Home > হিজবুত তাওহীদ > রোযা না রাখলে জাহান্নামে যেতে হবে না।

রোযা না রাখলে জাহান্নামে যেতে হবে না।

রমজানে রোজা না রাখলে গুনাহ নেই!

রোযা হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও ফরজ বিধান। কোনো কারণ ছাড়া রোযা পরিত্যাগ করা সুস্পষ্ট কবীরা গুনাহ। যার ফলে রোযা পরিত্যাগকারীকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। এটাই এসেছে কুরআন এবং হাদিসে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ বলছে ভিন্ন এক কথা।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

রোযা কোনো ইবাদত নয়:

তারা তাদের বইয়ে লিখেছে,

‘নামাজ রোজা হজ্ব পূজা প্রার্থনা তীর্থযাত্রা মানুষের মূল এবাদত নয়। মানবজাতী যেন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে এ লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত।’
সূত্র: জঙ্গিবাদ সংকট পৃ:৫৬

রোজা না রাখলে কোনো শাস্তি নেই:

‘আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দিতে চান না, পরিশুদ্ধ করতে চান। তাই তিনি ইসলামের ভিতরে যে কোন বাড়াবাড়ি কে হারাম করেছেন। সওম না রাখার জন্য তিনি কাউকে জাহান্নামে দিবেন বা শাস্তি দিবেন এমন কথা কোর’আনে কোথাও নেই।’
সূত্র: সওমের উদ্দেশ্য-১২

তাদের এ বক্তব্য থেকে তারা বুঝাতে চেয়েছে, রোযা না রাখলে কোনো গুনাহ হবে না। কারণ গুনাহ হলে তো আল্লাহ শাস্তি দেবেন। যেহেতু আল্লাহ শাস্তি দেবেন বলে কুরআনে বলেননি, সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবেও যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তি রোযা না রাখে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ আল্লাহ কাউকে কষ্ট দিতে চাননা।

ইসলাম কি বলে?

রোযা ইসলামের ৫ স্তম্ভের একটি:

রাসূলুল্লাহ সা বলেছেন,

بُنِيَ الإِسْلامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ  وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَان

অর্থাৎ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল,নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ আদায় করা এবং রমজান মাসে রোজা পালন করা।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদিস: ৮

পাঠক, এখানে একটু গভীর নজর দিন। এখানে ইসলামের স্তম্ভ ৫ টি বলা হয়েছে। প্রথমটি হলো তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া। এটা নিশ্চয় ফরজ। যদি তাই হয়, তাহলে একই হাদিসে বর্ণিত একটি বিষয় ফরজ, অপর ৪ টি ফরজ নয়, এটা কি পাগলের প্রলাপ নয়।

রোযা যে ফরজ, এর দলীল পবিত্র কুরআনেই রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّها الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।
সূরা বাক্বারাহ, আয়াত: ১৮৩

উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে রোযাকে ফরজ করা হয়েছে। আর ফরজ বিষয় কোন ওজর ছাড়া পরিত্যাগ করলে ও এ ফরজ বিধানকারী ইবাদত বলে অস্বীকার করলে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে এটাও আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَعْصِ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ

অর্থ: যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
সূরা নিসা, আয়াত: ১৪

উপরন্তু হাদিসে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, নবীজি সা. বলেন,

بينا أنا نائمٌ إذ أتاني رجلانِ فأخذا بِضَبعيَّ فأتيا بي جبلًا وعرًا فقالا لي اصعَد فقلتُ إنِّي لا أطيقُهُ فقالا إنّا سنسهِّلُهُ لكَ فصعِدتُ حتّى إذا كنتُ في سَواءِ الجبلِ إذا أنا بأصواتٍ شديدةٍ قلتُ ما هذهِ الأصواتُ قالوا هذا عُوِيُّ أهلِ النّارِ ثمَّ انطلقَ بي فإذا أنا بقومٍ معلَّقينَ بعراقيبِهم مشقَّقةٍ أشداقُهم تسيلُ أشداقُهم دمًا قالَ قلتُ من هؤلاءِ قالَ هؤلاءِ الَّذينَ يُفطِرونَ قبلَ تحلَّةِ صومِهم

অর্থাৎ একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুইজন মানুষ এসে আমার দুইবাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেলো। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বললঃ পাহাড়ে উঠুন।আমি বললামঃ আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বললঃ আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি।তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত উঠে গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কিসের শব্দ? তারা বললঃ এটা জাহান্নামী লোকদের চিৎকার।
এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকদের কাছে নিয়ে এল যাদেরকে পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নবিন্ন, তা হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণের আগে ইফতার করত।
সূত্র: সহীহ ইবনে খুযাইমাহ-১৯৮৬ সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭৪৯১

প্রিয় ভাই, এই শাস্তি হলো তাদের তার জন্য যারা রোজা রেখেছে; কিন্তু ইফতারের সময় হওয়ার পূর্বে ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার করে ফেলেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি মূলত রোজা-ই রাখেনি তার অবস্থা কি হতে পারে?

আল্লাহর বিধান কি শুধু কুরআনে?

হেযবুত তওহীদ মূলত রোযার ব্যাপারে তাদের এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে আরেকটা বিভ্রান্তির সুযোগ হাতে নিয়েছে। তারা লিখেছে,

‘আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দিতে চান না, পরিশুদ্ধ করতে চান। তাই তিনি ইসলামের ভিতরে যে কোন বাড়াবাড়ি কে হারাম করেছেন। সওম না রাখার জন্য তিনি কাউকে জাহান্নামে দিবেন বা শাস্তি দিবেন এমন কথা কোর’আনে কোথাও নেই।’
সূত্র: সওমের উদ্দেশ্য-১২

আরেক জায়গায় লিখেছে,

“যে কোন জিনিস হারাম কিনা তা জানার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কেতাব দেখতে হবে।কোরআনে যা কিছু নিষিদ্ধ করা হোয়েছে সেগুলি ছাড়া আর সবই বৈধ।
সূত্রঃ আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-পৃঃ১২

সুতরাং এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, রোযা না রাখলে কোনো গুনাহ হবে না এবং তাদেরকে আল্লাহ শাস্তি দেবেন না। এটা একটি চরম কুফরী মতবাদ যে, কুরআনে যা বৈধ করা আছে, সেটা হালাল, আর কুরআনে যা হারাম করা হয়েছে সেটাই হারাম। এ ধরণের পথভ্রষ্টদের থেকে খোদ রাসুলুল্লাহ সা. সতর্ক করে গেছেন। নবীজি সা. বলেন,

أَلاَ هَلْ عَسَى رَجُلٌ يَبْلُغُهُ الْحَدِيثُ عَنِّي وَهُوَ مُتَّكِئٌ عَلَى أَرِيكَتِهِ فَيَقُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابُ اللَّهِ فَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَلاَلاً اسْتَحْلَلْنَاهُ وَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَرَامًا حَرَّمْنَاهُ وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَمَا حَرَّمَ اللَّهُ

অর্থাৎ সাবধান! খুব শীঘ্রই এমন ব্যক্তির আগমন ঘটবে যে, সে তার সুসজ্জিত গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকবে, তখন তার নিকট আমার কোন হাদীস পৌছলে সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের সামনে তো আল্লাহ তা’আলার কিতাবই আছে। আমরা তাতে যা হালাল পাব সেগুলো হালাল বলে মেনে নিব এবং যেগুলো হারাম পাব সেগুলো হারাম বলে মনে নিব। সাবধান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম ঘোষণা করেছেন তা আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মতোই হারাম।
সূত্র: জামে তিরমিযি, হাদিস: ২৬৬৪

সুতরাং রোযা না রাখলে জাহান্নামে যেতে হবে এটাই চুড়ান্ত। মুর্খ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের কথায় কান না দিয়ে চলুন ইসলামের পরিপূর্ণ বিধান পালনে সচেষ্ট হই।

Check Also

নবী-রাসুলগণ কি ব্যর্থ ছিলেন?

সকল নবীগণ আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব স্বীয় স্থানে পূর্ণভাবে পালন করেছেন। কেউ তাঁদের দায়িত্বে কোনো ত্রুটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.