Home > জায়েয-নাজায়েয > নবীজির মত ঠোট নাড়ানো কি জায়েয?

নবীজির মত ঠোট নাড়ানো কি জায়েয?

উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক সাহেব কোনো একটি মাহফিলে নবীজি সা. এর ঠোট নাড়ানোর দৃশ্য দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এটাকে নিয়ে জেনারেল শিক্ষিত মহলে ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা গেছে। অনেকে তো এটাকে রীতিমত ধর্মীয় অনূভুতিতে আঘাত বলে চালিয়ে দিয়েছেন। অনেকে এটা নবী সা. এর সাথে বেয়াদবি বলে বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ এ কাজটি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীন থেকে সহিহ হাদিসে প্রমাণিত। সহিহ বুখারীর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী নাযিলের সময় তা মুখস্থ করতে বেশ কষ্ট স্বীকার করতেন এবং প্রায়ই তিনি তাঁর উভয় ঠোঁট নাড়াতেন। তখন আল্লাহ তা’য়ালা বললেন,

لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ

অর্থ: তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনার জিহ্বা তার সাথে নাড়বেন না’।
সুরা কিয়ামাহ আয়াত: ১৬

فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَأَنَا أُحَرِّكُهُمَا لَكُمْ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُحَرِّكُهُمَا‏.‏ وَقَالَ سَعِيدٌ أَنَا أُحَرِّكُهُمَا كَمَا رَأَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يُحَرِّكُهُمَا‏.‏ فَحَرَّكَ شَفَتَيْهِ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি তোমাকে দেখানোর জন্য ঠোঁট দুটি নাড়ছি, যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাড়াতেন। ’ সা’ঈদ রহ. (ইবনে আব্বাস রা. এর ছাত্রদের ) বললেন, আমি ইবনু ’আব্বাস রা. কে যেভাবে তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়াতে দেখেছি, সেভাবেই আমার ঠোঁট দুটি নাড়াচ্ছি। ’ এই বলে তিনি তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়ালেন।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫

হাদিসটি ইমাম তয়ালিসী, আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে জারীর,ইবনুল মুনযির, ইবনে আবী হাকেম,ইবনুল আম্বারী,তাবরানী,ইবনে মারদুইয়াহ,আবু নাঈম,বাইহাকীসহ অনেক মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন। আর এটাই ইমাম শা’বী, হাসান বসরী, কাতাদাহ,মুজাহিদ,যাহ্হাকসহ অনেক তাবেয়ীগণের মত।

প্রিয় পাঠক, অত্র হাদীসে দেখা যাচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে ঠোঁট নাড়াতেন সেটা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: তাঁর ছাত্রদের দেখিয়েছেন। আবার তাঁর ছাত্র সাঈদ ইবনে জুবায়ের রহ.ও ইবনে আব্বাস রা. থেকে শিখে তাঁর ছাত্রদেরকে নবীজির ঠোঁট নাড়ানো অনুকরণ করে দেখিয়েছেন। এ জন্য এই হাদীসকে
الحديث المسلسل بتحريك الشفتين
আলহাদীসুল মুসালসাল বিতাহরীকিশ শাফাতাইন বলা হয়।

ছাত্রদের শিখানোর উদ্দেশ্যে এমন ধারাবাহিক কর্মপন্থা দোষের কিছু নয়, বরং এটা সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে চলে আসা একটি ধারাবাহিক আমল। যদি এটা ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত হতো, তাহলে নবীজি সা. এর গুরুত্বপূর্ণ সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. এটা করতেন না।

কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, নবী সা. এর সাহাবায়ে কেরাম যেটাকে দ্বীনি আমল মনে করতেন, আজ ১৪ শ’ বছর পর নামধারী তথাকথিত মুসলিমরা সেটাকে ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত বলে চেচিয়ে বেড়াচ্ছেন। হায় মুর্খতা! হায় জাহালাত!

উপরন্তু নবীজি সা. নিজে বলেছেন,

صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي

অর্থাৎ যে ভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সালাত আদায় কর।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস: ৬০০৮

রাসুলুল্লাহ সা. কিভাবে নামাজ পড়েছেন, কিভাবে রুকু করেছেন, কিভাবে সেজদা করেছেন, কোন সময় কিভাবে বসতেন, কোন সময় কতটুকু আওয়াজে কথা বলতেন, এগুলো নকল করা অপরাধ তো দুরের কথা, বরং নবীজির পক্ষ থেকে আদেশ। এতগুলো বিষয় নকল করলে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হলো ঠোট নাড়ানো নকল করলে?

প্রশ্ন:

অনেকে প্রশ্ন তুলছেন যে, হাজার বছর আগে নবীজী সা. কিভাবে ঠোট নাড়িয়েছেন, সেটা মামুনুল হক সাহেব কেমনে দেখায়? মামুনুল হক সাহেব তো নবীজিকে সরাসরি ঠোট নাড়াতে দেখেননি।

উত্তর:

হাজার বছর আগে নবীজি সা. কিভাবে নামাজ পড়তেন, সেটা আপনি কেমনে বুঝবেন? আপনি তো নবীজির সা. নামাজ পড়ার দৃশ্য নিজের চোখে দেখেননি। নিশ্চয় কোনো শিক্ষকের মাধ্যমে প্যাক্টিকালি জেনেছেন। ঠিক তেমনি নবীজির সা. ঠোট নাড়ানোর বিষয়টিও সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে শিক্ষকের ধারাবাহিকতায় আজও প্যাক্টিকালি বিদ্যমান। যেমন নবীজি সা. কিভাবে মুসাফাহা করতেন এটাও ধারাবাহিকভাবে প্যাক্টিকালি আজও উম্মতের মাঝে বিদ্যমান। এমনিভাবে নবীজি সা. এর প্রায় ১০ লক্ষ হাদিস সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীনদের কেরাম, আয়েম্মায়ে কেরাম, মুজতাহিদীন এবং উলামায়ে কেরামের দ্বারা সংরক্ষিত, ঠিক তদ্রুপ নবীজি সা. এর ঠোঁট নাড়ানোর দৃশ্য তাদের মাধ্যমেই সংরক্ষিত।

 

লেখক

মুফতী রিজওয়ান রফিকী

www.rijwanrafiqi.com

Check Also

পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরা হারাম।

  عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.