Home > ভ্রান্ত মতবাদ > নামাজে কোরআন দেখে পড়া জায়েয?

নামাজে কোরআন দেখে পড়া জায়েয?

  • নামাজে কোরআন শরীফ দেখে দেখে 

পড়া জায়েয কি না?

প্রিয় পাঠক! বর্তমান সময়ে নামাজের ভেতর বিশেষ করে তারাবিহের নামাজে কোরআন শরীফ দেখে দেখে পড়ার প্রতি মানুষ বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে এবং অনেক স্কলারগণ এটাকে ঢালাও ভাবে জায়েয বলে ফতাওয়াও দিচ্ছেন। আজ আমি বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।ইনশাআল্লাহ।
তবে এ ক্ষেত্রে প্রথমে আমি কোরআনের আয়াত, নবিজি সঃ এর হাদিস এবং নবিজি সঃ এর আমল,খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল,সাহাবায়ে কেরামের মত,তাবেয়ীনদের মত,ফুকাহায়ে কেরামের মত উল্লেখ্য করবো।অতপর যারা নামাজে কোরআন দেখে পড়ার পক্ষে ফতাওয়া দিচ্ছেন তাদের দলীল ও তার জবাব দিয়ে সমাধানের পথ কোনটি সে আলোচনা করে শেষ করবো। ইনশাআল্লাহ।
তবে শুরুতে না বললেই নয়, নামাজের ভেতর কোরআন শরীফ দেখে পড়তে হলে কয়েকটি বিষয় সামনে আসবে-
১. হয়তো কোরআন শরীফ হাতে রাখতে হবে অথবা পাশে উঁচু কোন টেবিলে রেখে দেখে দেখে পড়তে হবে।
২. পৃষ্ঠা শেষ হলে হাত দিয়ে পৃষ্টা পরিবর্তন করতে হবে।
৩. ফ্যানের বাতাসে পৃষ্ঠা উল্টাপাল্টা হলে নামাজ ছেড়েও দেয়া লাগতে পারে।
৪. কিবলার দিক থেকে মুখ ঘুরাতে হতে পারে হবে।.
প্রথমে চলুন কিবলার দিকে মুখ করার ব্যাপারে কোরআনের আয়াত দেখে আসি। মহান আল্লাহ বলেন-
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِنَّهُ لَلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
অর্থঃ আর তুমি যেখান থেকেই বের হও, তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও।
সুরা বাকারা আয়াত-১৪৯
অর্থাৎ নামাজে যখন দাঁড়াবে তখন কিবলামুখি হয়ে দাঁড়াবে। অথচ কোরআন দেখে দেখে পড়তে হলে অবশ্যই তাকে ডান বা বাম পাশে রেখে সেদিকে মুখ ফিরিয়ে পড়তে হবে। পেছনের যেকোন মুসল্লি বুঝবে যে, ইমাম সাহেব ডান বা বাম দিকে ফিরে আছে। ফলে ইমামের চেহারা কেবলার দিকে না হয়ে কোরআনের পৃষ্ঠার দিকে হয়ে যায়।
হয়তো বলতে পারেন, ‘সিনা তো কিবলামুখি সোজা থাকলেই তো হয়ে যায়। হ্যাঁ! তবে প্রতিটি অঙ্গই কাবার দিকে হওয়া উচিত। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার । হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন,
عن عائشة أم المؤمنين قالت سَأَلْتُ رَسولَ اللَّهِ ﷺ عَنِ الِالْتِفاتِ في الصَّلاة  فَقالَ هو اخْتِلاسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطانُ مِن صَلاةِ العَبْدِ
অর্থাৎ এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে।
সূত্রঃ বুখারী হাদিস-৭৫১
পাশাপাশি আরব শায়খ বিন বায রঃ বলেন-
يتوجه المصلي الي القبلة وهي الكعبة اينما كان بجميع بدنه
অর্থাৎ নামাজী ব্যক্তি যেখানেই থাকুক প্রতিটি অঙ্গ কিবলার দিকে রাখবে।
সূত্রঃ মাজমুউল ফাতাওয়া খঃ১১ পৃঃ৮
উপরন্তু নবিজি সঃ বলেন-
فإذا صَلَّيتُم فلا تَلتَفِتوا فإنَّ اللهَ يَنصُبُ وجهَه لوجهِ عبدِه في صلاتِه ما لم يَلتفِتْ
অর্থাৎ যখন নামাজ পড়ো তখন এদিক-সেদিক তাকাবে না। কারণ যতক্ষন পর্যন্ত বান্দা তার চেহারা (কাবার দিক থেকে) ফিরিয়ে না নেয়, ততক্ষন আল্লাহ আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর চেহারা বান্দার দিক থেকে ফিরিয়ে নেন না।
সূত্রঃ তিরমিযি হাদিস-২৮৬৩
সুতরাং দেখে দেখে কুরআন পড়ার জন্য কা’বা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আয়াতের প্রতি পূর্ণ আদব দেখানো হবে না। পাশাপাশি নবি সঃ এর বাণী ‘এদিক সেদিক তাকাবে না’ কথাটির প্রতি আমল হবে না। সুতরাং নামাজের ভেতর কোরআন দেখে পড়তে গেলে কিবলামুখি হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার আয়াতের ও নবিজির হাদিসের প্রতি পূর্ণাঙ্গ ভাবে আমল করা সম্ভব হবে না।
★ নবিজির মত নামাজ পড়তে হলে,
নামাজে কোরআন দেখে দেখে পড়া যাবে না।
নবিজি সঃ বলেছেন-
قال النبي صلي الله عليه وسلم صلُّوا كما رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা সেভাবেই নামায পড় যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো। সূত্রঃ বুখারী হাদিস-৭২৪৬
প্রিয় পাঠক!
ক. ইসলামের শুরু যুগে যে সময় নামাজে কথা বলাও জায়েয ছিলো, এতদ্বসত্ত্বেও নবিজির সঃ পুরো জিন্দেগীতে নিজেও কোনদিন কোরআন দেখে নামাজ পড়েননি,পড়তে বলেননি এমনকি সাহাবারাও উনার উপস্থিতি পড়েছেন,এমন কোন ইতিহাসও নেই। সুতরাং নবিজির মত নামাজ পড়তে হলে কোরআন দেখে দেখে পড়ার কোন সুযোগ নেই। উপরন্তু কোন সাহাবী কোরআনের আয়াত মুখস্ত না থাকলে তাকে বিভিন্ন তাসবিহ পড়তে বলেছেন।তথাপিও কোরআন দেখে পড়ার অনুমতি দেননি। (হাদিসটি সামনে আসবে)।
খ. লা মাযহাবীদের শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী মরহুম লিখেছেন-
  كان صلى اللهُ عليهِ وسلَّمَ إذا صلى طأطأَ رأسَه ورمى ببصرِه نحو الأرضِ
অর্থাৎ নবিজি সঃ যখন নামাজ পড়তেন তখন মাথা ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি যমিনের দিকে দিয়ে রাখতেন।  সূত্রঃ আসলু সিফাতিস সালাত পৃঃ৮৯
কিন্তু নামাজে কোরআন দেখে দেখে পড়তে হলে কোরআনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ফলে নবিজির মত নামাজ হবে না।
গ. নামায চলাকালীন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা. এর আমল সম্পর্কে সাইয়্যদুনা ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
ثمَّ وضَع يدَه اليُمنى على ظَهْرِ كفِّهِ اليُسرى والرُّسْغِ والساعدِ
 অর্থঃ অতঃপর তিনি নিজের ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখলেন।
সূত্রঃ আবু দাউদ হাদিস-৭২৭ নাসাঈ-৮৮৯ ইবনে মাজা-৯১২ মুসনাদে আহমাদ-১৮৮৭০
সুতরাং যখন কোরআন শরীফ হাতে রেখে পড়বেন অথবা পৃষ্ঠা শেষ হলে পাল্টাবেন, তখন এ হাদিসের প্রতি আমল করা সম্ভব হবে না।ফলে নবিজি সঃ এর মত নামাজ হবে না।
ঘ. নবিজি সঃ নামাজের প্রতি একাগ্রতা যেন নষ্ট না হয় সেজন্য তিনি বলেছেন-
 ليس ينبغي أنْ يكونَ في البيتِ شيءٌ يَشغَلُ المُصلِّيَ
অর্থঃ ঘরে এমন কোন জিনিষ রাখা উচিৎ নয়, যেটা নামাজীকে অমনোযোগী করে দেয়।
সূত্রঃ আবু দাউদ হাদিস-২০৩০ মুসনাদে আহমাদ-১৬৬৩৭
সুতরাং যখন নামাজ থেকে গাফেল হয়ে কোরআনের পাতায় মনোনিবেশ করবেন, তখন এ হাদিসটির প্রতি আমল হবে না।ফলে নবিজির নামাজের মত নামাজ হবে না।
প্রিয় পাঠক! নামাজে কোরআন শরীফ দেখে পড়লে এরকম অসংখ্য বিষয় সামনে আসবে, যেগুলোর জন্য নবিজির মত করে নামাজ পড়া সম্ভব হবে না।
★ নামাজের ভেতর কোরআন দেখে পড়লে খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রতি আনুগত্যতা থাকেনা।
খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল,তাদের কথা ও কাজ অনুসরণ করা উম্মতের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন খোদ নবিজি সঃ। নবিজি সঃ বলেন-
عن العرباض بن سارية رضي الله عنه قال قال النبي صلي الله عليه وسلم عليْكُم بسنَّتي وسنَّةِ الخلفاءِ الرّاشدينَ المَهديِّينَ مِن بعدي تمسَّكوا بِها وعضُّوا عليْها بالنَّواجذِ وإيّاكم ومحدثاتِ الأمورِ
অর্থাৎ হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রাঃ বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা আমার পরে আমার ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের নিয়মনীতিকে আবশ্যক করে নাও।” মজবুত ভাবে  আকড়ে ধরো এবং মাড়ি দাঁত দ্বারা কমড়িয়ে ধরো।খবরদার! নতুন (বিদআ’ত) করো না।
সূত্রঃ আবূ দাউদ হাদিস- ৪৬০৭ তিরমিজি-২৬৭৬ ইবনে মাজা-৪২ মুসনাদে আহমাদ-১৭১৪৫
রাসূল সা. ও চার খলিফার স্বর্ণযুগে এমন কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরামের কেউ নামাযে কোরআন ধরে দেখে দেখে তিলাওয়াত করেছেন। বরং অনেক সাহাবা থেকে নামাযে দেখে দেখে কিরাত পড়ার ব্যাপারে নিষেধ এর বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন-
عن ابن عباس رضي الله عنه  قال نهانا امير المومنين عمر ان يوم الناس في المصحف
অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ” আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. আমদেরকে কুরআন দেখে দেখে ইমামতি করতে নিষেধ করেছেন এবং আরো নিষেধ করেছেন যেন, বালেগ না হয়ে ইমামতি না করে।”
সূত্রঃ ইলাউস সুনান হাদিস-১৪১৭ আল বিনায়াহ ফি শরহীল হিদায়াহ খঃ২ পৃঃ৫০৪ কিতাবুল মাসাহিফ পৃঃ ১৮৯।
সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনের ৪ খলীফার গুরুত্বপূর্ণ খলীফা ওমর রাঃ এর কথা ফেলে দেয়া কি জায়েয হবে? বৈধ হবে কি তাঁর নিষেধাজ্ঞার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে কোরআন দেখে দেখে পড়ে নামাজের ইমামতি করা?
★ নামাজে কোরআন শরীফ দেখে পড়া সাহাবায়ে কেরামের পছন্দনীয় ছিলো না। এ ক্ষেত্রে ৪ জন সাহাবার মতামত তুলে ধরছি।যথা-
১. হযরত ওমর রা:
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা:
৩. হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রা:
৪. হযরত সুয়াইদ ইবনে হানযালা রা:
(হযরত রা: এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: এর হাদিস একটু আগেই উল্লেখ্য করা হয়েছে)।
হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রা: 
খতীবে বাগদাদী রঃ তার ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারীখে বাগদাদে হাদিস নিয়ে এসেছেন-
عن عمار بن ياسر كان يكره ان يؤم الرجل الناس باليل في شهر رمضان في المصحف هو من فعل اهل الكتاب
অর্থাৎ  হযরত আম্মার ইবন ইয়াসার রাঃ এর আছর বর্ণনা করেন যে, তিনি এই বিষয়টা অপছন্দ করতেন যে, কোন ব্যক্তি রমজান মাসে তারাবীহ পড়াবে আর কুর’আন দেখে দেখে পড়বে। কেননা এটি আহলে কিতাবের আমল।
সূত্রঃ তারীখে বাগদাদ খঃ ৯ পৃঃ১৩০
খতিবে বাগদাদি রঃ আরো একটি হাদিস এনেছেন,
عن عمار بن ياسر انه كان يكره ان يؤم الرجل الناس بالليل في شهر رمضان في المصحف قال هو من فعل اهل الكتاب
অর্থাৎ হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাযি. রমজানের রাতের নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে তিনি মাকরুহ মনে করতেন এবং বলতেন এটা আহলে কিতাবদের (ইহুদী-খৃষ্টনদের) কাজ।
সূত্র: তারিখে বাগদাদ খ: ৯ পৃ:১৩০
হযরত সুয়াইদ বিন হানযালা রা:
عن عياش العامري عن سويد بن حنظلة رضي الله عنه أنه مر بقوم يؤمهم رجل في المصحف فكره ذلك في رمضان ونحا المصحف
অর্থঃ সাহাবী সাইয়েদুনা সুয়াইদ ইবনে হানজালা রাঃ এক গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। যাদেরকে এক লোক কুর’আন শরীফ দেখে দেখে নামায পড়াচ্ছিলেন। এটা তিনি অপছন্দ করলেন এবং মাসহাফকে দূরে সরিয়ে দিলেন। এটা রমজান মাসের ঘটনা ছিল।
সূত্রঃ কিতাবুল মাসাহিফ হাদিস-৬৬৯
মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা খ: ২ পৃঃ১২৪ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক খঃ২ পৃঃ৪১৯
পাঠক! উপরোক্ত হাদিস তিনটি থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম নামাজে কোরআন শরীফ দেখে দেখে পড়া সাহাবায়ে কেরামের মতে অপছন্দনীয় ছিলো।
★ নামাজে কুরআন দেখে দেখে পড়া হয়তো হারাম না হয় মাকরুহ বটেই।
প্রিয় পাঠক! উক্ত বিষয়টি বুঝতে আমাদের একটি ইসলামের মূলনীতি বুঝতে হবে। আর মূলনীতিটি হলো- ‘বিজাতিদের تشبه [তাশাব্বুহ] (অনুকরণ) করা হারাম আর مشابهت [মুশাবাহাত] সাদৃশ্য হওয়া মাকরুহ।
তাশাব্বুহ বলা হয়- ইচ্ছাকৃতভাবে বিজাতিদের অনুসরণ করা এবং নিজেকে তাদের মত হওয়ার চেষ্টা করা।
তাশাব্বুহের হুকুম হলো- বিজাতিদের এমন বিষয়ে অনুসরণ করা যা ইসলামে হারাম, তাহলে সেটা বিনাবাক্যে হারাম। তবে যে বিষয় ইসলামে মুবাহ বা জায়েয, কিন্তু সে সব বিষয় গুলো যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিজাতিদের অনুকরণের নিয়তে করা হয় তবে সেটাও হারাম। নবিজি সঃ বলেন-
عن عبدالله بن عمر رضي الله عنهما قال قال النبي صلي الله عليه وسلم مَن تَشبَّهَ بقَومٍ فهو منهم
অর্থাৎ যে বিজাতির অনুকরণ [কিংবা সাদৃশতা] অবলম্বন করবে,সে তাদেরই একজন পরিহণিত হবে। সূত্রঃ আবু দাউদ হাদিস-৪০৩১ মুসনাদে আহমাদ-৫১১৪
পক্ষান্তরে মুশাবাহাত বলা হয়- বিজাতিদের মত হওয়ার নিয়ত না থাকা সত্ত্বেও তাদের মত হয়ে যাওয়া। এটার বিধান হলো ‘মাকরুহ’।
 عبدالله بن عباس رضي الله عنهما قال حِينَ صامَ رَسولُ اللهِ ﷺ يَومَ عاشُوراءَ وَأَمَرَ بصِيامِهِ قالوا: يا رَسولَ اللهِ، إنَّه يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ اليَهُودُ والنَّصارى فَقالَ رَسولُ اللهِ ﷺ: فَإِذا كانَ العامُ المُقْبِلُ إنْ شاءَ اللَّهُ صُمْنا اليومَ التّاسِعَ
অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন রাসুলুল্লাহ সঃ যখন আশুরার দিন রোযা রাখেন,তখন আমাদেরকেও ঐ দিন রোযা রাখার আদেশ দেন। সাহাবীগণ বললেন,ইযা রাসুলাল্লাহ! এ- তো এমন দিন,যাকে ইহুদী ও নাসারাগণ সম্মান করে থাকে।রাসুল সঃ বললেন, যখন আগামী বছর এ দিন আসবে ৯ মুহাররামসহ রোযা রাখবো।(যেন ইহুদী খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য না হয়ে যায়)।
সূত্রঃ সহীহ মুসলিম হাদিস-১১৩৪
উপরোক্ত হাদিস দুটি থেকে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে বিজাতিদের অনুসরণ করা কত মারাত্মক অপরাধ। আর অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেলেও সেটা নবিজি সঃ অপছন্দ করেছেন। অতএব ইচ্ছাকৃত বিজাতিদের অনুকরণ করা হারাম। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেলে সেটাও মাকরুহ।
এখন আসি মূল কথায়। নামাজের ভেতর দেখে দেখে কিতাব তিলাওয়াত করার এই নিয়মটি আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের। তারা তাদের ইবাদতের ভেতর তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ দেখে দেখে পাঠ করে থাকে। যার কারণে সাহাবায়ে কেরামের পাশাপাশি অনেক তাবেয়ীগণ এটা পছন্দ করেননি। যেমন-
قال ليث عن مجاهد  أنه كان يكره أن يتشبهوا بأهل الكتاب يعني أن يؤمهم في المصحف
অর্থাৎ ইমাম লাইস রঃ হযরত মুজাহিদ রঃ থেকে বর্ণনা করেন যে,  তিনি কুর’আন দেখে দেখে নামায পড়াকে মাকরুহ বলেছেন। কারণ এতে আহলে কিতাবের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়।
সূত্রঃ কিতাবুল মাসাহিফ (আবু দাউদ)পৃঃ১৯০
অন্যত্র এসেছে-
عن الاعمش عن ابراهيم قال كانوا يكرهون ان يؤم الرجل في المصحف كراهية شديدة ان يتشبهوا باهل الكتاب
অর্থঃ হযরত আ’মাশ ইবরাহীম রঃ থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, তারা নামাজে কোরআন দেখে পড়াকে প্রচন্ড অপছন্দ করতেন।কারণ এটা অমুসলিমদের সাথে মিলে যায়।
সুত্রঃ কিতাবুল মাসাহিফ পৃঃ১৯০
উপরোল্লিখিত বিধান ও হাদিসগুলো বুঝে আসলে এটাও বুঝে আসবে যে, নামাজের ভেতর কোরআন শরীফ দেখে দেখে তিলাওয়াত করা হয়তো হারাম নয়তো মাকরুহ। অর্থাৎ যদি কেউ দেখে পড়াটা ইহুদী-খৃষ্টানদের অনুসরণের নিয়তে করে থাকে তাহলে এটা হবে পরিস্কার হারাম। আর যদি তাদের অনুসরণের নিয়ত নাও থাকে, তবুও তাদের মত হয়ে যাওয়াই অবশ্যই মাকরুহ হবে। আর কথার উপরে উম্মতের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইমাম কাসানী রঃ বলেছেন-
ان هذا الصنيع مكروه بلا خلاف
অর্থঃ নামাজে (বিনা ওযরে) কোরআন দেখে পড়া সর্বসম্মতিক্রমে মাকরুহ।
সূতঃ বাদায়িউস সানায়ে খঃ২ পৃঃ১৩৩
সুতরাং বিনা ওযরে নামাজে কোরআন দেখে পড়াকে যারা বৈধ বলছেন তাদের একটু ভাবা উচিৎ নয় কি?
★ নামাজে কোরআন শরীফ দেখে পড়া তাবেয়ীদের কাছেও মারাত্মক অপছন্দনীয় ছিল।এখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন তাবেয়ীর মতামত তুলে ধরলাম। বিশেষ করে ইসলামী ইতিহাসে যেসব তাবেয়ীদের নাম গুরুত্বসহকারে উল্লেখ্য করা হয়,তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন-
১. হযরত রাবী বিন খুসাইম র:
২. হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব র:
৩.হযরত হাসান বসরী র:
৪. হযরত মুজাহিদ র:
৫.হযরত ইবরাহীম নাখায়ী র:
৬. হযরত আবু আব্দির রহমান আস সুলামী র:
৭. হযরত ইমাম শা’বী র:
৮. হযরত ইমাম আবু হানিফা নোমান র:।
চলুন দেখি নামাজে কোরআন দেখে পড়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ এ তাবেয়ীদের মত কি ছিলো,
১. হযরত রাবী বিন খুসাইম র: এর মতামত:
حدثنا ابو جعفر عن الربيع قال كانوا يكرهون ان يؤم احد في المصحف
অর্থ: হযরত আবু জাফর র: রাবী বিন খুসাইম র: থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম রাঃ) নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে মাকরুহ মনে করতেন।
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৯০
২. বিখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব র: এর মত:
عن قتادة عن ابن المسيب قال اذا كان معه ما يقوم به ليله ردده ولا يقرأ في المصحف
অর্থাৎ হযরত কাতাদা র: হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব র: থেকে বর্ণনা করেন,’কারো যদি কিয়ামুল লাইলে পড়ার মতো সামান্য কুরআন মুখস্থ থাকে, তাহলে সেটা বারবার পড়বে৷ তারপরও কুরআন দেখে পড়বে না৷
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৭৩
৩. বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী র: এর মত:
عن قتادة عن الحسن انه كره ان يؤم الرجل في المصحف
অর্থাৎ হযরত কাতাদা র: হযরত হাসান বসরী র: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে অপছন্দ (মাকরুহ) মনে করতেন।
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৮৯
৪. বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ র: এর মত:
عن ليث عن مجاهد انه كره ان يؤم الرجل في المصحف
অর্থাৎ হযরত লাইস র: হযরত মুজাহিদ র: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে মাকরুহ মনে করতেন।
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৭৭
৫. বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী র: এর মত:
عن الاعمش عن ابراهيم انه كره ان يؤم في المصحف
অর্থাৎ হযরত আ’মাশ র: হযরত ইবরাহীম নাখায়ী র: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে মাকরুহ মনে করতেন৷
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৮০
৬. বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আবু আব্দির রহমান সুলামী র: এর মত:
عن عطاء بن السائب عن ابي هبد الرحمن السلمي انه كره ان يؤم في المصحف
অর্থ: হযরত আতা বিন সায়েব র: হযরত আবু আব্দির রহমান আস সুলামী র: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে মাকরুহ মনে করতেন।
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৮৮
৭. বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম শা’বী র: এর মত:
وعن الشعبي أنه كره أن يقرأ الإمام في المصحف وهو يصلي
অর্থ: নামাজে কোরআন দেখে ইমামতি করা ইমাম শা’বী র: মাকরুহ মনে করতেন।
সূত্র: মুখতাসারু কিতাবি কিয়ামি রমাযান পৃ:২১
৮.  বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আবু হানিফা নোমান র: এর মত:
اذا قرأ في صلاته في المصحف فسدت صلاته
অর্থ: নামাজে কোরআন দেখে পড়লে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
সূত্র: আল মাবসুত খ:১ পৃ:২০১
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি সকলের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, তাবেয়ীদের মতামত কি ছিলো। সবচে বড় কথা হলো সাহাবায়ে কেরামের মত কি ছিলো সেটা সবচে বেশি জানবেন তাবেয়ীগণ। বিশেষ করে প্রথম কাতারের তাবেয়ীগণ সবচে বেশি জানবেন। এ ব্যাপারে প্রথম কাতারের বিখ্যাত তাবেয়ীর নাম হযরত রাবী বিন খুসাইম র:।  চলুন তিনি কি বলেন দেখে নেয়া যাক,
حدثنا ابو جعفر عن الربيع قال كانوا يكرهون ان يؤم احد في المصحف
অর্থ: হযরত আবু জাফর র: রাবী বিন খুসাইম র: থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম রাঃ) নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে মাকরুহ মনে করতেন।
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৯০
উপরন্তু আরেকজন বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী র: কি বলছেন দেখুন-
عن الاعمش عن ابراهيم قال كانوا يكرهون ان يؤم الرجل في المصحف كراهية شديدة ان يتشبهوا باهل الكتاب
অর্থাৎ হযরত আ’মাশ র: হযরত ইবরাহীম নাখায়ী র: থেকে বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কেরাম নামাজে কোরআন দেখে পড়াকে মারাত্মক অপছন্দ করতেন আহলে কিতাবদের (ইহুদী-খৃষ্টান) সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে৷
সূত্র: কিতাবুল মাসহিফ-৭৮২
অতএব সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের মারাত্মক অপছন্দনীয় আমল হলো, ‘বিনা ওযরে নামাজে কোরআন দেখে পড়া।’ এতদ্বসত্ত্বেও কিভাবে আমাদের মডারেট স্কলারগণ এটা জেনে শুনে জায়েয বলে ফতাওয়া দেন? নির্বাক আমি, নিস্তব্ধ আলেম সমাজ!
★ বিনা প্রয়োজনে নামাজে কোরআন দেখে পড়া সকল মাযহাবে মাকরুহ।
প্রিয় পাঠক! উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা  আপনারা দেখেছেন যে, পবিত্র কুরআনের আয়াত,নবিজি স,: এর আমল,খোলাফায়ে রাশেদীনের মতামত,সাহাবায়ে কেরামের রা: অভিমত,তাবেয়ীদের অভিমত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বাভাবিক অবস্থায় নামাজে কোরআন দেখে তিলাওয়াত করা সুন্নাত পরিপন্থী ও মাকরূহ। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে নামাজ ভঙ্গের কারণও হয়ে যেতে পারে।এখন আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের সামনে ফুকাহাদের অভিমত তুলে ধরবো।ইনশাআল্লাহ।
এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের থেকে বিভিন্ন রকম মতামত পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন নামাজে কোরআন দেখে পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে, কেউ বলেছেন মাকরুহ হবে, আবার কেউ জায়েয বলেছেন।যারা নামাজে কোরআন দেখে পড়ার অনুমতি দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই মুলত জরুরত বা ওযরের ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন।
বিনা কারণে পড়া জায়েযের পক্ষে তারাও মত দেননি। নিন্মে চার মাযহাবের মতামত তুলে ধরা হলো-
মালেকী মাযহাবের অভিমত:
أنبأنا ابن وهب قال سمعت مالكا وسئل عمن يؤم الناس في رمضان في المصحف فقال لا بأس بذلك إذا اضطروا إلى ذلك
অর্থঃ ইবনে ওয়াহাব রাহ. বলেন, আমি ইমাম মালেক রাহ. থেকে শুনেছি,  তাকে রমজানে তারাবীহের নামাযে কুর’আন দেখে দেখে পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি দেখে পড়া ছাড়া না চলে তবে দেখে পড়তে অসুবিধে নেই।
সূত্রঃ কিতাবুল মাসাহিফ পৃ:১৯৩
ইমাম মালেক র: এর উক্ত কথা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, কোরআন না দেখে পড়তে পারলে অর্থাৎ হিফজ থাকলে দেখে পড়বে না।
হাম্বলী মাযহাবের অভিমত:
ইমাম আহমদ রঃ কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন-
ما يعجبني الا يضطر الي ذلك
অর্থাৎ আমি এটাকে উপযোগী মনে করি না। তবে অনোন্যপায় হলে ভিন্ন কথা।
সূত্রঃ ফাতহুর রহমান পৃঃ১২৭ মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল পৃঃ ২৩৩
উপরন্তু ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল র: কে রমজানে নামাজে কোরআন দেখে পড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে,
فقال اذا اضطروا الي ذلك
অর্থ: তিনি বলেন,’ যদি অনোন্যপায় হয় তাহলে করতে পারবে।
সূত্র: আন নূরুস সারী খ: ২ পৃ: ৪৮২
অর্থাৎ হাম্বলী মাযহাবেও মূলত কোরআন না দেখে পড়ারই পক্ষে।কিন্তু যদি দেখে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে দেখে পড়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
শাফেয়ী মাযহাবের অভিমত:
ইমাম নববী র: এর অভিমত:
أن القراءة في المصحف لا تبطل الصلاة مذهبنا ومذهب مالك وأبي يوسف ومحمد وأحمد. انتهى.
অর্থ: আল্লামা নববী রহ. বলেন, নামাযে কুর’আন দেখে পড়লে নামায নষ্ট হয় না। এটি আমাদের মত ও ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ, মালেক ও ইমাম আহমাদ রহ. এরও মত।
সূত্র: আল মাজমু খণ্ড-৪ পৃ: ২৭
এখানে ইমাম নববী র: বলেছেন, ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ র: মত এবং তাদের (শাফেয়ীদের) মত একই। অর্থাৎ নামাজ নষ্ট হবে না, তবে নামাজ নষ্ট না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, বিনা প্রয়োজনে করলে মাকরুহ হবে না। বরং বিনা প্রয়োজনে নামাজে কোরআন দেখে পড়লে মাকরুহ হবে, একথা ইমাম নববী র: এর নিন্মের কথা থেকে ক্লিয়ার বোঝা যায়। নববী রঃ বলেন-
لو قرأ القرآن من المصحف لم تبطل صلاته سواء كان يحفظه أم لا، بل يجب عليه ذلك إذا لم يحفظ الفاتحة.
ولو قلب اوراقه احيانا في صلاته لم تبطل ولو نظر في مكتوب غير القرأن ورددها فيه في نفسه لم تبطل صلاته وان طال لكن يكره نص عليه الشافعي في الاملاء واطبق عليه الاصحاب
অর্থ: যদি কেউ নামাজে কোরআন দেখে পড়ে তাহলে তার নামাজ নষ্ট হবে না, চাই কোরআন হিফজ থাকুক বা না থাকুক। বরং যদি কারো সূরায়ে ফাতেহা হিফজ না থাকে তবে নামাযে দেখে পড়া তার জন্য তো ওয়াজিব এবং কোরআনের পৃষ্ঠা কখনো পরিবর্তন করলেও নামায ভঙ্গ হবে না। আর যদি কোরআন ছাড়া অন্য অন্য কোন লেখার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং দীর্ঘ সময়ও যদি মনে মনে উচ্চারণ করতে থাকে তবুও নামাজ নষ্ট হবে না। তবে মাকরুহ হবে। এব্যাপারে ইমাম শাফেয়ী র: স্পষ্ট করে লিখে গেছেন,যে কথার উপর সমস্ত শাফেয়ীরা একমত।
সূত্র: আল মাজমু খ:৪ পৃ:২৭
অর্থাৎ বিনা প্রয়োজনে নামাজে অমনোযোগী হলে নামাজ মাকরুহ হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন-
ويكره ان يلتفت في صلاته من غير حاجة
অর্থ: বিনা প্রয়োজনে নামাজের ভেতর এদিক সেদিক তাকানো মাকরুহ।
সূত্র: আল মাজমু খ:৪ পৃ:২৮
সুতরাং আমরা ইমাম নববী র: এ কথা দ্বারা বুঝতে পারি যে, যদি বিনা কারণে কোরআন দেখে পড়ে তাহলে নামাজ নষ্ট না হলেও নামাজে অমোনোযোগী হওয়ার কারণে তার নামাজ মাকরুহ হয়ে যাবে।
হানাফী মাযহাবের মত:
اذا قرأ في صلاته في المصحف فسدت صلاته عند ابي حنيفة وعند ابي يوسف ومحمد رحمهما الله صلاته تامة ويكره ذلك
অর্থ: যদি কেউ নামাজে কোরআন দেখে পড়ে তাহলে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এটা ইমাম আযম আবু হানিফা র: এর অভিমত।কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ র: ও ইমাম মুহাম্মদ র: বলেন- নামাজ আদায় হবে কিন্তু এমনটা করা মাকরুহ হবে।
সূত্র: আল মাবসুত খ:১ পৃ:২০১
القراءة من المصحف في الصلاة مفسدة عند ابي حنيفة لانه عمل كثير او لانه تلقن منه وعند ابي يوسف ومحمد يجوز لان النظر في المصحف عبادة ولكنه يكره لما فيه من التشبه باهل الكتاب في هذه الحالة
অর্থ: ইমাম আবু হানিফা র: এর নিকট নামাজে কোরআন দেখে পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। কারণ এটা আমলে কাসীর অথবা অন্যের থেকে কুর’আন শরীফ শিখে নিয়ে পড়ার সাদৃশ্য। আর ইমাম আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ র: এর নিকট, নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ কোরআনের দিকে তাকানো ইবাদত।কিন্তু নামাজে কোরআন দেখে পড়া আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য হওয়ায় মাকরুহ হবে।
সূত্র: ইলাউস সুনান খ:৫ পৃ:৬২
হযরত সুফিয়ান সাওরী র: এর অভিমত:
وقال سفيان يكره أن يؤم الرجل القوم في رمضان في المصحف أو في غير رمضان، يكره أن يتشبه بأهل الكتاب
অর্থ: রমাযান মাসে ও রমাযানের বাহিরে নামাজে কোরআন দেখে ইমামতি করা মাকরুহ মনে করতেন।কারণ এটা আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য হয়ে যায়।
সূত্র: মুখতাসারু কিতাবি কিয়ামি রমাযান পৃ:২১
ইবনে বায র: এর অভিমত:
تجوز القراءة من المصحف في التراويح لمن لا يحفظ القرآن
অর্থ: যার কোরআন মুখস্ত নাই তার জন্য তারাবিহের নামাজে কোরআন দেখে পড়া জায়েয।
সূত্র: মাজমুউ ফাতাওয়া খ:১১ পৃ:১১৭
শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী মরহুমের অভিমত:
لا نري ذلك
অর্থ: আমরা (নামাজে কোরআন দেখে পড়া) এটা ঠিক মনে করি না।
সূত্র: ফাতহুর রাহমান পৃ: ১২৪-১২৫
ইমাম ইবনে হাযম র: এর মত:
لا يحل لاحد ان يؤم وهو ينظر ما يقرأ به في المصحف لا في فريضة ولا نافلة فان فعل عالما بان ذلك لا يجوز بطلت صلاته وصلاة من ائتم به عالما بحاله عالما بان ذلك لا يجوز
অর্থ: কোন এরূপ ব্যক্তির পক্ষে ইমামতি করা জায়েয নেই যে নামাযে কুরআন মাজীদ দেখে দেখে কিরাত পড়ে। ফরজ নামাযেও নয়, নফল নামাযেও নয়। নাজায়িয জানা সত্বেও যদি কেউ এরূপ করে তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে এবং যারা তার পিছনে ইকতেদা করবে তাদের নামাযও নষ্ট হয়ে যাবে যদি মুক্তাদিরাও এ মাসয়ালা সম্পর্কে অবগত থাকে।”
সূত্র: আল মুহাল্লা খ:৩ পৃ:১৪০  ইলাউস সুনান খ:৫ পৃ:৬২ উমদাতুল কারী খ:৫ পৃ:৩২৯
ইমাম কাসানী র: এর অভিমত:
ان هذا الصنيع مكروه بلا خلاف
অর্থঃ নামাজে (বিনা ওযরে) কোরআন দেখে পড়া সর্বসম্মতিক্রমে মাকরুহ।
সূত্রঃ বাদায়িউস সানায়ে খঃ২ পৃঃ১৩৩
★ কোরআন দেখে নামাজ পড়ার প্রয়োজনীয়তা এখন আছে কি?
প্রিয় পাঠক! আমি ইতিপূর্বে ফুকাহায়ে কেরামের যে অভিমত উল্লেখ্য করলাম, আশা করি সেখান থেকে আপনাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, অপ্রয়োজনে নামাজে কোরআন দেখে পড়ার পক্ষে কোন মাযহাবের ফতাওয়া নেই। উপরন্তু নবিজির সুন্নাহ পরিপন্থি এ কাজটি খুলাফায়ে রাশেদীন,সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীগণও এটাকে মারাত্মকভাবে অপছন্দ করতেন। অবশ্য যারা প্রয়োজনের ক্ষেত্রে জায়েয বলেছেন তাদের দাবী কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটা নিয়ে এখন আলোচনা করবো।ইনশাআল্লাহ।
যারা বলছেন ‘প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নামাজে কোরআন দেখে পড়া জায়েয’ সেই প্রয়োজনটা আসলে কি?  হয়তো উত্তরে আসবে যে, যদি হাফেজে কোরআন না থাকে বা না পাওয়া যায়।
তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, পৃথিবীতে এমন কোন স্থান কি রয়েছে, যেখানে হাফেজে কোরআনের এত অভাব? অবশ্য যদি কোথাও কোন হাফেজ না থাকে সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। কিন্তু যে দেশ গুলোতে বিশেষ করে সৌদী আরব, সেখানে এটার সবচে বেশি প্রচলন, সে সৌদি আরবে কিন্তু হাফেজের অভাব নেই। যদি হাফেজের অভাব না থাকে তাহলে কেন এসব দেশে নামাজে দেখে দেখে কোরআন পড়ে ইহুদী-খৃষ্টানদের নিয়ম চালু করা হলো?
অনেকে বলতে পারেন, পৃথিবীতে অনেক দেশ এখনও এমন রয়েছ, সেসব দেশে মুসলমানের সংখ্যা খুবই কম, হাফেজ তো দুরের কথা। তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কি নামাজে কোরআন দেখে পড়ার সুযোগ নেই?
উত্তরটি দেয়ার আগে আমার একটি প্রশ্ন হলো, সুন্নাতে  মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিয়ে মুস্তাহাব পালন করার কি কোন সুযোগ রয়েছে? যদি না থাকে তাহলে হাফেজে কোরআন না থাকলেও কোরআন দেখে নামাজ পড়ার সুযোগ নেই। কারণ নামাজে সুরা ফাতিহার পর অন্তত ছোট তিনটি আয়াত পড়া জরুরী। তিন আয়াতের বেশি পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু নামাজে দাড়ানো অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। বিশ্বনবী স: বলেন-
عن عبدالله بن عباس رضي الله عنه قال سمعت النبي صلي الله عليه وسلم قال إنّا معشرَ الأنبياءِ أُمِرْنا أنْ نُؤخِّرَ سُحورَنا ونُعجِّلَ فِطْرَنا وأنْ نُمسِكَ بأيمانِنا على شَمائِلنا في صلاتِنا
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি দ্রুত (সময় হওয়ামাত্র) ইফতার করতে, বিলম্বে (সময়ের শেষের দিকে) সাহরী খেতে এবং আমাদের নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে।
সূত্রঃ সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস-১৭৭০ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ:১ পৃ:২৭৫
সুতরাং যখন আপনি লম্বা তিলাওয়াত করার মত মুস্তাহাব আমল করতে গিয়ে কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে পড়বেন, তখন বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার মত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ ত্যাগ করতে হবে। এবার বলুন মুস্তাহাব আমলের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দেয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
হয়তো এবার বলবেন, কোরআন শরীফ হাতে না রেখে ডান/বাম পাশে রেখে দেখে পড়লে তো আর এ সুন্নাতটি ছেড়ে দেয়া লাগছে না।
হ্যাঁ! সেটা ঠিক। তবে,
ক. যখন বারবার পৃষ্ঠা পাল্টাতে হবে , তখন ঐ মূহুর্তে কি সুন্নাতটা পালন করতে পারবে?
খ. পাশে রেখে কোরআন শরীফের দিকে তাকালে সিজাদার দিকে দৃষ্টি রাখা যে সুন্নাত সেটা কি পালন করা সম্ভব হবে?
অতএব নবিজি স: এর অসংখ্য সুন্নাহ বাদ দিয়ে, খুলাফায়ে রাশেদীন,সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীগণের অপছন্দ কাজটি করে, ইহুদী খৃষ্টানদের মত নামাজে কোরআন হাতে নিয়ে পড়ার যৌক্তিকতা কি?
★ ইমাম আবু হানিফা র: এর মতের যৌক্তিকতা।
প্রথম আমরা দেখে আসি ‘নামাজে কোরআন দেখে পড়ার ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা র: এর মত:
اذا قرأ في صلاته في المصحف فسدت صلاته
অর্থ: নামাজে কোরআন দেখে পড়লে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
সূত্র: আল মাবসুত খ:১ পৃ:২০১
অর্থাৎ ইমাম আযম আবু হানিফা র: এর মতে নামাযের মধ্যে দেখে দেখে কিরাত পড়লে নামায নষ্ট হয়ে যায়। পরিমাণে অল্প হোক বা বেশি, চাই একাকী নামাজ পড়ুক বা ইমাম হয়ে নামাজ পড়ুক। সর্বাবস্থায় কোরআন দেখে দেখে পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতের স্বপক্ষে মূলত দুটি কারণ রয়েছে,
প্রথম কারণ হলো, ‘আমলে কাসীর’
أَنَّ حَمْلَ الْمُصْحَفِ وَالنَّظَرِ فِيهِ وَتَقْلِيبِ الْأَوْرَاقِ عَمَلٌ كَثِيرٌ
অর্থ: (নামাজে কুর’আন শরীফ দেখে পড়ার জন্যে) মুসহাফ হাতে ধারণ করা, মুসহাফের দিকে তাকানো এবং পৃষ্ঠা পরিবর্তন করা। যা আমলে কাসীর হওয়া স্পষ্ট।
সূত্র: আল মুহীতুল বুরহানী খ: ১ পৃ: ৩১১ আল বাহরুর রায়েক খ: ২ পৃ: ১১
তবে যদি রেহাল বা উঁচু টেবিলে রেখে পড়া হয়, তবে দ্বিতীয় কারণটি অবশ্যই পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় কারণটি হলো, ‘নামাজের বাহিরের কারো থেকে শিখে নেওয়া বা শিখিয়ে দেওয়া।
أَنَّهُ تَلَقُّنٌ مِنْ الْمُصْحَفِ فَصَارَ كَمَا إذَا تَلَقَّنَ مِنْ غَيْرِهِ
অর্থ: নামাযের মধ্যে মুসহাফ দেখে পড়া অন্যের থেকে কুর’আন শরীফ শিখে নিয়ে পড়ার সাদৃশ্য।(আর নামায অবস্থায় অন্যের থেকে শিখে তিলাওয়াত করলে নামায ভেঙ্গে যায়।)
সূত্র: আল মুহীতুল বুরহানী খ: ১ পৃ: ৩১১ আল বাহরুর রায়েক খ: ২ পৃ: ১১
অর্থাৎ যদি কারো কোরআন মুখস্ত না থাকে আর সে নামাজে কোরআন দেখে দেখে পড়ছে সে কেমন জানি কোন মানুষের থেকে শিখে শিখে পড়ছে। আর নামাজের ভেতর কারো থেকে শিখে পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
 অবশ্য হাফেজ হলে কোরআন পাশে রেখে দেখে  পড়লে নামাজ নষ্ট হবে না। কারণ সে এখন কোরআন থেকে শিখে পড়ছে না। কারণ এগুলো তার আগ থেকেই মুখস্ত রয়েছে। তবে এমনটা করা অবশ্যই তার জন্য মাকরুহ হবে। কারণ এর দ্বারা কয়েকটি সুন্নাহ ছেড়ে দেয়া জরুরি হয়ে পড়বে।যেমন-
ক. সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা।
খ. বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।
গ. ইহুদী খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ায় অবশ্যই মাকরুহ হবে।
সূত্র: বাহরুর রায়েক খ:২ পৃ:১৭ তাবয়ীনুল হাকায়েক খ:১ পৃ:১৫৯ রদ্দুল মুহতার খ:২ পৃ২৮৬
এক কথায় ইমাম আবু হানিফা র: এর কথার সারাংশ হলো,’ যদি কেউ নামাজে কোরআন শরীফ দেখে দেখে পড়ে, তাহলে তার জন্য উপরোক্ত দুটি কারণ থাকায় নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
অতএব কোথাও যদি কুরআনের হাফেয না পাওয়া যায়, এমতবস্থায় সূরা ফিল পরবর্তী ছোট ছোট সূরা দিয়ে তারাবির নামায আদায় করতে হবে তবুও  তারাবির মাঝে কোর’আন শরীফ দেখে দেখে পড়বে না। এতে নামাজ শুদ্ধ হবে না।
যদি কোরআনের কোন আয়াতই না জানা থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে সুরা,কিরাআতের পরিবর্তে ‘সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” বলে নামাজ পড়বেন। যা নিন্মের হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। হাদিস শরীফে এসেছে,
عن عبدالله بن أبي أوفى قال جاء رجل إلى النبي ﷺ فقال إني لا أستطيع أن آخذ من القرآن شيئا فعلمني ما يجزئني منه قال قل سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر ولا حول ولا قوة إلا بًالله العلي العظيم قال يا رسول اللهِ هذا لله عز وجل فما لي قال قل اللهم ارحمني وارزقني وعافني واهدني فلما قام قال هكذا بيده فقال رسول اللهِ ﷺ أما هذا فقد ملأ يده من الخير
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক লোক এসে বলল, আমি কুরআন মুখস্থ করতে পারি না। অতএব আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা কুরআনের পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বলোঃ “সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা তো মহা সম্মানিত আল্লাহর জন্য, আমার জন্য কি? নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বলো: “আল্লাহুম্মা ইরহামানী, ওয়ারযুক্বনী, ওয়া ‘আফিনী ওয়াহদিনী।” বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি ওগুলো হাতের অঙ্গুলিতে গণনা করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই লোক তার হাতকে উত্তম বস্ত দ্বারা পরিপূর্ণ করেছে।
সূত্র: আবু দাউদ হাদিস-৮৩২ নাসাঈ-৯২৪ মুসনাদে আহমাদ-১৯১৬১
সুতরাং উল্লেখিত হাদিসের দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, যদি কারো কোরআনের একটি আয়াতও মুখস্ত না থাকে তার জন্যও কোরআন দেখে পড়ার অনুমতি নবিজি স: দেননি।বরং কিছু তাসবিহ শিখিয়ে দিলেন। সুতরাং কোনো নামাজে কোরআন দেখে পড়ার কোন সুযোগ নেই। পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না। এটাই ইমাম আবু হানিফা র: এর মত।
★ আবু হানিফা র: এর মতের স্বপক্ষে দুটি কারণের হাদিস ভিত্তিক জবাব।
ইমাম আ’যম আবু হানিফা র: বলেছেন, নামাজে কোরআন দেখে পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর এর স্বপক্ষে  দুটি কারণ উল্লেখ্য করা হয়েছে।
১. আমলে কাসীর হওয়া ২. নামাজে অন্যের থেকে কোরআন শিখে নেওয়া।এখন দেখার বিষয় হলো, এ কারণ দুটি নামাজ ভঙ্গের কারণ কি না? চলুন দেখে নেয়া যাক হাদিস কি বলে,
১. আমলে কাসীর।
নামাজে আমলে কাসীর হয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا لِى أَرَاكُمْ رَافِعِى أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ اسْكُنُوا فِى الصَّلاَةِ
অর্থ: হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাঃ বলেন ,নামাজের মুহুর্তে হুজুর সাঃ আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, তোমাদের কি হল যে তোমাদের কে দেখতে পাচ্ছি তোমরা রাফয়ে ইয়াদাইন করছ বেয়াড়া ঘোড়ার লেজের ন্যায়? নামাজের মধ্যে শান্ত ধীর হও।
সূত্র: সহীহ মুসলিম হাদীস-৯৯৬
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّي كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِي فَقَالَ إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْدِلَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا وَافْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا
অর্থ: আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন একজন সহাবী এসে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, আবার গিয়ে সালাত আদায় কর। কেননা, তুমিতো সালাত আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে পূর্বের মত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাম করলেন। তিনি বললেনঃ ফিরে গিয়ে আবার সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার বললেন। সহাবী বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন- আমিতো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত আদায় করতে জানি না। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাক্বীর বলবে। অতঃপর কুরআন হতে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। অতঃপর রুকু‘তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ‘ করবে। অতঃপর সাজদাহ্ হতে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর তোমার পুরো সালাতে এভাবেই করবে।
সূত্র: বুখারী হাদিস-৭৫৭
এ ধরণের হাদিস গুলো সামনে রেখে সমস্ত ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, ‘আমলে কাসীর হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
اتفق الفقهاء علي بطلان الصلاة بالعمل الكثير
অর্থ: আমলে কাসীরের দ্বারা নামাজ নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত ফুকাহায়ে কেরাম একমত।
সূত্র: আল ইস্তেযকারুল জামে খ:৪ পৃ:২৫৮ আল ফিকহুল ইসলামী খ:২
সুতরাং বুঝা গেল নামাজের ভেতর আমলে কাসীর হয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। যদিও আমলে কাসীরের সংজ্ঞা নিয়ে ফুকাহাদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে আমলে কাসীর হলে নামাজ নষ্ট হবে এ ব্যাপারে সমস্ত মাযহাবের ফুকহা একমত।
২. নামাজের ভেতর কোরআন শিখে পড়া।
ইমাম আবু হানিফা র: এর মতে ‘নামাজে কোরআন দেখে পড়া কারো থেকে কোরআন শিখে পড়ার সদৃশ্য’ হওয়ায় নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এর স্বপক্ষে হাদিস এসেছে,
عن عبدالله بن مسعود قَالَ كُنْتُ أُسَلِّمُ على النبيِّ ﷺ وهو في الصَّلاةِ فَيَرُدُّ عَلَيَّ، فَلَمّا رَجَعْنا سَلَّمْتُ عليه فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ وقالَ إنَّ في الصَّلاةِ لَشُغْلًا
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ্‌‌ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তাঁর সালাতরত অবস্থায় সালাম করতাম; তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিতেন। পরে যখন আমরা বাদশা নাজাশীর নিকট হতে ফিরে এলাম, তখন তাঁকে (সালাতে) সালাম করলে তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন না এবং পরে বললেন, সালাতে আছে নিমগ্নতা।
সূত্র: বুখারী হাদিস-১২১৬
সুতরাং এ হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, যে নামাজের ভেতর সালাম দেওয়া,সালামের উত্তর নেওয়া অথবা কোন কিছুর লেনদেন বা আদান প্রদান করা কিংবা কোন কিছু শেখা বা শেখানো এক কথায় নামাজের নির্দিষ্ট আমল ভিন্ন কোন কাজ করার সুযোগ নেই। এ হাদিসকে সামনে রেখে ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন,
التعليم والتعلم ينافي الصلاة
অর্থাৎ নামাজে কিছু শেখা বা শেখানো নামাজ নষ্ট করে দেয়।
সূত্র: ইলাউস সুনান খ:৫ পৃ:৬১ আয যাখিরাতুল বুরহানিয়্যাহ খ:২ পৃ:১১২
আর নামাজে কোরআন দেখে পড়া কেমন জানি অন্য কারো থেকে কোরআন শিখে নেয়া। আর নামাজের ভেতর কারো থেকে কোরআন শিখে পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
পুরো বিষয়টি সামনে রেখে এ কথা বলা সমীচীন যে, নামাজে কোরআন শরীফ দেখে পড়লে উপরোক্ত দুটি কারণ পাওয়া যাওয়ার কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর এ কথাটি হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত।
★ হযরত যাকওয়ান র: এর আমল ও জবাব।
প্রিয় পাঠক! যারা বলে থাকেন ‘নামাজে কোরআন দেখে পড়া জায়েয’ তারা দলীল হিসাবে বিশিষ্ট তাবেয়ী, আম্মাজান আয়েশা রা: এর গোলাম যাকওয়ান র: এর একটি আমল উল্লেখ্য করে থাকেন। যা বুখারী শরীফে باب إمامة العبد والمولى এ তালীকান উল্লেখ করা হয়েছে।
وكانت عائشة يؤمها عبدها ذكوان من المصحف
অর্থাৎ হযরত আয়েশা রা. এর গোলাম তার তারাবীহের নামাজ পড়াতেন মুসহাফ থেকে দেখে দেখে।”
প্রিয় পাঠক! এখানে দুটি বিষয় না বললেই নয়।
১. ইমাম বুখারী র: যাকওয়ান র: এর হাদিসটি বুখারী শরীফের মূল হাদিস হিসাবে বর্ণনা করেননি।।বরং শিরোনামের সম্পূরক হিসাবে এনেছেন।
২. তিনি হাদিসটির মাধ্যমে ‘ নামাজে কোরআন দেখে পড়া যাবে’ এ কথা প্রমাণ করার জন্য আনেননি।বরং গোলামের পেছনে নামাজ পড়া জায়েয’ এ কথা প্রমাণ করার জন্য এনেছেন। তারপরও হাদিসটির দিকে একটু গভীর নজর দিলে বেশ কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে। চলুন হাদিসের ব্যাখ্যাদাতাগণ কি বলেছেন দেখে নেয়া যাক।
১. যাকওয়ান র: নামাজে কোরআন দেখে পড়তেন না।
হাদিসটি আরেকটু তালাশ করলে যাকওয়ান র: এর কোরআন পড়ার ব্যাপারে ভিন্ন অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। যেমন-
বুখারী শরীফের রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে,
  وكانت عائشة يؤمها عبدها ذكوان من المصحف
অর্থাৎ হযরত আয়েশা রা. এর গোলাম তার তারাবীহের নামাজ পড়াতেন মুসহাফ থেকে দেখে দেখে।
এই হাদিসটি আবার মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাতে উল্লেখ্য করা হয়েছে এভাবে,
 کَانَ یَوٴُمُّ عَائِشَةَ عَبْدٌ یَقْرَأُ فِي الْمُصْحَفِ
অর্থাৎ আয়েশা রা: এর ইমামতি করতেন এক গোলাম, যিনি মুসহাফে দেখে কুরআন পড়তেন। সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস- ৭২৮৬
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বার এ হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি নামাজে নয় বরং অন্য সময় দেখে দেখে কোরআন পড়তেন। আর এজন্যই ইমাম কাসানী র: বলেন,
يحتمل أن يكون قول الراوي كان يؤم الناس في رمضان وكان يقرأ من المصحف اخبارا عن حالتين مختلفتين أي كان يؤم الناس في رمضان وكان يقرأ من المصحف في غير حالة الصلاة
অর্থাৎ রাবীর কথায় এই সম্ভাবনাও বিদ্যমান যে, যাকওয়ান র: রমাযানে ইমামতি করতেন এবং বাকি অন্যসময় মুসহাফে দেখে দেখে কুর’আন পড়তেন। বিচ্ছিন্ন দুটি অবস্থার কথা বলা হয়েছে।অর্থাৎ রমাযানে লোকদের ইমামতি করতেন,আর নামাজের বাহিরে অন্য সময় কোরআন দেখে দেখে পড়তেন।
সূত্রঃ বাদায়িউস সানায়ে খঃ২ পৃঃ১৩৩
উপরন্তু প্রশিদ্ধগ্রন্থ ‘আল মাবসুত’ এ বলা হয়েছে,
وليس المراد بحديث ذكوانانه كان يقرأمن المصحف في الصلاة انما المراد بيان حاله انه كان لا يقرأ جميع القرأن عن ظهر القلب والمقصود بيان ان قراءة جميع القرآن  في قيام رمضان ليس بفرض
অর্থাৎ যাকওয়ান র: এর হাদিসের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তিনি নামাজে কোরআন দেখে দেখে পড়তেন। বরং উদ্দেশ্য হলো, তার এ অবস্থা বর্ণনা করা যে, তিনি পুরো কোরআন মুখস্ত পড়তে পারতেন না এবং এ কথা বর্ণনা করা উদ্দেশ্য যে, তারাবিহতে কোরআন খতম করা ফরজ নয়।
সূত্র: আল মাবসুত খ:১ পৃ:২০২
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন,
اثر ذكوان ان صح فهو محمول علي انه كان يقرأ من المصحف قبل شروعه في الصلاة اي ينظر فيه ويتلقن منه ثم يقوم فيصلي وقيل ما دل فانه كان يفعل بين كل شفتين فيحفظ مقدار ما يقرأ من الركعتين فظن الراوي انه كان يقرأ من المصحف
অর্থাৎ যাকওয়ান র: এর হাদীসের দ্বারা উদ্দেশ্যে হল, যাকওয়ান নামায শুরু করার পূর্বে কুর’আন দেখে আত্মস্থ করে নিতেন এবং নামাযে গিয়ে তা তিলাওয়াত করতেন। তিনি প্রতি দুই রাকাতে কী তিলাওয়াত করবেন তা নামাযের আগে মুসহাফ খুলে পোক্তা ইয়াদ করে নিতেন। রাবী এটাকেই বর্ণনার করতে গিয়ে বলেছেন যে, কুর’আন দেখে তিলাওয়াত করতেন।
সূত্র: আল বিনায়া খ:২ পৃ:৫০৪
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এতটুকু স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন যে, যাকওয়ান র: নামাজে কোরআন শরীফ দেখে পড়তেন না। আর এ কথাটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ কোরআন শরীফ আমাদের সামনে যেভাবে রয়েছে ‘৩০ পারা এক সাথে কাগজের ভেতর ‘ এভাবে সে যুগে ছিল না। সে যুগে তো কোরআন শরীফ গাছের পাতা, চাড়ায় ইত্যাদীতে লেখা থাকতো।উপরন্তু হযরত উসমান রা: কোরআন একত্রিত করে এক সাথে যে করেছিলেন, সেটা এত ভারি ছিল যে, যেকোন একজন মানুষের পক্ষে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া সম্ভব নয়।সুতরাং বুঝা গেল হযরত যাকওয়ান র: হাতে নিয়ে কোরআন দেখে নামাজ পড়তেন না।বরং নামাজের বাহিরে দেখে দেখে পড়তেন।
এরপরও যদি ধরে নিই যে, তিনি নামাজেই দেখে দেখে কোরআন পড়তেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে আরেকটি কথা ভাবতে হবে যে, আয়েশা রা: বিষয়টি জানতেন কি না?
২. হযরত আয়েশা রা: যাকওয়ান র: এর এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না।
কারণ কাতারে মহিলাদের দাঁড়ানোর স্থান হলো পুরুষদের কাতারের পেছনে। উপরন্তু আম্মাজান আয়েশা রা: নামাজে এদিক-সেদিক তাকাবেন এটা ভাবাও যায় না। ফলে তিনি কাতারে পুরুষদের পেছন থেকে ইমাম কি করছেন সেটা দেখতে পেয়েছেন কি না বিষয়টি যথেষ্ট ভাবনার।
এজন্য আল্লামা কাসানী রহ. লেখেন,
وأما حديث ذكوان فيحتمل ان عائشة ومن كان من أهل الفتوى من الصحابة لم يعلموا بذلك وهذا هو الظاهر بدليل ان هذا الصنيع مكروه بلا خلاف ولو علموا بذلك لما مكنوه من عمل المكروه في جميع شهر رمضان من غير حاجة
অর্থাৎ এটাও সম্ভব যে, যাকওয়ানের কুর’আন দেখে পড়ার বিষয়ে আয়েশা সিদ্দীকা রা. ও ফকীহ সাহাবায়ে কেরাম জানতেন না। কেননা নামাযে দেখে কুর’আন পড়া তৎকালীন সময়েও সবার ঐক্যমতে মাকরুহ ছিল। যদি তারা জানতেন তবে বিনা কারণে পুরো মাস এই মাকরুহ কাজে লিপ্ত থাকার সুযোগ দিতেন না।
সূত্রঃ বাদায়িউস সানায়ে খঃ২ পৃঃ১৩৩
বুঝা গেল আম্মাজান আয়েশা রা: এবং ফকীহ সাহাবাগণ বিষয়টি সম্পর্কে জানলে অবশ্যই নিষেধ করে দিতেন।
৩. কোন ওযরের কারণে হয়তো তিনি নামাজে কোরআন দেখে পড়েছেন।
এরপরও যদি ধরে নিই যে, বিনা ওযরেই পড়েছেন এবং আম্মাজান আয়েশা রা: বিষয়টি জানতেন, তাহলে সেক্ষেত্রে লা-মাযহাবী শায়খ আলবানী মরহুমের কথাটি লক্ষণীয়।
৪. হযরত যাকওয়ান র: বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেন,
لا نري ذلك وما ذكر عن ذكوان حادثة عين لا عموم لها وباباحة ذلك لأمة المساجد يؤدي بهم الى ترك تعاهد القران والعناية بحفظه غيبا
 অর্থাৎ যাকওয়ানের ইমামতির ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর উপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে অনুমতি দেওয়া যায় না। যদি মসজিদের ইমামদেরকে অনুমতি দেয়া হয় তবে কুর’আন হিফজ বা সংরক্ষণের যাবতীয় কার্যক্রম আস্তে আস্তে নিষ্প্রভ হয়ে যাবে।   সূত্র: ফাতহুর রাহমান পৃ: ১২৪-১২৫
সুতরাং সায়্যিদিনা যাকওয়ান র: এর এ ঘটনা,যেটা বিভিন্ন ব্যাখ্যা হওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেটা দিয়ে ‘নামাজে কোরআন দেখে পড়া জায়েয’ বলার কোন সুযোগ নেই। উপরন্তু মনে রাখতে হবে খলীফা হযরত ওমর রা: সহ সাহাবায়ে কেরাম যেটা অপছন্দ করতেন, বড় বড় তাবেয়ীগণ যেটা মাকরুহ বলেছেন, ফকীহগণ যেটা শুধু “হালতে ইজতেরার” অনোন্যপায় অবস্থা কে শর্তযুক্ত করেছেন। উপরন্তু নামাজ ভঙ্গের দুটি কারণ থাকা সত্ত্বেও নামাজে কোরআন দেখে পড়া জায়েয যারা বলছেন দয়া করে এবার থামুন। মানুষকে আর বিভ্রান্ত করবেন না।

লেখক:

মুফতী রিজওয়ান রফিকী

পরিচালক: মাদরাসা মারকাযুন নূর বোর্ডবাজার,গাজীপুর।

Check Also

IMG 20210523 215847

ওযুতে ঘাড় মাসাহ করা কি বিদ’আত?

ওযুতে ঘাড় মাসাহ করা মুস্তাহাব। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে তথাকথিত আহলে হাদিস মতবাদের কিছু ভাই এটাকে …

One comment

  1. খুবই চমৎকার। এ ধরনের ব্যাখ্যা আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। মাশাল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.