ভাস্কর্য নির্মাণ কিছুই নিষিদ্ধ করেন নি। আল্লাহ কেবল নিষিদ্ধ করেছেন অশ্লীলতা, কারণ অশ্লীলতা থেকে সমাজে অশান্তি বিস্তার লাভ করে থাকে। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

অর্থাৎ তারা ভাষ্কর্য ও ছবি অঙ্কন হালাল মনে করে থাকেন।

ইসলাম কী বলে?
প্রত্যেক প্রাণীর মূর্তি হোক বা ভাস্কর্য, খোদাই হোক বা কাঠে কাটা হোক, লোহার হোক বা প্লাস্টিকের, মাটির হোক বা পাথরের মাধ্যমে বা হাতে আঁকা হোক, পূজার উদ্দেশ্যে হোক বা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য হোক বা যেটাই হোক যদি কোন প্রানীর প্রতিকৃতি হয় সেটাই ইসলামের ফতোয়া অনুযায়ী হারাম। পবিত্র কুরআনের আয়াত ও সকল হাদীছ শরীফের কিতাবে এটাই উল্লেখ আছে। এটা আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁর রাসুল সা. থেকে নিষিদ্ধ। কোনো আলেম কর্তৃক হারাম ঘোষিত নয়। কারণ ভাষ্কর্য ও মূর্তি নির্মান করা মূলত সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে নিজেকেও স্রষ্টা হিসাবে পেশ করা হয়। যেহেতু সৃষ্ট কখনো স্রষ্টা হতে পারে না, সেহেতু ভাষ্কর্য ও মূর্তি নির্মান করে আল্লাহর সাথে পাল্লা দেওয়ার মত বোকামী করা বৈধ না। এ বিষয়ে পৃথিবীর সকল ইমাম মুস্তাহিদগন একমত। এ বিষয়ে জানার আগে জানতে হবে ভাষ্কর্য ও মূর্তি কী এক?

ভাষ্কর্য ও মূর্তি কী এক না ভিন্ন?
এ বিষয়ে সম্যক ধারণা পেতে আগে আমাদের বুঝতে হবে,  ভাষ্কর্য ও মূর্তি এক নাকি আলাদা? এর জবাব হলো, ভাষ্কর্য ও মূর্তি এক ও অভিন্ন। যদিও বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু শিক্ষিত ব্যক্তিরা মুর্খতা চর্চা করতে এ দুটোতেই আলাদা করতে চান। তারা বলতে চান,

মূর্তি বলা হয়, যা পূজা অর্চনা বা উপাসনার উদ্দেশ্যে স্থাপন বা নির্মাণ করা হয়েছে। এজন্য এটা তৈরি করা জায়েয নেই।
আর ভাষ্কর্য বলা হয়, যা পূজার উদ্দেশ্যে নয় বরং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য স্থাপন করা হয়। যেহেতু ভাষ্কর্যকে পুজা করা হয় না। সেহেতু ভাষ্কর্য তৈরি করা জায়েয। এই যে ভাস্কর্য এবং মূর্তির মধ্যে সংজ্ঞাগত একটি পার্থক্য দেখানো হলো; এ পার্থক্য মনগড়া। যার কোনো ভিত্তি নেই। মুর্তি এবং ভাষ্কর্য সংজ্ঞাগতভাবে এক ও অভিন্ন। নিন্মে দুটি প্রমাণ দেওয়া হলো-

১. বাংলা একাডেমি অভিধান থেকে দু’টোর সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
ভাস্কর্য হলো পাথর, পাথর ধাতু কাঠ প্রভৃতি খোদাই করে নির্মিত শিল্পকর্ম sculpture’। -বাংলা একাডেমি অভিধান, পৃ. ১০৪৭

মূর্তি: দেহ, আকৃতি, রুপ, প্রতিমা’। -বাংলা একাডেমি অভিধান, পৃ. ১১২৬

অর্থাৎ পাথর ধাতু কাঠ দিয়ে যে আকৃতি নির্মান করা হয় তাকেই ভাষ্কর্য বলে। আর মুর্তির সংজ্ঞাও লেখা হয়েছে তৈরিকৃত আকৃতি। এখানে কোনটার সাথে পুজা করার শর্তারোপ করা হয়নি।

২. মূর্তিকে ইংরেজিতে বলা হয় স্ট্যাচু আর ভাস্কর্যকে ইংরেজিতে বলা হয় স্কাল্পচার। সারা বিশ্বের নামকরা মূর্তিগুলোর একটি হলো ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’, যেটি আমেরিকাতে রয়েছে। আমরা জানি, সেই স্ট্যাচু যার অর্থ মূর্তি সেখানে কেউ পূজা বা উপাসনা করতে যায় না। তার পরেও সেটিকে মূর্তি বা স্ট্যাচু বলা হচ্ছে; সেটাকে স্কাল্পচার বলা হচ্ছে না। তাহলে বোঝা গেল যে, ভাস্কর্য হলে সেটি মূর্তি নয়; এমন চিন্তা বা কথা সঠিক নয়। যদি তাই হতো তাহলে সেটাকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি বলা সঠিক হতো না। সুতরাং প্রমাণ হলো, মুর্তি আর ভাষ্কর্য একই জিনিষ। নামে ভিন্ন হলেও বাস্তবে ভিন্নতা নেই।

মনে রাখতে হবে, মূর্তি বা ভাষ্কর্য তৈরি করা হারাম করা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তার সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন হওয়ার কারণে। আর মুর্তি পুজা হারাম করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক করার কারণে। কারণ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। ভাষ্কর্য হারাম করেছেন খোদ আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসুল সা.। ভাষ্কর্য হারাম সম্পর্কে কুরআন শরীফের আয়াত নিন্মে পেশ করা হলো। মহান আল্লাহ বলেন,
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَ اجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِۙ
তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন। [সূরা হজ্জ : ৩০]

উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণ হলো যে, মূর্তি ও ভাষ্কর্য নির্মানকে হারাম করেছেন খোদ আল্লাহ তা’আলা। কোনো মোল্লা-মৌলবী নন। উপরন্তু রাসুলুল্লাহ সাঃ-অসংখ্য হাদিসের মাধ্যমে যেকোনো প্রাণীর ভাষ্কর্য বা মূর্তি নির্মানকে হারাম বলেছেন। নিন্মে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হলো। হযরত সাঈদ ইবনু আবুল হাসান রহি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ إِنِّي رَجُلٌ أُصَوِّرُ هَذِهِ الصُّوَرَ فَأَفْتِنِي فِيهَا ‏فَقَالَ لَهُ ادْنُ مِنِّي فَدَنَا مِنْهُ ثُمَّ قَالَ ادْنُ مِنِّي فَدَنَا حَتَّى وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ أُنَبِّئُكَ بِمَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ ‏وَقَالَ إِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ نَفْسَ لَهُ ‏
জনৈক লোক ইবনু আব্বাস রা. এর নিকট এসে বলল, আমি এসব ছবি অঙ্কন করে থাকি; তাই এ ব্যাপারে আপনি আমাকে ফাতাওয়া দিন। তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে এসো। সে তার নিকটে এলে তিনি বললেন, (আরও) নিকটে এসো। সে (আরও) নিকটে এলো। পরিশেষে তিনি তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যা শুনেছি, তা তোমাকে বলছি। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি – প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তার তৈরিকৃত প্রতিটি ছবিতে জীবন দেয়া হবে, সে সময় জাহান্নামে তাকে ঐগুলো আযাব দিতে থাকবে। তিনি আরও বললেন, তোমাকে একান্তই যদি (তা) করতে হয়, তাহলে গাছ (পালা) এবং যার জীবন নেই, সে সব বস্তুর (ছবি) প্রস্তুত করো। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১১০

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ.
প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ৫৯৫০

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
أنَّ الْمَلَائِكَةَ لَا تَدْخُلُ بَيْتًا فِيْهِ صُوْرَةٌ وَأَنَّ مَنْ صَنَعَ الصُّوْرَةَ يُعَذَّبُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُوْلُ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ
যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না? আর যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে? (আল্লাহ্) বলবেন, ‘বানিয়েছ, তাকে জীবিত কর। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩২২৪

হযরত আবু হুরায়রা রা. নবি কারীম সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيُقَالُ لَهُمْ  أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ
এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত—দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার করো। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৫৫৭

হযরত আবু তালহা যায়েদ ইবনে সাহল আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাঃ-বলেন,
لا تَدْخُلُ المَلائِكَةُ بَيْتًا فيه كَلْبٌ ولا صُورَةٌ
যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফিরিস্তা প্রবেশ করেননা। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৩২২

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাঃ বলেছেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِيْ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً وَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً
এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর! -সহীহ বুখারী : ৭৫৫৭

হযরত আবূ জুহাইফাহ রা. হতে বর্ণিত,
أَنَّهُ اشْتَرَى غُلاَمًا حَجَّامًا فَقَالَ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ، وَثَمَنِ الْكَلْبِ، وَكَسْبِ الْبَغِيِّ، وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ‏
নবিজি সাঃ রক্তের মূল্য, কুকুরের মূল্য ও যিনাকারীর উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি সুদ গ্রহীতা, সুদদাতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি অঙ্কণকারী আর যে তা করায় এবং প্রতিকৃতি প্রস্ত্ততকারীদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) উপর লানত বা অভিশাপ করেছেন। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫৯৬২

বর্তমান সময়ে চলমান ভাষ্কর্যের রুপ হলো, কোনো সফল ব্যক্তি বা বিপ্লবী মানুষের আকৃতি বানিয়ে কোনো মোড়ের চত্বরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ সম্পর্কে আরও সুস্পষ্টভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ وَأُمَّ سَلَمَةَ ذَكَرَتَا كَنِيسَةً رَأَيْنَهَا بِالْحَبَشَةِ فِيهَا تَصَاوِيرُ فَذَكَرَتَا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏إِنَّ أُولَئِكَ إِذَا كَانَ فِيهِمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ فَمَاتَ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا وَصَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّوَرَ فَأُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, উম্মে হাবীবা ও উম্মে সালমা রা. হাবশায় তাঁদের দেখা একটি গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নবি সাঃ এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি ইরশাদ করলেন, তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরী করে রাখতো। কিয়ামতের দিন তারাই আল্লাহর কাছে সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টি বলে গণ্য হবে। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৪২৭

উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিসগুলো থেকে প্রমাণ হলো ভাষ্কর্য, মূর্তি, চিত্রাঙ্কন সবই ইসলামে পরিস্কার হারাম।

মুর্তি ভাঙ্গা যাবে না?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, ‘আফগানিস্তানের বামিয়ান এলাকা ইসলামের আওতায় প্রথম এসেছিল খলিফা ওমরের রা: যুগে।তখন রাসূলুল্লাহ সাহাবীরা এই মূর্তিগুলোকে ইসলামের পক্ষে ক্ষতিকর মনে করলে ভেঙে ফেলতে পারতেন কিন্তু তারা তা করেননি’। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ.৭৯

অথচ নবিজি সাঃ-থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। হযরত আবূল হাইয়্যাজ আল আসাদী রহি. বলেন,
قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ
হযরত আলী রা. বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯

হযরত আলী রা. বলেছেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ فَقَالَ أَيُّكُمْ يَنْطَلِقُ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلا يَدَعُ بِهَا وَثَنًا إِلا كَسَرَهُ وَلا قَبْرًا إِلا سَوَّاهُ وَلا صُورَةً إِلا لَطَّخَهَا فَقَالَ رَجُلٌ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَانْطَلَقَ فَهَابَ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَرَجَعَ فَقَالَ عَلِيٌّ أَنَا أَنْطَلِقُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَانْطَلِقْ فَانْطَلَقَ ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَمْ أَدَعْ بِهَا وَثَنًا إِلا كَسَرْتُهُ وَلا قَبْرًا إِلا سَوَّيْتُهُ وَلا صُورَةً إِلا لَطَّخْتُهَا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَادَ لِصَنْعَةِ شَيْءٍ مِنْ هَذَا فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
রাসুলুল্লাহ সাঃ একটি জানাযায় ছিলেন। তারপর বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, মদীনায় গিয়ে সকল মূর্তি ভেঙ্গে দেবে, সকল কবর সমান করে দেবে এবং সকল ছবির ওপর কালো কালি মেখে দেবে? এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি পারবো। অতঃপর সে চলে গেল। কিন্তু মদীনাবাসীর ভয়ে ভীত হয়ে ফিরে এল। তখন আলী রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি যাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বেশ, যাও। তিনি গেলেন, আবার ফিরে এলেন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি প্রতিটি মূর্তি ভেঙ্গে এসেছি, প্রতিটি কবর সমান করে এসেছি এবং প্রতিটি ছবিতে কালি মেখে এসেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর একটিও যে ব্যক্তি পুনরায় করবে, সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাযিলকৃত দীনকে অস্বীকার করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৭

পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবি সাঃ-বলেন,
أَرْسَلَنِي بصِلَةِ الأرْحَامِ وَكَسْرِ الأوْثَانِ وَأَنْ يُوَحَّدَ اللَّهُ لا يُشْرَكُ به شيءٌ
আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তি বা ভাষ্কার্যসমূহ ভেঙ্গে ফেলার এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। -সহীহ মুসলিম, হাদিস : ৮৩২

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর মাধ্যমে জানতে পারলাম ‘ভাষ্কর্য নির্মান করা হারাম এবং সেগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার কথা খোদ রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন। এরপরও মূর্তি বা ভাষ্কর্য না ভাঙ্গার ব্যাপারে হেযবুত তওহীদ উৎসাহ করতে চান কেন?

একটি প্রশ্ন:
অনেকে আবার বলে থাকেন, মূর্তি বা ভাষ্কর্য হারাম এজন্য যে, সেটাকে পুজা করা হয়।

জবাব:
এ দাবিটা একান্তই অগ্রহনযোগ্য। কারণ তাদের এ দাবির পক্ষে কোনো দলীল নেই। উপরন্তু তাদের এ বক্তব্যের বিপক্ষে সহিহ হাদিস বিদ্যমান। নিন্মের হাদিসটি তাদের জন্য দলীল। নবি কারীম সাঃ-এর সহধর্মিণী হযরত আয়িশাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّهَا اشْتَرَتْ نُمْرُقَةً فِيهَا تَصَاوِيرُ فَلَمَّا رَآهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ عَلَى الْبَابِ فَلَمْ يَدْخُلْ فَعَرَفْتُ فِي وَجْهِهِ الْكَرَاهِيَةَ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَتُوبُ إِلَى اللهِ وَإِلٰى رَسُوْلِه„ مَاذَا أَذْنَبْتُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا بَالُ هٰذِهِ النُّمْرُقَةِ قَالَتْ فَقُلْتُ اشْتَرَيْتُهَا لَكَ لِتَقْعُدَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَصْحَابَ هٰذِه„ الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ وَقَالَ إِنَّ الْبَيْتَ الَّذِي فِيهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُهُ الْمَلاَئِكَةُ
আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ছবিটি দেখলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর কাছে তওবা করছি এবং তাঁর রাসূলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বালিশ কিসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি প্রদান করা হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরও বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫১৮১

উক্ত হাদিসে যে ছবি নবিজি সাঃ-দেখে অপছন্দ করেছেন, নিশ্চয় সে ছবিতে আম্মাজান আয়েশা রা. পুজা করতেন না। এরপরও কেন নবীজি সা. এত কঠোর হলেন? প্রমাণ হলো, ছবি বা ভাষ্কর্য ইত্যাদী অঙ্কন বা নির্মান করাই হারাম। এজন্য ইবনে হাজার আসকালানী রহি. বলেন,
وفي الحديث دليل على تحريم التصوير
বর্ণিত হাদিস এটাই প্রমাণ করে যে, (প্রাণীর) ছবি অঙ্কন হারাম। -ফাতহুল বারী, খ. ১ পৃ. ৫২৫

উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত:
এ বিষয়ে ইমাম মুস্তাহিদগন বলেন, হযরত ইমাম নববি রহি. বলেন,
قال العلماء تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد، وسواء صنعه لما يمتهن ام لغيره فصنعه حرام بكل حال وسواء كان فى ثوب او بساط او درهم او دينار او فلس او اناء او حائط او غيرها، فاما تصوير ما ليس فيه صورة حيوان فليس بحرام. قلت: ويؤيد التعميم فيما له ظل و فيما لا ظل له.
হযরত উলামায়ে কিরাম বলেছেন: প্রাণীর ছবি আঁকা বা তৈরি করা হারাম, এমনকি কঠিন হারাম। এটা কবীরা গুনাহ। কেননা প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারীদের ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ কঠিন আযাব-গযবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তিরস্কার করার জন্য তৈরি করুক অথবা তিরষ্কার না করার জন্য তৈরি করুক, তা তৈরি করা সর্বাবস্থায় হারাম। অনুরূপ কাপড়ে, বিছানায়, রৌপ্য মুদ্রায়, স্বর্ণ মুদ্রায়, টাকা-পয়সায়, পাত্রে, দেয়ালে অথবা এছাড়া অন্যান্য কিছুতে প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। কিন্তু প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁকা হারাম নয়। আমি বলি (হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) , প্রাণীর ছূরত যে হারাম এ ফতওয়া আমভাবে মূর্তি-ভাস্কর্য ও ছবির ব্যাপারে সমানভাবে প্রযোজ্য। -ফতহুল বারী, খ. ১০ম পৃ. ৩৯৭

প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস ছাড়াও এ সংক্রান্ত আরও অসংখ্য দলীল পেশ করা যাবে। কিন্তু এত এত সুস্পষ্ট আয়াত-হাদিস এবং উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হেযুবত তওহীদ এ প্রকাশ্য হারাম বিষয়কে বৈধতা দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু কেন এ প্রচেষ্টা? এ বিষয়টা বুঝতে আরো একটু গবেষণা করতে হবে যে, নাস্তিকদের সাখে হেযবুতের সম্পর্ক কোথায়। আশা করি গবেষণা শেষ হলে সবাই ক্লিয়ারলি বুঝবেন। ইনশাআল্লাহ।

সকল দিবস পালন করা যাবে?
ইসলামে দুই ঈদ ব্যাতিত কোনো দিবস পালন করা বৈধ নয়। কিন্তু এ মহাসত্যকে অস্বীকার করে সকল দিবস পালন করা বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে হেযবুত তওহীদ।

হেযবুত তওহীদ কী বলে.
তাদের দাবি হলো, প্রচলিত সকল উৎসব ও দিবস বৈধ। তারা লিখেছে,
আমাদের দেশে আবহমানকাল থেকে চলে আসা নবান্ন উৎসব চৈত্রসংক্রান্তি বা পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি কোনো উৎসবই শরিয়ত পরিপন্থি হতে পারেনা। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯৪

আল্লাহর হুকুম মোতাবেকই বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসব প্রচলিত হয়েছে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯৬

যদি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক গরিব দুঃখী মানুষকে তাদের অধিকার প্রদান করা হতো তাহলে এ আনন্দ পূর্ণতা পেত আর এই উৎসবগুলো এবাদত এ পরিণত হতো’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯৭

উৎসব আর ঈদ আসলে একই কথা’। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৯৬

নবী করিম স: আরবে প্রচলিত সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে উৎসাহিত করেছেন’। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩৩-৩৪

আরবের বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে, বিবাহে, যুদ্ধে সর্বত্র গানের চর্চা ছিল। অথচ বর্তমানে কেবল হামদ-নাত জাতীয় সংগীত গাওয়াকেই আলেম কোন বৈধ বলে মনে করে থাকেন। তাদের পক্ষে স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি বা পহেলা বৈশাখের গান দূরে থাক, জাতীয় সংগীত গাওয়া ও কাম্য নয়’। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন আঞ্চলিক নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিষিদ্ধ করেন নি, কারো সংস্কৃতিকেই অবজ্ঞা করে নি’। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩৩

অর্থাৎ তাদের দাবিমতে সকল জাতির সব ধরণের উৎসব, দিবস শীরীয়াহসম্মত।

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে দুটি ঈদ ব্যতিত কোন দিবস পালন করা যাবে না। নবি সাঃ-মাদীনায় এসে প্রচলিত সকল দিবসকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। যা নবিজির সা. নিন্মোক্ত হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। হযরত আনাস রা. বলেন,
قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
রাসুলুল্লাহ সাঃ-যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন মদীনাবাসীদের দু’টি দিবস ছিল, যে সময় তারা খেলাধুলা, রঙ-তামাশা ইত্যাদি উৎসব করতেন। তা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : এ দু’টি দিবস কী? তারা বললেন, আমরা এতে জাহিলী যুগে খেলতামাশা উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন : ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ১১৩৪,

এমন সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকার পরও যারা বলতে চায় যে, “কোনো দিবসকে আল্লাহ নিষিদ্ধ করেননি” তারা মূলত নবিজি সাঃ-কে দোষী সাব্যস্ত করতে চায়। তারা বুঝাতে চায় যে, আল্লাহ নিষেধ করেননি, কিন্তু নবিজি সাঃ-নিষেধ করে আল্লাহর দ্বীনে নিজের মতবাদ চালিয়ে দিয়েছেন এবং  মুক্তমনাদের চেতনা বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর।

অমুসলিমদের সংস্কৃতি নিষিদ্ধ নয়?
ইসলাম এমন এক চুড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ দীন যার ভেতরে সকল বিষয়ের দিকনির্দেশনা রয়েছে। এজন্য কোনো বিষয়ে অন্যধর্মাবলম্বী বা কোনো জাতির কালচার মুসলিমদের পালন করার অনুমোদন নেই।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, কোনো জাতির সংস্কৃতাকি ইসলাম নিষেধ করে না। দেখুন তারা লিখেছে,
ধর্মব্যবসায়ীরা ফতোয়াবাজি করে প্রগতি ও মুক্তচিন্তার সকল পথ রুদ্ধ করেছে। শিল্প সংস্কৃতির চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ৩

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন আঞ্চলিক নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিষিদ্ধ করেন নি, কারো সংস্কৃতিকেই অবজ্ঞা করে নি। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩৩

যে স্রষ্টা এত বড় শিল্পী তিনি কি করে মানবজাতির জন্য শিল্পকে হারাম করতে পারেন। সুতরাং অশ্লীলতা না করে বা কারো সম্মানহানি না করে, স্রষ্টার নাফরমানী না করে যে কোনো শিল্পকর্মই ইসলামের দৃষ্টিতে কেবল বৈধই নয় আল্লাহর সকল নবী-রাসুল, অবতার এমনকি শেষ রসুল মোহাম্মদও (দ.) একে উৎসাহিত করেছেন। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, ইসলাম ধর্ম কোনো জাতির সংস্কৃতিকে নিষেধ করেনা।

ইসলাম কী বলে?
ইসলাম ধর্মের নিজস্ব স্বকীয়তার প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। কোনো ধর্মের অনুসারী বা কোনো জাতির নিজস্ব সংস্কৃতিকে ইসলাম বৈধতা দান করে না। অমুসলিমদের সাথে কোনো ধরণের বন্ধুত্ব করাও ইসলামে নিষেধ। চাই সেটা অন্তরঙ্গ সম্পর্কের মাধ্যমে হোক বা তাদের কালচার গ্রহণের মাধ্যমে হোক। মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। -সুরা মায়িদাহ : ৫১

وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آَيَاتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ.
এবং ইতোপূর্বে তিনি কুরআনে তোমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহ্‌র আয়াতকে অস্বীকার করা হচ্ছে কিংবা বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তাদের সাথে তোমরা বসো না, যতক্ষণ না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের মত বলে গণ্য হবে। [সুরা নিসা : ১৪০

وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ
তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না। [সুরা হুদ : ১১৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ-বলেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
যে ব্যক্তি কোন কাওমের (সম্পদ্রয়ের) অনুসরণ-অনুকরন করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯৮৯

সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন,
من بنى ببلادِ الأعاجمِ، فصنع نَيروزَهم ومهرجانَهم، وتشبَّهَ بهم حتّى يموتَ وهو كذلك، حُشِرَ معهم يومَ القيامةِ
যে ব্যক্তি (অমুসলিম) অনারবীদের দেশে গমন করে, অতঃপর তাদের নববর্ষ ও উৎসবের দিবস পালন করে, আর তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং এ অবস্থাতেই মারা যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার হাশর তাদের সাথেই হবে। -আল ইকতিযা (ইবনে তাইমিয়া) খ. ১ পৃ. ৫১৩

খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমার রা. বলেন,
ﻻ ﺗﺪﺧﻠﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ ﻓﻲ ﻛﻨﺎﺋﺴﻬﻢ ﻳﻮﻡ ﻋﻴﺪﻫﻢ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﺴﺨﻄﺔ ﺗﻨﺰﻝ ﻋﻠﻴﻬﻢ.
তোমরা মুশরিকদের উৎসবের সময় তাদের উপাসনালয়ে যেও না। কেননা, সেখানে তাদের উপর আল্লাহর গযব বর্ষিত হয়। -সুনানুল কুবরা, বায়হাকী, হাদিস : ১৯৩৩৩

সুতরাং বুঝা গেলো, অমুসলিমদের কোনো সংস্কৃতি পালন করা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শামিল। উপরন্তু এ ব্যাপারে নবি সাঃ-আরও সতর্ক করে দিয়েছেন। সাহাবী হযরত আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ-বলেন,
لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ
আমি আশংকা করছি ‘‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতি অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করবে [যা আদৌ করা উচিৎ নয়] এমনকি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তেও ঢুকে যায়, তোমরাও তাতে ঢুকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, তারা কি ইহুদী ও খৃষ্টান?’ জবাবে তিনি বললেন, তারা ছাড়া আর কে? -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৭৩২০

সুতরাং নাচ-গান, ক্রীড়া, কৌতুক, অনৈসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদী এসব কাফেরদের কালচার। এটা হেযবুত তওহীদও লিখেছে,
পতিতাবৃত্তি, মদ্যপান, নাচ-গান ক্রীড়া-কৌতুক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রোমক কাফেরদের কাজ ছিল। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে? পৃ. ৫

আমরা তাদের বই থেকেই প্রমাণ পেলাম যে, নাচ-গান বা প্রচলিত এ অপসংস্কৃতি কাফেরদের কাজ ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সে কাজটি হেযবুত তওহীদ তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচির অন্তুর্ভূক্ত করেছে। প্রমাণ স্বরূপ তাদের ভিডিওগুলোতেও রয়েছে। পাশাপাশি তাদের বইয়ে এ কথার স্বীকৃতি প্রদান করত: তারা লিখেছে-
সেমিনারগুলিতে হেযবুত তওহীদের সদস্য সদস্যারা যন্ত্রানুসঙ্গ সহযোগে সংগীত পরিবেশন করে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১২৩

নতুন নতুন গান নাটক ইত্যাদি তৈরি করা। আমাদের সদস্যদের মধ্যে যেন শিল্প প্রতিভা বিকশিত হয় সে জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস বা বিষয় উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩৪

এমনকি কাবাডি,হা-ডু-ডু, ফুটবল দৌড়,সাঁতার,ব্যডমিন্টন ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এমনকি পন্নী সাহেব ও হুসাইস সেলিম ‘তাওহীদ কাবাডি’ নামে একটা দল গঠণ করেছে। -প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১২৬

শুধু কী তাই? বরং তারা নারী-পুরুষ উভয়কে খেলায় অংশগ্রহণ করতে নীতিমালা প্রনয়ণ করে লিখেছে,
হেযবুত তওহীদের সকল নারী-পুরুষকে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করার জন্য আন্দোলনের সব শাখায় একটি ক্রীড়া বিভাগ থাকবে যার দায়িত্ব পালন করবেন একজন ক্রীড়া সম্পাদক।
জাতীয়ভাবে পরিচালিত বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তাদের আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের চেষ্টা করা। -গঠনতন্ত্র, পৃ. ৩২

অথচ অমুসলিম কাফের-মুশরিকদের সকল কাজের বিরোধিতা করা শরীয়ত প্রবর্তক নবিজি সাঃ-এর নির্দেশ। হযরত ইবনে উমার রা. সূত্রে নবিজি সাঃ বলেন,
خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ
তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবে- দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫৮৯২

অতএব ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া অমুসলিমদের কোনো সংস্কৃতি কালচার মুসলমানরা পালন করতে পারে না। তবে হেযবুত তওহীদ করতে পারে। কারণ তারা তো আর মুসলিম নয়। এজন্য তারা বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে থাকে সাংগঠনিকভাবে। এরপরও কী বলা যাবে তারা মুসলিম?

ইসলামি আইন প্রয়োগ ঠিক নয়:
প্রিয় পাঠক, ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি, নারী নেতৃত্ব, অনৈসলামিক গান, ছবি অঙ্কন, ভাষ্কর্য নির্মান, সিনেমা ইত্যাদী ইসলামে বৈধ নয়। এগুলো বন্ধ করতে নবি সাঃ-এর আগমন হয়েছিলো।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কিন্তু হেযবুত তওহীদ এগুলো ছাড়াও ইসলামের অসংখ্য বিধান কার্যকর করাকে জঙ্গীবাদের কর্ম বলে কটুক্তি করেছে। দেখুন তারা কী বলে-
আজ রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম মানেই হচ্ছে দোররা মারা, চুরি করলে হাত কেটে দেওয়া, নারী নেতৃত্ব হারাম করে দেওয়া, গান গাওয়া, ছবি আঁকা, ভাস্কর্য নির্মাণ, সিনেমা, মূর্তিপূজা ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এই কু-ধারণা প্রচার করা হয়েছে।এর পেছনে কট্টরপন্থী কিছু মোল্লাতন্ত্রিক রাষ্ট্র ও অতি বিশ্লেষণকারী ওলামা শ্রেণি দায়ী। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৯২

আজকের ধর্মের নামে যে সন্ত্রাস চলছে, ব্যবসা চলছে, রাজনীতি চলছে, ধর্মের বিধি-নিষেধের বেড়ি পরিয়ে নারীদেরকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পোশাক লেবাস ও আচার-আচরণে মধ্যে ধর্ম আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সঙ্গীত, সাহিত্য, কলা, সংস্কৃতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদিকে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন করে ফেলা হয়েছে, কেবল তাই নয় এগুলিকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এগুলো সব কিছুই করা হচ্ছে বিকৃত এসলামের ধারণা মোতাবেক। আরো সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে এইসব ধারণার অধিকাংশই মধ্যযুগীয় খ্রিস্টীয় মতবাদ যা সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫৪

নাচ-গান ভাস্কর্য নির্মাণ নিষিদ্ধ করা জঙ্গিদের ইসলাম। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৭৭

ইসলাম কী বলে?
ইসলামি বিধান সমাজে যারা বাস্তবায়ণ করার কাজ করেন তারা রবের কাছে পুরস্কৃত হবেন। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহপাকের বিথান অনুযায়ী ফায়সালা করে না, তাদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,
وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللّهُ إِلَيْكَ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ
এবং (আমি আদেশ করছি যে,) তুমি মানুষের মধ্যে সেই বিধান অনুসারেই বিচার করবে, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবে না। তাদের ব্যাপারে সাবধান থেক, পাছে তারা তোমাকে এমন কোন বিধান থেকে বিচ্যুত করে, যা আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ তাদের কোনও কোনও পাপের কারণে তাদেরকে বিপদাপন্ন করার ইচ্ছা করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক।। [সুরা মায়িদা : ৪৯]

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা করে না, তারাই কাফির। [সুরা মায়িদা : ৪৯]

উকাত আয়াত দু’টি থেকে আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহপাকের দেওয়া বিধান অনুযায়ী অবিবাহিত যুবক ব্যাভিচার করলে দুররা মারা, চুরি করলে হাত কাটা, ভাষ্কর্য, মূর্তি ধ্বংস করা ইত্যাদী ইসলামের যে বিধানাবলী এসেছে, তা মানুষের মাঝে কার্যকর করা মুসলিম বিচারকের উপর ফরজ। যারা করে না, আল্লাহপাকের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কাফের। কিন্তু সে বিধান কার্যকর করা জঙ্গীদের ইসলাম যারা বলে আপনিই বলুন, তারা মুসলিম না নাস্তিক?

Check Also

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.