মহান আল্লাহ তা’আলা পুরো বছরকে ১২ মাসে বিভক্ত করেছেন এবং ১২ মাসের ভেতর চারটি মাসকে অধিক সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَات وَالأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত।
সুরাঃ তাওবা আয়াত: ৩৬
চারটি মাস কি কি?
এ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ট মুফাসসির সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
مُحَرَّمٌ وَرَجَبٌ وَذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ
অর্থাৎ (চারটি সম্মানিত মাস হলো,) মুহাররাম, রজব, যিলক্বদ এবং জিলহজ্ব।
সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৭ পৃ. ১৯৪
সুতরাং বুঝতে পারলাম, সবচে পবিত্র ও সম্মানিত মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাস হলো জিলহজ্ব মাস।
আর এ মাসের ভেতর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ সময় হলো, আশারায়ে যিলহজ্ব বা যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক। এ ১০ দিনের ফযিলত অত্যান্ত বেশি। খোদ আল্লাহ তা’আলা নিজে এ দশ রাতের শপথ করেছেন পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
والفجر، وليال عشر
অর্থাৎ শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাত্রির।
সূরাঃ ফজর আয়াত: ১-২
উক্ত আয়াতে ১০ রাত্রি দ্বারা কি উদ্দেশ্য সেটা বুঝাতে তিনটি মত উল্লেখ্য করেছেন বিশিষ্ট তাফসীরবীদ ইবনে কাসীর রহ. যথা-
এক.
الْمُرَادُ بِهَا عَشَرُ ذِي الْحِجَّةِ كَمَا قَالَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ وَابْنُ الزُّبَيْرِ وَمُجَاهِدٌ وَغَيْرُ وَاحِدٍ مِنَ السَّلَفِ وَالْخَلَفِ
অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ও মুজাহিদ রহ. সহ অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরের মতে এখানে দশ রাত্রির দ্বারা যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে।
২.
الْمُرَادُ بِذَلِكَ الْعَشْرُ الْأَوَّلُ مِنَ الْمُحَرَّمِ، حكاه أبو جعفر ابن جَرِيرٍ
অর্থাৎ আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারির আল তাবারি রহ. বলেন, ১০ রাত্রি দ্বারা মুহাররমরের প্রথম ১০ রাত উদ্দেশ্য।
তিন.
الْعَشْرُ الْأَوَّلُ مِنْ رَمَضَانَ
অর্থাৎ ১০ রাত্রি দ্বারা রমাযানের প্রথম ১০ রাত উদ্দেশ্য।
হাফেয ইবনে কাসীর রহ.. বলেন,
وَالصَّحِيحُ الْقَوْلُ الْأَوَّلُ
অর্থাৎ এখানে তিনটি মতের মধ্যে প্রথমটিই বিশুদ্ধ মত
সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৪ পৃ. ৫৩৫-৫৩৬ তাফসীরে যাহ্হাক খ. ১ পৃ: ৯৫৯
সুতরাং জিলহজ্ব মাসের যে প্রথম ১০ রাত্রির শপথ স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা করলেন, সেটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ আশা করি সেটা আর বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।
হাদীস শরীফে এই দশককে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাবান দশক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
عن جابر رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال أفضل أيام الدنيا العشر يعني عشر ذي الحجة قيل ولا مثلهن في سبيل الله قال ولا مثلهن في سبيل الله إلا رجل عُفِّر وجهه بالتراب
অর্থ: হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল যিলহজ্বের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই, তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে, অর্থাৎ শাহদাতের মর্যাদা লাভ করেছে।-
সূত্র:মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১১২৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ২০১০ আত-তারগীব খ. ২ পৃ. ১৯০
অন্য বর্ণনায় হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত হয়েছে,
ما من أيام أفضل عند الله من أيام عشر ذي الحجة
যিলহজ্বের দশ দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহর নিকট উত্তম নয়।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৮৫৩ আত-তারগীব খ. ২ পৃ. ১৯০