আহলে কুরআন নামধারী কুফরী সংগঠণ দাবি করেছে যে, মুরতাদদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এমন বিধান কুরআনে নেই এবং এ হত্যা কুরআন বিরোধি। বাংলাদেশের আহলে কুরআনের মূখপাত্র আবু সাঈদ খান লিখেছে,
মুরতাদ হত্যা কুরআন-বিরোধি। -প্রচলিত ও প্রকৃত ইসলাম : একটি পর্যালোচনা, পৃ. ৩৮৮
হত্যা একটি গুরুতর বিধান; আল্লাহ যদি তা সত্যিকার অর্থেই মুরতাদদের জন্য পৃথিবীর জীবনে নির্ধারণ করতেন, তবে কুরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে তা জানিয়ে দিতেন। সুতরাং মুরতাদদের বিষয়ে কুরআনে হত্যার
বিধান নাই, কিন্তু রাসূল এর বাইরে গিয়ে সেই বিধান জারি করবেন তা হতেই পারে না; কেননা এর কোনো এখতিয়ার তিনি রাখেন না। -প্রচলিত ও প্রকৃত ইসলাম : একটি পর্যালোচনা, পৃ. ৩৯০
দীন থেকে ফিরে গেলেই ‘মুরতাদ’ ঘোষণা দিয়ে হত্যার উন্মাদনা ছড়ানো আপাদমস্তক আলখেল্লাধারীদের দ্বারা দীনের ভয়ানক অপব্যাখ্যা। প্রচলিত ও প্রকৃত ইসলাম : একটি পর্যালোচনা, পৃ. ৩৯১
এছাড়াও এক নাস্তিকের সাথে ভিডিও লাইভে এসে আবু সাঈদ খান যেসব কথা বলেছে, তা নিন্মের লিংকে দেখতে পাবেন।
ইসলাম কী বলে?
ইসলামে পরিস্কারভাবে মুরতাদদের শাস্তিস্বরুপ মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিধানটি শুধু শেষ ধর্ম ইসলামে নয়, বরং পূর্বের ধর্মেও বিদ্যমান ছিলো। তাওহীদ ছেড়ে কুফর-শিরক গ্রহণ করার কারণে যে হত্যা করা আল্লাহপাকেরই নির্দেশ এবং হত্যা করা ন্যায়সঙ্গত বিধান তা প্রস্ফুটিত হয়ে যাবে। দেখুন হযরত মুসা আ. এর যুগে যারা আল্লাহপাকের সাথে শিরক করতঃ গোপূজায় লিপ্ত হয়েছিলো, তাদের ব্যাপারে মহান রবের সিদ্ধান্ত দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন,
إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنْفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوبُوا إِلَى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ عِنْدَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
তোমরা বাছুরকে (উপাস্য হিসাবে) গ্রহণ করে প্রকৃতপক্ষে নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট তওবা করো এবং নিজেরা নিজেদের মাঝে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করো। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এ ব্যবস্থা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। তাহলে তিনি তোমাদের তওবা কবুল করবেন। তিনি তো তওবা কবুলকারী, পরম করুণাময়। -সুরা বাকারা : ৫৪
উক্ত আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, যারা তাওহীদ ছেড়ে মুরতাদ হয়ে যায়, তাদের হত্যা করা অন্যায় নয়, বরং মহান রবেরই নির্দেশ। অপর আয়াতে মহান রব বলেন,
ولا تقتلوا النفس التي حرم الله إلا بالحق ذلكم وصاكم به لعلكم تعقلون
আল্লাহ হারাম করেছেন এমন কাউকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝো। -সুরা আনআম : ১৫১
উক্ত আয়াতে ন্যায়সঙ্গতভাবে হত্যা করার অনুমতি পবিত্র কুরআন শরীফেই দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো ন্যায়সঙ্গতভাবে কাদের হত্যা করা বৈধ সে সম্পর্কে কয়েকটি ক্ষেত্র নিন্মের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ্ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ النَّفْسُ بِالنَّفْسِ وَالثَّيِّبُ الزَّانِي وَالْمَارِقُ مِنْ الدِّينِ التَّارِكُ لِلْجَمَاعَةِ
যে মুসলিম ব্যক্তি যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তাকে হত্যা করা জায়েয নয়। তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। (যথা) জানের বদলে জান, বিবাহিত ব্যভিচারী, আর নিজের দ্বীন ত্যাগকারী, মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্যক্তি। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৬৮৭৮
আরও স্পষ্ট করে মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে নিন্মের দু’টি হাদিসে এসেছে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ بَدَّلَ دِيْنَهُ فَاقْتُلُوْهُ
যে লোক তার দ্বীন বদলে ফেলে, তাকে হত্যা করে ফেলো। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৩০১৭
হযরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَدِمَ عَلَىَّ مُعَاذٌ وَأَنَا بِالْيَمَنِ، وَرَجُلٌ، كَانَ يَهُودِيًّا فَأَسْلَمَ فَارْتَدَّ عَنِ الإِسْلاَمِ، فَلَمَّا قَدِمَ مُعَاذٌ قَالَ لاَ أَنْزِلُ عَنْ دَابَّتِي حَتَّى يُقْتَلَ . فَقُتِلَ . قَالَ أَحَدُهُمَا وَكَانَ قَدِ اسْتُتِيبَ قَبْلَ ذَلِكَ
আমি যখন ইয়ামনের শাসনকর্তা ছিলাম, তখন মুআয রা. আমার নিকট আসেন। এ সময় একজন ইয়াহুদী মুসলিম হয়ে, পরে ইসলাম পরিত্যাগ করে। সে সময় মুআয রা. সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, যতক্ষণ না এ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়, ততক্ষণ আমি আমার বাহন থেকে অবতরণ করবো না। পরে তাকে হত্যা করা হয়। এই দুই জনের একজন বলেন, (অবশ্য) হত্যার পূর্বে তাকে তাওবা করার জন্য অনুরোধ করা হয়। -সুনানে আবু দাউদ : হাদিস নং : ৪৩০৪
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইসলামে মুরতাদদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাছাড়া মুরতাদের উপর আপতিত খোদায়ী গজব হল মৃত্যুদন্ড। ইসলামের প্রতি দুশমনি করা অথবা যে কোনো ধরনের শিরকী-কুফরী কর্ম ও বিশ্বাসের মাধ্যমে মুরতাদ হয়ে যাওয়া ব্যক্তি -যদিও সে আচরণে-উচ্চারণে নিজেকে মুসলমান প্রমাণের চেষ্টা করে -তবুও সে মুরতাদ। কুরআনের পরিভাষায় এমন ব্যক্তিকে ‘মুনাফিক’ বলা হয়। এদের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-
لَئِنْ لَمْ يَنْتَهِ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ وَالْمُرْجِفُونَ فِي الْمَدِينَةِ لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا يُجَاوِرُونَكَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا مَلْعُونِينَ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا
মুনাফিকরা, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা এবং মদীনাতে ভয়ংকর সংবাদ রটনাকারীরা যদি নিবৃত্ত না হয়, তাহলে অবশ্যই আমি আপনাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রবল করে দিব। আর তখন তারা আপনার প্রতিবেশী হিসাবে সেখানে বেশি দিন টিকতে পারবে না। তাও থাকবে অভিশপ্ত অবস্থায়, যেখানেই এমন লোককে পাওয়া যাবে, ধরে ধরে একে একে হত্যা করে ফেলা হবে। আল্লাহ তাআলার এ নিয়ম পূর্ববর্তী লোকদের জন্যও বলবৎ ছিল। আল্লাহর নিয়মে কোনো দিন আপনি কোনো ব্যত্যয় খুজে পাবেন না। -সুরা আহযাব : ৬০-৬২
সুতরাং উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হলো, ইসলামে মুরতাদদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যারা এটা অস্বীকার করবে, তারাও কাফের। আর এ জন্য ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহি. লিখেছেন,
إن من ارتد عن دينه حل دمه، وضربت عنقه، والأمة مجتمعة على ذلك
যে তার দ্বীন ত্যাগ করে তাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যাবে এবং তার শিরচ্ছেদ করা হবে। মুরতাদের এ শাস্তির বিষয়ে পুরো উম্মতের সুপ্রতিষ্ঠিত ইজমা তথা মতৈক্য রয়েছে। -আততামহীদ খ. ৫ পৃ. ৩০৬