তাকওয়ার ফযিলত:
কোনো এলাকায় যদি ভুমিকম্প হয়, তাহলে সে ভুমিকম্পের ধাক্কায় অত্র এলাকার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ফলে মানুষের পক্ষ থেকে মোটামুটি তিন ধরণের সহযোগিতা পাওয়া যায়।
১. সরকার নাগরীকের ভেঙ্গে যাওয়া ঘর বাড়ি গুলো পূনরায় ঠিক করে দেন। অর্থাৎ তার জিবনের এ কঠিন বিষয় সহজ করে দেন।
২. সরকারী ভাবে এবং আজ জনতার পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌছানো হয়।
৩. সরকার কর ও ট্যাক্সের টাকা মাফ করে দেন।
তিনটি পুরস্কার:
এক. সকল কর্ম সহজ হয়ে যাওয়া।
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
অর্থ: যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।
সুরা তালাক আয়াত: ৪
তাফসীর:
قال عطاء يسهل الله عليه أمر الدنيا والآخرة
অর্থাৎ হযরত আতা রহ. বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা তার দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয় সহজ করে দেবেন।
সূত্র: তাফসীরে রাযী খ: ৩০ পৃ: ৩৬ বগবী খ: ৪ পৃ: ৩৫৮ তাফসীরে কাবীর মাআলিমুত তানযীল খ: ৮ পৃ: ১৫৩
অপরাধী কখনও স্থির জিবন পায় না। সব সময় আতঙ্কে থাকে।
وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِی فَإِنَّ لَهُۥ مَعِیشَةࣰ ضَنكࣰا وَنَحۡشُرُهُۥ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ أَعۡمَىٰ
বিপর্যয় কেন আসে?
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
অর্থ: স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে
সুরা রুম আয়াত: ৪১
উত্তরণের পথ
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا
অর্থ: অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।
সুরা নুহ আয়াত: ১০-১২
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।
সুরা আনকাবুত আয়াত: ৬৯
তাফসীর:
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا اي اجْتَهَدُوا في العَمَلِ بِالطّاعَةِ والكَفِّ عَنِ المَعْصِيَةِ رَغْبَةً في ثَوابِنا وحَذَرًا مِن عِقابِنا
لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا يَعْنِي الطَّرِيقَ إلى الجَنَّةِ
সূত্র: তাফসীরে মাওয়ারদী
ইউসুফ আ.
ইউসুফ আ. কে ফুসলিয়ে ব্যাভিচারে লিপ্ত করার জন্য জুলাইখা খুব চেষ্টা করেছিল। বলা হয়,
إِنَّهَا كَانَتْ سَبْعَةَ أَبْوَابٍ غَلَّقَتْهَا ثُمَّ دَعَتْهُ إِلَى نَفْسِهَا
অর্থাৎ সাতটি দরজা বন্ধ করে জুলাইখা তার দিকে আহ্বান করল।
কিন্তু আল্লাহ পাকের ওয়াদা
إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
জালেমরা কখনও সফল হয় না।
হাদিস শরীফে এসেছে,
أَنَّهَا قَالَتْ لَهُ يَا يُوسُفُ مَا أَحْسَنَ صُورَةَ وَجْهِكَ قَالَ فِي الرَّحِمِ صَوَّرَنِي رَبِّي قَالَتْ يَا يُوسُفُ مَا أَحْسَنَ شعرك قال هو أول شي يَبْلَى مِنِّي فِي قَبْرِي قَالَتْ يَا يُوسُفُ مَا أَحْسَنَ عَيْنَيْكَ قَالَ بِهِمَا أَنْظُرُ إِلَى رَبِّي قَالَتْ: يَا يُوسُفُ ارْفَعْ بَصَرَكَ فَانْظُرْ فِي وَجْهِي قَالَ إِنِّي أَخَافُ الْعَمَى فِي آخِرَتِي قَالَتْ يَا يُوسُفُ أَدْنُو مِنْكَ وَتَتَبَاعَدُ مِنِّي قَالَ أُرِيدَ بِذَلِكَ الْقُرْبَ مِنْ رَبِّي قَالَتْ يَا يُوسُفُ الْقَيْطُونُ فَرَشْتُهُ لَكَ فَادْخُلْ مَعِي قَالَ الْقَيْطُونُ لَا يَسْتُرُنِي مِنْ رَبِّي قَالَتْ يَا يُوسُفُ فِرَاشُ الْحَرِيرِ قَدْ فَرَشْتُهُ لَكَ قُمْ فَاقْضِ حَاجَتِي قَالَ إِذًا يَذْهَبُ مِنَ الْجَنَّةِ نَصِيبِي
অর্থাৎ জুলাইখা বলল, ইউসুফ, তোমার চেহারা কত সুন্দর। ইউসুফ আ. বললেন, এটা মাতৃগর্ভে আমার রব সাজিয়েছে। জুলাইখা বলল, ইউসুফ, তোমার চুল কত সুন্দর! ইউসুফ আ. বললেন, এ চুল সর্ব প্রথম কবরে মাথা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।জুলাইখা বলল, ইউসুফ, তোমার চোখ দুটো কত সুন্দর! ইউসুফ আ. বললেন, এ দুটো চোখ দিয়ে আমার রবকে আমি অবলোকন করবো। জুলাইখা বলল, ইউসুফ, চোখ তোলো আমার চেহারার দিকে তাকাও। ইউসুফ আ. বললেন, আমি এটা করলে কিয়ামতে আমার চোখ অন্ধ হওয়ার ভয় পাচ্ছি।জুলাইখা বলল, ইউসুফ, আমি তোমার কাছে এসেছি, অথচ তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো!ইউসুফ আ. বললেন, এটার দ্বারা আমি আমার রবের নৈকট্য অর্জন করতে চাই। জুলাইখা বলল, ইউসুফ, ঘরের ভেতর ঘরে বিছানা করেছি। চলো আমার সাথে প্রবেশ করো। ইউসুফ আ. বললেন, ঘরের মধ্যে ঘর তবে রবের থেকে গোপন করতে পারবে না। জুলাইখা বলল, ইউসুফ, রেশমী কাপড় দিয়ে বিছানা বিছিয়েছি, চলো আমার সাথে, আমার চাহিদা পূরণ করো। ইউসুফ আ. বললেন, তখন আমি জান্নাতের অংশ থেকে দুরে চলে যাবো।
সূ্ত্র: তাফসীরে কুরতুবী ১১৪/৯ কাসাসুল কুরআন পৃ: ১১৬-১১৭
যুবকদের নিয়ে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) অথবা আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আল্লা (কিয়ামত দিবসে) সাত প্রকারের লোককে তার (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় প্রদান করবেন, যেদিন তার (আরশের) ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়াই (আশ্রয়) অবশিষ্ট থাকবে না। তাদের মাঝে এক প্রকারের লোক তারা যারা
سبعةٌ يُظلُّهم اللهُ في ظلِّه يومَ لا ظلَّ إلا ظلُّه…
رَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ حَسَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ
অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যাকে কোন অভিজাত পরিবারের সুন্দরী রূপসী নারী (অশ্লীল কাজে) আহববান করেছে কিন্তু সে তাকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছেঃ আমি আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় করি।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৬৬০ মুসলিম: ১০৩১ নাসাঈ: ৫৩৮০ তিরমিযি: ২৩৯১ আহমাদ: ৯৬৬৫
কবি বলেন,
در جوانی توبہ کردن شیوه پیغمبری
وقت پیری گرگ ظالم میشود پرہیزگار
অর্থাৎ যৌবন বয়সে তওবা করা নবীদের অভ্যাস। বুড়ো বয়সে তো নেকড়ে বাঘও তো পরহেজগার হয়ে যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে ফুসলিয়ে যখন ইউসুফ আ. কে খারাপ কাজে লিপ্ত করতে পারল না, কিন্তু ইউসুফ আ. যখন ভাবলেন, এখান থেকে বাঁচতে হবে। কিন্তু বাঁচবেন কিভাবে? দরজা তো সাতটি বন্ধ রাখা। রবের উপর ভরসা করে দৌড় দিলেন। আল্লাহ বলেন,
وَاسُتَبَقَا الْبَابَ
অর্থ: তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল।
সুরা ইউসুফ আয়াত: ২৫
দরজা লক করা থাকলেও প্রত্যেকটি দরজার সামনে যাবার সাথে সাথেই দরজা গুলো টাসটাস করে খুলে গেল।
عشق سے بیتاب جو دل ہے نہیں وہ دل نہیں
جلوہ جانا سے خالی ہے جو وہ منزل نہیں
معشوقوں کا جو نشانہ سب تمہارے پاس ہے
اس لئے عاشق ہو میں تو میرا معشوق ہے
معشوقوں سے کیا مزہ ہے عاشقوں سے پوچھیو
شاخ گل میں کیا مزہ ہے بلبوں سے پوچیو
কিন্তু জুলাইখা পেছন থেকে ইউসুফ আ. এর জামা ধরে টান দিল। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَقَدَّتْ قَمِيصَهُ مِن دُبُرٍ وَأَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَى الْبَابِ
অর্থাৎ এবং মহিলা ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল।
সুরা ইউসুফ আয়াত: ২৫
উপায়ান্তর খুঁজে না পেয়ে জুলাইখা এখন ইউসুফ আ. এর উপর অপবাদ আরোপ করে বলল,
قَالَتْ مَا جَزَاء مَنْ أَرَادَ بِأَهْلِكَ سُوَءًا إِلاَّ أَن يُسْجَنَ أَوْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থ: মহিলা বললঃ যে ব্যক্তি তোমার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে?
সুরা ইউসুফ আয়াত: ২৫
ইুসুফ আ. বললেন,
قَالَ هِيَ رَاوَدَتْنِي عَن نَّفْسِي
অর্থ: ইউসুফ (আঃ) বললেন, সেই আমাকে আত্মসংবরণ না করতে ফুসলিয়েছে।
সুরা ইউসুফ আয়াত: ২৬
দু’জনের কারো কাছে সাক্ষি না থাকায় সাক্ষির খুব প্রয়োজন ছিল, হঠাৎ জুলাইখার এক নিকটাত্মীয় বোনের দোলনার বাচ্চা শিশুর জবান খোলে দিলেন আল্লাহ। মহান রব বলেন,
وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ أَهْلِهَا إِن كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِن قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ الكَاذِبِينَ
অর্থ’ মহিলার পরিবারে জনৈক সাক্ষী দিল যে, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা সত্যবাদিনী এবং সে মিথ্যাবাদি।
সুরা ইউসুফ আয়াত: ২৬
وَإِنْ كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِن دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوَ مِن الصَّادِقِينَ
অর্থ: এবং যদি তার জামা পেছনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা মিথ্যাবাদিনী এবং সে সত্যবাদী।
সুরা ইউসুফ আয়াত: ২৭
فَلَمَّا رَأَى قَمِيصَهُ قُدَّ مِن دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُ مِن كَيْدِكُنَّ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ
অর্থ: অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক থেকে ছিন্ন, তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্নক।
সুরা ইউসুফ আয়াত: ২৭
বদর যুদ্ধে
বদর যুদ্ধে যখন কাফেরদের সংখ্যাধিক্যের কারণে
إِذْ هَمَّت طَّآئِفَتَانِ مِنكُمْ أَن تَفْشَلاَ وَاللّهُ وَلِيُّهُمَا وَعَلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
যখন তোমাদের দুটি দল সাহস হারাবার উপক্রম হলো, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ছিলেন, আর আল্লাহর উপরই ভরসা করা মুমিনদের উচিত।
সুরা আলে ইমরান আয়াত: ১২২
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।
সুরা আলে ইমরান আয়াত: ১২৩
إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلاَثَةِ آلاَفٍ مِّنَ الْمَلآئِكَةِ مُنزَلِينَ
আপনি যখন বলতে লাগলেন মুমিনগণকে-তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন।
সুরা আলে ইমরান আয়াত: ১২৪
بَلَى إِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ آلافٍ مِّنَ الْمَلآئِكَةِ مُسَوِّمِينَ
অর্থ: অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহিßত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।
সুরা আলে ইমরান আয়াত: ১২৫
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন যে, সেদিন একজন মুসলিম সৈনিক তার সামনের একজন মুশরিকের পিছনে ধাওয়া করছিলেন। এমন সময় তিনি তার উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ শুনতে পেলেন এবং তার উপর দিকে অশ্বারোহীর এরূপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। তিনি বলতেছিলেন, হে হায়যুম, (ফেরেশতার ঘোড়ার নাম) সামনের দিকে অগ্রসর হও।
فَنَظَرَ إِلَى الْمُشْرِكِ أَمَامَهُ فَخَرَّ مُسْتَلْقِيًا فَنَظَرَ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ قَدْ خُطِمَ أَنْفُهُ وَشُقَّ وَجْهُهُ كَضَرْبَةِ السَّوْطِ فَاخْضَرَّ ذَلِكَ أَجْمَعُ . فَجَاءَ الأَنْصَارِيُّ فَحَدَّثَ بِذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” صَدَقْتَ ذَلِكَ مِنْ مَدَدِ السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ
তখন তিনি তার সামনের এক মুশরিক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। আরো দেখেন যে, তার নাক-ক্ষতযুক্ত এবং তার মুখমণ্ডল আঘাতপ্রাপ্ত। যেন কেউ তাকে বেত্ৰাঘাত করেছে। আহত স্থানগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে (বেত্রের বিষাক্ততায়)।
এরপর আনসারী ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। এ সাহায্য তৃতীয় আকাশ থেকে এসেছে।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ১৭৬৩
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: كَانَ الْمُشْرِكُونَ إِذَا أَقْبَلُوا بِوُجُوهِهِمْ إِلَى الْمُسْلِمِينَ ضَرَبَتِ الْمَلَائِكَةُ وُجُوهَهُمْ بالسيوف، وإذا ولو أَدْرَكَتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ فَضَرَبُوا أَدْبَارَهُمْ
সূত্র: ততাফসীরে বগবী
وقِيلَ كانَ مَعَ المَلائِكَةِ يَوْمَ بَدْرٍ مَقامِعُ مِن حَدِيدٍ كُلَّما ضَرَبُوا المُشْرِكِينَ بِها التَهَبَتِ النّارُ في جِراحاتِهِمْ،
إِنَّ رَجُلًا قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي رَأَيْتُ بِظَهْرِ أَبِي جَهْلٍ مِثْلَ الشِّرَاكِ؟(١) قَالَ: (ذَلِكَ ضَرْبُ الْمَلَائِكَةِ). وَقِيلَ: هَذَا الضَّرْبُ يَكُونُ عِنْدَ الْمَوْتِ. وَقَدْ يَكُونُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِينَ يَصِيرُونَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ.
দুই. ধারনাতীত জায়গা থেকে রিযিকের সন্ধান:
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
অর্থ: আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন।
সুরা তালাক আয়াত: ২-৩
বৃষ্টি যখন পড়ে, তখন যমীনের নিচু জায়গায় জমে। তেমনি গুনাহ না করলে বরকত ঐ খালি অন্তরেই জমা হয়।
এক ঈমানদার চোরের ঘটনা:
আগের যুগের একটি ঘটনা। জনৈক ব্যক্তি অভাবের তাড়নায় চুরি করতে বের হলেন। সর্বপ্রথম শিং কেটে ঘরে ঢুকলেন। ঘরে প্রবেশ করেই দেখতে পেলেন একটা মুর্তি সাজিয়ে রাখা। নিশ্চিত হলেন এটা কোনো হিন্দুর ঘর। তিনি যেহেতু প্রফেশনাল চোর ছিলেন না, সেহেতু তিনি বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করলেন, “তুমি তো মুসলমান, মুসলিম হিসাবে তুমি কি করে হিন্দুর ঘরে চুরি করতে পারো। তোমরা না শ্রেষ্ট জাতি!”
আসলে যখন কেউ এ কথা গভীরভাবে উপলব্ধি করে যে, আমি যদি চুরি করি তাহলে এর অর্থ দাঁড়িয়ে আমি চোর। সামান্য আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে কেউ চুরি করতে পারে না।
যাহোক, লোকটি আত্মমর্যাদায় চরমভাবে আহত হলেন। সোজা বের হয়ে আরেকটি ঘরে শিং কাটলেন। ঢুকে দেখলেন সে ঘরে যিশুখ্রিস্টের মূর্তি সাজিয়ে রাখা। তার মানে ঘরটি কোন খ্রীষ্টানের। তখন ভাবলেন আমি তো মুসলিম। কোনো মুসলমান কোনো অমুসলিমদের উপর জুলুম করতে পারে না। কারণ রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,
أَلَا مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا، أَوِ انْتَقَصَهُ، أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ، أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ، فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থাৎ সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তির উপর যুলম করবে বা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তাকে তার সামর্থের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হবো।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৩০৫২
সুতরাং তিনি ভাবলেন মুসলিম হয়ে অমুসলিমদের ঘরে চুরি করে কিয়ামতের দিন নবীজির মামলা খেতে পারবো না। দ্রুত বের হয়ে আসলেন।
অন্য ঘরে ঢুকলেন। ঘরটি ছিল তার প্রতিবেশীর। হঠাৎ মনে আসল নবীজি সা. তো প্রতিবেশীর ব্যাপারে বলেছেন,
لا يدخُلُ الجنَّةَ مَن لا يأمَنُ جارُه بوائِقَه
অর্থাৎ যার অনিষ্ঠতা থেকে তার প্রতিবেশি নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
সূত্র: সহিহ মুসলিম হাদিস: ৪৬
হাদিসটি মনে পড়তেই তিনি দ্রুত বেগে বের হয়ে আসলেন। এবার এসে দেখেশুনে এক টুপিওয়ালার বাড়িতে ঢুকলেন। ভাবলেন হুজুর মানুষ হালাল সম্পদ বরকত বেশি। আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে যারা হুজুরদের জুতা চুরি করে বরকত মনে করে। ডাকাতি করে বরকতের টাকা নেয়ার জন্য।
এক বক্তাকে একবার ধরেছে ডাকাতে। ডাকাত প্রধাণ বলে হুজুর অনেক দিন হারাম টাকা খাই আজ একটু হালাল খাবো ভাবছি। দেন হুজুর যা আছে সব দেন। বক্তা বেচারা বলে ভাই আমি তো আলেম মানুষ আমার কাছেও ডাকাতি করবেন? ডাকাত প্রধান বলে হুজুর আপনার কাছ থেকে নেবো তো বেশি করে কারণ আপনাদের টাকা হালাল। বেচারা নিরুপায় হয়ে সব দিয়ে দিলেন। সব পেয়ে ডাকাত প্রধাণ বলছে হুজুর, এবার মন থেকে সব মাফ করে দেন। তা না হলে এ তো জায়েয হবে না। নিরুপায় হয়ে বললেন ঠিক আছে মাফ করে দিলাম। বলে হুজুর মন থেকে মাফ করছেন তো? বললেন হ্যাঁ, এবার ডাকাত প্রধান বলছে, হুজুর এবার দুআ করুন হাত তুলে আমাদের জন্য যেন বেশি ডাকাতি বরকত হয়।
যাহোক, ঈমানদার চোর এবার টুপিওয়ালার ঘরে ঢুকে দেখলেন, ঘরে অনেক টাকার কলস। প্রত্যেকটি কলসের মুখ বাঁধা। একটি মুখ খুলে দেখেন একটি কাগজ। কাগজে লেখা আছে এ কলসের টাকার যাকাত আদায় করা হয়নি। চোর বেচারার মেজাজ গরম হয়ে গেল। মনে মনে বলতে লাগল, কত্ত খারাপ লোকটি দেখছো, হুজুর মানুষ হয়েও যাকাত দেয় না। বর্তমানে হুজুরদের অপরাধের শেষ নেই।
১. যদি ছেড়া জামা কাপড় পরে তাহলে বলে, হুজুররা আসলে সমাজ বোঝে না। আবার যদি ভাল জামা গায়ে দেয় তো বলে হুজুর মানুষ এত টাকা কই পায়? নিশ্চয় মিলাদ পড়ে ধান্ধামী করেছে।
২. ওরা প্রতিনিয়ত পতিতালয় গিয়ে নষ্টামীর পাড়া চাঙ্গা রাখে সেটা অপরাধ নয়, ধর্ষণ করে সেঞ্চুরী করে সেটা অপরাধ নয়, কোনো হুজুর দুটো বিয়ে করে ঘুরতে গেলেই বড় সমস্যা। দ্বিতীয় বিয়ে করা যারা অপছন্দ করেন তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
যাহোক, চোর বেচারা আরেকটি কলস খুলে দেখলেন এটার যাকাত দেয়া আছে। তিনি চুরি করবেন বলে যখন হাত ঢুকিয়েছেন, ঘর তো মোটামুটি অন্ধকার। আগের যামানায় তো আমাদের মত লাইট ছিল না। এখন তো রাস্তাঘাটে ৩০০ টাকার এনার্জি বাল্ব শুধুমাত্র ১০০ টাকা শুধুমাত্র কোম্পাণীর প্রচারের জন্য। আমার জন্মের পর থেকে এটা দেখছি এখনও নাকি কোম্পানী প্রচার হয়নি। নির্জনে হঠাৎ পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত মনে পড়ল,
فاينما تولوا فثم وجه الله
বেচারা মনে মনে ভাবলেন, মানুষের সামনে চুরি করতে পারি না, তাহলে মানুষের রব আল্লাহর সামনে কেমনে চুরি করবো? তিনি চুরি করতে পারলেন না।
হঠাৎ ফজরের সময় হয়ে গেছে। তিনি তো নামাজী। আগের যামানায় চোররাও নামাজ পড়তো, বর্তমানে অনেক পীররাও নামাজ পড়ে না।
স্লোগান দেয়,
আমার পীরের চরিত্র, ফুলের মত পবিত্র,
নামাজ পড়ে না এক ওয়াক্ত গাঞ্জা টানে পাঁচ ওয়াক্ত
তিনি হুজুরের ঘর যেহেতু, ছাদের উপর উঠে আযান দেয়া শুরু করে দিলেন। বাড়িওয়ালা ভাবলেন, এত সকালে ঘরের ছাদ থেকে আযান দেয় কে? দ্রুত উঠে দেখলেন একজন আযান দিচ্ছে। তিনি তাকে বুযুর্গ মনে করে স্বসম্মানে জানতে চাইলেন ভাই আপনি কে? বেচারা রেগেমেগে চিৎকার দিয়ে বললেন, আমি কে মানে? ওযু আছে তোমার? বেচারা বাড়িওয়ালা ভাবলেন এত রাত আবার একা ভয়ে ভয়ে নিচু স্বরে বললেন, ভাই ওযু তো নেই, তবে যদি থাকতোও তো যে ধমক দিলেন এতে কি আর ওযু বাকি থাকতো? দ্রুত ওযু করতে পাঠিয়ে দিলেন। ওযু করে আসার পর আবার বললো, সুন্নাত পড়ছো? তিনি দ্রুত সুন্নাত পড়ে নিলেন।
এবার চোর বললেন, ইমামতি করতে পারবা? আমি জামাআতে নামাজ পড়ি। বাড়িওয়ালা বললেন, ভাই অত যোগ্যতা তো নেই। বাড়িওয়ালাকে পেছনে দিয়ে তিনিই ইমামতি শুরু করে দিলেন। লম্বা সময় কিরাআত পড়ার পর নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে মুসল্লির দিকে ঘুরে বসে তাসবীহ তাহলীল ও দুআ শেষ করলে বাড়িওয়ালা বললেন, ভাই, কিছু মনে না করেন, আমলে আপনি কে? উত্তরে তিনি বললেন, আমাকে চেনো না আমি চোর। বাড়িওয়ালা ভাবতেছেন, এত সুন্দর তিলাওয়াত এত সুন্দর ইবাদত সে আবার চোর হয় কেমনে? তিনি বিশ্বাস করতে না পেরে বললেন, আসলে আপনি আমার সাথে মনে হয় ঠাট্রা করছেন।তিনি বললেন না আসলেই আমি চোর। তবে প্রফেশনাল না। আজ ক্ষুধার্ত হয়েই বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু রবের বিধানাবলীর জন্য চুরি করতে পারিনি।
বাড়িওয়ালা তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নেমে ঘরে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, প্রিয় স্ত্রী, একটি পরামর্শ করতে এসেছি। বলে কি পরামর্শ? তিনি বললেন, আমি তো ধনী মানুষ। আর আমাদের কোনো ছেলে সন্তানও নেই। শুধুমাত্র একটি মেয়ে। চেয়েছিলাম মেয়ে যেহেতু উপযুক্ত হয়ে গেছে একটা দ্বীনদার ছেলে পেলে বিয়ে দিয়ে দিতাম। কিন্তু দীর্ঘদিন খুঁজেও পাইনি। তবে আজ একটা দ্বীনদার ছেলের সন্ধান পেয়েছি। যাকে আল্লাহ নিজে আমার ধর অবধি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
স্ত্রী জানতে চাইলেন, কোথায় ছেলেটি? আর এত সাত সকালে কিভাবে পেলেন? তিনি বললেন, আসলে আমার ঘরের ছাদের উপর ছেলেটি আছে। ওখানে কেন? জানতে চাইলে বললেন, আসলে ছেলেটি রাতে এসেছিল চুরি করতে। স্ত্রী বললেন, চোর আবার দ্বীনদার হয় কেমনে?বাড়িওয়ালা বললেন, আসলে ছেলেটি চুরি করতে কয়েকটি ঘর শিং কেটেছে তবুও চুরি করতে পারেনি কারণ তার অন্তরে রবের ভয়।
যাহোক, বিবাহ শাদী হয়ে গেল। শশুর ডেকে বললেন,বাবা, আমার তো কোনো ছেলে নেই। যাবতীয় সকল সম্পদ তোমাদের নামে দিয়ে দিলাম। এ কথাই আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
অর্থ: আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন।
সুরা তালাক আয়াত: ২-৩
কিছুদিন পর, ছেলের মায়ের কাছে মেয়ের মা গিয়ে জানতে চাইলেন, বিয়েন, আপনার ছেলে এত অল্পবয়সে এতবড় বুযুর্গ কেমনে হলো? ছেলের মা বললেন, আসলে আমার স্বামী প্রফেশনাল চোর। সারাজিবন চুরি করেন, তবে হালাল রিজিকের জন্য সামান্য একটা রাস্তা আছে। আমার সন্তানের বয়স যত দেখছেন, আমি সেই ছোট্র বেলা থেকে আজ পর্যন্ত কোনো হারাম লুকমা তার পেটে ঢুকতে দেইনি।
মাশাল্লাহ