মানুষের জিবন ও মৃত্যুর মালিক শুধুমাত্র আল্লাহ। কেউ কারো জিবন যেমন দিতে পারে না, ঠিক তেমনি মৃত্যুদান করতেও অক্ষম।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
অথচ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, জাহিলি যুগে মানুষের জিবনের মালিক ছিলো রাজা-বাদশাহরা। দেখুন তারা কী লিখেছে,
তখনকার দিনের রাজা-বাদশাহরা ছিলের সর্বেসর্বা, তাদের হুকুমই ছিলো আইন। (জাহেলী যুগে) মানুষের প্রাণের মালিক ছিল রাজা বাদশারা। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৬০
ইসলাম কী বলে?
আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম المحيي ‘মুহয়ি’ (জীবন দানকারী) ও المميت ‘মুতিত’ (মৃত্যু দানকারী)। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা আল্লাহর এই গুণ প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتاً فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
তোমরা আল্লাহর সাথে কুফরি কর্মপন্থা কিভাবে অবলম্বন করো, অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জিবন দান করেছেন। অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর তিনি (পুনরায়) তোমাদেরকে জিবিত করবেন, তারপর তোমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাবে। -সুরা বাকারা : ২৮
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
وَهُوَ الَّذِي أَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে জিবন দান করেছেন, তারপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, তারপর পুনরায় তোমাদেরকে জিবিত করবেন। সত্যিই মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ। -সুরা হাজ্ব : ৬৬
যেহেতু মহান আল্লাহই জিবন ও মৃত্যুর স্রষ্টা ও মালিক, তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে উত্তম জিবন ও মর্যাদাকর মৃত্যু কামনা করতে বলেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمْ الْمَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَه“ فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتْ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتْ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي
তোমাদের কেউ দুঃখ কষ্টে পতিত হবার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায়, তা হলে সে যেন বলেঃ হে আল্লাহ! আমাকে জিবিত রাখো, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়। -সহিহ বুখারি : হাদিস নং : ৫৬৭১
সুতরাং প্রমাণ হলো, আল্লাহপাকই একমাত্র জিবন ও মৃত্যুদাতা। কেননা তিনি জিবনহীন শুক্রাণুতে জীবন সঞ্চার করেন এবং তাতে তরতাজা প্রাণের বিকাশ ঘটান। আবার কিয়ামতের দিন অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়া দেহগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে দেবেন। তিনি মৃত অন্তরকে জিবিত করে তাঁর মারেফাতের নূর দ্বারা। তিনি মৃত ভূমিতে বৃষ্টিপাত করে তা থেকে শস্য উৎপাদন করে তা জিবিত করেন। তিনি মৃত্যু দানকারী। কেননা তিনি জীবের প্রাণ কেড়ে নেন এবং শক্তিশালী ও অহংকারীকে মৃত্যু দ্বারা লাঞ্ছিত করেন। এরপরও যারা রাজা-বাদশাহদেরকে জিবনের মালিক বলে অভিহিত করে এটা কী সুস্পষ্ট শিরক নয়?