Home > হিজবুত তাওহীদ > নামাজ ইবাদত নয়, জিহাদের ট্রেণিং।

নামাজ ইবাদত নয়, জিহাদের ট্রেণিং।

 

নামাজ কী যুদ্ধের ট্রেনিং?

দ্বীন-ইসলাম পরিপূর্ণ। দ্বীনের ভেতর নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করা দ্বীনের বিকৃতি করার শামিল। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ

অর্থাৎ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে (অর্থাৎ তা গ্রহণযোগ্য হবে না)।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ২৬৯৭

দ্বীনের প্রত্যেকটি বিধান রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর সাহাবায়ে কেরাম রা. কে হাতে, কলমে, প্যাক্টিকালি সব শিখিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, রাসূলুল্লহ সা. হতে যুগ পরম্পরায় উম্মতে মুসলিমার আদায়কৃত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজকে ভুল আখ্যা দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ বলে ঘোষণা দিয়ে হিযবুত তাওহীদ নতুন এক বিদআতী সালাতের সূচনা করেছে। যা ইসলামের নামে এক চরম বিকৃতি। চলুন আগে তাদের ভ্রান্ত বক্তব্য দেখে নেওয়া যাক।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

হেযবুত তাওহীদের দাবি হলো, সালাত হলো সামরিক প্রশিক্ষণ, তাই সালাতকে তারা আর্মি ট্রেনিং এর মত আদায় করে।’ তারা লিখেছেন,

‘ঐ জেহাদ ও কেতাল করে জয়ী হওয়ার মত চরিত্র গঠণের জন্য, প্রশিক্ষণেরর জন্য ফরদ করে দিলেন সালাহ্।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ৫৫

‘সালাতের মুখ্য ও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুশৃঙ্খল,নেতার আদেশ পালনে আগুনে ঝাঁপ দিতে তৈরি দুর্ধর্ষ,অপারেজেয় যোদ্ধার চরিত্র সৃষ্টি।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ২৯

‘সালাহ চরিত্র গঠণের মুখ্যত দুর্ধর্ষ,অপরাজেয় যোদ্ধার চরিত্র গঠণের প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া; এই আকীদা বদলে একে অন্যান্য ধর্মের মতো এবাদতের,উপাসনার শুধু আত্মিক উন্নতির প্রক্রিয়া বলে মনে করার ফলে আজ সেই যোদ্ধার চরিত্র গঠণ তো হয়ই না এমন কি সালাতের বাহ্যিক চেহারা পর্যন্ত বদলে গেছে।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ৩২/৪২/৪৩

‘ইসলামের প্রকৃত সালাহর নিয়ম হচ্ছে, এমামের তকবিরের জন্য সতর্ক, তৎপর হয়ে থাকা ও তকবিরের সঙ্গে সঙ্গে জামাতের সকলের সঙ্গে একত্রিতভাবে,একসাথে রুকুতে যাওয়া, এ’তেদাল করা,সাজদায় যাওয়া, সালাম ফেরানো ইত্যাদি করা; ঠিক যেমনভাবে প্যারেড,কুচকাওয়াজের সময় সামরিক বাহিনীর সৈনিকেরা সার্জেন্ট মেজরের(Sergeant-major) আদেশের সঙ্গে সঙ্গে সকলে একত্রিত ভাবে মার্চ করে,ডাইনে বামে ঘুরে দাঁড়ায়, বসে,দৌঁড়ায়।
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ২৬

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, সামরিক প্রশিক্ষণের মত ইমামের সাথে সাথেই মুক্তাদিও আদায় করবে, দেরি করতে পারবে না।

ইসলাম কী বলে?

হাদীসে বর্ণিত পদ্ধতি হলো, ইমামের সাথে সাথে নয়, বরং ইমামের পরে মুক্তাদী রুকু-সিজদা করবে। হাদিস শরীফে লম্বা এক বর্ণনা রয়েছে,

إِذَا صَلَّيْتُمْ فَأَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَالَ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِينَ ‏.‏ يُجِبْكُمُ اللَّهُ فَإِذَا كَبَّرَ وَرَكَعَ فَكَبِّرُوا وَارْكَعُوا فَإِنَّ الإِمَامَ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَتِلْكَ بِتِلْكَ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ‏.‏ فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ‏.‏ يَسْمَعُ اللَّهُ لَكُمْ فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ‏.‏ وَإِذَا كَبَّرَ وَسَجَدَ فَكَبِّرُوا وَاسْجُدُوا فَإِنَّ الإِمَامَ يَسْجُدُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَتِلْكَ بِتِلْكَ

অর্থাৎ তোমরা যখন সালাত আদায় করবে, তোমাদের লাইনগুলো ঠিক করে নিবে। অতঃপর তোমাদের কেউ তোমাদের ইমামতি করবে। সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে। সে যখন “গাইরিল মাগযুবি ’আলাইহিম ওয়ালায যোল্লীন” বলবে তোমরা তখন আমীন বলবে। আল্লাহ তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। সে যখন তাকবীর বলে রুকু’তে যাবে, তোমরাও তাকবীর বলে রুকু’তে যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের আগে রুকু’তে যাবে এবং তোমাদের আগে রুকু থেকে উঠবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ এটা ওটার বিনিময়ে, তথা ইমাম যেমন রুকু সাজদার আগে যাবে, তেমনি আগে উঠবে। সে যখন “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবে, তোমরা তখন “আল্লাহুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ” বলবে, আল্লাহ তোমাদের এ কথা শুনবেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায় বলছেনঃ “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ” (আল্লাহ তার প্রশংসাকারীর প্রশংসা শুনেন)। সে যখন তাকবীর বলবে এবং সাজদায় যাবে, তোমরাও তার পরপর তাকবীর বলে সাজদায় যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের আগে সাজদায় যাবে এবং তোমাদের আগে সিজদা থেকে উঠবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের তাকবীর ও সিজদা ইমামের পরে হবে।
সূত্র: সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৪০৪

উক্ত হাদিসে নবীজি সা. সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, তাকবীর, রুকু, সিজদাসহ সব কিছু আগে ইমাম করবে পরে মুক্তাদি করবে। অথচ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, সামরিক প্রশিক্ষণের মত ইমামের সাথে সাথেই মুক্তাদিও করবে। এটা কী ১৪০০ বছরের চলে আসা নামাজের বিকৃতি নয়? সুতরাং প্রমাণ হলো, নামাজ কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ নয়।

নামাজ কোন ইবাদত নয়

প্রিয় পাঠক, ইসলামে সালাত বা নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও ফরজ বিধান। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এ ফরজ বিধানটিকে ইবাদত হিসাবেই মানতে চান না।

হেযবুত তাওহীদের দাবি:

তারা তাদের বইয়ে নামাজ সম্পর্কে বেশ কিছু উদ্ভট আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো,

‘নামাজ রোজা হজ্ব পূজা প্রার্থনা তীর্থযাত্রা মানুষের মূল এবাদত নয়। মানবজাতী যেন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে এ লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত।
সূত্র: জঙ্গিবাদ সংকট পৃ:৫৬

তারা আরও লিখেছেন,

‘সালাতের মুখ্য ও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুশৃঙ্খল,নেতার আদেশ পালনে আগুনে ঝাঁপ দিতে তৈরি দুর্ধর্ষ,অপারেজেয় যোদ্ধার চরিত্র সৃষ্টি।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ২৯

‘ঐ জেহাদ ও কেতাল করে জয়ী হওয়ার মত চরিত্র গঠণের জন্য, প্রশিক্ষণেরর জন্য ফরদ করে দিলেন সালাহ্।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ৫৫

‘সালাহ চরিত্র গঠণের মুখ্যত দুর্ধর্ষ,অপরাজেয় যোদ্ধার চরিত্র গঠণের প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া; এই আকীদা বদলে একে অন্যান্য ধর্মের মতো এবাদতের,উপাসনার শুধু আত্মিক উন্নতির প্রক্রিয়া বলে মনে করার ফলে আজ সেই যোদ্ধার চরিত্র গঠণ তো হয়ই না এমন কি সালাতের বাহ্যিক চেহারা পর্যন্ত বদলে গেছে।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ৩২/৪২/৪৩

উক্ত বক্তব্যে তারা তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। তারা সুস্পষ্টভাবে দাবি করলো, নামাজ কোনো ইবাদত নয়, বরং নামাজ হলো, যুদ্ধের ট্রেনিং।

ইসলাম কি বলে?

নামাজ একটি স্বতন্ত্র ইবাদত, কোনো ইবাদতের ট্রেণিং নয়। আল্লাহ ও রাসুল সা. কোথাও বলেননি যে, নামাজ জিহাদের ট্রেণিং, বরং নামাজ যে একটি ইবাদত এ কথা খোদ রাসুৃলুল্লাহ সা. এর বক্তব্য থেকেই পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা রা. বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সা. আমার ঘরে এসে আমার সঙ্গে শয়ন করলেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে বললেন,

يا عائشةُ ذَرِيني أتعبَّدِ اللَّيلةَ لربِّي قُلْتُ واللهِ إنِّي لَأُحِبُّ قُرْبَك وأُحِبُّ ما سرَّك قالت فقام فتطهَّر ثمَّ قام يُصَلِّي

অর্থাৎ হে আয়েশা! আমি আমার রবের ইবাদত করতে চাই। আমাকে যেতে দাও।’ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি আপনার একান্ত কাছে থাকতে চাই। আবার এও চাই যে, আপনি মহান আল্লাহর ইবাদত করবেন। তিনি বিছানা থেকে উঠে পবিত্র হয়ে সালাতে দাঁড়ালেন।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান,হাদিস: ৬২০

প্রিয় পাঠক, উক্ত হাদিসে রাসুৃলুল্লাহ সা. নামাজকে ইবাদত বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং যিনি ইসলামের নবী তিনি নামাজকে ইবাদত বলছেন, অথচ হেযবুত তওহীদ সে নামাজকে ইবাদত বলতে নারাজ। তাহলে কি হেযবুত তওহীদ ইসলামকে নবীজির সা. চেয়েও বেশি বুঝেন? সুতরাং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. যে নামাজকে ইবাদত হিসাবে আখ্যায়িত করলেন, সেখানে নামাজকে ইবাদাত থেকে পৃথক করার অধিকার হিযবুত তাওহীদেকে কে দিয়েছে? এটা কি ইসলামের নামে ভ্রষ্টতা নয়?

উপরন্তু নামাজকে জিহাদের ট্রেনিং বলা পবিত্র কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যার শামিল। নিন্মোক্ত আয়াত দু’টি দেখুন-

এক.
আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ

অর্থ: তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান কর।
সূরা বাকারা, আয়াত: ১১০

দুই.
মহান আল্লাহ আরও বলেন,

اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا

অর্থ: নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।
সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩

উক্ত আয়াত দু’টিসহ অসংখ্য আয়াতে মহান রব বলেছেন, নামাজ কায়েম করতে বা নামাজ ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো আয়াত বা হাদিসে নামাজকে জিহাদের ট্রেণিং বলা হয়নি। সুতরাং কুরআনের শর্তহীন আয়াতকে শর্তযুক্ত করা অপব্যাখ্যার শামিল। অতএব কোনো আয়াতের মনগড়া উক্তি করা এক জঘন্যতম অন্যায়। যার কারণে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,

مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِرَأْيِهِ فَأَصَابَ فَقَدْ أَخْطَأَ

অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের মত অনুযায়ী কুরআন প্রসঙ্গে কথা বলে, সে সঠিক বললেও অপরাধ করলো (এবং সঠিক ব্যাখ্যা করলো-সেও ভুল করলো)।
সূত্র: জামে তিরমিযি, হাদিস: ২৯৫২

অপর একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

অর্থাৎ যে ব্যক্তি সঠিক ইলম ব্যতীত কুরআন প্রসঙ্গে কোন কথা বলে, সে যেন জাহান্নামকে নিজের জন্য বাসস্থান বানিয়ে নিল।
সূত্র: জামে তিরমিযি, হাদিস: ২৯৫০

সুতরাং চলুন হেযবুত তওহীদের মনগড়া অপব্যাখ্যা থেকে সবাই সতর্ক হয়ে নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা করি।

জিহাদ ছাড়া নামাজের দাম নেই?

হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, নামাজ যেহেতু জিহাদের ট্রেনিং। সুতরাং জিহাদ ছাড়া নামাজের কোনো মূল্য নেই।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

তারা লিখেছেন,

‘কাজেই জেহাদ,প্রচেষ্টা,সংগ্রাম যদি বাদ দেয়া হয় তবে সালাহ অর্থহীন,অপ্রয়োজনীয়; যেমন যেকোন সামরিক বাহিনী যদি যুদ্ধ করা ছেড়ে দেয় তবে প্যারেড,কুচকাওয়াজ করা যেমন অর্থহীন, যেমন ছাদ তৈরি করা না হলে থাম,খুঁটি অর্থহীন।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ৩০/৬৬

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, জিহাদ ছাড়া নামাজের কোনো মূল্য নেই।

ইসলাম কি বলে?

তাদের এ জঘণ্য অপব্যাখ্যার পেছনে মূল কারণ হলো, তাদের দাবি হলো খিলাফত প্রতিষ্ঠাই হলো ইসলাম ও মানবজাতির মূল কাজ। আর সকল বিধিবিধান হলো এ কাজের সহায়ক। সে হিসাবে নামাজও খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তথা জিহাদের একটি ট্রেণিং মাত্র। অথচ খিলাফত প্রতিষ্ঠার মূল কারণ কি তা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ

অর্থ: তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত।
সূরা হজ্ব, আয়াত: ৪১

প্রিয় পাঠক, এখানে দেখুন, আল্লাহ তা’আলা জিহাদ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর খলীফাদের নামাজ,যাকাত ইত্যাদী প্রতিষ্ঠার কথা বললেন, তাহলে নামাজ কত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই নামাজকে বলা হচ্ছে জিহাদের ট্রেণিং! এটা ছেলেকে বাপ মনে করার মত নয় কি? কতবড় হাস্যকর কথা!

সুতরাং ‘জিহাদ ছেড়ে দিলে নামাজের কোনো মূল্য নেই’ এগুলো নিতান্তই ধর্মবিরোধী বক্তব্য। উপরন্তু নামাজ হলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। রাসূলুল্লাহ সা বলেছেন,

بُنِيَ الإِسْلامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ  وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَان

অর্থাৎ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল,নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ আদায় করা এবং রমজান মাসে রোজা পালন করা।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদিস: ৮

এ হাদিসে ইসলামের স্তম্ভ করা হয়েছে ৫ টি। এর মধ্যে কিন্তু জিহাদ নেই। অবশ্যই ইসলামে জিহাদও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কিন্তু নামাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ জিহাদ ইসলামের স্তম্ভ নয়। সুতরাং যে নামাজ ইসলামের স্তম্ভ, সেটাকে নন স্তম্ভ জিহাদের ট্রেণিং বলা কতবড় আহাম্মকী!

নামাজ আত্মশুদ্ধির জন্য নয়?

পবিত্র কুরআনেই উল্লেখ্য রয়েছে যযে, ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ বিধানের মূল টার্গেট হলো, আল্লাহকে স্বরণ করা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা। আর আত্মশুদ্ধির মূল টার্গেটও কিন্তু এটাই। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবি আবার ভিন্ন কথা।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

তারা লিখেছে,

‘আকিদার বিকৃতির কারণে সালাহ-কে শুধু একটি এবাদত,একটি আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া হিসাবে নেয়া যে কতখানি আহম্মকী।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ-২২/২১/৫৬/৬২

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, নামাজ আত্মশুদ্ধির জন্য মনে করা বোকামী।

ইসলাম কি বলে?

অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, নামাজ আত্মা পবিত্র রাখে। মহান রব বলেন,

وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ

অর্থ: এবং আপনি নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা করো।
সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫

উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নামাজ মানুষের গুনাহ থেকে পবিত্র রাখে। আর গুনাহ থেকে পবিত্র থাকাই তো আত্মশুদ্ধি। তাহলে নামাজকে যদি আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া বলা আহাম্মকী হয়, তাহলে আল্লাহ তা’আলাও কি সে সংজ্ঞায় পড়ে যাবেন না? নাউযুবিল্লাহ।

নামাজ কী দ্রুত পড়তে হবে?

আল্লাহকে স্বরণ করতেই নামাজ আদায় করতে হয়। যা পবিত্র কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু নামাজে খুশুখুজু বা ধ্যান করার বিপক্ষে পরিস্কার অবস্থান নিয়েছে হেযবুত তওহীদ নামক এ কুফরী দল।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

‘দ্রুত গতিতে রুকুতে যাবে,সিজদায় যাবে,সিজদা থেকে উঠে বসবে,সেজদা শেষ করে উঠে দাঁড়াবে।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৫-২৬

‘যেহেতু মূলত সালাহ সামরিক প্রশিক্ষণ সেহেতু এর চলন (Muvenent) দ্রুত হতে বাধ্য।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ-২৫

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো,
১. রুকু, সিজদায় দ্রুত গতিতে যেতে হবে এবং উঠা-নামাও করতে হবে দ্রুত গতিতে।
২. আল্লাহর ধ্যানসহ নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়, বরং

ইসলাম কী বলে?
নবীজি সা. যে নামাজ শিখিয়েছেন, সেদিকে তাকালে বুঝা যায় ধীরস্থিরভাবে,শান্তহয়ে রুকু-সিজদায় যেতে হবে। মহান রব বলেন,

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ

অর্থ: মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র।
সূরা মুমিনুন, আয়াত: ১-২

উক্ত আয়াতের خاشِعُونَ এর তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

خائِفُونَ ساكِنُونَ

অর্থাৎ যারা ভীতসন্ত্রস্ত ও স্থীর।
সূত্র: তাফসীরে রুহুল মা’আনী, খ. ৭ পৃ. ২০৬

খুশুখুজু’র সংগা করতে গিয়ে ইমাম মাহমুদ বাগদাদী আলুসী রহি. বলেন,

والخُشُوعُ التَّذَلُّلُ مَعَ خَوْفٍ وسُكُونٍ لِلْجَوارِحِ

অর্থাৎ খুশু বলা হয়, আল্লাহর ভয়ে বিনয়ের সাথে শারীরিক ধীরস্থীরতার সাথে (নামাজ আদায়) করা।
সূত্র: তাফসীরে রুহুল মা’আনী, খ. ৭ পৃ. ২০৬

উক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেলো, নামাজ হতে হবে ধীরস্থীরতার সাথে। পাশাপাশি নিন্মোক্ত হাদিসটি দেখুন। নবীজি সা. বলেছেন,

إذا قُمْتَ إلى الصَّلاةِ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ ما تَيَسَّرَ معكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حتّى تَطْمَئِنَّ راكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حتّى تَعْدِلَ قائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حتّى تَطْمَئِنَّ ساجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حتّى تَطْمَئِنَّ جالِسًا، وافْعَلْ ذلكَ في صَلاتِكَ كُلِّها..

অর্থাৎ তুমি সলাতে দাঁড়ানোর সময় সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর তোমার সুবিধানুযায়ী কুরআনের আয়াত পাঠ করবে, অতঃপর শান্ত ও স্থিরতার সাথে রুকূ‘ করবে, অতঃপর রুকূ‘ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে সাজদাহ্ করবে। এরপর প্রশান্তির সাথে উঠে বসবে। এভাবেই তোমার পুরো সলাত আদায় করবে।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৭৫৭

উক্ত হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, নামাজ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের নামাজ রাসুলুল্লাহ সা. এর শিখানো পদ্ধতির বিপরীত। মূলত পন্নী সাহেব উদ্ভট এ কথা লিখেছেন মূলত তার নিজস্ব মতবাদ- ‘সালাত হচ্ছে সামরিক প্রশিক্ষণ’ -এর গ্রহণযোগ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য।প্রশ্ন জাগে-যেখানে পৃথিবীর কোথাও এমন আজব রীতিতে সালাত পড়া হয় না,ইসলামের ইতিহাসে যার নজির নেই,সেখানে হুট করে তিনি কোথা হতে সঠিক পদ্ধতির নব আবিষ্কৃত এই সালাত পেলেন? তার উপর ওহী নাজিল হয়নি তো?(নাউযুবিল্লাহ)।

যেখানে হাদীসের বর্ণনা হচ্ছে, ‘সকল উম্মত একত্রে ভ্রান্তিতে নিপতিত হবে না’। সেখানে গোটা উম্মতের সালাতকে বিকৃত বলা মানে হাদীসের বক্তব্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের নামান্তর নয় কী?

আল্লাহকে ধ্যাণ করার জন্যই নামাজ।

নামাজ হলো মূলত আল্লাহকে স্বরণ করার জন্যই। যার অসংখ্য প্রমাণ কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এ বিষয়টাতে চরম পর্যায়ের বিরোধী।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী লিখেছেন,

‘সালাতে আল্লাহকে ধ্যান করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে আল্লাহ সালাতের যে প্রক্রিয়া, নিয়ম,কানুন এমন করে দিলেন কেন যাতে ধ্যান করা অসম্ভব। খুশু-খুজু অর্থাৎ ধ্যান করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য হলে সালাতের নিয়ম হতো পাহাড়-পর্বতের গুহায়,কিম্বা খানকা বা হুজরায় অথবা অন্ততপক্ষে কোন নির্জন স্থানে ধীর-স্থীরভাবে একাকি বসে চোখ বন্ধ করে মন নিবিষ্ট করে আল্লাহর ধ্যান করা। সালাহ কি তাই? অবশ্যই নয়।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ পৃ. ৩২

এক.
মহান আল্লাহ হযরত মুসা আ. কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হে মুসা,

إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي

অর্থ: আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম করো।
সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ১৪

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নামাজ আদায় করতে বলেছেন, তাঁকে স্বরণ বা ধ্যান করতে।

দুই.
উপরন্তু হাদিসে জিবরাঈলে এসেছে, হযরত জিবরাঈল আ. নবীজিকে ইহসান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর নবীজি সা. বললেন,

أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ

অর্থাৎ আপনি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস: ৫০ মুসলিম: ৯

উক্ত হাদিসে সুস্পষ্টভাবে সকল ইবাদতে আল্লাহকে ধ্যান করার কথা বলেছেন খোদ রাসুলুল্লাহ সা.।

তিন.
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَلاَ يَبْصُقْ أَمَامَهُ فَإِنَّمَا يُنَاجِي اللهَ مَا دَامَ فِي مُصَلاَّهُ وَلاَ عَنْ يَمِينِهِ فَإِنَّ عَنْ يَمِينِهِ مَلَكًا وَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ فَيَدْفِنُهَا

অর্থাৎ তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। কেননা সে যতক্ষণ তার মুসল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। তার ডান দিকে থাকেন ফেরেশতা। সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা দাবিয়ে দেয়।
সূত্র; সহীহ বুখারী, হাদীস: ৪১৬

উক্ত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, নামাজ হলো আল্লাহর সাথে গোপর কথোপকথন। এটাও তো ধ্যান। সুতরাং খুশুখুজুর সাথে নামাজ আদায় করার অর্থ হলো, আল্লাহর স্বরণ করা, ভয় করা, বিনয় ও নম্রতার সাথে, প্রতিটি শব্দের অর্থের দিকে খেয়াল রাখা, এদিক সেদিক না তাকানো, ফরজ-ওয়াজীব-সুন্নাহ’র দিকে খেয়াল করে নামাজ আদায় করা।

সুতরাং নামাজে আল্লাহর ধ্যান করা যাবে না বলে হেযবুত তওহীদ যে দাবি করেছেন, তা নিতান্তই কুরআন-হাদিস বিরোধী। তারা আরও বলেছেন,

‘সালাতের প্রায় ১১৪ টি নিয়ম-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রেখে,সেগুলো যথাযথভাবে পালন করে ঐ খুশু-খুজুর সাথে অর্থাৎ ধ্যানের সাথে সালাহ সম্পাদন করা যে অসম্ভব তা সাধারণ জ্ঞানেই (Common sense) বোঝা যায়।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ-৩৩

জবাব:

প্রকৃত মুসলিমরা ১৪০০ বছর যাবৎ এ অসম্ভব কাজটি সহজেই করে আসছেন। আলহামদুলিল্লাহ। মুসলিমদের জন্য এটা মোটেই কষ্টকর বিষয় নয়। এজন্য আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ

অর্থ: ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।
সূরা বাকারা, আয়াত: ৪৫

সুতরাং যাঁদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, শয়তানি রয়েছে, ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে তাদের পক্ষে আসলেই অসম্ভব। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর স্বরণ ও ভয় রেখে ধীরস্থীরভাবে নামাজ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

নামাজ জান্নাতের চাবি নয়:

নামাজ হলো, জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যম।  যে কারণে হাদিস শরীফে নামাজকেও জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ বলছে উল্টো কথা।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

‘নামাজ জান্নাতের চাবি নয়।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৫৭

ইসলাম কি বলে?

হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلاَةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الْوُضُوءُ

অর্থাৎ জান্নাতের চাবি হচ্ছে নামায, আর নামাযের চাবি হচ্ছে ওযু।
সূত্র: জামে তিরমিযি, হাদিস: ৪ মুসনাদে আহমাদ: ১৪৬৬২

হাদিসটির মান:

এক.
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহি. বলেন,

قال ابن حجر بسند حسن

অর্থাৎ ইবনে হাজার আসকালানী রহি. বলেন, হাদিসটির সনদ হাসান।
সূত্র: মিরকাত খ. ১ পৃ. ৩৫৩

দুই.
আল্লামা জালালুদ্দীন সুূয়ূতী রহি. হাদিসটির সনদ ‘হাসান’ বলেছেন।
সূত্র: জামে সগীর হাদিস নং- ৮১৭৩

তিন.
আল্লামা জারুল্লাহ সাদী রহি. সনদটিকে হাসান বলেছেন।
সূত্র: আন নাওয়াফেহুল আত্বরাহ, হাদিস নং- ৩৩৫

সুতরাং প্রমাণ হলো, হাদিসটি জাল তো দূরের কথা যয়ীফও নয়, বরং হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত। উপরন্তু যদি হাদিসটি যয়ীফও হয়, তবুও কোনো অসুবিধা নেই। কারণ যয়ীফ মানে দূর্বল, জাল নয়। সুতরাং এ হাদিসটি অস্বীকার করে হেযবুত তওহীদ নামাজের প্রতি একটি ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।

দ্বিতীয় হাদিস.
উপরন্তু হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ باب الصَّلاَةِ

অর্থাৎ নামাজীদেরকে জান্নাতের নামাজের দরজা দিয়ে প্রবেশের আহবান জানানো হবে।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৩৬৬৬

সহিহ বুখারীর এ হাদিস থেকে জানতে পারলাম, তালাবদ্ধ জান্নাতের নামাজের দরজার দিকে নামাজীদেরকে ডাকা হবে। এর অর্থ কী? নামাজ যদি জান্নাতের চাবি না হয়, তাহলে তালাবদ্ধ জান্নাতের দরজার দিকে ডাকলে কিভাবে প্রবেশ করবে? সুতরাং যারা হাদিসটিকে অজ্ঞতার কারণে জাল বলে দাবি করছেন, তাদের থেকে সতর্ক থাকা উচিৎ।

অভিযোগ:
হেযবুতি সেলিম সাহেবের দাবি হলো, হাদিসে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা তাওহীদকে জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে’। সুতরাং নামাজ জান্নাতের চাবি হতে পারে না। কারণ’নবীজি সা. এক মুখে দুই কথা বলতে পারেন না।’

জবাব:
নবীজী সা. এক মুখে দুই কথা বলেননি, বরং মুর্খতার কারণেই সেলিম সাহেব বোঝেনি। কেননা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই’ আর নামাজ তো আল্লাহর সেই ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বরং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র বাস্তবসম্মত আমল হয় নামাজের মাধ্যমে। উপরন্তু নামাজের মধ্যে এ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অসংখ্য বার বলা হয়। সুতরাং কালেমা এবং নামাজ দু’টো আলাদা মনে করা কোনো শিক্ষিত মানুষের কাজ নয়, বরং দুটোর বিষয়বস্তু এক ও অভিন্ন।
সুতরাং প্রমাণ হলো, নামাজও কালেমার একটি অংশ, যার প্রমাণ নিন্মের দুটি বক্তব্য থেকে পাওয়া যায়।

এক.
ইমাম বুখারী রহি. তাঁর সহিহুল বুখারীতে ترجمة الباب (শিরোনাম হিসেবে) تعليقا সনদ ছাড়াই এনেছেন,

عَن وهب بن مُنَبّه قِيلَ لَهُ: أَلَيْسَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلَّا لَهُ أَسْنَانٌ فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فَتَحَ لَكَ وَإِلَّا لَمْ يَفْتَحْ لَكَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ فِي تَرْجَمَة بَاب

অর্থাৎ ওয়াহাব বিন মুনাবিবহ রহি. কে বলা হলো, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি বললেন, অবশ্যই। তবে প্রত্যেক চাবিরই দাঁত থাকে। যদি তুমি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে যাও, তবে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না’ (কালেমার দাঁত হ’ল নেক আমল)।
সূত্র: মিশকাত, বর্ণনা: ৪৩

দুই.
ইবনুল আরাবী রহি. বলেন,

مفتاح الجنة الصلاة لأن أبواب الجنة مغلقة يفتحها الطاعات وركن الطاعات الصلاة

অর্থাৎ নামাজ জান্নাতের চাবি। কারণ জান্নাতের দরজাগুলো বন্ধ। সেই দরজাগুলো খোলা যাবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার অনুগত্যের মাধ্যমে। আর (ঈমান আনার পর) আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের সর্বোচ্চ মাধ্যম হচ্ছে নামাজ।’
সূত্র: তুহফাতুল আহওয়াযী খ. ১ পৃ. ৩৮

সুতরাং সহিহ সনদে বর্ণিত একটি হাদিসকে জাল প্রমাণ করে হেযবুত তওহীদের উদ্দেশ্য কী? সেটা যেকোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বুঝবেন।

নারী-পুরুষের নামাজে পার্থক্য নেই?

নারী-পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই ভিন্ন। সেহেতু ইবাদতের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে। যা হাদিস শরীফ থেকে প্রমাণিত। কিন্তু নারীদের সমানাধিকারের স্লোগানধারী হেযবুত তওহীদ ইবাদতের ক্ষেত্রেও সমানাধিকার দেওয়ার মত দু:সাহস দেখিয়েছে।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

‘ইবলিসের প্ররোচনায় সঠিক,প্রকৃত ইসলামের আকীদা বিকৃত ও বিপরীতমুখী হয়ে যাওয়ার ফলে ইসলামের প্রকৃত সালাহ ও তার উদ্দেশ্যও বিপরিত হয়ে গেছে। এর অন্যতম হলো- পুরুষ ও নারীর সালাহকে ভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। মেয়েদের সালাতের প্রক্রিয়া থেকে কিছুটা অন্যরকম করে দেয়া হয়েছে; যেমন বুকের উপর হাত বাধা,সাজদার সময় মেঝের সাথে মিশে থাকা ইত্যাদী।কিন্তু প্রকৃত ইসলামের সালাতে পুরুষ -নারীর প্রক্রিয়ার কোন তফাৎ নেই,উভয়ের একই রকম।’
সূত্র: ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৫৪

উক্ত লেখায় তারা নারী-পুরুষের নামাজের মধ্যে তারতম্য করতে নারাজ। অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায় যে, নারী-পুরুষ একভাবেই নামাজ পড়বে। বিশেষ করে তারা এখানে দুটি জিনিষ উল্লেখ্য করেছে।
১. নারীদের বুকে হাত রাখা।
২. সিজদার সময় মাটির সাথে মিশে থাকা।

ইসলাম কি বলে?

সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষের শারীরিক গঠন, শক্তি-সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন-

১. আযান-ইকামত শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।

২. নামাজে ইমামের ভুল হলে পুরুষ তাসবীহ আর মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার মাধ্যমে লোকমা দেয়ার নিয়ম।

৩. ইমামতি ও খুৎবা শুধু পুরুষই দিতে পারে, কোন নারীর জন্য ইমাম বা খতীব হওয়া জায়েয নয়।

৪. পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।

এমন অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যেখানে নারী-পুরুষের ইবাদতের নিয়মে পার্থক্য করা হয়েছে। উপরন্তু ওড়না ছাড়া নারীদের নামাজ কবুল হয় না। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةَ حَائِضٍ إِلَّا بِخِمَارٍ

অর্থ: হযরত আয়েশা রা. সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা ওড়না ছাড়া সালাত আদায় করলে, আল্লাহ তার সালাত কবুল করেন না।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৬৪১

এখন যদি বলতে হয় যে, নারী-পুরুষের নামাজে কোনো পার্থক্য নেই। তাহলে নামাজে নারীদের যেমন ওড়না লাগে, ঠিক নারী-পুরুষের নামাজে পার্থক্য যারা করতে চাননা, তাদেরকেও তো তাহলে ওড়না পরিয়ে নামাজ পড়ানো উচিত। অথচ হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,

لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ঐসব পুরুষকে যারা নারীর অনুরূপ পোশাক পরে এবং ঐসব নারীকে যে পুরুষের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে।
সূত্র: সহিহ আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৯৮

তাহলে বলুন, নারী-পুরুষের নামাজ কি কখনও এক রকম হতে পারে? অবশ্য তারা বিশেষ করে দুটি বিষয় উল্লেখ্য করেছে।
১. নামাজে নারীদের বুকে হাত রাখা।
২. সিজদার সময় নারীরা মাটির সাথে মিশে থাকা।

নামাজে নারীদের বুকে হাত রাখা।

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আতা রহ, বলেন,

تَجْمَعُ الْمَرْأَةُ يَدَيْهَا فِي قِيَامِهَا مَا اسْتَطَاعَتْ

অর্থাৎ মহিলারা নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের হাতকে যতদূর সম্ভব গুটিয়ে রাখবে।
সূত্র: মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস: ৫০৬৭

সুতরাং মহিলাদের বুকের উপর হাত বাঁধাটি তাবেয়ীগণ ও উম্মাহর ইজমা দ্বারা প্রমানিত।

মহিলারা সিজদা কিভাবে করবে?

বিষয়টি সরাসরি হাদিস থেকে প্রমাণিত।

এক.
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন, একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন,

إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل

অর্থ: যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।
সূত্র: সুনানে বায়হাকী, হাদিস: ৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল  (আবু দাউদ) হাদিস: ৮০

দুই.
অপর হাদিসে এসেছে,

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেছন,

إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا

অর্থ: মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
সূত্র: সুনানে বায়হাকী, হাদিস: ৩৩২৪

তিন.
হযরত আলী রা. বলেছেন,

إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها
অর্থ: মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।
সূত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস: ৫০৭২,

চার.
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন,

تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ

অর্থাৎ খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: হাদিস: ২৭৯৪

সুতরাং এরপরও যারা বলছেন, ইসলামের নামাজ পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে, তাহলে নবীজি সা. এবং সাহাবায়ে কেরামই রা. কি সে নামাজ নষ্ট করে গেছেন? আল্লাহ এই হেযবুত তওহীদ থেকে মুসলিমদের ঈমানের হিফাযত করেন। আমীন!

Check Also

সংস্কৃতি ও ইসলাম এবং হেযবুত তওহীদের ভ্রান্তি:

ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গভাবে জিবন ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি বিষয়ের বিধি-বিধান ইসলাম জানিয়ে দিয়েছে। ছবি অঙ্কন, মুর্তি-ভাষ্কর্য নির্মান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.