প্রিয় পাঠক, ইসলাম ধর্মে ঈমান হলো, সর্বপ্রথম ভিত্তি। ঈমান ছাড়া কোনো আমলের বিন্দু পরিমান মূল্য নেই। কিন্তু আমল ছাড়া ঈমান পূর্নাঙ্গ হয় না। যার কারণে ঈমানের পাশাপাশি ইসলামের পূর্নাঙ্গ বিধান পালন করাও শর্তারোপ করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি উপেক্ষা করে হেযবুত তওহীদ দাবি করে বসেছেন যে, জান্নাতে যাওয়ার জন্য শুধু তাওহীদ বা আল্লাহর একান্তবাদে বিশ্বাস থাকলেই যথেষ্ট, আমল করা জরুরী নয়। এ কথাটি বলে তারা মূলত আন্তঃধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠান মিশনে নেমেছে কি না সেটা পরবর্তি ‘সকল ধর্ম পালন করা যাবে’ বলে তাদের যে মতবাদ, সেখানে আলোচনা করা হবে
ইসশাআল্লাহ। চলুন আগে চলমান পর্বের মতবাদটা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
হেযবুত তওহীদের দাবি:
হেযবুত তওহীদ তাদের বইয়ে অনেক জায়গায় এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে লিখেছে যে, শুধু তাওহীদের ঈমান থাকলেই চলবে। তার কয়েকটা নমুনা দেখেন,
‘যদি প্রশ্ন করা হয় জাহান্নামের কোন প্রকারের আজাবের স্পর্শ ব্যতিরেকে একজন মানুষ খুব সহজেই জান্নাতে যাবে কি করে? এর উত্তর হবে একমাত্র তাওহীদ গ্রহণের মাধ্যমে।’
সূত্র: প্রিয় দেশবাসী পৃ:৬৪
‘বিশ্বনবী এ কথাটি পরিষ্কার করে দিয়েছেন এই বলে যে, আল্লাহর সাথে তাঁর বান্দার চুক্তি (Contract) এই যে, বান্দা তাঁর পক্ষ থেকে যদি এই শর্ত পালন করে যে, সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ অর্থাৎ বিধাতা বলে স্বীকার করবে না-তবে আল্লাহও তাঁর পক্ষ থেকে শর্ত পালন করবেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [হাদিস-মুয়াজ (রা.) থেকে বোখারী, মুসলিম, মেশকাত]। এখানে অন্য কোন কাজের (আমলের) শর্ত নেই। এই একটি শর্ত (তওহীদ) পালন করলে আর কোনো গুনাহই তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না। এমনকি মহানবীর উল্লেখিত ব্যভিচার ও চুরির মত কবিরা গোনাহও না।’
সূত্র: আকিদা পৃ:৭
‘আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দিলেন- আমার তাওহীদকে, আমার সার্বভৌমত্বকে যে বা যারা স্বীকার কোরে নেবে, তা থেকে বিচ্যুত হবে না তারা কত এবাদত কোরেছে, তারা কত গোনাহ কোরেছে, কিছুই আমি দেখবো না, তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো, তারা ব্যভিচার ও চুরি করলেও।’
সূত্র: দাজ্জাল পৃষ্ঠা-১৫
‘প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কেন তওহীদের গুরুত্ব প্রচার করছি? এই যে কোর’আনের আয়াত ও হাদীসগুলো উল্লেখ করা হলো, যেগুলোতে দেখা যাচ্ছে কেবল তওহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে ছোট ছোট অপরাধ তো বটেই, এমনকি চুরি, ব্যভিচার, হত্যা সমস্ত অপরাধকেই ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’’
তওহীদ জান্নাতের চাবি-১৫
প্রিয় পাঠক, এখানে সুক্ষ্মভাবে তারা আন্তঃধর্মীয় মতবাদ অর্থাৎ সকল ধর্ম সমান এ বিষয়টি বাস্তবায়ণ করার হীন ষড়যন্ত্রের ছক একেছে। মূলত এ কথাটি দিয়ে তারা নবীজির সা. রিসালাত তথা আখেরী নবী মুহাম্মাদ সা. কে মেনে নেওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো-
১. তাওহীদে বিশ্বাস থাকলেই জান্নাত কনফার্ম। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে শুধু আল্লাহর উপর ঈমান থাকলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে, নবীজির সা. উপর ঈমানের প্রয়োজন নেই।
২. তাওহীদে বিশ্বাস থাকলেই জান্নাতে যেতে আমলের প্রয়োজনীয়তা নেই।
৩. তাওহীদে বিশ্বাস থাকলেই কবীরা গুনাহ করলেও জান্নাতে যাবে।
ইসলাম কি বলে?
চলুন প্রত্যেকটি বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
এক. তাওহীদে বিশ্বাস থাকলেই কি জান্নাত নিশ্চিত?
নিশ্চয় না, বরং আল্লাহ তা’আলা, রাসুল সা. কুরআনে কারীম, আসামানী কিতাবসমূহ, ফিরিস্তাকুল, আখেরাতে বিশ্বাসী ইত্যাদী বিষয়ের উপর ঈমান রাখা জরুরী। যা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে এসেছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيَ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
অর্থ: হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।
সুরা নিসা, আয়াত: ১৩৬
এ আয়াত থেকে জানা গেলো, আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করতে হবে।
মুহাম্মাদ সা. এর উপর বিশেষভাবে ঈমান আনতে হবে।
কারণ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. দুনিয়াতে আগমন করার পর তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করাও বাধ্যতামূলক। মহান আল্লাহ বলেন,
آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ
অর্থ: অন্যান্যরা (সাহাবায়ে কেরাম রা.) যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো।
সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩
প্রিয় পাঠক, এখানে ভেবে দেখুন সাহাবায়ে কেরাম রা. ঈমান এনেছিলেন কেমন ঈমান? শুধু তাওহীদে বিশ্বাসী ছিলেন? নাকি নবীজির সা. উপরও ঈমান এনেছিলেন? নিশ্চয় রিসালাতের উপরও তাদের পূর্ণাঙ্গ ঈমান ছিলো। সুতরাং প্রকৃত মুমিন হতে গেলে নবীজির সা. উপরও ঈমান আনতে হবে।
অপর একটি আয়াত দেখুন,
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
অর্থ: আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর।
সুরা ফাতহ, আয়াত: ৮-৯
এ আয়াতেও নবীজি সা. এর উপর ঈমান আনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আরেকটি আয়াতে বলা হচ্ছে,
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
অর্থ: মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।
সুরা আহযাব, আয়াত: ৪০
এখানেও তো নবীজি সা. কে শেষ নবী হিসাবে বলা হয়েছে।সুতরাং উক্ত আয়াতগুলো থেকে বুঝা গেলো, শুধু তাওহীদের উপর ঈমান জান্নাতের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং রিসালাতে নববী তথা মুহাম্মাদ সা. এর উপরও ঈমান আনতেই হবে।
রবকে মানার পাশাপাশি মুহাম্মাদ সা. কেও মানতেই হবে:
শুধু ঈমান আনলেই যথেষ্ট নয়, বরং রাসুলুল্লাহ সা. কে অনুসরণ এ আনুগত্যের বিষয়টিও ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
অর্থ’ রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক।
সূরা হাশর, আয়াত: ৭
আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন,
قُلْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ فإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
অর্থ: বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।
সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩২
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।
সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অর্থ: যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।
সূরা আহযাব, আয়াত: ২১
এ আয়াতগুলোতে রাসুলুল্লাহ সা. কে মানার কথা জোর তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
تركتُ فيكم أمريْنِ لن تَضِلُّوا ما تمسكتم بهما كتابَ اللهِ وسُنَّةَ رسولِهِ
অর্থাৎ আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিষ রেখে যাচ্ছি, সে দুটি জিনিস তোমরা আঁকড়ে ধরলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না, (এক) কিতাবুল্লাহ (দুই) এবং তাঁর রাসূলের সা. সুন্নাত।
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত-হাদিস থেকে বুঝা গেলো, শুধু আল্লাহর উপর ঈমান থাকা যথেষ্ট নয়, বরং নবীজির সা. রিসালাতের উপর ঈমান আনা এবং মান্য করাও জরুরী।
সাহাবায়ে কেরামকেও রা. মানতে হবে:
জান্নাতে যেতে হলে শুধু আল্লাহ এবং রাসুল সা. কে মানলেই যথেষ্ট নয়, বরং সাহাবায়ে কেরামকেও মানতে হবে। মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের।
সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯
উক্ত আয়াতের তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী মুজাহিদ রহ. বলেন,
كان مجاهد يقول أصحاب محمد
অর্থাৎ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ তথা কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ বলতে নবীজির সা. সাহাবায়ে কেরামকে বুঝানো হয়েছে।
সূত্র: তাফসীরে তাবারী, খ. ৮ পৃ. ৫০১
অন্য আরেকজন তাবেয়ী হযরত আতা রহ. বলেন,
عن عطاء وأولي الأمر منكم قال الفقهاء والعلماء
অর্থাৎ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ তথা কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ বলতে ফুকাহায়ে কেরাম ও উলামায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
সূত্র: তাফসীরে তাবারী, খ. ৮ পৃ. ৫০১
এটা মুজাহিদ রহ. এরও আরেকটি মত।
যাহোক, উক্ত আয়াতে ঈমানদারদেরকে ঈমান আনার পর যথেষ্ট মনে করা হয়নি, বরং আল্লাহ তা’আলা নিজে তাঁকে এবং রাসুলুল্লাহ সা. এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. বা ফুকাহায়ে কেরাম ও উলামায়ে কেরামকেও উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সুতরাং বুঝা গেলো, শুধু ঈমান আনয়ন করাই যথেষ্ট নয়, বরং আল্লাহ তা’আলা, রাসুলুল্লাহ সা, সাহাবায়ে কেরাম বা যোগ্য উলামায়ে কেরামের আদেশ-নিষেধ মানতে হবে।
হাদিস শরীফে আরও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নবীজি সা. বলেন,
إِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
অর্থাৎ বনী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উন্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উন্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
সূত্র: জামে তিরমিযি, হাদিস: ২৬৪১
এ সংক্রান্ত আরও অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস রয়েছে, যেখানে আল্লাহ তা’আলা, রাসুলুল্লাহ সা. এবং সাহাবায়ে কেরামকেও মান্য করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুতরাং জান্নাতে যাওয়ার জন্য শুধু তাওহীদ বা ঈমান যথেষ্ট নয়, বরং আল্লাহ তা’আলা, রাসুলুল্লাহ সা. এবং সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করাও জরুরী।
কুরআন মাজীদও মানতে হবে:
পাশাপাশি কুরআন শরীফের বিধিবিধান মানাও ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاتَّبِعْ مَا يُوحَى إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
অর্থ: আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়, আপনি তার অনুসরণ করুন। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
সুরা আহযাব, আয়াত: ২
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَيَقْتُلُونَ الِّذِينَ يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
أُولَـئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ
অর্থ: যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে এবং পয়গম্বরগণকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে, আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। এরাই হলো সে লোক যাদের সমগ্র আমল দুনিয়া ও আখেরাত উভয়লোকেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই
সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ২১-২২
সুতরাং বুঝা গেলে শুধু তাওহীদে বিশ্বাস থাকলেই জান্নাত কনফার্ম নয়, বরং কুরআনের উপর ঈমান আনা ও মান্য করা বাধ্যতামূলক। সুতরাং আল্লাহর উপর, তাঁর শেষ নবীর উপর, ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কুরআন শরীফ ও কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস, তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস করতে হবে এবং মুহাম্মাদ সা. পবিত্র কুরআন, সাহাবায়ে কেরাম রা. উলামায়ে কেরাম-ফুকাহায়ে কেরাম ইত্যাদী বিষয় মানাও জরুরী।
এক কথায় পূর্ণাঙ্গভাবে মুসলমান হতে হবে। মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
সূররা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেলো, শুধু তাওহীদের উপর ঈমান আনলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না, বরং ইসলামের পুর্ণ কনসেপ্ট মানতে হবে। যেমন তাওহীদ, রিসালাত, আম্বিয়ায়ে কেরাম আ. আসমানী সকল কিতাব, আখেরাত, তাকদীর ইত্যাদীর উপর ঈমান না আনলে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়।