Home > হেযবুত তওহীদ > ফিরিস্তারা শুধু প্রাকৃতিক শক্তি। হেযবুত তওহীদ।

ফিরিস্তারা শুধু প্রাকৃতিক শক্তি। হেযবুত তওহীদ।

মহান আল্লাহ-র সম্মানিত এক সৃষ্টির নাম ফিরিস্তা। যাঁদেরকে আল্লাহ-র সৈনিক বলে পবিত্র কুরআনে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যাঁরা প্রাণীজগের অন্তুর্ভূক্ত একটি সৃষ্টি। তবে মহান রবের ঘোষণা অনুযায়ী ফিরিস্তারা তাঁর অনুগত ও সম্মানিত বান্দা।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের কাছে ফিরিস্তারা শুধু প্রাকৃতিক শক্তি মাত্র। আগে দেখুন ফিরিস্তাদের সম্পর্কে হেযবুত তওহীদ কী লিখেছে,
মানুষকে বিজ্ঞান শেখাবার পর তিনি (আল্লাহ) তার মালায়েকদের ডেকে সব জিনিষের নাম জিজ্ঞেস কোরলেন- তারা বোলতে পারলেন না। কারণ আগেই বোলেছি মালায়েকরা প্রাকৃতিক শক্তি মাত্র। -এ ইসলাম ইসলামই নয় : পৃ.  ১৯

সংখ্যায় এরা (ফেরেস্তারা) অগন্য এবং এরা আসলে প্রাকৃতিক শক্তি- যে শক্তি দিয়ে আল্লাহ তার সমস্ত সৃষ্টিকে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পরিচালনা করেন এবং এদের কোন ইচ্ছাশক্তি নেই । আল্লাহ যাকে যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন, যাকে যে কর্তব্য নির্ধারণ কোরে দিয়েছেন সে ফেরেশতা সামান্যতম বিচ্যুতি না কোরে তা যথাযথ কোরে যাচ্ছেন। আসলে কোন বিচ্যুতি হোতে পারে না- কারণ প্রাকৃতিক শক্তিগুলির কোন স্বাধীন ইচ্ছাই নেই । যেমন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একটি মালায়েক। এর উপর স্রষ্টা কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন সমস্ত কিছুকে আকর্ষণ কোরে ধোরে রাখার। সৃষ্টির প্রথম থেকে এই ফেরেশতা তার কর্তব্য কোরে যাচ্ছেন এবং শেষ পর্যন্ত কোরে যাবেন। তার এতটুকু ইচ্ছা শক্তি নেই যে, এক মুহূর্তের এক ভগ্নাংশের জন্যও তিনি এই কাজের বিরতি দেন, সে ইচ্ছাশক্তি আল্লাহ তাকে দেননি । এমনি আগুন, বাতাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তিগুলি- ফেরেশতা, দেব- দেবী। -এ ইসলাম ইসলামই নয় : পৃ.  ১৬; বিশ্বনবী মোহাম্মদ (দ.) এর ভাষণ : পৃ. ২০০

সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের কাছে ফিরিস্তারা আলাদা কোনো সৃষ্টি নয় বরং শুধুমাত্র প্রাকৃতিক শক্তি মাত্র।

ইসলাম কী বলে?
ফিরিস্তা হলেন আল্লাহপাকের অসাধারণ এক সৃষ্টির নাম। তাঁদেরকে আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন, আবার তাঁদেরকে মানুষের মত মৃত্যুও দেবেন। তাঁরা আল্লাহ-র ইবাদত করেন, কেউ সিজদায়, কেউ রুকুতে। তারা আল্লাহ-র কাছে তাঁর সম্মানিত ও অনুগত বান্দা এবং তাঁর সৈনিক। চলুন নিন্মে ফিরিস্তাদের সম্পর্কে কিছু আয়াত ও হাদিস দেখি-

এক. ফিরিস্তারা নূর দ্বারা সৃষ্ট।
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
خُلِقَتِ الْمَلاَئِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ
ফিরিস্তাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে, আর জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ধুম অগ্নিশিখা হতে এবং আদমকে (মানুষকে) সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ বস্তু হতে যে সম্পর্কে তোমাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে। (অর্থাৎ মাটি থেকে)। -সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯৯৬

দুই. ফিরিস্তার আল্লাহ-র সৈনিক।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ফিরিস্তাদেরকে নিজের সৈনিক হিশেবে উল্লেখ্য করেছেন,
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ
তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া কেউ জানে না। -সুরা মুদ্দাসসির : ৩১

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَاءتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَا وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا
হে মুমিনগণ, আল্লাহ তোমাদের প্রতি সেই সময় কীরূপ অনুগ্রহ করেছিলেন তা স্মরণ করো, যখন বহু সৈন্য তোমাদের প্রতি চড়াও হয়েছিলো, তারপর আমি তাদের বিরুদ্ধে এক ঝড়ো হাওয়া পাঠাই এবং এক বাহিনী যা তোমরা দেখতে পাওনি। আর তোমরা যা-কিছু করছিলে, আল্লাহ তা দেখছিলেন। -সুরা আহযাব : ৯

তিন. ফিরিস্তারা আল্লাহ-র সম্মানিত বান্দা।
আরবের কাফেররা ফিরিস্তাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা বলে আখ্যায়িত করলে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ফিরিস্তাদেরকে ‘নিজের অনুগত ও সম্মানিত বান্দা’ হিশেবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। মহান রব বলেন,
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ
তারা বলে, রহমান (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন (আর তাঁর সন্তান হল ফিরিশতাগণ)। সুবহানাল্লাহ! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা।। -সুরা আম্বিয়া : ২৬

চার. ফিরিস্তারা মানুষের প্রহরী হিশেবে কাজ করেন।
ফিরিস্তাদের অন্যতম একটি কাজ হলো- তাঁরা আল্লাহ-র হুকুমে তাঁরই মর্জিমতো মানুষের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন,
لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللّهِ
প্রত্যেকের সামনে পেছনে এমন প্রহরী (ফিরিস্তা) নিযুক্ত আছে, যাঁরা আল্লাহ-র নির্দেশে পালাক্রমে তার হেফাজত করে থাকে। -সুরা রাদ : ১১

পাঁচ. ফিরিস্তারা আল্লাহ-র তাসবীহ পড়েন।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَن فِي الْأَرْضِ
ফিরিস্তাগণ তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাসবীহ পাঠ করে এবং পৃথিবীবাসীর জন্য ইসতিগফার করে। -সুরা শুরা : ৫

অপর আয়াতে আল্লাহপাক বলেন,
يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ
তাঁরা রাত-দিন তাঁর তাসবীহতে লিপ্ত থাকে, কখনও ক্লান্ত হয় না। -সুরা আম্বিয়া : ২০

ছয়. ফিরিস্তারা সব সময় আল্লাহ-র অনুগত থাকেন।
মহান রব বলেন,
وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مِن دَآبَّةٍ وَالْمَلآئِكَةُ وَهُمْ لاَ يَسْتَكْبِرُونَ يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবিতে যতো প্রাণী আছে তারা এবং সমস্ত ফিরিস্তা আল্লাহকেই সিজদা করে এবং তাঁরা মোটেই অহংকার করে না। তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, যিনি তাঁদের উপরে এবং তাঁরা সেই কাজই করে, যার আদেশ তাঁদেরকে করা হয়। -সুরা নাহল : ৪৯-৫০

وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لَا يَسْقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ وَمَنْ يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَهُ مِنْ دُونِهِ فَذَلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ كَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ.
তারা বলে, রহমান (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন (আর তাঁর সন্তান হলো ফিরিস্তাগণ)। সুবহানাল্লাহ! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা তাঁকে ডিঙিয়ে কোনো কথা বলে না এবং তাঁরা তাঁর আদেশ মতই কাজ করে। তিনি তাঁদের সম্মুখ ও পিছনের সবকিছু জানেন। তাঁরা কারও জন্য সুপারিশ করতে পারে না, কেবল তাদের ছাড়া, যাদের জন্য আল্লাহ-র পছন্দ হয়। তাঁরা তাঁর ভয়ে থাকে ভীত। তাদের মধ্যে কেউ যদি এমন কথা বলেও (যদিও সেটা অসম্ভব) যে, ‘আল্লাহ ছাড়া আমিও একজন মাবুদ’, তবে আমি তাকে জাহান্নামের শাস্তি দেবো। এরূপ জালেমদেরকে আমি এভাবেই শাস্তি দেই। -সুরা আম্বিয়া : ২৬-২৯

এ ছাড়াও ফিরিস্তাদের ক্ষেত্রে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে। যা থেকে প্রমাণ হয়, ফিরিস্তারা আল্লাহ-র সম্মানিত বান্দা। তাঁদের মর্যাদা সমুন্নত ও উচ্চ। কথা ও কাজে তাঁরা আল্লাহ-র পরিপূর্ণ অনুগত। তাঁরা আল্লাহ-র আদেশ অমান্য করেন না। আল্লাহ-র আদেশ মান্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন, বরং আল্লাহ-র নির্দেশই তাঁদের ক্রিয়াশীল করে এবং তাঁদের কাজের সুযোগ করে দেয়। সৃষ্টিজগতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও আল্লাহ-র ইবাদতে নিমগ্ন থাকা ফিরিস্তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়াও ফিরিস্তারা আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে নবি-রাসুলগণেরর কাছে ওহি আনতেন। আর এটা জানা কথা যে, কোনো প্রাকৃতিক শক্তির পক্ষে ওহি সরবরাহ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ছাড়াও ফিরিস্তাদের ব্যাপারে কয়েকজনের নাম বর্ণিত হয়েছে। যেমন-রুহ, জিবরাঈল, মিকাইল, ইসরাফিল, রিজওয়ান, মালেক প্রমুখ। তাঁদের পাখা আছে, তাঁরা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারেন, তাঁরা নূরের সৃষ্টি ইত্যাদী। সুতরাং ফিরিস্তাদেরকে শুধু প্রাকৃতিক সৃষ্টি বলা চরম অন্যায় ও মারাত্মক ধৃষ্টতা।

তাছাড়া হেযবুত তওহীদ ফিরিস্তাদেরকে যে প্রাকৃতিক শক্তি বলে আখ্যায়িত করলো, অথচ প্রাকৃতিক শক্তিগুলির মাঝে কোনো অনুভূতি ও আত্মা নেই। অথচ ফিরিস্তারা আল্লাহ তাআলার এমন এক সৃষ্টি, যাঁদের মাঝে প্রাণ ও আত্মা বিদ্যমান রয়েছে। কুরআন-হাদিসে ফিরিস্তাদেরকে এমন অনেক অভিধা ও বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত করা হয়েছে যা তাঁদেরকে প্রাণবিশিষ্ট ও শক্তিশালী সৃষ্টি হিশেবে প্রমাণ করে থাকে। ফিরিস্তাগণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও অন্যান্য নবিদের কাছে ওহি নিয়ে আগমন করার কথা কুরআন-হাদিসের অনেক জায়গায় উল্লেখ্য রয়েছে। উম্মতের পঠিত দরূদ ও সালাম পাঠকারীদের পক্ষ থেকে আল্লাহ-র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যেও একদল ফিরিস্তা নিয়োজিত রয়েছেন। যাঁরা সর্বদা জমিনে বিচরণ করতে থাকেন। জুমআর দিন মসজিদের দরজায় ফিরিস্তারা দণ্ডায়মান হয়ে অগ্রগামী মুসল্লিদের তালিকা প্রস্তুত করার কথাও বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। এ ধরনের আরও অনেক বিষয় আছে, যা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, পন্নী ও হেযবুত তওহীদের ধারণা অনুযায়ী ‘ফিরিস্তারা প্রাকৃতিক শক্তি’ এটা ডাহা মিথ্যাচার। কারণ প্রাকৃতিক শক্তি কখনও আসা-যাওয়া করতে পারে না। তাছাড়া প্রাকৃতিক শক্তি হলে মানুষের আমলও বা লিপিবদ্ধ করেন কীভাবে তাঁরা?

Check Also

পন্নীর চেয়ে মুহাম্মাদ সা. এর এরিয়া কম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন সমস্ত বিশ্বসমূহের জন্য রহমত করে। আর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.