Home > হিজবুত তাওহীদ > জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবে: হেযবুুত তওহীদ:

জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবে: হেযবুুত তওহীদ:

বিশ্বজগৎ যে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাদের বাবা আদম আ: ও মা হাওয়া আ: থেকে বংশপরম্পরায় আজ ৭০০ কোটির বেশি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর ইচ্ছায় সব কিছুই হয়। তাঁর অভিপ্রায় হচ্ছে, সমস্ত মানবজাতি যেন তাঁর গোলাম হয়ে যায় এবং মুসলিমজাতি যেন বিজয়ী জাতী হয়ে তাঁরই দাসত্ব স্বীকার করে নেয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মুসলিম বিশ্ব যেন জিবনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য ইসলাম বিদ্বেষীরা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। কখনও তারা সরামরি বোমা ফেলে মুসলিম জাতিকে ধংশ করছে, কখনও ইসলামি শিক্ষার আলো কেড়ে নিয়ে ধংশ করছে, কখনও ঈমান কেড়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন তৈরি করে সরলমনা মুসলিমদের ঈমান হরণ করে চলেছে। তারই একটি বাস্তব রুপ হলো, হেযবুত তওহীদ।

মার্কিন বিভিন্ন গবেষক বলেছেন, আগামী ৪০-৫০ বছরে বিশ্ব মুসলিমদের হাতে চলে যাবে এবং এর মূল কারণ হিসাবে তারা বলছে, মুসলিমদের সন্তান জন্ম দেয়ার আধিক্যতা। আর এ পথটি বন্ধ করতেই “মুসলিমরা যেন বেশি সন্তান না নেয়” সেজন্য একটি নীল ছক এঁকেছে তারা। আর সেটা হলো, জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন।(এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যসহ শেষের দিকে আলোচনা করা  হয়েছে।

হেযবুত তওহীদের দাবি:

ইসলাম বিদ্বেষীদের মিশনকে সফল করতে ‘হেযবুত তওহীদ’ নামক কুফরী সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে খেয়ে না খেয়ে। জনসংখ্যা যেন বৃদ্ধি না হয় সেজন্য হেযবুত তওহীদ লিখেছে,

  “জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানব জাতিকে ধ্বংসের কিনারায় এনে পৌঁছে দিয়েছে।”
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয় পৃ:৩৭ 

  “জনসংখ্যার আধিক্য, অসম বন্টন আর সম্পদের স্বল্পতা মানুষের আত্মাকে বিনষ্ট করে দেয়। যারা কোনদিন চুরি করেনি তারা হয়ো ওঠে চোর, যারা কোনোদিন খুন-খারাবির কথা কল্পনাও করেনি তারাও সন্তান-সন্ততিদের জন্য এই কাজটি করে।”
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয় পৃ:৩৭ 

  “জনসংখ্যার আধিক্য সমানুপাতিক ভাবে মানুষের ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করে। আত্মার ধ্বংস, সম্পদের ধ্বংস,স্বাস্থের ধ্বংস, জলবায়ুর ধ্বংস সবমিলিয়ে মানবজাতির অস্তিত্ব এখন সংকটে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে নাকি ধরণী পরম ব্রাম্মার নিকট আবেদন করেছিল যে, মানুষ আর মানুষের পাপের বোঝা এত বেড়ে গেছে যে আমি আর সইতে পারছি না। তখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয় যাতে ১৮ অক্ষৌহিণী সেনা নিহত হয়। বিগত শতাব্দীতে দুটো বিশ্বযুদ্ধে ১১ কোটি মানুষ হত্যা করে পশ্চিমা সভ্যতা পৃথিবীর ভার কমিয়েছে  তারপরে আরো অর্ধকোটি মানুষকে তারা নানা যুদ্ধে হত্যা করেছে। এখনো পৃথিবী চিৎকার করে প্রভুর কাছে ভার কমানোর জন্য ক্রন্দন করছে।”
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয় পৃ:৩৮

নাউযুবিল্লাহ! কি জঘন্য কুফরী মন্তব্য! উক্ত বক্তব্যগুলো দিয়ে তারা কয়েকটি দাবি করেছেন,
১. পৃথীবিতে বিপর্যয়ের কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
২. বিশ্বজগৎ মানুষের ভার গ্রহণ করতে কি অক্ষম?

ইসলাম কি বলে?

পৃথীবিতে বিপর্যয়ের কারণ কি?

পৃথীবির বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে আল্লাহ তা’য়ালা উল্লেখ্য করেছেন ‘মানুষের গুনাহ’ কে। মহান আল্লাহ বলেন,

ظَهَرَ ٱلۡفَسَادُ فِی ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ بِمَا كَسَبَتۡ أَیۡدِی ٱلنَّاسِ لِیُذِیقَهُم بَعۡضَ ٱلَّذِی عَمِلُوا۟ لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُونَ

অর্থ: স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।
সুরা রুম আয়াত-৪১

উক্ত আয়াত থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, “পৃথীবির বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো, মানুষের অপরাধ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয়।

পৃথীবির বিপর্য় থেকে উদ্ধারের পথ কি?

মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ وَلَـكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ

অর্থ: আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।
সূরা আরাফ আয়াত: ৯৬

এ আয়াত থেকে জানা গেল, বিপর্যয় থেকে বাঁচতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নয় বরং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত:

অধিক জনসংখ্যা আল্লাহর একটি নেয়ামত।।ইসলামে জনসংখ্যা সমস্যা নয়, দেশের সম্পদ।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া প্রাকৃতিক, নৈসর্গিক বা পরিবেশগত কোনো সুবিধা গ্রহণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না।
উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু মানুষ। এটি একটি পথ মাত্র, চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। যে উন্নয়নে মানুষের জীবন উন্নত হয় না বা যাতে মানুষের অংশগ্রহণ থাকে না, সে উন্নয়ন উন্নয়নই নয়। এ বোধই মানবসম্পদ উন্নয়ন ধারণার জনক, যার মূল কথা মানুষের উন্নয়ন, মানুষের জন্য উন্নয়ন এবং মানুষের দ্বারা উন্নয়ন।
১৯৯০ সালে ইউএনডিপির রিপোর্টে বলা হয়, মানব উন্নয়ন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা সমাগ্র সম্পদের সম্প্রসারণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করে।
উন্নয়ন ব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ মানবকেন্দ্রিক; মানুষ নিজেরা নিজেদের দৈহিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটাবে এবং নিজেরাই তার ফল ভোগ করবে।
সূত্র: ইনকিলাব ৩/১১/২০১৬ ঈসায়ী

এ কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী শুয়াইব (আঃ) এর কথা উল্লেখ করেন যে, তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর কিছু নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন,

وَاذْكُرُواْ إِذْ كُنتُمْ قَلِيلاً فَكَثَّرَكُمْ وَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ

অর্থ: স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে অধিক করেছেন এবং লক্ষ্য কর কিরূপ অশুভ পরিণতি হয়েছে অনর্থকারীদের।
সূরা আরাফ, আয়াত: ৮৬

পক্ষান্তরে মানবজাতি গুনাহ থেকে মুক্ত হলে আল্লাহ জনসংখ্যা নামক এ নিয়ামত দিয়ে সাহায্য করবেন। এ কথাটি হযরত নূহ আ: তার জাতিকে বলেছিলেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا

অর্থ: অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন,তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধ্বংসের কারণ কথাটি কুফরী:

হেযবুত তওহীদের এ দাবি যে, “জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমাজ ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণ বা “পৃথীবি মানুষের ভার বহন করতে পারছে না” অথবা “মজুদকৃত সম্পদ অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়” নিশ্চয় এটি আল্লাহর রুবুবিয়্যত (প্রতিপালকত্ব) ও তাঁর রিযিকের প্রশস্ততাকে অস্বীকার করার নামান্তর। এটি মুশরিকদের বিশ্বাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যারা দারিদ্রের ভয়ে তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করত।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَقۡتُلُوۤا۟ أَوۡلَـٰدَكُمۡ خَشۡیَةَ إِمۡلَـٰقࣲۖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُهُمۡ وَإِیَّاكُمۡۚ إِنَّ قَتۡلَهُمۡ كَانَ خِطۡـࣰٔا كَبِیرࣰا

অর্থ: দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহা অপরাধ।
সূরা বনী ইসরাইল আয়াত-৩১

মহান রব আরও বলেন,

وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ

অর্থ: আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।
সূরা হুদ আয়াত: ৬

বিশ্বজগৎ মানুষের ভার গ্রহণ করতে কি অক্ষম?

হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর জন্য এ ভারত্ব সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। অথচ আল্লাহই মানুষকে পৃথিবীতে পাঠান,পাশাপাশি মানুষ বৃদ্ধি হবে বলেই পৃথীবিকে তিনি সংকীর্ণ করে সৃষ্টি করেননি বরং প্রশস্ত করেছেন। মহান স্রষ্টা বলেন,

قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

অর্থ: বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।
সুরা যুমার আয়াত-১০

অপর আয়াতে,

يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ أَرْضِي وَاسِعَةٌ فَإِيَّايَ فَاعْبُدُونِ

অর্থ: হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ, আমার পৃথিবী প্রশস্ত। অতএব তোমরা আমারই এবাদত কর।
সুরা আনকাবুত আয়াত-৫৬

অতএব আল্লাহ পৃথিবীকে প্রশস্ত করে বানানোর পরও পৃথিবীর জন্য ভারত্ব সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে কথাটি কি আল্লাহর নিপুস সৃষ্টির উপর প্রশ্নবিদ্ধ করার নামান্তর নয়?

জনসংখ্যা বৃদ্ধি হলে প্রয়োজন অনুপাতে আল্লাহ রিযিক দেবেন:

মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ بَسَطَ اللَّهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهِ لَبَغَوْا فِي الْأَرْضِ وَلَكِن يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَاء إِنَّهُ بِعِبَادِهِ خَبِيرٌ بَصِيرٌ

অর্থ: যদি আল্লাহ তাঁর সকল বান্দাকে প্রচুর রিযিক দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের খবর রাখেন ও সবকিছু দেখেন।
সুরা শুরা আয়াত-২৭

জনসংখ্যা বৃদ্ধি করণে নবিজির ঘোষণা:

উপরন্তু সাধারণ অবস্থায় নবিজি স: মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে। উপরন্তু নবি স: কিয়ামতের দিন স্বীয় উম্মাহর বিশালতা নিয়ে গর্ব করবেন।

عن أنس بن مالك عن النبي صلي الله عليه وسلم تزوجوا الودودَ الولودَ فإني مكاثرٌ بكم الأممَ يومَ القيامةِ

অর্থাৎ হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. নবি স. থেকে ববমর্ণনা করেন যে, তোমরা অধিক সন্তান প্রসবকারী মেয়েকে বিবাহ কর।কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে কিয়ামতের মাঠে গর্ব করব’।
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস-২০৫০ নাসাঈ-৩২২৭ সহিহ ইবনে হিব্বান-৪০৫৬ আল মাকাসিদুল হাসানাহ-১৯৮ আহমাদ-১৩৫৯৪ ( হাদিস সহিহ)

জনসংখ্যা বৃদ্ধি কাফেরদের বিরুদ্ধে সাহায্যে মাধ্যম:

অধিক জনসংখ্যা উম্মতের মর্যাদা ও শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার একটি মাধ্যমও বটে। তাই তো আল্লাহ তা’য়ালা বনী ঈসরাইলদের সম্পর্কে বলেন:

ثُمَّ رَدَدۡنَا لَکُمُ الۡکَرَّۃَ عَلَیۡہِمۡ وَ اَمۡدَدۡنٰکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ جَعَلۡنٰکُمۡ  اَکۡثَرَ  نَفِیۡرًا

অর্থ: অতঃপর আমি তোমাদের পুনরায় তাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ করলাম।
সূরা বনী ঈসরাইল, আয়াত: ৭

আসল মতলব কি?

সূরা বনী ঈসরাইল ৭ নং আয়াত থেকে এটাই বুঝতে পারলাম যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে মুসলিমদের শক্তি সঞ্চয় হবে। আমার মনে হয়, এ আয়াতটি গবেষণা করেই ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের বিজয় পথ রুদ্ধ করার জন্য মিশন শুরু করেছে।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ জনাব খোরশেদ আহমাদ বলেন: “ভবিষ্যতে প্রভাবশালী ক্ষমতা শুধু সেসব দেশেরই থাকবে যেসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ পর্যায়ে এবং একই সাথে তারা টেকনিক্যাল সাইন্সেও অগ্রসর। তাই পাশ্চাত্যের জাতিগুলো তাদের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে জনসংখ্যা হ্রাসকরণ ও বন্ধ্যাকরণ আন্দোলন প্রচার করে যাচ্ছে। এ কারণে পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে তারা এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলন সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সব ধরণের প্রচার মাধ্যমের সর্বোত্তম ব্যবহার করছে।”।

তিনি আরও বলেন: “প্রফেসর অর্গানস্কি (আমেরিকান বুদ্ধিজীবী) ঠিকই বলেছেন: “ভবিষ্যতে সে সেনাবাহিনী হবে অধিক শক্তিশীলী যার সৈন্য সংখ্যা হবে বেশি।” তিনি আরও বলেন: ইতিহাসের ছাত্রের কাছে এটি অজানা নয় যে, জনসংখ্যার রয়েছে মৌলিক রাজনৈতিক গুরুত্ব। এ কারণে প্রত্যেক সভ্যতা ও পরাশক্তি তার গঠন ও বিনির্মাণের যুগে জনসংখ্যা বাড়ানোর উপর অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

তাই তো, উইল ডুরান্ট (Will Durant) অধিক জনসংখ্যাকে সভ্যতার অগ্রসরতার অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করেন। অনুরূপভাবে আরনল্ড টয়েনবী (Arnold Toynbee) জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে সে সব বুনিয়াদি চ্যালেঞ্জসমূহের অন্যতম বলে ঘোষণা করেছেন যেগুলোর জোরে যে কোন মানব সভ্যতার উন্নতি ও বিস্তৃতি ঘটে।”।

এ কথাটি বুঝতে নিন্মে দুটি জাতীয় পত্রিকার রিপোর্ট পেশ করলাম। আশা করি বুঝতে সহজ হবে।

এক.
“বর্তমানে আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.১ শতাংশ তথা ৩৫ লাখ মুসলিম। ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর হিসাবে তারা তৃতীয় বৃহত্তম। মার্কিন এক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বলছে, ইসলাম ধর্মগ্রহণ ও মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বর্তমানের মতো অব্যাহত থাকলে ২০৪০ সালে ইহুদিদের পেছনে ফেলে মুসলিমরা হবে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি।
আর ২০৫০ সালে আনুমানিক সংখ্যা দাঁড়াবে অন্তত ৮১ লাখ। বর্তমানের চেয়ে যা দ্বিগুণেরও বেশি। তখন মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ থাকবে মুসলমান।”
সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ঈসায়ী

দুই.
দৈনিক প্রথম আলো “ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের হাতে যাবে বিশ্বের দখল!” শিরোনামে একটি রিপোর্টে লেখেন,
“এক সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আগামী ৫৩ বছর পর পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা হবে সব থেকে বেশি। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে দ্য টেলিগ্রাফের খবরে এমনটাই বলা হয়েছে।
বিশ্বখ্যাত সমীক্ষা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার ওই প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, ২০৭০ সালে কেমন হবে বিশ্বের জনসংখ্যার চিত্রটি। সেখানে বলা হয়েছে আগামী ৫০ বছর পরে বিশ্ব মুসলমানদের দখলে যাবে। মার্কিন ওই সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীতে সব থেকে বেশি মানুষ হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
এখন যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে এই ধারা চলতে থাকলে এ শতাব্দীর শেষের দিকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর থেকে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি হবে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইউরোপসহ বিশ্বের বহু অঞ্চলে আগামী বছরগুলোতে দ্রুত ইসলাম ধর্মের অনুসারীর লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা বলছে, গোটা পৃথিবীতেই অন্যান্য ধর্মের তুলনায় দ্রুত হারে বাড়ছে মুসলিম জনসংখ্যা। অন্য দিকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার যেন প্রায় থমকে রয়েছে। ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, খ্রিষ্টানদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের হার যতটা বেশি, মুসলমানদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই বেশি বংশ বৃদ্ধির হার। একজন মুসলমান নারী গড়ে তিনটি শিশু সন্তানের জন্ম দেন। অন্যদের ধর্মের নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে মুসলমান জনসংখ্যা বাড়বে ৭৩ শতাংশ, যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে হবে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন। অন্য দিকে, খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বাড়বে ৩৫ শতাংশ।
২০১০ সালে বিশ্বে মোট খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন। ২০৫০ সালে সেটা হবে ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন। ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশই হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বী।”
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ৩ মার্চ ২০১৭ ঈসায়ী

প্রিয় পাঠক! এটাই হলো মূল সমস্যা।অর্থাৎ বর্তমানে পৃথিবীতে যাদের জনসংখ্যা বেশি তারাই আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তারা সবসময় চায় মুসলিমরা সবসময় সংখ্যালঘু থাকলে তাদের উপর জুলুম করা সহজ। এমনটিই লিখেছে “আনন্দবাজার পত্রিকা”
“জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি মানেই দুর্বলতম জনগোষ্ঠীর ওপর জুলুম।”
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ঈসায়ী।

সুতরাং জন্ম-নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন দেয়া নিঃসন্দেহে এটি মুসলমানদের শত্রুদের চক্রান্ত। শত্রুরা চায় মুসলমানদের সংখ্যা না বাড়ুক। কারণ মুসলমানদের সংখ্যা বাড়লে শত্রুরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মুসলমানেরা নিজেরা স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে যেতে পারে: নিজেরা চাষাবাদ করবে, ব্যবসা বাণিজ্য করবে- এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে ও আরও নানামুখি কল্যাণ অর্জিত হবে। আর যদি তারা সংখ্যায় অল্প হয়ে থাকে তাহলে লাঞ্ছিত হয়ে থাকবে এবং সবকিছুতে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে।

সুতরাং জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে মুসলিমদের  সংখ্যালঘু রেখে তাদের উপর জুলুমের ধারা অব্যাহত রাখার মানসে খৃষ্টানদের মনোবাসনা পুরণ করাই যেন আজ হেযবুত তওহীদের মূল টার্গেট। আসুন। এদের থেকে নিজেরা সতর্ক হই, জাতিকে সতর্ক করি।

Check Also

নবী-রাসুলগণ কি ব্যর্থ ছিলেন?

সকল নবীগণ আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব স্বীয় স্থানে পূর্ণভাবে পালন করেছেন। কেউ তাঁদের দায়িত্বে কোনো ত্রুটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.