প্রিয় পাঠক, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হিশাবে পৃথিবিতে আগমন করেছেন। যার সুস্পষ্ট ঘোষণা খোদ আল্লাহ তাআলাই পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন। তাছাড়া একটু আগেও আপনারা দেখলেন যে হেযবুত তওহীদ বলেছে,
সেই ক্রীতদাস বেলালকে তিনি (মক্কা বিজয়ের দিন)কাবার উপরে উঠালেন। উঠিয়ে প্রমাণ করে দিলেন মানুষ উর্ধ্বে মানবতা উর্ধ্বে। মানুষকে সর্বোচ্চ আসনে উঠানোর জন্যই তিনি এসেছিলেন। এখানে ঘটেছে রাসূলুল্লাহ রাহমাতাল্লিল আলামিন নামের বহিঃপ্রকাশ। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৫৫
অর্থাৎ আরব উপত্যকায় যে ইসলামের বিজয় হয়েছিলো, সেটার মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ হয়েছিলো এবং সে কারণেই তিনি ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলে খোদ হেযবুত তওহীদই স্বীকৃতি দিয়ে বসেছে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
অথচ মেই হেযবুত তওহীদই আবার দাবি করে বসলো, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব ছিলো পুরো পৃথিবিতে দীন ইসলাম কায়েম করা, আর যেহেতু তিনি তা করে যেতে পারেননি, সেহেতু তারা বলে থাকে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বের জন্য রহমত বা ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ ছিলেন না এবং তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতেও পারেননি। এমন কি এখনও পর্যন্ত তিনি ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ নন। নাউযুবিল্লাহ। দেখুন তারা কী লিখেছে,
বিশ্বনবীর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বকে যারা মাঝপথে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন, তারা আল্লাহর দেওয়া বিশ্বনবীর উপাধি, ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ কেও পূর্ণ হতে দেন নি; অর্থাৎ তিনি এখনও ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ হন নি। -আকিদা : পৃ. ১৯
যতদিন না সমগ্র মানব জাতি নিজেদের তৈরি জীবনব্যবস্থা সমূহ পরিত্যাগ করে মোহাম্মদের মাধ্যমে প্রেরিত আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োগ করবে ততদিন তারা সেই অশান্তি,অন্যায় (ফাসাদ) ও যুদ্ধ,রক্তপাতের (সাফাকুদ্দিমা) মধ্যে ডুবে থাকবে,আজকের মত এবং ততদিন বিশ্বনবীর ঐ উপাধী অর্থবহ হবে না,অর্থপূর্ণ হবে না এবং আজও হয়নি।তাঁর উম্মাহ ব্যর্থ হয়েছে তাঁর উপাধিকে পরিপূর্ণ অর্থবহ করতে। -আকীদা : পৃ. ২০
(যদি) পৃথিবী থেকে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত বন্ধ হয়ে পূর্ণ শান্তিতে মানবজাতি বাস করতে পারতো, মালায়েকদের আশংকা মিথ্যা হতো, ইবলিসের মাথা নত হয়ে যেতো, বিশ্বনবীকে আল্লাহর দেয়া রহমাতাল্লিল আলামিন উপাধির অর্থ পূর্ণ হতো। -বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৪৫
অর্থাৎ তাদের দাবি অনুযায়ী পুরো বিশ্বে যেহেতু দীন প্রতিষ্ঠা হয়নি, অতএব নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখনও বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা রহমাতুল্লিল আলামিন হতে পারেননি।
ইসলাম কী বলে?
এক. রাসুলুল্লাহ সা. সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত। এটা আমার কথা নয়, বরং মহান রবই এ কথার ঘোষণা দিয়েছেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
(হে নবি!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। -সুরা আম্বিয়া : ১০৭
অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন,
لَقَدْ جاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ ما عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُفٌ رَحِيمٌ
(হে মানুষ!) তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছে। তোমাদের যে-কোনো কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সত্য তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু। -সুরা তাওবা : ১২৮
উক্ত আয়াত দু’টি নিয়ে সাধারণ জ্ঞান দিয়ে ভাবলেও স্পষ্ট বুঝে আসবে যে, মহান আল্লাহ বলেছেন যে, আমি আপনাকে রহমত স্বরুপ পাঠিয়েছি। তার অর্থ হলো, আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যখন প্রেরণ করেছেন, তিনি তখন থেকেই রহমত স্বরূপ। পাশাপাশি হযরত আবু উমামা রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
إنَّ اللهَ بَعَثَني رَحمةً للعالمينَ وهُدًى للعالمينَ
আল্লাহ তাআলা আমাকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ করে পাঠিয়েছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং : ২২৩০৭
উপরোল্লিখিত আয়াত এবং হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হলো যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ ছিলেন তখনও, যখন ইসলাম পুরো বিশ্বব্যাপী প্রচার হয়নি, পুরো দুনিয়ায় রক্তপাত বন্ধ হয়নি, তারপরও আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য “রহমত” সার্টিফিকেট দিয়েছেন। কিন্তু ১৪’শ বছর পর যখন ইসলাম পৃথিবীর রন্দ্রে রন্দ্রে পৌঁছে গেছে, সেসময় এসে ‘এখনও নবজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতে পারেননি’ এ কথাটি কী সাহাবায়ে কেরাম রা. ও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনকি আল্লাহ তাআলা-র সাথে চরম বিদ্বেষ লালনের প্রমাণ নয়? তাছাড়া হযরত যাকওয়ান রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
يا أيها الناسُ إنما أنا رحمةٌ مُهداةٌ
হে মানবজাতি, নিশ্চয় আমি (তোমাদের জন্য) রহমত স্বরুপ, সত্য পথের সন্ধানদাতা। -কানযুল উম্মাল : খ. ২ পৃ. ২৯০
হযরত সালমান রা. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি ভাষণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
أنَّ رسولَ اللهِ ﷺ خَطَبَ فقال أيُّما رَجُلٍ مِن أُمَّتي سَبَبْتُه سَبَّةً في غَضَبي أو لَعَنْتُه لَعْنةً فإنَّما أنا مِن وَلَدِ آدَمَ أغضَبُ كما يَغْضَبون وإنَّما بَعَثَني رَحمةً للعالَمينَ فاجْعَلْها صلاةً عليه يومَ القِيامةِ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ভাষণে বলেন, রাগের সময় যদি আমি আমার উম্মতদের কাউকে ভাল-মন্দ বলি অথবা লা’নত করি। তাহলে যেনে রেখো, আমিও আদম সন্তান। আমারও রাগ হতে পারে যেমন তোমরা রাগ কর। তবে আল্লাহ তা’আলা আমাকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ করে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা যেন আমার এই শব্দগুলোকে (ভালো-মন্দ বলা, লা’নত করা) তাদের জন্য কেয়ামতে রহমতে পরিবর্তন করে দেয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৬৫৯
উক্ত হাদীসগুলোতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কামনার দিকে খেয়াল করুন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেকে যখন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলে দাবি করলেন, তখন তিনি জিবিত। অতএব হাদিসগুলো থেকে বুঝা গেল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকালের বহু আগ থেকেও রহমত। সুতরাং যেখানে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই নিজেকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলে দাবি করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. তাঁকে ‘রহমতুল্লিল আলামিন’ বলে স্বীকার ও বিশ্বাস করতেন, এমনকি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ করে পাঠিয়েছেন বলে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই ঘোষণা করলেন, সেখানে পন্নী সাহেব দাবি করলেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখনও ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতে পারেননি। কতবড় ধৃষ্টতা! কতবড় সীমালঙ্ঘন! ভাবা যায়?
তাছাড়া মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ এর পূর্ণতা পেয়েছে বলে খোদ হেযবুত তওহীদও স্বীকৃতি দিয়ে লিখেছে,
সেই ক্রীতদাস বেলালকে তিনি (মক্কা বিজয়ের দিন)কাবার উপরে উঠালেন। উঠিয়ে প্রমাণ করে দিলেন মানুষ উর্ধ্বে মানবতা উর্ধ্বে। মানুষকে সর্বোচ্চ আসনে উঠানোর জন্যই তিনি এসেছিলেন। এখানে ঘটেছে রাসূলুল্লাহ রাহমাতাল্লিল আলামিন নামের বহিঃপ্রকাশ। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৫৫
এছাড়াও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তারা ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলে স্বীকার করেছে। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১২৭; সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ : পৃ. ৮; ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৬
এরপরও ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হননি’ বলে যে বক্তব্য হেযবুক তওহীদ দিয়েছে, তা তাতেে স্ববিরোধিতা।
সমগ্র বিশ্ব ইসলাম মানলে তবেই তিনি রহমত?
হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখনই ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হবেন, যখন সবাই ইসলাম মেনে শান্তিতে বসবাস করবে। দেখুন তারা লিখেছে,
আল্লাহ তাঁর কোর’আনে তাঁর শেষ রসুলকে রহমাতুল্লিল আ’লামিন বলেছেন (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭) । অর্থাৎ শেষ নবী মোহাম্মদ (দ.) সমস মানবজাতির জন্য আল্লাহর প্রেরিত রহমত । যারা তাঁকে এবং তাঁর মাধ্যমে প্রেরিত দীন, জীবন-ব্যবস্থা মেনে নিয়ে সেটাকে তাদের জীবনে কার্যকর করবে শুধু তাদের জন্যই তিনি আল্লাহর রহমত । আল্লাহ বলেছেন তিনি তাঁর রসুলকে সমস্ত মানবজাতির জন্য রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছেন- কাজেই এক সময় সমস্ত মানবজাতি তাঁকে আল্লাহর রসুল হিসাবে মেনে নিয়ে তার মাধ্যমে পাওয়া দীনুল হক (সঠিক জীবন-ব্যবস্থা) তাদের জীবনে কার্যকর, প্রতিষ্ঠা করবে । তা না হলে আল্লাহর দেয়া রহমাতুল্লিল আ’লামিন উপাধি অর্থহীন হয়ে যায়। -দাজ্জাল : পৃ. ৭৫
আল্লাহ আমার প্রিয় নবীর (সা.) টাইটেল দিয়েছেন রাহমাতাল্লিল আলামিন, সমস্ত বিশ্ব জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ, বরকতস্বরূপ…সমস্ত মানবজাতি যখন শান্তি, ন্যায় এবং সুবিচারের মধ্যে থাকবে তবেই তো আমার রাসুল হবেন রহমতাল্লিল আলামিন। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ : পৃ. ১১
জবাব:
যাঁকে মহান রব নিজে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলে প্রেরণ করার কথা বলেছেন, তিনি সে রহমত হতে কোনো কিছুর জন্য মুখাপেক্ষী নন। কে ঈমান আনলো, কে আনলো না, এটা “রহমাতুল্লিল আলামিন’ হওয়াতে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম নয়। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার জন্য রহমত। যেমন ঈমানদারদের জন্য, তেমনি বেঈমানদের জন্যও। কারণ আল্লাহপাক তাঁর নবি-এর ব্যাপারে ব্যাপকভাবে বলেছেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
(হে নবি!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। -সুরা আম্বিয়া : ১০৭
উপরিউক্ত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
كَانَ مُحَمَّدٌ ﷺ رَحْمَةً لِجَمِيعِ النَّاسِ
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত মানুষের জন্য রহমত স্বরুপ ছিলেন। -তাফসীরে কুরতুবী : খ. ১১ পৃ. ৩০৫
আরও স্পষ্ট করে অন্যত্র এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
من آمن بالله ورسوله فله الرحمة فِي الدنيا والآخرة وَمِنَ لم يؤمن بالله ورسوله عوفي أن يصيبه ما كان يصيب الأمم قبل ذلك فهو رحمة للمؤمنين والكافرين
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান আনবে, নবি সা. তার জন্য দুনিয়া এবং আখেরাতে রহমত স্বরুপ। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রসুলের সা. প্রতি ঈমান আনবে না, তার জন্য পূর্ববর্তী উম্মতের উপর আসা গজবের মত বিপদ থেতে বাঁচিয়ে দেয়া হবে। সে হিসেবে নবীজি সা. মুমিন এবং কাফের সবার জন্য রহমত স্বরুপ। -তাফসীরে সামারকন্দী : খ. ২ পৃ. ৩৮২
এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে আল্লামা জামাল উদ্দীন, আব্দুর রহমান বিন আলী আল জাওযী আল কুরাইশি রহি. বলেন,
قوله تعالى ‘وما أرسلناكَ إِلا رحمة للعالَمين’ قال ابن عباس هذا عامّ للبَرِّ والفاجر
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সা. এর ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ হওয়াটা নেককার এবং বদকার সকলের জন্যই ব্যাপক। -তাফসীরে জাদুল মুয়াসসার : খ. ৪ পৃ. ৩৬৫
সুতরাং বুঝা গেলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার জন্য রহমত স্বরূপ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তাছাড়া পবিত্র হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
قِيلَ يا رَسُولَ اللهِ ادْعُ على المُشْرِكِينَ قالَ إنِّي لَمْ أُبْعَثْ لَعّانًا وإنَّما بُعِثْتُ رَحْمَةً
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলা হলো, হে আল্লাহর রসুল, আপনি মুশরিকদের ব্যাপারে বদদুআ করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি অভিশাপকারী হিশেবে দুনিয়াতে আসিনি, এসেছি রহমত স্বরুপ। -সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৯৯
উক্ত হাদিস নিয়ে একটু ভাবলেই স্পষ্ট হবে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবদ্দশায়ও কাফেরদের জন্যও রহমতস্বরুপ ছিলেন। কেননা তিনি মুশরিকদের জন্য বদদোয়া করেননি এবং বদদোয়া না করার জন্য তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ্য করলেন যে ‘আমি রহমত স্বরুপ এসেছি।’ যদি তিনি কাফেরদের জন্যও রহমত স্বরুপ না থাকতেন, তাহলে তিনি কারণ হিসেবে ”আমি রহমত স্বরুপ” বাক্যটি বলতেন না। এটা সাধারণ জ্ঞান (common sense) থাকলেও বোঝা যায়।
যুক্তি কী বলে?
আমরা সবাই জানি পানি মানুষের পিপাসা নিবারণ করে, কিন্তু যদি কেউ পানি পান না করে, তাহলে পানির কার্যকরী ক্ষমতা কী নষ্ট হয়ে যায়? নিশ্চয় না। পানি তৃষ্ণা নিবারণকারী সব সময়ের জন্যই, যে পান করবে, সে ফল পাবে, যে করবে না, সে ফল পাবে না। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন রহমত যে, তাঁকে যারা মানে না, তারাও তাঁর ওসীলায় রবের দয়ায় দুনিয়ায় গজব থেকে বেঁচে থাকে। আমার এ যুক্তির সাথে হেযবুত তওহীদেরও সহমত পাওয়া যায় তাদের বইয়ে। দেখুন কী লিখেছে,
এই জীবনব্যবস্থাও (ইসলাম) পৃথিবীর সর্বত্র প্রযোজ্য, প্রয়োগযোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিদায়ক। এজন্যই আখেরি নবী বিশ্বনবী মোহাম্মদ মোস্তফা (দ.) এর উপাধি আল্লাহ দিয়েছেন রহমাতাল্লিল আলামিন। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৭২
সুতরাং সারাবিশ্ব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে না মানলেও তিনি সবার জন্য রহমত এটাই চুড়ান্ত সত্য।
অভিযোগ:
‘নবিজি সাঃ এখনও রহমাতুল্লিল আলামিন হন নি’ বলে হেযবুত তওহীদ যে দাবি করেছে, তার কারণ হিসাবে তারা লিখেছে যে, নবিজি সাঃ-কে পাঠানো হয়েছে সারা দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষের জন্য ও সর্বত্র দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করে সমস্ত রক্তপাত বন্ধ করার জন্য। অতএবং যতদিন রক্তপাত বন্ধ না হচ্ছে ততদিন তিনি ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতে পারেন না। দেখুন তারা লিখেছেন-
তিনি আল্লাহ থেকে আদেশ প্রাপ্ত হোয়ে নিজের দায়িত্ব ঘোষণা কোরলেন, আমি আদিষ্ট হোয়েছি ততক্ষণ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম (কেতাল) চালিয়ে যেতে, যে পর্যন্ত না প্রত্যেকটি মানুষ আল্লাহকে তাদের একমাত্র এলাহ হিসাবে এবং আমাকে আল্লাহর রসুল হিসাবে মেনে না নেয় [আব্দুল্লাহ এবনে ওমর (রাঃ) থেকে- বোখারী)। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট হোল যে, রসুলাল্লাহর দায়িত্ব সমগ্র মানবজাতির উপরে, পুরো মানবজাতির জন্যই তিনি রহমত, তাই তাঁর উপাধিও আল্লাহ ছিলেন রাহমাতাল্লিল আলামীন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৯৯
এখানে তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দায়িত্ব ছিল, পুরো বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষ যতক্ষন না আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মেনে না নেবে, ততক্ষণ তরবারীর যুদ্ধ করতে তিনি আদিষ্ট ছিলেন। অর্থাৎ বেঈমানরা হয়তো ঈমান আনবে, নইলে নবিজি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ঈমানের পথকে বিজয়ী করতে পারতেন, তাহলেই তিনি ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতে পারতেন। কিন্তু তিনি ইন্তেকালের আগে শুধু আরব ভূ-খন্ডটি বিজয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন, পুরো বিশ্বে সক্ষম হননি। সেহেতু তিনি বিশ্বের জন্য রহমত হতে পারেননি।
জবাব:
চলুন প্রথমে তাদের উল্লেখিত হাদিসটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য নির্দেশিত হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ২৫
উক্ত হাদিসে বুঝা যাচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পৃথিবীর সমস্ত কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদৌ কি বিষয়টি এমন? না। বিষয়টি বুঝতে উক্ত হাদিসটির প্রেক্ষাপট জানতে হবে। কারণ কুরআন শরীফের অনেক আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট থাকে, যাকে শানে নুযুল বলা হয়। ঠিক তেমনি হাদিসেরও প্রেক্ষাপট থাকে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিসটি বলারও প্রেক্ষাপট থাকে। যাকে ‘শানে উরুদ’ বলা হয়। উক্ত হাদিসটিরও শানে উরুদ রয়েছে। হাদিসটির শানে উরুদ হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَوْمَ خَيْبَرَ لأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ مَا أَحْبَبْتُ الإِمَارَةَ إِلاَّ يَوْمَئِذٍ قَالَ فَتَسَاوَرْتُ لَهَا رَجَاءَ أَنْ أُدْعَى لَهَا قَالَ فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ فَأَعْطَاهُ إِيَّاهَا وَقَالَ امْشِ وَلاَ تَلْتَفِتْ حَتَّى يَفْتَحَ اللَّهُ عَلَيْكَ قَالَ فَسَارَ عَلِيٌّ شَيْئًا ثُمَّ وَقَفَ وَلَمْ يَلْتَفِتْ فَصَرَخَ يَا رَسُولَ اللَّهِ عَلَى مَاذَا أُقَاتِلُ النَّاسَ قَالَ قَاتِلْهُمْ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ فَقَدْ مَنَعُوا مِنْكَ دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلاَّ بِحَقِّهَا وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাইবারের দিন বললেন, নিশ্চয়ই আমি ঐ ব্যক্তির হাতে পতাকা তুলে দেবো, যে লোক আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে। তাঁর হাতেই আল্লাহ তাআলা বিজয় দেবেন। উমর রা. বলেন, শুধু ঐ দিনটি ব্যতিত আমি কখনো নেতৃত্ব লাভের আশা করিনি। এ প্রত্যাশা নিয়ে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেলাম, হয়তো এ কাজের জন্য আমাকে ডাকা হতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী ইবনে আবু তালিবকে রা. ডেকে তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিলেন এবং বললেন, অগ্রসর হও, এদিক-ওদিক দৃষ্টি দিও না, যতক্ষণ আল্লাহ তাআলা তোমাকে বিজয় দেন। অতঃপর হযরত আলী রা. সামান্য অগ্রসর হয়ে থামলেন, এদিক-সেদিক দেখেননি। এরপর চিৎকার করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, কোন কথার উপর আমি লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে আর কোনো ইলাহ নেই, আর নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। যখনই তারা এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, তখনই তারা তাদের প্রাণ ও ধন-মাল তোমার হাত হতে মুক্ত করে ফেলবে। তবে কোন প্রাপ্য অধিকারের প্রশ্নে মুক্ত হবে না। আর তাদের হিসাব আল্লাহর নিকট। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৪০৫
প্রিয় পাঠক, আপনিই ভেবে বলুন তো, হাদিসটি কি পৃথিবির সমস্ত কাফেরদের ব্যাপারে বলা হয়েছিলো? নিশ্চয় না। এজন্য হাদিস বিশারদগণ বলেন,
وان المراد بهذا مشركو العرب و اهل الاوثان ومن لا يؤحد وهم كانوا اول من دعي الي الاسلام وقوتل عليه
এ হাদিসের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তৎকালীন সময়ের আরবের মুশরিকরা ও মূর্তিপূজারীরা এবং যারা তাওহীদের স্বীকৃতি দেয়নি তারা। কারণ তারাই প্রথম যাদেরকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল এবং হত্যা করা হয়েছিল। -উমদাতুল ক্বারী : খ. ৮ পৃ. ৩৫৩
সুতরাং ইবনে ওমর রা. এর বুখারীর হাদিসের প্রেক্ষাপট থেকে বুঝা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার কথা বলেছিলেন, সেটা ছিলো খায়বারের আরবের দুষ্ট মুশরিকদের বিরুদ্ধ। সারা দুনিয়ার সকল মুশরিকদের বিরুদ্ধে নয়। হাদিসটির প্রেক্ষাপট না জেনে, হাদিসটির মর্মার্থ না বুঝে ‘সারা দুনিয়ার কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করে মুসলিম বিশ্ব ইসলাম কায়েম করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব এবং সেটা হলেই তিনি ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হবেন’ এমনটা বলা স্পষ্ট মূর্খতা এবং ‘যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা করে যেতে পারেননি বলে তিনি এখনও ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতে পারেননি’ এমনটি বলা কুরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট বিরোধিতা। যাহোক, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবিবাসীসহ সকল জগতের জন্য রহমত। এটা যারা অস্বীকার করে, তারা আর যাই হোক মুসলিম হতে পারে না।
তাহলে পন্নী কী সমগ্র জাহানের এমাম?
হেযবুত তওহীদ দাবি করেছে,
এ যামানার এমাম, The Leader of the Time, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। যেহেতু তিনিই সমস্ত মানবজাতিকে আল্লাহর তওহীদের দিকে আহ্বান কোরেছেন কাজেই তিনি কেবল মোসলেম উম্মাহর এমাম নন, তিনি বিশ্ববাসীর এমাম। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৩৯
প্রশ্ন হলো, হেযবুত তওহীদের দাবি ছিলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা বিশ্বের জন্য রহমত হতে পারেন তখনই, যখন সবাই তাঁকে মেনে নিয়ে শান্তির সমাজ গঠণ করবে। এর আগে তিনি রহমাতুল্লিল আলামিন হতে পারবেন না’। তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, যে পন্নী সাহেব নিজেকে ‘এমামুযযামান তথা যামানার এমাম’ হিশাবে দাবি করেছেন এবং তার অনুসারিরা তাকে বিশ্ববাসীর এমাম বলে মেনে নিয়েছে, অথচ দুনিয়াময় এখনও অশান্তি বিরাজ করছে। উপরন্তু হাতেগোনা কয়েকজন লোক ছাড়া বিশ্ববাসী তাকে এমাম হিশাবে মেনে নেয়নি। মুষ্টিময় কিছু লোক তাকে অনুসরন করার কারণেই যদি সে ‘যামানার এমাম’ হতে পারে, তাহলে পৌনে দুই’শ কোটি মুসলিম যাঁকে মেনে নিলেন, সেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতে পারেননি, এমন দাবি করা কী এক চোখা দাজ্জালের অনুসরণের প্রমাণ নয়? যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এতো অনুসারী হওয়ার পরও তিনি ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ হতে না পারেন, তাহলে পন্নী সাহেবও ‘যামানার এমাম’ হতে পারে না।