Home > হিজবুত তাওহীদ > মাযহাব ও ফকিহদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য:

মাযহাব ও ফকিহদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য:

 

বর্তমান সময়ে মানুষের কুরআন-হাদিসের জ্ঞান কমতি ও নফসের পূজার যামানায় সকল মুসলমানদের জন্য চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাবের তাক্বলীদ বা অনুসারী হওয়া জরুরি । এটা ছাড়া বর্তমানে শরী‘আতের উপর চলার আর কোন বিকল্প রাস্তা নেই । বাস্তব প্রমাণে দেখা গিয়ছে যে, যারা কোন ইমামের অনুসরণ না করে ‍নিজেরা সরাসরি কুরআন-হাদীস বুঝে আমল করতে তৎপর হয়েছেন, তারা শেষ পর্যন্ত আল্লাহর গোলামীর পরিবর্তে নিজের নফস বা মনের গোলামী করে শরী‘আত বিবর্জিত পথে পরিচালিত হয়েছেন। আবার অনেক শায়খও অবশেষে আহলে কুরআনও হয়ে গেছেন। সুতরাং মাযহাব ছাড়া দীন মানা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। কারণ নবিজি সাঃ-এর দশ লক্ষ হাদিস ও পুরো কুরআন শরীফের বিধিবিধান জেনে আমল করা পসিবল নয়। আর এজন্যই মাযহাবের সৃষ্টি। শুধু কী তাই? কিছু লোক ছাড়া পৃথিবীর সকল মুসলমানও এ মাযহাক মেনেই আমল করে যাচ্ছেন। তবে প্রথমে মনে রাখা চাই, মাযহাব কুরআন-হাদিস বিরোধি কোনো বিধান প্রনয়ণ করেন নি, বরং কুরআন-হাদিসকে সামনে রেখেই সব বিধানাবলী তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, এই মাযহাব সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের বিষোদগার দেখলে গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যাবে। চলুন প্রথমে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। তারা বলে,
১. মাযহাব নবিজি সাঃ-এর যুগে ছিলো না।
২. মাযহাব বিদ’আত।
৩. মাযহাব ইসলাম বিরোধি।
৪. মাযহাব জাহান্নামের পথ।
৫. কুরআন-হাদিস বিশ্লেষণ ও মতানৈক্য কুফরী ও শিরকী।
৬. ফকিহরা মূর্খ জাতি বানিয়েছে।
৭. ফকীহদের কারণে মুসলিমরা অপমানিত ও লাঞ্ছিত।
৮. ফকিহরা ইসলামকে কঠিন করে দিয়েছে।
৯. ফকিহরা মৃসলিমদের খণ্ডবিখণ্ড করেছে।
১০. ফকিহরা ইসলাম ধ্বংস করে দিয়েছে।
১১. ফকিহরা কী দীন বিক্রি করে খেয়েছেন।
১২. ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ জিহাদী অংশটা বাদ দিয়েছে।
১৩. মাযহাব ধ্বংস করবে হেযবুত তওহীদ।
১৪. অতি ধার্মিক হওয়া নিষেধ।

চলুন প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রমাণসহ আলোচনা করা যাক।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, মাযহাব ইসলামে নেই, বরং এগুলো বিদআত, কুফর ও শিরক। এ সম্পর্কে তারা তাদের বইয়ে অসংখ্য জায়গায় লিখেছে।

মাযহাব নবিজি সাঃ-এর যুগে ছিলো না:
(নবীজির যুগে) ইসলাম কেমন তা সবার কাছে একই রকম ছিল।  তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৮

মাযহাব বিদ’আত:
সমস্ত মাযহাব, সমস্ত ফেরকা বেদাত। শেরেকের সমপর্যায়ের গুনাহ, অমার্জনীয় অপরাধ, যে অপরাধ ক্ষমা না করার জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৯০

মাযহাব ইসলাম বিরোধি:
মাযহাব ইসলামে নেই। হলি আর্টিজেনর পর : পৃ. ৯

ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যারা চেষ্টা করছেন তারাই হাজারো দল-মত পথে বিভক্ত। তারাই শিয়া-সুন্নি ফেরকা নিয়ে মারামারিতে ব্যস্ত। তারা কেউ হানাফী কেউ হাম্বলী, কেউ শাফেয়ী, কেউ মালেকী। কোরআনের মূলনীতি ত্যাগ করে বিভিন্ন মাজহাবের ফকিহ তৈরি করা শরীয়তকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া এই দলগুলো বুঝতে অক্ষম যে তাদের মাসলা-মাসায়েল আর বিকোবে না। ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২২

মাযহাব জাহান্নামের পথ:
আমরা যে দীনকে আকড়ে ধরে আছি, যেটাকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে মেনে চলতে চেষ্টা করছি, সেটা বহু মাযহাবে ফেরকায়ে বিচ্ছিন্ন একটি অতি জটিল পথ, সেটা আর যাইহোক আল্লাহর দেয়া সেরাতুল মোস্তাকিম সহজ সরল পথ নয়। সেরাতুল মুস্তাকীমের সহজ-সরল লাইন থেকে যে আড়াআড়ি লাইনগুলো মহানবী টেনে ছিলেন এবং বলেছিলেন এগুলো শয়তানের লাইন, আমরা বিভিন্ন মাযহাব, ফেরকার ও তরিকার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লোকেরা এই লাইনগুলোতে আছি। ইসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৩৩-৩৪

আমরা মূল লক্ষ্য ছেড়ে দিয়ে দীনের মাসলা-মাসায়েলের এমন চুলচেরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছি যে পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতি তা করতে পারেনি। পরিণামও তাই হয়েছে যা আমাদের নবী ভয় করেছিলেন- আমরা ৭২ ফেরকা বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছি। এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৩১

ইসলাম কী বলে?
পৃথিবির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম উম্মাহ যুগে যুগে মাযহাবের অনুসরন করে আসছেন। কিন্তু কিছু মানুষ না জেনে না বুঝে তার উপর প্রশ্ন তুলছেন। তাই এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা জানা দরকার।

মাযহাব কী?
মাযহাব কী এ ব্যাপারে জানতে হলে আগে জানতে হবে মুজতাহিদ কাকে বলে?
মূলত মুজতাহিদ হলো, কুরআন সুন্নাহ, সাহাবাদের ফাতওয়া, কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ঐক্যমত্বে এবং যুক্তির নিরিখে কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা বেরকারী গবেষক দলের নাম। যারা নিষ্ঠার সাথে বিভিন্ন মূলনীতি নির্ধারণ করে কুরআন সুন্নাহর বাহ্যিক বিপরীতমুখী মাসআলার মাঝে সামাঞ্জস্যতা এনেছেন। কুরআন সুন্নাহর একাধিক অর্থবোধক শব্দের নির্ধারিত পালনীয় অর্থকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। নতুন উদ্ভূত মাসআলার শরয়ী মূলনীতির আলোকে সমাধান বরে করেছেন। সেই সাথে নতুন নতুন মাসআলার কোন মূলনীতির আলোকে হুকুম আরোপিত হবে যার বিধান সরাসরি কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত নেই, সেই মূলনীতিও নির্ধারিত করেছেন। মূলত সেই গবেষক দলের নাম হল মুজতাহিদ। আর তাদের উদ্ভাবিত মূলনীতির আলোকে বের হওয়া মাসআলার নাম মাযহাব। বুঝা গেলো, মাযহাব কুরআন-সুন্নাহ’র বিপরীত নতুন কোনো বিষয়ের নাম নয়।

মাযহাব কেন মানতে হবে?
মাযহাব পালনের কথা এই জন্য বলা হয় যে, যেহেতু কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে আলেম খুবই নগণ্য। যারাও আছে তারা কুরআনে কারীমের কোন আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেছে, কোন আয়াতের হুকুম বহাল আছে, কোন আয়াত কোন প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে, কোন আয়াত কাদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে। কোন আয়াতাংশের প্রকৃত অর্থ কি? আরবী ব্যাকরণের কোন নীতিতে পড়েছে এই বাক্যটি? এই আয়াত বা হাদীসে কী কী অলংকারশাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? ইত্যাদী সম্পর্কে বিজ্ঞ হন না। সেই সাথে কোনটি সহীহ হাদীস কোনটি দুর্বল হাদীস? কোন হাদীস কি কারণে দুর্বল? কোন হাদীস কী কারণে শক্তিশালী? হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনী একদম নখদর্পনে থাকা আলেম এখন নাই। অথচ হাদীসের শক্তিশালী না হলে তার দ্বারা শরয়ী হুকুম প্রমাণিত হয়না।

এই সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি পাওয়া যাওয়া দুস্কর। একে তো অধিকাংশ মানুষই আলেম না। অপরদিকে যারা মুষ্টিমেয় আলেম তারাও উল্লেখিত সকল বিষয় সম্পর্কে প্রাজ্ঞ নয়। তাই আমাদের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে সঠিক মাসআলা বের করা অসম্ভব।

একটি উদাহরণ:
কুরআন-হাদিসে একটি শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন الصلاة শব্দটি পবিত্র কুরআনে ৪ টি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।

এক. নামাজ।আল্লাহ তাআলা বলেন,
اقيموا الصلاة
সালাত কায়েম করো। [সিরা বাকারা : ৪৩]

দুই. রহমত, তিন. মাগফিরাতের দুআ। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেস্তারা নবীজীর উপর সালাত পড়ে। [সুরা আহযাব : ৫৬]

অর্থাৎ আল্লাহপাক নবি সাঃ-এর ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিস্তারা মাগফিরাতের দুআ করেন।

চার. দরূদ প্রেরণ। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
হে মুমিনরা তোমরাও তাঁর উপর দরূদ পড় এবং তাঁকে সালাম জানাও। [সূরা আহযাব : ৫৬]

এই সকল স্থানে লক্ষ্য করুন- এখানে তিনটি স্থানে সালাত এসেছে। এই তিন স্থানের সালাত শব্দের অর্থ ৪টি। প্রথমাংশে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল ‘নামায’।
আর দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা ও তার ফিরিস্তারা নবিজি সাঃ-এর ওপর সালাত পড়েন মানে হল- আল্লাহ তাআলা নবিজি সাঃ-এর ওপর রহমত পাঠান, আর ফিরিস্তারা নবি সাঃ-এর জন্য মাগফিরাতের দুআ করেন। আর তৃতীয় আয়াতাংশে ‘সালাত’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, উম্মতরা যেন নবিজি সাঃ-এর ওপর দরূদ পাঠ করেন।

এখন আপনারাই বলুন, একজন সাধারণ মৃসলিম বা সাধারণ আলেম এই পার্থক্যের কথা কীভাবে বুঝবে? সে তো নামাযের স্থানে বলবে রহমাতের কথা, রহমতের স্থানে বলবে দরূদের কথা, দরূদের স্থানে বলবে নামাযের কথা। এরকম করলে দ্বীন আর দ্বীন থাকবে? এরকম অসখ্যা স্থান আছে, যার অর্থ উদ্ধার করা কঠিন। তাই একজন বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ ব্যক্তির শরাপন্ন হয়ে তার গবেষনা অনুযায়ী উক্ত বিষয়ের সমাধান নেওয়াটাই যৌক্তিক এবং রবের নির্দেশ । মহান আল্লাহ বলেন,
فَاسْأَلوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ
তোমরা না জানলে বিজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও। [সূরা নাহল : ৪৩]

বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কিরাম কুরআন সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাত, এবং যুক্তির নিরিখে সকল সমস্যার সমাধান বের করে গেছেন। সেই সকল বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নামই হল মাযহাব অনুসরণ। সুতরাং যেহেতু আমাদের কারও পুরো কুরআন ও লক্ষ লক্ষ হাদিস মুখস্ত নেই, সেহেতু ইসলামি বিধানাবলীর ব্যাপারে কোনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেহেতু যারা জানেন, তাদের থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। আর সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বস্বীকৃত ও গ্রহনযোগ্য প্লাটফর্ম হলো মাযহাব। যা যুগ থেকে যুগ মুসলিম উম্মাহর কাছে চলে আসছে। যেই অনুসরণের নির্দেশ সরাসরি আল্লাহ তাআলা দিলেন পবিত্র কুরআনে। সেটাকে হেযবুত তওহীদ বলে দিলো শিরক ও কুফর। আসতাগফিরুল্লাহ।

নবি সাঃ-এর যামানায় মাযহাব ছিলো?
সাহাবায়ে কিরাম রা. যারা সরাসরি রাসূল সাঃ-এর কাছে ছিলেন, তাদের জন্য রাসূল সাঃ-এর ব্যাখ্যা অনুসরণ করা ছিল আবশ্যক। সুতরাং সে যামানায় অন্য কোনো সাহাবী বা ফকিহের প্রয়োজন ছিলো না। তবুও যেখানে নবি সাঃ থাকতেন না, সেখানে বিজ্ঞ সাহাবাদের মাযহাব ছিলো।  যেমন ইয়ামেনে নবিজি সাঃ যখন মুয়াজ রা. কে প্রেরণ করেন, তখন সেখানে যেসকল বিষয়ে কুরআন-সুন্নায় কোনো সিদ্ধান্ত জানা যাবে না, সে ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণা বা মাযহাব মানার ব্যাপারে খোদ নবিজি সাঃ দুআ করেছেন। হাদিসটি সামনে আসছে।

প্রিয় পাঠক! উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, সকল মাযহাবের মূল ভিত্তি কুরআন-সুন্নাহ। কোনো ইমাম বা ফকিহ নিজের মনগড়া কোনো কথা মাযহাবের নামে উম্মাহর উপর চাপিয়ে দেন নি। আর এজন্যই ইমাম আবু হানিফা রহি. কী বলেছেন, আসুন হেযবুত তওহীদের থেকেও জেনে নেওয়া যাক। তারা লিখেছে,
ইমাম আবু হানিফা বলেছেন, আমার কোন মতামত যদি কোরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে আমার ফতোয়াকে দেওয়ালে ছুড়ে মারতে। ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৮৩

উপরন্তু সকল মাযহাবের মূলভিত্তি কী তাও তারা লিখেছে,
সব মাযহাবের মুসলিমরাই এই কালেমার সাক্ষ্য দেয়। এক আল্লাহ এক রাসূল ও এক কেতাবে জাতির কোন মতনৈক্য নেই। সম্মানিত আলেমদের প্রতি : পৃ. ১২

বুঝা গেলো, সকল মাযহাবের মূলভিত্তি কুরআন-সুন্নাহ। এর বিরোধিতা মানেই দীনের বিরোধিতা করা।

কুরআন-হাদিস বিশ্লেষণ ও মতানৈক্য কুফরী ও শিরকী:
তাদের দাবি হলো, কুরআনন-হাদিসের কোনো শব্দ বা ব্যাখ্যা নিয়ে মতপার্থক্য করা বি বিশ্লেষণ করা কুফর ও শিরক। আর এ কুফরী কাজটিই করেছেন ফকিহরা। ফলে তারাও কাফের ও মুশরিক। দেখুন তারা কী বলে,

মহানবী (দ:) কোরানের আয়াতগুলির কোনটার অর্থ, ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ, তর্কাতর্কিকে কুফর বোলে ঘোষণা দিয়েছেন।  তার জীবিতকালে তার সাহাবাদের মধ্যে কোরানের আয়াতের অর্থ নিয়ে কোন মতভেদ, তর্ক হয়নি, ফেনাক নিয়ে আলাদা আলাদা দল (মাযহাব) গঠন তো চিন্তার বাইরে। কোন সন্দেহ নেই যে কেউ ও রকম কোন চেষ্টা করলে তিনি তাকে হত্যা করার হুকুম দিতেন। তার ওফাতের বহু পরে যখন ঠিক ঐ কাজটাই করা শুরু হল, তখন ওটা যে শুধু কুফর হলো তাই নয়, ওটা বেদাত অর্থাৎ শেরেকও হলো, কারণ মহানবীর (দ:) সময় ওটা ছিলো না। সেই তখন থেকে ঐ কুফর, বে’দাত ও শেরেক কাজ আজ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে চোলে আসছে। শুধু চোলে আসছে না বিকৃত ও বিপরীত আক্বীদার ফলে ঐ শেরেক কুকুর মহা সওয়াবের কাজ মনে কোরে করা হচ্ছে। যে জাতি বা জনসংখ্যা হাজার বছরেরও বেশি সময় ধোরে শেরেক ও কুফর কোরে আসছে সেটাকে কার্যতঃ কাফের ও মোশরেক র বলায় ভুল কোথায়? -এ ইসলাম ইসলামই নয় : ৩২৭

শিয়া-সুন্নি সরকারি কওমি ওহাবী খারিজী কাদিয়ানী ইত্যাদি ইসলাম থেকে কতটুকু দূরে সরে গেছে সেটা আলোচ্য বিষয় নয় সোজা কথা এরা মোমেন নয় মুসলিম নয় উম্মতে মোহাম্মদী নয়। তারা প্রত্যেকেই এসব করে জাতীয় ঐক্য নষ্ট করে রসুলের কথা মোতাবেক কুফর করেছে ফলে কার্যত কাফের হয়ে গেছে। আর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে তারা কাফের তাদের নামাজ রোজা হজ্ব কোন কিছুই কবুল হবে না এবং তারা জাহান্নামী। সুতরাং ঐক্য নষ্ট করে এই জাতি আল্লাহর রাসূলের ইসলাম থেকে বহির্গত হয়ে গেছে বহু আগেই। এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৯৭।

এ জাতি নিজেরাই হাজার হাজার মাজহাব ফেরকা তরিকায় বিভক্ত হোয়ে কুফর কোরেছে। শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ২২

কুরআনের কোন আয়াতের অর্থ নিয়ে বিতর্ক কুফর। ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৯৬

দ্বীন নিয়ে বিতর্ক করা কুফর। ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৯৭

ফকীহদের বিশ্লেষণের ফলে এ জাতি অজ্ঞানতায় অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় ইসলামের আগের জাহিলিয়াতের অবস্থাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৯৯

শুধু এই দীনে নয়, পূর্ববর্তী দীনগুলোতেও ঠিক এভাবেই এই ধর্মের ধ্বজাধারী শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল। তাদের কাজও ছিল দীনের আইন-কানুন আদেশ-নিষেধের চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং যার পরিণতিতে ঘটে দিনের বিকৃতি। ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১৮

ফকিহরা কুফরকে ইবাদত মনে করে কাজ করেছেন। এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ. ৯৩/৯৪/৯৫/৯৭/৯৯/১০১/১০২/১১০/১৩২
আকীদা-২২-২৩
হলি আর্টিজেনের পর পৃ. ১৩
তওহীদ -২৭

ফকীহ মুফাসসিরদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের ফলে জাতির মধ্যে ভয়াবহ বিভেদ সৃষ্টি হোয়ে বিভিন্ন মাযহাব ও ফিরকা সৃষ্টি হয়ে যে অনৈক্য সৃষ্টি হলো তার ফলে পুনরায় একতাবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল। এইজন্য রাসুলুল্লাহ স: বলেছিলেন আমার  উম্মাহর আয়ু ৬০/৭০ বছর। এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃষ্ঠা. ২৮

যারা মাযহাব, ফেরকা, তরিকা, রাজনীতি, মতবাদ, ভৌগোলিক রাষ্ট্র, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা ইত্যাদি বহুভাবে এই দীনকে এবং মহাজাতিকে খন্ড-বিখন্ড করেছে তারা মোসলেম না। আল্লাহ রাসুল তাদের এমাম নন। এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১০১

এই জাতির পণ্ডিতদের আলেমদের কাজের ফলে জাতীয় ঐক্যহীন খণ্ড-বিখণ্ড একটি শক্তিহীন পদার্থে পরিণত হল। বিকৃত সুফিবাদ : পৃষ্ঠা. ৩৫

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়, কুরআন-সুন্নাহ’র ব্যাখ্যা করা, ইজতেহাদ করা ও মতভেদ করা বিদআত, শিরক, কুফর।

ইসলাম কী বলে?
ফিকহের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরামের যুগে মতভিন্নতা সৃষ্টি হলেও মূল আকীদার ক্ষেত্রে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়নি। তাই মাযহাবগত ফিকহী মতানৈক্য দোষণীয় নয়। কেননা চার মাযহাবের মতবিরোধ মতানৈক্য কেবলই ফিকহী বিষয় নিয়ে। কিন্তু হানাফি, শাফেয়ী, মালেকি, হাম্বলি চার মাযহাবের মৌলিক আকীদা এক ও অভিন্ন।

কুরআর-সুন্নাহর ব্যাখ্যা করা কী কুফরী?

ইজতিহাদ কী কুফরী?
যে বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ’য় কোনো দিকনির্দেশনা নেই, সে বিষয়ে ইজতিহাদ করা নবিজি সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে স্বীকৃত। কয়েকটি হাদিস দেখুন। হযরত মুআয রা. এর সঙ্গীগণ হতে বর্ণিত আছে,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ كَيْفَ تَقْضِي فَقَالَ أَقْضِي بِمَا فِي كِتَابِ اللَّهِ ‏قَالَ ‏فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي كِتَابِ اللَّهِ ‏ قَالَ فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏قَالَ أَجْتَهِدُ رَأْيِي قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏
রাসূলুল্লাহ সাঃ যখন মুআয রা. কে ইয়ামানে পাঠান। তিনি প্রশ্ন করেন, তুমি কিভাবে বিচার করবে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহ তা’আলার কিতাব অনুসারে বিচার করব। তিনি বললেনঃ যদি আল্লাহ তা’আলার কিতাবে পাওয়া না যায়? তিনি বললেন, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত (হাদীস) অনুসারে বিচার করব। তিনি বললেন, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতেও না পাও? তিনি বললেন, আমার জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে ইজতিহাদ করব। তিনি বললেন? সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্ তা’আলার জন্য যিনি আল্লাহর রাসূলের প্রতিনিধিকে এইরূপ যোগ্যতা দান করেছেন। জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ১৩২৭

উক্ত হাদিসে মুয়াজ রা. কে ইজতেহাদ করার হিম্মত করায় নবিজি সা: খুশি হয়ে তাঁকে দুআ করেছেন। অন্য আরেকটি হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ وَاحِدٌ
বিচারক যখন ফায়সালা করে এবং ইজতিহাদ করে (চিন্তা ভাবনা করে সত্যে পৌছার চেষ্টা করে), তারপর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছে যায়, তার জন্য দুইটি পুরস্কার রয়েছে। আর ফায়সালা করতে গিয়ে সে যদি ভুল করে ফেলে তবুও তার জন্য একটি পুরস্কার আছে। জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ১৩২৬

হযরত ওমর রা. এর ফাতাওয়া:
عَنْ شُرَيْحٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَتَبَ إِلَيْهِ: ” إِنْ جَاءَكَ شَيْءٌ فِي كِتَابِ اللَّهِ، فَاقْضِ بِهِ وَلَا تَلْفِتْكَ عَنْهُ الرِّجَالُ، فَإِنْ جَاءَكَ مَا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَانْظُرْ سُنَّةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاقْضِ بِهَا، فَإِنْ جَاءَكَ مَا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَلَمْ يَكُنْ فِيهِ سُنَّةٌ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَانْظُرْ مَا اجْتَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسُ فَخُذْ بِهِ، فَإِنْ جَاءَكَ مَا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَلَمْ يَكُنْ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَمْ يَتَكَلَّمْ فِيهِ أَحَدٌ قَبْلَكَ. فَاخْتَرْ أَيَّ الْأَمْرَيْنِ شِئْتَ: إِنْ شِئْتَ أَنْ تَجْتَهِدَ برأْيكَ ثُمَّ تَقَدَّمَ فَتَقَدَّمْ
শুরাইহ থেকে বর্ণিত, উমার ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাকে লিখে পাঠিয়েছিলেন, ’তোমার কাছে যদি এমন বিষয় আসে যা আল্লাহর কিতাবে (কুরআনে) রয়েছে, তবে সেই অনুযায়ী তুমি বিচার ফায়সালা করবে। কোন ব্যক্তি যেন তোমাকে তা থেকে (ডানে বামে) সরিয়ে না দেয়। আর যদি এমন বিষয় আসে যা আল্লাহর কিতাবে নেই তাহলে তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ দেখবে এবং সে অনুযায়ী ফায়সালা করবে। আর যদি তোমার নিকট এমন বিষয় আসে যা আল্লাহর কিতাবেও নেই, সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন সুন্নাহও নেই, তাহলে দেখবে লোকেরা কোন্ বিষয়ের উপর ঐকমত্য পোষণ করছে, তুমি সেটি গ্রহণ করবে। আর যদি তোমার নিকট এমন বিষয় আসে যা আল্লাহর কিতাবেও নেই, সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহও নেই, আর তোমার পূর্বে এ বিষয়ে কেউ কোন কথাই বলে যাননি, তবে তুমি দু’টি বিষয়ের যেকোন একটি গ্রহণ করতে পারো; যদি চাও তুমি আপন মতামতের ভিত্তিতে ইজতিহাদ করে অগ্রসর হবে, তবে অগ্রসর হতে পারো। সুনানে দারেমী, বর্ণনা নং : ১৬৯

ইবনে মাসউদ রা. এর ফাতাওয়া:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.  বলেন,
فَإِذَا سُئِلْتُمْ عَنْ شَيْءٍ فَانْظُرُوا فِي كِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوهُ فِي كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَفِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوهُ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ فَمَا أَجْمَعَ عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيمَا أَجْمَعَ عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ فَاجْتَهِدْ رَأْيَكَ
তোমাদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তোমরা আল্লাহ-এর কিতাবে তা খুঁজে দেখো। যদি বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে (খুঁজে) না পাও, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম্-এর সুন্নাতে তা তালাশ কর। আর যদি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ’র সুন্নাতেও না পাও, তবে সে বিষয়ে মুসলিমগণের (সাহাবীদের) ইজমা (ঐকমত্য) তালাশ করবে। যদি সেই বিষয়ে মুসলিমগণের ইজমা না পাও, তবে কেবল তখনই তুমি তোমার আপন মতামতের ভিত্তিতে ইজতিহাদ করতে পারো। সুনানে আদ দারেমী, বর্ণনা নং : ১৭১

সুতরাং প্রমাণ হলো, ইসলামে ইজতেহাদ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। প্রত্যেক মুজতাহিদের জন্য এ আমল করা কোনো গুনাহের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই নেক আমলকে হেযবুত তওহীদ কুফরী বলে নিজেরাই কুফরী করেছে।

ইখতিলাফ কী কুফর?
এতক্ষণ দেখলেন, ইজতেহাদ বা কুরআন-সুন্নাহ’র ব্যাখ্যার আলোকে বিভিন্ন মাসআলার সমাধান মূলক গবেষণা করা ইসলামে স্বীকৃত একটি আমল। একই বিষয়ে মতপার্থক্য থাকাতে হেযবুত তওহীদ কুফরী বলে দাবি করেন, অথচ রাসুলুল্লাহ’র অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে একই বিষয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এ ব্যাপারে লিখতে গেলে আরেকটি কিতাব তৈরি করতে হবে।
মনে রাখা উচিৎ, ফিকহের ইমামগণ সব সময় কুরআন ও সুন্নাহ’র ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েল বের করতেন। যেটাকে ইজতেহাদ বলা হয়। এই ইজতেহাদ করতে গিয়ে একেকজন ইমাম একেক ব্যাখ্যা বের করেছেন। এটা হতেই পারে। এটা শুধু ইমামদের ক্ষেত্রে নয়, সাহাবায়ে কেরামের রা. ক্ষেত্রেও এমনটা হওয়ার প্রমাণ সহিহ হাদিস থেকে পাওয়া যায়। নিন্মে কয়েকটা উদহরণ পেশ করছি-

এক. কিয়ামতে নবিজি সাঃ-এর কাফেলা নিয়ে মতভেদ:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাঃ বলেন,
عُرِضَتْ عَلَىَّ الأُمَمُ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ وَمَعَهُ الرُّهَيْطُ وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلاَنِ وَالنَّبِيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ إِذْ رُفِعَ لِي سَوَادٌ عَظِيمٌ فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي فَقِيلَ لِي هَذَا مُوسَى صلى الله عليه وسلم وَقَوْمُهُ وَلَكِنِ انْظُرْ إِلَى الأُفُقِ ‏.‏ فَنَظَرْتُ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ فَقِيلَ لِي انْظُرْ إِلَى الأُفُقِ الآخَرِ ‏.‏ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ فَقِيلَ لِي هَذِهِ أُمَّتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ أَلْفًا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلاَ عَذَابٍ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ نَهَضَ فَدَخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ فِي أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلاَ عَذَابٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ فَلَعَلَّهُمُ الَّذِينَ صَحِبُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ فَلَعَلَّهُمُ الَّذِينَ وُلِدُوا فِي الإِسْلاَمِ وَلَمْ يُشْرِكُوا بِاللَّهِ ‏.‏ وَذَكَرُوا أَشْيَاءَ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ ‏”‏ ‏.‏ فَأَخْبَرُوهُ فَقَالَ ‏”‏ هُمُ الَّذِينَ لاَ يَرْقُونَ وَلاَ يَسْتَرْقُونَ وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ ‏”‏ ‏.‏ فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ أَنْتَ مِنْهُمْ ‏”‏ ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ
স্বপ্নে আমার সামনে সকল নবীদের উপস্থিত করা হয়। অতঃপর তখন কোন কোন নবীকে দেখলাম যে, তার সঙ্গে ছোট্ট একটি দল রয়েছে; আর কাউকে দেখলাম, তার সঙ্গে একজন কিংবা দু’জন লোক আবার কেউ এমনও ছিলেন যে, তার সাথে কেউ নেই। হঠাৎ আমার সামনে এক বিরাট দল দেখা গেল। মনে হলো, এরা আমার উম্মত। তখন আমাকে বলা হল, ইনি মূসা (আঃ) ও তার উম্মত; তবে আপনি ওপর দিগন্তে তাকিয়ে দেখুন। আমি ওদিকে তাকালাম, দেখি বিরাট একদল, আবার বলা হল, আপনি ওপর দিগন্তে তাকিয়ে দেখুন, (আমি ওদিকে তাকিয়ে দেখলাম) এক বিরাট দল। বলা হল, এরা আপনার উম্মত। এদের মধ্যে সত্তর হাজার এমন লোক আছে যারা শাস্তি ব্যতীত ও হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন, অতঃপর তার ঘরে চলে গেলেন।

তারা উপস্থিত সাহাবাগণ তখন এ হিসাব ও আযাববিহীন জান্নাতে প্রবেশকারী কারা হবেন? এ নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। কেউ বললেন, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবা। কেউ বললেন, তারা সে সব লোক যারা ইসলামের উপর জন্মলাভ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কোন প্রকার শিরক করেনি এবং তারা বহু জিনিসের উল্লেখ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছে বেরিয়ে এলেন এবং বললেনঃ তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছিলে? সবাই বিষয়টি (খুলে) বললেন।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বললেনঃ এরা সে সব লোক যারা ঝাড়ফুঁক করে না বা তা গ্রহণও করে না, পাখি উড়িয়ে শুভাশুভের লক্ষণ মানে না বরং সর্বদাই আল্লাহর উপর নির্ভর করে। তখন উক্কাশাহ ইবনু মিহসান (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমার জন্যে দু’আ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি তাদেরই একজন থাকবে। তারপর আরেক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্যেও দু’আ করুন, আল্লাহ যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরঃ এ সুযোগ লাভ উক্কাশাহ তোমার চাইতে অগ্রগামী হয়ে গেছে। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২২০

উক্ত হাদিসে একই বিষয়ে সাহাবাদের মাখে মতভেদ হতো, তার প্রমাণ মিললো। আর এ মতভেদকে নবিজি সাঃ কুফর বলেন নি এবং রাগান্বিতও হন নি।

দুই. হজ্বে মুহাসসাব বা যি-তুয়া নামক স্থানে অবতরণ নিয়ে মতনৈক্য:
এ বিষয়টি নিয়ে সাহাবাদের মধ্যে মতভিন্নতা ছিলো। হযরত নাফি রহি. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، كَانَ إِذَا قَدِمَ مَكَّةَ بَاتَ بِذِي طَوًى حَتَّى يُصْبِحَ وَيَغْتَسِلَ، ثُمَّ يَدْخُلَ مَكَّةَ نَهَارًا وَيَذْكُرُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ فَعَلَهُ
ইবনু উমার রা. মক্কায় এসে যি-তুয়া নামক স্থানে ভোর পর্যন্ত রাতযাপন করতেন এবং গোসল করে পরে দিনের বেলা মক্কায় প্রবেশ করতেন। আর তিনি বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করেছেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ১৮৬৫

কিন্তু এই একই বিষয়ে ইবনু আব্বাস রা. বলেন,
لَيْسَ التَّحْصِيبُ بِشَىْءٍ إِنَّمَا هُوَ مَنْزِلٌ نَزَلَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
মুহাসসাবে যাত্রা বিরতি বাধ্যতামূলক নয়। এটি একটি মাঞ্জিল যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাত্রা বিরতি করেছেন। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৩১২

তিন. বনু কুরায়যায় নামাজ পড়া নিয়ে মতভেদ:
খন্দক যুদ্ধে ইয়াহুদী বনু-কুরায়যা মুসলমানদের সাথে সন্ধি লঙ্ঘন করার মাধ্যমে গাদ্দারী করে বসে। যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পর এক পর্যায়ে রাসূলে কারীম সাঃ সাহাবায়ে কেরামদের আদেশ দেন যে, তোমরা দ্রুত প্রস্তুত হও, বনু-কুরায়যাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হযরত ইবনু উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْأَحْزَابِ لَا يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ الْعَصْرَ إِلَّا فِي بَنِي قُرَيْظَةَ فَأَدْرَكَ بَعْضُهُمْ الْعَصْرَ فِي الطَّرِيقِ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لَا نُصَلِّي حَتَّى نَأْتِيَهَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ نُصَلِّي لَمْ يُرِدْ مِنَّا ذَلِكَ فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُعَنِّفْ وَاحِدًا مِنْهُمْ
নবি সাঃ আহযাব যুদ্ধের দিন (যুদ্ধ সমাপ্তির দিন) বলেছেন, বনু কুরায়যার মহল্লায় না পৌঁছে কেউ যেন আসরের সালাত আদায় না করে। পথিমধ্যে আসরের সালাতের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে পৌঁছার পূর্বে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা এখনই সালাত আদায় করব, কেননা নবি সাঃ-এর নিষেধাজ্ঞার অর্থ এই নয় যে, রাস্তায় সালাতের সময় হয়ে গেলেও তা আদায় করা যাবে না। অতপর বিষয়টি নবি সাঃ-এর কাছে বিষয়টি বলা হলে তিনি তাদের কোনো দলের প্রতিই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি। সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৪১১৯

প্রিয় পাঠক! এমন দলিল দিলে ভুরিভুরি দেওয়া যাবে, যেখানে সাহাবাদের মধ্যে মতভেদের প্রমাণ পাওয়া যায়। এটা কুফরী হলে সাহাবায়ে কেরাম রা. করতেন? বুঝা গেলো, কুরআন-সুন্নাহর কোনো বিষয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ স্বীকৃত বিষয়, কুফর বা শিরক নয়।

মাযহাবে আমলের বৈপরিত্ব কেন?
তবে অনেক বিষয়ে মাযহাবের ইমামদের মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। একেক বিষয়ে একেকজন ইমাম একেক রকম মন্তব্য করেছেন। কারণ একই বিষয়ে নবিজি সাঃ থেকে কয়েকরকম আমল পাওয়া যায়। যেমন ‘আমীন’ বলা নিয়ে দু’রকম সহিহ হাদিস রয়েছে। কেউ জোর বলার হাদিস নিয়ে আমল করছেন, কেউ আস্তে বলার হাদিসে আমল করছেন। অনুরূপ নামাজে হাত বাঁধার ব্যাপারে বুকের নীচে হাত বাঁধা ও নাভীর নীচে হাত বাঁধার হাদিস রয়েছে। একেক মাযহাবে একেকটার ওপর আমল করা হচ্ছে। আর এটাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন মাযহাব তৈরি হয়েছে। পৃথিবীতে বর্তমান প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য ৪ টি মাযহাব চলমান রয়েছে। যথা- হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী। যে মাযহাবগুলোর অনুসারী ছিলেন সকল মুহাদ্দিসিনে কেরাম।

ইমাম বুখারী রহি. শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। আলহিত্তা : পৃ. ২৮৩।
ইমাম মুসলিম রহি. শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। আলহিত্তা : পৃ. ২২৮
ইমাম তিরমিজী নিজে মুজতাহিদ ছিলেন। তবে হানাফী ও হাম্বলী মাজহাবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। আল-ইনসাফ : পৃ. ৭৯।
ইমাম নাসাঈ রহি. শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। আল-হিত্তা পৃ. ২৯৩।
ইমাম আবু দাউদ রহি. শাফেয়ী। আল-হিত্তা : পৃ. ২২৮।
ইমাম ইবনে মাজাহ রহি. শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। ফয়যুল বারী : খ. ১ পৃ. ৫৮।

সুতরাং মাযহাবের সকল মুজতাহিদ ও ফকিহরা এবং তাঁর অনুসারীরা যদি কাফের হয়, তাহলে তাঁদের কিতাব থেকে হাদিস নিয়ে সেটা জাতির সামনে বলতে লজ্জা করে না? কী জবাব দেবেন হেযবুত তওহীদ? অথচ তারা লিখেছে-

ফকিহরা মূর্খ জাতি বানিয়েছে:
পণ্ডিতদের এই শিক্ষার ও ফতোয়ার ফলে এই জাতি একটি মূর্খ জাতিতে পর্যবসিত হয়ে গিয়েছিল, দৃষ্টি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষাব্যবস্থা : পৃ. ১৯/৫৬

তারা প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী ও পন্ডিত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে খ্রিস্টান পণ্ডিতদের তত্ত্বাবধানে থেকে তাদের কাছ থেকে ইসলাম শিখে এবার যে আলেম ফাজেল শ্রেণীটি বের হলো এরা না ছিল জ্ঞানী না ছিল পন্ডিত।  শিক্ষাব্যবস্থা : পৃ. ২৬

ফকীহদের কারণে মুসলিমরা অপমানিত ও লাঞ্ছিত:
ফকিহদের কাজের ফলে মুসলমান নামের জাতিটি আজ চরম অশান্তিতে পতিত অন্য জাতি দ্বারা লাঞ্ছিত অপমানিত। যারা নিজেরাই আছে চরম অশান্তির মধ্যে তারা কি করে অন্য জাতিকে শান্তি দেবে? সবার ঊর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ৫।

ইমামরা কী ইসলামকে কঠিন করে দিয়েছে:
আলেম সমাজ গত ১৩০০ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন সেটাকে পূর্ণাঙ্গভাবে আয়ত্ত্বে আনা দূরে থাক, ভাসাভাসা ভাবে জানতে গেলেও জীবনের বড় একটি সময় মাদ্রাসার বারান্দায় পার করতে হবে। -তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৪।

দুর্ভাগ্যক্রমে সেই সহজ-সরল ইসলাম আজ কোথাও নেই। দীনুল কাইয়্যেমা হারিয়ে দীনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিশ্লেষণের ফলে সহজ-সরল ইসলাম বিকৃত হয়ে এত জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে যে সাধারণ জনগণ দূরে থাক, একজন প্রখর বুদ্ধিমত্তার মানুষের পক্ষেও এত কিতাবের বোঝা বহন করে এক জীবনে সম্পূর্ণ দীন শেখা  সম্ভব নয়, পালন করা তো পরের বিষয়। -তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৭।

ফকিহরা মৃসলিমদের খণ্ডবিখণ্ড করেছে:
সহজ সরল সেরাতুল মুস্তাকিম দীনুল হক,  ইসলামকে একদিকে পন্ডিত আলেম ফকীহ, মুফাসসিরগণ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বহুমতের সৃষ্টি করেছে। ফলে একদা অখণ্ড উম্মতে মোহাম্মদী হাজারো ফেরকা, মাযহাব, দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে আছে। -ধর্মবিশ্বাস : পৃ. ১৯।

ফকিহরা ইসলাম ধ্বংস করে দিয়েছে:
পূর্ববর্তী দীনের পণ্ডিতদের মত এই উম্মাহর পণ্ডিতরাও একে ধ্বংস করে দিলেন।ফলে শত্রুর কাছে পরাজিত হয়ে গেল। ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৯৬-৯৭

নোট:
ইমামরা আমাদের যে উপকার করে গেছেন, তা সত্যনিষ্ঠ মানুষরা অস্বীকার করতে  না। তাঁরা যদি প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয়ে খোলাখুলি গবেষণা না করতেন, তাহলে আমাদের জন্য দ্বীন পালন করা অত্যান্ত কঠিন হয়ে পড়তো। কারণ পুরো কুরআন শরীফ, প্রায় ১০ লক্ষ হাদিস, প্রত্যেকটির প্রেক্ষাপট, নাসেখ-মানসুখ ইত্যাদী বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে করতেই বয়স শেষ হয়ে যেতো, তবুও গবেষণা শেষ হতো না। আমজনতাকে কুরআন-হাদিসের আলোকে ২ রাকাত নামাজ পড়তে বললে জীবন পার হয়ে যাবে, কিন্তু দলিলও আর পাওয়া হবে না, নামাজও আরর পড়া হতো না। কিন্তু মাযহাবের ইমামগণ দুনিয়াবী সকল মোহ ত্যাগ করে নিজেদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়জিত করায় আজ আমরা সহজে দ্বীন পালন করতে পারছি। এ হিসাবে বলা যায়, মহান আল্লাহ ইমামদেরকে এ জাতির বিরাট এক নিয়ামত করে পাঠিয়েছেন।

ফকিহরা দীন বিক্রি করে খেয়েছেন;
তারা লিখেছে,
আলেম উলামারা সহজ সরল দীনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে একে সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরে নিয়ে গেছেন এবং বিকৃত বিপরীতমুখী সেই দীনটিকে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ২৭।

নোট:
অথচ ইতিহাসের কিতাবে এ ব্যাপারে ভরপুর আলোচনা রয়েছে যে, আয়েম্মায়ে মুজতাহিদীন সবাই কোনো না কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। এটা হেযবুত তওহীদও লিখেছে,
ইমাম আবু হানিফা ধর্মব্যবসায়ী ছিলেন না তিনি ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়। ইমাম আবু ইউসুফ ছিলেন জুতা প্রস্তুতকারী। ইমাম শাফী এর হাতে তালা বানানোর দাগ পরিদৃষ্ট হতো,  ইমাম ইবনে কাহতান দুবাগা দর্জির কাজ করতেন, খ্যাতনামা ইমাম জাসসাস ছিলেন কাচপাত্র নির্মাতা।যারা তাদের ক্ষুরধার মেধাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের বিধি-বিধান কে সন্নিবেশন করে ফেকাহ শাস্ত্রগুলো তৈরি করে গেলেন। তারা এগুলোর বিনিময় এক পয়সা রোজগার করেননি। তারা এগুলো করেছেন সমাজের প্রয়োজনে। বিচার করতে আইনের বই লাগবেই, রাজস্বের কাজ করতে অর্থনীতির বই লাগবে, তখন ইসলামের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল, তাই এই মানুষগুলো কষ্ট করে সেই গ্রন্থগুলো প্রণয়ন করেছেন মানুষের কল্যাণার্থে। ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৮৪

প্রমাণ হলো, ফকিহরা কোনো না কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তাঁদেরকেও দীন বিক্রি করে খাওয়ার অভিযোগ দিয়েছে হেযবুত তওহীদ।

ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ জিহাদী অংশটা বাদ দিয়েছে:

হেযবুত তওহীদের দাবি করেছে,
ফকিহরা নবীজির জিবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ভাগটা কে বাদ দিয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন অনেক অপ্রয়োজনীয় অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে। বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৫৪

মহাদ্দেসরা রাসূলুল্লাহর স: হাদিস সংগ্রহ ও যাচাই করতে যে অধ্যবসায় পরিশ্রম আর কোরবানি করেছেন তার তুলনা মানুষের ইতিহাসে আর নেই। কিন্তু এরা সবাই বিশ্বনবীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, প্রয়োজনীয় যে ভাগটি সেটাকে যথার্থ গুরুত্ব দেযননি, সেটা হলো মহানবীর জীবনের সামরিক ভাগ। শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৭৩।

এই ফকিহ মোফাসসের মুহাদ্দিস এরা সবাই আবির্ভূত হয়েছিলেন এই উম্মাহ তার নেতার সা: প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠা করে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করার সুন্নাহ ত্যাগ করার পর। এই উম্মাহ সৃষ্টির  প্রকৃত উদ্দেশ্য তখন তাদের সম্মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে, আকিদা বিকৃত হয়ে গেছে, উদ্দেশ্য লক্ষ্য হারিয়ে গিয়েছিল বলেই তো তারা সংগ্রাম ত্যাগ করে খাতা-কলম নিয়ে ঘরে বসে ছিলেন এই দিনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে। বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৫৫।

নোট: অথচ প্রত্যেক ফিকহের কিতাবে জিহাদের জন্য স্পেশাল অধ্যায় রয়েছে। কিন্তু এতোবড় মিথ্যাচার কেন করলো হেযবুত তওহীদ তা আমার অজানা।

মাযহাব ধ্বংস করবে হেযবুত তওহীদ:
হেযবুত তওহীদ তো মাযহাবের অনুসরন করেই না, বরং তারা মাযহাব ধ্বংস করতে চায়। তারা লিখেছে,

চুলচেরা বিশ্লেষণের ফলে যে অনৈক্য ও ফেরকা মাযহাব সৃষ্টি হলো তা ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ লুপ্ত হয়ে আবার আগের মতো কঠিন ঐক্য এই উম্মাহর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে। যখন এই উম্মাহ আবার তার প্রকৃত আকিদা ফিরে পাবে। বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৫৪

ফেরকা মাযহাবের আলেম ওলামাদের অতি বিশ্লেষণের ফসল হিসেবে যে জটিল দুর্বোধ্য ইসলামকে দাঁড়িয়ে গেছে সেটা সেই যুগে হয়তো জোর করে চালানো গেছে, কিন্তু এই যুগে তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে বাধ্য।
ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১০

আমরা হানাফী,শাফেয়ী, মালেকী,হাম্বলী কোনটাই না, আমরা চেষ্টা করছি উম্মতে মোহাম্মাদী হতে। প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ১১৪

হেযবুত তওহীদ নতুন কোন দল বা ফেরকা নয়, বরং সমস্ত ফেরকা, মাযহাবের প্রাচীর ভেঙে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা হিজবুত তাওহীদের কাজ। তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ৩১।

যুগযুগ ধরে চলে আসা যে মাযহাবসমূহ পালন করে ধর্মপ্রাণ মুসলমান জাতি ফায়দা পাচ্ছে, দ্বীন পালন করতে সহজ হয়েছে। সে মাযহাবকে হেযবুত তওহীদ ধ্বংশ করতে চায়। এমন স্বপ্ন অনেকেই দেখেছিলো। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে। এরাও ঘুমে থেকে স্বপ্ন দেখতে পারে কিন্তু সে আশা হতাশায় রুপান্তরিত হতে বাধ্য। মনে রাখা চাই, মাযহাব ধ্বংস করা হেযবুত তওহীদের কাজ নয়, বরং আখের ইসলাম ধ্বংস করাই হচ্ছে তাদের মূল টার্গেট।

অতি ধার্মিক ও খুঁটিয়ে পালন করা নিষেধ:
অতি ধার্মিক হওয়া, দীনের অতি বিশ্লেষণ করে সে গুলোকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পালন করা নিষেধ।  এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৩১

ইসলামকে যথাসম্ভব পরিপূর্ণভাবে পালন করার নির্দেশ খোদ আল্লাহপাকের। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَ
হে ঈমানদারগন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। [সুরা বাকারা : ২০৮]

এখন আপনারাই বলুন, তারা কী আসলে মাযহাব ধ্বংস করতে চায়, নাকি দীন ধ্বংস করতে চায়?

Check Also

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.