নাম: খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ (خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ) :
উপাধী:
যুবাইর ইবনে বাক্কার রহি. বলেন,
كانت خديجة تدعى في الجاهلية الطاهرة
অর্থাৎ জাহেলী যুগে খাদিজা রা. কে ত্বাহেরা (পবিত্রা) বলে ডাকা হতো।
সূত্র: উমদাতুল ক্বারী, খ. ১৬ পৃ. ৩৮১
আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন,
كانت خديجة تكنى أم هند
অর্থাৎ খাদিজা রা. (প্রথম) উপাধী ছিলো উম্মে হিন্দ।
সূত্র: তারিখে দিমাশক খ. ৩ পৃ. ১৯৩
তাঁকে সিদ্দিকাও বলা হয়। কারণ-
اول من آمن به وصدقه قبل كل احد
অর্থাৎ তিনি সর্বপ্রথম নবীজির সা. উপর ঈমান আনয়ন করেন এবং সবার আগে নবীজিকে সা. সত্যায়ন করেন।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১০৯
প্রথমা ও বড় স্ত্রী হিসাবে তিনি ‘খাদীজাতুল কুবরা’ নামেও পরিচিত। কারণ-
أنه لم يتزوج امرأة قبلها
অর্থাৎ তাঁর পূর্বে নবীজি সা. আর কাউকে বিবাহ করেননি।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১১০
পিতা:
আম্মাজান হযরত খাদিজার রা. পিতা ছিলেন,
وهي خديجة بنت خويلد بن أسد بن عبد العزى بن قصي بن كلاب بن مرة بن كعب بن لؤي بن غالب بن فهر
অর্থাৎ খুওয়ালিদ বিন আসাদ বিন আব্দুল উয্যা বিন কুছাই বিন কিলাব আল কুরাইশী আল আসাদী এর মেয়ে ছিলেন হযরত খাদিজা রা.।
সূত্র: সিরাতে ইবনে হিশাম খ. ১ পৃ. ১৮৯
মাতা:
وأمها فاطمة بنت زائدة بن الأصم بن رواحة بن حجر بن عبد بن معيص بن عامر بن لؤي بن غالب بن فهر
অর্থাৎ তাঁর মা ছিলেন, ফাতিমা বিনতে যাহেদা ইবনে আছাম ইবনে রওয়াহা ইবনে হাজার ইবনে আবদ ইবনে মাঈস ইকনে আমের ইবনে লুয়াই ইবনে গালিব ইবনে ফিহির।
জন্ম:
ولدت قبل الفيل بخمس عشرة سنة
অর্থাৎ হস্তিবর্ষের ১৫ বছর পূর্বে (অর্থাৎ আবরাহা বাদশার ৫৭০ খৃষ্টাব্দে কাবা আক্রমণের ১৫ বছর পূর্বে) জন্মগ্রহণ করেন। (তার মানে ৫৫৫ খৃষ্টাব্দে হযরত খাদিজার রা. জন্ম হয়।)
সূত্র: তারিখে দিমাশক, খ. ২ পৃ. ৯৯
সূত্র: সিরাতে ইবনে হিশাম খ. ১ পৃ. ১৮৯
পূর্ব বৈবাহিক জিবন:
كانت خديجة أولا تحت أبي هالة بن زرارة التميمي ، ثم خلف عليها بعده عتيق بن عابد بن عبد الله بن عمر بن مخزوم ، ثم بعده النبي صلى الله عليه وسلم ، فبنى بها وله خمس وعشرون سنة . وكانت أسن منه بخمس عشرة سنة
অর্থাৎ হযরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদের রা. প্রথম বিবাহ হয় আবু হালাহ বিন যুরারা তামিমীর সঙ্গে। অতঃপর আতীক ইবনে আবেদ মাখযুমির সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিবাহ হয়। অতপর নবীজির সা. সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সংসার শুরু করার সময় নবীজির সা. বয়স ছিলো ২৫ বছর, আর হযরত খাদিজা রা. নবীজির সা. থেকে ১৫ বছরের বড় ছিলেন।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১১১
أنها حين تزويجها به كانت بنت أربعين سنة
অর্থাৎ নবীজি সা. যখন আম্মাজান খাদিজা রা. কে বিবাহ করেন, তখন খাদিজা রা. এর বয়স ছিলো ৪০ বছর।
সূত্র: সীরাতে ইবনে হিশাম, খ. ২ পৃ. ১৭৪
সন্তানাদী:
প্রথম ২ স্বামী থেকে একাধিক সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তাদের সংখ্যা অবশ্য বেশ কয়েকটি মত পাওয়া যায়। এখানে একটি মত পেশ করছি। প্রথম স্বামী আবু হালাহ থেকে দু’টি ছেলে সন্তান হয়েছিলো, হিন্দ এবং হালাহ। হিন্দ সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।
দ্বিতীয় স্বামী আতিক থেকেও দু’টি সন্তান আব্দুল্লাহ এবং একটি মেয়ে।
সূত্র: সীরাতে ইবনে হিশাম, খ. ২ পৃ. ১৭৪
ইবনে সা’দ রহি. বলেন, মেয়েটি নাম ছিলো হিন্দ।
সূত্র: আল-ইসাবাহ, খ. ৮ পৃ. ২০৬
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فولدت له هند بن أبي هالة ، وزينب بنت أبي هالة
অর্থাৎ আবু হালা’র ঘরে খাদিজার রা. সন্তান ছিলেন, হিন্দ ইবনে আবু হালা এবং যায়নাব বিনতে আবু হালা।
সূত্র: সীরাতে ইবনে হিশাম, খ. ২ পৃ. ১৭৪
খাদিজার রা. বিবাহের প্রতি আগ্রহ:
পূর্বের দু’জন স্বামীর ইন্তেকালের পর খাদিজাকে রা. নবীজি সা. বিবাহ করেন। বিবাহের বিবরণ নিন্মরুপ: ইবনে ইসহাক রহি. বলেন,
قال ابن إسحاق وكانت خديجة بنت خويلد امرأة تاجرة ذات شرف ومال تستأجر الرجال في مالها وتضاربهم إياه بشيء تجعله لهم وكانت قريش قوما تجارا فلما بلغها عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بلغها ، من صدق حديثه وعظم أمانته وكرم أخلاقه بعثت إليه فعرضت عليه أن يخرج في مال لها إلى الشام تاجرا وتعطيه أفضل ما كانت تعطي غيره من التجار مع غلام لها يقال له ميسرة فقبله رسول الله صلى الله عليه وسلم منها وخرج في مالها ذلك وخرج معه غلامها ميسرة حتى قدم الشام فنزل رسول الله صلى الله عليه وسلم في ظل شجرة قريبا من صومعة راهب من الرهبان فاطلع الراهب إلى ميسرة فقال له من هذا الرجل الذي نزل تحت هذه الشجرة قال له ميسرة هذا رجل من قريش من أهل الحرم فقال له الراهب ما نزل تحت هذه الشجرة قط إلا نبي ثم باع رسول الله صلى الله عليه وسلم سلعته التي خرج بها واشترى ما أراد أن يشتري ثم أقبل قافلا إلى مكة ومعه ميسرة فكان ميسرة فيما يزعمون إذا كانت الهاجرة واشتد الحر يرى ملكين يظلانه من الشمس وهو يسير على بعيره فلماقدم مكة على خديجة بمالها باعت ما جاء به فأضعف أو قريبا وحدثها ميسرة عن قول الراهب وعما كان يرى من إظلال الملكين إياه وكانت خديجة امرأة حازمة شريفة لبيبة مع ما أراد الله بها من كرامته فلما أخبرها ميسرة بما أخبرها به بعثت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت له فيما يزعمون يا ابن عم أني قد رغبت فيك لقرابتك مني وشرفك في قومك وسطتك فيهم وأمانتك عندهم وحسن خلقك وصدق حديثك ثم عرضت عليه نفسها
অর্থাৎ খাদিজা অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য মহিলা ছিলেন। তিনি বেতনভুক্ত কর্মচারী রেখে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। বস্তুতপক্ষে গোটা কোরাইশ বংশই ছিলো ব্যবসায়ীক। রাসুলুল্লাহ সা. এর সত্যবাদিতা বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক মহত্বের সুখ্যাতি অন্যদের ন্যায় খাদিজারও রা. গোচরীভূত হয়। তাই তিনি তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে তাঁর পণ্য সামগ্রী নিয়ে সিরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি তাকে এও জানান যে, কাজের জন্য তিনি অন্যদেরকে যা দিয়ে থাকেন, তার চেয়ে উত্তম সম্মানি তাঁকে দেবেন। খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা তাঁর গোলাম মাইসারাকেও নবীজির সা. সাথে সাহায্যের জন্য দিতে চাইলেন। নবীজি সা. প্রস্তাবটি গ্রহণ করত মাইসারাকে সাথে নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
সিরিয়ায় পৌঁছে তিনি জনৈক ধর্মযাজকের গির্জার নিকটবর্তী এক গাছের ছায়ার নিচে তিনি বিশ্রাম নিলেন। এক সময় সেই ধর্মযাজক মাইসারাকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, এই গাছের নিচে বিশ্রামকারী লোকটি কে? মাইসারা বলল, তিনি কাবা শরীফের পাশেই বসবাসকারী জনৈক কুরাইশী। ধর্মযাজক বললেন, এই গাছের নিচে নবী ছাড়া আর কেউ কখনো বিশ্রাম নেয়নি।
এরপর রাসূলুল্লাহ সা. তার আনীত পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে দিলেন এবং যা যা কিনতে চেয়েছিলেন তাও কিনে নিলেন। তারপর মাইসারাকে সাথে নিয়ে তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। পথে যেখানেই দুপুর হয় এবং প্রচন্ড রোদ ওঠে মাইসারা দেখতে পায় যে, দু’জন ফিরিশতা মোহাম্মদকে সা. ছায়া দিয়ে রৌদ্র থেকে রক্ষা করে চলেছেন, আর তিনি উটের পিঠে সাওয়ার হয়ে গন্তব্য পথে এগিয়ে চলেছেন। মক্কায় পৌঁছে তিনি খাদিজাকে রা. তাঁর ক্রয় করা মালপত্র বুঝিয়ে দিলেন। খাদিজা রা. ঐ মাল বিক্রয় করে দিগুন মুনাফা অর্জন করলেন। ওদিকে মাইসারাকে যাজক যা যা বলেছিলো এবং পতিমধ্যে নবীকে সা. দুই ফিরিশতা কর্তৃক ছায়াদানের যে দৃশ্য মাইসারা স্বচক্ষে দেখেছিলো, তা সে খাদিজার রা. নিকট হুবহু বিবৃত করল। খাদিজা রা. ছিলেন দৃঢ়চেতা অনমনীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রখর বুদ্ধিমতী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মহিলা। নবীর মতত্ত্ব ও সততার সাথে পরিচিত হওয়া তাঁর জন্য একটা অতিরিক্ত সৌভাগ্য হয়ে দেখা দিল। বলাবাহুল্য এটা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুগ্রহের ফল। মাইসারার উক্ত অলৌকিক ঘটনার বিবরন শুনে খাদিজা রা. এত অভিভূত হলে যে, তিনি রাসুল সা. এর কাছে নিন্মরুপ বার্তা পাঠালেন, হে চাচাতো ভাই, আপনার গোত্রের মধ্যে আপনার যে মর্যাদা পূর্ণ অবস্থান, যে আত্মীয়তার বন্ধন এবং সর্বোপরি আপনার বিশ্বস্ততা, চরিত্র-মাধুর্য ও সত্যবাদিতার যে সুনাম রয়েছে, তাতে আমি মুগ্ধ, অভিভূত। এই বলে খাদিজা তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
সূত্র: দালায়েলুন নাবুওয়াহ (বাইহাকী) খ. ২ পৃ. ৬৬-৬৭
হযরত নাফীসা রা. বলেন,
كانت خديجة امرأة شريفة جلدة كثيرة المال ولما تأيمت كان كلّ شريف من قريش يتمنى أن يتزوجها فلما أن سافر النبيّ صلّى اللَّه عليه وسلّم في تجارتها ورجع بربح وافر رغبت فيه فأرسلتني دسيسا إليه فقلت له ما يمنعك أن تزوج فقال ما في يدي شيء فقلت فإن كفيت ودعيت إلى المال والجمال والكفاءة قال ومن قلت خديجة فأجاب
অর্থাৎ খাদিজা রা. ছিলেন একজন সম্মানীতা, সুদর্শন এবং ধনাঢ্য নারী। তিনি যখন বিধবা হলেন, তখন মক্কার সম্ভ্রান্ত পরিবারের অনেকেই তাঁকে বিয়ে করতে আগ্রহী হলেন। কিন্তু নবীজি সা. যখন তাঁর ব্যবসায়ীক পন্য নিয়ে রওনা হলেন এবং পর্যাপ্ত লাভবান হয়ে ফিরলেন। ফলে তিনি নবীজির প্রতি আকৃষ্ট হলেন। এবং আমাকে এ গোপন প্রস্তাব নিয়ে নবীজির সা. কাছে পাঠালেন। আমি নবীজিকে সা. বললাস, আপনার বিয়ে করতে অসুবিধা কি? তিনি বললেন, আমার হাতে কোনো টাকা নেই। অতপর আমি বললাম, আপনাকে যদি ধন-সম্পদ, সৌন্দর্য ও জীবিকার নিশ্চয়তার দিকে আহ্বান জানানো হয়, আপনি কি গ্রহণ করবেন? নবীজি সা. বললেন, কে সে? আমি বললাম, খাদিজা রা.। অতপর নবীজি সা. রাজি হলেন।
সূত্র: আল-ইসাবা, খ. ৮ পৃ. ১০১
ইসলাম গ্রহণ:
আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَالَتْ كَانَ أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةَ فِي النَّوْمِ فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الْخَلاَءُ فَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ يَتَحَنَّثُ فِيهِ – وَهُوَ التَّعَبُّدُ – اللَّيَالِيَ أُولاَتِ الْعَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى أَهْلِهِ وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا حَتَّى فَجِئَهُ الْحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ فَجَاءَهُ الْمَلَكُ فَقَالَ اقْرَأْ . قَالَ ” مَا أَنَا بِقَارِئٍ – قَالَ – فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ اقْرَأْ . قَالَ قُلْتُ مَا أَنَا بِقَارِئٍ – قَالَ – فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ اقْرَأْ . فَقُلْتُ مَا أَنَا بِقَارِئٍ فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي . فَقَالَ ( اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ * خَلَقَ الإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ * اقْرَأْ وَرَبُّكَ الأَكْرَمُ * الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ * عَلَّمَ الإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ) ” . فَرَجَعَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَرْجُفُ بَوَادِرُهُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ فَقَالَ ” زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي ” . فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ ثُمَّ قَالَ لِخَدِيجَةَ ” أَىْ خَدِيجَةُ مَا لِي ” . وَأَخْبَرَهَا الْخَبَرَ قَالَ ” لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي ” . قَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ كَلاَّ أَبْشِرْ فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا وَاللَّهِ إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ . فَانْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتَّى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ بْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ الْعُزَّى وَهُوَ ابْنُ عَمِّ خَدِيجَةَ أَخِي أَبِيهَا وَكَانَ امْرَأً تَنَصَّرَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ يَكْتُبُ الْكِتَابَ الْعَرَبِيَّ وَيَكْتُبُ مِنَ الإِنْجِيلِ بِالْعَرَبِيَّةِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكْتُبَ وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِيَ . فَقَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ أَىْ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ . قَالَ وَرَقَةُ بْنُ نَوْفَلٍ يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَبَرَ مَا رَآهُ فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ هَذَا النَّامُوسُ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَى مُوسَى صلى الله عليه وسلم يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا يَا لَيْتَنِي أَكُونُ حَيًّا حِينَ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَوَمُخْرِجِيَّ هُمْ ” . قَالَ وَرَقَةُ نَعَمْ لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمَا جِئْتَ بِهِ إِلاَّ عُودِيَ وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ওয়াহীর সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। আর তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা সকালের সূর্যের মতই সুস্পষ্টরূপে সত্যে পরিণত হত। অতঃপর তার কাছে একাকী থাকা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তারপর তিনি হেরা গুহায় নির্জনে কাটাতে থাকেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন এবং এর জন্য কিছু খাদ্য সামগ্ৰী সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তারপর তিনি খাদীজার কাছে ফিরে যেতেন এবং আরো কয়েক দিনের জন্য অনুরূপভাবে খাদ্য সামগ্ৰী নিয়ে আসতেন।
তিনি হিরা গুহায় য়খন ধ্যানে রত ছিলেন, তখন তার নিকট ফেরেশতা আসলেন, এরপর বললেন, পড়ুন! তিনি বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন ফেরেশতা আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন আমি বললাম, আমি তো পড়তে সক্ষম নই। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এরং দ্বিতীয়বারও এমন জোরে চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হল। পরে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন আমি বললাম, আমি তো পড়তে সক্ষম নই। এরপর আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তৃতীয়বারও এমন জোরে চাপ দিলেন যে আমার খুবই কষ্ট হল।
এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পাঠ করুন। আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ’আলাক’ হতে। পাঠ করুন। আর আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না”— (সূরাহ ’আলাক ৯৬ঃ ১-৫)।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ওয়াহী নিয়ে ফিরে এলেন। তার স্কন্ধের পেশীগুলো কাপছিল। খাদীজাহ্ (রাযিঃ) এর নিকট এসে বললেন, তোমরা আমাকে চাঁদর দ্বারা ঢেকে দাও, তোমরা আমাকে চাঁদর দ্বারা ঢেকে দাও। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তার ভীতি দূর হল। এরপর খাদীজাহ্ (রাযিঃ) কে সকল ঘটনা উল্লেখ করে বললেন, খাদীজাহ আমার কি হল? আমি আমার নিজের উপর আশঙ্কা করছি। খাদীজাহ (রাযিঃ) বললেনঃ না, কখনো তা হবে না। বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোজ-খবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথি সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন।
এরপর খাদীজাহ (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ওয়ারাকাহ ইবনু নাওফাল ইবনু আসাদ ইবনু আবদুল উয্যা এর নিকট নিয়ে আসেন। ওয়ারাকাহ ছিলেন খাদীজাহ (রাযিঃ) এর চাচাত ভাই, ইনি জাহিলিয়াতের যুগে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী লিখতে জানতেন এবং ইন্জীল কিতাবের আরবী অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ এবং তিনি দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন। খাদীজাহ্ (রাযিঃ) তাকে বললেনঃ চাচা, (সম্মানার্থে চাচা বলে সম্বোধন করেছিলেন। অন্য রিওয়ায়াতে “হে চাচাত ভাই” এ কথার উল্লেখ রয়েছে) আপনার ভাতিজা কি বলছে শুনুন তো!
ওয়ারাকাহ ইবনু নাওফাল বললেন, হে ভাতিজা! কি দেখেছিলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন সব কিছু বিবৃত করলেন। ওয়ারাকাহ বললেন, এ তো সে সংবাদবাহক যাকে আল্লাহ মূসা (আঃ) এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। হায়! আমি যদি সে সময় যুবক থাকতাম, হায়! আমি যদি সে সময় জীবিত থাকতাম, যখন আপনার জাতিগোষ্ঠী আপনাকে দেশ থেকে বের করে দিবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সত্যি কি আমাকে তারা বের করে দিবে? ওয়ারাকাহ্ বললেন, হ্যাঁ। যে ব্যক্তিই আপনার মত কিছু (নুবুওয়াত ও রিসালাত) নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছে, তার সঙ্গেই এরূপ দুশমনী করা হয়েছে। আর আমি যদি আপনার সে যুগ পাই তবে অবশ্যই আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করব।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬০
অবদান:
এক.
এ সতীসাধ্বী নারী সর্ব প্রথম নবীজির সা. নবুওয়াতের স্বীকৃতি দান করেন।
اول من آمن به وصدقه قبل كل احد
অর্থাৎ তিনি সর্বপ্রথম নবীজির সা. উপর ঈমান আনয়ন করেন এবং সবার আগে নবীজিকে সা. সত্যায়ন করেন।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১০৯
দুই.
وكانت تنفق عليه من مالها ويتجر هو صلى الله عليه وسلم لها
নবীজির সা. সকল প্রয়োজনের খরচাদী খাদিজা রা. নিজে সম্পত্তি থেকেই করতেন এবং নবীজি সা. খাদিজার রা. ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১১০
তিন.
وجاءه منها عدة أولاد
অর্থাৎ তাঁর থেকে নবীজির সা. কয়েকজন সন্তান জন্ম নেন।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১১০
চার.
فإنها كانت نعم القرين
অর্থাৎ খাদিজা রা. ছিলেন নবীজির সা. (কষ্টের সময়ের) উত্তম সঙ্গীনি।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১১০
পাঁচ.
ওহী নাযিল হওয়ার সময় ভীতসন্ত্রস্ত নবীজিকে সা. প্রথম অভয় প্রদান করেন খাদিজা রা.। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ওহী নিয়ে ফিরে এলেন। তার স্কন্ধের পেশীগুলো কাপছিল। খাদীজা রা. এর নিকট এসে বললেন, তোমরা আমাকে চাঁদর দ্বারা ঢেকে দাও, তোমরা আমাকে চাঁদর দ্বারা ঢেকে দাও। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তার ভীতি দূর হল। এরপর খাদিজা রা. কে সকল ঘটনা উল্লেখ করে বললেন, খাদিজা, আমার কি হলো? আমি আমার নিজের উপর আশঙ্কা করছি। অতপর অভয় দিয়ে খাদিজা রা. বললেন,
كَلاَّ أَبْشِرْ فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا وَاللَّهِ إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ
অর্থাৎ না, কখনো তা হবে না। বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোজ-খবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথি সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬০
ছয়.
اول من آمن به وصدقه قبل كل احد
অর্থাৎ তিনি সর্বপ্রথম নবীজির সা. উপর ঈমান আনয়ন করেন এবং সবার আগে নবীজিকে সা. সত্যায়ন করেন।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১০৯ তাবরানী: ১০৯৬
সাত.
নবীজির সা. সাথে সর্বপ্রথম নামাজ পড়েন খাদিজা রা.।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
أولُ من صلّى مع النبيِّ صلّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ بعد خديجةَ عليٌّ وقال مرةً أَسْلَمَ
অর্থাৎ নবীজির সা. সর্বপ্রথম নামাজ পড়েন খাদিজার রা. পরে আলী রা.। কখনও বলতেন, ইসলাম গ্রহণ করেন।
সূত্র: তাখরীজ মুসনাত (আহমাদ শাকের) খ. ৫ পৃ. ১৮১
আট.
হযরত আম্মাজান আয়েশাকে রা. নবীজি বলেছিলেন,
واللهِ لقد آمنَتْ بي إذ كذَّبَني النّاسُ وآوَتْني إذ رفَضَني النّاسُ
অর্থাৎ আল্লাহর কসম, যখন মানবজাতি আমাকে মিথ্যারোপ করছিলো সে সময় খাদিজা রা. আমার উপর ঈমান আনয়ন করেছিলো। এবং কাফেররা যখন আমাকে বিতাড়িত করতে মরিয়া ছিলো, সে সময় খাদিজা রা. আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলো।
সূত্র: তাখরীজে সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ২১১
আম্মাজান খাদিজা রা. এর মর্যাদা:
এক.
জাহিলিয়াতের জঘন্য যুগেও তিনি ছিলেন এক পবিত্র নারী। যে কারণে তিনি সে যুগেও পবিত্রা হিসাবে প্রশিদ্ধ ছিলেন। যুবাইর ইবনে বাক্কার রহি. বলেন,
كانت خديجة تدعى في الجاهلية الطاهرة
অর্থাৎ জাহেলী যুগে খাদিজা রা. কে ত্বাহেরা (পবিত্রা) বলে ডাকা হতো।
সূত্র: উমদাতুল ক্বারী, খ. ১৬ পৃ. ৩৮১
দুই.
এবং নবীজি সা. তাঁর বৈবাহিক জিবনে সর্ব প্রথম খাদিজা রা. কে বিবাহ করেন। শুধু কি তাই?
أنه لم يتزوج امرأة قبلها… ولم يتزوج عليها قط
অর্থাৎ তাঁর পূর্বে নবীজি সা. আর কাউকে বিবাহ করেননি। এমনকি তাঁর জিবদ্দশায় নবীজি সা. আর অন্য কোনো নারীকে বিবাহ করেননি।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১১০
তিন.
নবীজির রা. সবচে পছন্দের স্ত্রী:
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَا غِرْتُ عَلَى أَحَدٍ مِنْ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَةَ وَمَا بِي أَنْ أَكُونَ أَدْرَكْتُهَا وَمَا ذَاكَ إِلاَّ لِكَثْرَةِ ذِكْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَهَا وَإِنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاةَ فَيَتَتَبَّعُ بِهَا صَدَائِقَ خَدِيجَةَ فَيُهْدِيهَا لَهُنَّ
অর্থ: আয়িশাহ রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, খাদিজা রা. এর প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্য কোন সহধর্মিণীর প্রতি আমি ততটা ঈর্ষা পোষণ করতাম না। অথচ আমি তার দেখাও পাইনি। তা এজন্য যে, প্রায়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা মনে করতেন। আর তিনি বকরী যবাহ করলে খাদীজাহ রা. এর বান্ধবীদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের জন্য গোশত উপহার পাঠাতেন।
সূত্র: জামে তিরমিযি, হাদিস: ৩৮৭৫
চার.
নবীজির সা. স্ত্রীদের মধ্যে সর্বসেরা:
وكان النبي صلي الله عليه وسلم يثني عليها ويفضلها علي سائر امهات المؤمنين ويبالغ في تعظيمها
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ২ পৃ. ১১০
পাঁচ.
আসমান যমীনের সেরা নারী:
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন,
وَخَيْرُ نِسائِها خَدِيجَةُ بنْتُ خُوَيْلِدٍ
অর্থাৎ আসমান-যমীনের মধ্যে সর্বোত্তম নারী হলেন, খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রা.।
সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৩০
ছয়.
আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম ও জান্নাতের সু-সংবাদ:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ هَذِهِ خَدِيجَةُ أَتَتْكَ بِإِنَاءٍ فِيهِ طَعَامٌ أَوْ إِنَاءٍ فِيهِ شَرَابٌ فَأَقْرِئْهَا مِنْ رَبِّهَا السَّلاَمَ وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ مِنْ قَصَبٍ لاَ صَخَبَ فِيهِ وَلاَ نَصَبَ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। জিব্রীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, এই তো খাদীজাহ আপনার জন্য একটি পাত্রে খাবার অথবা পানীয় (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) নিয়ে এসেছেন। আপনি তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে সালাম বলুন। আর তাঁকে এমন একটি মোতির তৈরি প্রাসাদের খোশখবর দিন, যেখানে চেঁচামেচি বা কষ্ট থাকবে না।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস: ৭৪৯৭
সালামের জবাব:
হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন,
جاءَ جِبْريلُ عليه السَّلامُ إلى النَّبيِّ صلّى اللهُ عليه وسلَّمَ وعِندَه خَديجةُ رَضيَ اللهُ عنها، فقالَ: إنَّ اللهَ يُقْرئُ خَديجةَ السَّلامَ، فقالَتْ: إنَّ اللهَ هو السَّلامُ، وعليكَ السَّلامُ ورَحْمةُ اللهِ
অর্থাৎ জিবরাঈল আ. নবীজির সা. কাছে আসলেন, সে সময় তাঁর কাছে খাদিজা রা. ছিলেন। অতপর জিব্রাঈল আ. বললেন, আল্লাহ খাদিজাকে রা. সালাম দিয়েছেন। অতপর খাদিজা রা. বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ হলেন, সালাম, আপনার উপরও আল্লাহর সালাম এবং রহমত বর্ষিত হোক।
সূত্র: মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৪৯২৪
সাত. নবীজি সা. নিজে তাঁর কবরে নেমেছিলেন।
হযরত হাকিম ইবনে হিযাম রা. বলেন, ইন্তেকালের পর আমরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে জাহুন নামক স্থানে নিয়ে গেলাম। অতঃপর-
ونزل رسول الله صلي الله عليه وسلم في حفرتها
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সা. নিজে তাঁর কবরে নেমে দাফন করেন।
সূত্র: তারিখে দিমাশক, খ. ২ পৃ. ৯৯ তাবাকাতে ইবনে সা’দ খ. ১ পৃ. ১৭৪
আট. জান্নাতের সেরা নারী:
প্রথমা স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) ছিলেন বিশ্বসেরা চারজন সম্মানিতা মহিলার অন্যতম। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
خطَّ رسولُ الله ﷺ في الأرضِ خُطوطًا أربعةً قال أتدرونَ ما هذا قالوا اللهُ ورسولُه أعلَمُ فقال رسولُ اللهِ ﷺ أفضَلُ نساءِ أهلِ الجنَّةِ خديجةُ بنتُ خويلدٍ وفاطمةُ بنتُ مُحمَّدٍ ومريمُ بنتُ عِمرانَ وآسيةُ بنتُ مُزاحِمٍ امرأةُ فِرعونَ
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সা. চারটি দাগ টেনে বললেন, তোমরা জানো এটা কি? সাহাবায়ে কেরাম রা. বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই সা. ভালো জানেন অতপর রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, জান্নাতের সবচে সম্মানীত নারী হলেন (চারজন) খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ সা. মারইয়াম ইমরান এবং ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৭০১০
নবীজির সা. থেকে খাদিজার রা. সন্তানাদী:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
ولدت خديجة لرسول الله صلي الله عليه وعلي آله وسلم غلامين واربع نسوة القاسم وعبد الله وفاطمة وزينب ورقية و ام كلثوم
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ’র সা. থেকে খাদিজার রা. দু’টি ছেলে এবং চারটি মেয়ে ছিলেন। যথাক্রমে, কাসেম, আব্দুল্লাহ, ফাতিমা, যায়নাব, রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুম রা.।
সূত্র: মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৪৯০৫
ইবনে হাজার রহি. বলেন,
والمتفق عليه من أولاده منها القاسم وبه كان يكنى مات صغيرا قبل المبعث أو بعده وبناته الأربع زينب ثم رقية ثم أم كلثوم ثم فاطمة وقيل كانت أم كلثوم أصغر من فاطمة وعبد الله ولد بعد المبعث فكان يقال له الطاهر والطيب
অর্থাৎ এটা সর্বসম্মতমত যে, খাদিজার রা. থেকে নবীজির সা. সন্তান ছিলেরন, ১. কাসেম। যাঁর নামে নবীজির সা. উপাধি ছিলো। নবুয়তের পূর্বে অথবা পরে ছোট অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর থেকে মেয়ে ছিলে চারজন। যায়নাব অতঃপর রুকাইয়া, অতঃপর উম্মে কুলসুম রা. অতঃপর ফাতিমা রা.। বলা হয়, উম্মে কুলছুম ফাতিমার রা. থেকেও ছোট ছিলেন। ৪. এবং আব্দুল্লাহ। যিনি নবুওয়াত প্রাপ্তীর পর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকেই তাহের এবং তায়্যিব বলেও ডাকা হতো।
সূত্র: ফাতহুল বারী, খ. ৭ পৃ. ১৬৭
ইন্তেকাল:
হযরত খাদিজার রা. ভাতিজা হাকিম ইবনে হিযাম রা. বলেন,
توفيت خديجة بنت خويلد في شهر رمضان سنة عشر من النبوة وهي يومئذ ابنة خمس و ستين سنة فخرجنا بها من منزلها حتي دفنا ها بالجحون ونزل رسول الله صلي الله عليه وسلم في حفرتها
অর্থাৎ খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রা. নবুওয়াতের ১০ম বছরের (হিজরতের পূর্বেই) ১০ম রমাযানে (মক্কায়) ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো ৬৫ বছর। আমরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে জাহুন নামক স্থানে দাফন করলাম। রাসুলুল্লাহ সা. নিজে তাঁর কবরে নেমে দাফন করেন।
সূত্র: তারিখে দিমাশক, খ. ২ পৃ. ৯৯ তাবাকাতে ইবনে সা’দ খ. ১ পৃ. ১৭৪
একটি অভিযোগ:
অনেক নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা এই হাদীসটি উপস্থাপন করে বলতে চান যে, খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর বাবাকে মদ খাইয়ে মাতাল বানিয়ে ধোঁকা-প্রতারণার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সা. কে বিয়ে করেছেন। চলুন আগে হাদিসটি দেখা যাক-
أنَّ رَسولَ اللهِ ﷺ ذكَرَ خَديجةَ وكان أبوها يَرغَبُ أنْ يُزوِّجَه فصنَعَتْ طَعامًا وشَرابًا فدعَتْ أباها ونَفَرًا مِن قُريشٍ، فطَعِموا وشَرِبوا حتى ثَمِلوا فقالت خَديجةُ لِأَبيها إنَّ محمدَ بنَ عَبدِ اللهِ يَخطُبُني فزَوِّجْني إيّاه فزوَّجَها إيّاه فخلَّقَته وألبَسَته حُلَّةً وكذلك كانوا يَفعلون بالآباءِ فلمّا سُرِّيَ عنه سُكرُه نظَرَ فإذا هو مُخَلَّقٌ وعليه حُلَّةٌ فقال ما شَأْني ما هذا قالت زوَّجتَني محمدَ بنَ عَبدِ اللهِ قال أنا أُزَوِّجُ يَتيمَ أبي طالِبٍ لا لَعَمْري فقالت خَديجةُ أما تَستَحي تُريدُ أنْ تُسَفِّهَ نَفسَكَ عِندَ قُرَيشٍ تُخبِرُ النّاسَ أنَّك كنتَ سَكرانَ فلم تَزَلْ به حتى رضِيَ
অর্থাৎ হাম্মাদের ধারণানুপাতে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. খাদিজার রা. ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, তার পিতা তাকে বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন। তাই তিনি কিছু খাবার ও পানীয় তৈরি করে তার পিতা ও কুরাইশের কিছু লোককে দাওয়াত করলেন। তারা খাওয়া-দাওয়া করলেন এবং মাতাল হওয়া পর্যন্ত (মদ) পান করলেন। তারপর খাদিজা রা. তাঁর বাবাকে বললেন: মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আমাকে বিয়ে করতে চান, তাই আমাকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। তার বাবা তাকে মুহাম্মাদ সা. সাথে বিবাহ দিয়ে দেন। তারপর খাদিজা রা. তার বাবার গায়ে কিছু সুগন্ধি লাগিয়ে দেন এবং তাকে একটি হুল্লা (জামা) পরিয়ে দেন, কারণ প্রথা অনুযায়ী বিয়েতে তারা তাদের বাবাদের জন্য এটিই করত।
যখন সে নেশা থেকে সেরে উঠল, তখন সে দেখতে পেল যে সে সুগন্ধি এবং একটি হুল্লা পরে আছে। সে বললো, আমার কি হয়েছে, এটা কি? খাদিজা রা. বললেন, তুমি আমাকে মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহর সাথে বিবাহ দিয়েছো। সে বলল, আমি তোমাকে আবু তালিবের ইয়াতীমের সাথে বিয়ে দিয়েছি? কখনো না। খাদিজা রা. বললেন, কুরাইশদের সামনে বোকা সাজতে এবং একথা বলতে তোমার লজ্জা করবে না যে, তুমি মাতাল ছিলে? খাদিজা রা. তার বাবা রাজি হওয়া পর্যন্ত তার বাবাকে বুঝাতে থাকলেন।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ: ২৮৪৯ বাইহাকী: ১৪১১৬
উক্ত হাদিসকে কেন্দ্র করে নাস্তিক বা ইসলাম বিদ্বেষীরা আম্মাজান খাদিজা রা. কে ‘প্রতারক’ হিসাবে আখ্যায়িত করতে চায়।
জবাব:
এক.
উক্ত হাদিসটি সহিহ নয়। এ হাদিসটির সনদ সম্পর্কে মুহাদ্দিসিনে কেরাম অনেক মন্তব্য করেছেন। শাইখ আহমাদ শাকের রহি. বলেন:
إسناده فيه نظر والأقرب أنه ضعيف
অর্থাৎ এই হাদীসের সনদে সমস্যা আছে। সত্যের কাছাকাছি কথা হচ্ছে যে সনদটি যঈফ (দুর্বল)।
সূত্র: তাখরীজে মুসনাদ, খ. ৪ পৃ. ৩০৬
শাইখ শুআইব আল আরনাউত্বও রহি. হাদিসটি যয়ীফ বলেছেন।
সূত্র: তাখরীজুল মুসনাদ, ২৮৪৯
কারণ উক্ত বর্ণনার শুরুতে লেখা রয়েছে,
فِيمَا يَحْسَبُ حَمَّادٌ
অর্থাৎ হাম্মাদের ধারণানুপাতে। হাদিসটি বর্ণিত। হাম্মাদ বিন সালামাহ হাদীসটি অনুমানের ভিত্তিতে বর্ণনা করেছেন, তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। এই ‘ধারণানুপাতে’ বিষয়টি নিয়ে একটু গবেষণা করলে উক্ত হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট হবে। সেটা হলো, মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত এ সনদটি মুদাল্লাস। অর্থাৎ হাম্মাদ রহি. কার থেকে এটা বর্ণনা করেছেন সে রাবীর নাম এখান থেকে গায়েব করে দেয়া হয়েছে। ইমাম বাইহাকি যখন হাদীসটি তার দালাইলুন নুবুয়াহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, তিনি এই সনদে বর্ণনা করেছেন:
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ إِسْحَاقَ الْبَغَوِيُّ قَالَ حَدَّثَنَا مُسْلِمٌ قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدٍ عَنْ عَمَّارِ بْنِ أَبِي عَمَّارٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
হাম্মাদ বিন সালামাহ বর্ণনা করেন আলী বিন যায়েদ থেকে আর আলী বিন যায়েদ বর্ণনা করেন আম্মার বিন আবি আম্মার থেকে আর আম্মার বিন আবি আম্মার বর্ণনা করেন ইবনে আব্বাস রা. থেকে।
সূত্র: দালায়েলুন নবুওয়াহ (বাইহাকী) খ. ২ পৃ. ৭৩
অথচ মুসনাদ আহমাদের সনদ হচ্ছে:
حَدَّثَنَا أَبُو كَامِلٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ عَمَّارِ بْنِ أَبِى عَمَّارٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
হাম্মাদ বিন সালামাহ বর্ণনা করেন আম্মার বিন আবি আম্মার থেকে আর আম্মার বিন আবি আম্মার বর্ণনা করেন ইবন আব্বাস রা. থেকে।
অর্থাৎ আমরা যখন দালায়েলুন নবুওয়াহ’র সনদের সাথে মুসনাদে আহমাদের সনদকে মিলিবো, তখন আমরা দেখতে পাই যে, দালায়েলুন নুবুয়াহ’তে হাম্মাদ বিন সালামাহ হাদীসটি আলী বিন যায়েদ থেকে বর্ণনা করেছেন। আর মুসনাদ আহমাদে হাম্মাদ বিন সালামাহ হাদীসটি আম্মার বিন আবি আম্মার থেকে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ মুসনাদে আহমাদের সনদে হাম্মাদ বিন সালামাহ ‘আলী বিন যায়েদ’ নামক এ রাবীকে গায়েব করে দিয়েছেন।
সুতরাং বুঝা গেলো, হাদিসটি সহিহ নয়, বরং মুদাল্লাস। কারণ হাদীস বর্ণনা করার সময় বর্ণনাকারী তার শাইখ বা অন্য কোনো এক বা একাধিক বর্ণনাকারীর নাম সনদ থেকে গোপন করে ফেলাকে তাদলীস বলে।
কে এই আলী ইবনে যায়েদ ইবনে জুদ’আন?
আলী ইবনে যায়েদ ইবনে জুদ’আন ছিলেন সে সময়ের একজন শিয়াপন্থি আলেম। যার হাদিস গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে মুহাদ্দিসিনে কেরাম সতর্ক করে গেছেন। কয়েকজন মুহাদ্দিসের মতামত নিন্মে পেশ করলাম:
আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ আল আজলী রহি এর মত:
وقال أحمد العجلي كان يتشيع
অর্থাৎ আহমাদ আল আজলী রহি. বলেন, তিনি শিয়া মতাবলম্বী ছিলেন।
সূত্র: মাজমুউ রসায়িলি ইবনে আবীদ্দুনিয়া খ. ৪ পৃ. ৫৭ মিযানুল ই’তিদাল, খ. ৫ পৃ. ১৫৬
ইয়াযিদ ইবনে যুরাঈ’ রহি. এর মত:
عن يزيد بن زريع قال كان علي بن زيد رافضيا
অর্থাৎ ইয়াযিদ ইবনে যুরাঈ’ রহি. বলেন, আলী ইবনে যায়েদ রাফেযী ছিলো।
সূত্র: মিযানুল ই’তিদাল, খ. ৫ পৃ. ১৫৬
রাফেযী মিশন:
রাফেযী মূল টার্গেট ছিলো, নাস্তিক ও মুনাফিক সম্প্রদায় তৈরি করা। যাদের লক্ষ্য ছিলো, কুরআন, রাসূলুল্লাহ সা. ও দ্বীন ইসলাম ও সাহাবাদের ব্যাপারে অপবাদ দেয়া। যারা মূলত শিয়া মতবাদের সবচে জঘন্যতম শ্রেণী।
ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-কাত্তান রহি. এর মত:
ইমাম আল-ফাললাস রহি. বলেন,
كان يحيي القطان يتقي حديث علي بن زيد
অর্থাৎ ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-কাত্তান রহি. আলী ইবনে যায়েদের হাদিস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতেন।
সূত্র: মিযানুল ই’তিদাল, খ. ৫ পৃ. ১৫৬
ইমাম বুখারী রহি. ও আবু হাতেম রহি. এর মত:
قال البخاري وأبو حاتم لا يحتج به
অর্থাৎ ইমাম বুখারী রহি. ও আবু হাতিম রহি. বলেন, তার বর্ণিত হাদিস দিয়ে দলীল পেশ করা যাবে না।
সূত্র: মিযানুল ই’তিদাল, খ. ৫ পৃ. ১৫৬
তাছাড়া ইমাম আহমাদ, ইমাম ইবনে উয়াইনা, ইমাম জুরাইরী, ইমাম হাম্মাদ ইবনে যায়েদ, ইবনে খুযাইমা রহিমাহুমুল্লাহ সহ অসংখ্য মুহাদ্দিসিনে তাকে দূর্বল রাবী বলেছেন।
সূত্র: মাজমুউ রসায়িলি ইবনে আবীদ্দুনিয়া খ. ৪ পৃ. ৫৭ মিযানুল ই’তিদাল, খ. ৫ পৃ. ১৫৬
সুতরাং বুঝা গেলো, নাস্তিকদের উত্থাপিত হাদিসটি সহিহ নয়। পক্ষান্তরে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, আম্মাজান খাদিজা রা. এর বিবাহ তাঁর চাচা আমর ইবনে আসাদ দিয়েছিলেন।
মুহাম্মাদ ইবনে উমার রহি. বলেন,
فهذا كله عندنا غلط ووهل والثبت عندنا المحفوظ عن اهل العلم ان اباها خويلد بن اسد مات قبل الفجار وان عمها عمرو بن اسد زوجها رسول الله صلي الله عليه وسلم
অর্থাৎ (মদ খাইয়ে বাবাকে মাতাল করে খাদিজা রা. মুহাম্মাদ সা. কে বিবাহ করেছেন বলে প্রচারিত) তথ্যটি পুরোটাই ভুল এবং দূর্বল মত। কিন্তু ইলামায়ে কেরামের কাছে প্রমাণিত বিষয় হলো, তাঁর পিতা খুয়াইলিদ ইবনে আসাদ ফিজার যুদ্ধের আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আর রাসুলুল্লাহ’র সা. সাথে খাদিজার রা. বিবাহ তাঁর চাচা আমর ইবনে আসাদ দিয়েছিলেন।
সূত্র: তাবাকাতে ইবনে সা’দ, খ. ১ পৃ. ১০৬ তারিখুল ইসলাম, খ. ২ পৃ. ৬৫
ইমাম ওয়াকেদী রহি. বলেন,
هذا المجتمع عليه عند اصحابنا ليس بينهم اختلاف
অর্থাৎ এটা আমাদের উলামাদের নিকট সর্বসম্মত মত, এ ব্যাপারে তাদের মাঝে কোনো মতভেদ নেই।
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ১ ২ পৃ. ১১০
কারণ এ ব্যাপারে তিনজন সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. মুহাম্মাদ ইবনে যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. এবং আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন,
أنَّ عمَّها أيْ خديجةَ بنتَ خُوَيلدٍ عمرَو بنَ أسدٍ زوَّجها رسولَ اللهِ ﷺ وأنَّ أباها مات قبل الفُجّارِ
অর্থাৎ খাদিজার রা. চাচা আমর ইবনে আসাদই তাঁকে রাসুলুল্লাহ’র সা. সাথে বিবাহ দেন। আর তাঁর পিতা ফিজার যুদ্ধের আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: তারীখে তাবারী, খ. ২ পৃ. ২৮২ তাবাকাতে ইবনে সা’দ খ. ১ পৃ. ১৩২
হাদিসটির মান:
আল্লামা ওয়াকেদী রহি. বলেন,
ثبت محفوظ
অর্থাৎ হাদিসটি শক্তিশালী, প্রমাণিত। অর্থাৎ সহিহ।
সূত্র: তারীখে তাবারী, খ. ২ পৃ. ২৮২
সুতরাং উক্ত হাদিসকে কেন্দ্র করে আম্মাজান খাদিজা রা. কে প্রতারক প্রমাণ করতে চাওয়া তাদের মূর্খতার পরিচায়ক।
দুই.
এরপরও যদি তর্কের খাতিরে হাদিসটি সহিহ বলে মেনে নিই, তবুও কোনো অসুবিধা নেই। কারণ-
১. নাস্তিকদের কাছে প্রাপ্তাবয়স্ক নারীরা তাদের জিবনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তারা স্বাধীন। সুতরাং আম্মাজান আয়েশা রা. নিজের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেবেন না নেবেন সেটা তো তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সুতরাং তিনি রাসুলুল্লাহ সা. কে বিবাহ করে বাবাকে ধোকা দিয়েছেন বলে প্রশ্নটি নাস্তিকরা করতে পারে না। যদি করেন তাহলে তারা নিজেরাই নিজেদের নিয়ম বহির্ভুত কাজ করলেন। বরং নাস্তিকদের থিউরী মোতাবেব উচিৎ ছিলো, তার বাবা প্রাপ্তবয়স্ক এ মেয়ের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করায় তাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা। কিন্তু নাস্তিকরা সেটা না করে বরং আম্মাজান খাদিজাকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন! নাস্তিকদের কি আশ্চর্য থিউরী।
২. যখন তাঁদের বিয়ে হয়, তখন ইসলাম ধর্ম পৃথিবীতে আসেনি। সুতরাং এ বিষয়টি নিয়ে মুসলমানদের কাছে প্রশ্ন করা নিতান্তই মুর্খতা। উপরন্তু ইসলাম ধর্ম আসার পরও যদি এমনটা হতো, তবুও কোনো সমস্যা ছিলো না। কারণ ইসলামিক দৃষ্টিকোনেও প্রাপ্তাবয়স্ক নারী যদি কাউকে বিবাহ করে, তাহলে সে বিবাহও বিশুদ্ধ। সুতরাং ইসলামিকদৃষ্টিকোন থেকেও তিনি কোনো অপরাধ করেননি।
৩. খাদিজা রা. যদি বাবাকে মদ খাওয়াতেন, তবুও অপরাধ ছিলো না। কারণ সে সময় ইসলামের বিধি-বিধান পৃথিবীতে আসেনি। বরং জাহিলী যুগে মদ সামাজিকভাবেও বৈধ ছিলো। সুতরাং তাঁকে অপরাধী বানানোর চেষ্টা ব্যর্থ।
৪. নাস্তিকরা আম্মাজান খাদিজাকে রা. বিবাহ করার কারণে রাসুলুল্লাহ সা. কে টাকার লোভী প্রমাণ করতে চান। অথচ এ হাদিসটা যদি সহিহ ধরেও নিই, তাহলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ’র প্রতি খাদিজার রা. আগ্রহ বেশি ছিলো। সুতরাং প্রমাণ হলো, নবীজি সা. টাকার মোহে বিবাহ করতে খাদিজাকে রা. ফুসলাননি। সুতরাং নবীজিকে টাকার লোভী বলাটার কোনো সুযোগ রইল না।
৪. ইমাম হাকেম রহি. একটি রেওয়ায়েত এনেছেন, যেখানে বলা হয়েছে,
تزوجها في الجاهلية وانكحها ابوها خويلد بن اسد
অর্থাৎ খাদিজা রা. জাহেলী যুগে রাসুল সা. কে বিবাহ করেন, তাঁর বাবা নিজে তাকে বিবাহ দিয়েছেন।
সূত্র: মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৪৯০১
এ বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, তাঁর বাবাই তাকে বিবাহ দেন। সুতরাং মদ খাওয়ানোর হাদিসটি সহিহ ধরলেও এ ক্ষেত্রে আম্মাজান খাদিজা রা. এর উপর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। যদিও বাস্তবতা হলো, এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো সব ভুল। সত্য এবং সহিহ মত হলো, নবীজির সা. সাথে খাদিজার রা. এর বিবাহের পূর্বেই তাঁর বাবা মারা যান, এবং তাঁর চাচা আমর ইবনে আসাদই তাঁকে রাসুলুল্লাহ’র সাথে বিবাহ প্রদান করেন।