সাজ-সজ্জার উদ্যেশ্যে পুরুষদের জন্য বিয়ের সময় হোক বা অন্য যেকোনো সময় হোক হাতে-পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা হারাম। জায়েয নেই। কারণ এটা এক ধরনের রঙ। আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
দলীল: ১
আবূ হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
طِيبُ الرِّجالِ ما ظهَرَ ريحُه وخَفِيَ لَونُه وطِيبُ النِّساءِ ما ظهَرَ لَونُه وخَفِيَ ريحُه
অর্থাৎ পুরুষের সুগন্ধি এমন হবে, যার সুগন্ধ প্রকাশ পায়, কিন্তু রঙ গোপন থাকে এবং নারীর সুগন্ধি এমন হবে, যার রঙ প্রকাশ পায়, কিন্তু সুগন্ধ গোপন থাকে।
সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৫৩০০ সুনান তিরমিযি: ২৭৮৭
দলীল: ২
অন্য একটি হাদিসে এসেছে,
أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا فَسَأَلَتْهَا عَنْ خِضَابِ الْحِنَّاءِ فَقَالَتْ لَا بَأْسَ بِهِ وَلَكِنْ أَكْرَهُهُ كَانَ حَبِيبِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْرَهُ رِيحَهُ
অর্থ: এক মহিলা মেহেদীর খেযাব লাগানো সম্পর্কে আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা ব্যবহারে কোনো দোষ নেই; তবে আমি তা অপছন্দ করি। কারণ আমার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটির গন্ধ অপছন্দ করতেন।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৪১৬৪ নাসাঈ: ৫০৯০ আহমাদ: ২৫৭৬০
দলীল: ৩
মেহেদীর সাজ মহিলাদের সাজ। হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أَوْمَتْ امْرَأَةٌ مِنْ وَرَاءِ سِتْرٍ بِيَدِهَا، كِتَابٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَبَضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ، فَقَالَ: مَا أَدْرِي أَيَدُ رَجُلٍ، أَمْ يَدُ امْرَأَةٍ؟ قَالَتْ: بَلِ امْرَأَةٌ، قَالَ: لَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِ يَعْنِي بِالْحِنَّاءِ
অর্থ: হযরত আয়েশা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা পর্দার আড়াল থেকে একটি কিতাব হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে বাড়িয়ে দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত না বাড়িয়ে বললেনঃ আমি বুঝতে পারছি না এটা কোনো পুরুষের হাত না কি নারীর হাত? সে বললো, বরং নারীর হাত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি মহিলা হলে অবশ্যই তোমার নখগুলো মেহেদীর রঙ দ্বারা রঞ্জিত করতে।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৪১৬৬
উপরোক্ত হাদিস দিয়ে বুঝা গেলো, মেহেদী ব্যবহার করা এটা মহিলাদের সাজ। আর মহিলাদের সাজে সজ্জিত হওয়া পুরুষের জন্য হারাম। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব পুরুষকে লা’নত করেছেন। যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৫৪৬৫
সুতরাং বুঝা গেলো, পুরুষের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা সুস্পষ্টভাবে হারাম।
চিকিৎসার জন্য হালাল:
তবে যদি কোন অসুস্থ্যতার চিকিৎসার জন্য হয়ে থাকে, তাহলে পুরুষের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা জায়েজ আছে। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে,
আলী ইবনু উবাইদুল্লাহ রহ. হতে তার দাদীর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদিমা (সেবিকা) ছিলেন। তিনি বলেন,
مَا كَانَ يَكُونُ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُرْحَةٌ وَلاَ نَكْبَةٌ إِلاَّ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَضَعَ عَلَيْهَا الْحِنَّاءَ
অর্থ: যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহে কোন তলোয়ার বা দা-এর আঘাতে ক্ষত হতো, তিনি তাতে মেহেদী লাগানোর জন্য আমাকে নির্দেশ দিতেন।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ২০৫৪
এজন্য ইমাম নববী রহ. বলেন,
وهو حرام على الرجال الا لحاجة التداوى ونحوه
অর্থাৎ (মেহেদী) পুরুষের জন্য ব্যবহার করা হারাম। তবে অসুস্থতা ও এ ধরণের কোনো কারণে বৈধ।
সূত্র: আল মাজমুউ শরহুল মুহায্যাব খ. ১ পৃ. ২৯৪
চুল ও দাঁড়িতে ব্যবহার করা যাবে
তবে পুরুষেরা চুল ও দাঁড়িতে মেহেদী ব্যবহার করতে পারবে। কারণ হাদিস শরীফে হযরত আবূ যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
إِنَّ أَحْسَنَ مَا غَيَّرْتُمْ بِهِ الشَّيْبَ الْحِنَّاءُ وَالْكَتَمُ
অর্থ: যেসব জিনিস দিয়ে তোমরা বার্ধক্যকে পরিবর্তন করতে পারো তার মধ্যে মেহেদি ও কাতাম হলো সর্বোত্তম।
সূত্র: সুনানে নাসাঈ হাদিস: ৫০৭৮ আবু দাউদ: ৪২০৫ তিরমিযি: ১৭৫৩ ইবনে মাজা: ৩৬২২ আহমাদ: ২১৩৩৭