ইসলাম একটি সত্য, অবিকৃত ও আল্লাহ প্রেরিত সকল ধর্মের শেষ সংস্করণ। নবিজি মুহাম্মাদ সাঃ-এর আগমনের পর থেকে অদ্যাবধি ইসলাম তার নিজস্ব স্বকীয়তা দিয়ে আমাদের মাঝে টিকে আছে। অজস্র ইসলাম বিদ্বেষী সংগঠণগুলো বিভিন্নভাবে ইসলামকে নস্যাৎ করার হাজারও চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছে। আর হতেও থাকবে। তাই তারা তাদের কৌশলের রূপরেখা একটু চেঞ্জ করেছে। সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে না গিয়ে বরং ইসলামিক নামধারণ করেই ইসলামকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দিতে চাচ্ছে। আর সে নিকৃষ্ট ও জঘন্য কাজটাই করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। চলুন ইসলাম সম্পর্কে তারা কী বলেছে, তার সারসংক্ষেপ আগে দেখে নেওয়া যাক। তাদের দাবি হলো-
১. আসল ইসলাম হারিয়েছে গেছে ১৩০০ বছর আগে।
২. ইসলামের ভিত্তি পাল্টে গেছে।
৩. প্রচলিত ইসলাম আসল ইসলাম নয়, বরং স্থবির, অন্তর্মুখী, মরা, পচা ও দুর্গন্ধময়, গলিত লাশ, কঙ্কাল, ভুল, বিকৃত ও আল্লাহ রাসুল সাঃ-এর আনীত ইসলামের বিপরীত ধর্ম।
৪. প্রচলিত ইসলামকে আসল ইসলাম মনে করা ধোকা।
৫. আলেমরাই ইসলামকে বিকৃত করেছে।
৬. প্রচলিত ইসলাম ইহুদী, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, জৈন ধর্মের মতোই একটি ধর্ম।
৭. প্রচলিত ইসলাম খৃষ্টানদের বানানো ধর্ম।
৮. ইসলাম অগ্নীপূজকদের রঙ-এ রঙিন।
৯. ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পন নয়, বরং শান্তি। এই শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের মূল ও আসল কাজ।
১০. ইসলাম সমাজে শান্তি দেবে না, বরং সুখস্বপ্নে বিভোর করে প্রতারিত করবে।
১১. ইসলাম দিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার চিন্তাও হাস্যকর।
১২. ইসলাম দিয়ে অপরাধহীন, অবিচারহীন পবিত্র সমাজ গঠন হবে না।
১৩. ইসলাম একটি নারকীয় সিস্টেম।
১৪. ইসলাম উগ্রপন্থী ও জঙ্গীদের ধর্ম।
১৫. যুক্তি দিয়ে ইসলাম মানতে হবে।
১৬. ইসলাম কোনোভাবেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়।
১৭. ইসলামকে যুগের আলোকে সংস্কার করতে হবে।
১৮. ইসলাম গ্রহণ করতে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ বাধ্যতামূলক করেন নি।
১৯. কারো ধর্ম পরিবর্তন করানো ইসলামের কাজ না।
২০. ইসলামের দিকে ডাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
২১. ইসলাম আমাদের মিশন নয়।
২২. সব ধর্ম পালন করার আহ্বান।
২৩. যেকোনো ধর্ম পালন করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে।
২৪. ইসলাম মানলে জাহান্নামে যেতে হবে।
২৫. হেযবুত তওহীদ আসল ইসলাম।
২৬. ইসলাম পুনর্জিবীত করবে হেযবুত তওহীদ।
২৭. ইসলাম পরিত্যাগ করে হেযবুত তওহীদ গ্রহণ করতে হবে।
চলুন এবার প্রমাণসহ আলোচনা করা যাক।
ইসলাম কী তের’শ বছর আগেই হারিয়ে গেছে?
প্রিয় পাঠক, আমি আগাগোড়াই বলে আসছি, হেযবুত তওহীদ একটি ভ্রান্ত ও কুফরী দল। তাদের এ ভ্রান্তির পেছনে ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের মিশন বাস্তবায়ণ করে যাচ্ছে। মূলত ইসলাম বিদ্বেষীদের মিশন বাস্তবায়ণে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা ইসলামকে বিকৃত প্রমাণ করতে একটি হাদিসের অপব্যাখ্যা করেছে। চলুন তারা কী বলে দেখা যাক।
হেযবুত তাওহীদ কী বলে?
তারা বুঝাতে চায়, ইসলাম হারিয়ে গেছে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইহধাম ত্যাগের ৬০/৭০ বছর পরপরই। এ ব্যাপারে তারা দলীল হিসাবে একটা হাদিস পেশ করে থাকে। তারা লিখেছেন,
মহানবী ভবিষ্যদ্বাণী কোরেছেন –আমার উম্মাহর আয়ূ ৬০/৭০ বছর (হাদিস –আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে তিরমিযি ও ইবনে মাযাহ, মেশকাত) অর্থাৎ তাঁর উম্মাহ পৃথিবীতে থাকবে ৬০/৭০ বছর, তারপর যেটা হবে সেটা নামে মাত্র উম্মতে মোহাম্মদী, সেটা প্রকৃত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদী নয়। [এসলামের প্রকৃত রূপরেখা : পৃ. ৪৯]
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, নবিজি সাঃ তিরমিযি শরীফের হাদিসে বলেছেন, আমার উম্মতের আয়ূ হবে ৬০/৭০ বছর। এজন্য তারা বলে যেহেতু উম্মত টিকে ছিলো ৬০/৭০ বছর এরপর আর কোনো উম্মাহ ছিলো না, সেহেতু আসল ইসলামও তখন থেকেই পৃথিবীতে নেই। এজন্য তারা বলে থাকেন-
প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে গেছে রসূলুল্লাহর বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০বছর পরেই। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১০২-১০৩]
প্রকৃত এসলাম তেরশ’ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৬১]
আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত ইসলাম মহানবী যেভাবে পৃথিবীতে রেখে গিয়েছিলেন, সেটা গত ১৩০০ বছরের কাল পরিক্রমায় বিকৃত হতে হতে বর্তমানে একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ৫]
বর্তমানে আমরা এসলাম নামক যে ধর্মটি দেখছি সেটি কিন্তু আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত এসলাম নয়। অতীতের সবগুলি ধর্মই যেমন কাল পরিক্রমায় বিকৃত হয়ে গেছে এসলামও ১৩০০ বছরে বিকৃত হোতে হোতে একেবারে বিপরীতমুখী হোয়ে গেছে শুধুমাত্র পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারেনি। [জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায় : পৃ. ৫৩]
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে গেছে নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরেই। তথা আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে।
ইসলাম কী বলে?
নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরই ইসলাম বিকৃতির যে দাবীর পক্ষে তারা যে হাদিসটি পেশ করেছেন, সেটা আগে দেখা যাক। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
عُمُرُ أُمَّتِي مِنْ سِتِّينَ سَنَةً إِلَى سَبْعِينَ سَنَةً
আমার উম্মতের বয়স হল ষাট থেকে সত্তর বছর পর্যন্ত। [জামে তিরমিযি : হাদীস নং : ২৩৩১]
পন্নী সাহেব যেহেতু আরবী জানতেন না, এজন্য এই হাদিসটি বুঝতে তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন। কারণ হাদিসটির মূল বিষয় হলো, উম্মতে মুহাম্মাদীর বয়সসীমা নিয়ে। অর্থাৎ সাধারণভাবে এই উম্মতের লোকদের আয়ুষ্কাল হবে তাদের জীবনের ষাট ও সত্তর দশকের সীমায়। এ ব্যাখ্যাটাই ১৪০০ বছর যাবৎ সমস্ত মুসলিম বুঝে আসছেন। কিন্তু আরবীতে অজ্ঞ পন্নী সাহেব বুঝালেন ভিন্ন কথা। তিনি বুঝলেন, উম্মতে মুহাম্মাদী জাতিটিই টিকে থাকবে ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত। কী হাস্যকর ব্যাপার!
এরপরও যদি পন্নী সাহেবের এ দাবী সত্য হিসাবে মানতেই হয় যে, ‘নবীজির সা. উম্মাহ পৃথিবীতে থাকবে ৬০/৭০ বছর, তারপর যেটা হবে সেটা নামে মাত্র উম্মতে মোহাম্মদী, সেটা প্রকৃত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদী নয়।’ তাহলে অসংখ্য সাহাবীকে বেঈমান বলতে হয় এবং নবীজির সা. অগণিত হাদিস মিথ্যা হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ। নিন্মে দু’টি হাদিস খেয়াল করুন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ
আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী যুগের। এরপরে এমন সব লোক আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেওয়ার আগে কসম করে বসবে। [সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ২৬৫২]
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহি. বলেন,
والصحيح أن قرنه صلى الله عليه وسلم الصحابة والثاني التابعون والثالث تابعوهم
নবিজি সাঃ-এর যুগ বলতে সাহাবাদের যুগ, দ্বিতীয় যুগ তাবেয়ীনদের যুগ, তৃতীয় যুগ হলো, তাবে তাবেয়ীনদের যুগ। [আল মিনহাজ (শরহে মুসলিম লিননববী) : খ. ১৬ পৃ. ৮৫]
উক্ত হাদিসে বর্ণিত ৩ যুগের সময়কাল হিসাব করলে অন্তত দেড়’শ বছর হবে। তাহলে হেযবুত তওহীদেে ব্যাখানুযায়ী ‘নবীজির সা. সত্যিকারের উম্মত থাকবে ৬০/৭০ বছর’ এ কথাটা কি এ হাদিসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক নয়?
উপরন্তু হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবি সাঃ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم
কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন। [সহীহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৯২]
এ সংক্রান্ত অসংখ্য হাদিস রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত একদল লোক সত্যের উপর থাকবে। সুতরাং সত্যিকারের উম্মতে মুহাম্মাদী যদি নবীজির সা. ইন্তেকালের পর মাত্র ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত জিবিত থাকেন, আর এরপর সবাই যদি উম্মত মুহাম্মাদী না হয়, তাহলে নবীজির ভাষ্য অনুযায়ী এই বিজয়ী দলটিও কি তাহলে উম্মতে মুহাম্মাদী নয়? বুঝা গেলো, তিরমিযি শরীফের বয়সসীমা সংক্রান্ত হাদিসটির অপব্যখ্যা করে ইসলামকে বিকৃত বলতে ব্যার্থ প্রচেষ্টা করেছেন।
তবে কী সাহাবায়ে কেরামও রা. উম্মতে মুহাম্মাদী নন?
আরও দেখুন, হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, সাহাবায়ে কেরামই রা. মূলত উম্মতে মুহাম্মাদী। [আকীদা : পৃ. ৮] অথচ নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরও কিন্তু অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম রা. বেঁচে ছিলেন। যেমন হযরত আনাস রা. ৯৩ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। সর্বশেষ যে সাহাবী ইন্তেকাল করেন, তাঁর নাম হযরত আবু তুফায়েল আমের ইবনে ওয়াসিলা রা.। তিনি ইন্তেকাল করেন ১১০ হিজরীতে। তাঁর ব্যাপারে হযরত ওয়াহাব ইবনে জারীর রহি. বলেন,
سمعت أبي يقول كنت بمكة سنة عشر ومائة فرأيت جنازة فسألت عنها فقالوا هذا أبو الطفيل
আমি আমার বাবাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আমি মক্কায় ১১০ হিজরীতে একটি জানাজা দেখলাম দেখলাম। অতপর তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে লোকেরা বললো, তিনি সাহাবূ আবু তুফায়েল। [তাদরীবুর রাবী : খ. ১ পৃ. ১৩১]
তাহলে বুঝতে পারলাম, ১১০ হিজরীতেও নবিজি সাঃ-এর সাহাবী আবু তুফায়েল আমের ইবনে ওয়াসিলা রা. বেঁচে ছিলেন। এভাবে অসংখ্য সাহাবীদের নাম বলা যাবে, যাঁরা নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরও বেঁচে ছিলেন। তাহলে তাঁরাও কী উম্মতে মুহাম্মাদী ছিলেন না? আসলে একটা হাদিসের অপব্যাখ্যার কারণে কত হাদিসকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে হচ্ছে, কত সাহাবীকে বেঈমান বানাতে হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ।
তবে কী হাদিসগ্রন্থের লেখকরাও উম্মাতে মুহাম্মাদী নন?
শুধু কি তাই? যদি তাদের কথা সত্য মানতে হয়, তাহলে তাদের দাবি অনুযায়ী ইমাম বুখারী ও মুসলিম, তিরমিযি রহি. সক সকল লেখকদের হাদিসগ্রন্থ গুলোও তো মানা যাবে না। কারণ তাঁরাও তো নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালের কয়েক’শ বছর পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাহলে তারও তো উম্মতে মুহাম্মাদী ছিলেন না। যেমন নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকাল হয়েছে ১১ হিজরীতে। আর ইমাম বুখারী রহ. জন্ম গ্রহণ করেছেন ১৯৪ হিজরীতে। তার মানে নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালে ১৮৩ বছর পর ইমাম বুখারী রহি. এর জন্ম। ওদিকে বুখারী শরীফ লিখতে লিখতে আরও অনেক বছর চলে গেছে। তাহলে বুঝা গেলো, বুখারী শরীফের অস্তিত্ব আসছে নবিজি সাঃ-এর ইন্তেকালের ২০০ বছর পর। এমনিভাবে ইমাম মুসলিম রহি. জন্মগ্রহণ করেন ২০২ হিজরীর পরে, ইমাম তিরমিযি রহি. জন্মগ্রহণ করেছেন ২০৯ হিজরীর পরে। আর তাঁদের লেখা কিতাবগুলো দিয়েই পন্নী সাহেব ইসলামের বাস্তব রুপ বুঝতে পারলেন, অথচ তারা দাবি করেছেন, ‘ইসলামের রুপ হারিয়ে গেছে নবীজির ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরই।’ বিষয়টি কতবড় হাস্যকর ভেবে দেখেছেন?
তবে তো হেযবুত তওহীদের কেউ মুসলমান নয়:
বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে, ‘কারো জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেও সেখানে পড়তে হয়’ ‘উপরে থুথু ফেললে নিজের মুখে আগে পড়ে’ এটাই হয়েছে হেযবুত তওহীদের বেলায়ও। কারণ নবীজির সা. ইন্তেকালের পর যদি কেউ উম্মতে মুহাম্মাদী না থাকে, তাহলে হেযবুত তওহীদও তো তাহলে উম্মতে মুহাম্মাদী নয়। কারণ তাদের দাবী হলো, ইসলাম নবীজির সা. ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরই হারিয়ে গেছে এবং দলীল হিসাবে তারা হাদিস দিয়েছিলেন ৬০/৭০ বছর পর উম্মত থাকবে না। তার মানে ইসলাম বিকৃত হয়ে যাবে। অথচ হেযবুত তওহীদের জন্ম হয়েছে ১৯৯৫ সালে। তাহলে ১৪০০ বছর পর সে ইসলাম অবিকৃতভাবে হেযবুত তওহীদের কাছে আসলো কেমনে? কারণ তাদের দাবীকে তো নবীজিই সা. নাকি বলেছেন ৬০/৭০ বছর পর আর উম্মত থাকবে না, মানে ইসলাম থাকবে না! তাহলে ইসলাম তো ৬০/৭০ বছর পরেই শেষ হয়েছে, সে ইসলাম আবার অবিকৃত হলে নবীজির সা. দাবী মিথ্যা হয়ে যাবে না? আসলে নবীজির সা. কথাকে বিকৃত করে ইসলামকে বিকৃত করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। তাদের সে বিকৃতি ঢেকে রাখতেই খোদ ইসলামকেই বিকৃত করতে এদের হাত কাঁপে না।
সুতরাং প্রমাণ হলো, তাদের দাবিটা অসাড়। ইসলাম অবিকৃত ছিলো, আছে, কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কোনো মূর্খদের অযৌক্তিক অপব্যাখ্যার কারণে ইসলাম ধ্বংস হবে না। ইনশাআল্লাহ।
ইসলাম কী বিকৃত হয়ে গেছে?
প্রিয় পাঠক, উপরের আলোচনায় জানতে পারলাম, ইসলেম তের’শ বছর আগেই বিকৃত হয়ে গেছে বলে হেযবুত তওহীদের দাবিটা হাদিসের নিছক অপব্যাখ্যার ফল। সুতরাং প্রমাণ হয়েছে, তাদের দলীলে ইসলাম বিকৃত হয়নি বলে প্রমাণিত। মনে রাখতে হবে, ইসলাম ধর্ম একটি চুড়ান্ত ও শ্বাস্বত, চিরন্তন ধর্ম। যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এ ইসলাম থেকে জাতিকে বিমুখ করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। কেউ ইসলামকে মধ্যযুগীয় বলে মানুষকে এর থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করছে। আবার কেউ একে বর্বর ধর্ম বলে আধুনিক মানুষদের মগজ ধোলাই করতে ব্যস্ত। আবার কেউ “এ ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে” বলে জনসাধারণকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দিতে বদ্ধপরিকর। আর এরাই হলো হেযবুত তওহীদ। যারা ‘ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে’ বলে দাবি করে জনসাধারণকে ইসলাম থেকে বাহির করতে চায়। চলুন তাদের কিছু লেখা দেখে নেয়া যাক। তারা লিখেছেন,
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের ইসলাম সম্পর্কে কয়েকটা জঘন্য উক্তি নিন্মে পেশ করা হলো-
প্রচলিত ইসলাম বিকৃত:
ধর্মব্যবসায়ী কর্তৃক কায়েম করে রাখা বিকৃত এই ধর্মকে দেখে অনেকে আল্লাহ স্রষ্টাকে গালি দেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে ধর্ম মানুষকে শান্তি দিতে পারে না, আরো অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা নিঃসন্দেহে মহাপ্রভু আল্লাহর দেওয়া ধর্ম নয়, সেটা অবশ্যই বিকৃত। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১০০]
প্রচলিত ইসলাম ভুল ইসলাম:
যে ইসলাম চোলছে পৃথিবীতে এটা ভুল। এটা সেই ইসলাম নয়’…বর্তমান যে এসলাম চলছে এটা শুধু যে আল্লাহর এসলাম নয় তাই নয়, বরং তার বিপরীত একটা কিছু। [আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৫৪]
প্রকৃত এসলাম তেরশ’ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৬১]
বর্তমানে আমরা যে ধর্মটিকে এসলাম হিসাবে দেখছি, যেটাকে ধর্মপ্রাণ মানুষষ অতি যত্নসহকারে পালন করার চেষ্টা কোরছেন,যে এসলামটাকে সর্বত্র স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় ও পীরের খানকায় শেখানো হোচ্ছে সেটা প্রকৃত এসলাম নয়। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৯/৬৭]
যে এসলামটি ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা প্রকৃত এসলাম ছিল না। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৭৬]
এমামুযযামান আরও বুঝতে সক্ষম হোলেন, আল্লাহর রসুলের ওফাতের এক শতাব্দি পর থেকে এই দীন বিকৃত হোতে হোতে ১৩ শ বছর পর এই বিকৃতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঐ সত্যিকার এসলামের সাথে বর্ত্তমানে এসলাম হিসাবে যে ধর্মটি সর্বত্র পালিত হোচ্ছে তার কোনই মিল নেই, ঐ জাতিটির কোন মিল নেই। শুধু তাই নয়, বর্ত্তমানে প্রচলিত এসলাম সীমাহীন বিকৃতির ফলে এখন রসুলাল্লার আনীত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। [মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) : পৃ. ২২]
ছাত্র জমানায় মুসলিমদের জীবনী ইতিহাস পড়ে বুঝলাম মুসলিমরা তো বিজয়ী জাতি কিন্তু তাদের অবস্থা এমন কেন? বিষয়টা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। এরপরে একটু একটু করে চিন্তা করতে করতে ছাত্র জীবন কেটে গেল। তারপর কিছুদিন গেলে আমার কাছে আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে আরম্ভ করলো, যে ইসলাম চোলছে পৃথিবীতে এটা ভুল। এটা সেই ইসলাম নয়। তাহলে সেই এসলাম কোনটা? এই সঙ্গে সঙ্গে আমি কোনটা ইসলাম সেটাও বুঝতে আরম্ভ করলাম। তখন আমি জানিনা রব্বুল আলামিন আমাকে জ্ঞানগুলো দিচ্ছেন। আমি ভাবতাম আমি পড়ে বুঝলাম, আমি চিন্তা করে বুঝলাম, কিন্তু চিন্তা না করেও বুঝলাম। কারণ অনেক সময় এমন হয়েছে আমি ঐ জিনিস চিন্তা করছিনা হঠাৎ একটা জিনিস আমার পরিষ্কার হয়ে গেল। এভাবে চলতে চলতে সত্তরের দশকে এসে আমার কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল যে বর্তমান যে এসলাম চলছে এটা শুধু যে আল্লাহর এসলাম নয় তাই নয়, বরং তার বিপরীত একটা কিছু। আর এটা যেটা আমার সামনে একটা রূপ আকৃতি দাঁড়ালো এটা সত্য ইসলাম। এভাবে ভাবতে ভাবতে ১৯৭০ পার হবার পর আমি দেখলাম যে যেটা আমি দেখছি সেটা ভুল হোক বা সঠিক হোক এটা আমি মানুষকে জানাবো। ভাবলাম একটা বই লেখব। এরমধ্যেই হেযবুত তওহীদ আন্দোলন গঠন হয়ে গেল। এভাবে ১৩ বছর চললো। ১৩ বছর আমার সামনে ছিল যে এটাই সত্য ইসলাম। যেটা বর্তমান চালু আছে সেটা সত্য নয়। কিন্তু আমার এ প্রচেষ্টায় এটা প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা তা আমি জানিনা। এরপর ১৩ বছর পর এই মো’জেজার ঘটনা ঘটল। মো’জেজার তিন মাস পর বুঝলাম আল্লাহ সেদিন খবর দিয়েছেন যে আল্লাহর নিকটবর্তী এবং হিযবুত তাওহীদ দিয়ে সমস্ত পৃথিবীতে তার দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে। [আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদেে বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৫৪-৫৬]
সুতরাং বর্তমানে যেটাকে এলাম হিসাবে সর্বত্র মানা হোচ্ছে এবং শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হোচ্ছে সেটাকে এসলামী হিসাবে বিশ্বাস করা আর তিক্ত মাকাল ফল সুমিষ্ট আম বোলে বিশ্বাস করার মতই নির্বুদ্ধিতা। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৭৫]
দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, আজ সেই প্রচণ্ড গতিশীল আকাশের মত উদার সমুদ্রের মতো বিশাল সহজ-সরল ইসলাম ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লাদের খপ্পরে পড়ে সেটা আজ মসজিদ-মাদ্রাসা খানকার চার দেয়ালে বন্দি এবং দাড়ি-টুপি জোব্বা ইত্যাদিতে আবদ্ধ হয়ে স্থবির,অন্তর্মুখী, বিকৃত ও মরা। আর এই বিকৃত ইসলামকেই বিক্রি করে খাচ্ছে। [শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ১৪৬]
আল্লাহ-রাসূলের সেই প্রকৃত ইসলাম একটি শিয়ালকে সিংহে রূপান্তরিত করে আর আমাদের বর্তমানের এই ইসলাম সিংহকে শিয়ালে পরিণত করে। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৫৭]
যাত্রাদলের বন্দুকের সঙ্গে আসল বন্দুকের যতটা পার্থক্য, প্রকৃত এসলামের সঙ্গে বর্তমান এসলামের ততটাই পার্থক্য। এ দু’টির চলার পথ সম্পূর্ণ বিপরীত। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৯/৬৬]
উল্লেখিত লেখা গুলো থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, হেযবুত তওহীদ প্রচলিত ইসলাম ধর্মকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ-এর ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দিতে একদমই নারাজ, বরং তাদের দাবি অনুযায়ী বর্তমানের প্রচলিত ইসলাম আসল ইসলাম নয়, বরং এটা ভুল ও বিকৃত ইসলাম। চলুন, তাদের এ কথাগুলো সম্পর্কে একটু যাচাই করা যাক।
ইসলাম কী বলে?
কোনো মতবাদ বা ধর্ম বিকৃত হতে হলে সর্বপ্রথম সেটার সংবিধান বা মূলগ্রন্থ বিকৃত হতে হয়। যেমন হেযবুত তওহীদের এমাম নিজেই দাবি করেছেন যে, আগের ধর্মগুলো বিকৃত হয়েছিল তাদের ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হওয়ার মাধ্যমেই। কথাটির প্রমাণ তাদের বই থেকেই দেখে নেয়া যাক। তারা লিখছেন,
আল্লাহ সকল জনগোষ্ঠী ও জনপদে ধর্মগ্রন্থ দিয়ে নবী-রাসূলদের কে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাদের বিদায়ের পর তাঁর শিক্ষা ও ধর্ম গ্রন্থ বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। ফলে ঐ এলাকার মানুষকে নতুন করে পথ দেখাতে আবির্ভূত হয়েছেন অন্য নবী। যারা পূর্বের বিকৃত গ্রন্থ কে রদ ঘোষনা করেছেন এবং নতুন বিধান জাতিকে প্রদান করেছেন। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৭১]
অর্থাৎ আগের ধর্মগুলো বিকৃত হওয়ার কারণ হিসাবে পেশ করা হয়েছে, তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত হওয়া। এ কথার অর্থ এই দাঁড়ালো যে, যে ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বিকৃত, সে ধর্ম বিকৃত, ঠিক এমনিভাবে, যে ধর্মের ধর্মগ্রন্থ অবিকৃত, সে ধর্মও অবিকৃত। এই হিসাবে বুঝা গেল, ধর্ম বিকৃত হতে হলে আগে ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হতে হবে। তেমনি ইসলাম বিকৃত হতে হলেও কুরআন-হাদিস বিকৃত হতে হবে। অর্থাৎ কুরআন-হাদিস যদি বিকৃত হয়, তাহলে ইসলাম বিকৃত হবে, অন্যথায় নয়। আর কুরআন হাদিস যদি অবিকৃত হয়, তাহলে ইসলামও অবিকৃত। তাহলে চলুন, ইসলাম ধর্মের মূলগ্রন্থ ‘কুরআন’ সম্পর্কে তারা কী লিখেছে দেখা যাক। তারা লিখেছে,
পৃথিবীতে এসলাম ধর্ম ছাড়া অন্যান্য যে ধর্মগুলি রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই কোন না কোন নবীর (আ:) অনুসারী। তারা তাদের নবীর দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। মোসলেম নামধারী এ জাতিও তাদের নবীর দেখানো, রেখে যাওয়া পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। যতখানি পথভ্রষ্টতা বিবৃতি আসলে পূর্বে আল্লাহ নতুন নবী পাঠিয়েছেন, এই জাতিতে ততখানি বিকৃত বহু পূর্বেই এসে গেছে। এরপরও নতুন নবী আসেননি, কারণ নবুয়াত শেষ হয়ে গেছে এবং শেষ রসূলের (দ:) প্রতিষ্ঠিত পথে প্রকৃত এসলামে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য অবিকৃত কোর’আন ও রাসুলের হাদিস আছে যা অন্যান্য ধর্মে নেই। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৮৫]
তাদের দাবি হলো, প্রকৃত ইসলামে ফিরে যেতে অবিকৃত কুরআন-হাদিস রয়েছে। তার মানে তারাও বিশ্বাস করে থাকে, কুরআন-হাদিস বিকৃত হয়নি। তাহলে হেযবুত তওহীদের দাবি অনুযায়ী যদি বিষয়টি এমনই হয় যে, ইসলামের মৌলিক সংবিধান কুরআন-হাদিসে ‘আসল ইসলাম কেমন’ সেটা ঠিকঠাক লেখা থাকে, তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কুরআন-হাদিস আজও অবিকৃত। আর কুরআন-হাদিস যদি এখনও অবিকৃতই থেকে থাকে, তাহলে ইসলাম বিকৃত হলো কীভাবে?
উপরন্তু যেহেতু পন্নী সাহেব নিজেও কুরআন ও হাদিস থেকে ইসলামের বাস্তব রুপ জেনেছেন এবং বিশ্বাসও করেছেন। তার অর্থ হলো, ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ আজও অবিকৃত রয়েছে। সুতরাং ইসলামের ধর্মগ্রন্থ যেহেতু অবিকৃত,অতএব ইসলাম ধর্মও অবিকৃত।
প্রশ্ন:
হয়তো তারা বলতে পারেন, শুধু কুরআন বিকৃত হয় নি, হাদিসও বিকৃত হয়েছে। তাহলে বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হতে আমাদের জানতে হবে শরীয়ত কাকে বলে? এটা জানতে আমরা হেযবুত তওহীদের বই থেকেই দেখি কী বলে তারা? তারা লিখেছে,
শরিয়াহ হোল সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনার জন্য নিয়ম-পদ্ধতি আইন-কানুন, দন্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি। [দাজ্জাল : পৃ. ১৯]
অর্থাৎ সার্বিক জিবন পরিচালনার জন্য আবিস্কৃত থিউরী বা নিয়ম-কানুনকে শরীয়ত বলে। এখন দেখতে হবে শরীয়তের এ কানুন কোথায় রয়েছে? হেযবুত তওহীদই লিখছে,
আল্লাহ পর্যায়ক্রমে মুসলিম জাতিকে তাদের ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যাদি যথা বিয়ে, তালাক, বিচার, দণ্ড,যুদ্ধ, সন্ধি, চুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব বিষয়ে এবং সেই জাতির শারীরিক মানসিক আত্মিক প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা বা আমলের হুকুম নাযিল করলেন। এভাবে ২৩ বছর ধরে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর ঐক্যবদ্ধ একটা জাতির প্রতি প্রয়োজন সাপেক্ষে একে একে যে আদেশ,নিষেধ, উপদেশ, ভর্ৎসনা ইত্যাদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে সেগুলোর সংকলিত রূপই হচ্ছে পবিত্র কোর’আন। [হলি আর্টিজান এর পর : পৃ. ১২]
তাদের কথা দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে, ইসলামের সমস্ত বিধিবিধান লিপিবদ্ধ হয়েছে পবিত্র কুরআনে। এতএব শরীয়তের সমষ্টি হলো, পবিত্র আল-কুর’আন। যেহেতু তাদের কথানুযায়ী এ কুরআনে শরীয়তের সব বিষয় রয়েছে, সেহেতু এখন আমাদের দেখতে হবে কুরআন বিকৃত না অবিকৃত? যদি বিকৃত হয় তাহলে শরীয়ত (দ্বীন ইসলাম) বিকৃত। আর যদি কুরআন অবিকৃত হয় তাহলে শরীয়ত (ইসলামও) অবিকৃত। চলুন এব্যপারে তাদের ভাষ্য কি দেখা যাক। তারা লিখেছে,
তারা (খ্রীস্টান) একটি বিকৃত ও বিপরীতমুখী ইসলাম রচনা করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এ জাতিকে শিক্ষা দিতে শুরু করল। তবে পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারল না, কারণ এটি সংরক্ষণের ভার আল্লাহ নিজে নিয়েছেন। [আদর্শিক লড়াই : পৃ. ৬]
শুধুমাত্র পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারেনি। [জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায় : পৃ. ৫৩]
প্রিয় পাঠক, উক্ত কথা দ্বারা বুঝা গেল, তারাও বিশ্বাস করে যে, পবিত্র কুরআনকে কেউ বিকৃত করতে পারেনি। আর তাদের কথাই ‘শরীয়াহ’ তথা ইসলামের সমষ্টি হলো আল কুর’আন। সুতরাং তাদের কথা দিয়েই প্রমাণ হচ্ছে, ‘শরীয়াতে ইসলামী’ তথা দ্বীন ইসলাম আজও অবিকৃত।
এরপরও যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে, ইসলাম বিকৃত হয়েই গেছে, তাহলে আমার প্রশ্ন হলো- যে ধর্মটি শত শত বছর ধরে বিকৃত হয়ে গেছে, সেটার বাস্তব রুপ কেমন ছিলো সেটা ১৪০০ বছর পর এসে পন্নী সাহেব বুঝলেন কিভাবে? নবিজি সাঃ-এর ধর্মটি কেমন ছিল তিনি দেখলেন বা জানলেন কিভাবে? তখন তারা হয়তো জবাব দেবেন যে, আল্লাহ পন্নী সাহেবকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। যিনি নবি বা রাসুল নন, এমন কেউ যদি এমন অবান্তর দাবি করে, আর সেটাই যদি বিশ্বাস করে নিতে হয়, তাহলে আজ পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে নবি বা মাহদী আ. বলে দাবী করে বসেছেন, তাহলে তাদের দাবিও কী সত্য হিসাবে মেনে নিতে হবে? অথচ সবাই তো আল্লাহ’র রেফারেন্স দিয়েই কথা বলে থাকে। যেখানে কারো মুখে পেয়াজ-রসুনের দুর্গন্ধের কারণে তার কাছে ফিরিস্তারা আসেন না, সেখানে আল্লাহ এক মহাবিড়িখোরকে এ মহান কাজের জন্য সিলেক্ট করলেন? কী হাস্যকর! কী হাস্যকর! এ ধরণের মিথ্যুকদের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أُوْلَـئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الأَشْهَادُ هَـؤُلاء الَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَى رَبِّهِمْ أَلاَ لَعْنَةُ اللّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
আর তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখ, যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে। [সুরা হুদ : ১৮]
উম্মতে মুসলিমাহ কী বলে?
উপরন্তু সকল উম্মদের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হলো, ইসলাম বিকৃত হয় নি। আর উম্মতের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তও ইসলামি শরীয়াতের দলীলের অন্তুর্ভূক্ত। পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي أَوْ قَالَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ضَلَالَةٍ
আমার সকল উম্মতকে আল্লাহ তাআলা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না। [জামে তিরমিযি : ২১৬৭]
আমরা জানি নবিজি সাঃ-এর হাদিস ও আমলে ভিন্নতার কারণে উম্মতের আমলেও ভিন্নতা এসেছ এবং একেক মাযহাবের অনুসারিরা একেক হাদিসের উপর আমল করে যাচ্ছেন। ফলে বেশ কিছু বিষয়ে উম্মতের মধ্যে বাহ্যিকদৃষ্টিতে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও এ ব্যাপারে কিন্তু সবাই একমত যে, ইসলাম আজও আসল এবং অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে, বিকৃত হয় নি। অতএব নবিজির স: এ কথা যদি সত্য হয় অর্থাৎ ‘উম্মতকে আল্লাহ তা’আলা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) কোনো বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না’। তাহলে এ কথা বলতেই হয় যে, যেহেতু সমস্ত উম্মত ইসলাম ধর্ম বিকৃত না হওয়ার কথার উপর একমত, অতএব ইসলাম ধর্ম অবিকৃত এবং তার আসল রুপেই আমাদের মাঝে আজও বিদ্যমান রয়েছে। অতএব সমস্ত মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে যারা ‘ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে’ ‘এটা ভুল ইসলাম’ ইত্যাদী বলে বক্তব্য দিচ্ছে তারা কি প্রকারান্তেই পরোক্ষভাবে নবিজি সাঃ কে মিথ্যুক বানানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে নি?
বিকৃত হবেই যদি মুজাদ্দিদ কেন পাঠান?
ইসলাম ধর্ম একটি চিরন্তন ও শ্বাস্বত ধর্ম। এই ধর্ম যেন বিকৃত না হয়, সেজন্য মহান রব প্রতি শতবছরে মুজাদ্দিদ প্রেরণ করেন। যিনি দ্বীনের সঞ্জীবিত করেন। হযরত আবু হুরাইরাহ রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا
নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মাতের জন্য প্রতি একশত বছরের শিরোভাগে এমন লোকের আর্বিভাব ঘটাবেন, যিনি এই উম্মাতের দ্বীনকে তার জন্য সঞ্জীবিত করবেন। -সুনানে আবু দাউদ : হাদিস নং : ৪২৯১
সুতরাং বুঝা গেলো, এই দ্বীন ইসলাম বিকৃত হওয়াে কোনো সুযোগই নেই। যদি বিকৃত হয়েই যায়, তাহলে মুজাদ্দিদ পাঠানোর কোনো অর্থ থাকে কী? এতো সহজ একটি বিষয় কে বুঝাবে হেযবুত তওহীদকে?
স্ববিরোধিতা:
পাশাপাশি আরেকটি প্রশিদ্ধ বাক্য মনে পড়ে গেল, সত্য কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না। চোর চুরি করলেও কিন্তু ভুলক্রমে নিশানা কিছু রেখে যায়। তেমনিই হয়েছে হেযবুত তওহীদের বেলায়ও । তারা তাদের চল্লিশোর্ধ্ব কিতাবের সবখানে ‘ইসলাম বিকৃতি হয়ে গেছে’ দাবী করলেও ভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে দুয়েক জায়গায় বলেই ফেলেছেন,
আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:) এর উপর অবতীর্ণ এই সত্যদীন আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মতই নিঁখুত ও অবিকৃত। আল্লাহর সৃষ্টি কেমন নিখুঁত….আল্লাহর দেওয়া সত্যদীনও এমনই নিখুঁত। [আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই : পৃ. ১৯-২০]
সকল ধর্মের মানুষের উচিৎ নিজেদের ধর্মের অবতারদের নির্দেশ মোতাবেক শেষ রসূলের (দ:) আনীত সিস্টেম গ্রহণ কোরে নেওয়া। আমরা জানি আপনাদের ধর্ম গুলিতে জাতীয় জীবন পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন-কানুন নেই, যে বিধানগুলি আপনাদের ধর্মে আছে সেগুলো কাল পরিক্রমায় বিকৃত হয়ে গেছে। সুতরাং ইচ্ছা করলেও আপনাদের ধর্ম গুলি দিয়ে জাতীয় জীবন চালাতে পারবেন না। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৭৪]
মুক্তির পথ তো রসুল দেখিয়েই গেছেন আর শেষ বিধানও আল্লাহর দয়ায় অবিকৃত ছিল এবং আজও আছে। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৯]
অর্থাৎ তারা নিজেরাই বলে ফেললো, যে, ইসলাম বিকৃত ছিলো না, আজও হয়নি। এভাবেই সত্য কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না, ইসলাম ধর্ম যে অবিকৃত ছিলো এবং আছে, এটা আমাদের আর কোনো দলীল পেশ করা লাগবে না। কারণ হেযবুত তওহীদ নিজেরাই তাদের বইয়ে স্বীকার করে নিয়েছে যে, ‘ইসলাম অবিকৃত’ এরপরও যদি কেউ বলে ইসলাম ১৩০০ বছর আগেই বিকৃত হয়েছে, সে চরম মিথ্যুক ও বিকৃত মস্তিস্কের। অথচ তারাই এ ইসলাম সম্পর্কে কত জঘন্য জঘন্য উক্তি করেছে দেখুন-
ইসলাম রাসুলের সা. ইসলামের বিপরীত:
এই ধর্মের পণ্ডিতের, আলেমদের কাছে দীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ,রোজা, দাড়ি, তারাবি টুপি,টাখনু,মিলাদ,মেসওয়াক, ইত্যাদি আর জেহাদ একেবারেই নিষ্প্রয়োজন। এজন্য তাদের এই ইসলাম একটি মৃত, আল্লাহ রসুলের ইসলামের বিপরীত ধর্ম। [সওমের উদ্দেশ্য : পৃ. ১৩]
ইসলাম মরা, পচা ও দুর্গন্ধময়:
মরক্কো থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত ইসলামের এই বিশাল বিস্তৃত দেহটি আজ মরা ও দুর্গন্ধময়। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৬০]
ইসলামের এ দেহটি তো বহুদিনের মরা,পঁচা, গলে যাওয়া একটি শবদেহ। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৬১]
কালেমার ভুল অর্থ ইসলামের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দিয়েছে,যার স্বাভাবিক ফল হয়েছে ইসলামের দেহটির মৃত্যু,ক্ষয় ও পচন। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৬১]
ইসলাম শুধু একটা কঙ্কাল মাত্র:
প্রকৃত এসলাম বিকৃত হোতে হোতে এখন আর বিকৃতত কঙ্কালটি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। [আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৯]
একদিকে তারা বলছে, ইসলাম নিখুঁত ও অবিকৃত, অন্যদিকে সে ইসলামের বিরুদ্ধে এত এত জঘণ্য উক্তি করার পরও তারা মুসলিম না মুরতাদ? পাঠক মহলই এর সমাধান দেবেন আশা করি।
ইসলামের ভিত্তি কী পাল্টে গেছে?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, প্রচলিত ইসলামের মূলভিত্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে। তারা লিখেছে,
বর্তমানে প্রচলিত ইসলাম রসূলুল্লাহর আনীত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এমনকি দীনের ভিত্তি তওহীদ পর্যন্ত হারিয়ে গেছে। [জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায় : পৃ. ৬৩]
জবাব:
ইসলাম সম্পর্কে তাদের এ জঘন্য মন্তব্যে জবাব আমি নিজ থেকে দেবো না, তারা কী বলে দেখুন-
স্থান-কাল ও পাত্রের বিভিন্নতার কারণে দীনের অর্থাৎ জীবনব্যবস্থার আইন-কানুন দন্ডবিধি এবাদতের পদ্ধতি ইত্যাদি বিভিন্ন হয়েছে কিন্তু ভিত্তি,মূলমন্ত্র একচুলও বদলায়নি। সেটা সবসময় একই থেকেছে।আল্লাহর সার্বভৌমত্ব তাওহীদ। [বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৯]
তারা (খ্রীস্টান) একটি বিকৃত ও বিপরীতমুখী ইসলাম রচনা করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এ জাতিকে শিক্ষা দিতে শুরু করল। তবে পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারল না, কারণ এটি সংরক্ষণের ভার আল্লাহ নিজে নিয়েছেন। [আদর্শিক লড়াই : পৃ. ৬]
শুধুমাত্র পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারেনি। [জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায় : পৃ. ৫৩]
পৃথিবীতে এসলাম ধর্ম ছাড়া অন্যান্য যে ধর্মগুলি রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই কোন না কোন নবীর (আ:) অনুসারী। তারা তাদের নবীর দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। মোসলেম নামধারী এ জাতিও তাদের নবীর দেখানো, রেখে যাওয়া পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। যতখানি পথভ্রষ্টতা বিবৃতি আসলে পূর্বে আল্লাহ নতুন নবী পাঠিয়েছেন, এই জাতিতে ততখানি বিকৃত বহু পূর্বেই এসে গেছে। এরপরও নতুন নবী আসেননি, কারণ নবুয়াত শেষ হয়ে গেছে এবং শেষ রসূলের (দ:) প্রতিষ্ঠিত পথে প্রকৃত এসলামে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য অবিকৃত কোর’আন ও রাসুলের হাদিস আছে যা অন্যান্য ধর্মে নেই। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৮৫]
এক দিকে তাদের দাবি হলো, ধর্মের মূল ভিত্তি তাওহীদ পাল্টায়নি, অপরদিকে ঠিক তার উল্টো কথার দাবী। বুঝা গেলো, এটা শয়তানী চক্রের সদস্য, জঘন্য মিথ্যুক। আর এভাবেই ইসলাম তার নিজস্ব স্বকীয়তায় পৃথিবিতে বিরাজমান।
ইসলাম কী বিধর্মীদের মতোই একটি ধর্ম?
প্রিয় পাঠক! ইতিপূর্বে হেযবুত তওহীদের দাবি দিয়েই প্রমাণ করেছি যে, যুগ যুগ ধরে আল্লাহর মনোনিত ধর্ম ইসলাম তার নিজস্ব স্বকীয়তায় অবিকৃত অবস্থায় আমাদের মাঝে আজও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, এ চিরসত্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে হেযবুত তওহীদ আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা ইসলাম ধর্মকে অন্য ধর্মের মত একটি ধর্ম বলে প্রচার করতে বদ্ধপরিকর। চলুন কি বলছেন তারা দেখা যাক-
প্রচলিত ইসলাম বিধর্মীদের মতই একটি ধর্ম:
এই সামরিক দীন পৃথিবীর অন্যান্য অসামরিক দীনের পর্যায়ে পর্যবসিত হলো অর্থাৎ খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি, জৈন ইত্যাদি বহু দীনের(ধর্মের) মত আরেকটি ধর্মে পরিণত হলো যেটার উদ্দেশ্য এবাদত,পূজা,উপাসনা করে আত্মার চর্চা করা। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ২০]
তাহলে যে জীবন ব্যবস্থা সমাজকে এমন উন্নতি এমন প্রগতি দিয়েছিল, এমন শান্তি ও নিরাপত্তা এনে দিয়েছিল, সেটা আর আমাদের আলেমরা মক্তবে, মসজিদে, মাদ্রাসায়, খানকায়ে যে ধর্মটা চর্চা কোরছেন সেটা কি এক? কখনই এক নয়। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৫৫]
তারা (ইহুদী-খ্রীস্টান) যে ইসলাম টা দেখছে সেটা আসলে তাদেরই তৈরি অন্যান্য ধর্মের মতো একটি ধর্ম মাত্র, এটা আল্লাহ রসূলের ইসলামই নয়। [বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৩৪]
প্রচলিত ইসলাম খৃষ্টানদের বানানো ধর্ম:
আমরা আহবান করছি- বর্তমানের চালু এই ইসলামটা আসলে আল্লাহ রসুলের ইসলামই নয়, খ্রিস্টান ইসলাম, এই খ্রিস্টান ইসলাম পরিত্যাগ করে প্রত্যাখ্যান করে আবার আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলামে প্রবেশ করতে। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ২২]
এই বিকৃত এবং অনেকাংশে মনগড়া এসলামগুলি শিক্ষা কোরেছেন ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলি থেকে। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ১৮]
আজ আমাদের রাজনৈতিক আর্থ-সামাজিক জীবন পরিচালিত হোচ্ছে পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টানদের তৈরি করা নানা রকম তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে আর ব্যক্তিগত ধর্মীয় জীবন পরিচালিত হোচ্ছে খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের তৈরি করা বিকৃত ও বিপরীতমুখী এসলাম দিয়ে, আল্লাহ রসুলের এসলাম দিয়ে নয়। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১৩/৭০/১১৩/১১৬]
যা কিছু প্রাণ অবশিষ্ট ছিল খিষ্টানদের তৈরি এই এসলামে তা শেষ হয়ে গেল। [যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ১২]
আমরা আজ এসলাম বোলতে সেই এসলামই বুঝি যে “এসলাম” খ্রীস্টান পণ্ডিতরা তৈরি কোরে ১৪৬ বছর ধরে আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। [যুগসন্ধিক্ষণে আমরা : পৃ. ১৯]
এই জাতি যাতে আর মাথা উঁচু কোরে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য খ্রীস্টান মনিবরা এক শয়তানি ফন্দি আঁটলো। তারা তাদের গোলাম মোসলেমদের প্রকৃত এসলাম থেকে বিচ্যুত করে তাদের পছন্দমত একটি এসলাম শিক্ষা দেবার জন্য তাদের অধিকৃত সমস্ত মুসলিম দুনিয়ায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরল। তারা অনেক গবেষণা করে একটি বিকৃত এসলাম তৈরি কোরল। যেটা বাহ্যিকভাবে দেখতে প্রকৃত এসলামের মতই কিন্তু আসলে ভেতরে, আকীদায়, আত্মায়, চরিত্রে আল্লাহ-রাসুলের প্রকৃত এসলামের একেবারে বিপরীত। [মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) পৃ. ৪]
প্রচলিত ইসলাম অগ্নীপূজকদের রঙ-এ রঙিন:
আরবের ইসলাম পারস্যের ভেতর দিয়ে ভারতে, এই উপমহাদেশে আসার পথে পার্শি ধর্ম,কৃষ্টি ও ভাষার রং-এ রং বদলিয়ে রঙিন হয়ে এল। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৭]
খোদা, নামাজ,রোজা,ফিরিস্তা, বেহেস্ত, দোযখ, জায়নামাজ, মুসলমান, পয়গম্বর সব ইরানের অগ্নীপূজকদের শব্দ। [ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৬]
উপরোক্ত কথাগুলো দ্বারা তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, ইসলাম ধর্মটি এখন আর আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাঃ-এর ধর্ম নেই, বরং এটা অন্য ধর্মের মত একটি ধর্মে রুপান্তরিত হয়ে গেছে এবং প্রচলিত ইসলামটা খ্রীষ্টানদের আবিস্কার করা।
ইসলাম কি বলে?
তারা বলে থাকে, প্রচলিত ইসলাম অমুসলিমদের ধর্মের মতই একটি ধর্ম। অথচ মহান রব বলেন,
وَلَا تَلۡبِسُوا۟ ٱلۡحَقَّ بِٱلۡبَـٰطِلِ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করে দিও না। [সুরা বাকার : ৪২]
উল্লেখিত আয়াতের ব্যাপারে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ রহি. বলেন-
وَلا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِل وَلَا تَلْبِسُوا الْيَهُودِيَّةَ وَالنَّصْرَانِيَّةَ بِالْإِسْلَامِ إِنَّ دِينَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ وَالْيَهُودِيَّةَ وَالنَّصْرَانِيَّةَ بِدْعَةٌ لَيْسَتْ مِنَ اللَّهِ
ইয়াহুদী,খ্রীষ্টানদের সাথে ইসলামকে মিশ্রিত করো না। নিশ্চয় আল্লাহর ধর্ম হলো ইসলাম। (কারণ বর্তমানের) ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান ধর্ম আল্লাহর দ্বীন নয়, বরং মানবরচিত নব্য আবিস্কৃত ধর্ম। [তাফসীরে ইবসে কাসীর : খ. ১ পৃ. ৩৭৯]
সুতরাং পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ইহুদী-খ্রীস্টান, হিন্দু, বৈদ্ধ, জৈন ও অগ্নীপুজকদের ধর্মের সাথে মিলানো এ আয়াতের প্রকাশ্য বিরোধী নয় কী? উপরন্তু হেযবুত তওহীদ নিজেরাই লিখেছে, নবিজি সাঃ সত্য মিথ্যা একসাথে মিশ্রণ করতেন না। তারা লিখেছে,
আল্লাহ রাসুল কোনদিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে কোয়ালিশন করে ক্ষমতায় যাননি। তিনি যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছেন, সন্ধি করেছেন এসবই তিনি করেছেন কাফেরদের সঙ্গে। কিন্তু সত্য ও মিথ্যা কে,ঈমান ও কুফরকে দীন ও তাগুতকে তিনি কোনোদিন মিশ্রিত হতে দেননি। তার নীতি ছিল মিথ্যার সাথে কোন আপোষ হবে না। [ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১৬২]
তাহলে সত্য ধর্ম ইসলামকে মিথ্যা ধর্মগুলোর সাথে তুলনা করে তারা নিজেরাই নবিজি সাঃ-এর আমলের বিপরীত আমল করলেন না? অথচ তারাই আবার বলেছে,
রসূলুল্লাহ স: যা করেননি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না। [সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ:১৪] ভাবুন তো ওরা কোনো লেবেলের মিথ্যুক!
উপরন্তু ইতিপূর্বে আপনারা দেখেছেন, হেযবুত তওহীদের দাবি ছিলো, ‘প্রচলিত এ ধর্মটি বিকৃত হয়েছে ১৩০০ বছর আগে’। আবার এখানে দাবি করেছে, ‘প্রচলিত ইসলাম বিকৃত হয়েছে খ্রীষ্টানদের তৈরি মাদরাসাগুলো থেকে’। আর একথা সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট যে, খ্রীষ্টানরা মাদরাসা তৈরির সূচনা করেছে ১৭৮১ সালে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা তৈরির মাধ্যমে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, এই লেখার মাধ্যমে তারা বুঝাতে চায় যে, ইসলাম বিকৃত হয়েছে মাত্র গত দুইশত বছরের আগ থেকে। আর আগের বক্তব্যগুলো দ্বারা তারা দাবি করেছিলো, ইসলাম বিকৃত করেছে ১৩০০ বছর আগেই। তাহলে আমরা হেযবুত তওহীদের কোন কথাটা সত্য হিসাবে মানবো? আগের কথা নাকি পরের কথা? দু’টোর যেকোনো একটা যদি সত্য বলে মেনে নিই, তাহলে আরেকটা তো নিশ্চয় মিথ্যা। তার অর্থ দাঁড়াল, হেযবুত তওহীদের দাবি মিথ্যায় ভরা। আর মিথ্যুকদের কথা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
পাশাপাশি আমরা জানি ১৭৮১ সালে খ্রীষ্টান গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস এর মাধ্যমে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং সেখানে পরবর্তি ২৭ জন প্রিন্সিপাল ছিলেন খ্রিষ্টান। আর এ কারণেই হেযবুত তওহীদের দাবী হলো- বর্তমানের এ ইসলাম খ্রীষ্টানদের শিখানো।
তাহলে যদি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, তর্ক এড়াতে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে পড়ালেখা করা সকলেই খ্রিষ্টানদের ইসলাম শিখেছেন এবং সেটাই আলেমরা প্রচার করে যাচ্ছেন। কিন্তু এ কথা তো সত্য যে, কওমী মাদরাসা ইংরেজ-বেনিয়ারা তৈরি করে নি, বরং যারা ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের মূল নায়ক ছিলেন, বিশেষ করে; কাসেম নানুতুবী র: মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী র: হুসাইন আহমাদ মাদনী র: তাদের মাধ্যমেই এ মাদরাসার পথ চলা। তাহলে দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের কাছে যে ইসলাম রয়েছে, সেটা কী করে খ্রিষ্টানদের ইসলাম হয়? যেহেতু দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম ইংরেজদের থেকে কোনো জ্ঞান অর্জন করেননি, বরং তাদেকে বিতাড়িত করেছেন উলামায়ে দেওবন্দ। সুতরাং কওমী উলামাদের কাছে যে ইসলাম রয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর রসুলে সাঃ-এর প্রকৃত ইসলাম, খ্রিস্টানদের ইসলাম নয়।
এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। [সুরা সফ : ৯]
প্রিয় পাঠক, যে ইসলাম ধর্মটি এসেছে সকল ধর্মকে ধুলিস্যাৎ করতে, সে ইসলামের ব্যপারে যদি কেউ বলে যে, ‘বিশ্বব্যপী চলমান ইসলাম খ্রীষ্টানরা বিকৃত করে ফেলেছে’ তাহলে এ কথাটির অর্থ কি এই দাঁড়ালো না যে, মহান আল্লাহ ইসলাম পাছিয়েছিলেন সব ধর্ম ধ্বংস করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু সেটা হলো না বরং অন্য ধর্ম ইসলামকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ বিষয়টা কি অত্র আয়াতের প্রকাশ্য বিরোধী নয়?
ইসলাম কী নারকীয় সিস্টেম? শান্তি দিতে ব্যার্থ?
প্রিয় পাঠক! আমরা জানি বর্তমান পৃথিবীকে শান্তিময় করার জন্য ইসলামের বিকল্প নেই। ইসলামতন্ত্র ব্যতিরেকে মানবরচিত কোনো তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে অশান্ত এ পৃথিবীকে শান্তিময় করা সম্ভব নয়। জাহিলি যুগের বর্বরতা ও অন্ধকার ঘুচিয়ে সোনালী সমাজ গঠণে ইসলামের ভুমিকাই ছিল প্রধান। সেই অবিকৃত দ্বীন ইসলাম সর্বত্র পালন করলে আজও শান্তি আসতে বাধ্য।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কিন্তু এ মহাসত্যকে সরাসরি অস্বীকার করে হেযবুত তওহীদ লিখেছে-
বর্তমানে তওহীদবিহীন যে ইসলাম দুনিয়াতে চোলছে আমরা সেই বিকৃত বিপরীতমুখী এসলামের কথা বোলছি না। এই এসলাম মানবজাতিকে শান্তি দিতে পারে নাই। [মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) পৃ. ১৪]
এখানেই ঘটল বিপত্তি। তানা জানল না তাদের সামনে যে ইসলামটি আছে সেটা আর প্রকৃত রুপে নেই, সেটা বহু আগেই বিকৃত ও বিপরীতমুখী হয়ে গেছে,সেটা দিয়ে আর শান্তি আসবে না। [চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াই : পৃ. ৬]
মানুষ এখন জীবন রক্ষার আশায় ধর্মের দিকেই যেতে চাইবে,কেননা তাদের বস্তুত শান্তি দরকার।কিন্তু মরিচিকা যেমন তৃষিতকে তৃপ্ত করতে পারে না,আরো ক্লিষ্ট করে তেমনি ১৩০০ বছর ধরে বহুভাবে বিকৃত হওয়া ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মগুলোও মানুষকে কেবল সুখস্বপ্নে বিভোর করে প্রতারিত করে এবং করবে। [চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াই : পৃ. ৫]
সুতরাং তাদের কাছে যে এসলাম আছে সেটা দিয়ে অমন শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করার চিন্তাও হাস্যকর। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ১৮]
সমস্ত তন্ত্র মন্ত্র এবং মতবাদের ব্যর্থতা ও অশান্তি থেকে পরিত্রান চৌদ্দশ বছরের বিকৃত ইসলাম দিতে পারবেনা। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ১৫]
যে ধর্ম মানুষকে শান্তি দিতে পারে না সেটা আত্মাহীন ধর্মের লাশ। [সবার ঊর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ৯]
আসুন, আমরা সবাই মিলে এই নারকীয় সিস্টেমটাকে পাল্টাই। হেযবুত তওহীদ এর প্রতিষ্ঠাতা এমাম এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আল্লাহ-রসুলের হারিয়ে যাওয়া যে প্রকৃত, সত্য জীবনব্যবস্থা মানবজাতির সামনে তুলে ধোরেছেন তা গ্রহণ কোরি। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ২০]
অর্থাৎ তাদের দাবি হলো, ইসলাম একটি অশান্তির ধর্ম, নারকীয় সিস্টেম। যা থেকে আর শান্তির প্রত্যাশা করা বোকামী।
ইসলাম কী বলে?
এক. আমি ইতিপূর্বেই আপনাদের সামনে হেযবুুুত তওহীদের বই থেকেই প্রমাণ করেছি যে, এ ইসলাম আজও বিকৃত হয়নি। সুতরাং ইসলাম যেহেতু বিকৃত হয়নি, সেহেতু এ ইসলাম যদি পূর্ণাঙ্গভাবে মানা হয়, তাহলে অবশ্যই শান্তি আসবে। এ কথার অস্বীকার করা কুুুুফরী। মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلُنَا یُبَیِّنُ لَكُمْ كَثِیْرًا مِّمَّا كُنْتُمْ تُخْفُوْنَ مِنَ الْكِتٰبِ وَ یَعْفُوْا عَنْ كَثِیْرٍ قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّ كِتٰبٌ مُّبِیْنٌ یَّهْدِیْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلٰمِ وَ یُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَ یَهْدِیْهِمْ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ
হে আহলে কিতবাগণ! তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় এ দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন নিজ ইচ্ছায়। আর তাদের পথ দেখান সরল পথ। [সূরা মায়েদা : ১৫-১৬]
উপরন্তু আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ طُوبَى لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির (আল্লাহর বিধানের অনুসরন) দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল। [সুরা রা’দ : ২৮-২৯]
উক্ত আয়াতে দু’টিতে ইসলামের সংবিধান কুরআনকে শান্তির মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে। কিন্তু যারা ইসলামের বিধান মানবে না, তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا
এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে। [সুরা ত্বহা : ১২৪]
অপর আয়াতে মহান রব বলেন,
فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلاَمِ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاء كَذَلِكَ يَجْعَلُ اللّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ
অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন-যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনি ভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাদের উপর আযাব বর্ষন করেন। [সুরা আন’আম : ১২৫]
উক্ত আয়াত দু’টিতে কাফেরদের জন্য অশান্ত জিবনের কথা বলা হয়েছে। আর আগের আয়াত দু’টিতে ইসলাম পালন করলে শান্তি দেওয়ার ওয়াদা করা হয়েছে। সুতরাং ইসলামকে অশান্তি সৃষ্টিকারী বা নারকীয় সিস্টেম বলা নিঃসন্দেহে কুফরী মন্তব্য।
দুই. প্রচলিত ইসলাম ধর্ম যে আজও শান্তি দিতে সক্ষম, এ কথা শুধু আমার নয়, বরং খোদ হেযবুত তওহীদেরই দাবি। তারা বিভিন্ন সময় ভিন্নমতাবলম্বীদের দালালি করতে গিয়ে একটি কথা বলে থাকে,
আল্লাহর নাজেলকৃত ধর্মগ্রন্থগুলো এখনো মানুষের কাছে আছে যেগুলো স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করছে। মানুষ সেগুলো ভক্তির সঙ্গে পড়ছে, জানছে, বিচার-বিশ্লেষণ করছে। সেগুলোর মধ্যে সত্য খুঁজে পাচ্ছে, যা তাদের হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরে তুলছে তাদের আত্মার গভীরে প্রভাব ফেলছে। [আক্রান্ত দেশ আক্রান্ত ইসলাম : পৃ. ১৯]
উক্ত বইয়ে তারা সুস্পষ্টভাবে দাবি করলেন যে, আল্লাহর নাযিলকৃত ধর্মগ্রন্থ গুলো আজও অনুসরণকারীদের অন্তর শান্তিতে ভরে তুলছে। তারা সব ধর্মকে যদিও এখানে টেনে এনেছেন, কিন্তু অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হয়েছে বলে তারাই দাবি করে লিখেছে,
পূর্ববর্তী কেতাবগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৬]
কিন্তু ইসলাম ধর্মের মূলগ্রন্থ কুর’আন সম্পর্কে তারা লিখেছে,
শুধুমাত্র পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারেনি। [জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায় : পৃ. ৫৩]
সুতরাং যেহেতু আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব মানুষকে আজও শান্তি দিচ্ছে বলে তাদের দাবি। আর আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব সমূহের মধ্যে একমাত্র কুরআনই যেহেতু অবিকৃত রয়েছে, সুতরাং এ কুরআনের অনুসরণকারী মুসলিমদেরকে ইসলাম অবশ্যই শান্তি দিতে পারছে ও পারবে। এটা তাদের দাবিতেই প্রমাণ হলো। এরপরও যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলে তাদের সম্পর্কে মহান রবের ঘোষণা,
أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِّن رَّبِّهِ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُم مِّن ذِكْرِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দূর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে। [সুরা যুমার : ২২]
কিন্তু জানার বিষয় হলো, ‘সকল বিকৃত ধর্মগ্রন্থ শান্তি দিতে পারছে’ বলে যারা দাবি করে, সেই তারাই অবিকৃত গ্রন্থ কুরআনের ধর্ম ইসলাম শান্তি দিতে পারছে না এবং পারবে না বলে দাবি করছে। কারণটা কী? আশা করি সুস্থমস্তিকের কারও বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।
প্রচলিত ইসলাম কী জাহান্নামে নেবে?
ইসলাম একমাত্র আল্লাহর মনোনিত ধর্ম ও জান্নাতিদের ধর্ম। নবিজি মুহাম্মাদ সাঃ নবুওয়াত প্রাপ্ত হওয়ার পর তথা শেষ শরিয়ত ‘ইসলাম’ আনয়ন করার পর ইসলাম বহির্ভূত অন্য সমস্ত ধর্ম পালন করলে জাহান্নাম নিশ্চিত এবং ইসলামই একমাত্র জান্নাতের পথ। যা পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কুফরী সংগঠন হেযবুত তওহীদ দাবি করছে যে, এ ইসলাম মানলে কিয়ামতে নাজাত বা মুক্তি পাওয়া যাবে না। তারা লিখেছে,
তাদের বৃহত্তর ভাগ বিশ্বাস করেন যে জন্মসূত্রে মুসলিম হওয়ার বদৌলতে লক্ষ কোটি বছর যদি জাহান্নামের আগুনে জ্বলতেও হয়, তবুও এক সময় তারা জান্নাতে যাবেনই। সুতরাং চিন্তিত হওয়ার মতো তেমন কিছু ঘটেনি। এই দুনিয়ায় মার খাচ্ছি, ঐ দুনিয়ায় জান্নাতের ফল খেয়ে সব ব্যাথা, বেদনা লাঞ্ছনা অপমান ভুলে যাব। তারা জান্নাতে তাদের স্তরে উন্নীত করার জন্য সাধ্যমত আমল করেন যেমন, নামাজ রোজা করেন, ওয়াজের সময় ওয়াজ শোনেন, হজ্বে এস্তেমায় জান। দাড়ি রেখে নিজেকে উম্মতে মোহাম্মদ বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। তাদের এই সত্য বুঝার মত সেই চিন্তা শক্তি নেই যে, যে ধর্মচর্চা তাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা অপমান থেকে রক্ষা করতে পারছে না, সেই ধর্ম পালন করে পরকালীন মুক্তির আশা পোষণ করা সুদূর পরাহত। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৫১]
যে ধর্মচর্চা তাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা অপমান থেকে রক্ষা করতে পারছে না, সেই ধর্ম পালন করে পরকালীন মুক্তির আশা পোষণ করার সুদূর পরাহত। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৫১]
যে ইসলাম খোদ মুসলমানকেই দুনিয়াতে শান্তি দিতে পারল না, সেটা আখেরাতে কি করে জান্নাত দেবে। [ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১৭]
যে ঈমান দুনিয়ার কাজে লাগবে না তা হাশরের দিনেও কাজে লাগবে না।… যার দুনিয়া সুন্দর নয় তার হাশরও সুন্দর হবে না। কারণ আখেরাতের জীবন দুনিয়ার জীবনের প্রতিফলন মাত্র। [জঙ্গিবাদ সংকট : পৃ. ৭৫]
উক্ত কথাগুলো দিয়ে তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, যেহেতু এই ইসলাম দুনিয়াতে মুসলিমদের শান্তি দিতে পারেনি বা পারছে না, সেহেতু আখেরাতেও এর অনুসারী মুসলিমদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারবে না।
ইসলাম কি বলে?
প্রিয় পাঠক! পূর্বের আলোচনায় আমরা প্রমাণ করেছি যে, ইসলাম ধর্ম আজও অবিকৃত রয়েছে এবং ইসলাম ধর্মও শান্তি দিচ্ছে। সুতরাং মুসলিমরা যেহেতু দুনিয়াতে শান্তি পাচ্ছে, সেহেতু কেয়ামতেও পাবে। এরপরও ‘ইসলাম কিয়ামতে মুক্তি দিতে পারবে না’ এমন দাবি করা হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে স্ববিরোধী মন্তব্য।
মনে রাখা দরকার, দুনিয়াতে কাউকে কষ্টে নিপতিত দেখলে বা জুলুমের স্বীকার হলে তাকে কেয়ামতেও শাস্তি দেয়া হবে এমন দাবি করা চরম মূর্খতার পরিচয়। কারণ মহান আল্লাহ বলেন,
أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ أَن يَسْبِقُونَا سَاء مَا يَحْكُمُونَ
মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ। [সুরা আনকাবুত : ২-৪]
উপরন্তু যারা সত্যিকারার্থে আল্লাহ তাআলার পথে থাকেন, তাদেরকে সবচে বেশি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَیۡءࣲ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصࣲ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَ الِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَ ٰاتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّابِرِین
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। [সুরা বাকারা : ১৫৫]
উক্ত আয়াত দু’টি দ্বারা আমরা জানতে পারলাম, যারা ঈমানদার তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন। যে কারণে নবিজি সাঃ এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের রা. উপর কাফেরদের কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। হাদিস শরীফের অসংখ্যবার সেসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এ কথা খোদ হেযবুত তওহীদই সাহাবাদের আলোচনা করতে গিয়ে তারা লিখেছেন,
স্ত্রী-পুত্র পরিবার ত্যাগ কোরে, বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কোরে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য কোরে, অভিযানে বের হোয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়ে এই হল তার উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী তার প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৭৫]
তাহলে ‘যার দুনিয়া যেমন, তার আখেরাতও তেমন’ যদি মানতে হয়, তাহলে সাহাবায়ে কেরামও কি কিয়ামতে নির্যাতিত হবেন? নাউযুবিল্লাহ। নিশ্চয় না, বরং সাহাবাদের রা. ব্যাপারে মহান রব বলেন,
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা। [সূরা তাওবা : ১০০]
উক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো, দুনিয়াতে নির্যাতন ভোগ করেও সাহাবায়ে কেরাম রা. জান্নাতের সু-সংবাদ পেয়েছেন। ঠিক আজো যারা ইসলামের জন্য নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন, তারাও জান্নাতে যাবেন। কিন্তু দুনিয়া অসুন্দর হলেই সে যদি জাহান্নামী হয়, তাহলে হেযবুত তওহীদের সদস্যরাও জাহান্নামী। কারণ তাদের দাবিতে তারা অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। যা হেযবুত তওহীদ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি। সুতরাং হেযবুত তওহীদের কথা যদি সত্য হয় অর্থাৎ যার দুনিয়া যেমন, তার আখেরাতও তেমন,তাহলে আমরা এ কথা নির্দিধায় বলতে পারি, যেহেতু তাদের দুনিয়া সুন্দর নয়, আখেরাতও সুন্দর হবে না। অতএব তাদের যুক্তিতে তারাই জাহান্নামী হবে, ইসলামের অনুসারীরা নয়।
পক্ষান্তরে ইসলাম পালনকারীদের অবস্থান কোথায় হবে, সে ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
لَهُمْ دَارُ السَّلاَمِ عِندَ رَبِّهِمْ وَهُوَ وَلِيُّهُمْ بِمَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
তাদের জন্যেই তাদের প্রতিপালকের কাছে নিরাপত্তার গৃহ রয়েছে এবং তিনি তাদের বন্ধু তাদের কর্মের কারণে। [সুরা আন’আম : ১২৭]
কিন্তু কেন?
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, অন্যান্য ধর্মগুলো বিকৃত। তারা লিখেছে,
অন্যান্য ধর্মগুলো হাজার হাজার বছরে এমনিতেই এতখানি বিকৃত হয়ে গেছে যে, তা দিয়ে কোনো জাতির সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। [হলি আর্টিজেনের পর : পৃ. ১৭]
অর্থাৎ ঐসকল ধর্মগুলো বিকৃত। তারপরও হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, সকল ধর্ম পালন করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে। তারা লিখেছে,
মানবসমাজে একটি ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, ‘পৃথিবীতে এতগুলো ধর্মের মধ্যে মাত্র একটি ধর্ম সত্য হতে পারে (!) অন্য সকল ধর্ম মিথ্যা এবং ঐ সত্য ধর্মই কেবল মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম।’ এ ধারণা প্রচলিত থাকায় সকল ধর্মের অনুসারীরাই দাবি করে যে, কেবল তাদের ধর্মই সত্যধর্ম। এটা ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মেনে চলে স্বর্গে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো- স্রষ্টা প্রদত্ত সকল ধর্মই সত্যধর্ম। এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর যে কোনোটি মানুষ মেনে চলতে পারে। তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। [দৈনিক বজ্রশক্তি’ শিরোনাম : ‘মানবসমাজে ধর্ম-অধর্ম ও শান্তি-অশান্তির চিরন্তন দ্বন্দ্ব’ তারিখ: ২/২/২০১৬ ঈ:]
অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবিনুসারে পূর্বের ধর্মগুলো বিকৃত হলেও পূর্নাঙ্গভাবে এখনও মানলে জান্নাতে যাওয়া যাবে। যদি তাই হয়, অর্থাৎ ইসলাম যদি অন্য ধর্মের মত হয়, তাহলে অন্য ধর্ম বিকৃত হওয়ার পরও সেসব ধর্ম বর্তমানেও পূর্নাঙ্গভাবে পালন করলে যদি জান্নাতে যাওয়া যায়, তাহলে ইসলাম বিকৃত যদি হয়েও থাকে, আর এ ইসলাম যদি ঐ সকল বিকৃত ধর্মের মতোও হয়, তাহলে এ বিকৃত ইসলামও পূর্নাঙ্গভাবে পালন করলে অন্য ধর্মের অনুসারীদের মত মুসলিমরাও জান্নাতে যাওয়া যাবে না কেন?
মূলত আল্লাহর মনোনীত এ ধর্ম ইসলামের অনুসরণ করলে জাহান্নামে যেতে হবে এমন কথা বলে তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করে ইবলিসের পথে পরিচালিত করতে চায়। পাশাপাশি ইসলাম থেকে জাতিকে বের করে আল্লাহর জান্নাত থেকে উম্মতকে দূরে রাখার মিশনে নেমেছে হেযবুত তওহীদ। এমন জালেমদের সম্পর্কে মহান রব বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعَى إِلَى الْإِسْلَامِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে আহুত হয়েও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে; তার চাইতে অধিক যালেম আর কে? আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। [সুরা সফ : ৭]
সুতরাং এ সমস্ত আয়াতগুলো দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, জান্নাতে যেতে হলে ইসলামকে মানতেই হবে। তাই সাবধান! ইসলাম বাদ দিয়ে জাহান্নামের পথ না ধরি। কারো ধোকায় পড়ে জান্নাত থেকে বঞ্চিত না হই।
ইসলাম মানে কী শান্তি?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবী হলো, ‘ইসলাম’ শব্দের অর্থ শান্তি। প্রচলিত ধারণায় যে ‘ইসলাম’ অর্থ আত্মসমার্পন করা হয়, তা সঠিক নয়। তারা লিখেছেন,
ইসলাম শব্দের আক্ষরিক অর্থই শান্তি। [আকীদা : পৃ. ৫]
সবচেয়ে অশান্তির মধ্যে আছে মুসলিম নামের এ জনসংখ্যা। তাদের মধ্যে ইসলাম নেই অর্থাৎ শান্তি নেই। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৪৩]
আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণের নাম ইসলাম এটা ভুল। [এ ইসলাম ইসলামই নয় : পৃ. ৩১]
ইসলাম মানে শান্তি। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১৩০]
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, ইসলাম মানেই শান্তি, আত্মসমার্পন করার অর্থ সঠিক নয়।
ইসলাম কী বলে?
‘ইসলাম’ শব্দটি আরবী। আরবী ভাষার বিশ্ববিখ্যাত অভিধান ‘লিসানুল আরব’ অনুযায়ী শব্দটির অর্থ হল ‘আত্মসমর্পণ করা’ বা ‘রবের বিধান মেনে নেওয়া।
এ অর্থটি খোদ রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকেও প্রমাণিত। হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন,
لما كان يومُ الفتح قال رسولُ اللهِ ﷺ لأبي قحافةَ أسلِمْ تسلَمْ
মক্কা বিজয়ের দিন নবীজি সা. আবু কুহাফাকে বললেন, আত্মসমার্পন করো, নিরাপত্তা লাভ করবে। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ : খ. ৫ পৃ. ৩০৮]
অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃ বলতেন,
اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি, আপনার প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করেছি, আপনার উপরই ভরসা করেছি, আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি এবং আপনার সহযোগিতায়ই শত্রুদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছি। [সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৭১৭]
উক্ত হাদিসদ্বয় থেকে বুঝা গেলো, ‘ইসলাম’ শব্দের অর্থ আত্মসমার্পন করা তথা আল্লাহপাকের বিধানাবলীসমেত তাঁর কাছে আত্মসমার্পন করা। উপরন্তু জিবরাঈল আ. এর প্রশ্নের জবাবে ‘ইসলাম’ এর পরিচয় দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً . قَالَ صَدَقْتَ
হে মুহাম্মাদ সাঃ আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হচ্ছে এই– তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মাবূদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। [সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ৮]
উপরোক্ত হাদিস থেকেও বুঝা গেলো, ইসলামের মূলই হলো, রবের বিধানসমেত আত্মসমার্পন করা। তারা ‘ইসলাম’র অর্থ ‘আত্মসমার্পন করা’ বা ‘রবের বিধান মেনে নেওয়া’ না মানলেও ‘মুসলিম’ শব্দের অর্থ ঠিকই ‘রবের বিধান স্বসম্মানে গ্রহণ করা’ মেনে নেয়। দেখুন তারা কী লিখেছেন-
‘মুসলি: শব্দটি এসেছে সালাম থেকে। কোনো কিছু সসম্মানে গ্রহণ করে নেয়াকে বলা হয় তসলিম করে নেয়া। যারা আল্লাহ’র দেয়া দীনুল ইসলামকে সসম্মানে গ্রহণ করে নিয়ে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ করল, তারা মুসলিম। [এসলামেরর প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৩৬]
মুসলিম শব্দের অর্থ হল যে বা যারা আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থাকে তসলিম অর্থাৎ স্বসম্মানে গ্রহণ করে নিজেদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে অন্য কোন রকম জীবনবিধানকে স্বীকার করে না, সে বা তারা হলো মুসলিম।
সূত্র: বিকৃত সুফিবাদ পৃ:৪৪ প্রকৃত রুপরেখা -৩৬
পাঠক, কী হাস্যকর! ভেবে দেখেছেন? ইসলামের মানে ‘আত্মসমার্পন করা’ অর্থটি তাদের কাছে ভুল। অথচ সেই ইসলামের অনুসারী ‘মুসলিম’ শব্দের অর্থ আত্মসমার্পনকারী সঠিক। এতবড় মূর্খতা! কিন্তু কেন? কারণ এ মূর্খ পণ্ডিতদের মহাগুরু পন্নী সাহেবের আরবী জ্ঞান সম্পর্কে কী বলেছে দেখুন। পন্নী বলেন,
আমি বাংলা জানি,যেটুকু জানা দরকার মানুষের,ইংলিশ জানি, যতটুকু মানুষের জানা দরকার,আমি আরবী জানি না,আরবীতে আমি নিরক্ষর। ঠিক আক্ষরিকভাবে নয়,কিন্তু আমি আরবী জানি না। আর যে এসলাম নিয়ে কথা সেই এসলাম রোয়েছে কোর’আন-হাদীসে আর সেটার ভাষা আরবী।ওখানে আমি বাস্তবিক অর্থে নিরক্ষর। [আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা : পৃ. ৫৫]
সুতরাং প্রমাণ হলো, ইসলাম মানে আত্মসমার্পন করা। ইসলাম মানেই শান্তি দাবিটা সঠিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা এই অর্থটি পরিবর্তন করতে চায় কেন? কারণ তাদের দাবী হলো, বর্তমানে সঠিক ইসলাম পৃথিবীতে কোথাও নেই। কারণ হিসাবে তারা বলে থাকেন,
এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায়-সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ১৮]
মানুষ এখন জীবন রক্ষার আশায় ধর্মের দিকেই যেতে চাইবে,কেননা তাদের বস্তুত শান্তি দরকার।কিন্তু মরিচিকা যেমন তৃষিতকে তৃপ্ত করতে পারে না,আরো ক্লিষ্ট করে তেমনি ১৩০০ বছর ধরে বহুভাবে বিকৃত হওয়া ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মগুলোও মানুষকে কেবল সুখস্বপ্নে বিভোর করে প্রতারিত করে এবং করবে। [চলমান সংকট নিরসনে আদর্শিক লড়াই : পৃ. ৫]
সুতরাং তাদের কাছে যে এসলাম আছে সেটা দিয়ে অমন শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করার চিন্তাও হাস্যকর। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ১৮]
সমস্ত তন্ত্র মন্ত্র এবং মতবাদের ব্যর্থতা ও অশান্তি থেকে পরিত্রান চৌদ্দশ বছরের বিকৃত ইসলাম দিতে পারবেনা। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ১৫]
বুঝা গেলো, তাদের মূল টার্গেট হলো ইসলামকে বিকৃত প্রমাণ করা। আর এজন্যই তারা ‘ইসলাম’ শব্দের অর্থও পাল্টে দিয়েছে।
ইসলাম কী সংস্কার করতে হবে?
প্রিয় পাঠক! শুরুতেই আপনাদের জানিয়ে রাখি বর্তমানে ইসলাম বিদ্বেষীরা কুরআনের আয়াত গুলো পরিবর্তন করার হাজারও চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কোন ভাবেই সফল হতে না পেরে অবশেষে কুরআনের ধর্ম সংস্কার করার নাম দিয়ে অনেক কার্যক্রম শুরু করেছে। যেমন আমাদের দেশেই আছে ‘আহলে কুরআন’ ‘কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ ইত্যাদী। তাদের মূল দাবি এটাই যে, আগের যুগের ব্যখ্যা তাফসীর এখনকার যুগে আর চলবে না, সুতরাং ইসলাম সংস্কার করতে হবে। আর এ একই সুরে কথা বলছে হেযবুত তওহীদও।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবী অনুযায়ী যেহেতু ইসলাম তার সঠিকরূপে নেই এবং যুগের চাহিদা মিটাতে পারছে না, সেহেতু ইসলাম ধর্মকে সংস্কার কর যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। তারা লিখেছে,
যুগের চাহিদা মেটানো ধর্মের বৈশিষ্ট্য। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৭]
যে ইসলাম আজ নানা প্রকার রূপ নিয়ে আমাদের ১১৬ কোটি মুসলমানের দ্বারা চর্চিত হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়। [ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১৫]
ইসলামকে তারা (আলেমরা) সর্বাধুনিক বলেন মুখে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্রভেদে পরিবর্তনশীল তাকে অস্বীকার করেন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে যান। [ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১০৮]
‘ইসলামের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা গুলো কোর’আনের মূলনীতি বজায় রেখে বর্তমান যুগের আলোকে সংস্কার করতে হবে। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৭]
ইসলাম অত্যন্ত প্রাকৃতিক। প্রকৃতি যেমন নিয়ত পরিবর্তনশীল, তেমনি মানুষের জীবনে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন আসে। ইসলাম সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও সমানভাবে যৌক্তিক ও প্রয়োগযোগ্য থাকে। শর্ত হচ্ছে একে কোনোভাবে নির্দিষ্ট সময় ওস্থানের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা যাবে না। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৩]
মুসলিমদেরকে এখন প্রাচীন ধারণা ও মাসলা মাসায়েলের কেতাব থেকে বেরিয়ে বাস্তবমুখী চিন্তা করতে হবে, ইসলামকে বর্তমান যুগে গ্রহণযোগ্য, প্রয়োগযোগ্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। ইসলাম নিঃসন্দেহে সেই অনন্য গুণাবলীর অধিকারী। তা না হলে ইসলামেরই অবমাননা হবে। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৭]
প্রচলিত বিকৃত ইসলাম দিয়ে অপরাধহীন, অবিচারহীন পবিত্র সমাজ গঠন করার চিন্তাও হাস্যকর। [জঙ্গিবাদ সংকট : পৃ. ৪৯]
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো, ইসলামকে যুগের আলোকে সংস্কার করতে হবে।
ইসলাম কি বলে?
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এমন কোন বিষয় নেই যা এ ধর্মে বর্ণিত হয়নি। মহান আল্লাহ বলেন,
مَا فَرَّطْنَا فِيْ الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ
আমি কুরআনে কোন বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে ছাড়িনি। [সূরা আন‘আম : ৩৮]
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ আরও বলেন,
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ
আর আমি তোমার উপরে প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ কুরআন নাযিল করেছি। [সুরা নাহল : ৮৯]
এজন্য রঈসুল মুফাসসিরিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
لوْ ضَاعَ لِيْ عِقَالُ بَعِيْرٍ لَوَجَدْتُهُ فِيْ كِتَابِ اللهِ
আমার উট বাঁধার একটি দড়িও যদি হারিয়ে যায়, তাহলে আমি তা আল্লাহর কিতাবের মধ্যে খুঁজে পাই। [তাফসীরে রুহুল মাআনী : খ. ২৭ পৃ. ৫৮]
অর্থাৎ সকল বিষয় পবিত্র কুরআনে মহান রব বলে দিয়েছেন। আর সেগুলো বুঝার জন্য রাসুলুল্লাহ সাà কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মহান রব বলেন,
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তোদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। [সূরা নাহল : ৪৪]
তাহলে বুঝা গেলো, কুরআন-হাদিস মানুষের জিবনের সকল বিষয় বলে গেছে। ফলে মহান রব ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইসলামকে এমন একটি চুড়ান্ত ধর্ম হিসাবে ঘোষণা করলেন, যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সর্বকালের, সর্বযুগের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। [সুরা মায়েদা : ৩]
সুতরাং যে দ্বীন ইসলামকে মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই পূর্ণাঙ্গ করেছেন, সে দ্বীনকে যুগের আলোকে সংস্কার করার মত সাহস করা কতবড় বিপদজনক বিষয় তা পাঠকমহল একটু ভেবে দেখুন। এমন হিম্মত বা সাহস কি কোন মুসলিম করতে পারে? নিশ্চয় না।
উপরন্তু আল্লাহর দ্বীন ইসলাম অপরিবর্তনশীল এটা মহাসত্য কথা। আর আল্লাহ তায়ালা ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ থেকেই অনেক সময় এ সত্যকথাগুলো তাদের অজান্তেই বের করে দেন। তেমনি হয়েছে হেযবুত তওহীদের বেলায়ও। তারা স্পষ্ট করে তাদের অজান্তেই লিখেছে ফেলেছেন,
কাজেই এর (ইসলামের) মধ্যে এমন কোন আইন কানুন নিয়ম আল্লাহ দিলেন না যা পৃথিবীর এক জায়গায় জন্য ঠিক অন্য জায়গার জন্য অঠিক, পালন করা মুশকিল বা অচল। এমনও দিলেন না যা আজ ঠিক আগামীতে কঠিন বা অচল। এক কথায় স্থান বা কালের প্রভাবাধীন নয়। [শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৬৪]
এই দিনের একটি নাম হচ্ছে দীনুল ফেতরার অর্থাৎ প্রাকৃতিক দিন কারণ প্রাকৃতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল করে আল্লাহ এই জীবনব্যবস্থাটি প্রণয়ন করেছেন।আগুন-পানি আলো-বাতাস অক্সিজেন ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান গুলো যেমন পৃথিবীর সকল মানব জাতির জন্য অবশ্য প্রয়োজন এবং সবার উপযোগী তেমনি এই জীবন ব্যবস্থাও পৃথিবীর সর্বত্র প্রযোজ্য, প্রয়োগযোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিদায়ক। [শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৭২]
পাশাপাশি ইসলামকে আধুনিক যুগে যারা অচল বলতে চান সমালোচনা করতে গিয়ে তারা বলেই ফেললেন,
স্রষ্টা,আল্লাহ (রাজনীতিক, আর্থনীতিক, সামরীক, প্রশাসনিক, শিক্ষা ইত্যাদী) ঐ সব ব্যাপারে যে ব্যবস্থা বিশ্বনবীর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তা তাদের কাছে চৌদ্দশ’ বছর আগের এক অশিক্ষিত নিরক্ষর বেদুইন জাতির জন্য প্রযোজ্য হলেও বর্তমান আধুনিক যুগে অচল, তাই পরিত্যাজ্য। একথা তাদের বিগত প্রভুরাই শিখিয়েছেন, তারা শিখেছেন, তাই বিশ্বাস করেন। [শিক্ষ্যাব্যবস্থা : পৃ. ৬৭]
প্রিয় পাঠক! তারা নিজেরাই যখন এমন দাবি করলেন যে, ‘ইসলাম পৃথিবীর সর্বত্র প্রযোজ্য, প্রয়োগযোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিদায়ক’। এরপরও কী ‘ইসলাম ধর্ম যুগের আলোকে সংস্কার করতে হবে’ এমন কথা বলা কোন মুসলিমের জন্য সুযোগ রয়েছে?
সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য কী?
প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদের ‘যুগের আলোকে ধর্মসংস্কার করতে হবে’ এ দাবির পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের লুকিয়ে রয়েছে। কারণ যখন তারা ইসলাম সংস্কারের কথা বলে, ইসলামের বিধিবিধানে হাত দেয়ার সুযোগ করে নিতে পারবে, তখন তারা তাদের নিজস্ব মতবাদকে ইসলামের নামে চালিয়ে দিতে পারবে, বানাতে পারবে ধর্মের নামে অধর্ম। যেমনটি করেছিল পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসারী তথা ইহুদী-খ্রিষ্টানরা। ফলে এমন একটা ধর্মের আবিস্কার করবে, যেটা দিয়ে সকল ধর্ম পালন করার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। যুগে যুগে মিথ্যা বিলিন হয়ে যায়,সত্য হয় বিকশিত। মহান রব বলেন,
يُرِيدُونَ لِيُطْفِؤُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। [সুরা সফ : ৮]
ইসলাম কী যুক্তির আলোকে মানতে হবে?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ইসলাম ধর্ম মানতে হবে যুক্তি দিয়ে। তারা লিখেছে,
ধর্মজীবী তথাকথিত আলেম পুরোহিত শ্রেণীর খপ্পরে পড়ে দীন আজ বিকৃত এবং বিপরীতমুখী আকার ধারণ করেছে। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে এই বিকৃতি পৌঁছায়নি। আর এরই ধারাবাহিকতায় দীন আজ অন্ধ বিশ্বাসের অলীক ধ্যান-ধারণায় পরিণত হয়েছে। বাস্তবে ইসলাম কোন অন্ধভাবে বিশ্বাসের যোগ্য বিষয় নয়। প্রকৃত ইসলাম যুক্তির উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আর তাই যুক্তি দিয়ে ইসলামকে নিরীক্ষণ করতে হবে। [ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৩৬]
যে ইসলাম আজ নানা প্রকার রূপ নিয়ে আমাদের ১৬০ কোটি মুসলমানের দ্বারা চর্চিত হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়। [ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১৫]
অনেক যুক্তিশীল মানুষ ধর্মের নামে চলা এই কুপমন্ডুকতাকে মেনে নিতে না পেরে পুরোপুরি ধর্মবিদ্বেষী হয়েছেন [গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৫৯]
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে জানা গেলো হেযবুত তওহীদের বিশ্বাস হলো, ‘যুক্তি দিয়েই ইসলাম মানতে হবে’।
ইসলাম কী বলে?
ইসলামের মূল হলো, ওহি। যেখানে যুক্তি তালাশের কোনো সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে সবচে চমৎকার করে হযরত আলী রা. বলেছেন,
لَوْ كَانَ الدِّيْنُ بِالرَّاْىِ لَكَانَ اَسْفَلَ الْخُفِّ اَوْلى بِالْمَسْحِ مِنْ اَعْلَاهُ وَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَمْسَحُ عَلى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ
দ্বীন যদি (মানুষের জন্য) যুক্তি অনুসারেই হতো, তাহলে মোজার উপরের চেয়ে নীচের দিকে মাসাহ করাই উত্তম হত। অথচ আমি রসূলুল্লাহকে সা. দেখেছি যে, তিনি তাঁর মোজার উপরের দিক মাসাহ করেছেন। [সুনানে আবু দাউদ : হাদিস নং : ১৬২]
সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলামি আইন-কানুন টোটালটাই নির্ভর করে ওহীর জ্ঞানের ওপর। এরপরও যারা যুক্তিকেই মানদণ্ড আখ্যায়িত করতে চান, তাদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء قَلِيلاً مَّا تَذَكَّرُونَ
তোমরা অনুসরণ করো, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। [সূরা আ’রাফ : ৩]
বুঝা গেলো, আল্লাহ পাকের ওহি ব্যতিত নিজের মনগড়া চিন্তা বা অন্য কারো মতবাদ গ্রহণ করার কোনো সুযোগই ইসলামে নেই। আল্লাহ পাক আরও বলেন,
فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। [সূরা কাসাস : ৫৯]
উপরন্তু ওহিকে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে যুগে যুগে মানুষের যুক্তি ও প্রমাণ ছিল সামাজিক প্রচলন, পূর্বপুরুষদের বিশ্বাস বা নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দ। কুরআনে একে মানব সমাজের বিভ্রান্তির মূল কারণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে । কারণ গায়েব বা অদৃশ্য জগত সম্পর্কে ওহীর বাইরে যা কিছু বলা হয় সবই ধারণা, অনুমান, আন্দায বা কল্পনা হতে বাধ্য। এরকম একটি নড়বড়ে মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার বিধান জেনে আমল করার কথা বলা কোনো বুদ্ধিমানের বক্তব্য হতে পারে না। সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন বিবেক ও যুক্তিগ্রাহ্য ওহীকে প্রত্যাখ্যান করে এরূপ আন্দায বা ধারণাকে বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা নিজের মর্জি বা প্রবৃত্তির অনুসরণ বৈ কিছুই নয়। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন
بَلِ اتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَهْوَاءهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ فَمَن يَهْدِي مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ
বরং জালেমরা অজ্ঞানতাবশতঃ তাদের খেয়াল-খূশীর অনুসরণ করে থাকে। অতএব, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কে বোঝাবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। [সূরা রূম : ২৯]
সুতরাং বুঝা গেলো, নিজেদের মনে উদয় হওয়া যুক্তি ও চিন্তা চেতনার অনুসরণ করে ইসলাম পালন করতে যাওয়া মূর্খতা বৈ কিছু না।
যুক্তি ও শয়তান:
শয়তান তো অনেক বড় ইবাদতগুজার ছিলো। কিন্তু আল্লাহ যখন তাকে নির্দেশ দিলেন,
وَإِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلَـٰۤىِٕكَةِ ٱسۡجُدُوا۟ لِـَٔادَمَ فَسَجَدُوۤا۟ إِلَّاۤ إِبۡلِیسَ
স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাগণকে বলেছিলাম, ‘আদমকে সাজদাহ করো। তখন ইবলিস ছাড়া সবাই তাঁকে সাজদাহ করলো। [সুরা ইসরা : ৬১]
উক্ত আয়াত থেকে জানা গেলো, সকল ফিরিস্তারা সিজদা করলেও ইবলিস সিজদা করেনি। কিন্তু ইবলিস সিজদা করলো না কেন? এ সম্পর্কে মহান রব বলেন,
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلاَّ تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَاْ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। [সুরা আরাফ : ১২]
এখানে ইবলিস আল্লাহ তাআলার বিধান পালন করতে গিয়ে যুক্তির তালে পড়লো। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে বিতাড়িত করে দিয়েছিলেন। সুতরাং বুঝা গেলো, আল্লাহ তাআলার বিধানাবলী টোটালটাই নির্ভর করে ওহির ওপর, যুক্তির ওপর নয়। যুক্তি তালাশ করা ইবলিস শয়তানের কর্ম। সেই একই কাজ বর্তমানে করতে চাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। তাহলে তাদেরকে হেযবুত তওহীদ না বলে, বরং হেযবুশ শয়তান বলাই শ্রেয় নয় কী? মনে রাখা চাই, (Commonsense) তথা আকল বা যুক্তি এগুলো মুতাজিলা সম্প্রদায় ও নাস্তিকদের থিম। তাই চলুন, তাদের অনুসরণ করে যুক্তির তালে পড়ে শয়তান না হয়ে মুসলিম হতে ট্রাই করি।
মতলব কী?
মূলত এ কথার পেছনে তাদের মূল টার্গেট হলো, মানুষকে বেঈমান বানানো। সেটা এভাবে যে, যখন মানুষ ইসলাম পালন করতে যুক্তি তালাশ করতে যাবে, অথচ ইসলামের অসংখ্য বিষয় যুক্তিতে মিলবে না, তখন তাদের সামনে বিরাট প্রশ্নের পাহাড় জমা হবে। আর এ কারণেই যুক্তির পেছনে পড়ে যুক্তিশীল অজস্র মানুষ নাস্তিক হচ্ছে। এটা তারা বুঝেই মানুষকে যুক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইসলাম ও ঈমানের দিকে ডাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈমান ও ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই তারা মানুষের সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান করে, ইসলাম ও ঈমানের দিকে ডাকে না। দেখুন তারা কী বলে?
আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে। আমরা যদি শান্তিতে জীবন যাপন করতে চাই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিময় জীবন উপহার দিতে চাই তার জন্য আমাদেরকে সকল প্রকার কলহ-বিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১০৫]
আমরা বলি না যে, আপনারা আল্লাহ বিশ্বাসী হয়ে যান, মো’মেন হয়ে যান, পরকালে বিশ্বাসী হয়ে যান, আল্লাহর প্রতি কে ঈমান আনবে কে আনবে না আনবে সেটা তারা আল্লাহর সঙ্গে বুঝবে। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়। [শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৫২]
মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। [সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ১০]
ইসলাম কী বলে?
অথচ উম্মতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্টত্বের কারণই হলো মানুষকে দ্বীনের দিকে আহ্বান করার কারণে। মহান রব বলেন,
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। [সুরা আলে ইমরান : ১১০]
যারা আল্লাহপাকের দিকে মানুষকে ডাকে, তারাই শ্রেষ্ট বলে খোদ আল্লাহপাকই বলেছেন,
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার। [সুরা ফুসসিলাত : ৩৩]
উপরন্তু ইসলামের দিকে আহ্বান করতে মহান রব নিজে তাঁ রাসুল সাঃ-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
قُلْ هَـذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللّهِ وَمَا أَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
বলে দিনঃ এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই। [সুরা ইউসুফ : ১০৮]
রাসুলুল্লাহ সাঃ-কে মহান রব ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করতে প্রেরণ করেছেন। মহান রব বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। [সুরা আহযাব : ৪৫-৪৬]
উপরন্তু রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন কাউকে কোনো জায়গার গভর্ণর করে পাঠাতেন, তখন দ্বীন ইসলামের দিকে আহ্বান করার নির্দেশ দিতেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا بَعَثَ مُعَاذًا عَلَى الْيَمَنِ قَالَ إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ أَهْلِ كِتَابٍ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ فَإِذَا عَرَفُوا اللهَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا فَعَلُوا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِذَا أَطَاعُوا بِهَا فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘আয (ইবনু জাবাল) (রাঃ)-কে শাসনকর্তা হিসেবে ইয়ামান দেশে পাঠান, তখন বলেছিলেনঃ তুমি আহলে কিতাব লোকদের নিকট যাচ্ছো। সেহেতু প্রথমে তাদের আল্লাহর ‘ইবাদাতের দাওয়াত দিবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদের তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দিয়েছেন। যখন তারা তা আদায় করতে থাকবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধন-সম্পদ হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে তখন তাদের হতে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে। [সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ১৪৫৮]
সুতরাং এতো এতো আয়াত ও হাদিস থাকার পরও যারা বলে, ইসলাম ও ঈমানের দিকে আহ্বান করা আমাদের মিশন নয়, তারা আর যাই হোক মুসলিম হতে পারে না।
ইসলাম পালন করা কী জরুরি নয়?
বর্তমানে প্রত্যেক মানুষের জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ফরজ। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম চাই তা আসমানি ধর্ম হোক বা মানবরচিত কোনটাই পালন করে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা বা জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, পৃথিবিতে প্রচলিত সকল ধর্মের যেকোনো একটা ধর্ম পালন করা যাবে। শুধু ইসলাম পালন করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে এমন কথা ভুল। দেখুন তাদের মন্তব্যগুলো,
এক. ধর্ম পরিবর্তন করানো ইসলামের কাজ না:
মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায়-সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ১৮]
মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। [সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ১০]
আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে। আমরা যদি শান্তিতে জীবন যাপন করতে চাই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিময় জীবন উপহার দিতে চাই তার জন্য আমাদেরকে সকল প্রকার কলহ-বিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ১০৫]
দুই. সব ধর্ম পালন করার আহ্বান:
আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এক স্রষ্টার বান্দা হিসাবে তাঁর বিধানের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা বলছি। [মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৭৫]
তিন. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ ইসলাম গ্রহণে বাধ্যতামূলক বলেননি:
মহানবী মোহাম্মদ (দ:) যখন মদীনায় রাষ্ট্রগঠন করলেন তিনি ইহুদি বা খ্রিস্টানদের উপর কোর’আনের বিধি-বিধান চাপিয়ে দেন নি। এবং ইহুদিরাও আল্লাহর রসুলকে শাসক হিসাবে মেনে নিলেও বিচারক হিসাবে মেনে নিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। আল্লাহর রসুলও তাদেরকে তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী তওরাতের বিধান দিয়েই বিচার করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তওরাতে যে বিধান দিয়েছেন সেই বিধান যদি ইহুদিরা মান্য করে সেটাই যথেষ্ট। বরঞ্চ আল্লাহ সেদিকেই তাদেরকে আহ্বান করেছেন, কোর’আন মানতে হুকুম করেন নি। কারণ তওরাতও আল্লাহরই হুকুম’। -হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ।
চার. ইসলাম পালন না করলেও জান্নাতে যাওয়া যাবে:
মানবসমাজে একটি ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, ‘পৃথিবীতে এতগুলো ধর্মের মধ্যে মাত্র একটি ধর্ম সত্য হতে পারে (!) অন্য সকল ধর্ম মিথ্যা এবং ঐ সত্য ধর্মই কেবল মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম।’ এ ধারণা প্রচলিত থাকায় সকল ধর্মের অনুসারীরাই দাবি করে যে, কেবল তাদের ধর্মই সত্যধর্ম। এটা ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মেনে চলে স্বর্গে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো- স্রষ্টা প্রদত্ত সকল ধর্মই সত্যধর্ম। এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর যে কোনোটি মানুষ মেনে চলতে পারে। তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। [হেযবুত তওহীদের মুখপাত্র ’দৈনিক বজ্রশক্তি’ তারিখ: ২/২/২০১৬ ঈ: শিরোনাম: মানবসমাজে ধর্ম-অধর্ম ও শান্তি-অশান্তির চিরন্তন দ্বন্দ্ব]
স্বর্গে যাবার জন্য আল্লাহ যে বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে বলেছেন সেগুলি বিশ্বাস করতে হবে। এখানেই প্রশ্ন, ইসলামের শেষ সংস্করণ এসে যাওয়ার পরও ইসলাম গ্রহণ না করে, পূর্ববর্তী ধর্মবিশ্বাসে স্থির থেকে কেউ কি স্বর্গে যেতে পারবেন? এর জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, অবশ্যই তাদেরও জান্নাতে যাওয়ার পথ খোলা আছে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তাদেরকে শেষ নবী ও শেষ গ্রন্থ কোর’আনকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। এটি শাশ্বত সত্য যে, বিশ্বাসী হিসাবে পরিগণ্য হতে হলে ধর্মের কয়েকটি মূল বিষয়ের উপর বিশ্বাস থাকতেই হবে। সেগুলি হচ্ছে: আল্লাহর উপর, মালায়েকদের উপর, সকল ঐশীগ্রন্থের উপর, সকল নবী-রসুলগণের উপর, কেয়ামত দিবসের উপর, ভাগ্যের ভালো-মন্দের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ এ কথার উপর এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর। তাই শেষ নবী এবং শেষ কেতাবের উপর অবিশ্বাস রেখে জান্নাতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই তেমনিভাবে পূর্ববর্তী কোনো নবী-রসুল-অবতার এবং তাঁদের আনীত কেতাবের প্রতিও অবিশ্বাস রেখে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে লাভ নেই’। [হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ। দৈনিক দেশের পত্র, সাপ্তাহিক সংকলন, সংখ্যা : ২৪ পৃ. ২৫]
নাজ্জাশী মুসলমান না হয়েও শেষ নবীকে আত্মা থেকে বিশ্বাস করে তাঁকে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য জান্নাতবাসী হয়েছেন। [হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে ‘আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম কোনটি’? শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ]
অর্থাৎ তারা বলতে চায়, ইসলাম পালন করা জরুরী নয়।
ইসলাম কী বলে?
অথচ আল্লাহ তাআলা সকলের জন্য ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ ও মনোনীত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। [সুরা মায়িদা : ৩]
উক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো, আল্লাহপাকের কাছে ইসলামই একমাত্র মনোনীত দ্বীন। সেজন্য ইসলাম ধর্ম ব্যাতিত অন্য ধর্ম পালন করলে কি হবে সেটাও মহান আল্লাহ খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে বলেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। [সুরা আলে ইমরান : ৮৫]
যেহেতু একমাত্র ইসলামই পালন করা ফরজ সেজন্য রাসুলুল্লাহ সাঃ কে মহান আল্লাহ অন্য সকল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য দায়িত্ব ঘোষণা করে বলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্ম সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। [সূরা তাওবা : ৩৩]
এত এত সুস্পষ্ট আয়াত থাকতেও কিভাবে এমন দাবি করা যায় যে, ইসলাম গ্রহণ করা জরুরী নয়? কিভাবে বলা যায় যে, ইসলাম না মেনে যেকোনো ধর্ম মেনেও জান্নাতে যাওয়া যাবে? এটা কী সুস্পষ্ট কুফরী মতবাদ নয়?
স্ববিরোধী বক্তব্য:
একদিকে তারা পিঠ বাঁচানোর জন্য দাবী করছে-
হেজবুত তাওহীদ প্রকাশ্যভাবে চায় আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা (দীন) পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠিত হোক। [যামানার এমামের পত্রাবলী : পৃ. ৫১]
রসূলুল্লাহ স: যা করেননি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না। [সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ১৪]
সকল ধর্মের মানুষের উচিৎ নিজেদের ধর্মের অবতারদের নির্দেশ মোতাবেক শেষ রসূলের (দ:) আনীত সিস্টেম গ্রহণ কোরে নেওয়া। আমরা জানি আপনাদের ধর্ম গুলিতে জাতীয় জীবন পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন-কানুন নেই, যে বিধানগুলি আপনাদের ধর্মে আছে সেগুলো কাল পরিক্রমায় বিকৃত হয়ে গেছে। সুতরাং ইচ্ছা করলেও আপনাদের ধর্ম গুলি দিয়ে জাতীয় জীবন চালাতে পারবেন না। [শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৭৪]
নবিজি বলেছেন, এই পথে (সিরাতুল মুস্তাকিমে) চলো। অন্যান্য পথে চলো না। কারণ ঐ সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর ঐ পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। [বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৩৬]
আবার অন্যদিকে দাবী করছে, ‘মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায়-সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ১৮]
এখন আপনারাই বলুন, হেযবুত তওহীদ কী সত্যবাদী না মিথ্যুক?
হেযবুত তওহীদ কী আসল ইসলাম?
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, প্রচলিত ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয়, বরং হঠাৎ করে পন্নী সাহেব ইসলামের নামে যে মতবাদ প্রচার করে গেছে, সেটাই গ্রহণ করতে হবে। তারা লিখেছে,
প্রকৃত এসলাম তেরশ’ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। [এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৬১]
কিন্তু সেই হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম মহান আল্লাহ আবার দয়া করে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান যামানার এমাম এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কে বুঝিয়ে দিয়েছেন। [জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায় : পৃ. ৫০]
আমরা আহবান করছি- বর্তমানের চালু এই ইসলামটা আসলে আল্লাহ রসুলের ইসলামই নয়, খ্রিস্টান ইসলাম, এই খ্রিস্টান ইসলাম পরিত্যাগ করে প্রত্যাখ্যান করে আবার আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলামে প্রবেশ করতে। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : ২২]
আসুন, আমরা সবাই মিলে এই নারকীয় সিস্টেমটাকে পাল্টাই। হেযবুত তওহীদ এর প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আল্লাহ-রসুলের হারিয়ে যাওয়া যে প্রকৃত, সত্য জীবনব্যবস্থা মানবজাতির সামনে তুলে ধোরেছেন তা গ্রহণ কোরি। [আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই : পৃ. ২০]
আল্লাহর রহমে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আবার সে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম বুঝতে পেরেছেন। [এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৮৯]
কুরুক্ষেত্রের ধ্বংসযজ্ঞের পর যেমন নতুন শান্তিময় যুগের সূচনা হয়েছিল, নূহের বন্যার পর যেমন নতুন সভ্যতার সূচনা হয়েছিল, তেমনি এবার আল্লাহ নতুন বিশ্বব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য হিজবুত তাওহীদকে সৃষ্টি করেছেন। [গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৩৯]
হেযবুত তাওহীদ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ স্বয়ং, তিনিই একে গত ১৯ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন। এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ মানব জাতির মধ্য থেকে মাননীয় এমামুযযামানকে এ যুগের নেতা হিসেবে মনোনীত করেছেন। [আদর্শিক লড়াই : পৃ. ১৫]
অর্থাৎ তারা বলতে চায়, নবিজি সাঃ-এর আনীত ইসলাম পৃথিবি থেকে হারিয়ে গেছে তের’শ বছর আগেই। কিন্তু প্রকৃত ইসলাম কী তা পন্নী বুঝতে পারলেন তের’শ বছর পর। তাই প্রচলিত ইসলাম ত্যাগ করে পন্নীর ইসলাম গ্রহণ করতে হবে।
ইসলাম কী বলে?
আমি আগেই প্রমাণ করেছি যে প্রচলিত ইসলাম এটাই আসলে ইসলাম এবং অবিকৃত ইসলাম। তথাপি তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, প্রতৃত ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে ১৩০০ বছর আগেই। তাহলে পন্নী সাহেব যে ইসলামের রূপরেখা দাঁড় করালেন সেটা যে আসল ইসলাম এটার সূত্র কী? কারণ সূত্র বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় তো ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। মনে রাখা চাই, ইসলাম ধর্ম একটি চুড়ান্ত বিশ্বব্যবস্থা। যে কারণে ইসলামের কোনো এতটি কথা সনদ বা সূত্র ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সনদ ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করার সুযোগ থাকতো, তাহলে ইহুদী-খ্রিস্টানদের মতো এ ধর্মটাও আর অবিকৃত থাকতো না। এজন্য ইমাম মুসলিম রহি. তাঁর সহিহ মুসলিমের ভূমিকায় নকল করেন বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন,
إن الإسناد من الدين، ولولا الإسناد لقال من شاء ما شاء
সনদ দীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যদি সনদ না থাকতো, তাহলে যার যা ইচ্ছা তাই বলতো। তিনি আরো বলেন,
بيننا وبين القوم القوائم يعني الاسناد
আমাদের ও অমুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে সনদ। (অর্থাৎ আমাদের কাছে সনদ আছে তাদের কাছে এটা নেই।) [মুকাদ্দামায়ে সহিহ মুসলিম]
সুতরাং যদি ইসলাম ১৩০০ বছর ধরে বিকৃত ধর্ম হয়ে থাকে, তবে হেযবুত তওহীদ প্রকৃত ইসলাম কোথায় পেলো, তার সনদ বা সূত্র কী?
মনগড়া ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয়:
রাসুল সাঃ-এর কাছে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি উত্তর দিলেন,
أنْ يُلتمسَ العلمُ عند الأصاغرِ
ছোটদের কাছ থেকে লোকেরা ইলম অর্জন শুরু করা। [মু’জামে কাবীর : খ. ২২ পৃ. ৩৬১]
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ছোট মানুষ বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে তা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হলো,
من الاصاغر قال الذين يقولون برأيهم
যারা নিজেদের মনগড়া কথাবার্তা বলে বেড়ায় তারাই ছোট লোক। [জামিঊ বয়ানিল ইলম : খ. ২ পৃ. ৬১২]
এই হাদীস থেকে বুঝা গেলো, ইসলামের নামে কোনো মনগড়া আবিস্কার গ্রহণ করা জায়েয নেই। এজন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
لا يزال الناس صالحين متماسكين ما أتاهم العلم من أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم ، ومن أكابرهم ، فإذا أتاهم من أصاغرهم هلكوا
সাধারণ মানুষ নবিজি সাঃ-এর সাহাবা ও বড়দের থেকে ইলম অর্জন করতে থাকলে তারা কল্যাণের উপর থাকবে। যখন তারা ছোটদের বা পাপিষ্ঠ মানুষের কাছ থেকে ইলম অর্জন শুরু করে দিবে, তখন ধ্বংস হয়ে যাবে। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : বর্ণনা নং : ২০৪৪৬}
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবনে সীরীন রহি. বলেন,
ان هذا العلم دين فانظروا عمن تاخذون دينكم
এই ইলম হল দ্বীন। তুমি যার কাছ থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো, তাকে ভালোভাবে দেখে নাও। (মুকাদ্দামায়ে মুসলিম শরীফ)
হাদীস, আছার ও বড়দের বাণী সমূহের আলোকে আমরা বুঝতে পারলাম, সনদ বা সূত্রবিহীন ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং সূত্রপরস্পরা যুগযুগান্তর চলে আসা ইসলাম ছেড়ে সূত্রবিহীন পন্নীর ইসলাম গ্রহণ করে মুরতাদ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আর এগুলো বলেই তারা মূলত মানুষকে ইসলাম থেকে দুরে সরিয়ে দিতে চায়। দেখুন নিন্মের আলোচনায় তারা কী দাবি করেছে।
ইসলাম পরিত্যাগ করে হেযবুত তওহীদ গ্রহণ করতে হবে।
মূলত উপরিউক্ত আলোচনা থেকে জানতে পারলাম, হেযবুত তওহীদ মূলত ইসলাম থেকে মুসলমানদের আলাদা করে মুরতাদ বানাতেই সচেষ্ট। আর এ কথা তারা সুস্পষ্টভাবে বলছে। তারা লিখেছে,
এমামুযযামান বোলেছেন, আমার ‘এ ইসলাম ইসলামই নয়’ বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় রসূলের যে হাদীসটি আমি উল্লেখ কোরেছি অর্থাৎ রাসূল তাঁরা আসহাবদেরকে একদিন বোললেন, “ভবিষ্যতে এসলাম বিকৃত হোয়ে যাবার পর হিন্দের (ভারতের) পূর্বে একটি সবুজ দেশ থেকে প্রকৃত এসলাম পুনর্জীবন লাভ করবে।” ০২/০২/২০০৮ তারিখের মো’জেজার মাধ্যমে আল্লাহ এ হাদীসটিরও সত্যায়ন কোরলেন। [আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তাওহীদের বিষয় ঘোষণা : পৃ. ৮৬]
কুরুক্ষেত্রের ধ্বংসযজ্ঞের পর যেমন নতুন শান্তিময় যুগের সূচনা হয়েছিল, নূহের বন্যার পর যেমন নতুন সভ্যতার সূচনা হয়েছিল, তেমনি এবার আল্লাহ নতুন বিশ্বব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য হিজবুত তাওহীদকে সৃষ্টি করেছেন। [গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৩৯]
আমরা আহবান করছি- বর্তমানের চালু এই ইসলামটা আসলে আল্লাহ রসুলের ইসলামই নয়, খ্রিস্টান ইসলাম, এই খ্রিস্টান ইসলাম পরিত্যাগ করে প্রত্যাখ্যান করে আবার আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলামে প্রবেশ করতে। [এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ২২]
আসুন, আমরা সবাই মিলে এই নারকীয় সিস্টেমটাকে পাল্টাই। হেযবুত তওহীদ এর প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আল্লাহ-রসুলের হারিয়ে যাওয়া যে প্রকৃত, সত্য জীবনব্যবস্থা মানবজাতির সামনে তুলে ধোরেছেন তা গ্রহণ কোরি। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ২০।
বুঝা গেলো, তারা মূলত মানুষকে ইসলাম থেকে আলাদা করে হেযবুত তওহীদ গ্রহণ করিয়ে মুরতাদ বানাতে চায়।
ইসলাম কী বলে?
উপরে আমি কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস এমনকি হেযবুত তওহীদের বক্তব্য দিয়েও প্রমাণ করেছি যে, প্রচলিত ইসলামই আসল ও অবিকৃত ইসলাম। সুতরাং এই ইসলাম থেকে মানুষকে আলাদা কা মানেই মুরতাদ বানানো। অথচ মহান রব বলেন,
وَلاَ يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىَ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُواْ وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُوْلَـئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে। [সুরা বাকারা : ২১৭]
আল্লাহপাক আমাদেরকে হেযবুত তওহীদের ষড়যন্ত্র থেকে ঈমানের হিফাযত করেন। আমীন!