মারিয়া কিবতিয়ার রা. পরিচিতি।
এ ব্যাপারে কথা হলো, মিশরের আল ইস্কান্দারিয়া বা আলেকজান্দ্রিয়ার সম্রাট মুকাওকিসকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন রাসুলুল্লাহ সা.। মুকাওকিস অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে সে চিঠির জবাব দিয়েছিলেন এবং এ চিঠির সাথে কিছু উপঢৌকনও পাঠিয়েছিলেন। যার প্রমাণ হাদিসগ্রন্থে পাওয়া যায়।
بعث المقوقس صاحب الإسكندريّة إلى رسول اللَّه صلّى اللَّه عليه وآله وسلّم في سنة سبع من الهجرة بمارية وأختها سيرين
অর্থাৎ মিশরের আল ইস্কান্দারিয়া বা আলেকজান্দ্রিয়ার সম্রাট ৭ম হিজরীতে দাসী মারিয়া কিবতিয়া রা. ও তাঁর বোন সিরিন রা. কে উপঢৌকন হিসাবে প্রদান করেন।
সূত্র: আল ইসাবাহ (আসকালানী) খ. ৮ পৃ. ১৮৫
মারিয়া কিবতিয়া রা. কি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন?
হ্যাঁ, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং উত্তমরুপে গ্রহণ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসের কিতাবে এসেছে,
وبعث بذلك كلّه مع حاطب بن أبي بلتعة، فعرض حاطب بن أبي بلتعة على مارية الإسلام ورغبها فيه فأسلمت، وأسلمت أختها
অর্থাৎ তাঁকে হাতেব ইবনে আবী বালতাআর রা. মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন। অতপর হাতেব ইবনে আবী বালতাআ রা. তাঁর সামনে ইসলামের দাওয়াত পেশ করে মুসলিম হতে উৎসাহ দিলে মারিয়া কিবতিয়া রা. ও তাঁন বোন ইসলাম গ্রহণ করেন।
সূত্র: আল ইসাবাহ (আসকালানী) খ. ৮ পৃ. ১৮৫
নবীজি সা. কয় জনকে গ্রহণ করেন?
এ দুজন বাদীর মধ্যে নবীজি সা. একজনকে নিজের জন্য গ্রহণ করলেন।
واتخذ إحدى الجاريتين لنفسه
অর্থাৎ নবীজির সা. উভয়ের মধ্যে মাত্র একজনকে নিজের জন্য গ্রহণ করলেন।
সূত্র: আল ইসাবাহ (আসকালানী) খ. ৮ পৃ. ১৮৫
অপর বর্ণনায় এসেছে,
وأما أختها سيرين فوهبها رسول الله صلى الله عليه وسلم لحسان بن ثابت فولدت له ابنه عبد الرحمن بن حسان
অর্থাৎ হযরত মারিয়ার রা. বোন সিরিনকে রা. নবীজি সা. হযরত হাসসান বিন সাবিতকে রা. দান করে দেন। অতপর আব্দুর রহমান ইবনে হাসসান নামক তাঁদের একটি সন্তানও হয়।
সূত্র: আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ খ. ৮ পৃ. ২২৮
প্রিয় পাঠক, এখানে একটু ভেবে দেখুন তো, নবীজির সা. চরিত্র যদি খারাপ হতো, তিনি কি দুজনের একজনকে গ্রহণ করতেন? পরিপূর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি গ্রহণ করলেন না। এর দ্বারা কি তাঁর চরিত্রের মাধুর্যতা প্রকাশ পায় না? নাস্তিকরা শুধু সমালোচনাই করেন, বাট প্রশংসা তাদেকে বাবা-মা শেখায়নি।
শারিরিক সম্পর্ক নিয়ে পর্যালোচনা:
সময়ের কচিকাচা নাস্তিকরা রাসুলুল্লাহর সা. সামলোচনা করতে গিয়ে বলে, মুহাম্মাদ সা. দাসী মারিয়া কিবতিয়ার রা. সাথে কিভাবে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন? তিনি যদি চরিত্রবাণ হতেন, তাহলে বিয়ে না করে দাসীর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করতেন না।
যুক্তিভিত্তিক জবাব:
এক.
নাস্তিক্যবাদ এ ধর্মের মূল থিম হলো যুক্তি। তো চলুন যুক্তি দিয়ে প্রথমত বিষয়টি খোলাসা করা যাক। যেমন, কেউ যদি আপনাকে একটা মোবাইল উপহার দেয়, সেটা ব্যবহার না করে আপনি সব সময়ের জন্য পকেটে রেখে দিলেন। অথবা ব্যবহার করলেন। এখন এ মোবাইলটি ব্যবহার করা না করা একান্ত আপনার ইচ্ছা। কারণ মোবাইলটির মালিক একচ্ছত্রভাবে আপনি। এখন আমার-
প্রশ্ন: ১
আপনি ব্যবহারিকবস্তু এ মোবাইল নামক জিনিষটি ব্যবহার না করে শুধু পকেটে রেখে দিলেন। আপনি কি বুদ্ধিমান না বোকা? নিশ্চয় বোকা। কারণ এ মোবাইলটি ব্যবহার না করলে ২০ বছর পরে হলেও নষ্ট হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: ২
যদি আপনি উক্ত মোবাইলটি ব্যাবহার করেন, আর তৃতীয় কোনো ব্যক্তি এসে যদি আপনাকে বলে যে, কেন মোবাইলটি ব্যবহার করলেন? আপনি একজন অপরাধী! আপনার অভ্যাস ভালো না। তাহলে আপনি বিষয়টি কোন নজরে দেখবেন? নিশ্চয় ৫ মিনিট তার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে চেয়ে ভাববেন, ‘লোকটা হয়তো পাবনা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে।’ কারণ মালিক যদি তার মালিকানাধীন জিনিষ ব্যবহার করে তাহলে সেটা তার জন্য অবৈধ নয়।
এখন বলুন, উক্ত মোবাইলটি ব্যবহার করার কারণে আপনি কি অপরাধী হবেন? নিশ্চয় না। তাহলে নবীজিকে সা. জনৈক রাজা একটি দাসী উপহার দিয়েছেন। সেটা তিনি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন না রেখে দেবেন এটা নিছক তাঁর ইচ্ছা। সেখানে আপনি প্রশ্ন তোলার কে? ঐ লোকটার মত কি তাহলে আপনিও পাবনা গারদ থেকে পালিয়ে আসছেন?
হ্যাঁ, এখন আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি কেন মহিলাকে একটা মোবাইলের সাথে তথা কমদামী একটা বস্তুর সাথে তুলনা করলেন। মহিলা কি বস্তু?
নিশ্চয় না। যেহেতু আপনি একজন যুক্তিবাদী, সে হিসাবে আপনার সামনে আমি জাষ্ট একটা উদহরণ দিয়েছি। আর উদহরণ কখনও বাস্তব হয় না। যেমন ধরুন আপনাকে বললাম, আপনি ছাগলের মত ভ্যা ভ্যা করেন, তার মানে কি আপনি সত্যি সত্যিই ছাগল? যদি না হন, তাহলে আমার যুক্তিতে কোনো মহিলাকে মোবাইলের সাথে তুলনা করা মানেই সে আসলেই মোবাইল হয়ে যায়নি।
এখন হয়তো বলবেন, মহিলা আর মোবাইল কি কখনও সমান হয়? তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, বউ আর ভাবি কি সমান হয়? নিশ্চয় না। অথচ আপনারা বলেন, নিজের বিবাহিতা বা অবিবাহিতা যে কোনো নারীর সাথে উভয়সম্মতিতে যৌনাচার বৈধ? সেটা কেমনে সমান হলো? হয়তো বলবেন, এটা তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তাহলে আমার জবাব হলো, উপহার হিসাবে পাওয়া উক্ত দাসী মারিয়া কিবতিয়ার রা. সাথে নবীজি সা. কখনও জোরপূর্বক সহবাস করেননি। তাঁদের মধ্যে যা হয়েছে, উভয়সম্মতিতে হয়েছে। এটাও তাঁদের একান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা। এখানে নাক গলানো আপনার জন্য কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
সুতরাং এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নবীজি সা. উক্ত দাসীর সাথে যা করেছেন, সেটা আপনাদের লিভ টুগেদার থিউরী অনুযায়ী কোনো অপরাধ না।
দুই.
নাস্তিকদের দ্বিতীয় আরেকটি থিম হলো প্রকৃত মানব সেই যে মানবদরদী। এখন বিষয়টি একটু ভাবুন। কোনো দাসীর জন্য অন্য কোনো পুরুষের সাথে সহবাস করা ইসলামে বৈধ ছিলো না। কারণ নিজের মালিকানাধীন জিনিষ অন্য কারো জন্য ব্যবহার করা নাস্তিক থিউরীতেও অন্যায়। সুতরাং উক্ত দাসীর মালিক ছিলেন, শুধুমাত্র নবীজির সা.। এখন উক্ত দাসীর সাথে যদি মালিক সহবাস না করেন, তাহলে সে তার যৌবিক চাহিদা কোথায় পুরণ করবে? তার যৌবনের চাহিদা পুরণ না করলে সে কি যৌবিক চাহিদা অপুর্ণতায় কষ্ট পাবে না? সুতরাং এমন একজন অসহায় মানুষের শারিরিক সেবা করা কি মানবতার একটা অংশ নয়? নাস্তিক থিউরীতে এটা কি অন্যায়? নিশ্চয় না। তাহলে যদি কোনো মালিক তার দাসীর সাথে সহবাস করে মানবতার সেবা করেন, সেটা কিভাবে আপনি অপরাধ হিসাবে উল্লেখ্য করেন?
সুতরাং প্রমাণ হলো, দাসী হোক বা স্বাধীন নারী হোক, নাস্তিকদের কাছে উভয়সম্মতিক্রমে অবৈধভাবেও শারিরিক সম্পর্ক করা বৈধ। এতএব নবীজি সা. মারিয়া কিবতিয়ার রা. সাথে তাঁর সম্মতিতেই শারিরিক সম্পর্ক করেছেন এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ কি রয়েছে নাস্তিকদের? নিশ্চয় না।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে জবাব:
এবার চলুন ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? মনে রাখবেন, আল্লাহ তা’আলা ইসলাম ধর্মের মূল আবিস্কারক। কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম সেটা মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থসমূহে উল্লেখ্য রয়েছে। আর মালিকানাধীন দাসীর সাথে সহবাস করা বৈধতা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ ,الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاء ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
অর্থ: মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র, যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।
সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-৭
আরেকটি সহিহ হাদিসে এসেছে,
عن أنس أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كانت له أمة يطؤها فلم تزل به عائشة وحفصة حتى حرمها على نفسه فأنزل الله عز وجل يا أيها النبي لم تحرم ما أحل الله لك إلى آخر الآية
অর্থাৎ হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর কাছে একটি বাঁদি ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ সা. সহবাস করতেন। এতে আয়েশা রা. এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর সাথে লেগে থাকলেন।পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বাঁদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্পাক নাযিল করেনঃ (আরবি) “হে নবী আল্লাহ্আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন? (সূরা তাহরীমঃ ০১) নাযিল করেন।
সূত্র: সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩৯৬৯
এ ধরণের কয়েকটি আয়াত ও সহিহ হাদিস রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসিদের সাথে সহবাস করাতে বৈধতা দিয়েছেন খোদ আল্লাহ তা’আলা নিজেই। সুতরাং মারিয়া কিবতিয়ার রা. সাথে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তো নবীজি সা. তো কোনো অন্যায়-পাপ কাজ করেননি।
মারিয়া রা. কি দাসী ছিলেন না স্ত্রী?
হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া রা. স্ত্রী হোন বা দাসী হোন এ ব্যাপারে মুসলিমদের জানাটা জরুরি নয়। কারণ স্ত্রী হলে যেমন তাঁর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করা বৈধ, ঠিক তেমনি দাসী হলেও কোসো অসুবিধা নেই। যা আমি ইতিপূর্বে পবিত্র কুরআনের আয়াত দিয়ে প্রমাণ করেছি। তথাপিও এ বিষয়টি ক্লিয়ার করা উচিৎ বলে মনে করছি।
প্রিয় পাঠক, হযরত মারিয়া কিবতিয়া রা. দাসী হওয়ার কথাই শুধু নাস্তিকরা পেশ বরলেও তাঁকে নবীজি সা. যে স্ত্রীর মত অধিকার ও সম্মান দিয়েছিলেন, সেটা কিন্তু তারা প্রচার করে না। নিন্মোক্ত হাদিস দেখলে নবীজির সা. কাছে হযরত মারিয়ার সা. অবস্থান কি ছিলো সেটা প্রতিয়মান হয়। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু যর রা. বলেন, নবীজি সা. বলেছেন,
إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ أَرْضًا يُذْكَرُ فِيهَا الْقِيرَاطُ فَاسْتَوْصُوا بِأَهْلِهَا خَيْرًا فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا
অর্থাৎ শীঘ্রই তোমরা এমন একটি ভূখণ্ড বিজয় লাভ করবে, সেখানে কীরাতের (দিরহাম বা দীনারের অংশবিশেষ) প্রচলন আছে। তোমর সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে, সদাচরণ করবে। কেননা তোমাদের উপর তাদের প্রতি আছে যিম্মাদারী এবং আত্মীয়তা।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৪৩
এখান খেকে প্রতিয়মান হয় যে, হযরত মারিয়ার রা. অবস্থান নবীজির সা. কাছে স্ত্রীর মর্যাদা ছিলো। কারণ মিশর হযরত মারিয়ার রা. জন্মস্থান ছিলো। এখান থেকে আরেকটি কথা প্রমাণ হয় যে, নবীজি সা. সর্বশ্রেষ্ট মানব ছিলেন। কারণ মারিয়া রা. যদি নবীজির স্ত্রী নাও হন, তবুও তিনি দাসীর পরিবারকে আত্মীয়তার মর্যাদা দিয়েছেন। কতবড় মহামানব তিনি ছিলেন! এটার জন্য তো নবীজিকে সা. সর্বশ্রেষ্ট মহামানব বলা দরকার ছিলো। কিন্তু তাদের চোখ কানা, অন্তর মৃত, যবান বোবা।
অপর একটি হাদিসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ ذُكِرَتْ أُمُّ إِبْرَاهِيمَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَ “ أَعْتَقَهَا وَلَدُهَا
অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (তাঁর পুত্র) ইবরাহীমের মা (মারিয়া কিবতিয়া) ’র কথা উত্থাপিত হলে তিনি বলেনঃ তার সন্তান তাকে দাসত্বমুক্ত করেছে।
সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৫১৬
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ قَالَ مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَلَا عَبْدًا وَلَا أَمَةً إِلَّا بَغْلَتَهُ الشَّهْبَاءَ الَّتِي كَانَ يَرْكَبُهَا وَسِلَاحَهُ وَأَرْضًا جَعَلَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالَ قُتَيْبَةُ مَرَّةً أُخْرَى صَدَقَةً
অর্থাৎ আমর ইবন হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনার-দিরহাম (স্বর্ণ মুদ্রা-রৌপ্য মুদ্রা, টাকা-পয়সা), দাস-দাসী কিছুই রেখে যান নি, একটি সাদা (শাহবা) খচ্চর ব্যতীত, যাতে তিনি আরোহণ করতেন; আর তাঁর হাতিয়ার (রেখে যান)। আর তাঁর যমীন যা তিনি আল্লাহর রাস্তায় দান করে যান। কুতায়বা (রহঃ) কখনো বলেনঃ (এগুলো) তিনি সাদাকারূপে রেখে যান।
সূত্র: সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩৫৯৫
সুতরাং উক্ত হাদিস থেকে বুঝা গেলো, নবীজি সা. ইন্তেকালের আগে হযরত মারিয়াকে রা. আযাদ করে বিয়ে করেছিলেন। কারণ
এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হয়েছে তিনি তাঁর কোনো দাস অথবা দাসী রেখে কিছুই রেখে যাননি এর মানে তাঁর সব দাসীদের তিনি মুক্ত করে দেন অথবা মুক্ত করে বিয়ে করে নেন। আর উপরে বর্ণিত প্রমাণ থেকে পরিস্কার যে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা)কে নবীজি (সা) বিয়ে করেছিলেন পরবর্তী সময়ে।
উপরোক্ত দুটি হাদিস থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, মারিয়াকে রা. রাসুলুল্লাহ সা. আযাদ করে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ইসলামী বিধান অনুযায়ী তিনি যদি বিয়ে নাও করেন, তবুও কোনো প্রোবলেম নেই। কারণ ইসলামে সহবাসের ক্ষেত্রে নিজের দাসীর বিধান স্ত্রীর মতই।
দাসীকে ধর্ষণ করেছিলেন?
সময়ের নাস্তিকরা নবীজির সা. সমালোচনা করার এক পর্যায়ে বলে থাকে যে, নবীজি সা. দাসীকে ধর্ষণ করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ। নাস্তিকরা কিভাবে হযরত মোহাম্মদ সা. কে নিয়ে এমন জঘন্যতম মিথ্যাচার করে যাচ্ছে? নাস্তিকরা কি দেখাতে পারবে নবীজি সা. মারিয়া আল কিবতিয়া রা. কে কখনো অত্যাচার করেছিলেন? নির্যাতন করেছিলেন? যৌন সহবাসের জন্য জবরদস্তি করেছিলেন? নবীজি সা. কখনও বলেছিলেন তোমরা দাসীদেরকে ধর্ষণ করো? যদি না পারে তাহলে মুক্তমনে নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে কোন যুক্তিতে? কাদেরকে খুশি করার ইসলাম নিয়ে এমন ভয়ংকর জালিয়াতি করে যাচ্ছে মুক্তমনারা? প্রশ্ন গুলো নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যাচ্ছে।
নবীজি সা. কাউকে কখনও ধর্ষণ, নির্যাতন করা তো দূরের কথা কখনও কাউকে প্রহারও করেননি। চলুন এব্যাপারে নবীজির স্ত্রীর মুখ থেকেই শোনা যাক। হাদিসে এসেছে,
مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئًا قَطُّ بِيَدِهِ وَلاَ امْرَأَةً وَلاَ خَادِمًا إِلاَّ أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا نِيلَ مِنْهُ شَىْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمَ مِنْ صَاحِبِهِ إِلاَّ أَنْ يُنْتَهَكَ شَىْءٌ مِنْ مَحَارِمِ اللَّهِ فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ .
অর্থাৎ আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বহস্তে কোন দিন কাউকে আঘাত করেননি, কোন নারীকেও না, খাদিমকেও না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত। আর যে তার অনিষ্ট করেছে তার থেকে প্রতিশোধও নেননি। তবে আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন বিষয়ে তিনি তার প্রতিশোধ নিয়েছেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩২৮
সুতরাং বুঝা গেলো, নবীজি সা. কখনও কাউকে নির্যাতন করেননি। অতএব মারিয়ার রা. সাথে নবীজির সা.শারিরিক সম্পর্কটাও হয়েছে উভয়সম্মতিক্রমে। সুতরাং নাস্তিকরা নিজেদের লিভটুগেদার থিউরী দিয়ে কিভাবে নবীজির সা. ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে পারে?
নাস্তিক্যধর্মে দাসী অবৈধ:
প্রতিটি মুক্তমনা নিজের নৈতিকতা নিজেই তৈরি করতে যে কোনো ধরণের মুক্তচিন্তা করতে স্বাধীন। কোনো নাস্তিক যদি চায় নিজের মায়ের সাথে যেমন যৌন সংগম করতে পারে তেমনি নিজের কন্যা সন্তানের সাথে যৌন সংগমও করতে পারে। কিন্তু
প্রিয় পাঠক, নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে যৌনাচার বৈধ হওয়ার জন্য উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে এবং সেই নারীর যেন ক্ষতি না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই নৈতিকতা ঠিক রেখে যে কোনো নাস্তিক যার সাথে ইচ্ছা তার সাথেই যৌন সংগম করার ব্যক্তিস্বাধীনতা পাবে। সে হিসাবে তারা তাদের মা,বোন,মেয়ে, দাদি,নানি সবার সাথেই সম্মতিক্রমে এবং ক্ষতিকর বিষয়ে সতর্ক থেকে যৌনসঙ্গম করতে পারে। এগুলো সবই নাস্তিকদের মুক্তচিন্তার অংশ। এজন্য নাস্তিকদের মহাগুরু নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখেছে,
‘নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিত সংকীর্ণ; আমার কোনো কাজ যেনো অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, এটুকু।’
সূত্র: আমার অবিশ্বাস পৃ. ১৪৩
সুতরাং এই নীতি সামনে রেখে যে কোনো নাস্তিক চাইলেই নিজের জন্য দাসী রাখার অধিকার পাবে। প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকদের কাছে নিজের মায়ের সাথে যৌন সংগম করার বৈধতা দেয়, নিজের নাস্তিক বোনের সাথে যৌন সংগম করার বৈধতা দেয় সম্মতিতে, এমনকি কোনো সমকামী নাস্তিক পিতা চাইলে নিজের সমকামী নাস্তিক ছেলের সাথে যৌন সংগম করার ব্যক্তিগত অধিকার রাখতে পারবে, সেখানে হাতেগোনা কিছু নাস্তিকরা দাসী রাখা অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাকে কেন খারাপ হিসেবে দেখাতে চায় সেটাই তো এক বড় সংশয়? নাস্তিকরাই না বলে কে কার সাথে সহবাস করবে সেটা একান্ত তার ব্যাপার? নাস্তিকরা কি নিজেদের নাস্তিক্যধর্মের নীতি-নৈতিকতা বোঝে না?
সুতরাং প্রমাণ হলো,
১. নবীজি সা. হযরত মারিয়াকে রা. কালক্রমে বিয়েও করেছিলেন।
২. দাসী হিসাবে থাকলেও তাঁর কোনো ক্ষতি কখনও নবীজির সা. দ্বারা হয়নি।
৩. মারিয়ার রা. উপর কখনও নবীজি সা. নির্যাতন করেননি।
সুতরাং নাস্তিক্যবাদের থিউরী অনুযায়ী নবীজির সা. দাসী রাখার বিষয়টি কোনো অনৈতিকতার আওতায় পড়ে না। পাশাপাশি যে ধর্মের অনুসারী ও প্রচারক হিসাবে রাসুলুল্লাহ সা. পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন, মে ধর্মেও এটা বৈধ ছিলো। সুতরাং নবীজির উক্ত কাজ অবৈধ বলে বা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করার কোনো সুযোগ নেই।
খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্মে দাসীর বৈধতা:
নবীজি সা. দাসীর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করেছিলেন বলে, খ্রিষ্টান মিশনারীর লোকজনও এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অথচ ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্মে হযরত ইবরাহীম আ. এক মহান নবী বলে মাননীয়। যাঁকে ইহুদী ও খ্রিষ্টানরাও শ্রদ্ধা করে থাকেন। খ্রিষ্টান ও ইহুদীরা তাঁকে ইব্রাম বলে চেনেন। সেই ইবরাহীম আ. নিজেও একজন দাসী থেকে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন বলে বাইবেলে উল্লেখ্য আছে। চলুন প্রমাণ দেখে নেয়া যাক।
বাইবেলের কিতাবুল মোকাদ্দস বাংলা অনুবাদে আলোচ্য অংশটি এভাবে আছেঃ
“আর সারীর দরুন ফেরাউন ইব্রামের সংগে ভাল ব্যবহার করতে লাগলেন। তিনি ইব্রামকে অনেক ভেড়া, গরু, গাধা, গাধী, উট এবং গোলাম ও বাঁদী (দাসী) দিলেন।’
সূত্র: বাইবেল [কিতাবুল মোকাদ্দস অনুবাদ], পয়দায়েশ ১২ : ১৬
শুধু তাই না, মিসরীয় এক দাসী হাগার [আরবি ‘হাজার’ বা বিবি হাজেরা] এর গর্ভে ইব্রাহিম(আ.) এর সন্তান ইসমাঈল(আ.) জন্মেছিলেন বলে বাইবেলে উল্লেখ আছে।
‘ইশ্মায়েলের বংশ বৃত্তান্ত এই| অব্রাহাম ও হাগারের পুত্র ছিলেন ইশ্মাযেল| (হাগার ছিলেন সারার মিশরীয দাসী|’
সূত্র: বাইবেল , আদিপুস্তক (Genesis) ২৫ : ১২
প্রিয় পাঠক, উপহার হিসাবে দাসী গ্রহণ করা কিংবা দাসীর গর্ভে সন্তান জন্ম দেয়া শুধু ইসলাম নয়, বরং ইহুদী-খ্রিষ্টান ধর্মেও বৈধ ছিলো। বাইবেলে এসবের প্রমাণ রয়েছে। আর এ জন্য সেসব ধর্মে ইব্রাহিম আ. কে মোটেও নিন্দা করা হয়নি বরং এগুলোকে খুবই স্বাভাবিক ও বৈধ কাজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাইবেলে বারংবার তাঁকে “ঈশ্বরের বন্ধু” বলে অভিহীত করা হয়েছে
সূত্র: বাইবেল, যিশাইয় (Isaiah) ৪১ : ৮; ২ বংশাবলী (2 Chronicles) ২০ : ৭; যাকোবের পত্র (James) ২ : ২৩
সুতরাং ইব্রাহিম আ. এর এই সর্বোচ্চ সম্মানের অভিধার সাথে ইসলাম একমত। আল কুরআনে ইব্রাহিমকে আ. ‘খলিলুল্লাহ’ বা “আল্লাহর বন্ধু” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং আমরা দেখলাম যে, বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী ইব্রাহিম আ. মিসরের শাসকের নিকট থেকে দাসী উপহার নিয়েছেন। এবং মিসরীয় দাসীর গর্ভে তাঁর সন্তানও হয়েছে। কিন্তু খ্রিষ্টান মিশনারীরা কখনো এ জন্য ইব্রাহিম আ. এর নবুয়ত নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। খ্রিষ্টান মিশনারীদের নিকট ইব্রাহিম আ. হচ্ছেন ঈশ্বরের নবী এবং ঈশ্বরের বন্ধু। কিন্তু একই জিনিস মুহাম্মাদ সা. এর বেলায় হলে তাদের আপত্তির আর শেষ থাকে না। মারিয়া কিবতিয়া রা. কে উপহার হিসেবে গ্রহণ করা কিংবা তাঁর গর্ভে মুহাম্মাদ সা. এর সন্তান হবার বিবরণ সিরাত গ্রন্থে এলেই খ্রিষ্টান মিশনারীরা তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে। সুতরাং দাসীর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করা যদি অপরাধ হয়, তাহলে ইবরাহীম আ. কিভাবে আল্লাহর বন্ধু হন? এটা কি এক পেশে মনোভাবের প্রমাণ নয়?
হিন্দু ধর্মে দাস প্রথা:
এ ক্ষেত্রে প্রথম যে বিষয়টি জানা দরকার, দাস প্রধান প্রচলন আগে ছিলো কি না? এ বিষয়ে উইকিডিয়াতে উল্লেখ্য রয়েছে-
‘প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রায় সব শাসন ব্যবস্থাতেই দাস প্রথার প্রচলন ছিল।’
সূত্র: উইকিপিডিয়া।
সে সূত্রে হিন্দুদের দেবতা কৃষ্ণেরও ১৬ হাজার ১০০ টি দাসী ছিলো। যদিও তারা এদেরকে স্ত্রী হিসাবে তাদের ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ্য করেছে। তাদের ধর্মগ্রন্থে রয়েছে,
‘মর্ত্তালোকে ভগবান অবতীর্ণ হইয়া ষোলহাজার এক শত একটি বিবাহ করেন। এই সকল স্ত্রীর মধ্যে রুক্মিনী, সত্যভামা, জাম্ববতী, জালহাসিনী, প্রভৃতি আট জন প্রধান। এই সকল পত্নীকে কৃষ্ণ এক লক্ষ আশী হাজার পূত্র উৎপাদন করিয়াছিলেন।’
সূত্র: বিষ্ণু পুরাণের ৪ অংশের ১৫ নং অধ্যায়ের ১৯ নং শ্লোক পৃ. ১৯৯
হিন্দুরা ১৬ হাজার ১০০ জনকে স্ত্রী হিসাবে উল্লেখ্য করলেও উইকিপিডিয়ার সূত্র বলছে অন্য কথা। সেখানে লেখা আছে-
‘শ্রীকৃষ্ণের ১৬১০৮ জন স্ত্রী ছিলেন । যাদের মধ্যে বৈবাহিকসূত্রে প্রধান স্ত্রী ছিলেন আটজন এবং বাকি ১৬১০০ জন ছিলেন নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধার হওয়া ধর্মাবতার কৃষ্ণে সমর্পিত ও তার অধিকারপ্রাপ্ত নারী । কিন্তু এদের প্রত্যেককে দেবী লক্ষ্মীর অবতার হিসেবে মনে করা হয়।
সূত্র: উইকিডিয়া।
সুতরাং প্রমাণ হলো, হিন্দু ধর্মেও দাসী হিসাবে নারীদের রাখার প্রচলন ছিলো। এতএব হিন্দু,খ্রিষ্টান,ইহুদী ধর্মে দাসীর সাথে শারিরিক সম্পর্ক বৈধ প্রমাণিত। পাশাপাশি নাস্তিক্যধর্মেও কোনো ক্ষতি না করে সম্মতিক্রমে লিভটুগেদার থিউরী অনুযায়ী মারিয়ার রা. সাথে নবীজির শারিরিক সম্পর্ককে অবৈধ বলা বা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করা মুর্খতা বৈ আর কি?