Home > হিন্দুত্ববাদ > পূজামণ্ডপে যাওয়া হারাম।

পূজামণ্ডপে যাওয়া হারাম।

সম্প্রতিকালে পূজামণ্ডপে অনেক মুসলিমদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সেদিন তো দেখলাম জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিন্দুদের খুশি করতে দূর্গাপূজায় উপস্থিত হয়ে গীতা পাঠ করে মহাখুশি হলেন। নাইযুবিল্লাহ। অথচ হিন্দু বা যে কোনো কাফেরদের পূজা বা ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া হারাম। আর সেই উৎসবের প্রতি সম্মান জ্ঞাপনপূর্বক উপস্থিত হওয়া অথবা তাদের পূজা ও ধর্মীয় প্রথা পালনে অংশ গ্রহণ করা কুফর। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا
এবং রহমানের বান্দা তারা) যারা ‘যূরে’ উপস্থিত হয় না। আর অনর্থক কর্মকাণ্ডের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে সসম্মানে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। -সুরা ফুরকান : ৭২

উক্ত আয়াতে (الزُّورَ) ‘যুর’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে কাসির রহি. বলেন,
وقال أبو العالية، وطاوس، ومحمد بن سيرين، والضحاك، والربيع بن أنس، وغيرهم: هي أعياد المشركين
আবুল আলিয়া, তাউস, মুহাম্মাদ বিন সিরিন, যাহহাক, রবি বিন আনাস প্রমুখ তাবিয়ি বলেছেন, ‘যূর’ হচ্ছে মুশরিকদের উৎসব। -তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ৬ পৃ. ১৩০

ইমাম ফখরুদ্দিন রাযি রহি. বলেন:
ويحتمل حضور كل موضع يجري فيه ما لا ينبغي ويدخل فيه أعياد المشركين ومجامع الفساق، لأن من خالط أهل الشر ونظر إلى أفعالهم وحضر مجامعهم فقد شاركهم في تلك المعصية، لأن الحضور والنظر دليل الرضا به
আয়াতে ‘যূর’ দ্বারা প্রত্যেক এমন জায়গা উদ্দেশ্য হতে পারে যেখানে অনুচিত কাজ সংঘটিত হয়। মুশরিকদের উৎসব এবং পাপাচারীদের মিলনমেলাও এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা যে অবাধ্যদের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করে, তাদের সমাবেশে উপস্থিত হয়, সেও তাদের সঙ্গে উক্ত অপরাধে অংশ নিল। উপস্থিত হওয়া ও পরিদর্শন করা তার প্রতি সন্তুষ্টির প্রমাণ। -তাফসিরে কাবীর, খ. ২৪, পৃ. ১১৩

এ ছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহ-র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ تَدْخُلُوا عَلَى هَؤُلاَءِ الْمُعَذَّبِينَ إِلاَّ أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا بَاكِينَ فَلاَ تَدْخُلُوا عَلَيْهِمْ لاَ يُصِيبُكُمْ مَا أَصَابَهُمْ.
তোমরা এসব ’আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। কান্না না আসলে সেখানে প্রবেশ করো না, যেন তাদের উপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের প্রতিও আসতে না পারে।
বুখারী, হাদিস নং : ৪৩৩

তাছাড়া ইমাম বাইহাকী উমর বিন খাত্তাব রা. থেকে ‘সহিহ-সনদ’-এ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন,
لا تدخلوا على المشركين في كنائسهم يوم عيدهم فإن السخطة تنزل عليهم
মুশরিকদের উৎসবের দিনে তোমরা তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কেননা তাদের উপর আল্লাহ-র অসন্তুষ্টি নাযিল হতে থাকে। -সুনানুল কুবরা (বাইহাকি) হাদিস নং : ১৮৮৬১

এছাড়াও হযরত উমার রা. বলেন,
اجتنبوا أعداء الله في أعيادهم
তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে তাদের থেকে দূরে থাকো। -সুনানুল কুবরা (বাইহাকি) হাদিস নং : ১৮৮৬২

হযরত আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর রা. বলেন,
من مَرَّ ببلاد الأعاجم فصنع نيروزهم و مِهْرَجَانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك حشر معهم يوم القيامة
যে ব্যক্তি বিধর্মীদের দেশে গিয়ে তাদের নওরোজ ও মেলা পালন করেছে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে কাটিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের সাথে তার হাশর হবে। -সুনানুল কুবরা বাইহাকি, হাদিস নং : ১৮৮৬৪

ইবনে কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহি. বলেন,
فلا يجوز للمسلمين ممالأتُهم عليه، ولا مساعدتهم ، ولا الحضور معهم باتفاق أهل العلم الذين هم أهله.
আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে (যারা আলেম অভিধার উপযুক্ত) মুসলমানদের জন্য মুশরিকদের সাথে পরামর্শ করা এবং তাদের (কুফর-শিরকে) সাহায্য করা ও তাদের উৎসবগুলোতে উপস্থিত হওয়া নাজায়েয। -আহকামু আহলিয যিম্মাহ্‌, খ. ২ পৃ. ৩৪৬

যফর আহমদ থানভি রহি.-এর সময়ে জনৈক হিন্দু তাদের ধর্মীয় প্রথায় স্থানীয় মুসলিদেরকে দাওয়াত করলে, জনৈক মুসলিম এ বিষয়ে হযরতের নিকট ফতোয়া তলব করেন। তখন তিনি লিখেন,
مسلمانوں کو اس دعوت میں شریک ہونا جائز نہیں کیونکہ یہ دعوت ہندوؤں کی مذہبی دعوت ہے اور كفار كى مذهبى دعوتوں میں شرکت جائز نہیں
মুসলমানদের জন্য এই দাওয়াতে শরিক হওয়া জায়েয নেই। কেননা এটা হিন্দুদের ধর্মীয় দাওয়াত। আর কাফেরদের ধর্মীয় দাওয়াতে শরিক হওয়া জায়েয নেই। -ইমদাদুল আহকাম, খ. ৭ পৃ. ১৮১

সুতরাং হিন্দুদের পূজায় ঊপস্থিত হওয়া কোনোক্রমেই বৈধ নয়। অতএব সকল মুসলিমকে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.