প্রিয় পাঠক, শেষ নবী মুহাম্মাদ সা. শেষ ধর্ম ইসলাম নিয়ে দুনিয়াতে আজিবন কাজ করে গেছেন। সাহাবায়ে কেরাম রা. তাবেয়ীগণ এবং নবীজি সা. এর সমস্ত উম্মত ইসলামের মিশন নিয়েই কাজ করে গেছেন আমরণ। এ ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের কাজ হলো, ইসলামের দিকে সকলকে আহ্বান করা। কিন্তু তথাকথিত একটি নামধারী ইসলামী সংগঠণ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, তারাই আসল ইসলামের ধারক-বাহক। কিন্তু তারা তাদের লেখায় দাবি করছে, ইসলামের দিকে আহ্বান করা তাদের কাজ নয়। চলুন কি বলতে চায় তারা?
হেযবুত তওহীদের দাবি
“আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না।
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০৫
আমরা বলছি না যে আপনাকে বিশেষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।সূত্র: আদর্শিক লড়াই পৃষ্ঠা-১৪
স্রষ্টা প্রদত্ত সকল ধর্মই সত্যধর্ম। এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর যে কোনোটি মানুষ মেনে চলতে পারে। তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে।”
সূত্র: দৈনিক বজ্রশক্তি ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ ঈসায়ী।
“মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।”
সূত্র: সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ পৃ: ১১
প্রিয় পাঠক, উক্ত কথা দিয়ে তারা মূলত দাবি করছেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে বিষয়টি এমনটা নয়।
ইসলাম কি বলে?
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার নির্দেশ সরাসরি মহান আল্লাহ তা’য়ালার। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
সুরাঃ বাকারা আয়াত: ২০৮
উপরন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর পাঠানো পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসারীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ آمِنُواْ بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَى أَدْبَارِهَا أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّا أَصْحَابَ السَّبْتِ وَكَانَ أَمْرُ اللّهِ مَفْعُولاً
অর্থ: হে আসমানী গ্রন্থের অধিকারীবৃন্দ! যা কিছু আমি অবতীর্ণ করেছি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, যা সে গ্রন্থের সত্যায়ন করে এবং যা তোমাদের নিকট রয়েছে পূর্ব থেকে। (বিশ্বাস স্থাপন কর) এমন হওয়ার আগেই যে, আমি মুছে দেব অনেক চেহারাকে এবং অতঃপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পশ্চাৎ দিকে কিংবা অভিসম্পাত করব তাদের প্রতি যেমন করে অভিসম্পাত করেছি আছহাবে-সাবতের উপর। আর আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যই কার্যকর হবে।
সুরাঃ নিসা আয়াত: ৪৭
মহান রব আরও বলেন,
الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ . قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
অর্থ: সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।
বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।
সুরাঃ আ’রাফ আয়াত: ১৫৭-১৫৮
যারা ইসলামহীন ভিন্ন কোনো ধর্ম তালাশ করে তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
أَفَغَيْرَ دِينِ اللّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
অর্থ: তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।
সুরাঃ আলে ইমরান আয়াত: ৮৩
উক্ত আয়াতে প্রশ্নবোধক শব্দ দিয়ে মূলত বুঝানো হয়েছে, আল্লাহর দ্বীন ব্যতিত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করা বা গ্রহণ করা যাবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর সেই দ্বীন কোনটা? সে জবাব খোদ আল্লাহ তা’য়ালাই দিচ্ছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
সুরাঃ মায়েদা: ৩
সুতরাং যেহেতু আল্লাহর মনোনীত দ্বীন বা ধর্মই হলো “ইসলাম”। সুতরাং এ ইসলাম ব্যতিরের ভিন্ন কোন ধর্ম যদি কেউ গ্রহণ করে, তার পরিনতি কি হবে সে জবাবটিও আল্লাহ তা’য়ালাই দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ: কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না, এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
সুরাঃ আলে ইমরান আয়াত-৮৫
একটি প্রশ্ন:
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, আগের নবিদের আনীত ধর্মগুলোকেও তো অনেক জায়গায় ইসলাম বলে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। সুতরাং ইসলাম অর্থ হলো, আল্লাহ প্রদত্ব সকল ধর্ম। তাহলে শুধু ইসলামই মানতে হবে এটা কোথায় পেলেন?
জবাব:
এক. আল্লাহ প্রদত্ব সকল ধর্মকে সত্য বলে বিশ্বাস করা প্রতিটি মুমিনের ঈমানী দায়ীত্ব। কিন্তু বর্তমানে ইসলাম ব্যতিত আল্লাহ প্রদত্ব কোন ধর্মই আর অবিকৃত নেই। সুতরাং বর্তমানের ইহুদী,খ্রীস্টানদের ধর্মকে আমরা আল্লাহর নাযিলকৃত ধর্ম হিসাবে বিশ্বাস করার কোনই সুযোগ নেই। এ গুলো সব তাদের ধর্মগুরুদের হাতে প্রনীত ধর্ম। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, বরং খোদ হেযবুত তওহীদেরও দাবি। তারা লিখেছেন,
“সকল প্রাচীন আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল-কোর’আন নাযেল করেছেন।”
সূত্র: এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব পৃষ্ঠা-৫৬
সুতরাং সে আগের ধর্মগুলোকে আর ইসলামের পূর্ব রুপ বলার কোনো অবকাশ নেই।
দুই. উপরোক্ত আয়াতগুলোতে যে ইসলাম ধর্মের কথা বলা হয়েছে, “সেটা আগের নবিদের ধর্মও হতে পারে” এমন সংশয়-সন্দেহ করা বা মানার কোন সুযোগ নেই। কারণ মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ: রাসূল (মুহাম্মাদ স:) তোমাদে কাছে যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা গ্ৰহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
সুরা হাশর আয়াত-৭
আরেকটি প্রশ্ন:
এ আয়াতেও যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে, এখানে তো শুধু রাসুলের কথা বলা হয়েছে। এ রাসুল মানেই যে নবি মুহাম্মাদ তার প্রমাণ কি?
জবাব:
এ প্রশ্নের জবাব নিন্মের আয়াত দুটি মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لا إِلَهَ إِلا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
অর্থ: বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।
সুরা আ’রাফ আয়াত-১৫৮
মহান আল্লাহ বলেন,
الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآَمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّهِمْ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ ذَلِكَ بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَأَنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِنْ رَبِّهِمْ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ
অর্থ: আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন। যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন
এটা এ কারণে যে, যারা কাফের, তারা বাতিলের অনুসরণ করে এবং যারা বিশ্বাসী, তারা তাদের পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ মানুষের জন্যে তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন
সুরা মুহাম্মাদ আয়াত-১-৩
অত্র আয়াতে সরাসরি নবি মুহাম্মাদ স: এর নামও উল্লেখ্য রয়েছে। উপরন্তু নবিজি স: বলেন-
عن عبدالله بن ثابت الأنصاري قال قال رسولِ اللهِ ﷺ
والذي نفسُ محمدٍ بيدِه لو أصبح فيكم موسى ثم اتبعتموه وتركتموني لضلَلتم أنتم حظِّي من الأممِ وأنا حظُّكم من النبيينَ
অর্থ: হযরত আব্দু্ল্লাহ বিন সাবিত রা. বলেন রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন- সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি মুসাও জীবিত হয়ে এসে যান, আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসারী হয়ে যাও এবং আঁমাকে বর্জন কর,তাহলে অবশ্যই তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। নিশ্চয় উম্মতের মধ্যে তোমরা আমার অংশ এবং নবীগণের মধ্যে আমি তোমাদের অংশ।”
সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ:১ পৃ:১৭৮
নবিজি স: আরও বলেন,
عن عمر بن الخطاب قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم والذي نفسي بيده لو كان موسى حيا ما وسعه إلا أن يتبعني
অর্থ: যেই সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ সেই যাতের কসম! যদি হযরত মূসা আ: জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁর পক্ষেও আমার দীনের অনুসরণ ব্যতীত কোন সুযোগ থাকত না।
সূত্র: আল বিদায়া খ: ১ পৃ: ১৮৫ মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ:১ পৃ:১৭৯ মিশকাত হাদিস-১৭৭ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা খ:১ পৃ:২৮৮ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ২৬৪২১
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিসগুলো সামনে রাখলে ” ইসলামের দিকে আহ্বান করা আমাদের কাজ নয়” এমন কথা যারা দাবি করতে পারে, তারা কি আদৌও সঠিক ইসলামের ধারক বাহক হতে পারে? নিশ্চয় না।
ইসলামকে বিজয়ী করা নবিজির স: দায়ীত্ব:
وَقاتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةࣱ وَیَكُونَ ٱلدِّینُ لِلَّهِۖ فَإِنِ ٱنتَهَوۡا۟ فَلَا عُدۡوَ ٰانَ إِلَّا عَلَى ٱلظَّالِمِینَ
অর্থ: আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)।
সুরা বাকারা আয়াত-১৯৩
আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
অর্থ: তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে (মুহাম্মাদ স:) হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।
সুরা তাওবা আয়াত: ৩৩ সুরা ছ-ফ আয়াত: ৯
অত্র আয়াত দুটিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নবিজি স: এর আগমনের অন্যতম উদ্যেশ্য হলো-
১. আল্লাহকে বিশ্বাস করতে মানুষকে আহ্বান করা।
২. দ্বীন ইসলামকে সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী করা।
উপরন্তু কথাপ্রসঙ্গে হেযবুত তওহীদ নিজেরাও লিখে ফেলেছেন,
“(আল্লাহ) তাঁকে (মহানবীকে স: ) নির্দেশ দিলেন পৃথিবীতে যত রকম জীবন ব্যবস্থা আছে সবগুলোকে নিষ্ক্রিয় বাতিল করে এই শেষ জীবন ব্যবস্থা মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে।”
সূত্র: বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ পৃষ্ঠা-৯
সুতরাং এরপরও যে হেযবুত তওহীদ দাবি করে যে, “ইসলামের দিকে আহ্বান করা আমাদের কাজ নয়” তারা কিভাবে ইসলামের ধারক বাহক হতে পারে?
অথচ তারা আরো দাবী করছেন,
“ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নবী যেভাবে করেছেন সেভাবে চেষ্টা করতে হবে।”
সূত্র: গণমাধ্যমের করণীয় পৃষ্ঠা-৫৬
যদি তাই হয়,তাহলে আল্লাহর দিকে ডাকা বা ইসলামের দিকে আহ্বান করা কি নবিজির কাজ ছিল না? অবশ্যই বলবেন হ্যাঁ! যদি তাই হয় যে, নবী সা. এর দায়িত্ব ছিল ইসলামের দিকে আহ্বান করা, অপরদিকে হেযবুত তওহীদের দাবি হলো,
“মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।”
সূত্র: সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ পৃ: ১১
অর্থাৎ ইসলামের দিকে আহ্বান করা হেযবুত তওহীদের মূল কর্মসুচী নয়, অথচ উল্লেখিত অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস থেকে জানতে পারলাম আল্লাহ নিজো ইসলামের দিকে বান্দাকে আহ্বান করেছেন এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সা. কে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং রাসুল সা. বিরামহীন ইসলামের দিকে তাঁর উম্মতকে আহ্বান করেছেন। তাহলে আল্লাহ ও নবীজি সা. এর ইসলাম আর হেযবুত তওহীদের ইসলাম কস্মিনকালেও কি এক? নিশ্চয় না।
singles near you
singles near me