Home > হিজবুত তাওহীদ > ধর্ম নিয়ে মন্তব্য:

ধর্ম নিয়ে মন্তব্য:

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের সকল উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হলো, হেযবুত তওহীদ আগাগোড়া কাফের। তাদের কুফরীর জ্বলন্ত প্রমাণ হিসাবে এ অধ্যায়টি ভালো করে পড়ুন। প্রথমে জেনে রাখা উচিৎ, পৃথিবীতে সত্যধর্ম হলো একমাত্র ইসলাম। কিন্তু হেযবুত তওহীদ ইসলাম ধর্মকে সত্য বলে মানতেই রাজি না, বরং নিজেদের মনমত ধর্ম সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলে লিখেছে। চলুন সংক্ষেপে আগে তাদের দাবিগুলো দেখে নেওয়া যাক। তারা কী বলে?
১. ধর্ম মানে ধারণ করা।
২. সনাতন ধর্মই কুরআনের ধর্ম।
৩. সকল ধর্ম আল্লাহর।
৪. সকল ধর্ম সত্য।
৫. কোনো ধর্মের ভিত্তি পাল্টায়নি।
৬. সকল ধর্ম মানা যাবে।
৮. আত্মার উন্নতি সব ধর্মেই আছে।
৯. যেকোন ধর্ম মানলেই শান্তি আসবে।
১০. অমুসলিমদের অপবিত্র বলা মু্র্খতা।
১১. সব ধর্মের লোকেরা ভাই ভাই।
১২. সকল ধর্ম পালন করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে।
১৩. অমুসলিমদের কাফের বলা যাবে না।
১৪. কারও ধর্ম পাল্টাতে হেযবুত তওহীদ আসেনি।
১৫. সব ধর্ম পালন করার আহ্বান।
১৬. সকল ধর্মের ঐক্য করাই আল্লাহ’র চাহিদা।
১৭. সকল ধর্মের অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ করা হেযবুত তওহীদের মিশন।

চলুন প্রত্যেকটির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। তবে

ধর্ম মানে কী ধারণ করা?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ধর্ম হলো মানুষ যা ধারণ করে। তারা উদহরণ দিতে গিয়েও বলে থাকে,
ধর্ম শব্দের অর্থ ধারণ করা। কোন বস্তু, প্রাণী বা শক্তি যে বৈশিষ্ট্য বা গুণ ধারণ করে সেটাই হচ্ছে তার ধর্ম। আগুনে ধর্ম পোড়ানো। পোড়ানোর ক্ষমতা হারালে সে তার ধর্ম হারালো। মানুষের ধর্ম কী? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের কষ্ট দুঃখ হৃদয় অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সেই ধার্মিক। অথচ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সূরা কালাম শাস্ত্র মুখস্ত বলতে পারে, নামাজ-রোজা, পূজা, প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক। – সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৫

প্রচলিত ধারণা হচ্ছে- যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামাজ-রোজা প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক। এটা সঠিক ধারণা নয়। মানুষের প্রকৃত ধর্ম আসলে কি? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখ কষ্ট হৃদয় অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সে-ই ধার্মিক। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৪৩

অর্থাৎ তারা বলতে চায় যে, বিধানাবলী সম্বলিত মতবাদকে ধর্ম বলা ঠিক নয়, বরং ধর্ম হলো মানুষেল কষ্ট অনুভব করে দূর করার চেষ্টা করা।

জবাব:
ধর্ম শব্দটি বাংলা। যে কারণে ধর্মের সংজ্ঞা কী তা দেখতে বাংলা অভিধান দেখতে হবে। চলুন ধর্ম শব্দটির ব্যাপারে কী বলা আছে দেখে নেওয়া যাক। বাংলা একাডেমীতে লেখা আছে-
ধর্ম: ১. ঈশ্বর ও উপাসনা পদ্ধতির বিষয়ে মতবাদ। ২. কর্তব্য ও অকর্তব্য সম্বন্ধে জ্ঞান (মানুষের ধর্ম); সদাচার সুনীতি ও আচরণবিধি। ৩. জীব বা বস্তুর নিজস্ব গুন’ (পদার্থের ধর্ম) ৪. প্রবৃত্তি (পশুধর্ম) -আধুনিক বাংলা একাডেমী, পৃ. ৬৯১

প্রিয় পাঠক, বাংলা একাডেমীতে সুস্পষ্টভাবে মানুষের ধর্মের যে অর্থ করা হয়েছে, তা হলো, ঈশ্বর ও উপাসনা পদ্ধতির বিষয়ে মতবাদ, কর্তব্য ও অকর্তব্য সম্বন্ধে জ্ঞান, সদাচার সুনীতি ও আচরণবিধি। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এটাকে ভুল দাবি করে নিজেরা কী আসলে চরমভাবে মুর্খতার পরিচয় দিলেন না? বরং তারা ধর্মের যে সংজ্ঞা করে থাকেন, অর্থাৎ গুন সেটাকে পদার্থের ধর্ম, মানুষের ধর্ম নয়। অবশ্য মানুষের কষ্ট অনুভব করা ধর্মের একটি বিধান। কিন্তু সেটাকেই ধর্ম বানিয়ে প্রচার করা বাংলা সম্পর্কেও চরম অজ্ঞতার পরিচায়ক। যাদের বাংলা জ্ঞানও নেই, ইসলামিক জ্ঞানও নেই সেই তারাই আবার ইসলামের প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী বলে প্রচার করা কতবড় মূর্খতা। ভাবা যায়?

সকল ধর্ম আল্লাহর ধর্ম?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্মই আল্লাহর ধর্ম। তারা লিখেছে,

এক. সনাতন ধর্মই কুরআনের ধর্ম:
উপমহাদেশে প্রচলিত এই ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম কোরআনে যেটাকে বলা হোয়েছে দ্বীনুল কাইয়্যেমা,শ্বাশ্বত,চিরন্তন ধর্ম অর্থাৎ তওহীদ। -শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ৬২-৬৩

ভারতীয় ধর্মের অনুসারীদের তারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী জিজ্ঞাসা করলে তার জবাব দেন সনাতন ধর্ম। সনাতন এবং কাইয়্যেমা অকার্থাবোধক- যা চিরদিন প্রবাহমান, চিরন্তন ও শাশ্বত এবং তা ঐ তওহিদ। -তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ২৬

দুই. সকল ধর্ম আল্লাহর:
পৃথিবীতে এসলাম ধর্ম ছাড়া অন্যান্য যে ধর্মগুলি রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই কোন না কোন নবীর (আ:) অনুসারী। -শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ৮৪

কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকেই বিভেদের প্রাচীর বানিয়ে রেখেছে। তারা অন্য ধর্মগুলোকে মিথ্যা এবং সেই ধর্মের অনুসারীদেরকে জাহান্নামী, কাফের বলে গালিগালাজ করে। অথচ সকল ধর্মই আল্লাহর প্রেরিত ধর্মপ্রবর্তকগণও তাই। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৩

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্ম তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈনসহ সকল ধর্মই আল্লাহ প্রদত্ত।

ইসলাম কী বলে?
কোনটা আল্লাহর ধর্ম আর কোনটা তাঁর ধর্ম না এটা হেযবুত তওহীদ কিভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারে? এটার জবাব তো একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই সা. বলে দেবেন। এখন দেখার বিষয় হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. কি পৃথিবীর সকল ধর্মকে আল্লাহ’র ধর্ম বলে ঘোষণা দিয়েছেন? নিশ্চয় না। তাহলে হেযবুত তওহীদ এ কথা পেলো কোথায়? নিশ্চয় শয়তান তাদের উপর সওয়ার হয়ে এটা জানিয়েছে। তা না হলে প্রচলিত ধর্মগুলোতে যেখানে শিরকের ছড়াছড়ি, কেউ তেত্রিশ কোটি দেবত্র পুজারী, কেউ ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী, কেউ বস্তুবাদে বিশ্বাসী তাদের এসব বাতিল ধর্মকে আল্লাহর ধর্ম বলা কী চরম ধৃষ্টতা নয়? হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মসহ প্রচলিত অন্য কোনো ধর্মকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. আল্লাহ’র ধর্ম বলে জানেননি, সেহেতু এটার জবাব দেওয়াও প্রয়োজন অনুভব করছি না। তবে ইহুদী ও খ্রিষ্ট ধর্ম সম্পর্কে বর্ণিত আছে এদুটো আল্লাহর ধর্ম। কিন্তু সে ধর্মগুলো এখন আর তাওহীদের শিক্ষা দেয় না, বরং এ দুটোতেও এখন শিরকের সয়লাব। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ
ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে। তারা তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদিগকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারা তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র। -সুরা তাওবা : ৩০-৩১

সুতরাং বুঝা গেলো, প্রচলিত ইহুদী ও খ্রিষ্ট মতবাদও এখন আর সেই আল্লাহ’র প্রেরিত ধর্ম নয়। সুতরাং ইসলাম ছাড়া প্রচলিত কোনো ধর্মই এখন আর আল্লাহ’র প্রেরিত ধর্ম নয়। এরপরও এগুলোকে আল্লাহ’র ধর্ম বলে প্রচার করা আল্লাহ’র উপর মিথ্যা অপবাদের শামিল। এদের সম্পর্কে মহান রব বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أُوْلَـئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الأَشْهَادُ هَـؤُلاء الَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَى رَبِّهِمْ أَلاَ لَعْنَةُ اللّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
আর তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখো, যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে। -সুরা হুদ : ১৮

সকল ধর্ম কী সত্য?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্মই সত্য ধর্ম। কোনো ধর্মই মিথ্যা নয়। তারা লিখেছে,
প্রকৃত সত্য হলো- স্রষ্টা প্রদত্ত সকল ধর্মই সত্যধর্ম। এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর যে কোনোটি মানুষ মেনে চলতে পারে। তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। -হেযবুত তওহীদের ওয়েব সাইট, ‘মানব সমাজে ধর্ম-অধর্ম ও শান্তি-অশান্তির চিরন্তন দ্বন্দ্ব’ নামক প্রবন্ধ। দৈনিক বজ্রশক্তি’ ২/২/২০১৬ ঈ:

কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকেই বিভেদের প্রাচীর বানিয়ে রেখেছে। তারা অন্য ধর্মগুলোকে মিথ্যা এবং সেই ধর্মের অনুসারীদেরকে জাহান্নামী, কাফের বলে গালিগালাজ করে। অথচ সকল ধর্মই আল্লাহর প্রেরিত ধর্মপ্রবর্তকগণও তাই। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৩

উপরোক্ত বক্তব্যগুলো দিয়ে হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়, পৃথিবীর সকল ধর্ম সত্য ধর্ম। কোনো ধর্মের ভিত্তি পাল্টায়নি।

ইসলাম কী বলে?
এক. পৃথিবিতে নবিজি মুহাম্মাদ সাঃ আনীত ইসলামের পূর্বে অনেক ধর্ম ছিল এবং এখনও আছে। ইসলামের পূর্বে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে এমন যেসব ধর্ম ইসলাম আবির্ভাবকালে বিদ্যমান ছিলো, সেগুলোর মধ্যে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্ট ধর্ম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে এ ছাড়া অন্যান্য ধর্ম যেমন বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, জৈন ধর্ম ইত্যাদি ধর্ম আসমানী কিতাব নাযিলকৃত ধর্ম নয়, বরং এসবগুলোই মানবরচিত ধর্ম। ফলে এ সব ধর্ম বাতিল হওয়া নিয়ে পবিত্র কুরআনে কোনো আলোচনা করা হয়নি, প্রয়োজনও পড়েনি। কিন্তু তৎকালিন সময়ে আল্লাহর দেওয়া ইয়াহুদী ও খ্রিষ্ট ধর্মই বিস্তৃত পরিমন্ডলে বিরাজমান ছিল। বিধায় পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে উক্ত দুই ধর্ম বিকৃত না অবিকৃত এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত দুই ধর্মের অনুসারীরা তাদের আসমানী কিতাবের বিভিন্ন বিধানকে পরিবর্তন করে ফেলেছে, পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সেই কথা বলেছেন। ফলে সেসব ধর্ম আর অক্ষত থাকেনি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
َوَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُمْ بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাকিয়ে কিতাব পাঠ করে যাতে তোমরা মনে কর তারা কিতাব থেকেই পাঠ করছে। অথছ তারা যা আবৃত্তি করছে তা আদৌ কিতাব নয় এবং তারা বলে যে, এসব কথা আল্লাহর তরফ থেকে আগত। অথচ এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নয়। তারা বলে যে, এটি আল্লাহর কথা অথচ এসব আল্লাহর কথা নয়। আর তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। -সুরা আলে ইমরান : ৭৮

أَفَتَطْمَعُونَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
তোমরা কি এই আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে। যখন তাদের একদল জেনে বুঝে আল্লাহর কালাম শ্রবণ করে তারপর তার তা বিকৃত করে। অথচ তারা তা জানে। -সুরা বাকারা : ৭৫

َوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ
সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য পাওয়ার জন্য বলে, ‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাদের হাত যা রচনা করে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্য শাস্তি তাদের। -সুরা বাকারা : ৭৯

উপরন্তু হাদিসে পাকে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
يا معشر المسلمين، كيف تسألون أهل الكتاب، وكتابكم الذي أنزل على نبيه صلى الله عليه وسلم أحدث الأخبار بالله، تقرءونه لم يشب، وقد حدثكم الله أن أهل الكتاب بدلوا ما كتب الله وغيروا بأيديهم الكتاب، فقالوا: هو من عند الله ليشتروا به ثمنا قليلا، أفلا ينهاكم ما جاءكم من العلم عن مساءلتهم، ولا والله ما رأينا منهم رجلا قط يسألكم عن الذي أنزل عليكم
হে মুসলিম সমাজ, কি করে তোমরা আহলে কিতাবদের নিকট জিজ্ঞাসা কর? অথচ আল্লাহ তাঁর নবীর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তা আল্লাহ সম্পর্কিত নবতর তথ্য সম্বলিত, যা তোমরা তিলাওয়াত করছ এবং যার মধ্যে মিথ্যার কোন সংমিশ্রণ নেই। তদুপরি আল্লাহ তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, আহলে কিতাবরা আল্লাহ যা লিখে দিয়েছেন, তা পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং নিজ হাতেসেইে কিতাবের বিকৃতি সাধন করে তা দিয়ে তুচ্ছ মূল্যের উদ্দেশ্যে প্রচার করেছে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ। তোমাদেরকে প্রদত্ত মহাজ্ঞান কি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করার ব্যাপারে তোমাদের বাঁধা দিয়ে রাখতে পারে না? আল্লাহর শপথ! তাদের একজনকেও আমি কখনো তোমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে দেখিনি। -সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ২৬৮৫

সুতরাং বোঝা গেলো, ইসলাম ইসলাম পূর্ব অন্য কোন ধর্ম অবিকৃত থাকেনি। এ কথা খোদ হেযবুত তওহীদও বলে থাকে। সকল ধর্মের বিরোধীতা করতে গিয়ে তারা লিখেছে,
পূর্ববর্তী সব নবীদের (আ:) উপর অবতীর্ণ দীনগুলো ছিল স্থান ও কালের প্রয়োজনের মধ্যে সীমিত এবং ওগুলোর ভারসাম্য ছিল ওই পটভূমির প্রেক্ষিতে সীমিত। কিন্তু ওই দীনগুলোর ভারসাম্যও মানুষ নষ্ট করে ফেলেছে। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ১১

সকল ধর্ম গুলো বহু আগেই মানবকল্যাণের উপযোগিতা হারিয়েছিল। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫১

অন্যান্য ধর্মগুলো হাজার হাজার বছরে এমনিতেই এতখানি বিকৃত হয়ে গেছে যে, তা দিয়ে কোনো জাতির সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। -হলি আর্টিজেনের পর : পৃ. ১৭

পূর্ববর্তী কেতাবগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে? পৃ. ৬

সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদও জানে যে, পূর্ববর্তী সকল ধর্মই বিকৃত হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু সে ধর্মগুলোকে সত্য বলে হেযবুত তওহীদ কী নিজেদের মানোসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণ করতে চায়? সুতরাং আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হলাম যে, ইসলাম পূর্ব সকল ধর্ম বিকৃত।

দুই. আর এজন্যই মহান আল্লাহ পাক সকল ধর্মের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্যই তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সাঃ কে প্রেরণ করেছিলেন। মহান রব বলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্ম সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। -সুরা তাওবা : ৩৩

তিন. মহান আল্লাহ পূর্ববর্তী সমস্ত ধর্মকে রহিত করে নবিজি মুহাম্মাদ সাঃ-এর ধর্ম ইসলামকে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ পূর্বের আসমানী ধর্মগুলোও অবিকৃত বা উপযুক্ত না থাকায় মহান আল্লাহ নতুন ধর্ম তথা নবিজির সা. মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম পাঠালেন। মহান আল্লাহ তাআলা পূর্বযুগে আল্লাহ প্রদত্ত্ব সমস্ত ধর্মাবলম্বীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ عَلَى فَتْرَةٍ مِّنَ الرُّسُلِ أَن تَقُولُواْ مَا جَاءنَا مِن بَشِيرٍ وَلاَ نَذِيرٍ فَقَدْ جَاءكُم بَشِيرٌ وَنَذِيرٌ وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রসূল আগমণ করেছেন, যিনি পয়গম্বরদের বিরতির পর তোমাদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেন-যাতে তোমরা একথা বলতে না পার যে, আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শক আগমন করে নি। অতএব, তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শক আগমন করেননি। অতএব, তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শক এসে গেছেন। -সুরা মায়িদা : ১৯

অর্থাৎ সমস্ত আহলে কিতাব তথা আল্লাহর প্রেরিত সমস্ত ধর্মের লোকদের কাছে নবীজি মুহাম্মাদ সা. কে পাঠানোর সংবাদ পৌঁছিয়ে তাদেরকে দ্বীন ইসলাম গ্রহণের প্রতি আহ্বান করেন। আর পৃথিবীতে চলমান সকল ধর্মকে রহিত করে মহান আল্লাহ শুধুমাত্র ইসলামকেই মনোনিত করে ঘোষণা দেন,
الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। -সুরা মায়েদা : ৩

উপরোক্ত আয়াতে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মকেই মনোনীত করেছেন মহান আল্লাহ পাক। আয়াতে ‘আল্লাহর মনোনীত’ শব্দ বলেছেন, তার মানেই হলো ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহর মনোনীত নয়। চরমভাবে বিকৃতির কারণে যে ধর্মগুলো আল্লাহর মনোনীত নয়, সেগুলো সঠিক ও সত্য হয় কিভাবে? হেযবুত তওহীদের কাছে এ প্রশ্ন থাকলো। সুতরাং বুঝা গেলো, আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্ম ছাড়া ভিন্ন কোনো ধর্মই সত্য নয়।

কোনো ধর্মের ভিত্তি পাল্টায়নি?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের বক্তব্য হলো, ‘(সকল ধর্মের) স্থান-কাল ও পাত্রের বিভিন্নতার কারণে দীনের অর্থাৎ জীবনব্যবস্থার আইন-কানুন দন্ডবিধি এবাদতের পদ্ধতি ইত্যাদি বিভিন্ন হয়েছে কিন্তু ভিত্তি,মূলমন্ত্র একচুলও বদলায়নি। সেটা সবসময় একই থেকেছে।আল্লাহর সার্বভৌমত্ব তাওহীদ। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৯

অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, সকল ধর্ম আপন অবস্থায় স্বীয় মূলভিত্তি তথা তাওহীদের উপর অবিচল রয়েছে।

ইসলাম কী বলে?
পৃথিবীর কোনো ধর্মই তাওহীদের উপর নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদী ধর্ম তো বর্তমানের শিরকের কারখানা। এটা সবারই জানা। তেত্রিশ কোটি খোদাসমেত তাদের কার্যক্রম চলমান। উপরন্তু আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত ইহুদী-খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীরাও তাওহীদ ফেলে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে আছে। এদের সম্পর্কে মহান রব বলেন,
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ
ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে। তারা তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদিগকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারা তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র। -সুরা তাওবা : ৩০-৩১

উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পৃথিবীর কোনো ধর্মেরই ভিত্তি তথা তাওহীদ ঠিক নেই। অথচ এই আয়াতের প্রতি সুস্পষ্ট বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হেযবুত তওহীদ আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যা পরিস্কার কুফরি।

সকল ধর্ম মানা যাবে?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্মই সত্য ধর্ম এবং এ ধর্মগুলোর যেকোনো একটা পালন করা যাবে। তারা লিখেছে,
মানবসমাজে একটি ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, ‘পৃথিবীতে এতগুলো ধর্মের মধ্যে মাত্র একটি ধর্ম সত্য হতে পারে (!) অন্য সকল ধর্ম মিথ্যা এবং ঐ সত্য ধর্মই কেবল মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম।’ এ ধারণা প্রচলিত থাকায় সকল ধর্মের অনুসারীরাই দাবি করে যে, কেবল তাদের ধর্মই সত্যধর্ম। এটা ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মেনে চলে স্বর্গে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো- স্রষ্টা প্রদত্ত সকল ধর্মই সত্যধর্ম। এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর যে কোনোটি মানুষ মেনে চলতে পারে। তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। -হেযবুত তওহীদের তাদের মুখপাত্র ’দৈনিক বজ্রশক্তি’ ২/২/২০১৬ ঈ: তারিখে “মানবসমাজে ধর্ম-অধর্ম ও শান্তি-অশান্তির চিরন্তন দ্বন্দ্ব” শিরোনামে একটি একটি লম্বা লেখার প্যারা।

স্বর্গে যাবার জন্য আল্লাহ যে বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে বলেছেন সেগুলি বিশ্বাস করতে হবে। এখানেই প্রশ্ন, ইসলামের শেষ সংস্করণ এসে যাওয়ার পরও ইসলাম গ্রহণ না করে, পূর্ববর্তী ধর্মবিশ্বাসে স্থির থেকে কেউ কি স্বর্গে যেতে পারবেন? এর জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, অবশ্যই তাদেরও জান্নাতে যাওয়ার পথ খোলা আছে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তাদেরকে শেষ নবী ও শেষ গ্রন্থ কোর’আনকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। এটি শাশ্বত সত্য যে, বিশ্বাসী হিসাবে পরিগণ্য হতে হলে ধর্মের কয়েকটি মূল বিষয়ের উপর বিশ্বাস থাকতেই হবে। সেগুলি হচ্ছে: আল্লাহর উপর, মালায়েকদের উপর, সকল ঐশীগ্রন্থের উপর, সকল নবী-রসুলগণের উপর, কেয়ামত দিবসের উপর, ভাগ্যের ভালো-মন্দের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ এ কথার উপর এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর। তাই শেষ নবী এবং শেষ কেতাবের উপর অবিশ্বাস রেখে জান্নাতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই তেমনিভাবে পূর্ববর্তী কোনো নবী-রসুল-অবতার এবং তাঁদের আনীত কেতাবের প্রতিও অবিশ্বাস রেখে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে লাভ নেই। -হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ। দৈনিক দেশের পত্র, সাপ্তাহিক সংকলন, সংখ্যা-২৪ পৃ. ২৫

নাজ্জাশী মুসলমান না হয়েও শেষ নবীকে আত্মা থেকে বিশ্বাস করে তাঁকে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য জান্নাতবাসী হয়েছেন।
সূত্র: সূত্র: হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ।

আর এজন্যই তারা সব ধর্ম পালন করার কথা বলে থাকে। তারা লিখেছে,
আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এক স্রষ্টার বান্দা হিসাবে তাঁর বিধানের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা বলছি। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৭৫

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, পৃথিবীর সকল ধর্ম পালন করা যাবে।

ইসলাম কী বলে?
ইসলামে অন্য কোনো ধর্ম পালন করার বৈধতা নেই। আখেরি নবি হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাঃ আগমনের পর ইসলামই একমাত্র পালনীয় ধর্ম। নিন্মে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ্য করা হলো,
এক. ইসলামই মানতে হবে : রাসুলুল্লাহ সা. আগমনের পর পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং বর্তমানে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম পালন করা জায়েযই নেই। এর সুস্পষ্ট পোমাণ নিন্মোক্ত আয়াত। মহান রব তাঁর রাসুল সাঃ কেই কত শক্ত ভাষায় জানিয়ে দিলেন,
وَلَئِنْ أَتَيْتَ الَّذِينَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ بِكُلِّ آيَةٍ مَّا تَبِعُواْ قِبْلَتَكَ وَمَا أَنتَ بِتَابِعٍ قِبْلَتَهُمْ وَمَا بَعْضُهُم بِتَابِعٍ قِبْلَةَ بَعْضٍ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءهُم مِّن بَعْدِ مَا جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ إِنَّكَ إِذَاً لَّمِنَ الظَّالِمِينَ
যদি আপনি আহলে কিতাবদের কাছে সমুদয় নিদর্শন উপস্থাপন করেন, তবুও তারা আপনার কেবলা মেনে নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন না। তারাও একে অন্যের কেবলা মানে না। যদি আপনি তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, সে জ্ঞানলাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয় আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। -সুরা বাকারা : ১৪৫

প্রিয় পাঠক, একটু ভেবে দেখুন, মাত্র একটা ব্যাপার কিবলা, সেটাই ইহুদী-খ্রিস্টানদের মনমত গ্রহণ করাকেও আল্লাহ সহ্য করেননি, তাঁর প্রিয় বান্দাকেও শক্ত ভাষায় নিষেধ করেছেন, সেখানে তাদের পুরো ধর্মকে কিভাবে মানা যায়? সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলাম ব্যতিত অন্য কোনো ধর্ম পালন করা যাবে না। এজন্য মহান আল্লাহ পৃথিবীর সকল ঈমানদারকে লক্ষ্য করে নির্দেশ জারি করে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সুরা বাকারা : ২০৮

উক্ত আয়াতে মহান রব শুধু মুসলমান হতে বলেন নি, বরং ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু কী তাই? বরং ইসলাম ধর্ম ব্যাতিত অন্য ধর্ম পালন করলে কি হবে সেটা মহান আল্লাহ খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে ধমক সুরে আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَفَغَيْرَ دِينِ اللّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। -সুরা আলে ইমরান : ৮৩

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। -সুরা আলে ইমরান : ৮৫

উক্ত তিনটি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ইসলাম না মানার পরিনতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা জাহান্নামী।

দুই. হযরত মুহাম্মাদ সা. কেও অনুসরণ করতে হবে, শুধু বিশ্বাস করাই যথেষ্ট নয়। হযরত মুহাম্মাদ সাঃ কেও মানার নির্দেশ প্রদান করে বিশ্ববাসীকে আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوْا الرَّسُوْلَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيعُوْهُ تَهْتَدُوْا وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
বলো, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে তার দায়িত্বের জন্য তিনি দায়ী এবং তোমাদের দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তাহ’লে তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। বস্ত্ততঃ রাসূলের উপর দায়িত্ব হ’ল কেবল সুস্পষ্টভাবে (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দেওয়া। -সুরা নূর : ৫৪

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রাসূল (মুহাম্মাদ স:) তোমাদে কাছে যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা গ্ৰহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। -সুরা হাশর : ৭

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ يَهْدِي بِهِ اللّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلاَمِ وَيُخْرِجُهُم مِّنِ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন। -সুরা মায়িদা : ১৪-১৬

উক্ত আয়াত দু’টিতে মহান আল্লাহ নবি মুহাম্মাদ সাঃ-এর আনীত সকল বিধিনিষেধ মানতে আদেশ করেছেন। অতএব ইসলাম ধর্ম কবুল করা ও মান্য করা ও নবি মুহাম্মাদ সাঃ কে মান্য করা সকল মুমিনের জন্য ফরজ। পাশাপাশি নবিজি সাঃ থেকেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, হযরত আব্দু্ল্লাহ বিন সাবিত রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন,
والذي نفسُ محمدٍ بيدِه لو أصبح فيكم موسى ثم اتبعتموه وتركتموني لضلَلتم أنتم حظِّي من الأممِ وأنا حظُّكم من النبيينَ
সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি মুসাও আ. জীবিত হয়ে এসে যান, আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসারী হয়ে যাও এবং আমাকে বর্জন কর,তাহলে অবশ্যই তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। নিশ্চয় উম্মতের মধ্যে তোমরা আমার অংশ এবং নবীগণের মধ্যে আমি তোমাদের অংশ। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ১ পৃ. ১৭৮

তিন. পবিত্র কুরআনও মানতে হবে:
আল্লাহর নাযিলকৃত অবিকৃত আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস রাখা সকল মৃমিনের জন্য জরুরি। তবে বর্তমানে সকল ধর্মগ্রন্থ বিকৃত। সকল ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য করে মহান রব বলেন,
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। -সুরা মায়িদা : ১৫

فَالَّذِيْنَ آمَنُوْا بِهِ وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِيْ أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ،
অতএব যারা তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাকে শত্রু থেকে প্রতিরোধ করেছে ও সাহায্য করেছে এবং সেই জ্যোতির (কুরআনের) অনুসরণ করেছে যা তার সাথে নাযিল হয়েছে, তারাই হ’ল সফলকাম’। -সুরা আ‘রাফ : ১৫৭

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى
আর যে আমার উপদেশ (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সংকটময়। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে, হে রব্ব! তুমি আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম! আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তােমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ সেভাবেই তােমাকে ভুলে যাওয়া হবে। -সুরা তোহা : ১২৪-১২৬

উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হলো, যারা কুরআনের আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাদেরকে কিয়ামতে মহান রব অন্ধ করে উপস্থিত করবেন। সুতরাং কুরআন না মেনে অন্য ধর্ম মানা যাবে এটা সরাসরি কুরআন বিরোধী কথা।

চার. সাহাবায়ে কেরামকেও রা. মানতে হবে:
মুমিনদের জন্য সাহাবাদের ঈমানই নমুনা। এজন্য তাঁদের মত ঈমান আনতে মহান রব নির্দেশ দিয়ে বলেন,
آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ
অন্যান্যরা (সাহাবারা) যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো। -সুরা বাকারা : ১৩

وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءتْ مَصِيرًا
যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। -সুরা নিসা : ১১৫

উক্ত আয়াতের মুমিনদের পথ বলতে সাহাবাদের পথ তথা ইসলাম পালন করার কথা বলা হয়েছে এবং যারা করবে না, তাদেরকে জাহান্নামে দেওয়ার ওয়াদা করেছেন, খোদ আল্লাহপাক। এ কথাটি আরো সুস্পষ্টভাবে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
আমার উন্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত। জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ২৬৪১

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্ট হলো, ঈমানদারদেন জন্য আল্লাহ, তাঁর রাসুল সাও ও সাহাবায়ে কেরাম রা. এর অনুসরন বাধ্যতামূলক। এক কথায় ইসলামের পূর্ণ কনসেপ্ট মানা আবশ্যক। এর কোনো একটা অমান্য করার কোনো সুযোগই নেই। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত সকল ধর্ম, কিতাব ও নবী রাসুলদের প্রতি শুধুমাত্র সততার বিশ্বাস থাকতে হবে, কিন্তু বিশ্বাস ও মান্য করতে হবে ইসলামকে। নইলে নিশ্চিত জাহান্নাম। এ কথা যারা মানবে না, তারা কাফের।

মরে রাখতে হবে, ইসলাম বিশ্বজনীন ধর্ম, সকল মানুষের ধর্ম।  আল্লাহ পাক বলেন,
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ
রমযান মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, বিশ্বমানবের জন্য যা আদ্যোপান্ত হেদায়াত এবং এমন সুষ্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চুড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়। -সুরা বাকার : ১৮৫

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
হে রাসূল! তাদেরকে)  বল, হে মানুষ, আমি তোমাদের সকলের প্রতি সেই আল্লহর প্রেরিত রাসূল, যার আয়ত্তে আসমানসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্ব। -সুরা আরাফ : ১৫৮

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
হে নবি, আমি তোমাকে জগতসমূহের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। -সুরা আম্বিয়া : ১০৭

সুতরাং বুঝা গেলো, পৃথিবির সবার জন্য ইসলাম ধর্মকে পাঠিয়েছেন মহান রব এবং মানোনীয় নবি হিশাবে প্রেরণ করেছেন হযরত মুহাম্মাদ সাঃ কে। অতএব এ ইসলামকে ছেড়ে অন্য কিছু কবুল করা সরাসরি আল্লাহপাকের সাথে নাফরমানি করার শামিল।

সকল ধর্ম পালন করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, তাওহীদের স্বীকৃতি থাকলে এবং সব নবীদের আনীত সকল বিষয়ের উপর ঈমান থাকলে সে যে ধর্মেই থাকুক না কেন, সে জান্নাতে যেতে পারবে। তারা লিখেছে,
স্বর্গে যাবার জন্য আল্লাহ যে বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে বলেছেন সেগুলি বিশ্বাস করতে হবে। এখানেই প্রশ্ন, ইসলামের শেষ সংস্করণ এসে যাওয়ার পরও ইসলাম গ্রহণ না করে, পূর্ববর্তী ধর্মবিশ্বাসে স্থির থেকে কেউ কি স্বর্গে যেতে পারবেন? এর জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, অবশ্যই তাদেরও জান্নাতে যাওয়ার পথ খোলা আছে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তাদেরকে শেষ নবী ও শেষ গ্রন্থ কোর’আনকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। এটি শাশ্বত সত্য যে, বিশ্বাসী হিসাবে পরিগণ্য হতে হলে ধর্মের কয়েকটি মূল বিষয়ের উপর বিশ্বাস থাকতেই হবে। সেগুলি হচ্ছে: আল্লাহর উপর, মালায়েকদের উপর, সকল ঐশীগ্রন্থের উপর, সকল নবী-রসুলগণের উপর, কেয়ামত দিবসের উপর, ভাগ্যের ভালো-মন্দের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ এ কথার উপর এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর। তাই শেষ নবী এবং শেষ কেতাবের উপর অবিশ্বাস রেখে জান্নাতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই তেমনিভাবে পূর্ববর্তী কোনো নবী-রসুল-অবতার এবং তাঁদের আনীত কেতাবের প্রতিও অবিশ্বাস রেখে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে লাভ নেই। -হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ। দৈনিক দেশের পত্র, সাপ্তাহিক সংকলন, সংখ্যা-২৪ পৃ. ২৫

কাজেই এই আদর্শের লড়াইয়ে বা আদর্শের সৈনিকদের কেউ এগিয়ে আসতে হবে আমরা বলছি না যে আপনাকে বিশেষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।মানুষকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গিবাদ ধর্মব্যবসা স্বার্থের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা দরকার মোটিভেশন করা দরকার সেটা ত্যাগী মানুষদেরকে দিয়েই। আমাদের ইহকালের সমস্যা তাই সমাধানটাও ইহকালের হিসেবেই করতে চাই।পবিত্র কোর’আনে আছে যার ইহকাল ভালো তার পরকালও ভালো। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৪

হে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা! হে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা! হে খৃষ্টান ধর্মের অনুসারীরা! হে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা! আজ সারা দুনিয়াময় মানবতা বিপর্যস্ত। এই মানুষকে রক্ষার জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন। তাহলে আপনারা হবেন ধার্মিক, আপনার হবেন মো’মেন। আপনারা হবেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা, আপনাদের জন্য জান্নাত -স্বর্গ রয়েছে। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ২১

নাজ্জাশী মুসলমান না হয়েও শেষ নবীকে আত্মা থেকে বিশ্বাস করে তাঁকে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য জান্নাতবাসী হয়েছেন। -হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ।

উপরোক্ত বক্তব্য থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে হেযবুত তওহীদ দাবি করলো যে, জান্নাতে যাওয়ার জন্য শেষ নবী ও শেষ কিতাবের উপর শুধু বিশ্বাস থাকলেই চলবে। এই বিশ্বাস রেখে যেকোনো ধর্ম পালন করলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে। অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করা লাগবে না।

ইসলাম কী বলে?
নবিজি মুহাম্মাদ সাঃ দুনিয়াতে আগমণ করার পর ইতিপূর্বের সকল ধর্মকে রহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ইসলাম আগমণের পর আর কোনো ধর্ম পালন করার সুযোগ নেই। সুতরাং বর্তমানে জান্নাতে যেতে হলে ইসলাম মানতেই হবে। জান্নাতে যাওয়ার জন্য কী কী করতে হবে, তা নিন্মে উল্লেখ্য করা হলো-

নবিজি সা. ও সাহাবাদের রা. পথ কবুল করা: জান্নাতে যেতে আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাঃ ও সাহাবায়ে কেরামের রা. পথ যারা মানবে না তারা জাহান্নামী বলে আল্লাহ পাক ঘোষণা দিয়ে বলেন,
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءتْ مَصِيرًا
যে কেউ রসূলের (মুহাম্মাদ সা.) বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। -সুরা নিসা, আয়াত : ১১৫

উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যাঁরা রাসুল মুহাম্মাদ সা. এর বিরুদ্ধাচার করবে এবং মুহাম্মাদ সা. এর অনুসারী সাহাবাদের পথ ছেড়ে ভিন্নপথ অবলম্বন করবে, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। হযরত আবু হুরায়রা রা. হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى. قَالُوْا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى.
আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করব। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৭২৮০

হযরত আবু মূসা রা. হতে বর্ণিত যে, নবিজি সাঃ বলেছেন,
إِنَّ مَثَلِي وَمَثَلَ مَا بَعَثَنِيَ اللَّهُ بِهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمَهُ فَقَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي رَأَيْتُ الْجَيْشَ بِعَيْنَىَّ وَإِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْعُرْيَانُ فَالنَّجَاءَ ‏.‏ فَأَطَاعَهُ طَائِفَةٌ مِنْ قَوْمِهِ فَأَدْلَجُوا فَانْطَلَقُوا عَلَى مُهْلَتِهِمْ وَكَذَّبَتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ فَأَصْبَحُوا مَكَانَهُمْ فَصَبَّحَهُمُ الْجَيْشُ فَأَهْلَكَهُمْ وَاجْتَاحَهُمْ فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ أَطَاعَنِي وَاتَّبَعَ مَا جِئْتُ بِهِ وَمَثَلُ مَنْ عَصَانِي وَكَذَّبَ مَا جِئْتُ بِهِ مِنَ الْحَقِّ
আমার উদাহরণ এবং আল্লাহ যা দিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তার উদাহরণ সে ব্যক্তির উপমার মতো যে তার স্বজাতির নিকট এসে বলে, হে আমার গোত্র! আমি আমার দু’ চোখে (শত্রু) সেনা দেখে এসেছি, আর আমি (সুস্পষ্ট) সতর্ককারী। সুতরাং আত্মরক্ষা করো। তখন তার গোত্রের একদল তার কথা মেনে নিল এবং রাতের অন্ধকারে সুযোগে (জায়গা ত্যাগ করে) চলে গেল। আর এক দল তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে ভোর পর্যন্ত স্ব-স্থান হতে চলে গেল। ফলে (শত্রু) বাহিনী সকালে তাদের হামলা করল এবং তাদের সমূলে ধ্বংস করে দিল। সুতরাং এ হলো তাদের উপমা যারা আমার আনুগত্য করল এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুকরণ করল এবং ওদের উদাহরণ যারা আমার অবাধ্য হলো এবং যে সত্য আমি নিয়ে এসেছি তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২২৮৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِيْ النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوْا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ.
আর বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল, আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। সাহাবারা বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে। -জামে তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৪১

উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিস দ্বারা এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, যে বা যারাই নবিজি সাঃ ও সাহাবাদের পথ থেকে বিচ্যুত তারা জান্নাতে যেতে পারবে না।

একটি প্রশ্ন
কুরআনে কারীমে তো আল্লাহ তা’য়ালা ইহুদী-খ্রীস্টানদের ভেতর যারা নেক আমল করবে, তাদের জন্য আখেরাতের সু-সংবাদ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحاً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। -সুরা বাকারা : ৬২

প্রশ্ন হলো, তাহলে জান্নাতে যেতে শুধু ইসলাম মানতে হবে এটা কি বিভ্রান্তি নয়?

জবাব:
এক. কুরআনে কারীমে অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। সে রহিত হুকুমের মধ্যে এটাও একটি। অর্থাৎ এ আয়াতটির অর্থ বর্তমানের জন্য বলবৎ নয়। কারণ কুরআন শরীফের শ্রেষ্ট মুফাসসির সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন,
فأنزل الله عز وجل بعد هذا ومن يبتغ غير الإسلام دينًا فلن يقبل منه
উল্লেখিত সুরা বাকারার ৬২ নং আয়াতের পর আল্লাহ তাআলা এ আয়াতটি নাযিল করেছেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।-তাফসীরে তাবারী খ: ১ পৃ: ৩৬৫

সুতরাং বুঝা গেল, সুরা বাকারার ৬২ নং আয়াতের বিধান রহিত হয়ে গেছে। অতএব এ ক্ষেত্রে বিধান রহিত তথা মানসুখ আয়াত দিয়ে প্রমাণ পেশ করা ভুল এবং মুর্খতার পরিচয়।

দুই. এরপরও যদি ধরে নিই যে, আয়াতের হুকুম রহিত হয়নি, তবুও আগের যুগের ধর্মগুলো মেনে জান্নাতে যাওয়া যাবে না, কারণ আল্লাহ তা’য়ালা আয়াতটিতে যে আহলে কিতাবদের ব্যাপারে বলেছেন, সে আহলে কিতাবের অস্তিত্ব এখন আর নেই। কারণ তারা তাদের কিতাবই তো বিকৃত করে ফেলেছে। পূর্বের পর্বে এসম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ হেযবুত তওহীদরাই তাদের বইতে লিখে রেখেছে যে,
সকল প্রাচীন আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল-কোর’আন নাযেল করেছেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৬

সুতরাং কিতাব যেহেতু বিকৃত, সেহেতু সে বিকৃত কিতাবের অনুসারীরা সঠিক মতবাদের উপরে আছে এবং তারাও জান্নাতে যেতে পারবে এমন কথা বলা নিশ্চিত চরম মুর্খতা। উপরন্তু হেযবুত তওহীদ বর্তমানের সমস্ত মুসলমানদেরকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা দিয়েছে তাদের বইগুলোতে। কেন জাহান্নামী? এর কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ্য করেছে,
এই দুনিয়াতে তিনি যেমন মাফ করছেন না,অন্যান্য জাতিগুলো দিয়ে নিষ্পেষিত করে কঠিন শাস্তি দিচ্ছেন,ঐ দুনিয়াতে এই জাতিকে এর চেয়ে কঠিন শাস্তি দেবেন। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৪২

অর্থাৎ যেহেতু বর্তমানে মুসলমানেরা কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে, এই দুনিয়ার নির্যাতনই প্রমাণ হলো, আখেরাতেও মুসলমানরা জাহান্নামে যাবে। কারণ তাদের লজিক হলো,
যার ইহকাল ভালো তার পরকালও ভালো। -আদর্শিক লড়াই : পৃ. ১৪

যদি তাদের এ লজিকের আলোকে সমস্ত মুসলমানকে জাহান্নামী বলা যুক্তিসংগত হয়, তাহলে তাদের লজিকের আলোকেই অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরও জাহান্নামী বলতে হবে। কারণ হেযবুত তওহীদই লিখেছে,
ধর্মব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে ধর্মের প্রকৃত রূপ হারিয়ে যাওয়ায় বিকৃত ধর্মগুলো মানুষের জন্য শান্তিদায়ক নয়। -ধর্ম বিশ্বাস : পৃ. ৪

সুতরাং যে ধর্মগুলো বিকৃতির কারণে প্রকৃত রুপ হারিয়ে যাওয়ার ফলে এ দুনিয়াতে শান্তি দিতে পারবে না, সে ধর্মগুলোর অনুসারীরা কিয়ামতে কিভাবে শান্তির জান্নাতে যাবে? সুতরাং প্রমাণ হলো, বর্তমানে জান্নাতের পথ একটাই সেটা হলো, ইসলামের পথ। ভিন্ন কোনো মত বা পথ জান্নাতের পথ নয়, হতে পারে না।

আত্মার উন্নতি সব ধর্মেই আছে?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের বক্তব্য হলো, ‘আত্মার উন্নতির প্রক্রিয়া পূর্ববর্তি সমস্ত দীনেই ছিল, বিকৃত অবস্থায় আজও আছে এবং ওই পূর্ববর্তী ধর্মগুলোর প্রক্রিয়ায় সাধনা করলে আজও ফল পাওয়া যায়। আজও অন্যান্য ধর্মে অতি শক্তিশালী মহাসাধকরা আছেন যাদের কেরামত অলৌকিক ক্ষমতা মুসলিম অলি-আউলিয়াদের চেয়ে কম নয়। যে কেউ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সাধনা করলে তার ফল পাবে, তার আত্মার শক্তি বৃদ্ধি পাবে, অদৃশ্যের গায়েবের অনেক খবর তার কাছে আসবে, সাধারণ মানুষ যা পারে না তেমন কাজ করার ক্ষমতা জন্মাবে এককথায় তাসাউফের বই-কেতাবে যেসব উন্নতির কথা লেখা আছে সবই হবে। কিন্তু এগুলো শেখাতে বিশ্বনবী সা: আসেননি। -বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ২৫

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়,যেকোনো ধর্ম পালন করে এখনও আত্মার উন্নতি হয়।

ইসলাম কী বলে?
ইসলামের নবি হযরত মুহাম্মাদ সাঃ-এর মিশন ছিলো, মানবজাতির আত্মশুদ্ধ করা। মহান রব বলেন,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে আত্মশুদ্ধ করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। -সুরা জুম’আ : ২

সুতরাং প্রমাণ হলো, আল্লাহ’র পক্ষ থেকে আগমণ করেছিলেন হযরত মুহাম্মাদ সা.। সেই নবীকেই সা. যারা মানে না, তারা আত্মার উন্নতি কিভাবে করতে পারে? এরপরও যদি হেযবুত তওহীদ পবিত্র কুরআনের আয়াত অস্বীকার করে, তবুও সমস্যা নেই। কারণ তারাই আবার লিখেছে,
মানুষের আত্মিক এবং মানসিক পরিশুদ্ধির এই প্রশিক্ষণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা গুলির মধ্যে নেই, ধর্ম গুলির মধ্যে অনুপস্থিত, শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কৃতি সবই তো সম্পূর্ণ বস্তুবাদ ও ভোগবাদী। -ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ১৫

সুতরাং প্রমাণ হলো, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম দিয়ে আত্মার উন্নয়ন সম্ভব নয়। যদিও অন্যরা যাদু দেখাতে পারদর্শী। কিন্তু যাদু আর কারামত কখনও এক হয় না।

যেকোন ধর্ম মানলেই শান্তি আসবে?
প্রিয় পাঠক! বর্তমানে ইসলাম ব্যতিত কোন ধর্মই আল্লাহর ধর্ম নয়। সব ধর্ম বিকৃত এবং তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত। বর্তমানে অমুসলিমদের হাতে যে ধর্মগ্রন্থ গুলো আছে সব তাদের মনগড়া বানানো। ফলে তাদের ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন সর্বত্র দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। পক্ষান্তরে ইসলাম এমন একটি অবিকৃত ধর্ম যেটা পূর্নাঙ্গরুপে পালন করলে ব্যক্তিগত জিবন থেকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন সর্বত্র শান্তির বন্যা বয়ে যাবে। বাস্তবেও হচ্ছে তাই, পৃথিবীর যে দেশে যতটুকু ইসলাম কার্যকর রয়েছে, সেখানে তারা ততটুকু শান্তির স্বাদ পাচ্ছে। আবার যারা একেবারেই ইসলাম বাদ দিয়ে দিয়েছে, তারা অশান্তি অনলে জ্বলছে। তাই বর্তমানে ইসলাম বাদ দিয়ে ভিন্নধর্ম মেনে কোন ক্ষেত্রেই শান্তি আসছে না এবং শান্তির আশাও করা যায় না। কিন্তু এ চিরসত্যের বিরোধিতা করে বসলেন হেযবুত তওহীদ।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, অমুসলিমরাও তাদের ধর্ম মেনে দুনিয়াতে শান্তি পাচ্ছে এবং পাবে। এ প্রসঙ্গে তারা লিখেছে,
আল্লাহর নাজেলকৃত ধর্মগ্রন্থগুলো এখনো মানুষের কাছে আছে যেগুলো স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করছে। মানুষ সেগুলো ভক্তির সঙ্গে পড়ছে, জানছে, বিচার-বিশ্লেষণ করছে। সেগুলোর মধ্যে সত্য খুঁজে পাচ্ছে, যা তাদের হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরে তুলছে তাদের আত্মার গভীরে প্রভাব ফেলছে। -আক্রান্ত দেশ আক্রান্ত ইসলাম : পৃ. ১৯

অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষ এখনও তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে সত্য এবং শান্তি খুজে পাচ্ছে। অর্থাৎ শান্তিময় দুনিয়া গঠন করতে হলে ইসলামে আসা জরুরি নয়। বরং অন্য সকল ধর্ম পালন করে ঐক্যবদ্ধ হলেই শান্তি পাওয়া যাবে।

ইসলাম কী বলে?
আমাদের এ কথার জবাব মহান আল্লাহই দিয়েছেন ১৪০০ বছর আগেই। মহান রব বলেন,
وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِی فَإِنَّ لَهُ مَعِیشَةࣰ ضَنكࣰا وَنَحۡشُرُهُ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ أَعۡمَىٰ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِیۤ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِیرࣰا قَالَ كَذَ ٰ⁠لِكَ أَتَتۡكَ ءَایَـٰتُنَا فَنَسِیتَهَاۖ وَكَذَ ٰ⁠لِكَ ٱلۡیَوۡمَ تُنسَىٰ
এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুমান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব। -সুরা ত্ব-হা : ১২৩-১২৬

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল, সংকীর্ণ জীবন তথা ইহকাল ও পরকালের অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে একমাত্র আল্লাহর স্বরণ তথা পবিত্র কুরআনের অনুযায়ী চলতে হবে। অর্থাৎ দো’জাহানে শান্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো কুরআনের বিধান তথা ইসলাম গ্রহণ করা। সুতরাং দোজাহানে শান্তি পেতে হলে একমাত্র কুরআনের মতবাদ তথা ইসলামই মানতে হবে। আর এ চিরসত্য যেমন বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতা সাক্ষী তেমনি এ মহাসত্য হেযবুত তওহীদের মুখ থেকেই বের হয়ে গেছে।তারা লিখেছেন,
ধর্মব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে ধর্মের প্রকৃত রূপ হারিয়ে যাওয়ায় বিকৃত ধর্মগুলো মানুষের জন্য শান্তিদায়ক নয়। -ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ৪

যে ধর্ম মানুষকে শান্তি দিতে পারে না সেটা আত্মাহীন ধর্মের লাশ। -সবার ঊর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ৯

ধর্ম থেকে ধর্ম ব্যবসার মাধ্যমে এর প্রাণকে নিংড়িয়ে নিয়ে বের করে নেওয়া হয়েছে, ফলে বর্তমানে প্রতিটি ধর্মই বিষে পরিণত হয়েছে। খাদ্য হিসেবে মানুষকে সেই বিষাক্ত বর্জ্যই গেলানো হচ্ছে। এর কারণ এই ধর্ম থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ ফতোয়াবাজি সাম্প্রদায়িকতা হুজুগে উম্মাদনা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষতিকারক রোগজীবাণু, প্যারাসাইট। -ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৯

সুতরাং প্রমাণ হলো বিকৃত ধর্মগুলো দিয়ে পৃথিবী শান্তিময় হচ্ছে না এবং হবেও না। শান্তিময় জিবনগঠণে অবিকৃত কুরআনের ধর্ম তথা ইসলামেই আসতে হবে। কারণ হেযবুত তওহীদও লিখেছে,

মুক্তির পথ তো রসুল দেখিয়েই গেছেন আর শেষ বিধানও আল্লাহর দয়ায় অবিকৃত ছিল এবং আজও আছে। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৯

সুতরাং প্রমাণ হলো, শান্তিময় জিবন গঠণে একমাত্র উপায় ইসলাম। অন্য কোনো ধর্ম দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

অমুসলিমদের অপবিত্র বলা কী মু্র্খতা?
মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরামসহ তাবেয়ীগণ স্পষ্টভাবে অমুসলিমদেরকে নাপাক ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যারা অমুসলিমদের নাপাক বলে থাকেন, তাদেরকে মূর্খ বলে সম্বোধন করেছে হেযবুত তওহীদ।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা লিখেছে, ‘এটা চরম মূর্খতার পরিচয় যে আমরা এক স্রষ্টা থেকে আগত এক জাতি, এক বাবা-মায়ের সন্তান হয়েও এভাবে একে অপরকে বিধর্মী মনে করে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মেরে চলেছি। আমরা এক ভাই আরেক ভাইকে অশুচি অপবিত্র মনে করি। আচারের নামে এই সব অনাচার ধর্মের সৃষ্টি নয় ধর্মব্যবসায়ীদের সৃষ্টি। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৪

ইসলাম কী বলে?
প্রিয় পাঠক! আমাদের জেনে রাখা উচিৎ সর্বপ্রথম অমুসলিমদেরকে অপবিত্র ঘোষণা করেছেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাআলা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسࣱ فَلَا یَقۡرَبُوا۟ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هَـٰذَاۚ
হে ঈমানদারগণ, মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে। -সুরা তাওবা : ২৮

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজে অমুসলিম-মুশরিকদের নাপাক বলে সম্বোধন করেছেন। তাদেরকে অপবিত্র বলা যদি ধর্মব্যবসা, মূর্খতা এবং অনাচার হয়, তাহলে কি আমাদের মহান রবও মূর্খ? তিনিও কি ধর্মব্যবসায়ী? আল্লাহও কি অঅনাচারী? (নাউযুবিল্লাহ)। এমন জঘন্য পাপ থেকে আল্লাহ পাক আমাদের হিফাযত করেন।

ইহুদী-খ্রস্টানরাও নাপাক:
ইহুদী-খ্রীস্টানদেরকেও মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই মুশরিক ঘোষণা দিয়েছেন, ফলে তারাও নাপাক। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُواْ إِلاَّ لِيَعْبُدُواْ إِلَـهًا وَاحِدًا لاَّ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
ইয়াহুদীরা বলে, উযায়র আল্লাহর পুত্র আর নাসারাগণ বলে, মাসীহ আল্লাহর পুত্র। এসবই তাদের মুখের তৈরি কথা। এরা তাদের পূর্বে যারা কাফের হয়ে গিয়েছিল, তাদেরই মত কথা বলে। তাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করুন! তারা বিভ্রান্ত হয়ে কোন দিকে উল্টে যাচ্ছে? তারা আল্লাহর পরিবর্তে নিজেদের আহবার (অর্থাৎ ইয়াহুদী ধর্মগুরু) এবং রাহিব (খ্রিস্টান বৈরাগী)কে খোদা বানিয়ে নিয়েছে এবং মাসীহ ইবনে মারয়ামকেও। অথচ তাদেরকে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়নি। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তাদের অংশীবাদীসুলভ কথাবার্তা হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র। -সুরা তাওবা : ৩০-৩১

উক্ত আয়াত দু’টিতে মহান রব বুঝিয়ে বলেছেন যে, ইহুদী-খ্রীষ্টানরাও শিরক করে মুশরিক হয়ে গেছে। আর যেহেতু সকল মুশরিকরা নাপাক, সেহেতু মহান আল্লাহর ফরমান অনুযায়ী ইহুদী-খ্রিষ্টানরাও নাপাক।

হযরত ওমর রা. যখন কাফের থাকা অবস্থায় তাঁর বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন, তখন তার বোন বলেছিলেন যে,
انك رجس ولا يمسه الا المطهرون فقم فاغتسل او توضأ فقام عمر فتوضأ ثم اخذ الكتاب فقرأ طه
তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না। অতএব তুমি যাও গোসল করো অথবা ওযু করো। অতপর ওমর রা: ওযু করে কোরআন ধরে সুরা ত্বহা পড়লেন। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং- ৬৮৯৭

আরেকটি হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
بَعَثَ النبيُّ ﷺ خَيْلًا قِبَلَ نَجْدٍ، فَجاءَتْ برَجُلٍ مِن بَنِي حَنِيفَةَ يُقالُ له: ثُمامَةُ بنُ أُثالٍ، فَرَبَطُوهُ بسارِيَةٍ مِن سَوارِي المَسْجِدِ، فَخَرَجَ إلَيْهِ النبيُّ ﷺ فَقالَ: أطْلِقُوا ثُمامَةَ، فانْطَلَقَ إلى نَخْلٍ قَرِيبٍ مِنَ المَسْجِدِ، فاغْتَسَلَ، ثُمَّ دَخَلَ المَسْجِدَ، فَقالَ: أشْهَدُ أنْ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ وأنَّ مُحَمَّدًا رَسولُ اللَّهِ
নবিজি সাঃ কয়েকজন অশ্বারোহী মুজাহিদকে নজদের দিকে পাঠালেন। তারা বানূ হানীফা গোত্রের সুমামাহ ইবনু উসাল নামক এক ব্যক্তিকে নিয়ে এসে তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন। নবীজি ﷺ তাঁর নিকট গেলেন এবং বললেন, সুমামাকে ছেড়ে দাও। (ছাড়া পেয়ে) তিনি মসজিদে নববীর নিকট এক খেজুর বাগানে গিয়ে সেখানে গোসল করলেন, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহর রাসুল সাঃ। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৪৬২

উক্ত হাদিস দুটো দেখলে বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরামও অমুসলিমদেরকে নাপাক জানতেন। এজন্য মুসলমান হওয়ার সময়ও তাঁরা গোসল করতেন। উপরন্তু বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রহি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
انما المشركون نجس فلا تصافحوهم، فمن صافحَهم فليتوضَّأ
নিশ্চয় মুশরিকরা নাপাক। সুতরাং তাদের সাথে মুসাফাহা করো না। যে মুসাফাহা করবে সে যেন ওযু করে নেয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং- ২৬১২০

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায় পাক শুধুমাত্র মুসলমানেরা। নবিজি সাঃ বলেন,
إنَّ المُؤْمِنَ لا يَنْجُسُ
মুসলমান নাপাক হয় না। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৩৭১

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হলো, সমস্ত মুসলমানেরা পাক কিন্তু সকল অমুসলিমরা নাপাক। এটা ইসলামে সুস্পষ্ট বিষয়। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এটা জেনেও কেন এর বিরুদ্ধে কলম ধরলো? কারণ তাদের মূল টার্গেট মানুষকে আল্লাহ, রাসুল সা. ও ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। মুশরিকদের নাপাক বলা আল্লাহ পাকের এই কথাটিকে তারা অন্যায় ও অনাচার বলে বুঝাতে চায়, অথচ সেই হেযবুত তওহীদ নিজেরাই আবার সকল ধর্মাবলম্বীদের কাফের, মুশরিক, মালাউন, পশু, দাজ্জালের অনুসারী ইত্যাদী বলে গালি দিয়ে থাকে। দুয়েকটা নমুনা নিন্মে দেখুন-

অথচ হেযবুত তওহীদ ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের ব্যাপারে কি সব মন্তব্য করেছে একটু নজর বুলানো যাক। তারা লিখেছে,
প্রাচ্যের জাতিগুলির ধর্মবিশ্বাস, কুসংস্কার, মানুষগুলি পশু পর্যায়ের। -ইসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১২০

মুসলিমদের ব্যাপারে কী বলে দেখুন,
আল্লাহ দৃষ্টিতে তারা (মুসলিমরা) কাফের মুশরিক এবং অভিশপ্ত মালাউন। -শ্রেনীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৪৮

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামসহ সকল ধর্মের লোকদের বিভিন্ন শব্দে গালাগালজ করে চরমভাবে আহত করলেও সেটা কোনো অন্যায় নয়, বরং নৈতিকতা, কিন্তু আল্লাহ পাক, তাঁর রাসুল ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম রা. এবং তাবেয়ীগণ মুশরিকদের নাপাক বললে সেটা হয়ে যায় অনাচার! বিষয়টা কী এমন হলো না যে, কৃষ্ণ করলে কুরু কুরু, আমরা করলে মাকরুহ?

সুতরাং এতগুলো আয়াত ও হাদিসের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যারা ভিন্নমত পোষণ করে তারা কি বুঝাতে চায়? আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ ﷺ, সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ সবাই কী মূর্খ ছিলেন? তাঁরাও কী ধর্মব্যবসায়ী ছিলেন? (আসতাগফিরুল্লাহ।) এটা কি কুফরী মন্তব্য নয়?

সব ধর্মের লোকেরা কী ভাই ভাই?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের বক্তব্য হলো, ‘সকল ধর্মের অনুসারীরাই একে অপরের ভাই হতে বাধা কোথায়? -সবার ঊর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ৪

ইসলাম কী বলে?
এক. হেযবুত তওহীদের উপরোক্ত প্রশ্নের জবাবটা তারাই দিক। কারণ তাদের কাছে অন্য সকল ধর্মের অনুসারীরা তো কাফের, মুশরিক, মালাউন বা পশুর মত। তাহলে তারা কী সব ধর্মের লোকদেরকে ভাই হিসাবে মনে করে? যদি মনে করেই থাকে তাহলে এত বড় বড় গালি কিভাবে দিতে পারে? বুঝা গেলো, তারা নিজেরাই অন্যদেরকে ভাই মনে করে না।

দুই. মুমিনরা একে অপরের ভাই। কোনো মুশরিক বা অমুসলিমরা নয়। অবশ্য মানুষ হিসাবে তাদের অধিকার নষ্ট করার কথাও ইসলাম অনুমতি দেয় না। সাম্প্রদায়িক সম্পৃতির কথা ইসলাম সব সময় বলে থাকে। তবে মুমিনদের ভাই কারা এর জবাব কুরআন-সুন্নাহ’য় আছে। মহান রব বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। -সুরা হুজুরাত : ১০

হাদিস শরীফে এসেছে, সালিম রহি. তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, নবি সাঃ বলেছেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ
প্রত্যেক মুসলিম একজন অন্যজনের ভাই। -জামে তিরমিযি, হাদিস নং- ১৪২৬

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা বোঝা গেলো, মুসলমানদের ভাই একমাত্র মুসলমানরাই। যেহেতু মুসলিমরা কুরআন-সুন্নাহ যা বলে, তাই ফলো করে চলেন, সেহেতু কুরআন-সুন্নাহ যাদেরকে ভাই বলবে, তারাই আমাদের ভাই। এর বাহিরে কোনো কিছু আমরা মানতে পারি না। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য হেযবুত তওহীদ সকল মুসলমানদের থেকে আলাদা হয়ে অমুসলিমদের ভাই বানাতে এত আগ্রহী কেন? মনে রাখা চাই, অমুসলিমদের ভাই বানানো তো দূরের কথা বন্ধু বানানোও জায়েয নয়। মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُواْ لِلّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا
হে মুমিনগণ! মুসলিমদের ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না। তোমরা কি আল্লাহর কাছে নিজেদের বিরুদ্ধে (অর্থাৎ নিজেদের শাস্তিযোগ্য হওয়া সম্পর্কে) সুস্পষ্ট প্রমাণ দাঁড় করাতে চাও? -সুরা নিসা : ১৪৪

অমুসলিমদের কাফের বলা যাবে না?

জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র পথ হলো, পরিপূর্ণভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করা। যারা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম পালন করবে, তারা কাফের এবং জাহান্নামী। অমুসলিমরা জান্নাতে যাওয়া তো দূরের কথা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। এটা কুরআন ও হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ বলছে ভিন্ন কথা। চলুন দেখে নেয়া যাক তাদের দাবিগুলো।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, অমুসলিমদের কাফের বা জাহান্নামী বলা যাবে না। কারণ তাদের ধর্মও আল্লাহ প্রেরিত। তারা লিখেছে,
ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকেই বিভেদের প্রাচীর বানিয়ে রেখেছে। তারা অন্য ধর্মগুলোকে মিথ্যা এবং সেই ধর্মের অনুসারীদেরকে জাহান্নামী, কাফের বলে গালিগালাজ করে। অথচ সকল ধর্মই আল্লাহর প্রেরিত ধর্মপ্রবর্তকগণও তাই। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৩

অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, যেহেতু সব ধর্ম আল্লাহর প্রেরিত, অতএব অন্য ধর্মের লোকদের কাফের বা জাহান্নামী বলা যাবে না।

ইসলাম কি বলে?
আল্লাহ তাআলার প্রেরিত নবী-রাসুলগণ তথা হযরত আদম আ. থেকে মুহাম্মাদ সা. পর্যন্ত সকল নবীর উপর বিশ্বাস আনা ঈমানের অন্তুর্ভূক্ত। যদি তাঁদের ভেতর কাউকে অস্বীকার করা হয়, তাহলে সে নির্ঘাৎ কাফের। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا
যারা আল্লাহ ও তার রসূলদের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং তদুপরি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায়, আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি, আর কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্যিকারের কাফের। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব। -নিসা : ১৫০-১৫২

সুতরাং বর্তমান সময়ে হিন্দু,বৈদ্ধ, ইহুদী,খ্রীস্টানসহ সকল অমুসলিমগণ মুহাম্মাদ সা. এর অনুসরণ করে না, এমনকি তাঁকে নবী বলে স্বীকারই করে না। এ আয়াত অনুসারে তারা সবাই কাফের। উপরন্তু যারা আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সা. কে মানবে না এবং বিমুখতা অবলম্বন করবে, তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ فإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
বলুন, আল্লাহ ও রসূলের (মুহাম্মাদের স:) আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। -সুরা নিসা : ৩২

উক্ত আয়াতে যারা রাসুল মুহাম্মাদের সাঃ-এর আনুগত্য প্রকাশ না করে বিমুখতা অবলম্বন করবে, তাদেরকে কাফের বলা হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহপাক আরো বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا آمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلَى رَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيْدًا
হে মুমিনগণ, তোমরা পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপরে, তাঁর রাসূলের উপরে এবং ঐ কিতাবের উপরে, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রাসূলের উপর এবং ঐ সকল কিতাবের উপরে, যা তিনি নাযিল করেছিলেন ইতিপূর্বে। আর যে কেউ অবিশ্বাস করে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর ও ক্বিয়ামত দিবসের উপর, সে দূরতম ভ্রষ্টতায় নিপতিত হ’ল। -সূরা নিসা : ১৩৬

উক্ত আয়াতে যারা আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর ও ক্বিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে না, তাদেরকে কাফের ও পথভ্রষ্ট বলা হয়েছে।

অমুসলিমদের কাফের বলা যাবে কী?
অমুসলিমদের কাফের বলা কোনো দোষের কিছু নয়। কারণ মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. কে নিজে শিখিয়েছেন, তিনি যেন কাফেরদেরকে কাফের বলে সম্বোধন করেন। মহান রব বলেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
বলুন, হে কাফেরগণ, আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর। -সুরা কাফিরুন : ১-২

সুতরাং কাফেরদের কাফের বলা যদি ধর্মব্যবসায়ীদের কাজ হয়, তাহলে নাউযুবিল্লাহ আল্লাহও কি ধর্মব্যবসায়ী? কি চরম মূর্খতা!

কারো ধর্মপরিবর্তন করা হেযবুত তওহীদের কাজ নয়:

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, তারাই আসল ইসলামের ধারক-বাহক। কিন্তু তারা তাদের লেখায় দাবি করছে, অমুসলিমদেরকে স্বীয় ধর্ম পরিবর্তন করিয়ে ইসলামের দিকে আহ্বান করা ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। চলুন কি বলতে চায় তারা দেখে নেওয়া যাক। তারা লিখেছে,
মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা’। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ১১

আর এজন্যই তারা দৃঢ়তার সাথে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ান-
আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

আমরা বলছি না যে আপনাকে বিশেষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার’। -আদর্শিক লড়াই, পৃ. ১৪

উক্ত কথা দিয়ে তারা মূলত দাবি করছেন, সমস্ত অমুসলিমদেরকে তাদের ধর্ম বাদ দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার দাওয়াত দেওয়া এটা ইসলামের কাজ নয়, ইসলামের উদ্দেশ্যও নয়।

ইসলাম কী বলে?
আল্লাহ পাকের প্রেরিত সকল ধর্মের শেষ সংস্করণ হলো, ইসলাম। এই ইসলামই পূর্ণাঙ্গ ও আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম বলে আল্লাহ তা’আলা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। শেষ নবী মুহাম্মাদ সা. শেষ ধর্ম ইসলাম নিয়ে দুনিয়াতে আজিবন কাজ করে গেছেন। সাহাবায়ে কেরাম রা. তাবেয়ীগণ এবং নবীজি সা. এর সমস্ত উম্মত ইসলামের মিশন নিয়েই কাজ করে গেছেন আমরণ। সুতরাং সকল মুসলমানের কাজ হলো, ইসলামের দিকে সকলকে আহ্বান করা। শুধু কী তাই? বরং স্বয়ং মহান আল্লাহ তা’আলাই  ইসলাম ধর্ম পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। নিন্মে কয়েকটি দলীল পেশ করছি। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা : ২০৮

আল্লাহ তাআলা তাঁর পাঠানো পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসারীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ آمِنُواْ بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَى أَدْبَارِهَا أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّا أَصْحَابَ السَّبْتِ وَكَانَ أَمْرُ اللّهِ مَفْعُولاً
হে আসমানী গ্রন্থের অধিকারীবৃন্দ! যা কিছু আমি অবতীর্ণ করেছি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, যা সে গ্রন্থের সত্যায়ন করে এবং যা তোমাদের নিকট রয়েছে পূর্ব থেকে। (বিশ্বাস স্থাপন কর) এমন হওয়ার আগেই যে, আমি মুছে দেব অনেক চেহারাকে এবং অতঃপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পশ্চাৎ দিকে কিংবা অভিসম্পাত করব তাদের প্রতি যেমন করে অভিসম্পাত করেছি আছহাবে-সাবতের উপর। আর আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যই কার্যকর হবে। -সূরা নিসা : ৪৭

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। -সুরা মায়িদা : ১৫

উপরন্তু যারা ইসলামহীন ভিন্ন কোনো ধর্ম তালাশ করে তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহপাক বলেন,
أَفَغَيْرَ دِينِ اللّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। -সূরা আলে ইমরান : ৮৩

উক্ত আয়াতে প্রশ্নবোধক শব্দ দিয়ে মূলত বুঝানো হয়েছে, আল্লাহর দ্বীন ব্যতিত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করা বা গ্রহণ করা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর সেই দ্বীন কোনটা? সে জবাব খোদ আল্লাহ তাআলাই দিচ্ছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। -সুরা মায়েদা : ৩

সুতরাং যেহেতু আল্লাহর মনোনিত দ্বীন বা ধর্মই হলো ‘ইসলাম’। সুতরাং এ ইসলাম ব্যতিরের ভিন্ন কোন ধর্ম যদি কেউ গ্রহণ করে, তার পরিনতি কি হবে সে জবাবটিও আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। -সুরা আলে ইমরান : ৮৫

সুতরাং বুঝা গেলো, সকল ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা মহান আল্লাহ’র অভিপ্রায়। এজন্য সে দ্বীন ইসলামকেই প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্দেশ দিয়ে মহান রব বলেন,
وَقاتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةࣱ وَیَكُونَ ٱلدِّینُ لِلَّهِۖ فَإِنِ ٱنتَهَوۡا۟ فَلَا عُدۡوَ ٰانَ إِلَّا عَلَى ٱلظَّالِمِینَ
আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন (ইসলাম) প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)। -সুরা বাকারা : ১৯৩

সুতরাং প্রমাণ হলো, নবিজি সাঃ-এর দায়িত্বই ছিলো সকল ধর্ম বিলিন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করা। এরপরও কী এ কথা বলা যায় যে, সবার ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলামের ধর্ম গ্রহণ করানো ইসলামের উদ্দেশ্য বা কাজ নয়?

একটি প্রশ্ন:
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, আগের নবিদের আনীত ধর্মগুলোকেও তো অনেক জায়গায় ইসলাম বলে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। সুতরাং ইসলাম অর্থ হলো, আল্লাহ প্রদত্ব সকল ধর্ম। তাহলে শুধু ইসলামই মানতে হবে এটা কোথায় পেলেন?

জবাব:
এক. আল্লাহ প্রদত্ব সকল ধর্মকে সত্য বলে বিশ্বাস করা প্রতিটি মুমিনের ঈমানী দায়ীত্ব। কিন্তু বর্তমানে ইসলাম ব্যতিত আল্লাহ প্রদত্ব কোন ধর্মই আর অবিকৃত নেই। সুতরাং বর্তমানের ইহুদী,খ্রীস্টানদের ধর্মকে আমরা আল্লাহর নাযিলকৃত ধর্ম হিসাবে বিশ্বাস করার কোনই সুযোগ নেই। এ গুলো সব তাদের ধর্মগুরুদের হাতে প্রনীত ধর্ম। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, বরং খোদ হেযবুত তওহীদেরও দাবি। তারা লিখেছেন,
সকল প্রাচীন আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল-কোর’আন নাযেল করেছেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৬

সুতরাং সে আগের ধর্মগুলোকে আর ইসলামের পূর্বরুপ বলার কোনো অবকাশ নেই।

দুই. উপরোক্ত আয়াতগুলোতে যে ইসলাম ধর্মের কথা বলা হয়েছে, ‘সেটা আগের নবীদের ধর্মও তো হতে পারে’ এমন সংশয়-সন্দেহ করা বা মানার কোন সুযোগ নেই। কারণ মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রাসূল (মুহাম্মাদ সাঃ) তোমাদে কাছে যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা গ্ৰহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। -সুরা হাশর : ৭

সুতরাং প্রমাণ হলো, ইসলাম বলতেই উক্ত আয়াতে নবিজি সাঃ-এর ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। এখানে কোনো সংশয় বা সন্দেহের অবকাশ নেই।

আরেকটি প্রশ্ন: এ আয়াতেও যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে, এখানে তো শুধু রাসুলের কথা বলা হয়েছে। এ রাসুল মানেই যে নবি মুহাম্মাদ তার প্রমাণ কি?

জবাব: এ প্রশ্নের জবাব নিন্মের আয়াত দুটি মহান আল্লাহ তাঁর হাবিব মুহাম্মাদ সাঃ কে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لا إِلَهَ إِلا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার। -সুরা আ’রাফ : ১৫৮

الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآَمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّهِمْ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ ذَلِكَ بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَأَنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِنْ رَبِّهِمْ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ
আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন। যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন। এটা এ কারণে যে, যারা কাফের, তারা বাতিলের অনুসরণ করে এবং যারা বিশ্বাসী, তারা তাদের পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ মানুষের জন্যে তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন। -সুরা মুহাম্মাদ : ১-৩

অত্র আয়াত দু’টিতে সরাসরি নবিজি মুহাম্মাদ সাঃ-এর নাম ও তাঁর উম্মী পদবীও উল্লেখ্য রয়েছে। সুতরাং উপরোক্ত আয়াত দু’টি সামনে রাখলে ‘ইসলামের দিকে আহ্বান করা আমাদের কাজ নয়’ এমন কথা যারা দাবি করতে পারে, তারা কি আদৌও সঠিক ইসলামের ধারক বাহক হতে পারে? নিশ্চয় না।

ইসলামকে বিজয়ী করা নবিজি সাঃ-এর দায়ীত্ব:
সকল ধর্ম বিলিন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা ছিলো নবিজি সাঃ-এর প্রতি আল্লাহপাকের প্রত্যাশা। এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে (মুহাম্মাদ স:) হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। -সুরা তাওবা : ৩৩

অত্র আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নবিজি স: এর আগমনের অন্যতম উদ্যেশ্য হলো- দ্বীন ইসলামকে সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী করা। এটা শুধু পবিত্র কুরআনের দাবি নয়, কথাপ্রসঙ্গে হেযবুত তওহীদ নিজেরাও লিখে ফেলেছে,
আল্লাহ) তাঁকে (মহানবীকে স: ) নির্দেশ দিলেন পৃথিবীতে যত রকম জীবন ব্যবস্থা আছে সবগুলোকে নিষ্ক্রিয় বাতিল করে এই শেষ জীবন ব্যবস্থা মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে’। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৯

সলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নবী যেভাবে করেছেন সেভাবে চেষ্টা করতে হবে। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৬

সুতরাং এরপরও কী হেযবুত তওহীদ দাবি করতে পারে যে,  মানুষের ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলামের দিকে আহ্বান করা ইসলামের উদ্দেশ্য নয়? যেখানে অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ পাক নিজেও ইসলামের দিকে তাঁর বান্দাদেরকে আহ্বান করেছেন এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. কেও সে কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন এবং রাসুল সা. বিরামহীন ইসলামের দিকে তাঁর উম্মতকে আহ্বান করে গেছেন। সে ইসলামের দিকে যারা আহ্বান করে না, তারা কী ইসলামের কাজ করছে? নাকি মানুষকে ধোকা দিয়ে শয়তানের অনুসারী বানাচ্ছে? প্রশ্ন পাঠকদের কাছে রইলো।

সর্বধর্মীয় ঐক্য: ইন্টারফেইথ ও হেযবুত তওহীদ।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদ বলতে চায়, পৃথিবীতেে প্রচলিত সকল ধর্ম সত্য এবং সব ধর্ম পালন করা যায়। এজন্য তারা স্লোগান তুলেছে, সর্বধর্মীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তারা বলে-

এক. কারও ধর্ম পাল্টাতে হেযবুত তওহীদ আসেনি:
আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে। আমরা যদি শান্তিতে জীবন যাপন করতে চাই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিময় জীবন উপহার দিতে চাই তার জন্য আমাদেরকে সকল প্রকার কলহ-বিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫

মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১০

দুই. সব ধর্ম পালন করার আহ্বান:
আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এক স্রষ্টার বান্দা হিসাবে তাঁর বিধানের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা বলছি। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৭৫

তিন. সকল ধর্মের ঐক্য করাই আল্লাহ’র চাহিদা:
সকল মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি, তারা সবাই একই পিতা-মাতা-সন্তান। সুতরাং তারা সকলে ভাই -ভাই। সকল ধর্মও একই স্রষ্টার থেকে আগত। তাই মানবজাতির মধ্যে কোন প্রকার ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক বিভক্তি স্রষ্টার কাম্য নয়। বরং স্রষ্টা একে লুপ্ত করার জন্য শেষ রসূলকে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি চান সমগ্র মানবজাতি এক জাতিতে পরিণত হোক। স্রষ্টার এ অভিপ্রায়কে উপলব্ধি করে নিজেদের মধ্যে বিরাজিত সকল বিভক্তির প্রাচীর কে ধুলিস্যাৎ করে বিশ্বমানবকে ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করাই এখন সময়ের দাবি, এটাই ধর্মের কাজ, এটাই উপাসনা এটাই প্রকৃত এবাদত। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৬০

ধর্ম চাই মানুষের সঙ্গে মানুষের ঐক্য। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল ধর্মাবলম্বীদের আজ হৃদয় দিয়ে বুঝতে হবে যে সকল মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি। তেমনি সকল ধর্ম একই স্রষ্টা থেকে আগত। স্রষ্টার অভিপ্রায় হচ্ছে মানব জাতি একতাবদ্ধ হয়ে তার বিধান মেনে শান্তিতে জীবন যাপন করুক। ঠিক যেমনভাবে একজন বাবা চান তার সন্তানরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুক। স্রষ্টার এ অভিপ্রায় পূরণের জন্য আমরা কি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০০

চার. সকল ধর্মের অনুসারীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়া:
সমস্ত মানবজাতিকে জাতপাত বর্ণ গোত্রহীন এক অখণ্ড জাতিতে পরিণত করার পর সূত্র বা ফরমুলা কারো জানা নেই। কেউ এই বিরাট চিন্তাও করে না এটা সম্ভব বলে বিশ্বাসও করবেন না। কিন্তু এটা সম্ভব এবং সেই বিরাট মত মূল্যবান সূত্র মহান আল্লাহ হেযবুত তওহীদকে দিয়েছেন  দিয়েছেন। -শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ৪৬

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী জাতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তৌহিদ। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৪৬

সমস্ত মানব জাতি এসেছে এক বাবা-মা আদম হাওয়া থেকে। সুতরাং সমস্ত মানবজাতি প্রকৃতপক্ষে এক জাতি। -আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই : পৃ. ১৬

মুসলিম-সনাতন-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন এ যামানার এমাম এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মানুষকে তাদের ধর্মের মৌলিক শিক্ষা “নিঃস্বার্থ মানবকল্যাণই ধর্ম” এই মহাসত্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান করেছেন। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৮৪

সকল সম্প্রদায়ের ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে যদি ঐক্যের কোন সূত্র দেখানো না যায়, তবে কোনদিনও এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বন্ধ হবে না। কারণ ধর্মব্যবসায়ীদের করা ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা এই বিভেদের প্রাচীর দাঁড় করিয়ে রেখেছে। গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৮৯

মোটকথা হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্ম পালন করা যাবে এবং সবার মাঝে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

ইসলাম কী বলে?
মূলত হেযবুত তওহীদের এ মতবাদটা ভয়ঙ্কর কুফরী সংগঠণ ‘ইন্টারফেইথ’ এর। ইসলাম বিদ্বেষীরা মুসলামনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে করে অবশেষে বুঝতে পেরেছে, এভাবে মুসলমানদের দমন করা সম্ভব নয়। কারণ মুসলমানদের মধ্যে এ সুদৃঢ় শক্তি রয়েছে ঈমানী শক্তি। যেটা থাকলে কখনও কাউকে দমন করা যায় না। এজন্য তারা বুদ্ধিভিত্তিক কাজ করে মূলত মুসলমানদের সে শক্তি বিনষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। আর তাদের এহেন নোংড়া ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে একটা স্লোগান তুলে দিয়েছে ‘ইন্টারফেইত বা আন্তধর্মীয় মতবাদ।

ইন্টারফেইথ কী?
ইন্টারফেইথ বা আন্তঃধর্ম নামটা বিভিন্ন নামে প্রচারিত হয়ে থাকে। যেমন- ইন্টারফেইথ ডায়ালগ, ইন্টারফেইথ হারমোনি, ইন্টারফেইথ এলিয়েন্স ইত্যাদি। যার সারমর্ম হলো, সর্বধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। বিষয়টা শুনতে ভাল শোনা গেলেও এর পেছনে রয়েছে পবিত্র দ্বীন ইসলামের ক্ষতি সাধনের লক্ষে এক গভীর ষড়যন্ত্র। মোঘল বাদশাহ আকবর যেমন সব ধর্ম মিলিয়ে নতুন এক কুফরি ধর্ম ‘দ্বীন-ই-ইলাহি’ চালু করেছিল, ইন্টারফেইথ তেমনি এক সর্ব ধর্মের কুফরি মিশ্রণ। ইন্টারফেইথকে যদি আপনি আপনার পন্থা হিসেবে নির্বাচিত করেন তাহলে আপনাকে এ কথা মেনে নিতে হবে যে, ‘সকল ধর্মই সঠিক’।

বাস্তবিক প্রয়োগে ইন্টারফেইথ ও সেক্যুলারিজম একই জিনিস। তবে সেক্যুলারিজম করানো হয় দাড়ি টুপিবিহীন লোকদের মাধ্যমে। কিন্তু ইন্টারফেইথ করানো হবে, বিভিন্ন মসজিদের হুজুর, খতিব, মাদরাসার শিক্ষক, ওয়ায়েজ, মুফতি, বক্তা, স্কলারদের মাধ্যম দিয়ে। কয়েকটি বিদেশী এনজিও বাংলাদেশের মাদ্রাসা, বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসাগুলোতে এই ইন্টারফেইথ প্রবেশ করানোর জন্য কয়েকটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। তারা ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের ইন্টারফেইথ প্রশিক্ষণ দেবে।

মূলত টার্গেট কী?
এই মতবাদগুলো মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে মূলত তারা ঈমান ও কুফরের সীমারেখা উঠিয়ে দিতে চায়, ‘আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’ অর্থাৎ মুমিনকে ভালোবাসা ও নুসরত করা এবং কাফেরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা’ এই আকিদা বিস্মৃত করে দিতে চায়, ধর্মীয় মতপার্থক্য ও ব্যবধানের মানসিকতা মুসলিমদের থেকে উঠিয়ে দিতে চায়। যদি এমনটা করা যায় তাহলে মুসলমানেরা কাফেরকেও এক ও অভিন্ন চোখে দেখবে। কাফেরের সাথে দুশমনির মনোভাব থাকবে না। আর স্পষ্টতই, এমন সমাজ কখনোই দখলদার কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না, বরং ভালোবেসে বুকে টেনে নেবে। শুধু তা-ই নয়, এ ধরনের উদারপন্থী মনোভাবীদের খুব সহজেই ধর্মান্তরিত করে ইহুদী বা খ্রিষ্টান বানানো যাবে। এটিও তাদের একটি বড় উদ্দেশ্য।

ইন্টারফেইথের মতবাদ কী?
ইন্টারফেইথের মতবাদ পর্যালোচনা পড়লে তাদের মতবাদ হিসাবে মোটামুটি যা জানা যায়, তা হলো-
১. সবার নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মনে করা।
২. অন্য ধর্মকে বাতিল মনে না করা।
৩. বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও বিভাজন, শত্রুতার মাপকাঠি ধর্মের ভিত্তিতে করা যাবে না। অর্থাৎ সম্প্রীতি তৈরি করতে হবে মানুষে-মানুষে, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে নয়।’ ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তার উপরে কিছু নাই’। কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, সেদিকে লক্ষ না করে সকলকে ভালোবাসতে হবে। এক কথায় বন্ধুত্ব ও দূরত্বের মাপকাঠি ধর্মের ভিত্তিতে হতে পারবে না।

মোটামুটি এ তিনটা মতবাদ তাদের মৌলিক মিশনের অন্তুর্ভূক্ত। চলুন এ ব্যাপারে আলোচনা করা যাক।

সকল ধর্মকে শ্রেষ্ট মনে করা যাবে?
পৃথিবীতে প্রচলিত একমাত্র সত্য ও শ্রেষ্ট ধর্ম হলো, ‘ইসলাম’। এই ইসলামই আল্লাহ পাকের একমাত্র মনোনীত ধর্ম। আর এজন্যই মহান আল্লাহ পাক সকল ধর্মের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্যই তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. কে প্রেরণ করেছিলেন। মহান রব বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। -সূরা আলে ইমরান : ১৯

বুঝা গেলো, আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম হলো ‘ইসলাম’। ইসলাম ছাড়া যেগুলো আল্লাহর মনোনীত নয়, সেগুলো শ্রেষ্ট মনে করা মানেই আল্লাহর মনোনীত ধর্মকে অবজ্ঞা করা। উপরন্তু ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম শ্রেষ্ট হওয়া তো দূরের কথা, সেসব ধর্ম সত্যই হতে পারে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ধর্ম তো আল্লাহর ধর্ম বলেই স্বীকৃত না, উপরন্তু ইহুদী-খ্রিষ্টান ধর্ম সত্য হলেও তারা তাদের ভিত্তি পাল্টে ফেলেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ
ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে। তারা তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদিগকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারা তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র। -সুরা তাওবা : ৩০-৩১

সুতরাং ইসলাম একমাত্র শ্রেষ্ট ও সত্য ধর্ম বলেই সকল ধর্মের উপর সেটাকে বিজয়ী করার জন্যই রাসুলুল্লাহ সা. কে আল্লাহপাক দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। মহান রব বলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্ম সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। -সুরা তাওবা : ৩৩

বুঝা গেলো, একমাত্র শ্রেষ্ট ধর্ম ইসলাম। সুতরাং অন্যান্য ধর্মকে শ্রেষ্ট মনে করা সরাসরি কুফরী মতবাদ।

অন্য ধর্মগুলো কী বাতিল নয়?
একমাত্র ইসলাম ব্যতীত পৃথিবীতে অন্য যে সকল ধর্ম প্রচলিত রয়েছে সমস্ত ধর্মই মিথ্যা এবং মানুষের তৈরি করা। ইসলামই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র সঠিক ধর্ম। আল্লাহ প্রদত্ত্ব সকল ধর্মকে ইসলাম এসে রহিত করে দিয়েছে, তাই কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, সকল ধর্মই সঠিক তাহলে সে মুমিন নয়, বরং সে কাফির। এটাই হলো, মুসলিম জাহানের অভিমত। এজন্য ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহি. বলেন,
وقد جاء القرآن، وصحّ الإجماع بأن دين الإسلام نسخ كل دين كان قبله، وأن من التزم ما جاءت به التوراة والإنجيل، ولم يتبع القرآن، فإنه كافر، وقد أبطل الله كل شريعة كانت في التوراة والإنجيل وسائر الملل، وافترض على الجن والإنس شرائع الإسلام، فلاحرام إلا ما حرمه الإسلام، ولا فرض إلا ما أوجبه الإسلام
কুরআনে বর্ণিত এবং উম্মাহর ইজমায় প্রতিষ্ঠিত, ‘দ্বীনে ইসলাম পূর্ববর্তী সকল দ্বীনকে রহিত করে দিয়েছে এবং যে ব্যক্তি তাওরাত ও ইনজিলের বিধি-বিধানকে জীবনবিধান বানিয়ে নেবে আর কুরআনের অনুসরণ ছেড়ে দেবে, সে কাফের।’ তাওরাত, ইনজিল ও অন্য সকল ধর্মের প্রতিটি বিধান আল্লাহ তায়ালা বাতিল করে দিয়েছেন এবং মানুষ ও জ্বিন জাতির উপর ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান ফরজ করেছেন। সুতরাং হারাম শুধু তা-ই, যা ইসলাম হারাম করেছে। ফরজ শুধু তা-ই, যা ইসলাম ফরজ করেছে। –আহকামু আহলিযযিম্মাহ, খ. ১ পৃ. ১৯৮

ইসলাম ছাড়া সকল ধর্ম বাতিল এবং রহিত বলেই মহান রব বলেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। -সুরা আলে ইমরান : ৮৫

সুতরাং বুঝা গেলো, একমাত্র সত্য ধর্ম হলো ইসলাম। আর প্রচলিত অন্য সকল ধর্ম মিথ্যা ও বানোয়াট। অতএব মুসলিম জাহানের জন্য ইসলাম থাকাবস্থায় অন্য ধর্মকে সত্য মনে করা নিতান্তই বোকামী ও কুফরী। এদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,
إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ وَلَقَدْ جَاءهُم مِّن رَّبِّهِمُ الْهُدَى
তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে। -সুরা নাজম : ২৩

যুক্তি কী বলে?
আপনি যদি মুসলিম হোন তাহলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরিক নেই, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহ্‌র রাসুল। আপনি অন্য ধর্মের মতবাদ কে সত্য জেনে সত্য মেনে মুসলিম হতে পারবেন না। মুসলিম হতে হলে বাতিল সব মতবাদ, সব ধর্ম কে ছেড়ে দিয়ে ইসলাম গ্রহন করেই মুসলিম হতে হবে।

যদি সকল ধর্মকে সত্য মানতে হয়, তাহলে হিন্দু ধর্মের ভগনাব যদি সত্য হয়, তাহলে কোন ভাবেই খ্রিষ্টানদের ঈশ্বর সত্য হতে পারে না। আবার খ্রিষ্টানদের ঈশ্বর যদি সত্য হয়, তাহলে হিন্দুদের কয়েক মিলিয়ন ভগবান সত্য হতে পারে না। খুবই স্বাভাবিক হিসাব। আপনি যদি মুসলিম হোন, তাহলে আপনি বিশ্বাস করেন আল্লাহ একমাত্র ইলাহ এবং তাঁর কোন শরিক ও নেই। এই বিশ্বাস পালন করে আবার হিন্দুদের ভগবান ও ইহুদী-খ্রিষ্টানদের ঈশ্বরকে সত্য মনে করা কিভাবে সম্ভব? একজন সত্যবাদী আর একজন মিথ্যাবাদীকে কি মানুষজন একই সম্মান দেয়? দিবে? দিবে না। তাহলে সত্য ইলাহ’র বান্দারা কোন দুঃখে মিথ্যা দেবতাদের গল্পের ধর্মকে সম্মান করতে যাবে? কেন তাদের কে ইসলাম এর কাতারে রাখতে যাবে?

অভিযোগ:
বর্তমানে কিছু শিক্ষিত মানুষ বলে বেড়ায়, সকল ধর্ম সঠিক। আমরা সব ধর্মকে স্বস্থানে সঠিক মনে করি। এখন যার যার ধর্ম পালন করলে মুক্তি পেয়ে যাবে । পবিত্র কুরআনে সূরা কাফিরুনের এই আয়াত দিয়ে দলীল দিয়ে থাকেন,
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِين
তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। -সূরা কাফিরুন : ৬

এই আয়াত দিয়ে মূলত তারা বুঝাতে চায়, ‘সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে’।

জবাব:
‘সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে’ এ তাফসীর ও উদ্দেশ্য গ্রহণ করা মারাত্মক ভুল। কেননা, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পরও নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য কাফেরকে দীনের প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন এবং কাফেররাও মুসলমানদেরকে ইসলাম মানার কারণে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। সুতরাং কুরআন ও হাদীসের আলোকে উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এই বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে বুঝে এসেছে যে, বর্তমান যুগে পরকালে মুক্তির জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মকেই বেছে নিতে হবে। মুক্তির পথ কেবল ইসলামই। অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ব্যতীত মুক্তির অন্য কোন খোলা নেই।

যারা আয়াতটির অর্থ ‘সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে’ এ অর্থ করেন, তাদের মনে রাখা উচিৎ কুরআন ও হাদীসের মনগড়া অর্থ করা মারাত্মক অন্যায়। কেননা নবিজি সাঃ ইরশাদ করেছেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ
যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান না রেখে তাফসীর করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়। -জামে তিরমিযি, হাদিস নং- ২৯৫০

তাহলে আয়াতটির অর্থ কী?
এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী, রহি. তাফসীর অধ্যায়ে সুরা কাফিরুনের তাফসীর করতে গিয়ে লেখেন,
يُقَالُ لَكُمْ دِينَكُمْ الْكَفْرُ وَلِيَ دِينِ الْإِسْلَامُ
তোমাদের দ্বীন হলো কুফর, আর আমার দ্বীন হলো ইসলাম।

উপরন্তু এই আয়াতের তাফসীরে হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহ পানিপতি রহ. লেখেন, ‘এই আয়াতটি মূলত পূর্ববর্তী আয়াতের বিষয়গুলোকে দৃঢ়তর করার জন্য। উদ্দেশ্যে হল, তোমরা তোমাদের ধর্ম পরিত্যাগ করবে না, আর আমরাও আমাদের ধর্ম পরিত্যাগ করব না। -তাফসীরে মাযহারী খ. ১০ পৃ. ৩৫৫

সুতরাং উপরোক্ত আয়াত দিয়ে ‘সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে’ বলা চরম অপব্যাখ্যা ও কুফরী মন্তব্য।

বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মানদণ্ড কী?
ঈমানের দাবি হলো, ‘আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’ অর্থাৎ মুমিনকে ভালোবাসা ও নুসরত করা এবং কাফেরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা। কারো সাথে বন্ধুত্ব হওয়া বা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া উভয়টির মানদণ্ড হলো ইসলাম ও ঈমান। ইসলাম বহির্ভূত কোনো বন্ধুত্ব বৈধ নয়। হাদিস শরীফে হযরত আবু যার রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ স্ঃ বলেছেন,
أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ পোষণ করা অতি উত্তম কাজ। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৫৯৯

হযরত বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
إن أوثق عرى الإيمان أن تحب في الله وتبغض في الله
নিঃসন্দেহে ঈমানের সর্বাপেক্ষা মজবুত হাতল হলো, তুমি আল্লাহরই জন্য ভালোবাসবে, আল্লাহরই জন্য ঘৃণা করবে। -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ১৮৫২৪

উপরন্তু নবিজি সাঃ ও সাহাবায়ে কেরামের রা. প্রশংসা করেছেন মহান আল্লাহ পাক। কারণ হিসাবে বলেছেন, তারা নিজেদের পরস্পরে সহানুভূতিশীল, কিন্তু কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর। মহান রব বলেন,
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ
মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন। -সূরা ফাতহ : ২৯

সুতরাং বুঝা গেলো, অমুসলিম বা বেঈমানদের সাথে কোনো মুসলমানের বন্ধুত্ব হতে পারে না। কারণ অমুসলিমরা কখনও মুসলমানদের ভালো চায় না।

অমুসলিমরা কখনও মুসলিমদের ভালো চায় না:
অমুসলিমরা মুখে মুখে যতই সম্প্রীতি-ভালোবাসার কথা বলুক, দিন শেষে তারা আল্লাহ, রাসুল সাঃ, ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন। মহান রব বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَاعَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ هَاأَنْتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না। তোমরা কষ্টে থাকো, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতামূলক বিদ্বেষ তো তাদের মুখ থেকেই প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। আমি আসল কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ্য হও। দেখো! তোমরা তো এমন যে তোমরা তাদের ভালোবাস, কিন্তু তারা মোটেও তোমাদের ভালোবাসে না। তোমরা তো সমস্ত (আসমানি) কিতাবেই বিশ্বাস করো। অথচ (তাদের অবস্থা হলো) তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ আর যখন যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। (হে নবী, আপনি) বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাকো। আর আল্লাহ্ মনের কথা ভালই জানেন। তোমাদের যদি কোনো কল্যাণ হয়, তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অকল্যাণ হয় তাহলে আনন্দিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্তে তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্ত আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।–সূরা আলে ইমরান : ১১৮-১২০

এ আয়াতে অমুসলিমদের চরিত্র তুলে ধরে তাদের সাথে বন্ধুত্ব গ্রহণ করতে মহান রব নিষেধ করেছেন। উপরন্তু তাদের সাথে কখনই সম্প্রীতি হতে পারে না। কারণ না তারা আমাদের মেনে নিতে পারবে, আর না আমরা তাদের মেনে নিতে পারবো। এ দুশমনি চিরন্তন। এ কথা মহান আল্লাহই বলে দিয়েছেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
বলুন, হে কাফেরগণ, আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি কর। -সুরা কাফিরুন : ১-৩

কাফেরদের চরিত্র সম্পর্কে মহান রব আরও বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنْتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ إِنْ يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُمْ بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ
হে মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে তারা তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে কেবল এই অপরাধে (মক্কা থেকে) বের করে দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্যে এবং আমার পথে জিহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর, তা আমি খুব ভাল করে জানি। তোমাদের মধ্যে কেউ এমনটা করলে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হল। (তাদের চরিত্র হচ্ছে) কোনোরূপে তোমাদেরকে বাগে পেয়ে গেলে তারা তোমাদের মারাত্মক শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও। -সুরা মুমতাহিনা : ১-২

وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا
তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে, যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরাতে পারে; যদি তারা তা করতে সক্ষম হয়। -সূরা বাকারা : ২১৭

لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ
কোনো ঈমানদারের ব্যাপারে এরা যেমন আত্মীয়তার ধার ধারে না তেমনি কোনো অঙ্গীকারের মর্যাদাও রক্ষা করে না। মূলত এরাই হচ্ছে সীমালঙ্গনকারী। –সূরা তাওবা : ১০

لا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
মুমিনগণ যেন মুমিনদের ছেড়ে কাফেরদেরকে নিজেদের মিত্র (কিংবা অভিভাবক) না বানায়। যে এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তাদের (জুলুম) থেকে বাঁচার জন্য যদি আত্মরক্ষামূলক কোনো পন্থা অবলম্বন কর, সেটা ভিন্ন কথা। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তার নিজের সম্পর্কে সতর্ক করছেন। (কারণ, একদিন) তারই কাছে সকলকে ফিরে যেতে হবে। –সূরা আলে ইমরান : ২৮

এভাকে সমগ্র কুরআনের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আল্লাহ তাআলা এ হাকিকত তুলে ধরেছেন। কাজেই কাফেরের সাথে বন্ধুত্ব হতে পারে না।

অমুসলিমদের সাথে কেমন সম্পর্ক হওয়া চাই?
তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে তেমন, যেমনটা আমাদের পিতা ইবরাহিম আ. দেখিয়ে গেছেন। মহান রব বলেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
তোমাদের জন্যে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর অনুসারীদের মাঝে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চিরশত্রুতা ও বিদ্বেষ- যাবৎ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। -সুরা মুমতাহিনা : ৪

আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে কাফেররা জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট। ওদের তো জ্ঞানবুদ্ধি নেই। কিন্তু এসব লোক জ্ঞানবুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও আপন প্রভুর সাথে কুফরি করেছে। আল্লাহ তা’আলা অনেক আয়াতে এ হাকিকত তুলে ধরেছেন-
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
নিঃসন্দেহে সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা কুফর অবলম্বন করেছে, যে কারণে তারা ঈমান আনছে না। -আনফাল : ৫৫

সুুতরাং বুঝা গেলো, অমুসলিমদের সাথে কোনো মুসলমানের বন্ধুত্ব হতে পারে না। কুরআন-সুন্নাহ’র অসংখ্য নুসুস এ আকিদার শিক্ষা দিচ্ছে। এ আকিদা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ইহুদী খ্রিষ্টানদের বন্ধু বানানো যাবে?
প্রশ্ন হলো, ইহুদী-খ্রিষ্টানরা তো আল্লাহ’র কিতাব প্রাপ্ত, তাদের সাথে আচরণ কেমন হবে? তাদের কী বন্ধু বানানো যাবে? এ সম্পর্কে জবাবটি খোদ মহান আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। -সূরা মায়িদা : ৫১

বুঝা গেলো, ইহুদী-খ্রিষ্টানরাও চায় তাদের ধর্মে মুসলমানদের দীক্ষিত করতে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
ইয়াহুদ-নাসারা কিছুতেই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি (তোমার ধর্ম ছেড়ে) তাদের ধর্ম অনুসরণ কর। -সূরা বাকারা : ১২০

সুতরাং বুঝা গেলো, ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সাথেও বন্ধুত্ব আচরণ ইসলাম সম্মত নয়। অতএব বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হতে হবে একমাত্র মুসলিমদের পরস্পরে। নবিজি সাঃ বলেন,
مثل المؤمنين فى توادهم وتراحمهم وتعاطفهم مثل الجسد إذا اشتكى منه عضو تداعى له سائر الجسد بالسهر والحمى
পরস্পর ভালোবাসা, রহমত ও সাহায্যের বেলায় মুমিনদের অবস্থা একটি দেহের মতো। তার কোন অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ বিনিদ্রা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে। -সহীহ বুখারি, হাদিস নং- ৫৬৬৫

কিন্তু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা থাকা ইসলাম সম্মত নয়। তবে তাদের প্রতি জুলুম করাও যাবে না। এটাই ইসলাম।

ইন্টারফেইথ ও দাজ্জালীয় সভ্যতা:
দাজ্জালের চেতনা কি সেটা লিখতে গিয়ে বায়েজিদ খান পন্নী লিখেছেন। দাজ্জাল এসে বলবে,
হে মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ, হিন্দু ধর্মের লোকেরা! তোমরা তোমাদের ধর্ম যে যার মত পালন করো। অসুবিধা নেই। আমার কোন আপত্তি নেই। তবে সাবধান! কখনো সার্বভৌমত্ব তথা তওহীদের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলো না। কারণ আমিই রব। -দাজ্জাল, পৃ. ৭৩

অর্থাৎ বুঝা গেলো, সর্বধর্মীয় ঐক্য এটা দাজ্জালীয় সভ্যতা। আর সেদিকেই ডাকছে হেযবুত তওহীদ। এ জন্য হেযবুত তওহীদের উপদেষ্টা হিসাবে অমুসলিমদেরকেও রাখা হয়। তারা লিখেছে,
হেযবুত তৌহিদী আন্দোলনের উপদেষ্টা হিসেবে যারা বেশি অগ্রাধিকার পাবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরু। -গঠনতন্ত্র : পৃ. ৪৩

এমনকি সব ধর্মের লোকেরা হেযবুত তওহীদের সদস্য হতে পারবে। তারা লিখেছে,
ধর্ম-বর্ণ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই হেযবুত তওহীদের সদস্য হতে পারবে’। -গঠনতন্ত্র : পৃ. ২৩

তাহলে বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদ সকল ধর্মের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে মূলত দাজ্জালের সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সর্বশেষ একটি কথা স্বরণ করিয়ে দিতে চায়। পুরো পৃথিবীর সকল অমুসলিম ইসলামকে ধ্বংশ করার মিশনে নেমেছে। তাদের সম্পর্কে মুসলিমদের সতর্ক করে মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছে, তোমরা তাদেরকে এবং কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে মুমিন হয়ে থাক, তাহলে একমাত্র আল্লাহকেই (বন্ধু বানাও এবং তাকেই) ভয় কর। -সূরা মায়িদা : ৫৭

ধর্মবিদ্বেষী হেযবুত তওহীদ:
হেযবুত তওহীদ মূলত সকল ধর্মের সমাজ থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজস্ব মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এ জন্য ধর্মের ব্যাপারে একটার পর একটা অপব্যাখ্যা চালিয়েই যাচ্ছে। অবশেষে তারা তাদের আসল রুপ প্রকাশ করে দিয়েছে। দেখুন ধর্মের প্রতি তাদের বিদ্বেষের কয়েকটা নমুনা।

এক. ধর্ম দ্বারা জাতী ধ্বংশ হচ্ছে:
তারা লিখেছে, ‘ধর্ম জাতীয় উন্নতি অগ্রগতির পরিবর্তে ধ্বংসের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে করে ধর্মের প্রতি মানুষের ঘৃণা, বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। – ধর্ম বিশ্বাস, পৃ. ৯

দুই. সকল বড় সমস্যার কারণ ধর্ম:
তারা লিখেছে, ‘চলমান দুনিয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে বড় বড় সমস্যাগুলো বিরাজ করছে সেগুলোর উৎপত্তি ধর্মকে কেন্দ্র করেই। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের প্রসঙ্গে এখানে আসছি না, তবে সেখানেও যাবতীয় সংকটের প্রধান কারণ যে ধর্ম একটু ভেবে দেখলে সকলে তা বুঝতে সক্ষম হবেন। – জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৬৬

তিন. ধর্মগুলোই অশান্তির কারণ
তারা লিখেছে, প্রচলিত ধর্ম গুলোই মানুষের জীবনে অনেকাংশে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। -ধর্মবিশ্বাস, পৃ. ৫

প্রচলিত ধর্ম গুলোই মানুষের জীবনে অনেকাংশে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ এগুলো শত সহস্র বছর ধরে বিকৃত হতে হতে বর্তমানের রুপ ধারণ করেছে। -জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৬৭

চার. ধর্মের কারণেই রক্তপাত হয়:
তারা লিখেছে, ‘ধর্মের নামে যে পরিমাণ রক্তপাত হয়েছে তেমনটা আর কোনো কারণে হয়নি। -ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৭২

পাঁচ. সকল ধর্ম বিষে পরিনত হয়েছে:
তারা লিখেছে, ‘ধর্ম থেকে ধর্ম ব্যবসার মাধ্যমে এর প্রাণকে নিংড়িয়ে নিয়ে বের করে নেওয়া হয়েছে, ফলে বর্তমানে প্রতিটি ধর্মই বিষে পরিণত হয়েছে। খাদ্য হিসেবে মানুষকে সেই বিষাক্ত বর্জ্যই গেলানো হচ্ছে। এর কারণ এই ধর্ম থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ ফতোয়াবাজি সাম্প্রদায়িকতা হুজুগে উম্মাদনা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষতিকারক রোগজীবাণু, প্যারাসাইট। -ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ১৩৯

ছয়. ধর্মগুলো সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যার্থ:
তারা লিখেছে, ‘প্রতিটি ধর্মই বিকৃত হয়ে গেছে এবং সেগুলো আত্মাহীন বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিয়ে মানুষের মনের স্বাভাবিক বিকাশসাধন ও জীবনযাপনের জন্য সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যার্থ হচ্ছে’। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ১৫

সাত. সকল ধর্ম আফিম:
তারা লিখেছে, ‘কাল মার্চ সকল ধর্মকে আফিম বলেছেন। সেজন্য তাকে কিছুমাত্র দোষ দেই না, তিনি একেবারে সত্য কথা বলেছিলেন’। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৬০

এক কথায় তারা বলতে চায়, পৃথিবীর সকল সমস্যার একমাত্র কারণ হলো, ধর্ম।

ইসলাম কী বলে?
পৃথিবীর সকল সমস্যা মূল কারণ হলো, ক্ষমতার আধিপত্য ও বাতিল ধর্মের নোংড়ামী। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করার একমাত্র উপায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা। এই ইসলাম যদি প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে কেউ কোনো অন্যায় করতো না, রক্তপাত হতো না। নিন্মে বৈশ্বিক কিছু হানাহানীর ঘটণা খেয়াল করুন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার কারণ:
১৯১৪ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে বলকান অঞ্চলে এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। আর শেষ হয় ১৯১৮ সালের ১১ই নভেম্বর বেলা ১১টায়। এ যুদ্ধে নিহত হয় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ এবং আহত হয় দুই কোটি। পাক-ভারত-বাংলা উপমহাদেশ থেকে ১৩ লাখ সৈন্য ব্রিটেনের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়। তার মধ্যে নিহত হয় ৭৪ হাজার। -নয়াদিগন্ত ১১ নভেম্বর ২০১৮ ঈসায়ী

১৯১৪ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের হবু সম্রাট ডিউক ফার্দিনান্দ সিংহাসনে আরোহণের কিছুদিন আগে সারায়েভো শহরে স্ত্রীসহ সার্বিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদী আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। অস্ট্রিয়ার যুবরাজের হত্যাকাণ্ড ছাড়াও আরো কিছু কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে। উনিশ শতকে শিল্প বিপ্লবের কারণে সহজে কাঁচামাল সংগ্রহ, তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য উপনিবেশ স্থাপনে প্রতিযোগিতা, আগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ। -কালেরকণ্ঠ, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

এ ছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসাবে গবেষকরা কূটনৈতিক ব্যর্থতা, পারস্পারিক সন্দেহ ও জোট গঠন, সাম্রাজ্যবাদ, সমরবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি বিষয়গুলিকে চিহ্নিত করে থাকেন। -উইকিপিডিয়া।

এভাবে করে হিটলার ১১ থেকে ১৪ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছিলো। যেখানে ধর্মের কোনো ছোঁয়া ছিলো না। ছিলো শুধুমাত্র আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিশোধের আগুন।

একটি সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। নাৎসিবাদের প্রবক্তা ১৯৩৪ সালে নিজেকে সমগ্র জার্মানির প্রভু হিসেবে ঘোষণা করেন। জাহির করেন নিজের ক্ষমতা। নাৎসিরা তাদের বিরোধী পক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল। ১৯৩৯ সালে ক্ষমতাসীন নাৎসিরা পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। – বাংলাদেশ প্রতিদিন ৬ অক্টোবর, ২০১৯ ঈসায়ী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার কারণ:
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৮ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। -প্রথমআলো ২/৯/২০১৯ ঈসায়ী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণসমূহের মধ্যে বৃহৎ পরিসরে কারণ ছিল ১৯৩৩ সালে আডলফ হিটলার ও তার নাৎসি পার্টির জার্মানির রাজনৈতিক অধিগ্রহণ এবং এর আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি; এবং ক্ষুদ্র পরিসরে কারণ ছিল ১৯২০-এর দশকের ইতালীয় ফ্যাসিবাদ এবং ১৯৩০-এর দশকে জাপান সাম্রাজ্যের চীন প্রজাতন্ত্রের আক্রমণ। -উইকিপিডিয়া।

কম্বোডিয়ার গণহত্যা:
জানুয়ারী ১৯৭৯ এর মধ্যে খেমার রুজ নীতির কারণে ১.৫ থেকে ২ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো। -উইকিপডিয়া।

এভাবে করে ১৯১৭ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘মানবতাবাদী’ কমিউনিষ্ট সরকার হত্যাকরেছে তাদের দেশের ৫৫ মিলিয়ন তথা সাড়ে পাঁচ কোটি) পুরুষ, নারী এবং শিশুদের হত্যা করে।
৩রা নভেম্বর ২০০২ থেকে শুরু করে পরের ১০ বছরে মার্কিন দ্রোন হামলায় মারা গেছে ৪৭০০ মানুষ যাদের মধ্যে আছে স্কুলগামী শিশু, বিয়েতে যোগ দিতে যাওয়া বরযাত্রীসহ অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ। -Josh Begle’s DroneStream

হেযবুত তওহীদের কাছে আমার প্রশ্ন: এই হত্যাকান্ডের কোন্‌টি ধার্মিকেরা করেছে? আর স্পেসিফিকভাবে বললে, কোন্‌টা মুসলমানেরা করেছে? বরং, যে জাতি যত ধর্মবিরোধী ছিল, সেই জাতি ছিল ততো নিষ্ঠুর। পক্ষান্তরে ইসলামের ইতিহাস যদি ঘাটেন তো দেখবেন মুসলিমরা কখনোই জোর করে তাদের ধর্ম অন্য মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়নি। ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নির্বিঘ্নে ধর্ম-চর্চার অধিকারের ইতিহাস নিয়ে মুসলিমরাই শুধু নয়, অমুসলিমেরাও শত শত গবেষণামূলক লেখা লিখেছেন। তাহলে বিশ্বের সকল সমস্যার জন্য মূল ধর্মকে দোষ দিয়ে হেযবুত তওহীদ আসলে কী বুঝাতে চায়?

মতলব কী?
হেযবুত তওহীদ মূলত সকল ধর্মের সমাজ থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজস্ব মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এ জন্য ধর্মের ব্যাপারে একটার পর একটা অপব্যাখ্যা চালিয়েই যাচ্ছে। অবশেষে তাদের আসল রুপ প্রকাশ করে দিয়েছে। তারা হেযবুত তওহীদ মতবাদকেই সুপরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এজন্য সকল মানবজাতিকে লক্ষ করে তারা আহ্বান করে লিখেছে,
ডান-বাম যা-ই হোন না কেন, মানুষের অশ্রুতে যার হৃদয় সিক্ত হয়, ঘুঁনে ধরা সমাজটিকে যারা পুনঃ নির্মাণ করতে চান, সর্বপ্রকার অবিচার অত্যাচার ও শোষণের প্রতিবাদে যার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ওঠে, সেই মানবধর্মের অনুসারীদের প্রতি আমাদের আহ্বান- আসুন পাওয়া গেছে’। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১২

যদি মানুষ আমাদের কথা বোঝে, সাড়া দেয়, দাজ্জালের শেখানো বর্তমানে মানুষের সার্বভৌমত্বের অর্থাৎ শেরক ও কুফরকে ছেড়ে দিয়ে তওবা করে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তাওহীদভিত্তিক দীন, জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করে নেয় তাহলে তারা পার্থিব ও পরকালের জীবনের শান্তি ও গৌরবের অধিকারী হবে। -হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পৃ. ১৬

সুতরাং বুঝা গেলো, ধর্মের বিরোধীতা করে মূলত তারা তাদের মতবাদকেই প্রোমোট করতে চায়। কিন্তু বলতে চাই, ‘বামন হয়ে চাঁদ দেখা ঠিক না’ পাগলের প্রলাপ জাতি নেবে না। পাগল কেন বললাম জানেন, এই হেযবুত তওহীদ ধর্মের বিরুদ্ধে এত এত কথা লেখার পর আবার অন্যত্র লিখেছে,
হেযবুত তওহীদ ধর্মের পক্ষ নিয়েছে বলে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা উচিত হবে না। আমরা কি বলি কি চাই কিভাবে চাই। তা সঠিক ভাবে জানুন। জানার জন্য যত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে চান করুন। অনুমান করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই’। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৩৬

তাহলে আপনারাই বলুন, একদিকে ধর্মের বিরোধীতা, অপরদিকে নিজেদেরকে ধর্মের পক্ষ শক্তি বলে দাবি করা। এক মুখে দু’রকম কথা কী কখনও সুস্থ মানুষ বলে?

 

Check Also

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.