Home > হিজবুত তাওহীদ > —কিতাবুল্লাহ নিয়ে মন্তব্য:

—কিতাবুল্লাহ নিয়ে মন্তব্য:

আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের তাঁর বিধানমত চালানোর জন্য যুগে যুগে কিতাব পাঠিয়েছেন। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে সর্বমোট আসমানী কিতাব পাঠানো হয়েছে ১০৪টি। তার মধ্যে ৪টি হলো প্রধান আসমানী কিতাব। পবিত্র তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন। আর বাকি ১০০টি সহীফা। এর বাহিরে কোনো কিতাব আল্লাহ পাঠাননি। কিন্তু সকল কিতাব বিকৃত করে ফেলেছে তার অনুসারীরা। কিন্তু একমাত্র কুরআন অবিকৃত অবস্থায় আজও আমাদের মাঝে বিদ্যমান। কারণ কুরআন হিফাযতের দায়িত্ব খোদ আল্লাহ তা’আলা নিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে হেযবুত তওহীদ বেশ কয়েকটা মিথ্যাচার করেছে। তার সারসংক্ষেপ হলো-
১. কুরআনের কপি উসমান রা. এর আগে ছিলো না।
২. কুরআনের আত্মা, প্রয়োগ ও ব্যবহারিক দিক বিকৃত হয়ে গেছে।
৩. কুরআন রাষ্ট্রে কায়েম না হলে এর কোনো দাম নেই।
৪. কুরআনের আইন কার্যকর না হলে তিলাওয়াত ও শোনার মধ্যে কোনো ফায়দা নেই।
৫. আল্লাহ-র কিতাবের চেয়ে মুমিনের দাম বেশি।
৬. কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না।
৭. হিন্দুদের গ্রন্থসহ সকল ধর্মগ্রন্থ আল্লাহর কিতাব।
৮. বেদ নূহ আ. মুসা আ. ও মুহাম্মাদ সা.-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিলো।
৯. কুরআন ছাড়া অন্য গ্রন্থ দিয়েও বিচার করা যায়।
১০. ইহুদীদের কিতাব দিয়েও নবি সা. বিচার করতেন।

চলুন এবার প্রমাণসহ বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

কুরআনের কপি উসমান রা. এর আগে ছিলো না।?
পবিত্র কুরআন একটি সার্বজনীন স্বীকৃত সহিহ গ্রন্থ। যাঁর ব্যাপারে পৃথিবির কোনও মুসলমানের সন্দেহ থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়ার অনেক ষড়যন্ত্র ইতিপূর্বেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এমনই একটি ষড়যন্ত্র করে চলেছে হেযবুত তওহীদ। অত্যান্ত কৌশলে তারা পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে সংশয় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চলুন হেযবুত তওহীদের বক্তব্যটা আগে দেখে নেওয়া যাক।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা লিখেছে,
ঐ জাতির কাছে আল্লাহর দেয়া সংবিধান কোর’আনের মাত্র কয়েকটি হাতেলেখা কপি ছিল, তাও খলিফা ওসমান রাযি.- এর সময়ের পরে। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ১৪ মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১৭-১৮ যুগসন্ধিক্ষণে আমরা, পৃ. ৮ এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৬৪ এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩-১৪

উক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে তারা বুঝাতে চায়, পবিত্র কুরআনের লিপিবদ্ধ সংকলন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিলো না, বরং উসমান রা. এর পর এটার সংকলন করা হয়েছে। এ কথাটা দিয়ে তারা কৌশলে বুঝাতে চায় যে, যে কুরআন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের দীর্ঘ কয়েক বছর পর একত্রিত করা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে কিভাবে সন্দেহমুক্ত থাকা যায়?

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআন ইসলামের মৌলিক ধর্মগ্রন্থ ও সত্য গ্রন্থ। আর পুরো কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা হাদিসসমূহে মওজুদ রয়েছে। এই পবিত্র কুরআন মজীদ আল্লাহর নিকটে লাওহে মাহফুজে এক নির্দিষ্ট নিয়মে সাজানো ছিলো আগ থেকেই। সেখান থেকে সুদীর্ঘ তেইশ বৎসরে আবশ্যক ও প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে  নবিজি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। কখনো একটি আয়াত কখনও একটি সুরা এভাবে। যখনই যে আয়াত বা আয়াতসমূহ নাযিল হয়েছে, তখনই হযরত জিব্রাইল আ. তা লাওহে মাহফুজের তারতীব তথা ক্রমানুসারে কোন সুরায় কোন আয়াতের পরে বা আগে স্থান পাবে তা স্পষ্টভাবে বলে দিতেন এবং তদনুসারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে সাথে মুখস্থ করে নিতেন এবং ‘কাতিবে ওহি’ তথা ওহি লেখককে সেভাবেই লেখার নির্দেশ দিতেন। খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বলে দিতেন, এই আয়াতটিতে অমুক সুরার অমুক আয়াতের পরে লিখে রাখো। কাতেবে ওহিগণও সেভাবে লিখে রাখতেন।

কাতেবে ওহিগণের নাম:
অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপরে নাযিলকৃত কুরআনের আয়াত লিখতেন, তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন সাহাবীর নাম হলো-
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. হযরত ওমর রা. হযরত উসমান রা. হযরত আলী রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ রা. হযরত জুবায়ের ইবনে আওয়াম রা. হযরত খালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে আস রা. হযরত আবান ইবনে সাঈদ ইবনে আস রা. হযরত হানজালা ইবনে রবি রা. হযরত মুআইকিব বিন আবি ফাতিমা রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আরকাম আজ জহুরী রা. হযরত শুরাহবিল ইবনে হাসানা রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রা. হজরত আমির ইবনে ফুহায়রা রা. হযরত আমের ইবনে আস রা. হযরত সাবেত ইবনে কায়েস রা. হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা রা. হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা. হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে মুয়াবিয়া রা. হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. প্রমুখ।

নবিজি সাঃ-এর যুগে পবিত্র কুরআনের কপি ছিলো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় পূর্ণ কুরআন একত্রিতভাবে মুসহাফ বা গ্রন্থ আকারে ছিলো না। যেহেতু হুজুরের অন্তর্ধানপূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিলো। তাই এ ধরণের গ্রন্থ আকারে রূপ দেওয়া বা একত্র করা সম্ভবপর হয়নি। তবে ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে অনেকে ঐ সময় পর্যন্ত নাজিলকৃত আয়াতসমূহ একস্থানে লিখে নিয়েছিলেন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে। কারণ পবিত্র কুরআন সংরক্ষণের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম রা. সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতেন যেন কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি না হয়। তাঁরা শুধু মুখস্ত করেই ক্ষ্যান্ত হতেন না, বরং সামর্থ অনুযায়ী হাড়, পাথর, চামড়া ও খেজুরডালা ইত্যাদির উপর লিখে রাখতেন। শুধু সাহাবায়ে কেরাম রা. নন, বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও  হযরত জিবরাইল আ. যখন কোনো আয়াত নিয়ে অবতীর্ণ হতেন, তখন তা পাঠ করার সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে সাথে পাঠ করে নিতেন এবং জিহবা নেড়ে নেড়ে এত দ্রুত আবৃত্তি করতেন যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যে কষ্টকর হয়ে যেতো। ফলে আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকো আশ্বস্ত করার নিমিত্তে ঘোষণা করেন,
لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ
(হে রাসুল!) তুমি এ কুরআনকে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য এর সাথে তোমার জিহ্বা নাড়িও না। নিশ্চয়ই একে (তোমার অন্তরে) জমানো ও (মুখ দিয়ে) পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। -সুরা ক্বিয়ামাহ : ১৬-১৭

উপরন্তু বহুসংখ্যক সাহাবা রা. এমনও ছিলেন যে, যখন কোনো আয়াত অবতীর্ণ হতো, তখন তা হিফজ করে নিতেন। ফলে সাহাবায়ে কেরামদের রা. বড় একটি দল পূর্ণ কুরআনের হাফেজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর যারা পূর্ণ কুরআন হিফজ করতে সক্ষম হননি। তারা আংশিক হলেও হিফজ করে নিতেন।

এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে সাহাবায়ে কেরামের রা. কাছে পূর্ণ বা অপূর্ণ কুরআন শরীফের নুসখা থাকার প্রমাণ কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে নিন্মে দুটি হাদিস বর্ণনা করছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى أَنْ يُسَافَرَ بِالْقُرْآنِ إِلَى أَرْضِ الْعَدُوِّ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন সঙ্গে নিয়ে শত্রু-দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ২৯৯০

উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন শরীফ সঙ্গে নিয়ে শত্রুদের দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন, সেহেতু বুঝা যায় কুরআন শরীফের কপি সাহাবায়ে কেরামের রা. কাছে না থাকলে, তিনি এমনটা কেন বলবেন?

হযরত উসমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনু আওস আস্ সাকাফী রহি. তাঁর দাদা আওস রা. হতে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قِرَاءَةُ الرَّجُلِ الْقُرْآنَ فِي غَيْرِ الْمُصْحَفِ أَلْفُ دَرَجَةٍ وَقِرَاءَتُهُ فِي الْمُصحف تضعف عل ذَلِك إِلَى ألفي دَرَجَة
কোনো ব্যক্তির মুসহাফ ছাড়া (অর্থাৎ- কুরআন দেখা ছাড়া) মুখস্থ কুরআন পড়া এক হাজার গুণ মর্যাদা সম্পন্ন। আর কুরআন মুসহাফে পড়া (অর্থাৎ- কুরআন খুলে দেখে দেখে পড়া) মুখস্থ পড়ার দু’ গুণ থেকে দু’ হাজার গুণ পর্যন্ত মর্যাদা রাখে। -মু‘জামুল কাবীর (ত্ববারানী) হাদিস নং : ৬০১

উপরিউক্ত হাদিসটি থেকে বুঝা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগেই সাহাবায়ে কেরামের রা. কাছে পবিত্র কুরআনের কপি ছিলো। না থাকলে  নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা কেন বলবেন? সুতরাং ধারণা করা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও কিছু সাহাবায়ে কেরামের কাছে কুরআন শরীফের কপি বিদ্যমান ছিল। যদিও সেটা কিতাবের আকারে না থাকলেও শীট আকারে ছিলো।

আবু বকর রা. এর যুগে কুরআনের কপির অস্তীত্ব:
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. ইসলামের প্রথম খলীফা নিযুক্ত হন। তাঁর খেলাফতের সূচনালগ্নেই অভিশপ্ত মিথ্যা নবি দাবীদার মুসাইলামাতুল কাজ্জাবের সাথে যুদ্ধের জন্য সাহাবায়ে কেরামের রা. বড় একটি জামাত প্রস্তুত করেন সিদ্দিকে আকবার রা.। অবশেষে উভয়পক্ষই যুদ্ধের জন্যে ‘ইয়ামামা’ নামক স্থানে যুদ্ধ করেন। সেজন্য এ যুদ্ধকে ‘ইয়ামামা যুদ্ধ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ যুদ্ধে সত্তর জন হাফেজে কুরআন সাহাবী শহীদ হন। উমদাতুল ক্বারীতে এসেছে, ৭০০ জন হাফেজ সাহাবী শহীদ হন। ফলে হযরত উমর রা. মারত্মক ভাবে মর্মাহত হন এবং ভবিষ্যতে কুরআন সংরক্ষণের ব্যাপারে ওমর রা. খুব চিন্তিত এবং শংকিত হয়ে পড়েন। অতপর তিনি বিষয়টি খলীফা আবু বকর রা. এর সাথে পরামর্শ করেন। যার বিস্তারিত ঘটনা সহিহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। কাতেবে ওহী হযরত যায়দ ইবনে সাবেত রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَرْسَلَ إِلَيَّ أَبُوْ بَكْرٍ مَقْتَلَ أَهْلِ الْيَمَامَةِ وَعِنْدَهُ عُمَرُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ إِنَّ عُمَرَ أَتَانِيْ فَقَالَ إِنَّ الْقَتْلَ قَدْ اسْتَحَرَّ يَوْمَ الْيَمَامَةِ بِالنَّاسِ وَإِنِّيْ أَخْشَى أَنْ يَسْتَحِرَّ الْقَتْلُ بِالْقُرَّاءِ فِي الْمَوَاطِنِ فَيَذْهَبَ كَثِيْرٌ مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا أَنْ تَجْمَعُوْهُ وَإِنِّيْ لَأَرَى أَنْ تَجْمَعَ الْقُرْآنَ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ قُلْتُ لِعُمَرَ كَيْفَ أَفْعَلُ شَيْئًا لَمْ يَفْعَلْهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ عُمَرُ هُوَ وَاللهِ خَيْرٌ فَلَمْ يَزَلْ عُمَرُ يُرَاجِعُنِيْ فِيْهِ حَتَّى شَرَحَ اللهُ لِذَلِكَ صَدْرِيْ وَرَأَيْتُ الَّذِيْ رَأَى عُمَرُ قَالَ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ وَعُمَرُ عِنْدَهُ جَالِسٌ لَا يَتَكَلَّمُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ إِنَّكَ رَجُلٌ شَابٌّ عَاقِلٌ وَلَا نَتَّهِمُكَ كُنْتَ تَكْتُبُ الْوَحْيَ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَتَتَبَّعُ الْقُرْآنَ فَاجْمَعْهُ فَوَاللهِ لَوْ كَلَّفَنِيْ نَقْلَ جَبَلٍ مِنَ الْجِبَالِ مَا كَانَ أَثْقَلَ عَلَيَّ مِمَّا أَمَرَنِيْ بِهِ مِنْ جَمْعِ الْقُرْآنِ قُلْتُ كَيْفَ تَفْعَلَانِ شَيْئًا لَمْ يَفْعَلْهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ هُوَ وَاللهِ خَيْرٌ فَلَمْ أَزَلْ أُرَاجِعُهُ حَتَّى شَرَحَ اللهُ صَدْرِيْ لِلَّذِيْ شَرَحَ اللهُ لَهُ صَدْرَ أَبِيْ بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقُمْتُ فَتَتَبَّعْتُ الْقُرْآنَ أَجْمَعُهُ مِنْ الرِّقَاعِ وَالأَكْتَافِ وَالْعُسُبِ وَصُدُوْرِ الرِّجَالِ حَتَّى وَجَدْتُ مِنْ سُوْرَةِ التَّوْبَةِ آيَتَيْنِ مَعَ خُزَيْمَةَ الْأَنْصَارِيِّ لَمْ أَجِدْهُمَا مَعَ أَحَدٍ غَيْرِهِ (لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ) إِلَى آخِرِهِمَا وَكَانَتْ الصُّحُفُ الَّتِيْ جُمِعَ فِيْهَا الْقُرْآنُ عِنْدَ أَبِيْ بَكْرٍ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ
হযরত আবু বকর রা. (তার খিলাফাতের সময়) এক ব্যক্তিকে আমার কাছে ইয়ামামার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করলেন। (আমি তার কাছে চলে আসলাম) তখন তার কাছে ’উমার রা. বসা ছিলেন। আবু বকর রা. আমাকে বললেন, ’উমার রা. আমার কাছে এসে বললেন যে, ইয়ামামার যুদ্ধ তীব্র গতিতে চলছে, আমার ভয় হচ্ছে, কুরআনের অভিজ্ঞগণ (হাফেজগণ) ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান নাকি! যদি আপনারা তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করেন তবে কুরআনের অনেক অংশ চলে যেতে পারে এবং কুরআনকে একত্রিত সংরক্ষণ করা ভাল মনে করি। আবু বকর রা. বলেন, আমি উমার রা. কে বললাম, আমি এ কাজ কীভাবে করতে পারি, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করে যাননি? কিন্তু উমার রা. বললেন, আল্লাহর কসম! এটা কল্যাণকর। উমার রা. তাঁর এ কথার পুনরুক্তি করতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ কাজ করার জন্য আমার অন্তর খুলে দিলেন এবং আমিও উমার রা. এর মতোই মতামত পেশ করলাম। যায়েদ ইবনে সাবিত রা. বলেন, উমার রা. সেখানে নীরবে বসা ছিলেন, কোন কথা বলছিলেন না। এরপর আবু বকর রা. আমাকে বললেন, দেখো, তুমি যুবক এবং জ্ঞানী ব্যক্তি। আমরা তোমার প্রতি কোনরূপ খারাপ ধারণা রাখি না। কেননা, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে ওহি লিপিবদ্ধ করতে।

সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াত সংগ্রহ করে একত্রিত করো। আল্লাহর কসম! তিনি কুরআন একত্রিত করার যে নির্দেশ আমাকে দিলেন, সেটি আমার কাছে এতো ভারী মনে হলো যে, তিনি যদি কোন একটি পর্বত স্থানান্তর করার আদেশ দিতেন তাও আমার কাছে এমন ভারী মনে হতো না। আমি বললাম, যে কাজটি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করে যাননি, সে কাজটি আপনারা কীভাবে করবেন? তখন আবু বকর রা. বললেন, আল্লাহর কসম! এটাই কল্যাণকর। এরপর আমিও আমার কথার উপর বারবার জোর দিতে লাগলাম।

শেষে আল্লাহ যেটা বুঝার জন্য আবু বকর রা. ও উমার রা. এর অন্তর খুলে দিয়েছিলেন, আমার অন্তরকেও তা বুঝার জন্য খুলে দিলেন। এরপর আমি কুরআন সংগ্রহে লেগে গেলাম এবং হাড়, চামড়া, খেজুর ডাল ও বাকল এবং মানুষের স্মৃতি থেকে তা সংগ্রহ করলাম। অবশেষে খুযাইমাহ আনসারীর কাছে সূরায়ে তাওবার দু’টি আয়াত পেয়ে গেলাম, যা অন্য কারও নিকট হতে সংগ্রহ করতে পারিনি। لَقَدْ جَاءَكُمْ থেকে শেষ পর্যন্ত। এরপর এ একত্রিত কুরআন আবু বকর রা. এর ওফাত পর্যন্ত তাঁর কাছেই জমা ছিল। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৪৬৭৯

উক্ত বর্ণনায় এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআনের কপি আকারে সর্বপ্রথম তৈরি করা হয়েছিলো আবু বকর রা. এর যুগেই। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এ সম্পর্কে যথেষ্ট মুর্খ বলেই দাবি করেছে যে, ‘উসমান রা. এর পরে কপি তৈরি করা হয়েছিলো।

হযরত ওমর রা. এর যুগে কুরআনের কপি:
হযরত আবু বকর রা. এর ইন্তেকালের পর সেই কপিটি হযরত ওমর রা. এর কাছে সংরক্ষিত ছিলো। যা বুখারী শরীফের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়।
ثُمَّ عِنْدَ عُمَرَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ ثُمَّ عِنْدَ حَفْصَةَ بِنْتِ عُمَرَ تَابَعَهُ عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ
তারপর (আবু বকর রা. এর ইন্তেকালের পর কুরআনের কপিটি) হযরত উমার রা. এর কাছে সংরক্ষিত ছিলো। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এটি তার কাছেই ছিল। তারপর ছিল হাফসাহ বিনত উমার রা. এর কাছে। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৪৬৭৯

উসমান রা. এর যুগে কুরআনের কপি:
বর্তমান সারাবিশ্বে যে প্রকারের গ্রন্থ আকারে কুরআন শরীফ বিদ্যমান তাকে মুসহাফে উসমানিয়া বলা হয়। এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলো, খলীফা হযরত উসমান রা. এর খেলাফতের শুরু দিকে আর্মেনিয়া ও আজরবাইযানে মুসলমানদের সংগে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সে যুদ্ধে হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. ও ছিলেন। তিনি সে জিহাদের সফরে হেজায ও শামের বিভিন্ন গোত্রের মুসলমানদের মধ্যে কুরআনের বিভিন্ন পাঠ দেখতে পান। হুজাইফা রা. একজন দূরদর্শী বিচক্ষণ, অভিন্ন এবং গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। যাঁর। উপাধী ছিলো, ‘ছিররুন নবী’ বা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গোপন রহস্যজ্ঞানী। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত গোপন কথা যা কিয়ামত পর্যন্ত সংগঠিত হবে হযরত হুজাইফা রা. কে বলে গেছেন। তিনি এসব বিভিন্ন রীতিতে কুরআন পাঠ দেখে ভীত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। অতপর উসমান রা. কে বিষয়টি অবহিত করলে খলীফা উসমান রা. মক্কা-মাদীনার আশপাশের সকল সাহাবায়ে কেরাম রা. কে আহ্বান করলে ৫০ হাজার সাহাবীর সম্মতিতে আমাদের সামনে থাকা এই কুরআনের সংকলন করা হয়। এ সম্পর্কে হযরত আনাস রা. বলেন,
أَنَّ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ قَدِمَ عَلَى عُثْمَانَ وَكَانَ يُغَازِيْ أَهْلَ الشَّأْمِ فِيْ فَتْحِ إِرْمِيْنِيَةَ وَأَذْرَبِيْجَانَ مَعَ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَأَفْزَعَ حُذَيْفَةَ اخْتِلَافُهُمْ فِي الْقِرَاءَةِ فَقَالَ حُذَيْفَةُ لِعُثْمَانَ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَدْرِكْ هَذِهِ الْأُمَّةَ قَبْلَ أَنْ يَخْتَلِفُوْا فِي الْكِتَابِ اخْتِلَافَ الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى فَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلَى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِيْ إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِي الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ فَأَرْسَلَتْ بِهَا حَفْصَةُ إِلَى عُثْمَانَ فَأَمَرَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَسَعِيْدَ بْنَ الْعَاصِ وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ فَنَسَخُوْهَا فِي الْمَصَاحِفِ وَقَالَ عُثْمَانُ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّيْنَ الثَلَاثَةِ إِذَا اخْتَلَفْتُمْ أَنْتُمْ وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ فِيْ شَيْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ فَاكْتُبُوْهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ فَفَعَلُوْا حَتَّى إِذَا نَسَخُوا الصُّحُفَ فِي الْمَصَاحِفِ رَدَّ عُثْمَانُ الصُّحُفَ إِلَى حَفْصَةَ وَأَرْسَلَ إِلَى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوْا وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنَ الْقُرْآنِ فِيْ كُلِّ صَحِيْفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَ
হযরত হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান রা. একবার উসমান রা. এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আযারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধাদের জন্য যুদ্ধ-প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুযাইফাকে ভীষণ চিন্তিত করলো। সুতরাং তিনি উসমান রা. কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! কিতাব সম্পর্কে ইয়াহুদী ও নাসারাদের মতো মতপার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন। তারপর উসমান রা. হাফসাহ রা. এর কাছে এক ব্যক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহীফাসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মুসহাফ আকারে লিপিবদ্ধ করতে পারি। এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দেবো। হাফসাহ রা. তখন সেগুলো উসমান রা. এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

এরপর উসমান রা. যায়েদ ইবনে সাবিত রা. আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রা. সা’ঈদ ইবনুল আস রা. এবং আবদুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম রা. কে নির্দেশ দিলেন। তাঁরা মুসহাফে তা লিপিবদ্ধ করলেন। এ সময় উসমান রা. তিনজন কুরাইশী ব্যক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন ব্যাপারে যদি যায়দ ইবনে সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতভেদ দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লেখা হয়ে গেলো, তখন উসমান রা. মুল লিপিগুলো হাফসাহ রা. এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মুসহাফসমূহের এক একখানা মুসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এছাড়া আলাদা আলাদা বা একত্রিত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৪৯৮৭

সুতরাং বুঝা গেলো, পবিত্র কুরআনের এ সংকলন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবায়ে কেরামের রা. অব্যহত ও অবিচ্ছিন্ন ধারায় সংকলিত। যেসকল সাহাবায়ে কেরাম রা. এই মহান কাজে অংশগগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন,

হযরত আবু বকর রা. হযরত ওমর রা. হযরত উসমান রা. হযরত আলী রা. হযরত তালহা রা. হযরত সা’দ রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. হযরত আবু হুরায়রা রা. হযরত সালেম রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হযরত আমর ইবনে আস রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব রা. হযরত মুয়াবিয়া রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. হযরত আয়েশা রা. হযরত হাফসা রা. হযরত হযরত উম্মে সালামা রা. হযরত উম্মে ওয়ারাকা রা. হযরত উবাই ইবনে কাব রা. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. হযরত আবু হালিমা মুয়াজ রা. হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রা. হযরত আবু দাহদাহ রা. হযরত মুজাম্মে ইবনে জারিয়া রা. হযরত মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদ রা. হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. হযরত উকবা ইবনে আমের রা. হযরত তামীম আদ দারী রা. হযরত আবু মুসা আশআরী রা. হযরত আবু যায়েদ রা. প্রমুখ। এ ব্যাপারে আল্লামা তাক্বী উসমানী সাহেবের ‘উলূমুল কুরআন’ কিতাবটি পড়লে বিস্তারিত জানা যাবে বলে আশা করি।

সুতরাং ‘শুধু উসমান রা. এর পরে এই কুরআনের কপি এসেছে’ বলে হেযবুত তওহীদের দাবিকৃত বক্তব্যটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে সংশয় ঢুকাবার এক গভীর ষড়যন্ত্র। আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের ঈমানকে হিফাযত করেন। আমীন!

কুরআনের আত্মা, প্রয়োগ ও ব্যবহারিক দিক বিকৃত হয়ে গেছে?
প্রত্যেকটি জিনিষের মূল হলো তার আত্মা। এই আত্মা হারিয়ে গেলে সেটা মূল্যহীন হয়ে যায়। যেমন মানুষের আত্মা চলে গেলে সে লাশ হয়ে যায়। তখন তা দিয়ে আর উপকৃত হওয়া সম্ভব হয় না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে জঘন্য কথার আবিস্কারক এই হেযবুত তওহীদ। তাদের দাবি হলো, ‘কুরআনের আত্মা হারিয়ে গেছে’। তারা লিখেছে,
কোর’আনের শিক্ষা নেই কোথাও। কোর’আনের আত্মা আজ হারিয়ে গেছে, তা কেবল অক্ষরই রয়ে গেছে। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ১৬

ভারত অঞ্চলে আল্লাহ জীবন-বিধান দিয়ে যে সকল নবী রসুল (আঃ) পাঠিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস কোরি সেগুলি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে, কিন্তু কাল পরিক্রমায় সেগুলোর ব্যবহার ও বইগুলি বিকৃত কোরে ফেলা হোয়েছে। একই কাজ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বেলাতেও করা হোয়েছে। এজন্য সকল প্রাচীন, আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল কোর’আন নাযেল কোরলেন এবং এটা যেন কেউ বিকৃত না কোরতে পারে তার দায়িত্ব স্রষ্টা নিজেই নিলেন (সূরা/ হেজর ৯)। সেই মহাগ্রন্থ আজও অবিকৃত অবস্থায় আমাদের মধ্যে রোয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হোল, সেই কোর’আনের প্রয়োগ বা ব্যবহারিক দিকগুলি আগের ধর্মগুলির মতই বিকৃত কোরে ফেলা হোয়েছে। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৬

অর্থাৎ তারা কুরআনের চলমান মৌলিক শিক্ষা থেকে জাতিকে দূরে সরাতেই এমনটা লিখেছে। এর দ্বারা তারা বুঝাতে চায়, বর্তমানে কুরআনের যে শিক্ষাটা আছে, সেটা আসল শিক্ষা নয়, বরং এর আত্মা নষ্ট হয়ে গেছে এবং এর ব্যবহারিক দিক ও প্রয়োগ ব্যবস্থা বিকৃত হয়ে গেছে।

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআন এমন একটা জিবন্ত গ্রন্থ যার চুল পরিমান ক্ষতি করার সাধ্য পৃথিবীর কারও নেই। কারণ এ পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে খোদ মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
বস্তুত এ উপদেশ বাণী (কুরআন) আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর রক্ষাকর্তা। -সুরা হিজর : ৯

উপরন্তু মহান রব আরও বলেন,
وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيزٌ لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
অথচ এটি অতি মর্যাদাপূর্ণ কিতাব। কোনো মিথ্যা এর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, না এর সম্মুখ দিক থেকে এবং না এর পেছন থেকে। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসার্হ (আল্লাহ)-এর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। -সুরা হা-মীম : ৪১-৪২

মহান রব আরও বড় ঘোষণা করে বলেন,
يُرِيدُونَ لِيُطْفِؤُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
তারা তাদের মুখ দিয়ে আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তার নূরকে অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন, তা কাফেরদের জন্য যতই অপ্রীতিকর হোক। -সুরা সফ : ৮

উপরিউক্ত তিনটি আয়াত থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণ বা হেফাযতের মূল দায়িত্ব মহান আল্লাহ-র কুদরতি হাতে। হাজারও চেষ্টা করেও এ কুরআনের বিন্দু পরিমান ক্ষতি করা সম্ভব না। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, খোদ হেযবুত তওহীদের বইয়েও এ কথার প্রমাণ রয়েছে। তারা লিখেছেন,
ভারত অঞ্চলে আল্লাহ জীবন-বিধান দিয়ে যে সকল নবী রসুল (আঃ) পাঠিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস কোরি সেগুলি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে, কিন্তু কাল পরিক্রমায় সেগুলোর ব্যবহার ও বইগুলি বিকৃত কোরে ফেলা হোয়েছে। একই কাজ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বেলাতেও করা হোয়েছে। এজন্য সকল প্রাচীন, আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল কোর’আন নাযেল কোরলেন এবং এটা যেন কেউ বিকৃত না কোরতে পারে তার দায়িত্ব স্রষ্টা নিজেই নিলেন (সূরা/ হেজর ৯)। সেই মহাগ্রন্থ আজও অবিকৃত অবস্থায় আমাদের মধ্যে রোয়েছে। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৬

বর্তমানে আমরা এসলাম নামক যে ধর্মটি দেখছি সেটি কিন্তু আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত এসলাম নয়। অতীতের সবগুলি ধর্মই যেমন কাল পরিক্রমায় বিকৃত হোয়ে গেছে, এসলামও ১৩০০ বছরে বিকৃত হোতে হোতে একেবারে বিপরীতমুখী হোয়ে গেছে, শুধুমাত্র পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত কোরতে পারেনি। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৩

সুতরাং প্রমাণ হলো, পবিত্র কুরআন, যাঁর দায়িত্ব খোদ মহান রবের কাছে। তাঁর বিকৃতি কেউ ঘটাতে পারেনি, পারবে না। অথচ হেযবুত তওহীদ পবিত্র কুরআনের মূল আত্মা নষ্ট হয়ে গেছে দাবি করে, এটাই প্রমাণ করলো যে, মহান আল্লাহ তার দায়িত্বে ব্যর্থ হয়েছেন? নাউযুবিল্লাহ।

কুরআন রাষ্ট্রে কায়েম না হলে এর কোনো দাম নেই?
পবিত্র কুরআন সন্মানিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে কুরআন আল্লাহ-র কালাম। কুরআন নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। আল্লাহ-র কালাম মূল্যবান হতে অন্য কোনো বিষয়ের সম্পৃক্ততা লাগে না। অতএব শর্তহীনভাবে কুরআন নিজেই সম্মানিত ও মহামূল্যবান।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
প্রথমে একথা জেনে রাখা যাক যে, হেযবুত তওহীদের কাছে রাষ্ট্র ইসলাম কায়েমই হলো ইসলামের মূল উদ্দেশ্য। সেই রাষ্ট্রে যদি কুরআন কায়েম না হয়, তাহলে এর কোনো দাম নেই। এজন্য তারা লিখেছে,
তওহীদের উপর ভিত্তি করা দীনুল হকের সংবিধান “কোর’আনকে” মানব জীবনের সর্বস্তরে, সর্ব অঙ্গনে কার্য্যকর না কোরতে পারলে তা অর্থহীন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ২৩

ইসলাম কী বলে?
মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করাও ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল বটে, কিন্তু শুধুমাত্র এই হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলাম বা কুরআনের আগমন বিষয়টি আদৌ এমন নয়। পবিত্র কুরআন সর্বাবস্থায় হিদায়াহ। মহান রব বলেন,
شهرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡه الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ
রমযান মাস- যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। -সুরা বাকারা : ১৮৫

ইরশাদ হয়েছে
اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعٰلَمِیْنَ۠
এটা তো নিখিল বিশ্বের সকলের জন্য এক উপদেশ-বার্তা। -সুরা ইউসুফ : ১০৪

পবিত্র কুরআন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও শিক্ষা দেওয়ার আদেশও করা হয়েছে। মহান রব বলেন,
هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡحِكۡمَةَ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ
তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমতের শিক্ষা দেবে, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিপতিত ছিল। -সুরা জুমআহ : ২

উক্ত আয়াতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব কী কী তা বলা হয়েছে। কিন্তু এ আয়াতে বলা হয়নি যে, কুরআন প্রতিষ্ঠা করা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব। অবশ্য জাযিরাতুল আরবে ইসলাম বিজয়ী করা তাঁর দায়িত্ব ছিলো এবং তিনি তা করেও গেছেন। কিন্তু কুরআন প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে এর কোনো মূল্য নেই এমন কোনো কথা কোথাও বলা হয়নি। সুতরাং ‘কুরআন প্রতিষ্ঠিত না হলে তা অর্থহীন’ হেযবুত তওহীদের এ মতবাদ সরাসরি কুরআনের ব্যাপারে অবমাননা ও অপব্যাখ্যা শামিল। হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‏
যে ব্যক্তি সঠিক ইলম ব্যতিত কুরআন প্রসঙ্গে কোন কথা বলে, সে যেন জাহান্নামকে নিজের জন্য বাসস্থান বানিয়ে নিলো। -জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ২৯৫০

কুরআনের আইন কার্যকর না হলে তিলাওয়াত ও শোনার মধ্যে কোনো ফায়দা নেই?
কুরআন তিলাওয়াত করা ও শ্রবণ করার মাঝে রয়েছে অসংখ্য ফযিলত। যার প্রমাণ কুরআন-সুন্নাহ’য় অগণীত।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, রাষ্ট্রে কুরআনের আইন কার্যকর না হলে কুরআন শোনা ও পড়ায় কোনো ফযিলত নেই। দেখুন তারা কী বলে-
কোর’আন শরীফ আল্লাহর আদেশ-নিষেধের একটি গ্রন্থ। সেই আদেশ নিষেধকে সমাজে প্রতিষ্ঠা না করে, পশ্চিমা সভ্যতার আইন-কানুন মেনে নিয়ে রোজার মাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু কোর’আন শরিফ তেলাওয়াত করা আর শোনার কোনো মাহাত্ম্য নেই। এ কাজে সওয়াব হবে তখনই যখন তা মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে। যে কেতাব জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত নেই, সমাজে যেটার হুকুম ও শিক্ষা চলে না, সেই কেতাব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখস্থ শোনার কী তাৎপর্য? এখন মুখস্থ করার থেকে বেশি জরুরি হলো একে প্রতিষ্ঠা করা। -সওমের উদ্দেশ্য : পৃ. ১৭

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা ও শোনার ব্যাপারে প্রচুর ফযিলতের কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মানবজিবনে প্রতিষ্ঠিত না হলে তিলাওয়াত করে ও শ্রবণ করে কোনো সওয়াব হবে না এমন কোনো কথা কুরআন বা সুন্নাহ’য় বর্ণিত হয়নি, বরং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শুনলে সওয়াব রয়েছে। কারণ তা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এজন্য আল্লাহ পাক মনোযোগ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত শোনার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
আর যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়। -সুরা আরাফ : ২০৪

اِنَّ الَّذِیْنَ یَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِیَةً یَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ، لِیُوَفِّیَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَ یَزِیْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ  اِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা এমন ব্যবসার আশাবাদী, যা কখনও লোকসান হয় না, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত গুণগ্রাহী। -সুরা ফাতির : ২৯-৩০

اِذَا تُلِیَتْ عَلَیْهِمْ اٰیٰتُهٗ زَادَتْهُمْ اِیْمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمْ یَتَوَكَّلُوْنَ
যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পড়া হয়, তখন তা তাদের ঈমানের উন্নতি সাধন করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। -সুরা আনফাল : ২

উক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রতিয়মান হলো, যে যারা তিলাওয়াত করবে তাদেরকে মহান আল্লাহ প্রতিদান দেবেন। তাছাড়া হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ ‏
আল্লাহ তা’আলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। -জামে তিরমিযি :  হাদিস নং : ২৯১০

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَالّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقّ، لَهُ أَجْرَانِ.
যারা উত্তমরূপে কুরআন পড়বে তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত ফিরিশতাদের সাথে। আর যে কুরআন পড়তে গিয়ে আটকে আটকে যায় এবং কষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। -সহীহ মুসলিম : হাদীস নং : ৭৯৮

হযরত আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ
তোমরা কুরআন পড়ো। কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন তার ‘ছাহিবের’ জন্য সুপারিশ করবে। -সহীহ মুসলিম : হাদীস নং : ৮০৪

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ، إِلّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرّحْمَةُ وَحَفّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ
যারা আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পারস্পরিক কুরআনের চর্চা করে, তাদের প্রতি ‘সাকীনা’ তথা এক প্রকার বিশেষ প্রশান্তি বর্ষিত হয়, রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর কাছের ফিরিশতাদের মাঝে তাদের আলোচনা করেন। -সহীহ মুসলিম : হাদীস নং : ২৬৯৯

এ ছাড়াও কুরআন তিলাওয়াত শুনলে যেসব ফযিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে তা হলো- ১. সীমাহীন সওয়াব ২. হেদায়েত (সঠিক পথের নির্দেশনা) লাভ, ৩. নূর অর্জন, ৪. সত্যকে চেনার উপলব্ধি সৃষ্টি, ৫. জ্ঞানার্জন, ৬. আল্লাহর সহজ ইবাদত, ৭. কুরআন তিলাওয়াত শোনা সুন্নত, ৮. মনে অনাবিল প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ। সুতরাং কুরআন তিলাওয়াত করা ও শোনার মধ্যে এতো ফযিলত থাকার পরও হেযবুত তওহীদ কিভাবে এমন কথা বলে যে, ‘কুরআনের আইন কার্যকর না হলে তিলাওয়াত ও শোনার মধ্যে কোনো ফায়দা নেই’। মূলত এটা তারা প্রচার করছে জাতিকে কুরআন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যই।

আল্লাহ-র কিতাব দামি না মুমিন?
পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহপাকের কালাম। পৃথিবির সব কিছু মাখলুক হলেও আল্লাহ-র কালাম মাখলুম নয়। সুতরাং কোনো মাখলুকের চেয়ে কুরআন কম দামি হতেই পারে না।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো আল্লাহর কিতাবের চেয়েও মুমিনের সম্মান বেশি। তারা লিখেছে,
সকল ধর্মগ্রন্থ, কাবাসমেত সকল উপসনালয় মানুষের কল্যাণের জন্য এসেছে, মানবতার জন্য এসেছে। তাদের কারো সম্মান মো’মেনের ঊর্ধ্বে নয়। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ১১২

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কাবার চেয়ে মুমিনের সম্মান বেশি। এ কথার প্রমাণ হাদিস শরীফে পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহর নাযিলকৃত কালামুল্লাহ সাধারণ মুমিন তো দূরের কথা নবিদের চেয়েও দামি। কারণ সকল নবি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি, কিন্তু আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব আল্লাহর সৃষ্টি নয়, বরং আল্লাহর কালাম এবং তাঁর সিফাত বা গুনাবলীর অন্তুর্ভূক্ত। আল্লাহর সিফাত কখনও মাখলুক থেকে ছোট হতে পারে না। সুতরাং আল্লাহর নাযিলকৃত কোনো কিতাবের চেয়ে মোমেন দামি হতে পারে এমন দাবি নিছক মূর্খতা ও বিকৃতি।

কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না?
যদি কেউ বড় শিক্ষিত হয়, তবে তার বক্তব্য বুঝতে হলে নিশ্চয় জ্ঞানী হতে হয়, অথবা জ্ঞানীদের থেকে বুঝে নিতে হয়। অনেক সময় নিজের বুঝ অনুয়ায়ী ব্যাখ্যা করলে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না। মানবজাতির শিক্ষা বুঝতে যদি শিক্ষকের সাহায্য লাগে, তাহলে আল্লাহপাকের কালাম বুঝতে কী ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই? নিশ্চয় আছে। সেই ব্যাখ্যার নাম তাফসীর। ইসলামের স্বীকৃত একটি জ্ঞানের নাম ‘ইলমুত তাফসীর’ বা তাফসীরের জ্ঞান। যে জ্ঞানের চর্চা আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ সা. করে গেছেন, এরপর সাহাবায়ে কেরাম রা. করে গেছেন, এরপর তাবেয়ীগণ করেছেন, এরপর যুগে যুগে তাদের তাফসীরের উপর ভিত্তি করে অসংখ্য তাফসীরের কিতাব রচিত হয়েছে। অথচ এই তাফসীরের কিতাবগুলো বাদ দিতে হেযবুত তওহীদ যেন আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
আগেই বলেছি, হেযবুত তওহীদ মুসলিম জাতির পবিত্র কুরআনের প্রতি যে অগাধ বিশ্বাস সেটা নষ্ট করতে বদ্ধাপরিকর। এবার তারা দাবি করেছেন যে, পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পড়া যাবে না। তারা লিখেছে,
বলা বাহুল্য পূর্ববর্তী কেতাবগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল, এবং শেষ ইসলামও তাদের অতিবিশ্লেষণের ভারে বিকৃত হতে হতে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে, কেবল অক্ষত আছে কোর’আনের বর্ণগুলো। তার ব্যাখ্যা পাল্টে বহু রকম হয়ে গেছে।  -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৬

এ ছাড়াও হেযবুত তওহীদের দ্বিতীয় এমাম হুসাইন সেলিম অসংখ্য জায়গায় বক্তব্য দিয়ে চলেছেন যে, ‘তাফসীর পড়বেন না, সরাসরি বাংলা অনুবাদ পড়বেন।’ ইউটিউবে এ সম্পর্কে তার অনেক ভিডিও বক্তব্য পাবেন। উপরন্তু তারা তাফসীরকারকদের কাফের বলতেও দ্বিধা করেনি। এ লিংকে কিছু পাবেন- https://youtu.be/Shz1-jtd2KU

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআন তাফসীর ছাড়া বুঝা সম্ভব নয়। এজন্য মহান আল্লাহ তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পবিত্র কুরআনের তাফসীর করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَمَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلاَّ لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُواْ فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
আমি তোমার উপর এ কিতাব এজন্যই নাযিল করেছি, যাতে তারা যে সব বিষয়ে বিভিন্ন পথ গ্রহণ করেছে, তাদের সামনে তা সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা কর এবং যাতে এটা ঈমান আনয়নকারীদের জন্য হিদায়াত ও রহমতের অবলম্বন হয়। -সুরা নাহাল : ৬৪

সুতরাং বুঝা গেলো, তাফসীরের জ্ঞান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক স্বীকৃত ও নির্দেশিত। ফলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-হাদিসের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করেছেন। যা সাহাবায়ে কেরাম রা. আমাদের জানিয়ে, বুঝিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তাফসীর অস্বীকার করা মানেই পবিত্র কুরআন অস্বীকার করা।

পবিত্র কুরআনের তাফসীরের জ্ঞানের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে দুআ করেছিলেন। যা হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তাঁর ব্যাপারে বলেন,
اللَّهمَّ علِّمْهُ الحِكمةَ وتأويلَ القرآنِ
হে আল্লাহ, ইবনে আব্বাসকে রা. তুমি হিকমাহ এবং কুরআনের তাফসীরের জ্ঞান দান করো। -আল ইসতিআব : খ. ৩ পৃ. ৬৭

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ দুআ এতো বেশি কবুল হয়েছিলো যে, ইবনে আব্বাস রা. এর তাফসীরের জ্ঞানের প্রশংসায় ইবনে মাসউদ রা. বলতেন,
نِعمَ تُرجَمانُ القرآنِ ابنُ عبّاسٍ
কুরআনের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস কতইনা পারদর্শী! [ফাতহুল বারী (ইবনে হাজার) খ. ৭ পৃ. ১২৬]

সুতরাং বুঝা গেলো, তাফসীরের ইলম এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থেকে স্বীকৃত। আর নবি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কর্তৃক স্বীকৃত এ জ্ঞানকে বাদ দেওয়া মানেই রাসুলুল্লাহ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আনীত দ্বীনকে ছুঁড়ে ফেলার নামান্তর। উপরন্তু মনে রাখতে হবে, অতীত তাফসীর ছাড়া পবিত্র কুরআন বুঝা কারও পক্ষেই সম্ভবপর নয়।

তাফসীর ছাড়া নাসেখ-মানসুখ বুঝা সম্ভব নয়।
একটি উদহরণ দিচ্ছি, মনে করুন, আপনি কোনো দোকানে গিয়ে দু’টি পন্য ক্রয় করলেন। একটার দাম ৫৫ টাকা, অপরটার দাম ৪৫ টাকা।  দোকানদার যখন আপনাকে দু’টি পন্যের টাকার হিসাব ক্যালকুলেটরে তুলবেন, তখন তিনি যোগ করবেন এভাবে, ৫৫+৪৫=১০০/-। এখন দোকানদার হিসাব করে আপনাকে বললেন, দুটি পন্য একটার দাম ৫৫ টাকা এবং আরেকটার দাম ৪৫ টাকা। মোট ১০০ টাকা দিন। কিন্তু আপনি তো পন্ডিত মানুষ। আপনি + মানে ‘এবং’ শব্দটা না মেনে তাকে শুধু প্রথম পন্যের ৫৫ টাকা দিয়ে চলে আসলেন। কিন্তু দোকানদার ‘এবং ৪৫ টাকা’ শব্দটা বলে তিনি আরও বাকি ৪৫ টাকা চাইলেন। কিন্তু আপনি তো ‘এবং’ শব্দের মাধ্যমে আলাদা কিছু মানতে চান না। ফলে আপনি তাকে বললেন, আমি যেহেতু প্রথম পন্যের টাকা আপনাকে দিয়েছি, সুতরাং পরের ‘এবং ৪৫ টাকা’ আপনি চাইতে পারেন না। কারণ আমি ‘এবং’ শব্দের মাধ্যমে একটাই বুঝি, আলাদা কিছু বুঝি না।

এখন আপনিই বলুন, পিঠ বাঁচবে? নিশ্চয় না। কেন? কারণ ‘এবং’ শব্দের উপর আপনি আমল করেননি। সুতরাং যদি দুনিয়ার আদালতে ‘এবং’ শব্দ না মানার কারণে পিঠ না বাঁচে, তাহলে অতীত কালের তাফসীর না দেখে রহিত বিধানগুলোর উপরও যখন আমল করতে যাবেন, তখন ঈমানের পিঠ বাঁচবে কী? নিন্মে কয়েকটি আয়াত ও হাদিসের দিকে লক্ষ করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحاً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
(সার কথা,) মুসলিম হোক বা ইয়াহুদী, খ্রিস্টান হোক বা সাবী, যে-কেউ আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তারা আল্লাহর নিকট নিজ প্রতিদানের উপযুক্ত হবে এবং তাদের কোনও ভয় থাকবে না আর তারা কোনও দুঃখেও ভুগবে না। -সুরা বাকারা : ৬২

উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, যারা ঈমানদার ইহুদী বা খ্রিষ্টান তারাও জান্নাতে যাবে। আবার অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও দীন অবলম্বন করতে চাবে, তার থেকে সে দীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সুরা আলে ইমরান : ৮৫

উপরিউক্ত আয়াত দুটি থেকে বুঝা যাচ্ছে-
১. বর্তমানের ইহুদী-খ্রিষ্টানরাও জান্নাতে যাবে।
২. বর্তমানের ইহুদী-খ্রিষ্টানরা ইসলাম না মানলে জাহান্নামে যাবে। এখন তাফসীর ব্যাতিত এর সমাধান কী? যখন তাফসীর বাদ দেওয়া হবে, তখন তো এ ধারণা নিয়েই বসে থাকতে হবে যে, ইহুদী-খ্রিষ্টানরাও জান্নাতি। আর বাস্তবে হয়েছেও সেটাই। দেখুন হেযবুত তওহীদ লিখেছে,
স্বর্গে যাবার জন্য আল্লাহ যে বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে বলেছেন সেগুলি বিশ্বাস করতে হবে। এখানেই প্রশ্ন, ইসলামের শেষ সংস্করণ এসে যাওয়ার পরও ইসলাম গ্রহণ না করে, পূর্ববর্তী ধর্মবিশ্বাসে স্থির থেকে কেউ কি স্বর্গে যেতে পারবেন? এর জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, অবশ্যই তাদেরও জান্নাতে যাওয়ার পথ খোলা আছে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তাদেরকে শেষ নবী ও শেষ গ্রন্থ কোর’আনকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। -হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ।

প্রকৃত সত্য হলো- স্রষ্টা প্রদত্ত সকল ধর্মই সত্যধর্ম। এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর যে কোনোটি মানুষ মেনে চলতে পারে। তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। -দৈনিক বজ্রশক্তি ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ ঈসায়ী

শেষ নবী কোন ধর্মকেই বাতিল করেন নি, তিনি সকল ধর্মকে সংরক্ষণ ও সত্যায়ন করেছেন। আমরা যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুসারীরা পূর্ববর্তী সকল নবী ও অবতারগণের জাতি- গোষ্ঠী-সম্প্রদায়কে একটি সাধারণ সত্যের উপর ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান করছি মাত্র। সেই সত্য হচ্ছে, সকল মানুষের স্রষ্টা এক, সকল মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান, সকল ধর্ম এসেছে একই স্রষ্টার কাছ থেকে, সকল নবী-রসুল- অবতারগণ একই ধর্মের অনুসারী ছিলেন, তারা একে অপরকে ভাই বলে জেনেছেন। সুতরাং আমরা যদি তাঁদের প্রকৃত অনুসারী হই তবে আমাদেরও একে অপরকে ভাই বলে বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের সবাইকেই অন্য ধর্মের নবী-রসুলকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। এতটুকু উদারতা বা হৃদয়ের প্রসারতা যদি আমরা প্রদর্শন করতে না পারি তাহলে পার্থিব ও পারলৌকিক কোন জগতেই আমরা শান্তি লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবো না। এই ঐক্য আল্লাহর চূড়ান্ত অভিপ্রায়। -দেশেরপত্র সাপ্তাহিক সংকলন- ২৪ পৃ. ২৫

এখানে তারা সুস্পষ্টভাবে বুঝাতে চায় যে, সব ধর্মের লোকেরা পূর্ণভাবে তাদের ধর্ম মানলে জান্নাতে যাবে। এই আকিদাববিধ্বংসী কুফরী মতবাদটা তারা লালন করে একমাত্র তাফসীর না দেখার কারণে।

সমাধান কী?
উপরোল্লিখিত দিটি আয়াতে প্রথম আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘ইহুদী খ্রিস্টানরাও ঈমান থাকলে জান্নাতে যাবে’। অবার অপর আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম মানলে জাহান্নামে যাবে’। এখন সমাধান কী? চলুন তাফসীরে কী বলা হচ্ছে দেখে নেওয়া যাক। তাফসীরে কুরতুবীতে এসেছে, সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ قَوْلَهُ إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هادُوا الآية منسوخ بقوله تعالى وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ

আয়াত ‘إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী(…তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে) আয়াতটি পরবর্তিতে নাযিলকৃত আয়াত وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا অর্থাৎ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না। এ আয়াতের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে। -তাফসীরে কুরতুবী : খ.১ পৃ. ২৯৬

আয়াতটি মানসুখ বা রহিত হওয়ার কারণ হিসাবে ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
قَوْلِهِ إنَّ الَّذِينَ آمَنُوا والَّذِينَ هادُوا قالَ فَأنْزَلَ اللَّهُ بَعْدَ هَذا ومَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنهُ وهو في الآخِرَةِ مِنَ الخاسِرِينَ

অর্থাৎ ‘إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ ‘অর্থ: নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী(,…তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে) আয়াতটি  وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا অর্থাৎ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না। আয়াতটি পরবর্তিতে নাযিল হয়েছে। -তাফসীরে শাওকানী : খ. ১ পৃ. ৮০

সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলামের সূচনালগ্নে ইহুদী-খ্রিস্টানদের তাওহীদের উপর অটুট থেকে স্বীয় ধর্মে থাকার অনুমতি থাকলেও পরবর্তীকালে তা রহিত হয়ে যায়। সুতরাং প্রমাণ হলো, তাফসীর বাদ দিয়ে বঙ্গানুবাদ পড়ে পবিত্র কুরআন বুঝা সম্ভবপর নয়।

আরও একটি নমুনা দেখুন। আল্লাহ পাক বলেন,
وَلِلّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللّهِ إِنَّ اللّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
পূর্ব ও পশ্চিম সব আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা যে দিকেই মুখ ফেরাবে সেটা আল্লাহরই দিক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী ও সর্বজ্ঞ। -সুরা বাকারা : ১১৫

উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয়, যেকোনো দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা যাবে। যেহেতু আল্লাহ পাক সবদিকেই আছেন। অথচ অপর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاء فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّواْ وُجُوِهَكُمْ شَطْرَهُ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ
(হে নবি,) আমি তোমার চেহারাকে বারবার আকাশের দিকে উঠতে দেখছি। সুতরাং যে কিবলাকে তুমি পছন্দ করো আমি শীঘ্রই সে দিকে তোমাকে ফিরিয়ে দেব। সুতরাং এবার মসজিদুল হারামের দিকে নিজের চেহারা ফেরাও। এবং (ভবিষ্যতে) তোমরা যেখানেই থাকো (সালাত আদায়কালে) নিজের চেহারা সে দিকেই ফেরাবে। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা জানে এটাই সত্য, যা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এসেছে। আর তারা যা-কিছু করছে আল্লাহ সে সম্বন্ধে উদাসীন নন।। -সুরা বাকারা : ১৪৪

উপরোক্ত দু’টি আয়াতের প্রথম আয়াতে বলা হচ্ছে, যেকোনো দিকে ফিরেই নামাজ পড়া যাবে। আর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে, শুধু কাবা শরীফের দিকে ফিরে নামাজ পড়া আল্লাহ-র নির্দেশ। এখন বলুন এটার সমাধান কী? তাফসীর ছাড়া কী এটার সমাধান হেযবুত তওহীদ দিতে পারবে? নিশ্চয় না। চলুন তাফসীর কী বলা হচ্ছে জেনে নেওয়া যাক। এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রা. তাফসীর করে বলেন,
كان أول ما نسخ من القرآن القبلة
কুরআনের সর্বপ্রথম রহিত আয়াত হলো, কিবলার আয়াত। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ২ পৃ. ২৯

অর্থাৎ প্রথমত তো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন, কিন্তু পরবর্তিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পছন্দমত আল্লাহপাক বাইতুল মুকাদ্দাসের আয়াত রহিত করে কাবার দিকে ফেরার নির্দেশ দিলেন। -উমদাতুত তাফসীর : খ. ১ পৃ. ১৯৪

তাহলে বলুন, তাফসীর না দেখলে কী এর সমাধান পাওয়া যেতো? এমন প্রমাণ দিলে ভুরিভুরি প্রমাণ দেওয়া যাবে যে, তাফসীর ছাড়া কুরআন মাজীদ বুঝা সম্ভব না।

দ্বিতীয় কথা হলো, পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নাযিল করা হয়েছে। যাকে ‘শানে নুযুল’ বলা হয়। যে প্রেক্ষাপটগুলো না জানলে সে আয়াতগুলোর প্রকৃত অর্থ বুঝে আসে না। অথচ এ প্রেক্ষাপটগুলো লেখা আছে বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে। সুতরাং যদি তাফসীর বাদ দিতে হয়, তাহলে কুরআন শরীফের অর্থ কিভাবে বুঝবেন আমার জানা নেই।

একটা গভীর ষড়যন্ত্র:
একটা গভীর ষড়যন্ত্রের রূপরেখা বলছি, মুলত ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের বর্তমান ষড়যন্ত্রের একটি গভীর ধারা আমাদের অগোচরে। তারা শতশত বছর ধরে গবেষণা করে দেখেছে যে, মুসলমানরা মূলত কুরআনের মাধ্যমেই প্রভাবিত হয় সবচে বেশি। সেহেতু তারা কুরআন শরীফকে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য ভারত উপমহাদেশেই কুরআন শরীফের লক্ষ লক্ষ কপি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, হাফেজদের ধরে ধরে যবাই করেছিলো। যা ইতিহাসের পাতায় এখনও লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু এতো কিছু করার পরও তারা কুরআন মাজীদকে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে দিতে পারেনি। তখন তারা ষড়যন্ত্রের রুপরেখা পরিবর্তন করলো। তারা সিদ্ধান্ত নিলো,  ‘যেহেতু আমরা কুরআন উঠিয়ে দিতে পারলাম না এবং মুসলিমদের জাগরণ থামাতে পারছি না, সুতরাং প্রমাণ হচ্ছে কুরআন শরীফের কপি জ্বালিয়ে আমরা সফলতা পাবো না। অতএব এখন থেকে ভিন্ন কাজ করতে হবে।’ কিন্তু সেটা কীভাবে?

তারা সিদ্ধান্ত নিলো, পৃথিবিতে কুরআনের কপি থাকবে বটে, তবে কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে পরিবর্তণ করতে হবে। এজন্য তারা সকল তাফসীরকে সমাজ থেকে উঠিয়ে দিতে কিছু নামধারী মুসলিমদের কাজে লাগালো। তাদের টার্গেট হলো, যখন পুরাতন তাফসীরকে সমাজ থেকে বয়কট করা হবে, তখন সবাই নিজ ইচ্ছামত তাফসীর করবে ও তাদের সেই দালালরা যে ব্যাখ্যা দেবে, সেটাও তাদের অনুসারিরা মেনে আমল করবে। ফলে কুরআন থাকলেও কুরআনের সঠিক রুপ হারিয়ে যাবে এবং তারা তাদের মিশনে সফল হবে। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বাংলাদেশে তাদের মূখপাত্র হিশাবে কাজ করছে কয়েকটি সংগঠন। যেমন ‘আহলে কুরআন’ QRF (কুরআন রিচার্জ ফাউণ্ডেশন) আরেকটা হলো, হেযবুত তওহীদ। এরা পরিচয়ে মুসলিম হলেও আদতে ইসলাম বিদ্বেষীদের গোপন দালাল। তাদের উদ্দেশ্য কী তা উপরে বর্ণনা করেছি। সুতরাং হেযবুত তওহীদের এহেন জঘন্য ষড়যন্ত্রের ফাঁদ থেকে আমাদের বিরত থাকা ঈমানী দায়িত্ব।

সকল ধর্মগ্রন্থ কী আল্লাহর কিতাব?
আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কালিমায়ে শাহাদাতে এ বিষয়টিকে ইসলামী গুরুত্বপূর্ণ আকীদাসমূহের মাঝে তৃতীয় স্থানে রাখা হয়েছে। যে সব ধর্মগ্রন্থ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত, সেগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করা ঈমানের অপরিহার্য বিধান। তবে সেসব ধর্মগ্রন্থ বর্তমানে অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান না থাকায় বর্তমানে সেগুলোকে আল্লাহ-র কিতাব মনে করা ও তার উপর আমল করা বৈধ নয়।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
বর্তমানে হেযবুত তওহীদ সকল ধর্মকে এক করে আন্তঃধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্টা করতে সম্রাট আকবরের দ্বীনে এলাহীর রুপ দান করে মূলত ইমলামকে সমাজ থেকে ধ্বংস করতে চায়। আর এজন্য তারা পবিত্র কুরআনের মত সকল ধর্মগ্রন্থ যেমন বেদ, গীতা, ত্রিপিটক, রামায়ন, বাইবেলসহ সকল ধর্মগ্রন্থকে আল্লাহর কিতাব বলে দাবি করেছে। নিন্মে তাদের কয়েকটা দাবি তুলে ধরা হলো-
আমাদের স্রষ্টা এক,নবী-অবতারগণও এসেছেন একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে, তাদের আনীত গ্রন্থাবলীকেও আল্লাহর কেতাব বলে জানতে হবে। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১০৫

যে ধর্মগ্রন্থগুলোর চর্চা হিন্দু ধর্মে হয়ে থাকে সেগুলোর কিছু কিছু আল্লাহরই পাঠানো কেতাব। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৬৫

হিন্দুদের পুরাণে, বেদে, সংহিতায়, রামায়নে ও মহাভারতে যে ইতিহাস আমরা পাই সেখানেও রয়েছে প্রচুর বিকৃতি । সেই সব বিকৃতির মধ্যেই মিশে আছে কিছু মহাসত্য যা দেখার মত দৃষ্টিশক্তি এই বিকৃত ইসলামের আলেমদের নেই। থাকলে তারা দেখতে পেতেন যে, ঐ সব ধর্মগ্রন্থে যে সব অবতারদের কথা বলা হয়েছে তাদের অনেকেই আল্লাহর প্রেরিত নবী, এবং যে ধর্মগ্রন্থগুলোর চর্চা হিন্দু ধর্মে হয়ে থাকে সেগুলোর কিছু কিছু আল্লাহরই পাঠানো কেতাব। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৬৫

অনেক ঐতিহাসিক, পণ্ডিত ও গবেষকের মতে মহর্ষী মনু, রাজা রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির, মহাবীর জৈন, মহামতি বুদ্ধ এঁরা সবাই ছিলেন ভারতবর্ষে আগত আল্লাহর নবী। অনেক গবেষক মনে করেন বৈবস্বতঃ মনুই হচ্ছেন বৈদিক ধর্মের মূল প্রবর্তক, যাঁকে কোর’আনে ও বাইবেলে বলা হয়েছে নূহ (আ:), ভবিষ্যপুরাণে বলা হয়েছে রাজা ন্যূহ। তাঁর উপরই নাজিল হয় বেদের মূল অংশ। তাঁর সময়ে এক মহাপ্লাবন হয় যাতে কেবল তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা একটি বড় নৌকায় আরোহন করে জীবন রক্ষা করেন। তাঁদের সঙ্গে প্রতিটি প্রাণীর এক জোড়া করে রক্ষা পায়। এই ঘটনাগুলি কোর’আনে যেমন আছে (সুরা মো’মেনুন-২৭, সুরা হুদ-৪০, সুরা আরাফ-৬৪, সুরা ছাফফাত-৭৭), বাইবেলেও (Genesis chapters 6–9) আছে আবার মহাভারতে (বনপর্ব, ১৮৭ অধ্যায়: প্রলয় সম্ভাবনায় মনুকর্তৃক সংসারবীজরক্ষা), মৎস্যপুরাণেও আছে। যা প্রমাণ করে যে, এই সব গ্রন্থই একই স্থান থেকে আগত। -সকল ধর্মের মর্ম কথা সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ৫

মুহাম্মাদ সাঃ-এর ওপরেও বিভিন্ন বেদ  যাদের ওপর অবতীর্ণ হোয়েছিলো, মুসা (আঃ) ও মোহাম্মদ (দঃ)। -এ ইসলাম ইসলামই নয়, পৃ. ১৩৯-১৪০

শেষ প্রেরিত গ্রন্থ আল কোর’আনকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন ছন্দ বদ্ধ করে। কেবল কোর’আন নয়, যবুর, গিতা,বেদ, ত্রিপিটক ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থও আল্লাহ পাঠিয়েছেন কাব্যময় কোরে। ভগবতগীতার অর্থই হল ঈশ্বরের গান। -গনমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯

পূর্ববর্তী নবী-রসুল-অবতার এবং তাঁদের আনীত কেতাবের প্রতিও অবিশ্বাস রেখে জান্নাতের আশা করে লাভ নেই। -দেশেরপত্র সাপ্তাহিক সংকলন- ২৪ পৃ. ২৫

অর্থাৎ তারা বলতে চায়, পৃথিবীতে যত ধর্মগ্রন্থ আছে, সব আল্লাহ-র নাযিলকৃত। এ সব ধর্মগ্রন্থের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। নইলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।

ইসলাম কী বলে?
তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিলের ব্যাপারে আকিদা কী?
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত আকিদা হলো, আসমান থেকে অবতীর্ণ পূর্ববর্তী সকল কিতাবের বিধান কুরআনের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে। হানাফি মাযহাবের ভাষ্যকার ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রহি. তাঁর জগদ্বিখ্যাত কিতাব, মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে লেখেন,
ونعتقد بوجود كتبه المنزلة على رسله تفصيلا فيما علم يقينا كالقرآن ، والتوراة ، والزبور ، والإنجيل ، وإجمالا فيما عداه ، وأنها منسوخة بالقرآن ، وأنه لا يجوز عليه نسخ ، ولا تحريف إلى قيام الساعة
আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সমস্ত কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করি। কুরআন, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলসহ যে ধর্মগ্রন্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জানা গেছে, সুনির্ধারিতভাবে সে সবগুলোকে আমরা বিশ্বাস করি। এ ছাড়া নিশ্চিত জানা নেই কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সাধারণভাবে এসব ধর্মগ্রন্থের অস্তিত্বকে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের আকীদা হলো, এ সমুদয় গ্রন্থ কোরআনের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু পবিত্র কুরআন কেয়ামত পর্যন্ত এটি রহিত বা বিকৃত মনে করা জায়েয নয়। -মিরকাতুল মাফাতিহ : খ. ১ পৃ. ১৪১

সুতরাং তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল ও কুরআনসহ নবিদের প্রতি নাযিলকৃত সকল কিতাব ওহি। সবই আল্লাহ তাআলার কালাম। তবে ধর্মীয় ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণে একথা সুস্পষ্ট যে, কুরআনে কারীম ছাড়া অন্য সকল আসমানি কিতাব চরমভাবে বিকৃতির শিকার হয়েছে। কোনোটিই তার মূল অবস্থায় বাকি থাকেনি, বরং বর্তমানে প্রচলিত তাওরাত, যবুর বা ইঞ্জিল সবই মানুষের লেখা। এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে কিতাবটি দীর্ঘ হবে। এ জন্য সংক্ষেপে এতটুকু জেনে রাখুন যে আসমানি কিতাব তাওরাত বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলের পুরনো নিয়মের প্রথম পাঁচ পুস্তক (আদিপুস্তক, যাত্রাপুস্তক, গণনাপুস্তক, লেবীয় পুস্তক ও দ্বিতীয় বিবরণ অথবা অন্য শব্দে পয়দায়েশ, হিজরত, লেবীয়, শুমারী ও দ্বিতীয় বিবরণ) নয়; বরং তাওরাত হচ্ছে সেই কিতাব, যা ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে দান করেছেন।

যবুর কিতাবও বাইবেলের পুরনো নিয়মের ‘সামসঙ্গীত’ বা ‘গীতসংহিতা’ নয়; বরং আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের উপর যে কিতাব নাযিল করেছেন, তা হচ্ছে যবুর শরীফ। তেমনি আসমানি কিতাব ইঞ্জিল বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলের নতুন নিয়ম কিংবা নতুন নিয়মের প্রথম চারটি কিতাব (মথি সুসমাচার, মার্ক সুসমাচার, লূক সুসমাচার ও যোহন সুসমাচার) নয়; বরং ইঞ্জিল সেই কিতাব, যা আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. কে ওহির মাধ্যমে দান করেছেন এবং ঈসা আলাইহিস সালাম তা বনী ইসরাঈলের মাঝে প্রচার করেছেন। মূলকথা, বাইবেলের পুরনো নিয়ম ও নতুন নিয়ম (প্রচলিত ইঞ্জিল শরীফ)-এর কোনো গ্রন্থই ওহির মাধ্যমে নাযিলকৃত গ্রন্থ নয়। এগুলো পরবর্তীদের রচনাকৃত। কিন্তু এ রচনাগুলোর মূলকপিও খ্রিস্টানদের কাছে সংরক্ষিত নেই। এগুলোর রচয়িতা কে বা কারা, তাও নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।  তবে তাওরাত, যবুর বা ইঞ্জিল শরীফের পূর্ণরুপ বাইবেল নামে যে বইটা সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সে বাইবেলটা খ্রিস্টধর্ম মতে ১৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৪০জন লেখক লিপিবদ্ধ করেছিলেন। -উইকিপিডিয়া

তাছাড়া বাইবেলের সংকলকগণও এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হওয়ার দাবি করেনি, বরং যারা এই বাইবেলের লেখক, তারা নিজেরাই বলেছেন যে, এগুলো তাদের হাতের লেখা। বাইবেলের লেখক সেন্ট পৌল লিখেছেন,
আমি পৌলও নিজের হাতে এই শুভেচ্ছা বাণী লিখছি। – কলসীয় ৪/১৮

বাইবেলের লেখক লুক লিখেছেন,
মাননীয় থিওফিল আমাদের মধ্যে যে সব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর সুসংবাদ তাবলীগ করেছেন, তারা আমাদের কাছে সবকিছু জানিয়েছেন । আর তাদের কথা মতই অনেকে সেইসব বিষয়গুলো পরপর লিখেছেন। সেই সব বিষয় সম্বন্ধে প্রথম থেকে খোঁজখবর নিয়ে আপনার জন্য তা একটা একটা লেখা আমিও ভাল মনে করলাম। -লুক ১/১-৩

বাইবেলের লেখক ইউহোন্না/যোহন লিখেছে,
ঈসা আরও অনেক কিছু করেছিলেন । যদি এ গুলো এক এক করে লেখা হত তবে এত কিতাব হত যে, আমার মনে হয় সেগুলো এই দুনিয়াতে ধরতো না। -বাইবেল নতুন নিয়ত ইউহোন্না/যোহন ২১/২৫

তার এ উক্তি প্রমাণ করে ঈসা আ. সম্পর্কে সে অনেক বিষয়ে অবগত ছিল। যা থেকে তার বুঝ অনুযায়ী কিছু বিষয় সে বাইবেলে লিপিবদ্ধ করেছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন- বাইবেল, নতুন নিয়ম, ইউহোন্না/যোজন ২১:২৫, লূতা ১:১-৩ প্রেরিত ১:১-২ কলসীয় ৪:১৮ ২ তীমথিয় ২:৮ কলসীয় ১:২৩-২৬ রোমীয় ১:১-৩, ১ করিন্থীয় ১৫:১-১১ গালাতীয় ১:১-২০, থিষলনীকীয় ৫:১ মথা ২৮:২-৭ লূক ২৪:৩৬-৪৪ যোজন ২১:৪-১২

বাস্তবতা কী বলে?
বাইবেল মানবরচিত হওয়ার আরেকটি বলিষ্ঠ প্রমাণ হলো, কথিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে মুসা আ. ও ঈসা আ. এর মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী অনেক ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে। এসব আল্লাহ-র পক্ষ থেক অবতীর্ণ হলে নবীদের মৃত্যু পরবর্তী কিচ্ছা কাহিনী তাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবে কীভাবে স্থান পেতে পারে। এসব বাস্তবতা প্রমাণ করে, বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণগুলি সম্পূর্ণ মানব রচিত। আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ নয়৷ এ কিতাবগুলো সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ، كَيْفَ تَسْأَلُونَ أَهْلَ الْكِتَابِ، وَكِتَابُكُمُ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَى نَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم أَحْدَثُ الأَخْبَارِ بِاللَّهِ، تَقْرَءُونَهُ لَمْ يُشَبْ، وَقَدْ حَدَّثَكُمُ اللَّهُ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ بَدَّلُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ وَغَيَّرُوا بِأَيْدِيهِمُ الْكِتَابَ فَقَالُوا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ، لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً
হে মুসলিম সমাজ! কী করে তোমরা আহলে কিতাবদের নিকট জিজ্ঞেস করো? অথচ আল্লাহ তাঁর নবির উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তা আল্লাহ-র সম্পর্কিত নবতর তথ্য সম্বলিত, যা তোমরা তিলাওয়াত করছো এবং যার মধ্যে মিথ্যার কোন সংমিশ্রণ নেই। তদুপরি আল্লাহ তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, আহলে কিতাবরা আল্লাহ যা লিখে দিয়েছিলেন, তা পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং নিজ হাতে সেই কিতাবের বিকৃতি সাধন করে তা দিয়ে তুচ্ছ মূল্যের উদ্দেশে প্রচার করেছে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ২৬৮৫

সুতরাং প্রমাণ হলো, মহাভারত, গীতা, বেদ, পুরান, ত্রিপিটক, বাইবেল তথা বর্তমানের তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল এ সব মানবরচিত ধর্মগ্রন্থ। এগুলোকে আল্লাহর কিতাব বলা মারাত্মক অন্যায়।

এসব ধর্মগ্রন্থকে যারা আল্লাহর কিতাব বলে তারা মিথ্যাবাদী:
মানবরচিত এসব ধর্মগ্রন্থগুলোকে যারা আল্লাহর কিতাব বলে দাবি করে মহান রব তাদের ব্যাপারে বলেন,
وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُم بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ اللّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ اللّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
তাদেরই মধ্যে একদল লোক এমন আছে, যারা কিতাব (তাওরাত) পড়ার সময় নিজেদের জিহ্বাকে পেঁচায়, যাতে তোমরা (তাদের পেঁচিয়ে তৈরি করা) সে কথাকে কিতাবের অংশ মনে করো, অথচ তা কিতাবের অংশ নয় এবং তারা বলে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ, অথচ তা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ নয় এবং (এভাবে) তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে। -সুরা আলে ইমরান : ৭৮

فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ ٱلْكِتَٰبَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشْتَرُوا۟ بِهِۦ ثَمَنًا قَلِيلًاۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ
সুতরাং ধ্বংস সেই সকল লোকের জন্য, যারা নিজ হাতে কিতাব লেখে, তারপর (মানুষকে) বলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে, যাতে তার মাধ্যমে কিঞ্চিত আয়-রোজগার করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা রচনা করেছে সে কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস এবং তারা যা উপার্জন করেছে, সে কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস। -সুরা বাকারা : ৭৯

প্রিয় পাঠক, আশা করি উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, পৃথিবিতে কুরআন শরীফ ছাড়া অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলো সবই মানবরচিত। এগুলোকে আল্লাহ-র কিতাব বলে দাবি করা নিতান্তই কুফরী মতবাদ।

মুশরিকদের ধর্মগ্রন্থ কী আল্লাহ-র প্রেরিত:
আমরা জানি, বেদ, গীতা, ত্রিপিটক, রামায়ন ইত্যাদী ধর্মগ্রন্থগুলো আল্লাহ-র কিতাব নয়। কারণ এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’য় কোনো প্রমাণ নেই, এমনকি এই ধর্মগ্রন্থগুলোর অনুসারীরাও এগুলোকে আল্লাহর কিতাব বলে দাবি করেনি।

মহাভারত, গীতা, বেদ, পুরান এগুলো আল্লাহর কিতাব নয়, বরং কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস হলেন মহাভারত, গীতা, বেদ এবং পুরাণের লেখক। -উইকিপিডিয়া

ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থের নাম। বুদ্বের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। -উইকিপিডিয়া

সুতরাং প্রমাণ হলো এগুলো আল্লাহ-র কিতাব নয়। বরং মানবরচিত।

বেদ কী নূহ আ. ও মুসা আ. মুহাম্মাদ সা.-এর উপর অবতীর্ণ?
বেদ হলো হিন্দুদের একটি ধর্মগ্রন্থ। যেটা মানবরচিত হওয়ার ব্যাপারে খোদ হিন্দুরাই স্বীকারোক্তি দিয়ে থাকে।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, বেদ যাদের উপর নাযিল হয়েছিলো, তাদের মধ্যে অন্যতম হলে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সা.। তারা লিখেছে,
বিভিন্ন বেদ  যাদের ওপর অবতীর্ণ হোয়েছিলো, মুসা (আঃ) ও মোহাম্মদ (দঃ)। -এ ইসলাম ইসলামই নয়, পৃ. ১৩৯-১৪০

অনেক গবেষক মনে করেন বৈবস্বতঃ মনুই হচ্ছেন বৈদিক ধর্মের মূল প্রবর্তক, যাঁকে কোর’আনে ও বাইবেলে বলা হয়েছে নূহ (আ.), ভবিষ্যপুরাণে বলা হয়েছে রাজা ন্যূহ। তাঁর উপরেই নাজিল হয় বেদের মূল অংশ। -সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ৪

ইসলাম কী বলে?
এ ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই যে মুসা আ.-এর উপর আল্লাহ-র নাযিলকৃত গ্রন্থের নাম তাওরাত। আর আমাদের নবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম পবিত্র কুরআন। মহান রব বলেন,
وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ
আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়েছি, যা বারবার পড়া হয় এবং দিয়েছি মর্যাদাপূর্ণ কুরআন। -সুরা হিজর : ৮৭

পবিত্র কুরআনে আরও এসেছে, আল্লাহ পাক তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. কে বলতে আদেশ করেছেন, বলুন-
وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآنُ لأُنذِرَكُم بِهِ
আমার প্রতি ওহিরূপে এই কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যাতে এর মাধ্যমে আমি তোমাদেরকেও সতর্ক করি। -সুরা আনআম : ১৯

সুতরাং প্রমাণ হলো, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম পবিত্র কুরআন, বেদ নয়। আর তাছাড়া বেদ কোনক্রমেই খোদা প্রদত্ত হতে পারে না। কারণ হিন্দু ধর্ম আসমানী দ্বীন হওয়ার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ কুরআন-হাদিসে নেই। তাছাড়া হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদ সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক-২০১৩ (৮ম শ্রেণী) এর হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ১০নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘বেদ আমাদের আদি ও প্রধান ধর্ম গ্রন্থ। বেদ চিরন্তন ও শাশ্বত। বেদ মানে জ্ঞান। প্রাচীন ঋষিদের ধ্যানে পাওয়া পবিত্র জ্ঞান’। ৮ম শ্রেণীর বইয়ে বলা হয়েছ, ‘বেদ ঋষিদের ধ্যানলব্ধ পবিত্র জ্ঞান। ধ্যানের মাধ্যমে ঋষিগণ সেই সত্য দর্শন করে তাকে ভাবের আবেগে প্রকাশ করেছেন। এজন্যই বলা হয় বেদ সৃষ্ট নয়, দৃষ্ট । বেদ কেউ সৃষ্টি করেননি, উপলব্ধি করেছেন মাত্র’। -হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা : পৃ. ১০

বেদ সম্পর্কে আরও বলা আছে,
বেদ ব্রহ্মার নিশ্বাস হতে নিসৃত। -পৌরাণিক অভিধান : পৃ. ৩৬৯

বেদ যাদের ধর্মীয়গ্রন্থ তারা নিজেরাই যেটাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বলে দাবি করেনি, সেখানে জনাব পন্নী এগুলোকে আল্লাহর নাযিলকৃত বলে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি ‘বেদ’-এর কিছু অংশ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসা আ.-এর এর উপর নাযিল করা হয়েছে বলেও মিথ্যাচার। এরচে বড় মিথ্যাচার আর কী হতে পারে? এরপরও কী হেযবুত তওহীদকে মুসলমান হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়?

কুরআন ছাড়াও অন্য গ্রন্থ দিয়েও বিচার করা যায়?
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনকে পূর্ণাঙ্গতা প্রদান করেছেন। কুরআন দ্বারাই ইসলামকে সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণতা দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا.
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চির দিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। (সুতরাং এ দীনের বিধানাবলী পরিপূর্ণভাবে পালন করো)। -সুরা মায়িদা : ৩

এ আয়াত পরিষ্কার প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলা ইসলাম ও কুরআনকে পূর্ণতা প্রদান করেছেন। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করার জন্য মুসলমানদের অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থের প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন নেই।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা তাদের দেশেরপত্র পত্রিকার সাপ্তাহিক সংকলনে লিখেছে,
কেবল কোর’আন দিয়েই যে ফয়সালা দিতে হবে তা আল্লাহ বলেন নি, তিনি বলেছেন ‘আনযালাল্লাহু’ অর্থাৎ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান। বেদ, তওরাত, জিন্দাভেস্তা, ত্রিপিটক, যবুর, ইঞ্জিলও আল্লাহর অবতীর্ণ, সুতরাং সেগুলি দিয়ে ফয়সালা দিলেও সেটা এসলামেরই ফয়সালা, সেটাই সমাজে শান্তি আনবে। -দৈনিক দেশের পত্র, সাপ্তাহিক সংকলন : সংখ্যা : ২৪ পৃ. ২৫

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআন ছাড়া অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ দিয়ে বিচার কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ لِكُلِّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ.
এবং (হে রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমি তোমার প্রতিও সত্যসম্বলিত কিতাব নাযিল করেছি, তার পূর্বের কিতাবসমূহের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে। সুতরাং তাদের মধ্যে সেই বিধান অনুসারেই বিচার করো, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন। আর তোমার নিকট যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক (উম্মত)-এর জন্য আমি এক (পৃথক) শরীয়ত ও পথ নির্ধারণ করেছি। আল্লাহ চাইলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত বানিয়ে দিতেন। কিন্তু (পৃথক শরীয়ত এজন্য দিয়েছেন) যাতে তিনি তোমাদেরকে যা-কিছু দিয়েছেন, তা দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন। সুতরাং তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করো। তোমাদের সকলকে আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে। অতঃপর যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছিলে সে সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন। -সুরা মায়িদা : ৪৮

উক্ত আয়াত থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম ধর্মের মাধ্যমে যেহেতু পূর্ববর্তী সকল ধর্ম রহিত হয়ে গেছে, তাই সেসব ধর্মগ্রন্থকে বর্তমানের জন্যও কার্যকারী মনে করা ও কুরআন বাদ দিয়ে সেসব গ্রন্থ দ্বারা ফায়সালা করতে পারাকে বৈধতা প্রদান করা ইসলাম ও কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও পূর্ণাঙ্গতাকে অস্বীকার করার নামান্তর। উল্লিখিত আয়াতে কুরআনকে পূর্ববর্তী সকল কিতাবের উপর কর্তৃত্বকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় ইবনে জুরাইয রহ. বলেন:
القرآن أمين على الكتب المتقدمة، فما وافقه منها فهو حق، وما خالفه منها فهو باطل.
কুরআন পূর্ববর্তী সমস্ত গ্রন্থের সত্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদানকারী পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে যা কুরআনের সাথে মিলবে, একমাত্র সেটাই সত্য। আর যা কুরআনের বিপরীত হবে, তা বাতিল বলে বিবেচিত হবে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ১৩০

সৌদি আরবের বরেণ্য ইসলামিক স্কলার, বর্তমান বিশ্বের নন্দিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব, শায়খ উসাইমিন রহ. বলেন,
وجميع الكتب السابقة منسوخة بالقرآن العظيم قال الله تعالى : وأنزلنا إليك الكتاب بالحق مصدقاً لما بين يديه من الكتاب ومهيمناً عليه أي حاكماً عليه وعلى هذا فلا يجوز العمل بأي حكم من أحكام الكتب السابقة.
পূর্ববর্তী সকল কিতাব মহাপবিত্র কুরআনের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে। যা তার পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও সেগুলির উপর তদারকী তথা কর্তৃত্বকারী’। এ ভিত্তিতে পূর্ববর্তী কিতাবের কোন বিধানের উপর আমল করা জায়েয নয়। -শায়খ উসাইমিন রচিত শরহু সালাসাতিল উসূল : পৃ. ৬৫

যেখানে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের কোন বিধানের উপর আমল করা জায়েয নেই। সেখানে হেযবুত তওহীদ কর্তৃক মূর্তি পূজারীদের বেদ আর পারস্যের অগ্নি পুজকদের জিন্দাবেস্তা দ্বারা প্রদানকৃত ফয়সালাকে ইসলামের ফয়সালা বলে আখ্যায়িত করা, আল্লাহর বিধানের সাথে তামাসা ছাড়া আর কী হতে পারে?

তাছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থগুলিকে অধ্যয়ন ও সংরক্ষণ করাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-পছন্দ করতেন না। অথচ ‘কোনরূপ দলিল-প্রমাণ ছাড়া আসমানী কিতাব হিশাবে প্রমাণিত নয়’ এমন সব ধর্ম গ্রন্থকেও হেযবুত তওহীদ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জনাব পন্নী হিন্দু, বৌদ্ধ্যসহ অন্যান্য ধর্মকে সত্য ধর্ম বলে বিশ্বাস করার পাশাপাশি তাদের ধর্মগ্রন্থ ও অবতারদেরকে আল্লাহ-র পক্ষ হতে প্রেরিত হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান করতো। এমনকি জনাব পন্নী পৌত্তলিকদের হিন্দু ধর্মকে কুরআনে বর্ণিত দ্বীনুল কাইয়্যেমাহ, শ্বাশত চিরন্তন ধর্ম আর প্রকৃত তাওহীদ বলে আখ্যায়িত করেছেন।এসবের পর্যালোচনা সামনে উল্লেখ করা হবে। ইনশাআল্লাহ।

একটি প্রশ্ন :
হেযবুত তওহীদ পূর্ববর্তী সকল ধর্মগ্রন্থ দ্বারা ফায়সালা করাকে সিদ্ধ প্রমাণ করার জন্য কুরআনের একটি আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করার অপচেষ্টা করেছে। তাঁরা লিখেছে, আল্লাহ বলেছে ‘আনযালাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান । এ বলে তাঁরা বুঝাতে চাচ্ছে এ সংক্রান্ত আয়াতগুলিতে তো আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে কুরআন দ্বারাই ফায়সালা করতে বলেননি। বরং আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা ফায়সালা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর সকল ধর্মগ্রন্থই আল্লাহ-র অবতীর্ণ।

জবাব:
এভাবে দলিল উত্থাপন মূলত তাদের সীমাহীন মূর্খতাকেই প্রমাণ করে। তাদের এ দলিলটি দু’টি কারণে সঠিক নয়।
এক. আল্লাহর নাযিলকৃত পূর্বের বিধানগুলো অবিকৃত অবস্থায় বর্তমানে অবশিষ্ট নেই। সাথে সাথে এসব ধর্মগ্রন্থগুলো কুরআন দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে। বিকৃত ও রহিত কিতাবকে আল্লাহ-র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বলা কখনই যুক্তিসংঙ্গত হতে পারে না।

দুই. উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ‘বিমা আনযালাল্লাহ’ বলে তাঁর নাযিলকৃত বিধান দ্বারা ফয়সালা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ যেহেতু হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রদান করা হয়েছে, তাই এখানে ‘বিমা আনযালাল্লাহ’ দ্বারা তাঁর উপর অবতীর্ণ বিধান তথা কুরআনই উদ্দেশ্য হবে। আর এ বিষয়টিই কুরআন-হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা বলিষ্ঠভাবে প্রমাণিত। ইমাম ইবনে কাসীর রহ. ‘বিমা আনযালাল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন:
بِمَا أَنزَلَ اللهُ إليك في هذا الكتاب العظيم.
আল্লাহ তাআলা আপনার উপর যে মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, তা দ্বারা আপনি ফায়সালা করুন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৩ পৃ. ১২৮

বাস্তবতার আলোকে:
এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ না হওয়ার প্রমাণ জনাব পন্নী প্রচলিত সকল প্রসিদ্ধ ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলিকে আল্লাহ-র পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার দাবি করার পাশাপাশি বর্তমানেও এসবের সত্যতা ও সঠিকতার সনদ প্রদান করেছেন। অথচ বাস্তবতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসবের অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থ মানব রচিত। আল্লাহর প্রদানকৃত নয়। যেমন বৌদ্ধদের ত্রিপিটক। বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বাসীরা আল্লাহ-র উপর ঈমান আনা তো দূরের কথা, তারা স্রষ্টার অস্তিত্বেও বিশ্বাস করে না। তাদের ধারণা মতেও এটা স্রষ্টার পক্ষথেকে অবতীর্ণ কোন বাণী নয়। যেখানে তারা নিজেরাই এটাকে আল্লাহ-র পক্ষ থেকে হওয়ার দাবি করে না। সেখানে গৌতম বুদ্ধের জীবনি ও উক্তিসমূহের সংকলনকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বলে ধারণা করা নিতান্ত হাস্যকর ও জঘন্য কুফরি ছাড়া আর কী বা হতে পারে?

আর তাওরাত ইঞ্জিলের মতো যে সব গ্রন্থ আসমান থেকে অবতীর্ণ হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, সেগুলো বর্তমানে অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান নেই । এসবের মাঝে বিকৃতি আর পরিবর্তন এত বেশি সাধিত হয়েছে যে, বর্তমানে এসবকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ও আল্লাহ তা’আলার প্রদানকৃত বিধান বলে আখ্যায়িত করার অবকাশ নেই। যা ইতিপূর্বে প্রমাণসহ আলোচনা করে আসছি। এমনকি জনাব পন্নী নিজেও স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে,
ভারত অঞ্চলে আল্লাহ জীবন-বিধান দিয়ে যে সকল নবী রসুল (আঃ) পাঠিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস কোরি সেগুলি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে, কিন্তু কাল পরিক্রমায় সেগুলোর ব্যবহার ও বইগুলি বিকৃত কোরে ফেলা হোয়েছে। একই কাজ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বেলাতেও করা হোয়েছে। এজন্য সকল প্রাচীন, আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল কোর’আন নাযেল কোরলেন। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৬

অতীতের সবগুলি ধর্মই যেমন কাল পরিক্রমায় বিকৃত হোয়ে গেছে। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৩

বলা বাহুল্য পূর্ববর্তী কেতাবগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৬

জনাব পন্নী একদিকে অন্য সকল ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত বলে দাবি করছে, অপরদিকে সে গুলোকে আল্লাহ-র বাণী বলে আখ্যায়িত করে সেগুলো দ্বারা বিচার-ফায়সালার অনুমতিও দিচ্ছে! কী হাস্যকর না ব্যাপরটা?

Check Also

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.