কুরআন তিলাওয়াত করা ও শ্রবণ করার মাঝে রয়েছে অসংখ্য ফযিলত। যার প্রমাণ কুরআন-সুন্নাহ’য় অগণীত।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, রাষ্ট্রে কুরআনের আইন কার্যকর না হলে কুরআন শোনা ও পড়ায় কোনো ফযিলত নেই। দেখুন তারা কী বলে-
কোর’আন শরীফ আল্লাহর আদেশ-নিষেধের একটি গ্রন্থ। সেই আদেশ নিষেধকে সমাজে প্রতিষ্ঠা না করে, পশ্চিমা সভ্যতার আইন-কানুন মেনে নিয়ে রোজার মাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু কোর’আন শরিফ তেলাওয়াত করা আর শোনার কোনো মাহাত্ম্য নেই। এ কাজে সওয়াব হবে তখনই যখন তা মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে। যে কেতাব জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত নেই, সমাজে যেটার হুকুম ও শিক্ষা চলে না, সেই কেতাব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখস্থ শোনার কী তাৎপর্য? এখন মুখস্থ করার থেকে বেশি জরুরি হলো একে প্রতিষ্ঠা করা। -সওমের উদ্দেশ্য : পৃ. ১৭
ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা ও শোনার ব্যাপারে প্রচুর ফযিলতের কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মানবজিবনে প্রতিষ্ঠিত না হলে তিলাওয়াত করে ও শ্রবণ করে কোনো সওয়াব হবে না এমন কোনো কথা কুরআন বা সুন্নাহ’য় বর্ণিত হয়নি, বরং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শুনলে সওয়াব রয়েছে। কারণ তা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এজন্য আল্লাহ পাক মনোযোগ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত শোনার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
আর যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়। -সুরা আরাফ : ২০৪
اِنَّ الَّذِیْنَ یَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِیَةً یَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ، لِیُوَفِّیَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَ یَزِیْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ اِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা এমন ব্যবসার আশাবাদী, যা কখনও লোকসান হয় না, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত গুণগ্রাহী। -সুরা ফাতির : ২৯-৩০
اِذَا تُلِیَتْ عَلَیْهِمْ اٰیٰتُهٗ زَادَتْهُمْ اِیْمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمْ یَتَوَكَّلُوْنَ
যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পড়া হয়, তখন তা তাদের ঈমানের উন্নতি সাধন করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। -সুরা আনফাল : ২
উক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রতিয়মান হলো, যে যারা তিলাওয়াত করবে তাদেরকে মহান আল্লাহ প্রতিদান দেবেন। তাছাড়া হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
আল্লাহ তা’আলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। -জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ২৯১০
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَالّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقّ، لَهُ أَجْرَانِ.
যারা উত্তমরূপে কুরআন পড়বে তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত ফিরিশতাদের সাথে। আর যে কুরআন পড়তে গিয়ে আটকে আটকে যায় এবং কষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। -সহীহ মুসলিম : হাদীস নং : ৭৯৮
হযরত আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ
তোমরা কুরআন পড়ো। কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন তার ‘ছাহিবের’ জন্য সুপারিশ করবে। -সহীহ মুসলিম : হাদীস নং : ৮০৪
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ، إِلّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرّحْمَةُ وَحَفّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ
যারা আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পারস্পরিক কুরআনের চর্চা করে, তাদের প্রতি ‘সাকীনা’ তথা এক প্রকার বিশেষ প্রশান্তি বর্ষিত হয়, রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর কাছের ফিরিশতাদের মাঝে তাদের আলোচনা করেন। -সহীহ মুসলিম : হাদীস নং : ২৬৯৯
এ ছাড়াও কুরআন তিলাওয়াত শুনলে যেসব ফযিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে তা হলো- ১. সীমাহীন সওয়াব ২. হেদায়েত (সঠিক পথের নির্দেশনা) লাভ, ৩. নূর অর্জন, ৪. সত্যকে চেনার উপলব্ধি সৃষ্টি, ৫. জ্ঞানার্জন, ৬. আল্লাহর সহজ ইবাদত, ৭. কুরআন তিলাওয়াত শোনা সুন্নত, ৮. মনে অনাবিল প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ। সুতরাং কুরআন তিলাওয়াত করা ও শোনার মধ্যে এতো ফযিলত থাকার পরও হেযবুত তওহীদ কিভাবে এমন কথা বলে যে, ‘কুরআনের আইন কার্যকর না হলে তিলাওয়াত ও শোনার মধ্যে কোনো ফায়দা নেই’। মূলত এটা তারা প্রচার করছে জাতিকে কুরআন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যই।