ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সা. দুনিয়াতে এসে টানা ২৩ টি বছর অবিরাম মেহনত করেছেন অমুসলিমদের মুসলিম বানাতে। ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন জাতির সামনে দিন-রাত। ফলে সাহাবায়ে কেরামের এক বিরাট জামাত তৈরি হলো। তাঁরই ধারাবাহিকতায় আজ বিশ্বব্যাপী পৌনে দুই’শ কোটি মুসলিম জনপদ। সবার দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনা এক না হলেও এক কালেমার ছায়াতলে সবাই। অবশ্য মুসলিম নাম ধারী শিয়া, কাদিয়ানী, হেযবুত তওহীদ মুসলিম নয়। এরা মুসলিম বিদ্বেষীদের তৈরি।
চলুন মুসলিমদের সম্পর্কে তারা কী বলে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। তারা বলে থাকে,
১. মুসলিমরা অশিক্ষিত জাতি।
২. মুসলিমরা কালিমা বিচ্যুত।
৩. মুসলিমরা সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্যুত।
৪. মুসলিমরা ইসলাম থেকে বহিস্কৃত।
৫. বর্তমানের কেউ মুসলমান নয়।
৬. বর্তমানের কেউ মুমিন নয়।
৭. মোঘল শাসনের লোকেরাও প্রকৃত মুসলিম ছিল না।
৮. সকল মুসলমান ফাসেক, কাফের ও মুশরিক।
৯. সকল মুসলিম যে কাফের, এটা আলেমরা মানুষকে বুঝতে দেয় না।
১০. আলেমরা মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র মানে।
১১. মুসলমানরা আবু জেহেল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বার মতো কাফের।
১২. মুসলিমরা আবু জেহেলদের চেয়েও নিকৃষ্ট।
১৩. মুসলিমদের অন্তরে মোহর লেগে গেছে।
১৪. মুসলিমরা আবর্জনা।
১৫. মুসলিমরা মৃত লাশ।
১৬. মুসলিমরা গলিত লাশ যা শুধু দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
১৭. মুসলমানদের ইবাদত অন্য ধর্মাববলম্বীদের মতো।
১৮. মুসলিমরা মালাউন।
১৯. মুসলিমরা ইয়াহুদীদের চেয়েও অভিশপ্ত।
২০. মুসলমানদের ইবাদত নিরর্থক।
২১. মুসলিমদের থেকে আলাদা হতে হবে।
২২. মুসলমানদের সাথে কোনো ইবাদত করা যাবে না।
২৩. মুসলিমরা দাজ্জালের জাহান্নামে পড়ে আছে।
২৪. মুসলমান জাহান্নামি।
অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ পৃথীবীর পৌনে দুই’শ কোটি মুসলমানকে বেঈমান, কাফের, মুশরিক, মালাউন, মক্কার কাফেরদের মতো, ইহুদীদের মতো ও জাহান্নামি বলে আখ্যায়িত করেছে এবং পাশাপাশি মুসলিমদের ইবাদতকে অমুসলিমদের ইবাদতের সাথে তুলনা ও অনর্থক বলে দাবি তুলেছে। উপরন্তু মুসলিমদের সাথে ইবাদত করা যাবে না, মুসলিমদের সমাজ থেকে আলাদা হতে সবাইকে দাওয়াত দিচ্ছে। চলুন প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রমাণ ও জবাব দেখা যাক।
মুসলিমরা অশিক্ষিত জাতি?
বিজ্ঞান চিকিৎসা রসায়ন অংক ইত্যাদী সর্বরকম জ্ঞান থেকে এ জাতি বঞ্চিত হয়ে এক অশিক্ষিত অন্ধ জাতিতে পরিণত হয়েছে। [শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৭৬]
মুসলিমরা কালিমা বিচ্যুত
মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটি কালেমা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। [মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) : পৃ. ২]
মুসলিমরা সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্যুত:
আকিদার বিচ্যুতির কারণে, দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি ও তার ফলে অনৈক্য করতে করতে এই জাতি সত্যের মহাসড়ক থেকে বহু আগেই বিকৃত হয়ে মিথ্যার অন্ধকার অলিগলিতে ঢুকে পড়েছে। [তাওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৮]
মুসলিমরা ইসলাম থেকে বহিস্কৃত:
‘দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বনবীর ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর ইবলিস এই উম্মাহর আকিদায় বিকৃতি ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হল। যার ফলে এই জাতি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ ও ঐ ৫ দফা কর্মসূচী দু’টোই ত্যাগ করে ইসলাম ও উম্মতে মোহাম্মদীর দু’টো থেকেই বহিষ্কৃত হয়ে গেল’। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৪৮]
তাঁর তাঁর ওফাতের পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং ঐ ৬০/৭০ বছর পর বিশ্বনবীর সাক্ষাৎ সঙ্গীরা (রা.) শেষ হয়ে যাবার পরই পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।এই সংগ্রাম যেই মূহুর্তে বন্ধ হলো জাতি হিসাবে ত্যাগ করা হলো সেই মূহুর্ত থেকে জাতি হিসাবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মাদী শেষ হয়ে গেল। [আকীদা : পৃ. ১৬]
বর্তমানের কেউ মুসলমান নয়:
সেই সর্বভৌমত্ত তওহীদ যেমন পৃথিবীর কোন জাতির মধ্যে নেই, তেমনি এই তথাকথিত মুসলিম জাতির মধ্যেও নেই। অন্য সব ধর্ম ও জাতি যেমন এবং যতখানি বহুত্ববাদের, শিরক, কুফর ও নাস্তিক্য ডুবে আছে। এই জাতিও ততখানি ডুবে আছে। অন্য ধর্মের মানুষগুলোর মত এই ধর্মের মানুষগুলোও বুঝছেনা, কেমন করে তারা আর মুসলিম নেই’। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ২৮]
১৪০০ বছর পর মুসলিমদের সামনে যখন রসুলের জিবনী আলোচিত হয় তখন তাদের অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়, তার আবেগাপ্লুত হয়ে যায়। নিজের নেতার প্রতি ভালোবাসার এমন নিদর্শন অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের মধ্যে খুব বিরল। নেতার প্রতি ভালোবাসা আরেক রূপ প্রকাশিত হয় যখন ইসলামবিদ্বেষীদের চলচ্চিত্র সাহিত্য কার্টুন ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূলের অবমাননা করে থাকে, এর বিরুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নবির উম্মাহ দাবিদার এই জনসংখ্যা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।যদিও তারা নামে মুসলিম কিন্তু তারা ইসলামে নেই। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানে না। শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ ও প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৮৩
বর্তমানের কেউ মুমিন নয়:
আমি যদি এটা প্রমাণ কোরতে সক্ষম হোই যে, বর্তমানে প্রচলিত এসলাম আল্লাহর নাযেলকৃত ‘এসলাম’ নয়, তাহলে যারা অনুসারী তারাও প্রকৃত মোসলেম নয়,প্রকৃত মো’মেনও নয়। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৭২/৮৪]
এই মোসলেম দাবিদার জনগোষ্ঠীর জাগতিক হীনতা, অপমান, লাঞ্ছনার একমাত্র কারণ, তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মোমেন নয়। তার আল্লামা হতে পারেন, মুফতি হতে পারেন, মহাশিক্ষিত, মহা বুযুর্গানে দীন হতে পারেন, কিন্তু তারা মোমেন নয়। তারা বহু আগেই তাদের দীন হিসাবে ইসলামকে ত্যাগ করে পাশ্চাত্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিয়েছে এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৫৩]
মোঘল শাসনের লোকেরাও প্রকৃত মুসলিম ছিল না। [শিক্ষাব্যবস্থা : পৃ. ৪৫]
সকল মুসলমান কাফের ও মুশরিক:
তওহীদ থেকে বিচ্যূত হোয়ে পুরো মানবজাতি কার্য্যত কাফের এবং মোশরেকে পরিণত হোয়েছে। [আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ২৩]
আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা (মুসলিম দাবিদার জনগোষ্ঠী) কাফেরে পরিণত হয়েছে এই সত্যটি আলেম সাহেবেরা মানুষকে বুঝতে দেন না পার্থিব স্বার্থে গোপন রাখেন। [ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৩৮]
১৫০ কোটির এই জনসংখ্যাটি যারা নিজেদেরকে কেবল মো’মেন, মোসলেমই নয় একেবারে উম্মতে মোহাম্মাদী বোলে দাবি কোরে থাকে তারা যে কার্যত কাফের ও মোশরেক তা আমার কথা নয়, এ কথা স্বয়ং আল্লাহর। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৮৩]
মোমেন মোসলেম দাবিদার ১৫০ কোটি এ জনসংখ্যা যে প্রকৃত পক্ষে মো’মেন,আল্লাহ রসুলের দৃঢ় বিশ্বাস ও বহু আমল সত্ত্বেও তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মোশরেক এবং কাফের। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১০৮]
সমস্ত পৃথিবীর মুসলিম বলে পরিচিত জনসংখ্যা কার্যতঃ কাফের, জালেম এবং ফাসেক। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১৪]
আমি যে পৃথিবীর দেড়শো কোটি মানুষকে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের বলছি আমার এ কথার গুরুত্ব ও দায়ীত্ব সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ সচেতন’। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ১১]
এই কোরআনের কিছু মানা আর কিছু না মানাই হল শেরেক… সুতরাং এই জাতি আল্লাহর কোরআনের কিছু অংশ মানা আর কিছু অংশ না মানার কারণে কার্যত মোশরেক হয়ে আছে’। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৭]
জেনে রাখুন আল্লাহর হুকুম না মানার কারনে এরা সবাই ইসলাম থেকে বহিস্কার হয়ে গেছে এবং পুরো মানবজাতিকে কাফের মোশরেক হয়ে গেছে। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৪৯]
তাদের (মুসলিমদের) মোকাম্মেল ঈমান থাকা সত্ত্বেও কাফের-মোশরেক হয়ে আছে। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৮৬]
তন্ত্রমন্ত্র মেনে কাফের সবাই কাফের:
এই মোসলেম দাবিদার জনসংখ্যাটি তাদের জাতীয় জীবনে কেউ গণতন্ত্র,কেউ সমাজতন্ত্র,কেউ রাজতন্ত্র,কেউ একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র,ism,cracy ইত্যাদি মেনে চোলছে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে ঐ সমস্ত তন্ত্রমন্ত্রের সার্বভৌমত্ব মানছে,এভাবে তারাও কার্যতঃ (Defacto) মোশরেক ও কাফেরে পরিনত হোয়েছে। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৭৯/১৩৮]
আজ এই জাতি যেটা নিজেকে উম্মতে মোহাম্মদী বলে মনে করে তার দুই প্রভু দুই বিধাতা দুই এলাহ।এরা এক বিধাতার, ইলাহের এবাদত করে প্রচুর নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত দাড়ি-টুপি কুলুখ, দোয়া-দরুদ তাহাজ্জুদ লম্বা কোর্তা, অপ্রয়োজনীয় চিৎকার করে জিকর করে, মেয়েদের বাক্স ভরে, আর অন্য ইলাহের এবাদত করে তাদের তৈরি বিচারব্যবস্থায় বিচার করে, তাদের তৈরি দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি ও পুরস্কার দিয়ে, তাদের তৈরি তন্ত্র মন্ত্র অনুযায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করে।এর চেয়ে বড় শেরেক সম্ভব নয়, এর চেয়ে বড় বেদাত সম্ভব নয়। [ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১০০]
উপরোক্ত লেখাগুলোর মাধ্যমে হেযবুত তওহীদ পৃথীবীর পৌনে দুই’শ কোটি মুসলমানকে বেঈমান, কাফের, মুশরিক বলে সাব্যস্ত করেছে।
ইসলাম কী বলে?
আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন ইসলাম এখনো পৃথিবীতে অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। যা আমি ইতিপূর্বে হেযবুত তওহীদের বই দিয়েও প্রমাণ করেছি। সুতরাং যেহেতু ইসলাম ধর্ম এখনও অবিকৃত রয়েছে, ফলে তার অনুসারীরাও সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হবে, এটাই বাস্তবতার দাবী। সুতরাং পৃথীবীর পৌনে দুই’শ কোটি মুসলমানকে বেঈমান, কাফের, মুশরিক, মালাউন, কুকুর, মক্কার কাফেরদের মত, ইহুদীদের মত ও জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা নিশ্চয় ইসলাম বিদ্বেষীদের কর্ম। সুতরাং যারা পৃথিবীর সকল মুসলামন কাফের ও মুশরিক হয়ে গেছে বলে দাবি করে, তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
لاَ تَزَالُ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
মুসলমানদের একটি দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়াই করবে। যারা তাদের প্রতি বিরূপ ভাব পোষণ করবে তাদের বিরুদ্ধে থাকবে, তারা তাদের উপর বিজয়ী থাকবে। কিয়ামত অবধি এভাবে চলতে থাকবে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১০৩৭]
এই হাদিস সম্পর্কে খোদ হেযবুত তওহীদও স্বীকৃতি দিয়ে লিখেছে,
মহানবী বলে গেছেন আমার উম্মাহর মধ্যে চিরকালই একটা দল থাকবে যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর আদেশ নিষেধ বলবৎ করবে। যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে এই দীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে।যারা মানুষকে আল্লাহর পথে আনার চেষ্টা করতে থাকবে, এসলামের উদ্দেশ্য কি বুঝবে এবং বিপথগামী আকিদা উদ্দেশ্যভ্রষ্ট জাতিকে আবার সত্য পথে আনার জন্য জিহাদ করতে থাকবে। [শিক্ষাব্যবস্থা : পৃ. ৫৭ /৫৮ /৭০]
সুতরাং উক্ত হাদিস থেকে বুঝা গেলো, পৃথিবীতে মুসলিমদের একটা দল কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সব সময় সত্যের উপর অবিচল থেকে জিহাদ করবে। এ দলকে নবীজি সা. মুসলিম শব্দ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এবং পাশাপাশি এ দলকে ‘মুসলিমদের একটি দল’ বলে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, অসংখ্য মুসলামদের মধ্যে তাঁরা একটা গ্রুপ। তাহলে বুঝা গেলো, তাদের সময়ও আরও অনেক মুসলমান থাকবেন। তাহলে বুঝা গেলো, পৃথিবীর সকল মুসলমানকে কাফের-মুশরিক বলা চরম ভ্রষ্টতা ও চরম ইসলাম বিদ্বেষীদের কাজ। অতএব পৃথিবীর সকল মুসলমান মুসলমানই, কাফের মুশরিক নয়। এরপরও যারা পৃথিবীর সকল মুসলমান কাফের, মুশরিক ও জাহান্নামী হয়ে গেছে বলে দাবি করে, তাদের ব্যাপারে হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
َإِذَا قَالَ الرَّجُلُ هَلَكَ النَّاسُ فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ
যে ব্যক্তি বলে, মানুষ সব ধ্বংস (কাফের মুশরিক, জাহান্নামী ইত্যাদী) হয়ে গেছে, সেই তাদের মধ্যে সর্বাধিক বেশি ধ্বংসোন্মুখ। (অথবা সে তার অনুসারীদের ধ্বংস করে ফেলবে। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৬২৩]
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বুঝতে বুঝা যাচ্ছে যে, পৃথিবীর সকল মুসলমানকে কাফের মুশরিক মালাউন বলা নবিজি সাঃ-এর পক্ষ থেকে নিষেধ। যারা এমনটা বলে, নবিজি সাঃ-এর কথা অনুযায়ী সেই হেযবুত তওহীদ নিজেরাই বড় কাফের, মুশরিক বা মালাউন ও ভ্রষ্ট হওয়ার প্রমাণ।
উপরন্তু কোনো মুসলমানকে কাফের বলার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি, বরং যদি কেউ কোন মুসলমানকে কাফের বলে আখ্যায়িত করে, তখন তা তাদের উভয়ের মধ্যে একজনের উপর বর্তায়, সে যা বলেছে তা যদি সঠিক হয়, তাহলে তো হলো, নচেৎ যে বলেছে তার উপর সেই কথা ফিরে যায়। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
مَنْ دَعَا رَجُلاً بِالْكُفْرِ أَوْ قَالَ عَدُوَّ اللَّهِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلاَّ حَارَ عَلَيْهِ
কেউ কাউকে কাফের বলে ডাকলে বা আল্লাহর দুশমন’ বলে ডাকল, যদি সে তা না হয় তাহলে এ কুফুরী সম্বোধনকারীর প্রতি ফিরে আসবে। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১২০]
হযরত সাবিত ইবনে যহ্হাক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাঃ বলেছেন,
وَلَعْنُ الْمُؤْمِنِ كَقَتْلِهِ وَمَنْ رَمَى مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهُوَ كَقَتْلِهِ
কোন মু’মিনকে লা’নত করা তাকে হত্যা করা তুল্য। আর কোন মু’মিনকে কুফরীর অপবাদ দেয়াও তাকে হত্যা করার তুল্য। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৬৬৫২]
স্ববিরোধী হেযবুত তওহীদ:
গোটা মুসলিম সমাজকে কাফের বলা হেযবুত তওহীদের যবান দিয়েও আল্লাহ পাক সত্য বের হতে বাধ্য করেছেন। তাদের দুটি বক্তব্য নিচে তুলে ধরলাম।
ইসলামের অনেক কিছু নিয়ে মতভেদ থাকলেও ১৬০ কোটি মুসলিম আজও এক কালেমার উপর বিশ্বাসী’। [সম্মানিত আলেমদের প্রতি : পৃ. ১৫]
আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এখানে আমরা ৯০% মুসলমান। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি। রসুলকে বিশ্বাস করি। কিতাব বিশ্বাস করি। আল্লাহ রাসুলের হাতে গড়া জাতি উম্মতে মোহাম্মদীকে ভালোবাসি’। [সূত্রাপুরে এমামের ভাষন : পৃ. ৬]
আমাদের দেশের নব্বই ভাগ মানুষ নিজেদেরকে মুসলিম বলে বিশ্বাস করে, তারা আল্লাহ ও রাসূলকে ভালবাসে। জিহাদি চেতনা আমাদের দেশের মানুষেরও আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। [আক্রান্ত দেশ ও ইসলাম : পৃ. ৫]
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত দু’টি বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, হেযবুত তওহীদের নেতারাও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে মুসলিমদের ঈমান ঠিক আছে। কিন্তু শুধুমাত্র নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মবিদ্বেষীদের দালালী করতেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে তারা কত কত জঘণ্য মন্তব্য করে থাকে দেখুন-
মুসলমানরা আবু জেহেল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বার মত কাফের:
রসুলুল্লাহর সমসাময়িক সময়ের যাদেরকে আমরা কাফের মোশরেক বোলে জানি, অর্থাৎ আবু জেহেল, আবু লাহাব,ওতবা,শায়েবা তাদের ধর্মীয় অবস্থা বর্তমান মোসলেম দাবীদারদের থেকে মোটেই আলাদা নয়। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৭৭]
কোরায়েশ পুরোহিতগন মূর্তিপূজারী হওয়া সত্বেও তাদের এই ঈমান ছিল যে, এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা আল্লাহ একজনই এবং তাদের ঈমান বর্তমানে যারা নিজেদেরকে মোমেন মোসলেম বলে দাবি করে তাদের চেয়ে কোন অংশে দুর্বল ছিল না। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ১০]
মুসলিমরা আবু জেহেলদের চেয়েও নিকৃষ্ট:
বর্তমানে মোমেন মুসলিম হবার দাবিদার কোন দেশের একক ওপরে লিপ্ত তা নিঃসন্দেহে চৌদ্দশ বছর আগের আরব দেশের উপর কুফরের চেয়েও নিকৃষ্টতর। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ১১]
মুসলিমদের অন্তরে মোহর লেগে গেছে:
তাদের (মুসলিমদের) হৃদয়ে মোহর, চোখে পর্দা, কানে তালা। [ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১০]
মুসলিমরা আবর্জনা:
বর্তমানের এই ১৬০ কোটি মুসলিম নামধারী এই জনগোষ্ঠীকে রসূলুল্লাহ বলেছেন ভেসে যাওয়া আবর্জনা’। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৫৪]
মুসলিমরা মৃত লাশ:
দুনিয়াময় মুসলিম নামক ১৫০ কোটি জনসংখ্যা যাদেরকে আল্লাহ কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলেছেন, যাদেরকে আল্লাহ মনোনীত করেছেন দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আজ তারা নিজেরাই অন্যায় অবিচার যুদ্ধ হানাহানি রক্তপাত দারিদ্র্য অশিক্ষা অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়েছে সর্বদিক থেকে সর্বনিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ তাদের আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস আছে, কুরআনের প্রতি বিশ্বাস আছে, নামাজ পড়ে,হজ্ব করে, দাড়ি, টুপী, পাগড়ী সবই আছে। শুধুমাত্র ইসলাম সম্পর্কে প্রকৃত আকীদা অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া প্রশিক্ষণ সম্বন্ধে অন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এই মহান জাতি আটলান্টিক তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধ পৃথিবীতে মৃত লাশের মত পড়ে আছে। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ২৫/৭৪]
মুসলিমরা গলিত লাশ যা শুধু দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে:
অর্ধেক দুনিয়া জুড়ে ১৫০ কোটিরও বেশি উম্মতে মুহাম্মাদীর দাবিদার এ জাতি বিরাট এক গলিত লাশের ন্যায় পড়ে আছে, কোন কাজেই আসছে না, শুধু গন্ধ ছড়াচ্ছে’। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৫৯/৬০]
মুসলমানদের ইবাদত অন্য ধর্মাববলম্বীদের মত:
আজকের আমাদের যত আমল সব তাওহীদহীন আমল, আমাদের তাকওয়া হেদায়াহহীন তাকওয়া, যার সাথে অন্যান্য ধর্মের মানুষের উপাসনা অরাধনার বিশেষ পার্থক্য নেই। [তাওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৪]
মুসলিমরা মালাউন:
আল্লাহ দৃষ্টিতে তারা (মুসলিমরা) কাফের মুশরিক এবং অভিশপ্ত মালাউন। [শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ১৪৮]
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীকে তাঁর নির্বাচিত, নেয়ামতপ্রাপ্ত জাতি থেকে একটি অভিশপ্ত (মালাউন) জাতিতে পরিণত করলেন, তা কিন্তু এই জাতি বুঝতে পারল না। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৬০]
মুসলিমরা অভিশপ্ত:
বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর নির্যাতন এটা তাদের ঈমানী পরীক্ষা নয়, এটা অভিশাপ ও গজব।
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃ:৫০-৫১
মুসলিমরা ইয়াহুদীদের চেয়েও অভিশপ্ত:
এই জাতি এখন আল্লাহর লা’নতের ও গযবের বস্তু, এর অবস্থা এখন অতীতের অভিশপ্ত ইহুদী জাতির চেয়েও নিকৃষ্ট। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ১৩]
আল্লাহ লানত দেবার পর ইহুদীদের ভাগ্যে যা ঘটেছিল আজ মুসলিম নামের এই জাতিটির ওপর ঠিক তাই ঘটছে। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ১২/১৩]
মুসলমানদের ইবাদত নিরর্থক:
সারা শরীরে আল্লাহর অভিশাপের ছাপ নিয়ে যে নামাজ,রোজা,এবং আরও হাজার রকমের এবাদত করা হচ্ছে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে মনে করে আমরা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছি। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ১৩]
আমরা যতই নামাজ পড়ি,রোজা রাখি,যতই হাজার রকম এবাদত করি,যতই মুত্তাকী হই,আমরা মো’মেন নই,মুসলিম নই,উম্মতে মোহাম্মদী তো প্রশ্নই ওঠে না। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ১১/১৩/৪৫]
অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মতই তাদের সমস্ত আমল আজ নিস্ফল,নিরর্থক। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৬০]
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে- আল্লাহর ভাষায় কার্যত কাফের, জালেম, ফাসেক হবার পরেও ব্যক্তিজীবনে আমরা খুব আমল করে যাচ্ছি, নামাজ পড়তে পড়তে কপালে কড়া ফেলে দিচ্ছি, আর ভাবছি- খুব বোধহয় সওয়াবের কাজ করে ফেলছি, মহান আল্লাহ কতই না খুশি হচ্ছেন। এই ঈমানহীন আমল যে আল্লাহ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন সেটা বোঝার সাধারণ জ্ঞানটাও আমাদের লোপ পেয়েছে। [তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২২]
মুসলিমরা দাজ্জালের জাহান্নামে পড়ে আছে:
দাজ্জালের দাবি সমস্ত মানবজাতি মেনে নিয়েছে, এমনকি মোসলেম হবার দাবীদার জাতীটিও মেনে নিয়ে দাজ্জালের পায়ে সেজদাবনত হয়ে দাজ্জালের জাহান্নামে পড়ে আছে। [মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) : পৃ. ৬/১০]
সকল মুসলমান জাহান্নামী:
এই দুনিয়াতে তিনি যেমন মাফ করছেন না,অন্যান্য জাতিগুলো দিয়ে নিষ্পেষিত করে কঠিন শাস্তি দিচ্ছেন,ঐ দুনিয়াতে এই জাতিকে এর চেয়ে কঠিন শাস্তি দেবেন’। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৪২]
জীবনের সর্বাঙ্গনে আল্লাহর হুকুমকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষের হুকুম মেনে নিয়ে মানব জাতি আজ বক্রপথে চলছে, তাদের নিশ্চিত গন্তব্য জাহান্নাম। [বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৩৬]
দাজ্জালের দাবি সমস্ত মানবজাতি মেনে নিয়েছে, এমনকি মোসলেম হবার দাবীদার জাতীটিও মেনে নিয়ে দাজ্জালের পায়ে সেজদাবনত হয়ে দাজ্জালের জাহান্নামে পড়ে আছে। [মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) : পৃ. ৬/১০]
স্রষ্টা প্রদত্ত সেই সিস্টেমকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে মানবজাতি একদিকে যেমন চরম অন্যায় অশান্তির আগুনে পুড়ছে অপর দিকে আল্লাহর দৃষ্টিতে কাফের-মুশরিক হওয়ার ফলে পরকালের অনন্ত কাল জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। [হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা : পৃ. ২/৮]
তাদের বৃহত্তর ভাগ বিশ্বাস করেন যে জন্মসূত্রে মুসলিম হওয়ার বদৌলতে লক্ষ কোটি বছর যদি জাহান্নামের আগুনে জ্বলতেও হয়, তবুও এক সময় তারা জান্নাতে যাবেনই। সুতরাং চিন্তিত হওয়ার মতো তেমন কিছু ঘটেনি। এই দুনিয়ায় মার খাচ্ছি, ঐ দুনিয়ায় জান্নাতের ফল খেয়ে সব ব্যাথা, বেদনা লাঞ্ছনা অপমান ভুলে যাব। তারা জান্নাতে তাদের স্তরে উন্নীত করার জন্য সাধ্যমত আমল করেন যেমন, নামাজ রোজা করেন, ওয়াজের সময় ওয়াজ শোনেন, হজ্বে এস্তেমায় জান। দাড়ি রেখে নিজেকে উম্মতে মোহাম্মদ বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। তাদের এই সত্য বুঝার মত সেই চিন্তা শক্তি নেই যে, যে ধর্মচর্চা তাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা অপমান থেকে রক্ষা করতে পারছে না, সেই ধর্ম পালন করে পরকালীন মুক্তির আশা পোষণ করা সুদূর পরাহত। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৫১]
প্রিয় পাঠক! কুরআন-সুন্নাহ এমনকি হেযবুত তওহীদের বই থেকেই প্রমাণ করেছি যে বর্তমানের মুসলমানরা কাফের নয়, বরং সবাই মুসলিম ও মুমিন। সেই মুসলমানদের শানে এত এত জঘন্য মন্তব্য যারা করতে পারে তারা কী কোনো দিন মুসলিম হতে পারে?
অভিযোগ:
অবশ্য হেযবুত তওহীদ সকল মুসলমানকে কাফের বা মুশরিক বলার কারণ হিসাবে উল্লেখ্য করে থাকেন, মুসলিমদের উপর পৃথিবীময় নির্যাতন। তারা লিখেছে,
আল্লাহর লানতে নির্মম শাস্তি সত্ত্বেও জাতি তওবা করে তৌহিদে, সেরাতুল মুস্তাকিমে দীনুল কায়্যেমায়, জেহাদে ফিরে না এসে নির্বোধের মত নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত হাজার রকমের নফল এবাদত করে যাচ্ছে, আর ভাবছে তাদের জন্যে জান্নাতের দরজা লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। লানতের অন্যতম শাস্তি হলো বোধশক্তির লোপ, তাই এত সওয়াবের কাজের পরও এত নির্মম শাস্তি কেন তা বুঝে আসেনা। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৬০]
মুমিনদের আল্লাহ শাস্তি দেন না, আজাব দেন না, গজব দেন না। মুমিনদের প্রতি তিনি সদয়, করুণাময়, ক্ষমাশীল। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে ; পৃ. ৫৩]
এই জনসংখ্যাটি যদি সত্যিই মোমেন মোসলেম ইত্যাদি হয়ে থাকে, তাহলে কোরআনের অনেক আয়াত মিথ্যা হয়ে যায়। যা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, তোমরা যদি মোমেন হও তবে পৃথিবীর কর্তিত্ব তোমাদের হাতে দেবো, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছিলাম। তার ওয়াদা যে সত্য তার প্রমাণ নিরক্ষর, চরম দরিদ্র, সংখ্যায় মাত্র পাঁচ লাখের উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে পৃথিবীর কর্তিত্ব তুলে দিয়েছিল। প্রশ্ন হলো- আমরা নিজেদের মোমেন বলে দাবী করি,তাহোলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৃথিবীর কর্তৃপক্ষ আমাদের হাতে নেই কেন? সেই সর্বশক্তিমান কি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে অসমর্থ? [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ১১]
আর কত রক্ত ঝরলে এই জাতি বুঝবে যে তারা মোমেনের সংজ্ঞা থেকে বহিষ্কৃত হোয়ে গেছে, আজ তারা আল্লাহর লানতের পাত্র। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৮৩]
উপরোক্ত বক্তব্য দিয়ে তারা দাবী করতে চায়, যেহেতু মুসলমানদের হাতে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব নেই এবং তারা বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে এটাই প্রমাণ যে এরা মুসলমান নয়।
জবাব:
দুনিয়াতে কাউকে কষ্টে নিপতিত দেখলে বা জুলুমের স্বীকার হলে সে মুসলমান নয়, এমন দাবি করা চরম মূর্খতার পরিচয়। কারণ আল্লাহপাক মুমিনদের পরীক্ষা করতে অনেক সময় বিভিন্ন মুসিবত দেন। মহান আল্লাহ বলেন,
أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ أَن يَسْبِقُونَا سَاء مَا يَحْكُمُونَ
মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ। [সুরা আনকাবুত : ২-৪]
উপরন্তু যারা সত্যিকারার্থে আল্লাহর পথে থাকেন, তাদেরকে সবচে বেশী পরীক্ষা নেয়া হবে বলে আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন,
وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَیۡءࣲ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصࣲ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَ الِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَ ٰاتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّابِرِین
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। [সুরা বাকারা : ১৫৫]
উক্ত আয়াত দু’টি দ্বারা আমরা জানতে পারি, যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর পক্ষ থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন। আর এজন্যই নবিজি সাঃ এর সাহাবায়ে কেরাম রা. এর উপর কাফেরদের কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। হাদিস শরীফের অসংখ্যবার সেসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এ কথা খোদ হেযবুত তওহীদই সাহাবাদের আলোচনা করতে গিয়ে তারা লিখেছে,
স্ত্রী-পুত্র পরিবার ত্যাগ কোরে, বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কোরে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য কোরে, অভিযানে বের হোয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়ে এই হল তার উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী তার প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৭৫]
তাহলে হেযবুত তওহীদের দাবীতে নির্যতনের স্বীকার হলেই যদি কাফের-মুশরিক হয়ে যায়, তাহলে সাহাবায়ে কেরামও রা. কী কাফের ছিলেন? (নাউযুবিল্লাহ)। যদি তাই হয়, তাহলে হেযবুত তওহীদ কী করে মুসলমান দাবি করে?
তাহলে হেযবুত তওহীদও কি কাফের ও জাহান্নামী নয়?
হেযবুত তওহীতের দাবী হল, ‘যেহেতু মুসলমানদের হাতে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব নেই এবং নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে সেহেতু এরা মুসলমান নয়। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা তো দেখেছি, হেযবুত তওহীদের কাছে কর্তৃত্ব নেই, বরং তাদের ওপর কতো ঝড় গেছে, আজও যাচ্ছে। তারা ঝড়গুলো সহ্য করতে না পেরে, বারবার সরকারের দারস্থ হয়েছে। যেমন তারাই লিখেছে তাদের উপর নির্যাতনের ইতিহাস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো চিঠি যেটা ১৮/০৫/২০০৮ ঈসায়ী তারিখে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে লেখা রয়েছে,
দেশজুড়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে নির্মম নির্যাতন ও প্রবল বাধার মুখে পড়তে হলো। ধর্মব্যবসায়ীরা বহু সদস্যের বাড়ি ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিল, বহুজনকে পূর্ব পুরুষের ভিটা থেকে উৎখাত করে দিল, বহুজন পিটিয়ে আহত করল এমনকি একজন পুরুষ একজন নারী সদস্যকে শহীদ করে ফেলল। [জঙ্গিবাদ সংকট : পৃ. ৬৪]
এ পর্যন্ত মোট ১২৯২ জন কর্মীকে ও ১৫টি শিশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের মধ্যে ২০৭ জনকে মোট ৭৫৬ দিন ধোরে জে.আই.সি, টি.এফ.আই. ও পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। [মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) পৃ. ১৬]
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিস কোন কথা না শুনে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার কোরে কোর্টে চালান দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চালান দেবার আগে অপরাধের কোনো কারণ ছাড়াই কর্মীদের অমানুষিক নির্যাতন কোরছে, ইলেকট্রিক শক দিচ্ছে। [যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ১৯]
সুতরাং হেযবুত তওহীদের কথা যদি সত্য হয়, তাহলে চরম নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার কারণে নিজেদের ফাতাওয়ায় নিজেরাই কাফের। উপরন্তু তাদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নীর হাতে তো নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব আসার আগেই মরে গেছেন, তাহলে পন্নী সাহেবের দাবি অনুযায়ী তিনি নিজেই কাফের, মুশরিক ও জাহান্নামী।
অভিযোগ:
অবশ্য তারা আরেকটা অভিযোগ করে থাকে। তারা লিখেছে,
আল্লাহর রসুলের ইসলাম যে জাতি গঠন করেছিল সে জাতির চরিত্রের সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যোদ্ধার চরিত্র, তার প্রমাণ জাতির নেতা আল্লাহর রসুল (দ.) সহ সমস্ত জাতির মধ্যে এমন একটা লোকও বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যেত না যার শরীরে অস্ত্রের আঘাত নেই। বর্তমানের ইসলাম যে জাতি গঠন করে তার চরিত্রের সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাপুরুষতা। ছোট-বড় সমস্ত রকম সংঘর্ষ, বিপদ আপদ থেকে পলায়ন। যে যত বেশি ধার্মিক সে ততো বেশি কাপুরুষ; এদের গায়ে সুচের খোঁচারও দাগ নেই। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ১৭]
অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, মুসলিম হতে গেলে গায়ে তরবারীর আঘাতের চিহ্ন থাকতে হবে।
জবাব:
এক. কী হাস্যকর! একদিকে তারা লিখেছে
মুমিনদের আল্লাহ শাস্তি দেন না, আজাব দেন না, গজব দেন না। মুমিনদের প্রতি তিনি সদয়, করুণাময়, ক্ষমাশীল। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে ; পৃ. ৫৩]
আবার এখানে অভিযোগ করে বলছে, তরবারীর আঘাত যার গায়ে নেই, সে মুসলিম নয়। এখন আপনারাই বলুন ওরা কী সুস্থ না মানোসিক অসুস্থ? কোনটা সত্য, আর কোনটা মিথ্যা? আখের ওরাই মিথ্যুক ও মুসলিমবিদ্বেষী।
দুই. এরপরও যদি ধরে নেওয়া হয়, মুসলিমদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন না থাকায় এরা সবাই বেঈমান। তাহলে জানতে চাই, পন্নী ও সেলিমদের গায়ে কী সে আঘাতের চিহ্ন আছে? যেহেতু নেই, সেহেতু তাদের ফাতাওয়ায় তারাই বেঈমান।
মুসলিমদের থেকে আলাদা হতে হবে:
প্রিয় পাঠক! আমি আগের পর্বে আলোচনায় প্রমাণ করেছি যে, বর্তমানের মুসলমানদের কাফের বা মুশরিক বলে যে মন্তব্য হেযবুত তওহীদ করে থাকে, তা চরম পর্যায়ের ভিত্তিহীন। আমি যেটা কুরআন-হাদিস এমনকি হেযবুত তওহীদের নিজস্ব বক্তব্য থেকে প্রমাণ করেছি। কিন্তু সময়ের কট্ররপন্থী হেযবুত তওহীদ মুসলমানদের থেকে তাদের সদস্যদের আলাদা করছে। চলুন তারা কী বলে দেখা যাক।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হেযবুত তওহীদের দাবি হলো-
সেদিন আল্লাহর রাসূল ও তাঁর আসহাবরা যেমন দীনের ব্যাপারে ঐ সমাজ থেকে হেজরত করেছিলেন, তাদের সাথে এবাদত করা ছেড়ে দিয়েছিলেন, আজ ঠিক তেমনিভাবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী হবার প্রচেষ্টারত হেযবুত তওহীদকেও বর্তমান মুসলিম সমাজ থেকে হেজরত করতে হবে’। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৫৯]
হিজবুত তাওহীদও সমাজে ধর্মের নামে বিরাজমান অধর্ম, রাজনীতির নামে বিরাজমান সন্ত্রাস হানাহানি, ফেরকা-মাযহাবের নামে বিরাজমান অনৈক্য,ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ইত্যাদি যাবতীয় অন্যায় থেকে এবং অন্যায়কারীদের থেকে হিজরত করেছে। তাদের সাথে কোন এবাদত করা যাবে না’। [গঠনতন্ত্র : পৃ. ৫০/৫৫]
অর্থাৎ তারা বলতে চায়-
১. মুসলিমদের থেকে আলাদা হতে হবে।
২. মুসলমানদের সাথে কোনো ইবাদত করা যাবে না।
ইসলাম কী বলে?
এই মুসলিমদের একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববন্ধন কেমন হতে হবে, তা একটি হাদিসে নবীজি সা. জানিয়ে দিয়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে,আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন।যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ২৪৪২]
বুঝা গেলো, ইসলাম চায় মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য। মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছিন্নকরণ কখনই ইসলাম সমর্থন করে না। মুসলিমদের জামাতের সাথে একত্রিত থাকার ব্যাপার কয়েকটি আয়াত ও হাদিস নিন্মে পেশ করছি। মহান আল্লাহপাক বলেন,
وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [সুরা আলে ইমরান : ১০৩]
وَلاَ تَكُونُواْ كَالَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَاخْتَلَفُواْ مِن بَعْدِ مَا جَاءهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُوْلَـئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব। [সুরা আলে ইমরান : ১০৫]
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। [সুরা আশ-শুরা : ১৩]
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত আবু যার রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ
যে ব্যক্তি (মুসলিম) জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক বিঘত পরিমান দূরে সরে গেলো, সে ইসলামের রজ্জু তাঁর গর্দান থেকে খুলে ফেললো। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৭৫৮]
হযরত আরফাজাহ্ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃ-কে আমি বলতে শুনেছি,
إِنَّهُ سَتَكُونُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيعٌ فَاضْرِبُوهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ
অচিরেই নানা প্রকার ফিৎনা-ফাসাদের উদ্ভব হবে। যে ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ উম্মাতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তোমরা তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে, সে যে কেউ হোক না কেন। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৮৫২]
প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসগুলো দেখলে বুঝা যায় যে, ইসলামে ঐক্যের কতো গুরুত্ব! কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে যে ফাটল হেযবুত তওহীদ তৈরি করছে, তার শেষ পরিনতি কোন দিকে যাচ্ছে সেটাই দেখার পালা।
তাহলে হেযবুত তওহী কেন কাফের নয়?
হেযবুত তওহীদ বলে থাকে, মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা কুফরী। দেখুন তারা কী লিখেছে,
শিয়া-সুন্নি সরকারি কওমি ওহাবী খারিজী কাদিয়ানী ইত্যাদি ইসলাম থেকে কতটুকু দূরে সরে গেছে সেটা আলোচ্য বিষয় নয় সোজা কথা এরা মোমেন নয় মুসলিম নয় উম্মতে মোহাম্মদী নয়। তারা প্রত্যেকেই এসব করে জাতীয় ঐক্য নষ্ট করে রসুলের কথা মোতাবেক কুফর করেছে ফলে কার্যত কাফের হয়ে গেছে। আর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে তারা কাফের তাদের নামাজ রোজা হজ্ব কোন কিছুই কবুল হবে না এবং তারা জাহান্নামী। সুতরাং ঐক্য নষ্ট করে এই জাতি আল্লাহর রাসূলের ইসলাম থেকে বহির্গত হয়ে গেছে বহু আগেই। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৯৭]
তাহলে এখন আপনারাই বলুন, মুসলিমদের সাথে ঐক্য বিনষ্ট করে হেযবুত তওহীদ কুফরী করে কাফের হয়ে যায় নি? আল্লাহ তাআলা হেযবুত তওহীদের এই ফিৎনা থেকে দেশ ও জাতিকে হিফাযত করেন। আমীন!