Home > খুতুবাতে আইয়ুবী দা.বা. > নবীর সা. প্রেম:

নবীর সা. প্রেম:

 

الحمد لله الحمد لله وكفي وسلام علي عباده الذين اصطفي اما بعد فاعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا

وقال النبي صلي الله عليه وسلم رُبَّ عملٍ صغير تعظمه النية، ورُبَّ عملٍ كبير تصغره النية
او كما قال عليه الصلوة والسلام
اللَّهمَّ صلِّ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما صلَّيْتَ على إبراهيمَ وعلى آلِ إبراهيمَ إنَّك حميدٌ مجيدٌ، اللَّهمَّ بارِكْ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما باركْتَ على إبراهيمَ وعلى آلِ إبراهيمَ إنَّك حميدٌ مجيدٌ، اللَّهمَّ وترحَّمْ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما ترحَّمتَ على إبراهيمَ وعلى آلِ إبراهيمَ إنَّك حميدٌ مجيدٌ،

بلغ العُلا بكمالـــــــهِ كشف الدُجى بجمالـهِ حَسُنت جميعُ خصالهِ صَلُّوا عليه و آلــــــهِ

মোবারক মাহফিল। আল্লাহ যাদেরকে এ বরকতময় মাহফিলে এনেছেন, অনেকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত আছেন, মোবাইলে ছবি তোলা, কথা বলা, রেকর্ডিং করা নিয়ে ব্যস্ত আছেন, তাদের মাহফিল থেকে বয়ান শ্রবণ করা, বুঝা করা কষ্ট হবে। ইমাম বুখারী রহ. ইলমের এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার পূর্বে বুঝা শর্ত দান করেছেন। এলেম হাসিল করলেই হয় না, আগে যেটা হাসিল করেছে, সেটা বুঝতে হয়। বুঝে যদি হাসিল করে, তাহলে এটা উপকার বেশি দেয়। বুখারী শরীফের মধ্যে একটা অধ্যায় আছে, অধ্যায়টির নাম হল-

باب الفهم والعلم

অর্থাৎ বুঝতে হবে, শিখতে হবে। বুঝ যদি কারো নষ্ট হয়, তখন নষ্ট কাজের দিকে সে অগ্রসর হয়। আর বুঝ যদি কারো সুন্দর হয়, তাহলে তার বুঝ দিয়ে সুন্দর সুন্দর কাজ করার তাওফীক হয়। দেখেন না? না বুঝলে যা হয়। একজনে দেয়ালে লিখে রাখছে, ‘এখানে পেশাব করিবেন না, করিলে ৫০/১০০ টাকা জরিমানা। কিন্তু একজন সেটা বুঝছে, ‘এখানে পেশাব করিবেন, না করিলে ১০০ টাকা জরিমানা। যদি এরকম পড়ে, আর এরকম বুঝে, তাহলে সে কি জরিমানা থেকে বাঁচবে, না জরিমানায় পড়বে? নিশ্চয় পড়বে। এ রকম পড়ে, বুঝে অনেক কষ্ট করে পেশাব করেছে, কিন্তু যারা এগুলো লেখে, তারা তো পাশে ওঁৎ পেতে বসে থাকে, যদি কেউ এটা করে তাহলে তাকে ধরবে।

তো তারা লোকটিকে দেখে গিয়ে ধরে ফেলে জিজ্ঞেস করছে, যে লেখা দেখলি আবার এখানে পেশাব করলি? লোকটা বলছে, পড়ছি বলেই তো করছি। কেন? বলে, টাকা নাই পকেটে, পেশাব না করলে টাকা দোবো কিভাবে? এই যে হালত এরকম হালত কিন্তু বুঝের কমতির কারণে হয়ে থাকে। হাটহাজারী হযরত পর্দার কথা বলেছেন, ড. কামালের মতো সংবিধান প্রণেতা শিক্ষিত মানুষও হাটহাজারী হযরতের বয়ান উল্টা বুঝেছে। হাটহাজারীর হযরত কি সন্তানকে স্কুল কলেজে পাঠাতে নিষেধ করেছেন? না। বরং জেনা-ব্যভিচারের পরিবেশের দিতে নিষেধ করেছেন। শিক্ষার জন্য নিষেধ করেনননি, বরং চরিত্র ধ্বংস করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু এই বুঝটা বুঝা লাগবে তো। এজন্য ওয়াজ মাহফিলে শুধু আসলেই হয় না, ওয়াজ বুঝতে হয়। অবশ্য আমাদের দেশে ওয়াজ বুঝা এবং ওয়াজ থেকে ইলম হাসিল করার মাদ্দা এখন খুব কম। এখন মানুষ শিখতে যায় না, বুঝতেও যায়না। ওয়াজ শুনতে যায়। শুনতে গিয়ে যদি মজা লাগে তো শুনে। আর যদি মজা না লাগে, তাহলে চলে যায়। যদি প্রশ্ন করেন, কিরে, কই যাও? বলে আজকে জমাতে পারছেনা, এজন্য চলে যাচ্ছি।

ওয়াজ কি জমানোর জন্য না শিখানোর জন্য? ওয়াজ কি শোনার জন্য না শিখার জন্য, বোঝার জন্য? তো যেটা বোঝার জন্য এবং শেখার জন্য, সেটা যদি শুনতে গিয়ে শুধু মোবাইল টিপাটিপি করেন, তাহলে কি বুঝতে পারবেন? না। হয়তো মনে মনে ভাবতে পারেন যে, ভুল ধরা শুরু করছেন। ভুল ধরবে কে আপনাকে? ভুল তো আপনাকে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ কবর থেকে উঠে এসে ধরবেন না। ধরবেন না। কিন্তু নবীজি সা. কি ভুল ধরেননি? ধরেছেন। নবীজি সা. বসে আছেন, একজন নবীজির সা. সামনে নামাজ পড়ছেন। নামাজ শেষ হয়ে গেলে নবীজী বলেন,

قم فصَلِّ فإنك لم تُصَلِّ

অর্থাৎ এই সাহাবি, দাঁড়াও আবার নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়ো নাই। সাহাবী আবার দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন। নামাজ শেষ হলে আল্লাহর নবী সা. বলেন,

قم فصَلِّ فإنك لم تُصَلِّ

অর্থাৎ হে সাহাবী, আবার নামাজ পড়ো, তুমি নামাজ পড়ো নাই। সাহাবী আবার দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন, আল্লাহর নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. আবার বলেন,

قم فصَلِّ فإنك لم تُصَلِّ

আবার নামাজ পড়ো তুমি কেমন যেন নামাজ পড়ো নাই। সাহাবী তিন বারের মাথায় এবার বলে, হে আল্লাহর নবী, সা. আমি তো এরচেয়ে বেশি কিছু জানিনা, আপনি দেখিয়ে দেন আমি কেমনে নামাজ পড়বো? এবার আল্লাহর রাসূল নামাজ শুরু করার আগে বললেন,

صلُّوا كما رأيتُموني أصلِّي

অর্থাৎ যারা যারা আমার নামাজ দেখছো, এইভাবে এইভাবে নামাজ পড়ো, যেভাবে আমাকে তোমরা নামাজ পড়তে দেখলে। আজকেও যদি আল্লাহর রাসূল সা. থাকতেন, তাহলে তিনি বলতেন, এই ভাবে ওয়াজ শোনোনি, একটু দিল দিয়ে ওয়াজ শোনো। আবু দাউদ শরীফের রেওয়ায়াত كتاب اللباس এক সাহাবী নামাজ পড়েছেন, আল্লাহর রাসূল সা. নামাজ শেষ হয়ে গেলে বললেন, আবার নামাজ পড়ো, তোমার নামাজ হয়নি। সাহাবী আবার নামাজ পড়েছেন। নবীজি আবার বললেন, নামাজ হয়নি আবার পড়ো। সাহাবী বললেন  হে আল্লাহর নবী, যেভাবে শিখেছিলাম, সেভাবেই তো পড়েছি, তাহলে আপনি শিখিয়ে দেন কেমনে নামাজ পড়বো? আল্লাহর নবী বললেন, তোমার নামাজ ঠিকআছে, সূরা-কিরাত সব ঠিক আছে, দু’আও ঠিক আছে। কিয়াম (দাঁড়ানো) জলসা (বসা), কাইফিয়্যাতে সালাত (নামাজের নিয়ম) সব সঠিক আছে। কিন্তু তুমি যে তোমার ইযার (লুঙ্গী) টাখনুর নিচে নামিয়ে রেখে নামাজ পড়ছো। আর ঐ নামাজ আল্লাহ কবুল করেন না, যে নামাজে ইযার টাখনুর নিচে নামিয়ে পড়া হয়। তুমি টাখনুর নিচটাকে খুলে দাও এবং কাপড়টা উপরে উঠিয়ে নাও, তারপর নামাজ পড়ো, তাহলে তোমার নামাজ আল্লাহর কাছে চলে যাবে।

নবীজি সা. বললেন, শুধুমাত্র ইযার টাখনুর নিচে আছে, তো নামাজ হয় নাই। আমাদের মুসল্লীদেরকে যদি আমরা বলি, তাহলে তারা বলবে, কতকাল ধরে পড়ছি, আজকে হুজুর নতুন হাদিস নিয়ে আসছে। সে তার মতোই পড়তে থাকবে। তোমরা যারা টাখনুর নিচে প্যান্ট পড়ে নামাজ পড়ো, তোমাদের নামাজ হবে না। যুবকরা, বাড়ি গিয়ে প্যান্ট কাটবে। অনেকে বলবে যে হুজুর, ওয়াজ টা শুনলাম প্যান্ট কাটা যাবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন। আমীন!

এভাবে নবীজি সামান্য প্যান্টের ব্যাপারেও ভুল ধরিয়ে দিতেন। কেউ ওযু করছে, তো বলতেন আবারও ওযু করো। এই জিম্মাদারীটা পালন করার জন্য, নতুন করে এই পৃথিবীতে আর কোনো পায়গম্বর আগমন করবেন না। এই জিম্মাদারীটা উলামায়ে কেরাম কেয়ামত পর্যন্ত পালন করবেন। তারা বলবেন, এই, এভাবে তাবলীগ করোনা, এভাবে করো। এই, এভাবে পীরালি করোনা, গাঞ্জা হাতে নিয়ে, এভাবে করো। এই লালসালু, ডেগ নিয়ে মারেফাতগিরি করোনা। কারণ তারা হলো উম্মতের পুলিশ, বুযুর্গরা বলেছেন, আলেমরা হলেন আল্লাহর চাবুক। তোমাকে ভুল ধরিয়ে দেবে মানে, এটা চাবুক মারলো। এই মানার মাদ্দাটাও এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। বলে  তারা কে লোকমা দেওয়ার? আমি কি কম বুঝি? মানতে হবে, বুঝে নিতে হবে কেন লোকমা দিলো? ইলমটা হাসিল করতে হবে, জমা রাখতে হবে, জিন্দেগী গড়তে হবে, হায়াতের হিসাব মিলাতে হবে। সারা বছর শেষে হালখাতা করে বছরের হিসাব মিলালে, ক্যাশ বক্সের টাকা মিলিয়ে হিসাব করলে, সারাদিন বেচাকেনায় কতটুকু লাভ হয়েছে, সেটার হিসাব করলে বছরের হালখাতা করে প্রতি বছরের হিসাব মিলালে। তোমার যিন্দেগীর একটা হিসাব আছে, সেটা কি মিলিয়েছো?

কয়দিন হায়াৎ আছে তুমি জানোনা। এই হাজার হাজার জনতার মধ্যে আগামীকাল বেঁচে থাকবেন এমন কেউ কি আছেন যে জানেন? একজনেরও এই নিশ্চয়তা নেই যে, আগামীকাল বাঁচবো। তো আগামীকাল যদি আমার মৃত্যুর দিন হয়, তাহলে এখন আমার দোকান গোটানোর শেষ সময়। তাই যদি হয়, তাহলে বছরের হিসাব মিলালে বছর শেষে, চাকরির হিসাব মিলালো মাস শেষে, ক্যাশ বাক্স টাকাগুলোর হিসাব মিলালে কত টাকা লাভ কত টাকা লস? কত নগদ কত বাকি? মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি জিন্দেগি হিসাব মিলবে না? যারা জিন্দেগীর হিসাব মিলিয়ে সামনে চলবে তারা চালাক মুমিন। যদি দিনের বেলায় গুনাহ হয়ে থাকে, তো সন্ধ্যাবেলায় তাওবা করে ফেলবে। আল্লাহকে বলবে, মাওলা, বুঝি নাই। গুনাহ করে করে আমি আমার জিন্দেগীর হিসাব-বিকাশে খলত-মলত লাগিয়ে ফেলেছি। আয়ে আল্লাহ, আপনি আমাকে মাফ করে দেন। প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলায় হিসাব মিলাবে। নিজের হিসাব নিকাশ করে বুঝে-শুনে কদম কদম যারা চলবে, এরকম চতুর-চালাক বান্দাগুলোকে আল্লাহ পাক জান্নাতের চিরদিনের সালতানাত চিরদিনের জন্য দান করবে।

জান্নাতে যাবার সখ সবার কি আছে? যদি থেকে থাকে, তাহলে সম্বল লাগবেনা? বেশি সম্বল লাগবে না। আল্লাহ পাক বলেন, জান্নাতের ভেতরের ছোট জান্নাত না, বড় জান্নাত চিরদিনের জন্য তোমার জায়গা বানিয়ে দেবো, আমার দীদারও তোমাকে দেবো। দুটি কাজ করো-

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا

অর্থাৎ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।
সুরা কাহাফ, আয়াত: ১০৭-১০৮

যে সমস্ত বান্দারা আল্লাহর দৌলতে ঈমান এবং নেক আমল করবে। এ দুটি সম্বল যারা দুনিয়াতে মজবুত করে অর্জন করতে পারবে, তাদেরকে আল্লাহ পাক চিরদিনের জন্য ফিরদাউস জান্নাতে তাদেরকে জায়গা দান করবেন। ঐ ফিররদাউস জান্নাত থেকে কখনও বাহির হতে হবে না। জনম জনম ফিরদাউস জান্নাতে তারা থাকবে। শর্ত হলো, আল্লাহর পছন্দের ঈমান এবং নেক আমল লাগবে। আল্লাহর পছন্দের ঈমান হলো, শিরক মুক্ত ঈমান, আর পছন্দের আমল হলো এখলাস যুক্ত ও সুন্নাত সজ্জিত আমল। ইহুদী-নাসারারা দুটি গ্রুপ মুসলমানদের পেছনে ছেড়েছে। ১. মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার জন্য। ২. আরেকটি ছেড়েছে মুসলমানদের আমল নষ্ট করার জন্য।

মৌলিক কিছু আক্বায়েদ বা বিশ্বাস যার নাম ঈমাম, সেটা নষ্ট করার জন্য ইহুদী-নাছারাদের দালালরা মুসলমানদের পেছনে লেগে আছে। ঈমানকে নষ্ট করে দেবে। অথচ আমরা তো মনে করি, মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই মুমিন। কিন্তু বাস্তবতা হলো আক্বীদা সংরক্ষণের মাধ্যমেই মুমিন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সা. শান এবং আল্লাহ ও রাসুলের সা. উপর পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাসের মাধ্যমেই মুমিন। সামান্য যদি ভেজাল হয় অর্থাৎ ইসলামের যে মৌলিক আক্বীদাগুলো আছে, এর একটার মধ্যে যদি গন্ডগোল লেগে যায়, তাহলে তার নাম ঈমানদারের দপ্তর থেকে কাটা পড়ে যায়। যেমন আল্লাহকে মানে ঠিক, কিন্তু নবীজির সা. শানে আক্রমণকারী, কুরআনের শানে আক্রমনকারী, সাহাবায়ে কেরামের শানে আক্রমণকারী মানেই আক্বীদায় গন্ডগোল। শানে সাহাবার উপর আক্রমণ করেছে, তো ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে।

যেমন মুসলমানদের মধ্যে শিয়ারাও কিন্তু এক জাত মুসলমান। কিছু কিছু শিয়ারাও মুসলমান, কিছু কিছু শিয়ারা বড় বড় মুহাদ্দিস। اسماء الرجال কিতাবের ভেতরে মুহাদ্দিসদের জীবনী আলোচনা করে মুহাক্কিক উলামারা যাদেরকে ইনসাফওয়ালা নিকাহের হাদিস বর্ণনাকারী হিসেবে যাদেরকে সনদ দান করেছেন, তাদের মধ্যে এমনও বর্ণনাকারী রয়েছে যিনি শিয়া কিন্তু বড় উঁচু পায়ার মুত্তাকি। তাদের নামের শেষে লেখা আছে সে ثقة شيعة অর্থাৎ হাদিস বর্ণনাকারী এক নাম্বার বর্ণানাকারী কিন্তু শিয়া। এই শিয়া কাফের শিয়া না। মুত্তাকি শিয়া।

কিছু কিছু শিয়া আছে শিয়ায়ে তাফযিলিয়্যাহ। অর্থাৎ নবীজির সা. কাছাকাছি যুগের শিয়া। তাদের আকিদা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সাথে বড়ই মিল। দলে তারা শিয়া কিন্তু আসলে মুসলমান, এরাও জান্নাতি। কিন্তু শিয়াদের মধ্যে এমন কিছু শিয়া আছে, যারা মনে করে জিবরাঈল আ. নবুওয়াত নিয়ে আসার কথা ছিলো হযরত আলীর কাছে। কিন্তু ভুলে চলে গেছে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’র কাছে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে, আকিদায়ে ইমামত অর্থাৎ তাদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রাসূলদের থেকে আফজাল (উত্তম)। এ রকম আক্বীদা যারা লালন করে, আক্বীদা গন্ডগোল লাগার কারণে তারাও কাফের। ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। শিয়াদের ইমাম খোমেনীও তাঁর কিতাবে লিখেছে যে, কিছু কিছু শিয়া আছে, যাদের আকিদা হলো, জিবরাঈইল আ. আসমান থেকে কুরআন আয়াত নিয়ে আসছেন মোট ১৭ হাজার। তার ভেতরে আপাতত দুনিয়াতে ৬৬৬৬ আয়াত আছে, আর বাকিগুলো তাদের ১২ নাম্বার ইমাম নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। উনাদের ১২ নাম্বার ইমাম মরে নাই, তারা মনে করেন, তিনি হলেন ইমাম মাহদী। তিনি এখনো মারা যাননি, উধাও হয়ে গেছেন। আবার তিনি কেয়ামতের পূর্বে যখন দুনিয়াতে আসবেন তো ৬৬৬৬ এর সাথে বাকি যেগুলো এনে জোড়া দেবেন। ফলে কোরআন শরীফের আয়াত হবে ১৭ হাজার। এই বিশ্বাস এর মাধ্যমে কিন্তু আল্লাহ্ পাকের ওয়াদাকে অস্বীকার করে ফেলেছে। কারণ আল্লাহ পাক কেয়ামত পর্যন্ত জমিনে কুরআনের হেফাজতের জিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ বলেন,

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

অর্থ: আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
সুরা হিজর, আয়াত: ৯

অর্থাৎ কুরআনের প্রতিটি নুকতা, প্রতিটি হরফের হিফাযত করার যিম্মাদারী আল্লাহর। এ কারণে কুরআনকে বানিয়ে পড়লে ধরা খেয়ে যায়। আগের জামানায় যেমন কোরআন বানিয়ে পড়লে ধরা খেয়েছে, ঠিক এ জামানায়ও ধরা খায়। যেমন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। কোরআন শরীফের আয়াত বানিয়ে ওয়াতে তেলাওয়াত করেছে, তো ধরা খেয়ে গেছে। আপনারা যারা ইউটিউবে ওয়াজ দেখার ভক্ত, তারা দেখেছেন। কোরআনের হিফাযতের জিম্মাদার কে বলেন? আল্লাহ। এখানে যারা হাজী সাহেব আছেন, হজ্বে গেছেন, তারা দেখেছেন, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা’র কবরের কাছে কাউকে যেতে দেয় না। কেন? কারণ শিয়া মুসলমান যারা হজ্বে যায়, তারা হযরত আয়েশা সিদ্দিকার রা. কবরের পাশে গিয়ে পাথর মারে অথবা থুথু মারে। কারণ ওরা মনে করে আয়েশা সিদ্দিকাকে রা. কবর থেকে উঠিয়ে দুররা মারা দরকার। কারণ ওরা মনে করে আম্মাজান আয়েশা রা. জেনা করেছেন। নাউযুবিল্লাহ। যেখানে আয়েশা সিদ্দিকার রা. পবিত্রতার ব্যাপারে আল্লাহ পাক আয়াতে কুরআন নাজিল করেছেন। তাহলে তারা হযরত আয়েশার রা. সম্মানে আক্রমণ করে, কেমন যেন কুরআনের আয়াত অস্বীকার করেছে, তারা বেঈমান।

শিয়ারা পাইকারী হারে কাফের না। কিন্তু কিছু কিছু শিয়া আছে, যারা হযরত আবু বকর রা. ও হযরত ওমরকে রা. অসম্মানকারীরা। তারা মনে করে, নবীর পরে খলিফা হওয়ার যোগ্য একমাত্র আলী রা.। হযরত সিদ্দিকে আকবারের রা. কবর বরাবর ও হযরত ওমরের কবর বরাবর আর আগে শিয়ারা থুথু মারছে। তার মানে নবীর পরে শায়খাইন রা. দুই খলীফার উপর তাদের আস্থা নেই। যারা সাহাবাদের উপর আস্থা রাখে না, যারা শানে সাহাবায় আক্রমনকারী, যারা নবীর নবুওয়াতে আক্রমণকারী, কুরআনে আক্রমণকারী তাদের ঈমান থাকবে না।

এমন বদ আক্বীদা রাখার কারণে যেমন কিছু কিছু শিয়া কাফের, ঠিক এরকম কিছু মানুষ মুসলমানদের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেছে, কিন্তু ওরা মাজারে গিয়ে সিজদা দেওয়া মুসলমান, কবরে গিয়ে সিজদা দেওয়ার মুসলমান, পীরের পায়ে সিজদা দেওয়া মুসলমান। ওরা মনে করে, ওদের খাজার দাম অনেক বেশি, ওদের খাজার কাছে সব ইলম আছে, নবীর কাছেও যা নেই। তারা বলে, আল্লাহ রাসুলকে দিয়ে খালি হয়ে গেছে, আর রাসুল খাজাকে দিয়ে খালি হয়ে গেছে। এখন নাকি নবীর সা. কাছে কিছু নেই। সব আছে খাজার কাছে। এরকম আকিদা সংরক্ষণ করলে জন্ম নিবে তো মুসলমানের ঔরসে, কিন্তু ঈমানদারের লিস্টে নাম থাকবে না। কারণ আক্বীদায় গণ্ডগোল হয়ে গেছে, আকিদা নষ্ট হয়ে গেছে, বেঈমান হয়ে গেছে। ঈমান এত সস্তা জিনিস না। এটা শেখার জিনিষ। মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলে ঈমান শেখা যায় না। আমরা দুর্বল। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ঈমান শিখায় না, যে কারণে ঈমানদারের ঘরে জন্মগ্রহণ করে নাস্তিক-মুরতাদ হচ্ছে, কাদিয়ানী হচ্ছে, খ্রিষ্টান হয়ে যাচ্ছে।

মনে করে লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ আর নবীর সা. নবুওয়াত মানলেই বুঝি ঈমান। কামেল না। নবীকে সা. মানে, কিন্তু নবীর সা. খতমে নবুওয়াত মানে না, সেও বেঈমান। এ কারণে কাদিয়ানীরা মসজিদ বানায়, ওরা নামাজ পড়ে, কুরআন শরীফ পড়ে, কিন্তু এরপরও ওরা কাফের। কাদিয়ানীরা কাফের। কেন কাফের? কাদিয়ানী তো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মানে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ মানে, কুরআন মানে, নামায-রোযা মানে, হজ্ব-যাকাত মানে, শুধু এতোটুকু বিশ্বাস মানে না যে, নবীজির শেষ নবী। ওরা মনে করে মির্জা গোলাম কাদিয়ানীও নবী। আক্বীদায় গণ্ডগোল লেগে গেছে, ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে। নবীজির সা. পরে আর কোনো নবী হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত আর কোন মুমিন নতুন নবীর মুরিদ হতে পারবেনা, উম্মত হতে পারবেনা। নবী তো নবী, বিশ্বনবী। আপনার আমার নবী শুধু মানুষের নবী না, জ্বীনেরও নবী, মাখলুকাতের নবী, পশু-পাখিরও নবী, এজন্য পশুপাখিরাও নবীজির সা. প্রতি ভালোবাসা দেখাতো।

নবীজি সা. পাহাড়েরও নবী, এজন্য পাহাড়ও নবীজিকে সা. মহব্বত করতো। হাবিবে কিবরিয়া, মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ বাহির থেকে যখন মদিনায় ঢুকতেন, তখন এমন পথ দিয়ে ঢুকতেন, যে পথ দিয়ে ওহুদ পাহাড় দেখা যায়, কারণ ওহুদ পাহাড় নবীজিকে সা. মহব্বত করতেন। ঘটনাচক্রে একদিন আল্লাহর রাসুল সা. বাহিরে গেছেন আল্লাহর রাসূল। কিন্তু মদীনায় যে পথ দিয়ে ঢুকছেন, সে পথ দিয়ে ওহুদ পাহাড় দেখা যায়না। সাথে সাথেই নবীজির সা. কাছে জিবরাঈল আ. এসে বলেন, ওগো সরকার, এই পথে কেন হাটছেন? ওহুদ পাহাড় আপনার প্রেমে কেঁদে জারজার। নবীজী সা. বলেন, জিবরাঈল, ওহুদ পাহাড় কাঁদে কেন? জিবরাঈল আ. বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি মদীনায় যখন ওহুদ দেখে দেখে ঢোকেন, তখন ওহুদও তো আপনাকে দেখে। আজকে আপনি মদিনা মদীনায় ঢুকছেন, কিন্তু ওহুদ তো আপনাকে দেখে না। এ কারনে ওহুদ পাহাড় কান্না শুরু করেছে। আল্লাহর নবী সা. শুধুমাত্র উম্মতের হক আদায় করেছেন তা না, বরং পাহাড়ের হকও আদায় করেছেন।

নবীজি সা. এবার কাফেলা নিয়ে ঘুরে আবার ঐ পথ ধরেছেন, যে পথ দিয়ে গেলে ওহুদ পাহাড় দেখা যায়। যখন পাহাড়ের পাদদেশে আসলেন তো দাঁড়িয়ে বলেন, هذا احد হে সাহাবীরা এটা হলো ওহুদ يحبني وانا احبه সে আমাকে ভালোবাসে আমি রাসূলও তাকে ভালোবাসি। এজন্য নবীপ্রেমিক যারা মদিনায় যায়, তারা প্রতিদিন ফজরের পরে মসজিদে নববী থেকে যখন বের হয়, তখন তাদের দেখে কিছু গাড়ি ওহুদ ওহুদ বলে ডাকতে থাকে। তারা বলে, আরে হাজি, ওহুদ দেখতে যাবে নাকি? ওহুদকে মুমিনরাও ভালোবাসে, ওহুদও মুমিনদেরকে ভালোবাসে। এই হল তোমার-আমার নবীর নবুওয়াত। কিন্তু আজ নবীজির সা. নবুওয়াত আক্রান্ত। খতমে নবুয়াত আক্রান্ত। তোমার নবীর নবুওয়াতের উপর শিয়াদের আক্রমণ আছে, কাদিয়ানীদের আক্রমণ আছে। তোমার সন্তান তোমার ঘরে জন্ম নিয়ে ভিন্নধর্মী হয়ে যাচ্ছে, অথচ তোমার নবী সা. কেয়ামত পর্যন্ত নবী, ওহুদেরও নবী, চাঁদেরও নবী, সূর্যেরও নবী। এজন্য আকাশের চাঁদের দিকে নবীজি সা. আংগুল তুলে ইশারা করলে চাঁদ নবীর সা. ইক্তেদা (অনুসরণ) করেছে, নবীজির সা. নির্দেশ পালন করেছে। বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদসহ সব হাদিসের কিতাবে রেওয়ায়েতে আছে,

এক মহিলা নবীজির সা. কাছে নিজের গোলাম নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী, এটা আমার গোলাম। আমরা জানি, আপনি একটা খেজুর গাছের সাথে হেলান দিয়ে খুৎবা দেন। অথচ আমার এই গোলামটা খুব সুন্দর একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রি। আমার দিল চায়, এই কাঠমিস্ত্রি গোলাম আপনার জন্য কাঠের একটা মিম্বার বানিয়ে দেবে। যে মিম্বারে দাঁড়িয়ে আপনি খুৎবা দেবেন। সারোয়ারে দু-আলম মহিলাকে মিম্বার বানানোর অনুমতি দিলেন, ঠিক আছে তুমি বানাও। অতঃপর কাঠমিস্ত্রির সুন্দর করে একটা মিম্বার বানিয়ে নিয়ে সরওয়ারে দু-আলমের কাছে আসছেন, ইয়াওমুল জুমআ শুক্রবার নবীজি সা. মিম্বারটি ব্যবহার করে বয়ান করবেন। সাহাবীরা মিম্বারটি মসজিদে নববীতে ঢুকালে হাবিবে কিবরিয়া খেজুর গাছের বরাবর মিম্বারটি রাখতে বললেন। আল্লাহর রাসূল মেম্বার এর কাছাকাছি আসছেন, এবার মিম্বারের উঠে বসে বয়ান করবেন, হঠাৎ পেছনের খেজুর গাছটি হাউমাউ করে মানুষের বাচ্চার মত কান্না শুরু করে দিলো।

বুখারী শরীফে ইমাম বুখারি হাদিস এনেছেন, উট আওয়াজ দিলে যেমন হেনহেনানী আওয়াজ হয়, এমন একটা আওয়াজ খেজুর গাছ থেকে বের হয়ে আসছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের রা. আরেকটি রেওয়ায়েতে এসেছে, মানুষের বাচ্চার মত খেজুর গাছ কান্না শুরু করে দিলো। হাবিবে কিবরিয়া, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. মসজিদে আছেন। খেজুর গাছের কান্না শুনে আবু বকর রা. আলাদা কান্না শুরু করে দিলেন, ওমরও রা. চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দিলেন। খেজুর গাছও কাঁদে, সাহাবায়ে কেরামও চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাঁদে। এক রেওয়ায়েতে আছে, আল্লাহর রাসুল মিম্বারে বসে খেজুর গাছের দিকে নিজের কাঁধ দিয়ে বলেন, এই খেজুর গাছ, কাঁদো কেন? আরেক রেওয়াতে আছে, নবীজির হাত দিয়ে খেজুর গাছকে ইশারা দিয়ে বলছেন, কাদিস কেন খেজুর গাছ? সামনে আসো। খেজুর গাছ দৌঁড়িয়ে নবীজির সা. কাছে চলে আসছে।

আর এক হাদীসে আছে সরওয়ারে দু-আলম নবীজি সা. কাঠের বানানো মিম্বারে দাঁড়ানো থেকে নিজেকে বিরত রেখে খেজুর গাছের কাছে গিয়ে গাছটি জড়িয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে নিলেন। মা যেমন সন্তানকে বুকের মধ্যে চেপে জড়িয়ে ধরে, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ খেজুর গাছকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত বুক থেকে ছাড়াননি, যতক্ষণ পর্যন্ত খেজুর গাছের কান্না বন্ধ না হয়েছে। আল্লাহর নবী এবার খেজুর গাছকে বললেন, এই মরা খেজুর গাছ, কাঁদিস না। আমি তোমার জন্য দোয়া করবো, তুমি কেয়ামত পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। তুমি জীবিত হয়ে যাবে। তোমাতে আবার খেজুর ধরবে। শুধু এক মৌসুম খেজুর ধরবেনা, বরং সারা বছর তোমার মধ্যে খেজুর আসবে। তুমি মসজিদে নববীর কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকবে। সারা বছর পুরো দুনিয়ার মুসলমানরা মসজিদে নববীতে আসবে, আর তোমার খেজুর ছিঁড়ে ছিঁড়ে কিয়ামত পর্যন্ত খাবে, আর তোমার জন্য দোয়া করবে। আর এটা হবে من اعجاز النبي অর্থাৎ নবীজির সা. মু’জেযার অংশ হবে এটা। আর এটা সম্ভব অসম্ভব নয়। কারণ আবু দাউদ শরীফের মধ্যে আছে, খেজুর গাছ মানুষের মত। মানুষের দুই হাত কেটে ফেললে, যেমন মানুষ মরে না, দুই পা কেটে ফেললে, যেমন মানুষ মরে না। দুই হাত-পা ছাড়া মানুষ দুনিয়াতে অসংখ্য আছে। কিন্তু গলা ছাড়া মানুষ নাই, মাথা ছাড়া মানুষ নাই। মাথা কেটে ফেললে, ঐ মানুষ আর বাঁচে না, ঠিক খেজুর গাছের সিফাত (গুণ) হলো এটা যে, খেজুর গাছের হাত কাটলে মরে না। খেজুর গাছের দুই দিক থেকে কাটলে এটা মরে না। এ জন্য দেখেন না, শীত মৌসুমে এক বছর এক দিকে কাটে, আরেক বছর অন্য দিকে কাটে। রস দেয়, কিন্তু মরে না। কিন্তু যে খেজুর গাছের মাথা কেটে ফেলা হয় সেটা আর বাঁচে না। মাথা কাটা অন্য গাছ বাঁচে কিন্তু মাথা কাটা খেজুর গাছ বাঁচে না। এ জন্য খেজুর গাছকে মানুষের সাথে তুলনা করেছেন আল্লাহর নবী সা.। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সা. মরা খেজুর গাছকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে খেজুর গাছ, আমি দোয়া করব তুমি আবার খেজুর দেবে, জিবিত হবে, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তবুও কেঁদো না। এরপরও খেজুর গাছের কান্না বন্ধ হয় না। অনেক লম্বা ইতিহাস। সর্বশেষ নবীজি সা. বললেন, ঠিক আছে তুমি আমার সাথে জান্নাতে যাবে, আমি জান্নাতে তোমার সাথে হেলান দিয়ে খুৎবা দেবো। খেজুর গাছে কান্না এবার থেমে গেছে। কিছু কিছু প্রাণীও জান্নাতে যাবে। কিছু কিছু উলামায়ে কেরাম বলেন, আসাবে কাহাফের কুকুরও জান্নাতে যাবে, কিন্তু কুকুর যে জান্নাতে যাবে, কুকুরের আকৃতিতে নয়, বরং আল্লাহ কুকুরটিকে মানুষের আকৃতি দিয়ে জান্নাতে দেবেন। যে গাধাটায় নবীজি সা. সাওয়ার হয়েছেন, সে গাধা জান্নাতে যাবে, যে উটে নবীজি সা. সাওয়ার হয়েছেন, সে উট জান্নাতে যাবে, যে ছাগলের স্তনে নবীজি সা. হাতে রেখেছেন, সে ছাগল জান্নাতে যাবে, খেজুর গাছও জান্নাতে যাবে। এই খেজুর গাছের ভেতর ঈমান আছে, সে নবীজিকে সা. ভালোবাসে। কিন্তু মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে যারা রাসুলকে গালি দেয়, ‘সন্ত্রাসী মোহাম্মদ’ কয়, ওদের কি ঈমান আছে? নিশ্চয় না। তাহলে মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই শুধু ঈমানদার হওয়া যায়, নাকি ঈমান শিখতে হয়। ঈমান শিখবে কার কাছ থেকে? কেয়ামত পর্যন্ত আলেমরাই মানুষকে ঈমান শিখিবে। দাওয়াতে তাবলীগের দায়িরা ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে ঈমান শিখাবে। এই ঈমান শিখানোর চর্চা যেন বন্ধ হয়ে যায়, এজন্য ইহুদী-খ্রিষ্টানরা দাওয়াতে তাবলীগের ভেতরে ঢুকে দুই টুকরা করে দিয়েছে।

এমন চক্রান্ত করেছে যে, যে মুসলমানরা একই দস্তরখানে খানা খেয়েছে, নিজে না খেয়ে অপর ভাইয়ের ধাক্কা দিয়ে দিয়ে পেট ভরিয়ে খাইয়ে দিয়েছে, সেই সেই ভাইয়ে ভাইয়ে এমন দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিয়েছে যে, এক ভাই আরেক ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে, পহেলা ডিসেম্বরের মত রক্তাক্ত করে ফেলছে। তালিবুল ইলম ছাত্ররা পঙ্গু হয়ে গেছে, হাত-পা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। ইহুদী এই চক্রান্ত থেকে দাওয়াতে তাবলীগকে আল্লাহ হেফাজত করেন। বলুন আমীন!

কেয়ামত পর্যন্ত ঈমান ও ঈমানের দাওয়াত, ইসলামের তাবলীগ, ইসলামের দাওয়াত যমীনে ছিলো, আছে, থাকবে। এটা কখনও কোনো ব্যক্তি নির্ভরশীল হবে না, এক সা’দের উপর ইসলাম নির্ভর করে না। সা’দ সাহেবকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বিশ্ব ইজদেমার ময়দানে দুআ করাবো, কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু সা’দ সাহেবকে উলামায়ে কেরামের নদারদের (নেতৃত্বে) আসতে হবে দারুল উলূমের সদারতে আসতে হবে। উলামায়ে কেরামের সদারত ছাড়া বাংলাদেশে আসার কল্পনাও করোনা। আমরা জাতিকে ঈমান শিখাবো, সা’দের মারামারি শিখাবো না। ইসলাম আখলাক নিয়ে আগমন করেছে, ক্ষমা নিয়ে আগমন করেছে, চরিত্র নিয়ে আগমণ করেছে, সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ নিয়ে ইসলাম আগমন করে নাই, তবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করতে ইসলাম জিহাদও এনেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমান জিহাদের তামান্না করে। কারণ এটা ১৭ কোটি মুসলমানের দেশ, এদেশে কেউ যদি ঈমান মিটাতে চায়, ইসলাম মিটাতে চায়, কুরআন মিটাতে চায়, এ দেশ থেকে কেউ যদি ইসলাম কে বের করে দিতে চায়, তাড়িয়ে দিতে চায়, তবে এ দেশের মানুষ রাজনৈতিক দলের ভেদাভেদ ভুলে যাবে, সেদিন ঈমান আর ইসলাম যিন্দা করার জন্য আবার ৭১ এর শপথ নিয়ে মাঠে আসবে, আসবে, আসবে।

মুহতারাম হাযেরীন! ঈমান কি জন্মসূত্রে শেখা যায়? না কি শিখতে হয়? তাহলে নিজের ঈমান শিখতে তবলীগে যাবেন। চিল্লা লাগাবেন। ইজতেমায় যাবেন। ইনশাল্লাহ। আল্লাহ কবুল করেন।আমীন!

ঈমান শুধু নিজে শিখবেন? না নিজের ছেলে মেয়েকে শিখাবেন? ইভটিজিং দিয়ে ঈমান শিখানো যাবেনা। বেপর্দা দিয়ে ঈমান শিখানো যাবে না। ঈমান শিখতে মাদরাসা লাগবে, তাবলীগ লাগবে এবং হক্কানী পীরের খানকাহ লাগবে। কিন্তু ইহুদী-খ্রিষ্টানরা এগুলো বন্ধ করে দিতে চায়। তামাউফের নামে গ্রুপ ছেড়েছে নামাজ ছাড়া, রোজা ছাড়া, মারেফতের নামে পীর ছেড়েছে সুন্নাত ছাড়া, পাগড়ী ছাড়া, গাঞ্জাওয়ালা, শালুওয়ালা, লেংটা বাবা। আমল নষ্ট করার জন্য গ্রুপ ছেড়েছে। এক দিকে ঈমানের উপর আক্রমণ, আরেকদিকে আমলের উপর আক্রমণ। কিন্তু জান্নাতে যেতে গেলে ঈমান লাগবে,আমলও লাগবে। এক নাম্বার ঈমান লাগবে, যে ঈমানে শিরকের দুর্গন্ধ নেই। আর আমল অল্প হলেও লাগবে এখলাসওয়ালা আমল। আমল ও তো শিখতে হয়, দাওয়াত ও তাবলীগ আমলও শেখায়। দাওয়াতুল হকও আমল শেখায়। দেওনা হযরতের মাদরাসায় যাবেন। যারা দেওনা হযরতের সাথে ইসলাহী তাআল্লুক, আমার সাথে এসলাহী তাআল্লুক তারা দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় যাবেন। আমলও তো শিখতে হয়, আমল না শিখলে ঐ সাহাবীর মতো কাপড় টাখনুর নিচে কাপড় পড়ে নামাজ পড়ে ফেলবে, আমল না শিখলে এলোমেলো করে ফেলবে।

ওয়াজ তো শুনতে আসছেন, আবার মাঝে বসে বসে অ্যানসার দাও, ওয়াজ ভালো হয়েছে, খারাপ হয়েছে, গতকাল থেকে ভালো হয়েছে, কত কাল থেকে খারাপ হয়েছে ইত্যাদী ইত্যাদী। এই অ্যানসার দাও তুমি না? এখন যদি গেটের ভিতরে এসে ফিরিশতারা এসে বলেন, সবাই দুই রাকাত করে নামাজ পড়ে দেখিয়ে গেটের বাহিরে যাও, সাথে যদি বিতরের নামাজসহ দেখাতে বলে, তাহলে এখানে শত শত যুবক আছো, যারা বিতরের দুআ কুনুত জানো না। তাদের কাছে দোয়া কুনুত তো হলো মঙ্গলগ্রহের জিনিস, দুনিয়ার জিনিস না। তুমি তো পারো না মিয়া। এই যে আমলের দুর্বলতাগুলো তোমাকে-আমাকে ঘিরে ফেলেছে, এমন দুর্বলতা সহকারে জান্নাতের আশা করা কি যায়? এই দুর্বলতা কি রাখা যাবে বলো? নিশ্চয়ই না। এক নাম্বার ঈমান, এক নাম্বার আমল লিল্লাহিয়্যাতওয়ালা আমল, এখলাসওয়ালা আমল, সুন্নাত তরিকার আমল শিখতে হবে। আমল যদি সুন্নাত তরিকায় না পড়ে, তাহলে তার আমল আমল হয় না। ঈদের দিনে রোজা রাখলে রোজা হয়? না। এইজন্য তো রাসুল সা. ঈদের দিনে রোজা রাখেননি। কারণ ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম। আবার তিনি সোমবারের রোযা রেখেছেন। কেন? কারণ তিনি সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন। তাহলে কি নবীর সা. জন্মদিনে ঈদ পালন করা জায়েয হবে? অথচ ওরা কিভাবে তোমাকে ধোকা দেয়? আবার তারা বলে, এই পৃথিবীর শ্রেষ্ট ঈদ, বিশ্বনবীর জন্ম ঈদ। এই জন্মদিন যদি ঈদ হতো, তাহলে কি নবী সা. রোজা রাখতেন? তাহলে তো রোযা নবীজি সা. মঙ্গলবারে আদায় করতেন। আমল সেভাবে করতে হবে, যেভাবে নবীজি সা. শিখিয়েছেন। সুন্নাতকে সুন্নাত মত করে আমল করতে হয়, নফলকেও সুন্নাত মত করতে হয়। হার (সকল) এবাদত সুন্নাত তরিকায় করতে হয়। এখলাম ও সুন্নাত তরিকায় যারা আমল করবে, তাদের ছোট আমল তাদেরকে জান্নাত দেবে। তাদের ছোট্ট তাদের নাজাতের ওসিলা হবে। ঐ কথাটাই আল্লাহ বলেন, নাজাত ও জান্নাতের জন্য দুই জিনিষ অর্জন করতে হবে,

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا

অর্থাৎ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।
সুরা কাহাফ, আয়াত: ১০৭-১০৮

শপথ নিলাম, ঈমান কোনো ইহুদী-নাছারার হাতে ছাড়বো না। ইনশাআল্লাহ। আমল খেলাফে সুন্নাত করবো না। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর জন্য আমল করবো। আর ঈমান-আমল রক্ষা করার জন্য কখনো যদি নিজের সর্বোস্ব বিতরণ করতে হয়, তাও বিতরণ করতে প্রস্তুত আছি, থাকবো। মওত পর্যন্ত থাকবো। ইনশাআল্লাহ। ইহুদীর দালাল, নাসারার দালাল, কাফের বিজাতীর দালাল, কেউ যদি আমাদের ঈমান চুরি করতে আসে, তাহলে তাকে উপযুক্ত জবাব দেবো। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তুমি কবুল করে নাও। আমীন!

সূত্র: টিয়াদী যুব সমাজ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজীত মাহফিল। https://youtu.be/irPAmWaDY2U

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.