Home > বই > অভিযোগসমূহ:

অভিযোগসমূহ:

অভিযোগ:

মুহাম্মাদ সা. ৬ বছরের আয়েশাকে রা. বিয়ে করেছেন। প্রশ্ন হলো, ৬ বছরের একটি শিশু সংসার কি জিনিস সেটা কি বুঝবে ? দৈহিক রিলেশন কি জিনিস ভালোভাবে বুঝবে? যদি না বুঝে থাকে, তবে আয়েশার ঐ শিশুকালে কবুল বলার মত স্বাভাবিক জ্ঞানই হয়নি । সুতরাং তাঁককে তাঁর পিতা-মাতা বিয়ে দিয়ে কি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেননি?

জবাব:

এক.
এটা একটা জাহেলি প্রশ্ন। কেননা প্রতিটি শিশুর শিশুকালের সকল সিদ্ধান্ত নিতে হয় বাবা-মাকে। যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ না থাকে, তাহলে বাচ্চাটির জিবন হুমকির মুখে পড়বে।  যেমন ধরুণ, বাচ্চাটির ছোটবেলার পড়ালেখার বিষয়। যদি এ বিষয়ে বাবা-মা বাচ্চাটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ১৮/২২ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে এ বাচ্চাটি কি শিক্ষার আলো পাবে? নিশ্চয় না, বরং বাচ্চাটি টাটকা মুর্খ হবে। সুতরাং বুঝা গেলো, নাস্তিকদের থিউরী মানলে ভবিষ্যত প্রজন্ম মুর্খ হবে।

আবার মনে করুন, বাচ্চাটির জন্য কেউ ১ লক্ষ টাকা গিফট করলো। এখন বাবা-মা যদি বাচ্চাটির সিদ্ধান্ত জানার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে টাকাটা কি করবে? রাস্তায় ফেলে রাখবে? যদি চুরি হয়ে যায়, তাহলে নাস্তিকরা কি দায় নেবে? কি অহেতুক যুক্তি!

আবার ধরুন, বাচ্চাটি হঠাৎ অসুস্থ। ডাক্তার দেখাবে কি না বা কোন ডাক্তার বা হসপিটালে নেবে এসকল বিষয়ে বাচ্চাটির বুঝ হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে সে সময় পাওয়ার আগেই বাচ্চাটি হয়তো মারাই যাবে। তাহলে বুঝা গেলো, নাস্তিকদের ধিউরী মানলে ভবিষ্যত প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়বে।

দুই.
বাবা-মা সন্তানের জন্য সবচে বড় স্নেহশীল। বাচ্চার জন্য কোনটা ভালো কোনটা অমঙ্গল এটা বাবা-মাই সবচে বেশি ভালো বুঝবেন। এজন্য ইসলামে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর বিয়ের ক্ষেত্রেও অভিভাবককে গুরুত্ব দেয়। কারণ অভিজ্ঞতার আলোকে অভিভাকগণ ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদিও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলিম নারী পছন্দমত কোনো মুসলিম নারীকে বিয়ে করলে সেটা বৈধ বলে সিদ্ধান্ত দেয়। তবুও অভিভাবক একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং অভিভাবক হিসাবে আবু বকর রা. ও তাঁর স্ত্রী মেয়ে আয়েশার রা. ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা মেয়ের উভয় জগতের সফলতার দিকে তাকিয়েই চমৎকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা আয়েশার রা. জন্য কোনো খারাপ বা ক্ষতিকর বিষয় ছিলো না। বরং আয়েশা রা. নিজেই নবীজির সা. সাথে বিয়ে হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবতি মনে করতেন। এজন্য নবীজি সা. যখন আয়েশাকে রা. থাকা না থাকার ব্যাপারে ইচ্ছাধীন করে দিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন,

فَإِنِّيْ أُرِيْدُ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَالدَّارَ الآخِرَةَ

অর্থাৎ আমি তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি।‘
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৪৭৮৬

সুতরাং উপরন্তু তিনি নবীজির সা. জিবদ্দশায় তো দূরে থাক ইন্তেকালের পরও কোনো অভিযোগ আনেননি। কোনো অভিমানসূচক শব্দও ব্যবহার করেননি, বরং তিনি আজিবন নবীজির সা. মহত্ত্ব ও চরিত্রের সৌন্দর্য জাতির সামনে ব্যক্ত করে গেছেন। বুঝা গেলো, নবীজির সা. সাথে বিয়ে দেওয়া তাঁর বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিলো। অতএব এটা নিয়ে ১৪০০ বছর পর জলঘোলা করা মানেই মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি দেখানো।

অভিযোগ:

হযরত মোহাম্মদ সা. সর্ব কালের, সর্ব যুগের জন্য আদর্শ মহা-মানব। তাঁকে মানা তো উম্মতের জন্য জরুরি। এখন তাকে ফলো করে সবাই যদি বুড়ো বয়সে ৬ বছরের শিশুকে বিয়ে করে, তখন এটা যাই হোক আধুনিক সভ্য জগতে একসেপ্টটেবল নয় ।

জবাব:

এক.
মুহাম্মাদ সা. ছিলেন উম্মতের নবী। তাঁর সকল বিষয় উম্মত ফলো করে বটে, কিন্তু নাস্তিকদের জানা দরকার যে, মুহাম্মাদ সা. কে সর্ব বিষয়ে মানা কিন্তু উম্মতের জন্য জরুরী নয়, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নবীজির সা. অনুসরণ করা জায়েয নয়। যেমন, নবীজি সা. এক সাথে ১০ জন স্ত্রী থাকার বিষয়টি শুধু তাঁর সাথেই সম্পৃক্ত, এটা তাঁর জন্যই নির্ধারিত, উম্মতের জন্য নয়। (এ বিষয়ে ‘বহুবিবাহ’ শিরোনামে বিস্তারিত লেখা রয়েছে)। অন্য কোনো উম্মত যদি এখন ৪ টার বেশী স্ত্রী এক সাথে রাখে, তাহলে সেটা হারামের গুনাহ হবে। তাহলে এ ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ সা. কে কোনও উম্মত কি মানলো?

আবার কিছু বিষয় আছে, যা নবীজির সা. জন্য পালন করা জরুরি ছিলো, কিন্তু উম্মতের জন্য বাধ্যবাধকতা নয়।

উক্ত আয়াতের তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

أنها للنبيّ ﷺ خاصة أُمر بقيام الليل وكُتب عليه

অর্থাৎ এই তাহাজ্জুদের নামাজ শুধুমাত্র নবীজি সা. এর উপর ফরজ করা হয়েছিলো। (উম্মতের জন্য আবশ্যকীয় নয়)।
সূত্র: তাফসীরে তাবারী, খ. ১৭ পৃ. ৫২৫

মিরাস:

নবী সা. নিজেও কারও ওয়ারিসি সম্পত্তির হক্বদার হন না, এবং তাঁর সম্পত্তির মালিকও পরিবারের কেউ হন না। হযরত উমার রা. আবু বকর সিদ্দিক রা. সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবীজি সা. বলেছেন,

إنَّ النبيَّ لا يُورَثُ وإنَّما مِيراثُه في فقراءِ المسلمينَ والمساكينِ
অর্থাৎ নবী কারো থেকে ওয়ারিস জয় না, এবং তাঁর মিরাসের সম্পত্তি মুসলমান ফকির-মিসকিনদের খাতে বন্টন করতে হয়।
সূত্র: মুসনাদে আবু বকর, হাদিস: ৩ মুসনাদে আহমাদ: ৭৮ (হাদিস হাসান)

এরকম অসংখ্য বিষয় আছে যা শুধুমাত্র নবীজির সা. জন্য স্পেশাল বিষয় ছিলো। সুতরাং নবীজির সা. সব বিষয়ে ফলো করা উম্মতের জন্য জরুরি বিষয়ে যে কথা নাস্তিকরা প্রচার করছেন, এটা তাদের মুর্খতা বৈ কি?

দুই.

বৃদ্ধবয়সে ৬ বছরের মেয়েকে বিবাহ করতে হবে মর্মে নবীজি সা. কোনো আইন জারি করেননি। সুতরাং মহানবী সা. আমাদের আদর্শ । কিন্তু এমন একটি হাদিস দেখাতে পারবেন না, যেখানে রাসুল সা. বলেছেন যে, তোমরা ৬ বছরের মেয়ে বিয়ে করো। সুতরাং উম্মাহ বা জাতির বৃহত্তম স্বার্থে যদি কেউ এমনটি করেন, তবুও সেটা কোনো অন্যায় নয়, বরং সেটা জাতির জন্য কল্যানকর।

Check Also

অল্পবয়সী আয়েশা রা. ও নবীজির সা. বিবাহ পর্যালোচনা।

অল্পবয়সী আয়েশা রা. ও নবীজির সা. বিবাহ পর্যালোচনা। প্রিয় পাঠক, নাস্তিক্যবাদীরা রাসুলুল্লাহকে সা. সবচে চারিত্রিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.