এই বাক্যটা একটা চরম লেভেলের প্রতারণা ও মওদুদীকে বাঁচানোর অপকৌশল বা কুমন্ত্রণামূলক বাক্য। মূলত মওদুদীবাদীদের সাথে উলামায়ে কেরাম যখন মওদুদীর ভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা করেন, তখন তারা এক পর্যায়ে চরমভাবে পরাজয়ের পর তাদের গুরুকে বাঁচাতে ও তাকে মানার রাস্তা সহজ করতেই এই বাক্যটা ছড়িয়ে দিচ্ছে দিগদিগন্তে। আসলেই কী মওদুদীর ভ্রান্তিগুলো ভুল না অপরাধ?
মনে রাখা দরকার, ভুল আর অপরাধ এক নয়। আচ্ছা বলুন তো,
১. সাহাবাদের রা. সমালোচনা করা কী ভুল না অপরাধ?
২. সাহাবায়ে কেরামকে রা. অপমান করতে শিয়াদের হাদিসকে প্রমাণস্বরূপ পেশ করা ভুল না অপরাধ?
৩. নিজে আলেম না হয়েও পবিত্র কুরআনের মনগড়া অপব্যাখ্যা করা ভুল না অপরাধ?
৪. ইসলামের অসংখ্য বিধানের বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে যাওয়া ভুল না অপরাধ?
৫. উলামায়ে দেওবন্দ মওদুদীর সকল অপব্যাখ্যা ও সাহাবা সমালোচনার জবাব দেওয়ার পরও নিজেকে না শোধরানো ভুল না অপরাধ?
কথা ক্লিয়ার, উলামায়ে দেওবন্দ মওদুদীর ভ্রান্তিকে তার মৃত্যুর আগেই দালিলিকভাবেই জবাব দিলেছিলেন। কিন্তু তারপরও সে মৃত্যুর আগে তওবা করে যায়নি। বুঝা গেলো, এগুলো তার ভুল নয়, বরং অপরাধমূলক বিভ্রান্তি। তার অপরাধকে যারা ভুল হিশাবে উত্থাপন করে তার বিষাক্ত বিষ জনসাধারণকে গিলাতে চায়, তারাও মওদুদীর মতো অপরাধী।
হ্যাঁ, অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে, ‘কওমী হুজুরদের কী কোনো ভুল হয় না?’ অবশ্যই হয়। আমরা কেউ ভুলের উর্ধ্বে নই। কিন্তু রবের দয়া হলো, কওমী বা দেওবন্দী আলেমদের ভুল হলেই তারা সাথে সাথে রুজু করেন বা ভুল শুধরে নেন। কিন্তু যারা শোধরায় না, তাদেরকে আমরাও সত্যিকারের আলেম মনে করি না।
দেখুন, আদম আ. যখন বুঝলেন যে, নিষিদ্ধ বৃক্ষ থেকে খাওয়ায় তাঁর পদস্খলন হয়েছে, তখনই তিনি অনুশোচিত হয়েছেন এবং দীর্ঘ সময় কেঁদে রবকে খুশি করে পূনরায় নিজ আবাসস্থল জান্নাতী হয়েছেন। কিন্তু শয়তান অপরাধ করেও যুক্তি পেশ করে আজীবন মালউন ও মারদুদ (অভিশপ্ত ও বিতাড়িত) হয়েছে। ঠিক তেমনি আদম আ.-এর সত্যিকার সন্তান তথা হক্কানী আলেম হলেন তাঁরাই, যারা ভুল হলেই নিজেকে নিঃশর্ত শুধরে নেন। কিন্তু শয়তানের অনুসারীরা অপরাধ করলেও তাদের কপালে আর তাওবা নসীব হয় না। এটাই পার্থক্য ইবলিস আর আদমের মাঝে।
যারা বলে থাকেন ‘মওদুদীও মানুষ, তিনি কী ভুল করতে পারেন না?’ তাহলে আমার একটি প্রশ্নের জবাব দিন তো, যদি আপনারা মনেই করে থাকেন যে, মওদুদীও ভুল করতে পারে, তাহলে তার ভুলকে আমরা যখন ধরিয়ে দিই, তখন আপনারা আবার পাল্টা যুক্তি পেশ করে মওদুদীকে সহিহ প্রমাণ করতে চান কেন? তাহলে প্রকারান্তে এর অর্থ কী এটা দাঁড়াচ্ছে না যে, যারা মনে করে ‘মওদুদীও ভুল করতে পারে’ তারাও এ কথাটা বিশ্বাস করে না। করলে নিশ্চয় পাল্টা যুক্তি পেশ করে মওদুদীকে বাঁচানোর চেষ্টা করতো না। অতএব বুঝা গেলো, ‘মওদুদীও ভুল করতে পারে’ এ বাক্যটা নিছক আইওয়াশ। রব আমাদের সহীহ বুঝ দান করেন। মওদুদীর ভ্রান্তি থেকে রব আমাদের হিফাযত করেন। আমীন!