মওদূদী সাহেবের মতে কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী আইন শিক্ষার জন্যে একদিকে যেমন তাফসীর ও হাদীসের পুরাতন ভান্ডারের প্রয়োজন নাই অপর দিকে এর জন্যে আলেম হওয়ার কোন জরুরী নয়, বরং গভীর দৃষ্টিতে অধ্যয়ন করলে এসবের জন্যে একজন প্রফেসরও যথেষ্ট। মিষ্টার মওদূদী সাহেব তানকীহাত নামক বইয়ে লিখেছেন-
قرآن و سنت رسول کی تعلیم سب پر مقدم ہے مگر تفسیر و حدیث کے پرانے ذخیروں سے نہیں ان کے پڑہا نے والے ایسے ہونا چاہئیی جو قرآن حدیث کے مغز کو پا چکے ہیی اسلامی قانون کی تعلیم بھی ضروری ہے مگر یہاں بھی پرانی کتابیں کام نہ دینگی
কুরাআন ও হাদিসের শিক্ষা সবকিছুর উপর প্রাধান্য পাবে কিন্তুু তাফসীর ও হাদিসের পুরাতন ভান্ডার দিয়ে নয়। এর শিক্ষক এমন হওয়া উচিত যিনি কুরাআন, হাদিসের সারাংশ বা মগজ লাভ করেছেন অর্থাৎ, তার মর্ম যথাযথ হ্নদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছেন। ইসলামী আইনের শিক্ষাও আবশ্যক, তবে এক্ষেত্রেও পূর্বের কিতাব সমূহ কাজে আসবে না। -তানকীহাত : পৃ. ১৭৫
অন্যত্র লিখেছেন,
قرآن کے لئے کسی تفسیر کی حاجت نہیں ایک اعلی درجہ کافی ہے جس نے قرآن کا بنظر غئر مطالعہ کیا ہو اور جو طرز جدید پر قرآن پڑہانے اور سمجہانے کی اہلیت رکہتا ہو وہ اپنے لکچروں سے انڑ میڑیٹ میی طلبہ کے اندر قرآن فہمی کی ضروری استعداد پیدا کرےگا
কুরাআনের জন্য কোন তাফসীরের প্রয়োজন নেই। একজন প্রথম শ্রেনীর প্রফেসরই যথেষ্ট। যিনি কুরাআনের অধ্যায়ন গভীর দৃষ্টিতে করেছেন এবং আধুনিক পদ্ধতিতে কুরাআন পড়ানো এবং শিখানোর যোগ্যতা রাখেন। তিনি তার লেকচারের দ্বারা ইন্টারমিডিয়েট (H.S.C) পড়ুয়া ছাএদের মধ্যে কুরাআন বোঝার যোগ্যতা সৃষ্টি করবেন। -তানকীহাত : পৃ. ২৯১
অর্থাৎ কুরআন বুঝার জন্য তাফসীর বা হাদিস প্রয়োজন নেই এবং আলেম হওয়াও জরুরি নয়, বরং একজন জেনারেল শিক্ষিত মানুষও চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমেই কুরআন বুঝতে সক্ষম। আর তিনি তার তাফসীরের ভূমিকায় এ প্রসঙ্গে স্বীয় স্বীকারোক্তি এভাবে প্রদান করেছেন যে,
اس میی جس چیز کی کوشش میی نے کی ہے وہ یہ ہے کہ قرآن کو پڑہ کر جو مفہوم میری سمجھ میی اتا ہے اور جو اثر میرے قلب پڑتا ہے حتی الامکان جو کاتو اپنی زبان میی منتقل کردو
এতে আমি যে বিষয়ে চেষ্টা করেছি তা হলো, কুরআন পড়ে যে ভাবার্থ আমার বুঝে আসে এবং এর যে প্রভাব আমার অন্তরে পড়ে, তা যথাসাধ্য নিজের ভাষায় হুবুহু তুলে ধরতে চেয়েছি।- তরজমানুল কুরাআন, মুহাররম ১৩৬১ হিজরী
ইসলাম কী বলে?
এটি সর্বজনবিদিত মত যে, কুরআনের প্রথম তাফসীরকারক হলেন স্বয়ং রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তাঁর তাফসীরের নামই হলো হাদীস। এই তাফসীর করার জন্য খোদ আল্লাহ তাআলাই নবিজি সা. কে নির্দেশ প্রদাণ করেন। মহান রব বলেন,
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
(হে ) আমি তোমার প্রতিও এই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের সামনে সেই সব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা করে। -সুরা নাহল : ৪৪
পাশাপাশি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীসের আলোকে ও কুরআন নাযিলের প্রত্যক্ষদর্শী হিশাবে দ্বিতীয় তাফসীরকারক হলেন সাহাবায়ে কেরাম রা.। যে ব্যাখ্যার নাম হলো আছারে সাহাবা। হাদীস ও আছারে সাহাবার আলোকে কুরআনের তাফসীর ও ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে গেছেন, এ কাজের জন্যে প্রয়োজনীয সকল জ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শী আঈম্মায়ে কিরামগণ। যা অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরস্পরায় আজও উম্মতের নিকট হুবহু সংরক্ষিত। এই তাফসীরগুলো যুগে যুগে ইসলামী পন্ডিত ও যোগ্য সকল উলামায়ে কেরাম গ্রহণ করেছেন এবং কুরআনে কারীম বুঝতে সেই পুরোনো তাফসীরের দিকেই নজর দিয়েছেন। যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ার পরও কেউ নিজের মনগড়া তাফসীর করার ধৃষ্টতা দেখান নি, সাহসও করেন নি, নিজের বুঝ মতো বুঝতে চেষ্টাও করেন নি। কারণ যদি সে গুলো হতে বিমূখ হয়ে কোনো তাফসীর আবিষ্কার করা হয়, তাহলে সেটা হবে মনগড়া। যার পরিণতি নিশ্চিত গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। যার বাস্তব নমুনা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ও স্যার সৈয়দ-আহমাদ খানের তাফসীরের কিতাবগুলো।
এমন গোমরাহী হতে উম্মতকে বাঁচানোর জন্যই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত স্পষ্ট ও কঠোর ভাষার বলে গেছেন,
من قال في القران برأيه فليتبوأ مقعده من النار
যে ব্যক্তি কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করবে সে যেন জিন ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। -জামে তিরমিযী : হাদিস নং : ২৯৫১
হযরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সা. বলেন,
من قال في القران برأيه فاصاب فقد اخطأ
যে ব্যক্তি কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করবে সে (ঘটনাক্রমে) সঠিক ব্যাখ্যা করলেও তা ভুল গণ্য হবে। -জামে তিরমিযী : হাদিস নং : ২৯৫২
মোটকথা হাদীস ও আছারে সাহাবা-এর সেই পুরোনো ভাণ্ডার বাদ দিয়ে মনগড়া তাফসীর গোমরাহীর মোক্ষম হাতিয়ার; যার কারণে এর পরিনতি জাহান্নাম এবং এমন তাফসীর সবাংশেই ভুল বলে গণ্য। সুতরাং এক্ষেত্রে মওদুদী সাহেবের উপরিউক্ত দুইটি বক্তব্যই সরাসরি হাদীস পরিপন্থী ও কুরআনের ব্যাপারে আত্মঘাতি। যার ফলাফল আহলে কুরআনদের মতো হাদিস অস্বীকার।
মূল টার্গেট কী?
মূলত ইসলাম বিদ্বেষীরা কুরআনকে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে দিতে এমন কোনো প্রচেষ্টা নেই যা করে নি। কিন্তু কুরআন হিফাযতের দায়িত্ব মহান রবের কাছে। আল্লাহর চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। আর সে পথটা হলো, কুরআনের ব্যাখ্যা বিনষ্ট করা। আর এই ব্যাখ্যা বিকৃত করতে এই পথটিই তারা বেঁছে নেয়। অর্থাৎ কুরআন থাকবে, কিন্তু পূর্বের ব্যাখ্যা নষ্ট করতে পারলে ও তার বাস্তব অর্থ বিকৃত করতে পারলে কুরআন থেকেও না থাকার অর্থ বহন করবে। এ কথাটা মওদুদী সাহেব নিজেও অকপটে এটা স্বীকার করেন। এক স্থানে তিনি লিখেনছেন,
یوں تو قرآن مجید کی آیات میی معنوی تحریف کر نے کی ہر زمانہ میی کو ششیں کی گئ ہیں اور ہر دور میں نظر لو گوں کایہی شیوہ رہاہے کہ کتاب الہی کے واضح ارشادات کو توڑ مڑور کر اپنے نفس کی خواہشات یا اپنے دوستوں کے رجحانات و مطالبات کے مطابق ڈہا لتے ر ہے ہیں
এটাতো সত্য যে, কুরাআন মাজীদের অন্তর্নিহিত অর্থ রদবদল করার অপচেষ্টা সর্বযুগেই চলে আসছে এবং প্রত্যেক যুগেই বক্রদৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের এই স্বভাব ছিল যে, তারা কালামুল্লাহ-এর স্পষ্ট আহ্বানকে ম্লান ও মিটিয়ে নিজেদের ইচ্ছা এবং দলীয় লোকদের উক্তি ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী পেশ করার চেষ্টা করেছে। -(তাফহীমাত : খ. ১ পৃ. ২০৬
তাহলে বুঝা গেলো, খোদ মওদুদী সাহেব নিজেও জানেন যে, ইসলাম বিদ্বেষীরা কুরআন বিকৃত করতে নিজের মনগড়া অর্থ করে থাকে। অর্থাৎ অতীতের সকল তাফসীর ও হাদিসের আলোকে কুরআন শরীফের অর্থ না করে বরং নিজের মন মতো অর্থ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করাটাই ইসলাম বিদ্বেষীদের কাজ। তাহলে সেই একই কাজটা মওদুদী সাহেব করে কী নিজেও সে পথে হাটলেন না?