Home > সমসাময়িক ফিৎনা > কাবলাল জুম’আ বা জুম’আর আগের চার রাকাত সুন্নাত:

কাবলাল জুম’আ বা জুম’আর আগের চার রাকাত সুন্নাত:

সম্প্রতিকালে কিছু শায়খরা নতুন একটি বিষয় আবিস্কার করে সমাজে ফিতনা ছড়াচ্ছেন। সেটা হলো, জুম’আর আগে প্রচলিত কাবলাল জুম’আর চার রাকাত সুন্নাত নিয়ে। তাদের দাবি হলো, এ প্রচলিত এ সুন্নাত নামাজের কোনো ভিত্তি নেই। তাদের দাবি হলো, যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যাবে, কিন্তু নির্দিষ্ট করে চার রাকাত কাবলাল জুমআ বলে কোনো নামাজ নেই, এমনকি তারা এই চার রাকাত নামাজকে ‘ফালতু কাজ’ বলেও বক্তব্য দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ। চলুন এ বিষয়ে একটু পর্যালোচনা দেখা যাক।

প্রথমত বিষয় হলো, জুম’আর আগে কোনো নামাজ আছে কি না, সেটার দলীল দেখা প্রয়োজন। চলুন এ সম্পর্কে বুখারী শরীফের একটি হাদিস দেখা যাক। হহযরত সালমান ফারসী রা.. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لا يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَومَ الجُمُعَةِ، ويَتَطَهَّرُ ما اسْتَطاعَ مِن طُهْرٍ، ويَدَّهِنُ مِن دُهْنِهِ، أوْ يَمَسُّ مِن طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فلا يُفَرِّقُ بيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي ما كُتِبَ له، ثُمَّ يُنْصِتُ إذا تَكَلَّمَ الإمامُ، إلّا غُفِرَ له ما بيْنَهُ وبيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرى

অর্থাৎ কোনো পুরুষ যখন জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে বা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে, এরপর (জুমার জন্য) বের হয় এবং (বসার জন্য) দুই জনকে আলাদা করে না, এরপর তাওফীক মতো নামায পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলে তখন চুপ থাকে, তাহলে অন্য জুমা পর্যন্ত তার (গুনাহ) মাফ করা হয়।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদীস : ৮৮৩ মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩৭১০ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস: ২৭৭৬

হযরত সা’লাবা ইবনে আবু মালেক আল-কুরাযী রা. বলেন,

كنا نصلي يوم الجمعة حتي يخرج عمر

অর্থাৎ আমরা জুম’আর দিন ওমর রা. বের হওয়ার আগে নামাজ পড়তাম।
সূত্র: ফাতহুল বার খ. ৪ পৃ. ২২১ আত তামহীদ খ. ৪ পৃ. ২৬

সুতরাং বুঝা গেলো, জুম’আর পূর্বে নামাজ আদায় করা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

এ সম্পর্কে আরও কয়েকটি সহিহ হাদিস বুখারী ও মুসলিম শরীফে রয়েছে। সুতরাং বুঝা গেলো, জুম’আর আগে নামাজের দলীল অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু যেহেতু এ হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো রাকাতের কথা বলা হয়নি, এজন্য বর্তমানের কিছু কিছু তথাকথিত শায়খরা এ নামাজটাকে নফল হিসাবে উল্লেখ্য করতে চান। তাদের দাবি হলো, যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যাবে, কিন্তু নির্দিষ্ট করে চার রাকাত কাবলাল জুমআ বলে কোনো নামাজ নেই।

প্রিয় পাঠক, ‘জুম’আর আগে যত ইচ্ছা সুন্নাত পড়া যায়’ এটা নিয়ে যেহেতু এ শায়খরাও একমত, সেহেতু এটার পক্ষে আলোচনা না করে যে বিষয়টিকে তারা ‘ফালতু কাজ’ বলে বক্তব্য,দিচ্ছেন, সে বিষয়ে চলুন দলীল দেখা যাক।

১. নবীজির সা. আমল:

হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي قبل الجمعة أربعاً، وبعدها أربعاً، يجعل التسليم في آخرهن ركعة

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম’আর পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামায এক সালামে আদায় করতেন।
সূত্র: মু’জামে আওসাত (তাবরানী), হাদিস: ১৬৪০

হাদিসটির মান:

উক্ত হাদিসের সনদ নিয়ে ইমাম ইরাকী রহ. বলেন,

اسناده جيد

অর্থাৎ হাদিসটির সনদ হাসান।
সূত্র: তরহুত তাসরীব খ. ৩ পৃ. ৪২

এ ব্যাপার মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেন,
وابتدع بعضهم فقال الصلاة قبلها بدعة كيف وقد جاء بإسناد جيد كما قال الحافظ العراقي أنه عليه السلام كان يصلي قبلها أربعا

অর্থাৎ আর কেউ কেউ জুম’আর আগের চার রাকাত নামাজকে বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করছেন। অথচ এ ব্যাপারে হাসান সনদে হাদিস এসেছে। যেমনটা হাফেজ ইরাকি রহ. বলেছেন যে, নবীজি সা. জুম’আর আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করেছেন।
সূত্র: মিরকাত খ. ৩ পৃ. ৮৯৩

নোট: উক্ত হাদিসের সনদে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস সাহমী রহ. নামক জনৈক রাবীকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন তোলা হয় যে, তিনি অগ্রহনযোগ্য রাবী। অথচ তিনিও নির্ভরযোগ্য রাবী। তাঁর ব্যাপারে ইমাম ইবনে আদী রহ. বলেন,

عندي لا بأس به

অর্থাৎ আমার কাছে তাঁর বর্ণনা গ্রহণে কোনো অসুবিধা নেই।
সূত্র: ই’লাউস সুনান খ. ৭ পৃ. ১৩

খ.
ইবনে হিব্বান রহ. তাঁকে ছিক্বা তথা বিশ্বস্ত রাবী হিসাবে উল্লেখ্য করেছেন।
সূত্র: আল-লিসান খ. ৫ পৃ. ২৪৫

সুতরাং প্রমাণ হলো, নবীজি সা. নিজেই কাবলাল জুম’আ চার রাকাত নামাজ আদায় করেছেন।

সাহাবায়ে কেরামের আমল:

১. উম্মুল মুমিনিন হযরত সাফিয়্যা রা. এর আমল:

عن صفية بنت حيي أم المؤمنين أنها صلت الجمعة مع الإمام فصلت قبل خروجه أربعا

অর্থাৎ হযরত সাফিয়্যা রা. মর্মে বর্ণিত যে, তিনি একদিন ইমামের সাথে জুম’আর নামাজ আদায় করলেন। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩২৯

ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. উক্ত হাদিসকে দলীল হিসাবে উল্লেখ্য করেছেন আর তিনি এ বর্ণনাটি নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি। সুতরাং এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি বর্ণনাটি গ্রহনযোগ্য হওয়ার পক্ষেই ছিলেন। অন্যথায় তিনি চুপ থাকতেন না এবং দলীল হিসাবে আনতেন না।

২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর আমল:

জাবালা ইবনে সুহাইম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রা. এর আমল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الجُمُعَةِ أَرْبَعًا لا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِسَلامٍ ثُمَّ بَعْدَ الجُمُعَةِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَرْبَعًا

অর্থাৎ তিনি (ইবনে ওমর রা.) জুমার পূর্বে চার রাকাত নামায এক সালামে আদায় করেছেন। এরপর জুমার পরে দুই রাকাত তারপর আরো চার রাকাত আদায় করেছেন৷
সূত্র: শরহু মা’আনিল আসার, তাহাবী পৃ: ১৬৪/১৬৫

হাদিসটির মান:

১. উক্ত বর্ণনার সনদ সম্পর্কে শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত রহ. বলেন,

سنده صحيح

অর্থাৎ এ বর্ণনার সনদ সহিহ।
সূত্র: তাখরীজে সুনানে আবু দাউদ খ. ৩ পৃ. ৩৪২

২. শুধু তাই নয়, বরং ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. উক্ত হাদিসকে দলীল হিসাবে উল্লেখ্য করেছেন।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩২৯

৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর আমল:

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন,

أن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا لا يفصل بينهن بتسليم

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি জুম’আর আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামায এক সালামে আদায় করেছেন৷
সূত্র: শরহু মা’আনিল আছার, হাদিস: ১৯৭০ জামে তিরমিযী, হাদিস: ৫২৩

হাদিসটির মান:

ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. উক্ত হাদিসকে দলীল হিসাবে উল্লেখ্য করেছেন।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩২৯

আবু আব্দুর রহমান সূলামী থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন:

كان عبد الله يأمرنا أن نصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا

অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস: ৫৫২৫ ই’লাউস সুনান: ১৭৬২৷

হাদিসটির মান:

শুয়াইব আল আরনাউত রহ. বলেন,

إسناده صحيح

অর্থাৎ বর্ণনাটির সনদ সহিহ।
সূত্র: তাখরীজে যাদুল মা’আদ খ. ১ পৃ. ৪২২

৪. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর আমল:

হারব রহ. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর আমল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

عن ابن عباس أنه كان يصلي يوم الجمعة في بيته أربع ركعات، ثم يأتي المسجد فلا يصلي قبلها ولا بعدها.

অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. জুম’আর দিন ঘরে চার রাকাত নামাজ পড়ে মসজিদে যেতেন, এরপর জুমার আগে পরে আর নামাজ পড়তেন না।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩৩০

উক্ত বর্ণনাটি কাবলাল জুম’আর পক্ষের দলীল হিসাবে এনে ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন,

وهذا يدل على أن سنة الجمعة عند ابن عباس قبلها لا بعدها

অর্থাৎ এ বর্ণনাটি প্রমাণ করে যে ইবনে আব্বাসের রা. কাছে জুম’আর আগে নামাজ পড়া সুন্নাত পরেরটা নয়।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩৩০

প্রিয় পাঠক, উক্ত আছার থেকে আমরা জানতে পারলাম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসও রা. জুম’আর পূর্বে ৪ রাকাত নামাজ পড়তেন।

৫. অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের রা. আমল:

খাইরুল কুরূনে সাহাবা-তাবেয়ীনের সাধারণ আমল এটিই ছিল।

১. তাবেয়ী আমর ইবনে সায়ীদ ইবনুল আস রহ. বলেন,

كنت أرى أصحاب رسول الله ﷺ فإذا زالت الشمس يوم الجمعة قاموا فصلوا أربعا

অর্থাৎ আমি আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সা. এর সাহাবীগণকে দেখতাম, জুমআ’র দিন সূর্য যখন ঢলে যেত তখন তাঁরা দাঁড়িয়ে যেতেন এবং চার রাকাত পড়তেন।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৪ পৃ. ২২১ আল-মুগনী খ. ২ পৃ. ৫৩৫ তরহুত তাসরীব খ. ৩ পৃ. ৪৪

২. বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন,

كانوا يصلون قبلها أربعا

অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৫৪০৫

আরেকটি রেওয়াতে আছে,

كانوا يحبُّونَ أن يُصلُّوا قبلَ الجمعةِ أربعًا

অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম রা. জুম’আর পূর্বে চার রাকাত নামাজ পড়া পছন্দ করতেন।

সূত্র: সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩২৯

হাদিসটির মান:

ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. ইবনে আবী দুনিয়া এর সূত্রে বলেন,

إسناده صحيح

অর্থাৎ এ বর্ণনাটির সনদ সহিহ।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩২৯

তাবেয়ীনদের আমল:

আবু বকর রহ. বলেন,

كنا نكون مع حبيب بن ابي ثابت فيقول ازالت الشمس بعد او يلتفت فينظر فاذا زالت الشمس صلي الاربع التي قبل الجمعة

অর্থাৎ আমরা হাবিব ইবনে আবু সাবিত রহ. এর সাথে থাকতাম। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সূর্য কি ঢলে গেছে অথবা তিনি এদিক-সেদিক লক্ষ্য করে যখন দেখতেন যে, সূর্য ঢলে গেছে, তখন তিনি চার রাকাত নামাজ পড়তেন। আর এটা ছিল জুমার পূর্বে।
সূত্র: তরহুত তাসরীব খ. ৩ পৃ. ৪৪

আরও যে সকল তাবেয়ীগণ কাবলাল জুম’আকে মুস্তাহাব বলেছেন।

ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন,

وممن ذهب الي استحباب اربع ركعات قبل الجمعة حبيب بن ابي ثابت والنخعي والثوري وابن المبارك

অর্থাৎ হযরত হাবিব ইবনে আবু সাবিত, ইবরাহীম নাখয়ী, সুফিয়ান সাওরী, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. জুম’আর পূর্বে চার রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ. ৮ পৃ. ৩২৯

ইমামদের অভিমত:

অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম কাবলাল জুম’আর ৪ রাকাত নামাজকে সুন্নাত বলে দাবি করেছেন:

وأكثر العلماء على أنها سنة راتبة، منهم: الأوزاعي والثوري وأبو حنيفة وأصحابه، وهو ظاهر كلام أحمد، وقد ذكره القاضي أبو يعلى في ” شرح المذهب ” وابن عقيل، وهو الصحيح عند أصحاب الشافعي

অর্থাৎ ইমামরা এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে,জুমার পূর্ববর্তি সুন্নাত জোহরের পূর্বের চার রাকাতের মত মুয়াক্কাদা, নাকি আছরের আগের সুন্নাতের মতো মুস্তাহাব? অধিকাংশ ইমামদের মত হলো, জুমআর পূর্বের সুন্নাত হলো, ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’। এটি ইমাম আওযায়ী, সুফিয়ান ছাওরি, ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমদ রহ.. এর মতও হলো এমন। কাজী আবু ইয়ালা “শারহুল মুহাযযাব” এ এবং ইবনূ আক্বিল বলেছেন, জুমআর পূর্বের সুন্নাত হলো, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর এ মতটিই ইমাম শাফেয়ী রহ. শিষ্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত।
সূত্র: ফাতহুল বারী (ইবনে রজব হাম্বলী) খ. ৮ পৃ. ৩৩৩

যাঁরা কাবলাল জুম’আর অনুমতি দিয়েছেন:

সাধারনত সূর্য মাথার উপর থাকাকালিন সময়ে যেকোনো নামাজ পড়া মাকরুহ। এ হিসাবে কিছু কিছু ইমামগণ কাবলাল জুম’আ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সূর্য ঢলে যাওয়ার পর-

رخص فيه الحسن وطاوس والاوزاعي وسعيد بن عبد العزيز والشافعي واسحاق في يوم الجمعة

অর্থাৎ জুম’আর দিন এ নামাজ পড়ার বৈধতা দিয়েছেন, হাসান বসরী, তাউস, আওযায়ী, সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয, শাফেয়ী, ইসহাক রহ. প্রমুখ।
সূত্র: আল-মুগনী খ. ২ পৃ. ৫৩৬

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, কাবলাল জুম’আ বা জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামাজ পড়া খায়রুল কুরুনে তথা নবীজি সা. এর আমল, সাহাবায়ে কেরামের রা. আমল, তাবেয়ীগণের আমল থেকে প্রমাণিত। এজন্য ফুকাহায়ে কেরামও এ নামাজটিকে কেউ বৈধ, কেউ মুস্তাহাব আবার কেউ সুন্নাত বলে আখ্যায়ীত করেছেন। যদিও কেউ কেউ এ নামাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কিন্তু তারা সংখ্যায় নগন্য।

কিন্তু আমার কথা হলো, যে নামাজ খোদ নবীজি সা. পড়লেন, সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণও পড়লেন সে নামাজটিকে নিয়ে খুব তাচ্ছিল্যতার সাথে ‘ফালতু কাজ’ বলে বক্তব্য দেয়া কতবড় ধৃষ্টতা একটু ভেবে দেখেছেন? আল্লাহ তা’আলা এ সকল ফিৎনাবাজদের থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন। আমীন!

 

###

Check Also

নামাজ জান্নাতের চাবি নয়?

বর্তমান সময়ে অনেক আলোচক দাবি করে বসেছেন, নামাজ জান্নাতের চাবি এ বিষয়ক হাদিসটি জাল। নাউযুবিল্লাহ। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.