Home > সংকলন > দাঁড়ি ও ইসলাম

দাঁড়ি ও ইসলাম

দাঁড়ি মুসলিমদের ধর্মীয় সংস্কৃতি। যা মুসলিম হিসাবে কাউকে চেনার প্রাথমিক একটি চিহ্ন। এই দাঁড়িকে নিয়ে বাতিলদের ভেতর অনেক বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি দেখা যায়। এ সম্পর্কে এ পর্বে আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ। এর আগে দাঁড়ি কাকে বলে এ বিষয়ে জানা দরকার।

দাঁড়ির সংজ্ঞা
ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেছেন, পরিভাষায় দাড়ি বলা হয়

الشعر النابت على الخدين من عذار وعارض والذقن

অর্থ: যা উভয় গাল, কানপট্টির উপর,গালের সামনের অংশ,এবং থুতনি সবকিছুকেই মূলত দাঁড়ি বলা হয়ে থাকে।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ১ পৃ. ২১৫

দাঁড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাঁড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে, তার আমল নামায় পুনরায় দাঁড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কবীরা গুনাহ লেখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল, দাঁড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাঁড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত সে দাঁড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লেখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাঁড়ি মুন্ডানো এমন কবীরা গুনাহ যা ছোট করা বা মুন্ডানোর ফলে গুনাহ চলমান থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি দাঁড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়ে ছোট করে, সে ফাসিক।

নবীজি মুহাম্মাদ সা. এর অনুসরণ করা সম্পর্কে কুরআনের কয়েকটি আয়াত।

একজন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিৎ সে দেখবে, আমাদের আদর্শ,আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কী করেছেন? রাসূল সা. এর প্রতিটি কাজ শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ

অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।
সুরাঃ মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৩

রাসুলুল্লাহ সা. এর আনীত সকল বিষয় মেনে নেওয়া

মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে বলেন,

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থ: রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
সুরাঃ হাশর আয়াত: ৭

নবীজির সিদ্ধান্ত অমান্য করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই।

فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا

অর্থ: অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।
সুরাঃ নিসা, আয়াত: ৬৫

উক্ত আয়াতগুলো দ্বারা এ কথা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সা. এর প্রতিটি কাজই উম্মতের জন্য পালন করা মহান আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে নির্দেশ। অবশ্য রাসুলুল্লাহ সা. এর কতিপয় সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট এমন ছিল, যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন: চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসুলুল্লাহ সা. এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসুল সা. এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়। আর অমান্য করা ভ্রষ্টতার লক্ষণ

নবীজির সা. অনুসরণ জান্নাতের মাধ্যম:

উপরন্তু মহান আল্লাহ তা’আলার মহব্বত পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। যা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়ে বলেন,

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ

অর্থ: বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।
সূরাঃ আলে ইমরান আয়াত: ৩১

উক্ত আয়াতে সর্বক্ষেত্রে নবীজির সা. অনুসরণকে আল্লাহ’র ভালোবাসার নিদর্শন বলা হয়েছে।

নবীজির সা. অনুসরণ আল্লাহরই অনুসরণ।

مَّنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ وَمَن تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا

অর্থ: যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।
সুরাঃ নিসা, আয়াত: ৮০

নবীজির সা. আদর্শ উম্মতের আখেরাতের সফলতার মাধ্যম।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

অর্থ: যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।
সূরাঃ আহযাব আয়াত: ২১

দাঁড়ির বিষয়ে কুরআন:

আয়াত: ১

হযরত হারুন আ. এর উপস্থিতি থাকা সত্বেও বনী ইসরাঈলের গোবৎসের পুজার ঘটনায় হযরত মুসা আ. ক্ষিপ্ত হয়ে হারুণ আ. এর দাঁড়ি ধরেছিলেন। যা আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন,

قَالَ يَا ابْنَ أُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي ۖ إِنِّي خَشِيتُ أَنْ تَقُولَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِي

অর্থ: তিনি (মুসা আ.) বললেন, হে আমার জননী-তনয়, আমার দাঁড়ি ও মাথার চুল ধরে আকর্ষণ করো না; আমি আশঙ্কা করলাম যে, তুমি বলবেঃ তুমি বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা স্মরণে রাখনি।
সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াত: ৯৪

এ আয়াত দ্বারা একথা বুঝা যায় যে, হযরত হারুন আ. এর দাঁড়ি এক মুষ্টির চেয়ে কম ছিল না। কারণ দাঁড়ি এক মুষ্টির চেয়ে কম থাকলে মুঠো করে ধরা যায় না। সুতরাং হারুণ আ. এর যেহেতু দাঁড়ি ছিল, যা আল্লাহর তরফ থেকে হিদায়াতের অন্তুর্ভূক্ত। আর হারুণ আ. এর হিদায়াতকেও মান্য করতে রাসুলুল্লাহ সা. কে আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ করেছেন। যা সুরা আনআমের ৮৪ থেকে ৮৮ নং আয়াত পর্যন্ত দেখলে সুস্পষ্টভাবে জানা যায়।

পবিত্র কুরআনের সুরা আনআমের ৮৪ থেকে ৮৭ নং আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা কয়েকজন নবীর আ. কথা উল্লেখ্য করেছেন। এর মধ্যে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَقَ وَيَعْقُوبَ كُلاًّ هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِن قَبْلُ وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ

অর্থ: আর আমি তাঁকে দান করেছি ইসহাক এবং ইয়াকুব। প্রত্যেককেই আমি পথ প্রদর্শন করেছি এবং পূর্বে আমি নূহকে পথ প্রদর্শন করেছি-তাঁর সন্তানদের মধ্যে দাউদ, সোলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
সুরাঃ আন’আম আয়াত: ৮৪

উক্ত আয়াতে অন্যান্য নবীদের সাথে হযরত হারুণ আ. এর কথাও উল্লেখ্য করা হয়েছে। এর পরপরই আল্লাহ তা’আলা বলেন,

ذَلِكَ هُدَى اللّهِ يَهْدِي بِهِ مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ وَلَوْ أَشْرَكُواْ لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

অর্থ: এটি আল্লাহর হেদায়েত। স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা, এপথে চালান। যদি তারা শেরেকী করত, তবে তাদের কাজ কর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত।
সুরাঃ আন’আম আয়াত: ৮৮

উক্ত আয়াতে অন্যান্য নবীদের সাথে হযরত হারুনও আ. যে হিদায়াতের উপর ছিলেন, সেটা মানার জন্য নবীজি সা. কে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিলেন। আর যেহেতু হযরত হারুন আ. এর হিদায়াতের মধ্যে দাঁড়িও ছিল। সুতরাং সেটা মান্য করাও আল্লাহর আদেশ।

এজন্য আল্লামা শানক্বীতী রহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,

تَدُلُّ عَلَى لُزُومِ إِعْفَاءِ اللِّحْيَةِ فَهِيَ دَلِيلٌ قُرْآنِيٌّ عَلَى إِعْفَاءِ اللِّحْيَةِ وَعَدَمِ حَلْقِهَا

অর্থ: দাঁড়িকে ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কে ও মুন্ডন করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে এটি কুরআনী দলীল।
সূত্র: আযওয়াউল বায়ান খ. ৪ পৃ. ৬৩০

আয়াত: ২

সৃষ্টিতে পরিবর্তন ও দাঁড়ি কামানো।

শরীরে এমন কোনো কাজ করা জায়েয নেই, যা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন বয়ে আনে। যেমন ভ্রুপ্লাক করা ইত্যাদী। তবে যেসকল বিষয়ে আয়াত-হাদিসের মাধ্যমে শারিরিক পরিবর্তন কথা এসেছে সেগুলো জায়েয। বাকি সকল ক্ষেত্রে মানুষকে আল্লাহ তা’আলা যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক সেভাবে থাকা হলো, আল্লাহর চাওয়া। কারণ বিতাড়িত শয়তান আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করার সময় বলেছিলো,

وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللّهِ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا

অর্থ: এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।
সুরাঃ আলে ইমরান আয়াত: ১১৯

উক্ত আয়াত দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, শয়তানের বড় টার্গেট হলো, আল্লাহর সৃষ্টির নমুনা মানুষ যেন পাল্টে ফেলে সেটাই শয়তানের বড় পাওয়া। একারনেই ভ্রুপ্লাক করা, উল্কি অঙ্কণ করা ইত্যাদী ইসলামে হারাম করা হয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ تَعَالَى مَالِي لاَ أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ فِي كِتَابِ اللَّهِ ‏وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ‏

অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক সে সব নারীদের উপর যারা শরীরে উল্কি অঙ্কণ করে এবং যারা অঙ্কণ করায়, আর সে সব নারীদর উপর যারা চুল, ভ্রূ তুলে ফেলে এবং সে সব নারীদের উপর যারা সৌন্দর্যের জন্যে সম্মুখের দাঁত কেটে সরু করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে, যা আল্লার সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। রাবী বলেন, আমি কেন তার উপর অভিশাপ করব না, যাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ করেছেন? আর আল্লাহর কিতাবে আছে, রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর। (সূরাঃ হাশর আয়াত: ৭)
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৫৭৪৩ মুসলিম: ২১২৫

এ হাদিস থেকে বুঝতে পারি, শরীরের পশম উপড়ানো বা কাটা বা যেকোনো ভাবে আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করা  পরিস্কার হারাম। তবে যেগুলো ইসলামে অনুমোদিত সেগুলোর কথা ভিন্ন। তাহলে চলুন দেখা যাক দাঁড়ি কাটা বা সেভ করা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তনের আওতায় পড়ে কি না। এ সম্পর্কে আল্লামা কুরতুবী রহ. বলেন,

وَكَذَا لَا يَجُوزُ لَهَا حَلْقُ لِحْيَةٍ أَوْ شَارِبٍ أَوْ عَنْفَقَةٍ إِنْ نَبَتَتْ لَهَا، لِأَنَّ كُلَّ ذَلِكَ تَغْيِيرُ خَلْقِ اللَّهِ

সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ. ৩ পৃ. ২৫২

আয়াত: ৩

অঙ্গহানি করা হারাম:

لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

অর্থ: আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।
সুরাঃ রুম, আয়াত: ৩০

আয়াতের তাফসীর:

ইবনে কাসীর রহ. আয়াতের তাফসীরে বলেন,

قَالَ بَعْضُهُمْ مَعْنَاهُ لَا تُبَدِّلُوا خَلْقَ اللَّهِ

অর্থাৎ কেউ কেউ বলেন, এ আয়াতের অর্থ হলো, তোমরা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করো না।
সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ১১ পৃ. ২৬

অর্থাৎ আয়াতটি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, “আল্লাহর কোনো সৃষ্টি পরিবর্তন করা তথা অঙ্গহানি করা জায়েয নয়”। এজন্য হাদিসের মধ্যে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ আনসারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন

نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ النُّهْبَى وَالْمُثْلَةِ

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুটতরাজ করতে এবং জীবকে বিকলাঙ্গ বা অঙ্গহানি করতে নিষেধ করেছেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ২৪৭৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত নবীজি সা. বলেছেন,

مَن مثَّل بالشِّعرِ فليس له عندَ اللهِ خَلاقٌ

অর্থাৎ যে ব্যক্তি চুল মারফত অঙ্গহানি করবে, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিদান থাকবে না।
সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৮ পৃ. ১২৪

দাঁড়ি মুণ্ডানো কি অঙ্গহানি?

এ সম্পর্কে আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আল-মাগরিবী রহ. বলেন,

حلق اللحية لا يجوز وكذلك الشارب، وهو مثلة وبدعة

অর্থ: দাঁড়ি মুণ্ডানো জায়েয নয়, এমনিভাবে মোচ মুণ্ডানো, কারণ এটা অঙ্গহানি এবং বিদ’আত।
সূত্র: মাওয়াহেবুল জলিল খ. ১ পৃ. ৩১৩

সুতরাং বুঝা গেল, দাঁড়ি মুণ্ডানো যেহেতু অঙ্গহানি বা বিকলাঙ্গের মধ্যে অন্তুর্ভূক্ত, সেহেতু উক্ত আয়াতেে কারণে দাঁড়ি মুণ্ডানোর সুযোগ নেই।

আয়াত: ৪

পুরুষের সম্মান দাঁড়িতেও:

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ لَقَدۡ کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ

অর্থ: আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি।
সুরাঃ ইসরা, আয়াত: ৭০

আয়াতের তাফসীর

এক. তাফসীরে কুরতুবী:

আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে আবু বকর আল আনসারি আল কুরতুবি রহ. বলেন,

وَقِيلَ أَكْرَمَ الرِّجَالَ بِاللِّحَى وَالنِّسَاءَ بِالذَّوَائِبِ

অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা পুরুষকে সম্মানিত করেছেন দাঁড়ির মাধ্যমে আর মহিলাদেরকে সম্মানিত করেছেন চুলে বেণী করার মাধ্যমে।
সূত্র: তাফসীরে কুরতুবী খ. ১৩ পৃ. ১২৬
ফাতহুল বায়ান খ. ৪ পৃ. ১৫৪

দুই. তাফসীরে বগবী:

আবু মুহাম্মদ আল-হুসাইন ইবনে মাস’উদ ইবনে মুহাম্মদ আল-ফাররা’ আল-বগবী রহ. বলেন,

وَقِيلَ الرِّجَالُ بِاللِّحَى وَالنِّسَاءُ بِالذَّوَائِبِ

অর্থাৎ পুরুষরা সম্মানিত দাঁড়ির মাধ্যমে আর মহিলারা সম্মানিত চুলে বেণীর মাধ্যমে।
সূত্র: তাফসীরে বগবী খ. ৫ পৃ. ১০৮

তিন. তাফসীরে শাওতানী:

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মাদ শাওকানী রহ. বলেন,

وَقِيلَ أَكْرَمَ الرِّجَالُ بِاللِّحَى وَالنِّسَاءُ بِالذَّوَائِبِ

অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা পুরুষকে সম্মানিত করেছেন দাঁড়ির মাধ্যমে আর মহিলাদেরকে সম্মানিত করেছেন চুলে বেণী করার মাধ্যমে।
সূত্র: ফাতহুল কাদীর খ. ৩ পৃ. ৩০৩

চার. তাফসীরে শারবিনী:

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ খতীব আশ শারবিনী শাফেয়ী মিছরী রহ. বলেন,

َقِيلَ الرِّجَالُ بِاللِّحَى وَالنِّسَاءُ بِالذَّوَائِبِ

অর্থাৎ পুরুষরা সম্মানিত দাঁড়ির মাধ্যমে আর মহিলারা সম্মানিত চুলে বেণীর মাধ্যমে।
সূত্র: আস-সিরাজুল মুনির খ. ২ পৃ. ৩৫৮

সুতরাং উক্ত আয়াত এবং তাফসীর দ্বারা জানা গেল, পুরুষের সম্মান দাঁড়িতেই লুকিয়ে আছে।

আয়াত: ৫

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সা. আদেশ অমান্য করা ভ্রষ্টতার লক্ষণ।

পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এর আদেশ মান্য করা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا

অর্থ: আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।
সুরাঃ আহযাব, আয়াত: ৩৬

প্রিয় পাঠক, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর হুকুম মানার পাশাপাশি তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. এর আদেশসমূহ মানার বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। উপরন্তু যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. এর আদেশে অমান্য করে, তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন খোদ আল্লাহ। চলুন এবার দেখি দাঁড়ি রাখা সম্পর্কে নবীজি সা. কোনো আদেশ করেছেন কি না। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ أَمَرَ بِإِحْفَاءِ الشَّوَارِبِ وَإِعْفَاءِ اللِّحْيَةِ

অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোঁফ ছোট করতে এবং দাড়ি বড় করে রাখতে আদেশ করেছেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৫৯

আয়াত: ৬

দাঁড়ি সকল নবীগণের আমল:

পূর্বের নবীগণের কি দাঁড়ি ছিল?

দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা ফিতরাতী সুন্নাহ বা নীতি। অর্থাৎ যা প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরের সাথে মিশে থাকে। যেগুলো শুধু আমাদের ধর্মে নয়, বরং সকল নবীগণও আ. করে গেছেন। আম্মাজান হযরত আয়েশাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ

অর্থ: দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্তঃ (১) মোচ খাটো করা,(২) দাড়ি লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) নাকে পানি দিয়ে ঝাড়া, (৫) নখ কাটা (৬) আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া, (৭) বগলের পশম উপড়ে ফেলা, (৮) নাভীর নীচের পশম মুন্ডন করা (৯) পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। সূত্র: সহীহ মুসলিম হাদিস: ২৬১

আরেক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,

الْخِتَانُ

অর্থাৎ (১০) খাতনা করা।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৫৭

সুৎরাং বুঝা গেল, দাঁড়ি রাখা সমস্ত নবীদের আ. এবং আমাদের নবীরও সা. আমল ছিল।

উপরন্তু হযরত হিশাম ইবনে আস রা. জনৈক সঙ্গি দিয়ে নবীজি সা. রোমের বাদশা হিরাকলিয়াসের কাছে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে পাঠান। বিস্তারিত ঘটনার মধ্যে এটাও রয়েছে যে, বাদশা তাঁদেরকে আগের যুগের নবীদের মূর্তি দেখালেন যা রেশমী কাপড়ে ঢাকা ছিল।

সেখানে হযরত আদম আ. এর মূর্তি বানানো ছিল।

আদম আ. এর মূর্তি:

وإذا لبِسَت لهُ لِحيةٌ

অর্থাৎ তাকে দাঁড়ি লাগানো হয়েছিল।

নূহ আ. এর মূর্তি:

حسَنَ اللحيةِ

অর্থাৎ সুন্দর দাঁড়ি বিশিষ্ট।

ইবরাহীম আ. এর মূর্তি:

أبيضَ اللحيةِ كأنَّهُ يبتَسِمُ

অর্থাৎ সাদা দাঁড়ি বিশিষ্ট, যেন তিনি মুচকি হাসছেন।

ঈসা আ. এর মূর্তি:

وإذا شابٌّ شديدُ سَوادِ اللِّحيةِ

অর্থাৎ তাঁকে দেখতে অন্যান্ত কালো দাঁড়ি বিশিষ্ট যুবক ছিল।
সূত্র: দালায়েলুন নবুওয়াহ খ. ১ পৃ. ৩৮৬ তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৩ পৃ. ৪৮১ ( হাহাদিসটির সনদে কোনো ত্রুটি নেই)

অন্য রেওয়াতে আসছে,

فقلْنا له مِن أين لك هذه الصُّوَرُ فقال إنَّ آدمَ عليه السَّلامُ سأَل ربَّه أنْ يُريَه الأنبياءَ مِن ولدِه فأنزَلَ اللهُ عليه صوَرَهم فكان في خِزانةِ آدمَ عليه السَّلامُ عندَ مَغربِ الشمسِ فاستخرَجَها ذو القَرنينِ مِن مغربِ الشمسِ فدفَعَها إلى دانيالَ

অর্থ: সাহাবী হিশাম ইবনে আস রা. তাকে প্রশ্ন করলেন, এ মূর্তিগুলো কোথায় ছিল? তিনি বললেন, আদম আ. আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করেছিলেন, যেন তাঁর সন্তানদের মধ্যে কে কে নবী হবেন, তাদেরকে দেখানো হয়। অত:পর তাঁদের মূর্তি বানিয়ে আদম আ. এর কাছে পাঠান। যা সূর্য অস্ত যাওয়ার স্থানে থাকা আদম আ. এর খাযানায় সংরক্ষিত ছিল। পরে সেটা বাদশা যুলকারনাইন বের করে হযরত দানিয়াল আ. এর কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।
সূত্র: মাওয়াহেবে লাদুনিয়্যা খ. ২ পৃ. ৫৫৪

সুতরাং বুঝা গেল, দাঁড়ি সকল নবীদের আমল ছিল। যা আমাদের নবী সা. এর দ্বীনেও রাসুলুল্লাহ সা. নির্দেশ করেছেন। আর পূর্বকার সকল নবীদের ঐ সমস্ত বিষয়াদী যা ইসলামেও অনুমোদিত, সেসকল বিষয় মানা এ উম্মতের জন্যও জরুরী। কারণ সেগুলো মানা মানেই আমাদের নবী সা. মান্য করা। কারণ মহান রব বলেন,

ومن ذريته …هرون…

أُوْلَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ

অর্থ: এঁরা এমন ছিল, যাঁদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাঁদের পথ অনুসরণ করুন।
সুরাঃ আনআম, আয়াত: ৯০
উল্লেখিত কুরআনের আয়াত মোতাবেক আমল করা তথা দাঁড়ি রাখা বাধ্যতামূলক।

আয়াত: ৭

মিল্লাতে ইবরাহীম ও দাঁড়ি:

ইবরাহীম আ. এর দাঁড়ি ছিল?

এ সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরাহ্ রা. হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবীজি সা. বলেছেন,

وَأَنَا أَشْبَهُ وَلَدِ إِبْرَاهِيْمَ بِهِ

অর্থ: আর ইব্রাহীম আ. এর বংশধরদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে আমার চেহারার মিল সবচেয়ে বেশি।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৩৩৯৪

হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত নবীজি সা. বলেন,

أَمَّا إِبْرَاهِيْمُ فَانْظُرُوْا إِلَى صَاحِبِكُمْ

অর্থ: যদি তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে চাও তবে তোমাদের সাথীর দিকে তাকাও।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৩৩৫৫

বুঝা গেল, ইবরাহীম আ. এরও দাঁড়ি ছিল। যা নবীজি সা. এর দাঁড়ির মত ছিল।

রোমের বাদশা হিরাকলিয়াস নবীদের যে মূর্তি হযরত হিশাম ইবনে আস রা. কে দেখিয়েছিলেন, সেখানে হযরত ইবরাহীম আ. এর মূর্তিতে দেখেছিলেন,

أبيضَ اللحيةِ كأنَّهُ يبتَسِمُ

অর্থাৎ সাদা দাঁড়ি বিশিষ্ট, যেন তিনি মুচকি হাসছেন।
সূত্র: দালায়েলুন নবুওয়াহ খ. ১ পৃ. ৩৮৬ তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৩ পৃ. ৪৮১ ( হাহাদিসটির সনদে কোনো ত্রুটি নেই)

উক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল, মিল্লাতে ইবরাহীমে দাঁড়ি ছিল। আর মিল্লাতে ইবরাহীম (ইবরাহীমি দ্বীন) মানা এ উম্মতের জন্য জরুরী। কারণ কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

অর্থ: অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শিরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।
সুরাঃ নাহল আয়াত: ১২৩

অপর আয়াতে এসেছে,

قُلْ صَدَقَ اللّهُ فَاتَّبِعُواْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

অর্থ: বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন। এখন সবাই ইব্রাহীমের ধর্মের অনুগত হয়ে যাও, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ভাবে সত্যধর্মের অনুসারী। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
সুরাঃ আলে ইমরান আয়াত: ৯৫

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

وَمَن يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلاَّ مَن سَفِهَ نَفْسَهُ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا وَإِنَّهُ فِي الآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ

অর্থ: ইব্রাহীমের ধর্ম থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তু সে ব্যক্তি, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে। নিশ্চয়ই আমি তাকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছি এবং সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
সুরাঃ বাকারা আয়াত: ১৩০

সুতরাং বুঝা গেল, ইবরাহীম আ. এর দ্বীন মেনে দাঁড়ি রাখা আমাদের জন্য জরুরী।

 

২. পারস্য সম্রাটের কাছে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্র পাঠিয়েছিলেন। এ ঘটনা সহীহ বুখারীতে সংক্ষেপে বর্ণিত আছে। তবে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে আছে ইতিহাসের কিতাবে। ইমাম ইবনে জারীর তবারী রহ. যায়েদ ইবনে আবী হাবীব রহ. এর সূত্রে তা বর্ণনা করেছেন। সেখানে রয়েছে, ইয়েমেনের শাসকের পক্ষ থেকে দু’জন লোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল।

وَقَدْ حَلَقَا لِحَاهُمَا وَأَعْفَيَا شَوَارِبَهُمَا فَكَرِهَ النَّظَرَ إِلَيْهِمَا وَقَالَ وَيْلَكُمَا مَنْ أَمْرَكُمَا بِهَذَا قَالَا أَمَرَنَا بِهَذَا رَبُّنَا يَعْنِيَانِ كِسْرَى

অর্থাৎ তাদের দাড়ি মুন্ডানো ছিল এবং মোচ লম্বা ছিল। তাদের চেহারার দিকে তাকাতেও আল্লাহর রাসুলের সা. অপছন্দ করছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমাদের ধ্বংস হোক! এ কাজ করতে কে তোমাদেরকে বলেছে? তারা বলল, আমাদের প্রভু (কিসরা) আমাদেরকে আদেশ করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন,

لَكِنَّ رَبِّي قَدْ أَمَرَنِي بِإِعْفَاءِ لِحْيَتِي وَقَصِّ شَارِبِي

কিন্তু আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন, দাড়ি লম্বা রাখার ও মোচ খাটো করার।
সূত্র: আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া খ. ৪ পৃ. ২৬৯ তারিখে তাবারী খ. ২ পৃ. ৬৫৬ হায়াতুস সাহাবা খ. ১ পৃ. ১৬৪

দাঁড়ি রাখা নবীজি সা. এর নির্দেশ।

দাঁড়ি রাখার আদেশ সম্পর্কে এখানে দু’টি হাদিস উল্লেখ্য করা হলো,

এক. হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏انْهَكُوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى ‏

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গোঁফ বেশী ছোট করবে এবং দাঁড়ি বড় রাখবে।
সূত্র: সহীহ বুখারী হাদিস: ৫৪৯৩ সহীহ মুসলিম: ২৫৯

উক্ত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. দাঁড়ি রাখতে সুস্পষ্টভাবে আদেশ করেছেন।

দুই. হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ أَمَرَ بِإِحْفَاءِ الشَّوَارِبِ وَإِعْفَاءِ اللِّحْيَةِ

অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোঁফ ছোট করতে এবং দাড়ি বড় করে রাখতে আদেশ করেছেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৫৯

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আয়াত থেকে জেনেছিলাম, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. এর আদেশ মান্য করা উম্মতের জন্য বাধ্যতামূলক। অমান্য করা ভ্রষ্টতার লক্ষণ। আর এ তিনটি হাদিস থেকে জানতে পারলাম, আল্লাহ ও তার রাসুল সা. দাঁড়ি রাখতে আদেশ করেছেন। তাহলে আপনারাই বলুন, আল্লাহ তা’আলার আদেশ ও নবীজি সা. এর দাঁড়ি সম্পর্কে এ আদেশ অমান্য করার কোনো সুযোগ রয়েছে কি?

দাঁড়ি মুণ্ডানো মুশরিকদের ধর্মীয় কালচার ছিল।

দাড়ির বিধানটি শরীয়তের একটি মৌলিক ও সাধারণ বিধান। দাঁড়িকে নিছক আরবীয় রীতি বা বিশেষ স্থান-কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করা মারাত্মক ভ্রান্তি। উপরে বর্ণিত আম্মাজান আয়েশা রা. এর হাদিস প্রমাণ করে দাড়ি এটা কাফের বা আরবের সংস্কৃতি নয়, এটা ফিতরাতের অন্তুর্ভূক্ত। কিন্তু তদানীন্তনকালে কাফের-মুশরিকদের দাঁড়ি কেমন ছিল সে সম্পর্কে ইমাম নববী রহ. বলেন,

وكان من عادة الفرس قص اللحية فنهى الشرع عن ذلك

অর্থ: পারসিকদের (মুশরিকদের) অভ্যাস ছিল, দাড়ি মুন্ডন করা, অত:পর এটা থেকে শরী‘আত নিষেধ করেছে।
সূত্র: শরহে মুসলিম খ. ৩ পৃ. ৪৯১ নাইলুল আওতার খ. ১ পৃ. ১৩৮

ইমাম নববী রহ. এর এ দাবিটা নিন্মোক্ত হাদিসগুলো থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَهْلَ الشِّرْكِ يُعْفُونَ شَوَارِبَهُمْ  وَيُحْفُونَ لِحَاهُمْ فَخَالِفُوهُمْ فَأَعْفُوا اللِّحَى وَحُفُّوا الشَّوَارِبَ

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, মুশরিকরা মোচ লম্বা করে এবং দাঁড়ি ছোট করে। সুতরাং তোমরা দাড়ি লম্বা করো এবং মোচ ছোট করে তাদের বিরোধিতা করো।
সূত্র: মাজমাউয যাওয়েদ হাদিস: ৮৮৪৫

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রহ. বলেন,

جَاءَ رَجُلٌ مِنْ الْمَجُوسِ إلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَلَقَ لِحْيَتَهُ وَأَطَالَ شَارِبَهُ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا هَذَا قَالَ هَذَا فِي دِينِنَا قَالَ فِي دِينِنَا أَنْ نَجُزَّ الشَّارِبَ وَأَنْ نُعْفِيَ اللِّحْيَةَ

অর্থ: জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও গোঁফ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা কী? সে বলল, এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা গোঁফ কাটবো ও দাড়ি লম্বা রাখবো।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খ. ৬ পৃ. ১১১ হাদিস: ২৬০১৩

عن ابن عمر رضي الله عنهما قال ذُكِرَ لرسولِ اللَّهِ ﷺ المجوسُ فقالَ إنَّهم يوفِّرونَ سِبالَهُم ويحلقونَ لحاهم فخالِفوهم

অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জনৈক অগ্নিপূজকের আলোচনা করা হলে তিনি বললেন যে, ‘তারা দাঁড়ি মুণ্ডন করে। সুতরাং তাদের বিরোধিতা করো।
সূত্র: ইবনে হিব্বান হাদিস: ৫৪৭৬ তবরানী: ১০৫১

কওমে লুতের ধ্বংস ও দাঁড়ি কর্তন :

কাতাদাহ হযরত হাসান বসরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবীজি সা. বলেছেন,

عشرُ خصالٍ عملَها قومُ لوطٍ بها أُهلِكُوا وتَزيدُها أمتي بخُلةٍ إتيانُ الرجالِ بعضُهم بعضًا ورميُهمْ بالجُلاهِقِ والخَذْفُ ولعبُهمْ بالحَمامِ وضربُ الدفوفِ وشُرْبُ الخمورِ وقصُّ اللحيةِ وطولُ الشاربِ والصفيرُ والتصفيقُ ولباسُ الحريرِ وتَزيدُها أمتي بِخُلةٍ إتيانُ النساءِ بعضُهمْ بعضًا

অর্থ: হযরত লুত আ. এর কওম দশটি মন্দ চরিত্রের সাথে জড়িত হয়েছিল, সেগুলোর কারণে তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমার উম্মাতের মাঝে একটি খাসালাত বেশী হবেঃ পুরুষরা পরস্পরের সাথে (সমকামিতায়) মিলিত হওয়া, মাটির তৈরি বন্দুক দ্বারা তাদের গুলি নিক্ষেপ করা, ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করা, কবুতর নিয়ে খেলা করা, দফ বাজানো, মদ্য পান করা, দাড়ি ছোট করা, গোফ লম্বা করা, শিস (সুদীর্ঘ ধ্বনি) দেয়া, হাত তালি দেয়া ও রেশমী পোষাক পরিধান করা। আর আমার উম্মাতের অতিরিক্ত চরিত্রটি হচ্ছে এই যে, নারীরা পরস্পরের সাথে মিলিত হবে।
সূত্র: তারিখে দিমাশক খ. ৫০ পৃ. ৩২২ জামে সগীর হাদিস: ৫৪১৫ ফায়যুল কাদীর হাদিস: ৫৪৩৩

উক্ত হাদিসে কওমে লুতের ধ্বংসের ১০ টি কারণের মধ্যে একটি হলো, দাঁড়ি কর্তন করা।

সুতরাং দাঁড়ি রাখা এমন একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত যে, রাসূল সা. এর সকল সাহাবী তা রাখতেন। কোন একজন সাহাবী দাঁড়ি মুন্ডন করেছেন মর্মে কোন ঘটনা বর্ণিত হয়নি। বরং অনেক ইহূদী-নাসারা এবং মুশরিক ও অগ্নিপূজকদের দাঁড়ি মুন্ডন করা দেখে তিনি এর চরম বিরোধিতা করেছেন এবং তাদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ করতে নিষেধ করেছেন। সাথে সাথে দাড়ি রাখার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেজন্য সকল সাহাবী দাঁড়ি রাখতেন।

কিভাবে করবে বিরোধিতা?

এর রুপরেখা নবীজি সা. বলে দিয়েছেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ

অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মোচ কেটে ফেলে এবং দাঁড়ি লম্বা করে অগ্নি পূজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৬০

উল্লেখিত এ বর্ণনা থেকে জানতে পারলাম, কাফের-মুশরিকদের ধর্মের দৃষ্টিকোন থেকে দাঁড়ি ছিল মুণ্ডানো।

নবীজি সা. এর দাড়ি কেমন ছিল?

নবীজির সা. দাড়ি প্রচুর ঘন ছিলো।

হযরত জাবের রা. বলেন,

وَكَانَ كَثِيرَ شَعْرِ اللِّحْيَةِ

অর্থ: এবং তাঁর (রাসুলের সা.) দাড়ি প্রচুর ঘন ছিল।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩৪৪

নবীজির সা. দাড়ি লম্বা ছিল।

হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كانَ عظيمَ اللِّحيةِ

অর্থ: তিনি (নবীজি সা.) লম্বা দাড়ির অধিকারী ছিলেন।
সূত্র: জামে সগীর হাদিস: ৬৪৭৪

নবীজির সা. দাঁড়ি গালের দু’পাশ ভরা ছিল।

হযরত আনাস রা. বলেন,

وكانت لحيته قد ملات من هاهنا إلى هاهنا وأمر يديه على عارضيه

অর্থ: তাঁর (নবীজি সা.) দাঁড়ি এখান থেকে ঐ পর্যন্ত ভরে গিয়েছিল, তিনি দুই গালের উপর দুই হাত ফিরালেন’।
সূত্র: তারিখে দিমাশক খ. ৩ পৃ. ২৭৮

রাসুলুল্লাহ সা. এর দাঁড়ি এত ঘন ও লম্বা ছিল যে, তিনি তার দাড়ি খেলাল করতে পারতেন।

হযরত আনাস ইবনু মালিক রা. সূত্রে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন।

فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ فَخَلَّلَ بِهِ لِحْيَتَهُ وَقَالَ هَكَذَا أَمَرَنِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ

অর্থাৎ: তারপর ঐ পানি চোয়ালের নিম্নদেশে (থুতনির নীচে) লাগিয়ে দাঁড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র: সুনান আবু দাউদ হাদিস: ১৪৫

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُخَلِّلُ لِحْيَتَهُ

অর্থ: উসমান ইবনু আফফান রা. হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি খিলাল করতেন।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ৩১

রাসুলুল্লাহ সা. এর দাঁড়ি এত ঘন ও লম্বা ছিল যে, তিনি নামাজে ইমামতির সময় তিলাওয়াত করলে, পেছনে মৃসল্লীরা দাড়ির নড়াচড়া দেখতে পেতেন।

عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ قُلْتُ لِخَبَّابٍ أَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ قَالَ نَعَمْ‏ قُلْنَا مِنْ أَيْنَ عَلِمْتَ قَالَ بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ‏

অর্থ: আবূ মা‘মার রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কী করে বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ি নড়াচড়া দেখে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৭৭৭

নবীজির সা. বুক জুড়ে দাঁড়ি ছিল।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

قد ملَأَت لِحيَتُه مِن هذه إلى هذه حتى كادَت تَملَأُ نَحرَه

অর্থ: রাসুলুল্লাহ সা. এর দাঁড়ি তাঁর বুক পূর্ণ করে ফেলেছিল।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ হাদিস: ৩৪১০ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ: ৩১১০৮ শামায়েলে মুহাম্মাদিয়্যাহ: ৪৯০

খোলাফায়ে রাশেদীনের দাঁড়ি:

আবু বকর রা. এর দাঁড়ি

হযরত আয়েশা রা. আবু বকর রা. এর বিবরন দিতে গিয়ে বলেন,

كَانَ رَجُلًا أَبْيَضَ نَحِيفًا خَفِيفَ الْعَارِضَيْنِ

সূত্র: মু’জামে কাবীর (তবরানী) হাদিস: ২১ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৯ পৃ. ৪৫

عُمَارَةُ بْنُ غُرَابٍ عَنْ عَمِّهِ قَالَ رَأَيْتُ أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقَ وَهُوَ خَلِيفَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْمَرَ اللِّحْيَةِ قَانِيَهَا
সূত্র: মু’জামে কাবীর (তবরানী) হাদিস: ২২

عَنْ رَجُلٍ مِنْ بَنِي أَسَدٍ قَالَ رَأَيْتُ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي غَزْوَةِ ذَاتِ السَّلَاسِلِ وَكَأَنَّ لِحْيَتَهُ لَهَبُ الْعَرْفَجِ عَلَى نَاقَةٍ لَهُ أَدَمًا أَبْيَضَ خَفِيفًا
সূত্র: মু’জামে কাবীর (তবরানী) হাদিস: ২৪ মাজমুউ যাওয়ায়েদ খ. ৯ পৃ. ৪৫

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর দাঁড়ি লম্বা ছিল যা মেহেদী এবং কাতাম ঘাস দিয়ে খেযাব করতেন। হযরত আনাস রা. বলেন,

وَقَدِ اخْتَضَبَ أَبُو بَكْرٍ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ

অর্থ: তবে আবূ বাকর রা. (দাঁড়াতে) মেহেদী এবং কাতাম (ঘাস জাতীয় এক ধরনের উদ্ভিদ) দ্বারা কলপ মেখেছেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৩৪১

উমার রা. এর দাঁড়ি:

عن ابي رجاء العطاردي عارضيه خفة سبلته كبيرة وفي أطرافها صهبة
সূত্র: তারিখে দিমাশক খ. ২৪ পৃ. ১৯৪ তারিখুল খুলাফা (সুয়ূতী রহ.) পৃ. ৮৪ মা’রিফাতুস সাহাবা খ. ১ পৃ. ৬৯

হযরত উমার ইবনে খাত্তাব রা. এর দাঁড়ি লম্বা ছিল যা মেহেদী দিয়ে খেযাব করতেন। হযরত আনাস রা. বলেন,

وَاخْتَضَبَ عُمَرُ بِالْحِنَّاءِ بَحْتًا ‏

অর্থ: এবং উমার রা. কেবল মেহেদী দ্বারা কলপ লাগিয়েছেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৩৪১

হযরত উসমান রা. এর মুক্তদাস হানী বলেন,

قَالَ كَانَ عُثْمَانُ إِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ بَكَى حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ

অর্থ: হযরত উসমান রা. কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত।
সূত্র: জামে তিরিমিযি হাদিস: ২৩০৮

উসমান রা. এর দাঁড়ি:

হযরত উসমান বিন আফফান রা. এর দাঁড়ির বর্ণনায় আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ রহ. বলেন,

طَوِيل اللِّحْيَةِ حَسَن الوَجْهِ

অর্থ: তিনি সুন্দর চেহারা ও লম্বা দাড়ির অধিকারী ছিলেন।
সূত্র: আত-তারগীব খ. ৩ পৃ. ১৪৯ তবরানী হাদিস: ৯২

قال عبيد الله او عمه يعقوب

كبير اللحية عظيمها
তারিখে দিমাশক খ. ৩৯ পৃ. ২০ তবকাতে ইবনে সা’আদ খ. ৩ পৃ. ৪০

ইবনুল আসির আল জাজারি রহ. বলেন,

عظيم اللحية يصفرها

সূত্র: জামিউল উসূল খ. ১২ পৃ. ১৭৮

ইবনে আসাকির বেশ কয়েকটি সনদে উসমান রা. এর গুনাবলী উল্লেখ্য করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে,

كثير اللحية

সূত্র: তারিখুল খুলাফা (সুয়ুতী রহ.) পৃ. ৯৬

আলী রা. এর দাঁড়ি:

হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা. এর দাঁড়ির বর্ণনা দিয়ে তাবেঈ আমের শা‘বী রহ. বলেন,

مَا رَأيْتُ رَجُلاً قَطُّ أعْرَضَ لِحْيَةً مِنْ عَلِيٍّ قَدْ مَلأَتْ مَا بَيْنَ مَنْكِبَيْهِ بَيْضَاء

অর্থ: আমি আলী রা. অপেক্ষা লম্বা দাঁড়ি অন্য কারো দেখিনি। তার সাদা দাঁড়িতে দুই কাঁধের মধ্য তথা বুক ভরে যেত’।
সূত্র: তাবাকাতে ইবনে সা’আদ খ. ৩ পৃ. ২৪ জামিউল মাসানিদ খ. ১৯ পৃ. ১৪

عن ابي رجاء العطاردي

عظيم اللحية قد ملأت صدره
সূত্র: তারিখে দিমাশক খ. ২৩ পৃ. ২৩৫

সাহাবায়ে কেরামের দাঁড়ি

অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের রা
দাড়ির ব্যাপারে উসমান বিন ওবায়দুল্লাহ বিন রাফে‘ রহ. বলেন,

أنه رأى أبا سعيدٍ الخُدريَّ وجابرَ بنَ عبدِ اللهِ وعبدَ اللهِ بنَ عَمرو وسلمةَ بنَ الأكوعِ وأبا أُسَيدٍ البدريَّ ورافعَ بنَ خَدِيجٍ وأنسَ بنَ مالكٍ يأخذون من الشَّوارِبِ كأخذِ الحَلْقِ ويُعْفون الِّلحى

অর্থাৎ তিনি আবু সাঈদ খুদরী, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, সালামা বিন আকওয়া, আবু উসায়েদ বাদরী, রাফে‘ বিন খাদীজ ও আনাস বিন মালেক রা. কে দেখেছেন যে, তাঁরা প্রায় মুন্ডন করার মত গোঁফ ছোট করতেন ও দাড়ি নিজ অবস্থায় রেখে দিতেন’।
সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৫ পৃ. ১৬৮

শুরাহ্বীল বিন মুসলিম আল-খাওলানী বলেন,

رَأيْتُ خَمْسَةَ نَفَرٍ قَدْ صَحِبُوا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُصُّونَ شَوَارِبَهُمْ، ويَعْفُونَ لِحَاهُمْ ويُصَفِّرُونَهَا، أبُو أمَامَةَ البَاهِلِيّ، وعَبْدُ اللهِ بْنُ بُسْر المَازِنِيّ، وعُتْبَةُ بْنُ عَبْد السُّلمِيّ، والمِقْدَامُ بْنُ مَعْدِي كَرِب الكِندِيّ، وَالحَجّاجُ بْنُ عَامِرٍ الثَمَاليّ،

অর্থ: আমি পাঁচ জনের একদল ছাহাবীকে দেখেছি যাদের প্রত্যেকে গোঁফ মুন্ডনের মত ছোট করতেন ও দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিতেন এবং মেহেদী দ্বারা হলুদ রং করতেন। তারা হ’লেন, আবু উমামাহ আল-বাহেলী, আব্দুল্লাহ বিন বুসর আল-মাযেনী, উতবা বিন আবদ্ আস-সুলামী, মিকদাদ বিন মা‘দিকারিব আল-কিন্দী ও হাজ্জাজ বিন আমের আছ-ছামালী।
সূত্র: তারিখে দিমাশক খ. ৬৭ পৃ. ১২৯-১৩০

 

আহলে কিতাবীদের দাঁড়ি ছিল

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ভিত,

فقال النَّجَاشِيُّ هل مَعَكَ مِمَّا جَاءَ بِهِ عَنِ اللهِ من شَيْءٍ؟ قالتْ فقال لَهُ جَعْفَرٌ نَعَمْ قالتْ فقال لَهُ النَّجَاشِيُّ فَاقْرَأْهُ فَقَرَأَ عليْه صَدْرًا من (كهيعص) قالتْ فَبَكَى واللهِ النَّجَاشِيُّ حتى أَخْضَلَ لِحْيَتَهُ
সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৬ পৃ. ২৭ আহমাদ: ১৭৪০

عن أنس بن مالك قال كنا يومًا عندَ النبيِّ صلّى اللهُ عليه وسلَّم فدخلت عليه اليهودُ فرآها بيضَ اللِّحى فقال ما لكم لا تغيرون فقيل إنهم يكرهون فقال النبيُّ صلّى اللهُ عليه وسلَّم لكنَّكم غيِّروا وإياكمْ والسوادَ
সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ. ৫ পৃ. ১৬৩ মু’জামে কাবীর তবরানী খ. ১ পৃ. ৫১

প্রশ্ন:

কাফেরদেরও তো দাঁড়ি ছিল

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ يَنْظُرُ مَا صَنَعَ أَبُوْ جَهْلٍ فَانْطَلَقَ ابْنُ مَسْعُوْدٍ فَوَجَدَهُ قَدْ ضَرَبَهُ ابْنَا عَفْرَاءَ حَتَّى بَرَدَ قَالَ أَأَنْتَ أَبُوْ جَهْلٍ قَالَ فَأَخَذَ بِلِحْيَتِهِ قَالَ وَهَلْ فَوْقَ رَجُلٍ قَتَلْتُمُوْهُ أَوْ رَجُلٍ قَتَلَهُ قَوْمُهُ قَالَ أَحْمَدُ بْنُ يُوْنُسَ أَنْتَ أَبُوْ جَهْلٍ.

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বদরের দিন) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ জাহলের কী অবস্থা হল কেউ তা দেখতে পার কি? তখন ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বের হলেন এবং দেখতে পেলেন যে, ‘আফ্রার দুই পুত্র তাকে এমনিভাবে মেরেছে যে, মুমূর্ষু অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বললেন, তুমিই কি আবূ জাহ্ল? রাবী বলেনঃ আবূ জাহ্ল বললঃ সেই লোকটির চেয়ে উত্তম আর কেউ আছে কি যাকে তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করল অথবা বলল তোমরা যাকে হত্যা করলে? আহমাদ বিন ইউনুসের বর্ণনায় এসেছে, তুমি আবূ জাহল।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৩৯৬২

জবাব:

এক.

ان العرب ما كانت تترك زينة اللحي

অর্থ: আরবের লোকেরা দাঁড়ির সৌন্দর্য পরিত্যাগ করতো না জাহিলী
সূত্র: যাদুল মুসলিম খ. ৪ পৃ. ৪৪৫

ان لله تعالى ملائكة تسبيحهم سبحان من زين الرجال باللحى والنساء بالقرون والذوائب
সূত্র: তাফসীরে রুহুল বায়ান খ. ১ পৃ. ২২৫ আল-মাবসুত (সারাখসী) খ. ২৬ পৃ. ৭২ বাদায়েউস সানায়ে খ. ১০ পৃ. ৪৩০

দাঁড়ি রেখে বিধর্মীদের বিরুদ্ধাচরণ:

অনেক দাবি করে থাকেন যে, দাঁড়ি ছিল আরবের একটি সংস্কৃতি। নবীজি সা. সেটার বিরোধিতা করেননি। অথচ রাসুলুল্লাহ সা. বিধর্মীদের কোনো কালচার অনুসরণের অনুমতি দেননি, বরং যারা করবে তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস-৪০৩১ আহমাদ-৫১১৪ মুসনাদুল বাজ্জার: ২৯৬৬ মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক: ২০৯০৮৬ ফাতহুল বারী খ. ১০ পৃ. ২৮২ জামে সগীর: ৮৫৭৪

উক্ত হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সা. অমুসলিমদের অনুসরণ করার ব্যাপারে বেশ কঠোর ছিলেন। এরপরও কি বলা যায় যে, নবীজি সা. আরবের বিধর্মীদের কালচারের অনুসরণ করে দাঁড়ি রেখেছিলেন? নিশ্চয় না, বরং রাসুলুল্লাহ সা. খোদ দাঁড়ির ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুসরণও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, নবী সা. বলেন,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ

অর্থ: হযরত ইবনু উমার রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবে- দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে।
সূত্র: সহীহ বুখারী হাদিস: ৫৮৯২ মুসলিম: ২৫৯

দাঁড়ি ফিতরাতের অন্তুর্ভূক্ত:

আম্মাজান হযরত আয়েশাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত।অর্থাৎ এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা ফিতরাতী সুন্নাহ বা নীতি। অর্থাৎ যা প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরের সাথে মিশে থাকে। যেগুলো শুধু আমাদের ধর্মে নয়, বরং সকল নবীগণও আ. করে গেছেন।

عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ

অর্থ: দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্তঃ (১) মোচ খাটো করা,(২) দাড়ি লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) নাকে পানি দিয়ে ঝাড়া, (৫) নখ কাটা (৬) আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া, (৭) বগলের পশম উপড়ে ফেলা, (৮) নাভীর নীচের পশম মুন্ডন করা (৯) পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। সূত্র: সহীহ মুসলিম হাদিস: ২৬১

আরেক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,

الْخِتَانُ

অর্থাৎ (১০) খাতনা করা।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৫৭

মহান রব বলেন,

أُوْلَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ

অর্থ: এঁরা এমন ছিল, যাঁদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাঁদের পথ অনুসরণ করুন।
সুরাঃ আনআম, আয়াত: ৯০

দাঁড়ি সম্পর্কে হাদিসের ছয়টি শব্দ:

দাঁড়ি লম্বা করার বাপ্যারে আমাদের জানা মতে রাসুলুল্লাহ সা. পাঁচটি শব্দ ববহার করেছেন। নিন্মে পাঁচটি বর্ণনা উল্লেখ্য করা হলো,

এক. اعفوا (ছেড়ে দাও)।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏انْهَكُوا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوا اللِّحَى

অর্থ: হযরত ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাড়ি ছেড়ে দিবে (বড় রাখবে)।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৫৮৯৩

দুই. اوفوا (লম্বা করো)।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى

অর্থ: ইবনু উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর-মোচ কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ২৫৯

তিন. وفروا (বাড়াও বা লম্বা করো)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ

অর্থ: হযরত ইবনু উমার রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবে- দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৫৮৯২

চার. ارجوا (দীর্ঘ করো)।

عن أبي هريرة عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ جزُّوا الشَّواربَ وأَرجو أو أَوفوا اللِّحى

অর্থ: আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি দীর্ঘ করো।
সূত্র: নুখাবুল আফকার (আইনী রহ.) খ. ১৩ পৃ. ১৮১

পাঁচ. ارخوا (লম্বা করো)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ‏

অর্থ: হহযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি লম্বা কর (এভাবেই) তোমরা অগ্নি পুজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর।
সূত্র: সহীহ মুসলিম হাদিস: ২৬০

ছয়.

عن ابن عمر رضي الله عنهما مرفوعاً خالِفُوا المشركينَ أحْفُوا الشواربَ، وأوفِروا اللِّحى

অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ করো। মোচ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি লম্বা করো।
সূত্র: জামে সগীর, হাদিস নং- ৩৮৭৮

উক্ত হাদিসগুলোতে ৬ টি শব্দ أوفُوا-أرخُوا-أرجُوا-وفِّروا-أعفُوا-وأوفِروا আলাদা আলাদা ব্যবহার করা হয়েছে। সবগুলোরই মর্মার্থ হলো, দাঁড়ি লম্বা করা। কোনো হাদিসে দাঁড়ি কাটার কথা আসেনি। এখান থেকেও অনুধাবন করা যায় যে, ইসলামে দাঁড়ি কত গুরুত্বপূর্ণ আমল।

হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. এর অভিমত:

عن عمر بن عبد العزيز اياي وحلق الرأس واللحية

অর্থাৎ তুমি অবশ্যই চুল ও দাড়ি মুন্ডন করা থেকে বিরত থাকবে।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ বর্ণনা: ২৯২৩২

আহলে হাদিসের শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. ইবনে আসাকীরের রেফারেন্সে আরেকটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন,

عن عمر بن عبد العزيز قال إن حلق اللحية مثلة و قال إن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن المثلة،

অর্থাৎ হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ বলেন, দাড়ি মুন্ডন করা অঙ্গহানি করার শামিল। আর রাসূল সা. অঙ্গহানি করতে নিষেধ করেছেন।
সূত্র: আল-ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ (আলবানী) পৃ. ৩৬৯

চার মাযহাবের সিদ্ধান্ত

আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শায়খুল আকবর আলী মাহফূয বলেন,

وقد اتفقت المذاهب الأربعة على وجوب توفير اللحية وحرمة حلقها

অর্থ: চার মাযহাবই লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব ও দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম হওয়ার ব্যপারে ঐক্যমত পোষন করেেছেন
সূত্র: আল-ইবদা ফি মুযার্রিল ইবতিদা পৃ. ৩৮৪

হানাফী মাযহাবের অভিমত:

হানাফী বিদ্বান ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেন,

ويحرم على الرجل قطع لحيته

অর্থ: পুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা হারাম।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ৯ পৃ. ৫৮৩

وَأَمَّا الْأَخْذُ مِنْهَا وَهِيَ دُوْنَ ذَلِكَ كَمَا يَفْعَلُهُ بَعْضُ الْمَغَارِبَةِ وَمُخَنَّثَةُ الرِّجَالِ فَلَمْ يُبِحْهُ أَحَدٌ

অর্থ: এক মুষ্ঠির নীচে দাড়ির কিছু অংশ কাটা যেমন কিছু পশ্চিমা ও পুরুষ হিজড়ারা করে থাকে তা কেউ বৈধ বলেননি’।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ৩ পৃ. ৩৯৮

আল্লামা তুরবেশতী রহ. বলেন,

قصُّ اللحية كان من صنع الأعاجم وهو اليوم شعار كثير من المشركين كالإفرنج والهنود ومَنْ لا خَلاق له في الدين من الفِرَقِ الكافرةِ، طَهَّرَ الله حَوْزَةَ الدين منهم

অর্থ: দাড়ি মুণ্ডন করা অনারবদের কাজ, যা বর্তমানে আফ্রিকা ও হিন্দুস্তানের বহু মুশরিকদের ও বেদ্বীন কাফির মতবাদের ধর্মীয় শে‘আরে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ তাদের থেকে দ্বীনের সীমারেখাকে পবিত্র রাখুন’।
সূত্র: কিতাবুল মুয়াস্সার খ. ১ পৃ. ১৪১ লুম‘আতু তানক্বীহ খ. ২ পৃ. ১০৫

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. বলেন,

فَلَا بُد من إعفائها وقصها سنة الْمَجُوس وَفِيه تَغْيِير خلق الله

অর্থ: দাড়ি ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক। আর দাড়ি মুন্ডানো অগ্নীপূজকদের আদর্শ। আর এতে সৃষ্টির পরিবর্তন রয়েছে’।
সূত্র: হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ খ. ১ পৃ. ৩৩৮

মালেকী মাযহাবের ফাতাওয়া:

مذهب السادة المالكية حرمة حلق اللحية و كذا قصها اذا كان يحصل به مثلة

অর্থাৎ মালেকী মাযহাবের মত হলো, দাঁড়ি মুন্ডানো হারাম। এমনিভাবে দাঁড়ি ছোট করা যদি অঙ্গহানির পর্যায়ে চলে যায়।
সূত্র: আল-ইবদা পৃ. ৩৮৪

ইমাম আবুল আব্বাস কুরতুবী মালেকী রহ. বলেন,

لا يجوز حلقها ولا نتفها ولا قص الكثير منها

অর্থ: দাঁড়ি শেভ করা বা উঠিয়ে ফেলা বা বেশি কাট-ছাট করে ষ্টাইল করে রাখা নাজায়েয।
সূত্র: আল-মুফহাম খ. ১ পৃ. ৫১২

শাফেয়ী মাযহাবের অভিমত:

ইবনুর রফআহ শাফেয়ী রহ. বলেন,

بان الشافعي نص علي التحريم

অর্থাৎ শাফেয়ী রহ. দাঁড়ি মুন্ডানো হারাম হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ্য করেছেন।
সূত্র: শরহুস সুন্নাহ খ. ১ পৃ. ৩৯৯

শায়খ ইমাম শিহাবুদ্দীন আবুল আব্বাস আল আযরায়ী শাফেয়ী রহ. বলেন,

الصواب تحريم حلقها

অর্থাৎ সঠিক কথা হলো, দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম।
সূত্র: শরহুস সুন্নাহ খ. ১ পৃ. ৩৯৯

ইমাম নববী রহ. বলেন,

وكان من عادة الفرس قص اللحية فنهى الشرع عن ذلك

অর্থ: পারসিকদের (মুশরিকদের) অভ্যাস ছিল, দাড়ি মুন্ডন করা, অত:পর এটা থেকে শরী‘আত নিষেধ করেছে।
সূত্র: শরহে মুসলিম খ. ৩ পৃ. ৪৯১ নাইলুল আওতার খ. ১ পৃ. ১৩৮

হাম্বলী মাযহাবের মতবাদ:

হাম্বলী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ইমাম আল্লামা ইমাম মারদাভী রহ. দাঁড়ি রাখার হাদীসগুলো উল্লেখ করার পর বলেন,

وَهَذِهِ الصِّيغَةُ تَقْتَضِي عِنْدَ أَصْحَابِنَا التَّحْرِيمَ

অর্থ: আমাদের সাথীদের নিকট দাঁড়ি কাটার ব্যাপারে বর্ণিত শব্দগুলো তা হারাম হওয়ার দাবী রাখে’।
সূত্র: কিতাবুল ফুরূ খ. ১ পৃ. ১০০

আল্লামা সাফারিইনি হাম্বলী রহ. বলেন,

والمعتمد في المذهب حرمة حلق اللحية

সূত্র: গিযাউল আলবাব খ. ১ পৃ. ৩৩৪

ইবনে তাইমিয়্যাহ এর অভিমত:

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ রহ. বলেন,

وَيَحْرُمُ حَلْقُ اللِّحْيَةِ

অর্থাৎ দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম।
সূত্র: ফাতাওয়া কুবরা খ. ৫ পৃ. ৩০২ আল-ইখতিয়ারাত পৃ. ৬

ويُحرم حلق اللحية للأحاديث الصحيحة ولم يُبحه أحد

অর্থ: দাড়ি রাখার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীছ বর্ণিত হওয়ায় তা মুন্ডন করা হারাম। আর এটিকে কেউ বৈধ বলেননি’।
সূত্র: আল-বুরহানুল মুবিন খ. ১ পৃ. ৪৬৫

ويُحرم حلق اللحية ذكره شيخنا

অর্থাৎ দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম, এমনটাই বলেছেন আমাদের শায়খ (ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ.)।
সূত্র: গিযাউল আলবাব খ. ১ পৃ. ৩৩৪
আল-মুসতাদরাক আলা মাজমুয়িল ফাতাওয়া খ. ৩ পৃ. ২৬ আল-ফুরূ খ. ১ পৃ. ১২৯ আল ইখতিয়ারাত পৃ. ১০

জাহেরী মাযহাবের মতামত।

হাফেয আল্লামা আবু মুহাম্মদ আলী ইবন হাযম রহ. বলেন,

واما فرض قص الشارب واعفاء اللحية

অর্থাৎ এবং মোচ কাটা ও দাড়ি লম্বা করা ফরজ।
সূত্র: মুহাল্লা খ. ২ পৃ. ২২০

اتفق العلماء على أن قص الشارب وإعفاء اللحية فرض

অর্থ: সমস্ত আলেম একমত যে, মোচ কাটা এবং দাড়ি রাখা ফরয (ওয়াজিব)।
সূত্র: মুহাল্লা খ. ১ পৃ. ৪২৩ মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায খ. ১০ পৃ. ৬৫

সৌদী আরবের সর্বোচ্চ ফাতাওয়া বোর্ডের সিদ্ধান্ত।

حلق اللحية حرام

অর্থাৎ দাঁড়ি মুণ্ডন করা হারাম।
সূত্র: ফাতাওয়া লাজনাতুত দায়িমা খ. ৫ পৃ. ১৩৪ ফাতাওয়া নং- ৬৬৭

এ ব্যাপারে আরও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,

اعفاء اللحية واجب شرعا لورود الادلة الدالة علي الامر باعفاءها

অর্থ: শরয়ীভাবে দাঁড়ি লম্বা করা ওয়াজীব।যেহেতু এ ব্যাপারে বর্ণিত দলীলসমূহ দাঁড়ি লম্বা করার উপর নির্দেশ করে।
সূত্র: ফাতাওয়া লাজনাতুত দায়িমা খ. ৫ পৃ. ১৩৫ ফাতাওয়া নং- ৮৩৬

আলবানী রহ. এর অভিমত:

فثبت حرمة حلقها، ولزم وجوب إعفائها

অর্থ: সুতরাং দাঁড়ি মুণ্ডানো হারাম এবং লম্বা করা ওয়াজীব প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র: তামামুল মিন্নাহ (আলবানী) পৃ: ৮২

حمل الفقهاء هذا الأمر علي الوجوب وقالوا بحرمة حلق اللحية بناء علي هذا الامر

অর্থ: আল্লাহর রাসুল সা. এর নির্দেশনার আলোকে মুসলিম উম্মাহর ফকিহগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, দাঁড়ি রাখা ওয়াজীব আর দাঁড়ি কামানো বা মুণ্ডানো হারাম।
সূত্র: তামামুল মিন্নাহ (আলবানী) পৃ: ৮০

ইবনে উসাইমিন রহ. এর অভিমত:

শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেন,

حلق اللحية مُحَرَّم لأنه معصية لرسول الله صلى الله عليه وسلم فإن النبي صلى الله عليه وسلم قال أعفوا اللحى وحفوا الشوارب ولأنه خروج عن هدي المرسلين إلى هدي المجوس والمشركين

অর্থ: দাঁড়ি মুণ্ডন করা হারাম। কেননা এটা রাসূল সা. এর অবাধ্যতা। কারণ তিনি বলেন, দাঁড়ি ছেড়ে দাও ও গোঁফ ছোট কর। তাছাড়া এটা করা রাসূলগণের আদর্শ থেকে বেরিয়ে অগ্নিপূজক ও মুশরিকদের আদর্শে চলে যাওয়ার শামিল’।
সূত্র: মাজমুউ ফাতাওয়া (উসাইমিন) খ. ১১ পৃ. ১২৫

শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বায রহ. এর অভিমত:

أمَّا الحَلقُ فلا أعلَمُ أحدًا من أهلِ العِلمِ قال بجوازِه

অর্থাৎ দাঁড়ি মুণ্ডানোর ব্যাপারে কোনো ফকীহ জায়েয বলেছেন বলে আমার জানা নেই।
সূত্র: মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায খ. ৩ পৃ. ৩৭৩

ছালেহ আল ফাউযান রহ. এর অভিমত:

সঊদী আরবের অন্যতম গ্রাণ্ডল মুফতী শায়খ ছালেহ আল-ফাওযান বলেন,

أنَّ الاحاديث الصحيحة تدل تَدُلُّ عَلَى حرمة حَلْقِ اللحية

অর্থ: (দাঁড়ি রাখার ব্যাপারে) বর্ণিত সহিহ হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, দাঁড়ি মুণ্ডন করা হারাম’।
সূত্র: আল-বায়ান লি-আখতায়ি বা’যিল কুত্তাব পৃ. ৩৩৩

ইবনে জাবরীন রহ. এর অভিমত:

শায়খ আব্দুল্লাহ ইবন জাবরীন রহ. বলেন,

حلق اللحية حرام لأنها شعار الإسلام وقد ورد الأمر بتركها

অর্থ: দাঁড়ি মুন্ডন করা হারাম। কেননা এটি ইসলামের শে‘আর বা নিদর্শন। আর দাঁড়ি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ এসেছে।
সূত্র: আল-লু’লুউল মাকিন ফাতাওয়া নং-৪৩২

এক মুষ্ঠির দলীল

নবীজি সা. এর আমল:

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهِ مِنْ عَرْضِهَا وَطُولِهَا

অর্থ: আমর ইবনু শুআইব রহ, হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৈঘ্যে-প্রস্থে দু দিকে তার দাঁড়ি ছাটতেন।
সূত্র: জামে তিরমিযি হাদিস: ২৭৬২

হাদিসটির মান:

ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হাদিসটি হাসান বলেছেন।
সূত্র: তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবিহ খ. ৪ পৃ. ২৩৫

হাদিসটি যদিও অনেকে যয়ীফ বলেছেন, তবে তাঁরা যয়ীফ হওয়ার কারণ বলেছেন, হাদিসটির সনদে থাকা “উমার ইবনে হারুন” এর কারণে। কিন্তু এ উমার ইবনে হারুণ সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহ. এর অভিমত হলো,

আবু ঈসা তিরমিযি রহ: বলেন,

وَسَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ عُمَرُ بْنُ هَارُونَ مُقَارِبُ الْحَدِيثِ لاَ أَعْرِفُ لَهُ حَدِيثًا لَيْسَ إِسْنَادُهُ أَصْلاً أَوْ قَالَ يَنْفَرِدُ بِهِ إِلاَّ هَذَا الْحَدِيثَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهِ مِنْ عَرْضِهَا وَطُولِهَا ‏.‏ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ عُمَرَ بْنِ هَارُونَ

আমি মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল তথা ইমাম বুখারী রহ. কে বলতে শুনেছি, উমার ইবনে হারূনের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ যোগ্য বলা যায়। “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাঁড়ির দৈর্ঘ্য-প্রস্থে উভয় দিকে ছাঁটতেন” এই হাদীস ছাড়া তার অন্য কোন রিওয়ায়াত সম্পর্কে আমার জানা নাই, যার কোন বুনিয়াদ নাই বা যা তিনি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আমরা শুধুমাত্র ইবনু হারূনের রিওয়ায়াত হিসেবে উপরোক্ত হাদীস জেনেছি।

তিরমিযি রহ. আরও বলেন,

وَرَأَيْتُهُ حَسَنَ الرَّأْىِ فِي عُمَرَ بْنِ هَارُونَ

অর্থাৎ আমি ইমাম বুখারীকে উমার ইবনু হারূন সম্পর্কে উত্তম অভিমত মনে ধারণ করতে দেখেছি।

ইমাম তিরমিযি রহ. আরও বলেন,

سَمِعْتُ قُتَيْبَةَ يَقُولُ عُمَرُ بْنُ هَارُونَ كَانَ صَاحِبَ حَدِيثٍ

অর্থাৎ আমি কুতাইবাকে বলতে শুনেছি, উমার ইবনু হারূন ছিলেন হাদীসের ধারক।
সূত্র: জামে কাবীর (তিরমিযি) খ. ৬ পৃ. ৮৫২ উমদাতুল কারী খ. ২২ পৃ. ৭২

সাহাবাদের রা. আমল:

ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন,

كانوا يأخذون من عوارض لحاهم

অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম রা. এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাঁড়ি কেটে ফেলতেন।
সূত্র: আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৬ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৮১

হাসান বসরী রাহ. বলেন,

كَانُوا يُرَخِّصُونَ فِيمَا زَادَ عَلَى الْقَبْضَةِ مِنْ اللِّحْيَةِ أَنْ يُؤْخَذَ مِنْهَا

অর্থাৎ তাঁরা (সাহাবা-তাবেয়ীগণ) মুষ্ঠির অতিরিক্ত দাড়ি কাটার অবকাশ দিতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭৫

ইবনে উমার ও আবু হুরায়রা রা. এর আমল:

ورُوي عن عبد الله بن عمر وأبي هريرة رضي الله عنهم أنَّهما كانا يأخذانِ مِن اللِّحيةِ ما فضَل عن القبضةِ

অর্থ: বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে উমার ও আবু হুরায়রা রা. তাঁরা তাঁদেে দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন।
সূত্র: তানবীরুল হাওয়ালেক (সুয়ূতী রহ.) পৃ. ৬৮২

ইবনে উমার রা. এর আমল:

عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَأْخُذُ مَا فَوْقَ الْقَبْضَةِ

অর্থ: হযরত ইবনে উমার রা. তাঁর দাঁড়ি এক মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭৭

আবু হুরায়রা রা. এর আমল:

عَنْ أَبِي زُرْعَةَ قَالَ كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَقْبِضُ عَلَى لِحْيَتِهِ ثُمَّ يَأْخُذُ مَا فَضَلَ عَنْ الْقَبْضَةِ

অর্থ: আবু যুরাআহ রহ. বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭২ আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৭

অপর রেওয়ায়েতে এসেছে,

عَنْ أَبِي زُرْعَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ كَانَ يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهِ مَا جَاوَزَ الْقَبْضَةَ

অর্থ: আবু যুরাআহ রহ. বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭৯

আলী রা. এর আমল:

عَنْ سِمَاكِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ كَانَ عَلِيٌّ يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهِ مِمَّا يَلِي وَجْهَهُ

অর্থ: সিমাক বিন ইয়াযীদ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. মুখের আশ-পাশের দাড়ি ছাঁটতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭১
আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৬

শুধু হজ্ব উমরার সময় দাঁড়ি কাটা যাবে?

অনেকে শুধু হজ্ব উমরার সময় দাঁড়ি কাটা জায়েয প্রমাণ করতে ইবনে উমার রা. ও জাবের রা. এর হাদিস পেশ করেন। হযরত কাতাদাহ রহ. বলেন,

قَالَ جَابِرٌ لَا نَأْخُذُ مِنْ طُولِهَا إلَّا فِي حَجٍّ أَوْ عُمْرَةٍ

অর্থাৎ জাবের রা. বলেছেন, (দাঁড়ির এক মুষ্টির পর) লম্বা অংশ হজ্ব এবং উমরার সময় ব্যতিত কাটতাম না।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭৮

অপর বর্ণনায় এসেছে,

وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ‏

অর্থ: হযরত ইবনে উমার রা. যখন হজ্ব বা ‘উমরাহ করতেন, তখন তিনি তাঁর দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস: ৫৮৯২

এ বর্ণনা দুটি সামনে রেখে অনেকে দাবি করেন, একমুষ্টির অতিরিক্ত দাঁড়ি কাটা যাবে শুধু হজ্ব ও উমরার সময়। তাদের জবাবে ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন,

وفي أخذِ ابنِ عمَرَ مِن آخِرِ لحيتِه في الحَجِّ دليلٌ على جوازِ الأخذ من اللحيةِ في غير الحَجِّ لأنَّه لو كان غيرَ جائزٍ ما جاز في الحَجِّ

অর্থাৎ ইবনে উমার রা. এর হজ্বের সময় এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাঁড়ি কর্তন করা হজ্ব ব্যতিত অন্য সময়ও কাটা জায়েয হওয়ার দলীল। কারণ যদি একমুষ্টির অতিরিক্ত দাঁড়ি কাটা (মৌলিকভাবে) জায়েয না হতো, তাহলে হজ্বের সময়ও জায়েয হতো না।
সূত্র: আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৬

তাবেয়ীদের আমল:

আতা রহ. এর আমল:

وقال عطاء لا بأس ان ياخذ من لحيته الشيئ القليل من طولها وعرضها اذا كبرت وعلت كراهة الشهرة

অর্থ: হযরত আতা রহ. বলেন, দাঁড়ি বড় হলে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থেকে কিছু অংশ কাটলে কোনো অসুবিধা নেই।…..
সূত্র: উমদাতুল কারী খ. ২২ পৃ. ৭২

ইবরাহীম নাখয়ী রহ. অভিমত:

قال النخعي عجبت لرجل عاقل طويل اللحية كيف لا يأخذ من لحيته ويجعلها بين لحيتين فان التوسط في كل شيئ حسن

সূত্র: ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন খ. ১ পৃ. ২০৩ মিরকাত খ. ৮ পৃ. ২৮৫

عَنْ عَطَاء بْن أَبِي رَبَاحٍ قَالَ وَكَانَ إبْرَاهِيمُ يَأْخُذُ مِنْ عَارِضِ لِحْيَتِهِ

অর্থ: আতা ইবনে আবী রবাহ্ বলেন, ইবরাহীম নাখয়ী রহ. দাঁড়ির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭৩ আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৭

عَنْ ابْنِ طَاوُسٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ كَانَ يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهِ وَلَا يُوجِبُهُ

অর্থ: ইবনে তাউস তাঁর বাবার বিষয়ে বর্ণনা করেন যে, তিনি দাঁড়ির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।….
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭৪

কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ রহ. এর আমল:

عَنْ أَفْلَحَ قَالَ كَانَ الْقَاسِمُ إذَا حَلَقَ رَأْسَهُ أَخَذَ مِنْ لِحْيَتِهِ وَشَارِبِهِ
অর্থ: হযরত কাসেম যখন মাথা মুণ্ডন করতেন, তখন দাঁড়ির (এক মুষ্টির অতিরিক্ত) অংশ এবং মোচ কাটতেন।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৭৬

হাসান বসরী ও ইবনে সিরিন রহ. এর আমল:

عَنْ أَبِي هِلَالٍ قَالَ سَأَلْت الْحَسَنَ وَابْنَ سِيرِينَ فَقَالَا لَا بَأْسَ بِهِ أَنْ تَأْخُذَ مِنْ طُولِ لِحْيَتِك

অর্থ: আবু হালাল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাসান বসরী ও ইবনে সিরিন রহ. কে প্রশ্ন করলাম। অত:পর তাঁরা উত্তর দিলেন, তুমি তোমার দাঁড়ির (একমুষ্টির অতিরিক্ত) লম্বা অংশ কাটলে কোনো অসুবিধা নেই।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা: ২৫৪৮০ আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৭

চার মাযহাবের অভিমত:

হানাফী মাযহাব:

ফাতাওয়া শামীতে এসেছে,

لا بأسَ بأخذِ أطرافِ اللِّحيةِ إذا طالت

অর্থাৎ লম্বা হলে দাঁড়ির পাশ ছাটতে কোনো অসুবিধা নেই।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার খ. ৩ পৃ. ৩৯৭

ولا بأس أن يقبض على لحيته فإن زاد على قبضته منها شيء جزه

অর্থাৎ একমুষ্টির অতিরিক্ত অংশ দাঁড়ি কাটলে কোনো অসুবিধা নেই।
সূত্র: ফাতাওয়া হিন্দিয়া খ.৫ পৃ. ৪৩৮ রদ্দুল মুহতার খ. ৩ পৃ. ৩৯৭

হাম্বলী মাযহাব:

ইবনে হানি রহ. বলেন,

سألتُ أبا عبد الله عن الرجُلِ يأخذ من عارِضَيه قال يأخذُ مِن اللِّحيةِ ما فضلَ عن القبضة
সূত্র: মাসায়েলে ইবনে হানি খ. ২ পৃ. ১৫১-১৫২ বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ খ. ৪ পৃ. ১৪৩০-১৪৩১

ইবনে হানি রহ. আরও বলেন,

ورأيت أبا عبد الله يأخذُ من عارِضَيه ومن تحتِ حَلقِه
সূত্র: সূত্র: মাসায়েলে ইবনে হানি খ. ২ পৃ. ১৫১-১৫২ বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ খ. ৪ পৃ. ১৪৩১

ইবনে মুফলিহ আল-হাম্বলি রহ. বলেন, শায়খ তাকীউদ্দীন রহ. বলেছেন,

ولا يكره اخذ ما زاد علي القبضة ونصه لا بأس باخذه وما تحت حلقه لفعل ابن عمر
সূত্র: আল-মুবদি ফি শারহিল মুকনি খ. ১ পৃ. ৮৫ আল-ফুরূ খ. ১ পৃ. ১০০

মালেকী মাযহাব:

মালেক রহ.

عن ابن القاسم قال سمعت مالكا يقول لا بأسَ أن يؤخَذَ ما تطايرَ من اللِّحيةِ وشَذَّ
সূত্র: আল-ইস্তেযকার খ. ২৭ পৃ. ৬৪-৬৫ বর্ণনা: ৪০২২২

قيل لمالك فإذا طالت جدًّا فان من اللحي ما تطول قال أرى أن يؤخَذَ منها وتُقَصَّ
সূত্র: আল-ইস্তেযকার খ. ২৭ পৃ. ৬৫ বর্ণনা: ৪০২২৩

কাযী আয়ায মালেকী রহ. বলেন,

وأمَّا الأخذُ مِن طولِها وعَرضِها فحسَنٌ

অর্থাৎ দাঁড়ির দৈর্ঘ ও প্রস্থ থেকে কিছু কাটা ভাল।
সূত্র: ইকমালুল মু’লিম খ. ২ পৃ. ৬৪

ইবনে আব্দুল বার মালেকী রহ. বলেন,

وفي أخذِ ابنِ عمَرَ مِن آخِرِ لحيتِه في الحَجِّ دليلٌ على جوازِ الأخذ من اللحيةِ في غير الحَجِّ؛ لأنَّه لو كان غيرَ جائزٍ ما جاز في الحَجِّ
সূত্র: আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৬

وابن عمر روى عن النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم وأعفُوا اللِّحى وهو أعلَمُ بمعنى ما روى فكان المعنى عنده وعند جمهورِ العُلَماءِ الأخذَ من اللِّحية ما تطايرَ
সূত্র: আল-ইস্তেযকার খ. ১৩ পৃ. ১১৬

শাফেয়ী মাযহাব:

ইমাম গাজালী রহ. বলেন,

وقد اختلفوا فيما طال منها، فقيل: إنْ قبَضَ الرجلُ على لحيتِه وأخذَ ما فضَلَ عن القبضةِ، فلا بأس؛ فقد فعَلَه ابن عمر وجماعةٌ من التابعين، واستحسَنه الشَّعبي وابن سيرين

অবশ্য দাঁড়ি লম্বা হওয়ার বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরাম মতানৈক্য করেছেন, কেউ কেউ বলেন, যদি দাঁড়ির একমুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কাটে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ এমনটা ইবনে উমার রা. এবং তাবেয়ীদের একটি জামাআত করেছেন এবং শা’বী এবং ইবনে সিরিন রহ. ভাল মনে করেন।
সূত্র: ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন খ. ১ পৃ. ২০৩

ইবনে তাইমিয়া রহ. এরর অভিমত:

ولو أخذَ ما زاد على القبضةِ لم يُكرَهْ نصَّ عليه كما تقدَّمَ عن ابن عمر

অর্থ: ইবনে উমার রা. এর বর্ণিত হাদিসের আলোকে যদি কেউ এক মুষ্টির বাহিরে অতিরিক্ত টুকু কাটে তাহলে মাকরুহ হবে না।
সূত্র: শরহুল উমদাহ খ. ১ পৃ. ২২৩

একমুষ্টির অতিরিক্ত কাটা বিকলাঙ্গ নয়।

মহিলাদের জন্য মাথার চুল কাটা জায়েয। কারণ হাদিসে এসেছে,

كَانَ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْخُذْنَ مِنْ رُءُوسِهِنَّ حَتَّى تَكُونَ كَالْوَفْرَةِ

অর্থ: নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ তাদের মাথার চুল এমনভাবে ছেঁটে-কেটে রাখতেন যে, শেষ পর্যন্ত তা ওয়াফরা (চুলের মাথা কেটে কান পর্যন্ত করা হলে তাকে ওয়াফরা বলা হয়) এর মত হয়ে যেতো।
সূত্র: সহীহ মুসলিম হাদীস: ৩২০ বুখারী: ২৫১

সুতরাং দাঁড়ি এক মুষ্ঠির পর অতিরিক্ত অংশ কাটা বিকলাঙ্গের অন্তুর্ভূক্ত নয়। যেমন মহিলারা চুল কেটে ছোট করা বিকলাঙ্গের অন্তুর্ভূক্ত নয়। এজন্য নবীজির সা. স্ত্রীরা চুল কাটতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.