প্রিয় পাঠক! ইসলাম ধর্ম একটি চুড়ান্ত ও শ্বাস্বত, চিরন্তন ধর্ম। যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এ ইসলাম থেকে জাতিকে বিমুখ করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। কেউ ইসলামকে মধ্যযুগীয় বলে মানুষকে এর থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করছে। আবার কেউ একে বর্বর ধর্ম বলে আধুনিক মানুষদের মগজ ধোলাই করতে ব্যস্ত। আবার কেউ “এ ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে” বলে জনসাধারণকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দিতে বদ্ধপরিকর। আর এরাই হলো হেযবুত তওহীদ। যারা ‘ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে’ বলে দাবি করে জনসাধারণকে ইসলাম থেকে বাহির করতে চায়। চলুন তাদের কিছু লেখা দেখে নেয়া যাক। তারা লিখেছেন,
হেযবুত তওহীদের দাবি:
১. আসল ইসলাম হারিয়ে গেছে:
‘প্রকৃত এসলাম তেরশ’ বছর আগেই হারিয়ে গেছে’
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:৬১
প্রকৃত এসলাম হারিয়ে গেছে রসুলুল্লাহর ৬০/৭০ বছর পরেই।”
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই পৃ:১১
২. প্রচলিত ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে:
আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত ইসলাম মহানবী যেভাবে পৃথিবীতে রেখে গিয়েছিলেন, সেটা গত ১৩০০ বছরের কাল পরিক্রমায় বিকৃত হতে হতে বর্তমানে একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে।”
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই পৃ:৫ সওমের উদ্দেশ্য পৃ:১৩। সূত্র: আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা-২৩ তাকওয়া ও হেদায়াহ-১ এসলামের প্রকৃত রুপরেখা-১৮
“ধর্মব্যবসায়ী কর্তৃক কায়েম করে রাখা বিকৃত এই ধর্মকে দেখে অনেকে আল্লাহ স্রষ্টাকে গালি দেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে ধর্ম মানুষকে শান্তি দিতে পারে না, আরো অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা নিঃসন্দেহে মহাপ্রভু আল্লাহর দেওয়া ধর্ম নয়, সেটা অবশ্যই বিকৃত।”
সূত্র: মহাসত্যের আহ্বান পৃষ্ঠা-১০০
৩. প্রচলিত ইসলাম ভুল ইসলাম:
”যে এসলাম চোলছে পৃথিবীতে এটা ভুল।”
সূত্র: আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা পৃ:৫৪
সুতরাং বর্তমানে যেটাকে এলাম হিসাবে সর্বত্র মানা হোচ্ছে এবং শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হোচ্ছে সেটাকে এসলামী হিসাবে বিশ্বাস করা আর তিক্ত মাকাল ফল সুমিষ্ট আম বোলে বিশ্বাস করার মতই নির্বুদ্ধিতা।”
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:৭৫
”বর্তমানে আমরা যে ধর্মটিকে এসলাম হিসাবে দেখছি,যেটাকে ধর্মপ্রাণ মানুষষ অতি যত্নসহকারে পালন করার চেষ্টা কোরছেন,যে এসলামটাকে সর্বত্র স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় ও পীরের খানকায় শেখানো হোচ্ছে সেটা প্রকৃত এসলাম নয়।”
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে পৃ:৯/৬৭
“যে এসলামটি ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা প্রকৃত এসলাম ছিল না।”
সূত্র: শোষণের হাতিয়ার পৃ:৭৬
ইসলাম কি বলে?
প্রিয় পাঠক! উল্লেখিত লেখা গুলো থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, হেযবুত তওহীদ বর্তমানের ইসলাম ধর্মকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল স: এর ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দিতে একদমই নারাজ। বরং তাদের দাবি অনুযায়ী বর্তমানের প্রচলিত ইসলাম আসল ইসলাম নয়। বরং এটা ভুল ও বিকৃত ইসলাম। চলুন, তাদের এ কথাগুলো কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, একটু যাচাই করা যাক।
এক.
যদি ধরেও নিই যে, ইসলাম বিকৃত হয়েই গেছে, তাহলে আমার প্রশ্ন হলো- যে ধর্মটি শত শত বছর ধরে বিকৃত হয়ে গেছে, সেটার বাস্তব রুপ কেমন ছিলো সেটা ১৪০০ বছর পর এসে পন্নী সাহেব বুঝলেন কিভাবে? নবিজি স: এর ধর্মটি কেমন ছিল তিনি দেখলেন বা জানলেন কিভাবে?
তখন তারা হয়তো জবাব দেবেন যে, আল্লাহ পন্নী সাহেবকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। যিনি নবী বা রাসুল নন, এমন কেউ যদি এমন দাবি করে আর সেটাই বিশ্বাস করে নিতে হয়, তাহলে আজ পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে নবী বা মাহদী দাবি করেছেন, তাদের দাবিও সত্য হিসাবে মেনে নিতে হবে? সবাই তো আল্লাহর রেফারেন্স দিয়েই কথা বলে। যেখানে কারো মুখে পেয়াজ-রসুনের দুর্গন্ধের কারণে তার কাছে ফিরিস্তারা আসেন না, সেখানে আল্লাহ এক মহাবিড়িখোরকে এ মহান কাজের জন্য সিলেক্ট করলেন? কি হাস্যকর! কি হাস্যকর!
এ ধরণের মিথ্যুকদের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أُوْلَـئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الأَشْهَادُ هَـؤُلاء الَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَى رَبِّهِمْ أَلاَ لَعْنَةُ اللّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
অর্থ: আর তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখ, যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।
সুরা হুদ, আয়াত: ১৮
হয়তো তারা উত্তরে এটাও বলতে পারেন যে, আসল ইসলামের বাস্তব রুপটি কেমন ছিলো সেটা আমরা কুরআন-হাদিস থেকে পেয়েছি । অর্থাৎ তারা বলতে চান যে, কুরআন-হাদিসে ইসলামের প্রকৃত রুপ যেমন বলা হয়েছে, বর্তমানের ইসলামের রুপ তো তেমন মেলে না।
এক.
হাদিস শাস্ত্রের এ কিতাবগুলো যা আমরা হাতে পাচ্ছি, এ কিতাবগুলো রচিত হয়েছে নবীজির সা. ইন্তেকালের শত মত বছর পর। যেমন ইমাম বুখারী রহ. জন্ম গ্রহণ করেছেন ১৯৪ হিজরীতে। তাহলে কিতাব লিখতে লিখতে আরও অনেক বছর চলে গেছে। তাহলে বুখারী শরীফের অস্তিত্ব আসছে নবীজির সা. ইন্তেকাল ১১ হিজরীতে তার মানে, নবীজির সা. ইন্তেকালে ১৮৩ বছর পর ইমাম বুখারীর রহ. জন্ম। এর অর্থ দাঁড়ালো, নবীজির ইন্তেকালের ২০০ বছর পর লেখা বুখারী শরীফ। এই কিতাবগুলো দিয়ে ইসলামের বাস্তব রুপ বুঝতে পারলেন, অথচ তারা দাবি করেছেন, ‘ইসলামের রুপ হারিয়ে গেছে নবীজির ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরই।’ বিষয়টি কতবড় হাস্যকর ভেবে দেখেছেন?
শুধু তাই নয়, নবীজির ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পর যারা আসছে, সবাই তাদের দাবিতে কাফের-মুশরিক। তাহলে সে হিসাবে হাদিসের লেখকগুলোও তো কাফের-মুশরিক। আর বাস্তব ইসলাম কেমন ছিলো, সেটা তারা বুঝলো এ কাফের-মুশরিকদের কিতাব থেকে। আহ্! কি আজব!
দুই.
হেযবুত তওহীদের দাবি অনুযায়ী যদি বিষয়টি এমনই হয় যে, ইসলামের মৌলিক সংবিধান কুরআন-হাদিসে ‘আসল ইসলাম কেমন’ সেটা ঠিক ঠিক লেখা থাকে, তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কুরআন-হাদিস আজও অবিকৃত। আর কুরআন-হাদিস যদি এখনও অবিকৃতই থেকে থাকে, তাহলে ইসলাম বিকৃত হলো কিভাবে? কেননা কোনো মতবাদ বিকৃত হতে হলে সর্বপ্রথম সেটার সংবিধান বা মূলগ্রন্থ বিকৃত হতে হয়। যেমন হেযবুত তওহীদের এমাম নিজেই দাবি করেছেন যে, আগের ধর্মগুলো বিকৃত হয়েছিল তাদের ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হওয়ার মাধ্যমেই। কথাটির প্রমাণ তাদের বই থেকেই দেখে নেয়া যাক, তারা লিখছেন,
“আল্লাহ সকল জনগোষ্ঠী ও জনপদে ধর্মগ্রন্থ দিয়ে নবী-রাসূলদের কে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাদের বিদায়ের পর তাঁর শিক্ষা ও ধর্ম গ্রন্থ বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। ফলে ঐ এলাকার মানুষকে নতুন করে পথ দেখাতে আবির্ভূত হয়েছেন অন্য নবী। যারা পূর্বের বিকৃত গ্রন্থ কে রদ ঘোষনা করেছেন এবং নতুন বিধান জাতিকে প্রদান করেছেন।”
সূত্র: শোষণের হাতিয়ার পৃষ্ঠা-৭১
অর্থাৎ আগের ধর্মগুলো বিকৃত হওয়ার কারণ হিসাবে পেশ করা হয়েছে, তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত হওয়া। এ কথার অর্থ এই দাঁড়ালো যে, যে ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বিকৃত, সে ধর্ম বিকৃত, ঠিক এমনিভাবে, যে ধর্মের ধর্মগ্রন্থ অবিকৃত, সে ধর্মও অবিকৃত। এই হিসাবে বুঝা গেল, ধর্ম বিকৃত হতে হলে আগে ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হতে হবে। তেমনি ইসলাম বিকৃত হতে হলেও কুরআন-হাদিস বিকৃত হতে হবে। অর্থাৎ কুরআন-হাদিস যদি বিকৃত হয়, তাহলে ইসলাম বিকৃত হবে, অন্যথায় নয়। আর কুরআন হাদিস যদি অবিকৃত হয়, তাহলে ইসলামও অবিকৃত। তাহলে চলুন, ইসলাম ধর্মের মূলগ্রন্থ “কুরআন” সম্পর্কে তারা কি লিখেছেন দেখা যাক। হেযবুত তওহীদ লিখেছে,
“শুধুমাত্র পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারেনি।”
সূত্র: জঙ্গিবাদ সংকট সমাধানের উপায় পৃষ্ঠা-৫৩।
সুতরাং যেহেতু কুরআন অবিকৃত হওয়ার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য স্পষ্ট যে, কুরআন বিকৃত হয়নি। পাশাপাশি যেহেতু পন্নী সাহেব নিজেও কুরআন ও হাদিস থেকে ইসলামের বাস্তব রুপ জেনেছেন এবং বিশ্বাসও করেছেন। তার অর্থ হলো, ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ আজও অবিকৃত রয়েছে। সুতরাং ইসলামের ধর্মগ্রন্থ যেহেতু অবিকৃত,অতএব ইসলাম ধর্মও অবিকৃত।
তিন.
বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হতে আমাদের জানতে হবে শরীয়ত কাকে বলে? এটা জানতে আমরা হেযবুত তওহীদের বই থেকেই দেখি কি বলেন তারা ? তারা লিখেছেন,
“শরিয়াহ হোল সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনার জন্য নিয়ম-পদ্ধতি আইন-কানুন, দন্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি।”
সূত্র: দাজ্জাল পৃ:১৯
অর্থাৎ সার্বিক জিবন পরিচালনার জন্য আবিস্কৃত থিউরী বা নিয়ম-কানুনকে শরীয়ত বলে। এখন দেখতে হবে শরীয়তের এ কানুন কোথায় রয়েছে? হেযবুত তওহীদই লিখছে,
“আল্লাহ পর্যায়ক্রমে মুসলিম জাতিকে তাদের ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যাদি যথা বিয়ে, তালাক, বিচার, দণ্ড,যুদ্ধ, সন্ধি, চুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব বিষয়ে এবং সেই জাতির শারীরিক মানসিক আত্মিক প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা বা আমলের হুকুম নাযিল করলেন। এভাবে ২৩ বছর ধরে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর ঐক্যবদ্ধ একটা জাতির প্রতি প্রয়োজন সাপেক্ষে একে একে যে আদেশ,নিষেধ, উপদেশ, ভর্ৎসনা ইত্যাদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে সেগুলোর সংকলিত রূপই হচ্ছে পবিত্র কোর’আন।”
সূত্র: হলি আর্টিজান এরপর পৃষ্ঠা-১২
তাদের কথা দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে, ইসলামের সমস্ত বিধিবিধান লিপিবদ্ধ হয়েছে পবিত্র কুরআনে। এতএব শরীয়তের সমষ্টি হলো, পবিত্র আল-কুর’আন। যেহেতু তাদের কথানুযায়ী এ কুরআনে শরীয়তের সব বিষয় রয়েছে, সেহেতু এখন আমাদের দেখতে হবে কুরআন বিকৃত না কি অবিকৃত? যদি বিকৃত হয় তাহলে শরীয়ত (দ্বীন ইসলাম) বিকৃত। আর যদি কুরআন অবিকৃত হয় তাহলে শরীয়ত (ইসলামও) অবিকৃত। চলুন এব্যপারে তাদের ভাষ্য কি দেখা যাক। তারা লিখেছে,
“তারা (খ্রীস্টান) একটি বিকৃত ও বিপরীতমুখী ইসলাম রচনা করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এ জাতিকে শিক্ষা দিতে শুরু করল। তবে পবিত্র কোর’আনকে বিকৃত করতে পারল না, কারণ এটি সংরক্ষণের ভার আল্লাহ নিজে নিয়েছেন।”
সূত্র: আদর্শিক লড়াই পৃষ্ঠা-৬
পাঠক! উক্ত কথা দ্বারা বুঝা গেল, পবিত্র কুরআনকে কেউ বিকৃত করতে পারেনি। আর শরীয়াহ তথা ইসলামের সমষ্টি হলো আল কুরআন। সুতরাং তাদের কথা দিয়েই প্রমাণ হচ্ছে, শরীয়াহ তথা দ্বীন ইসলাম আজও অবিকৃত।
চার.
পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي أَوْ قَالَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ضَلَالَةٍ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন আমার সকল উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না।
সূত্রঃ তিরমিযি হাদিস-২১৬৭ আবু দাউদ হাদিস-৪২৫৩ আল ইলালুল বাবির (বুখারী) হাদিস-৩২৪ মিযানুল ই’তিদাল খঃ১ পৃঃ২৯৫ তোহফাতুল আহওয়াযী খঃ৬ পৃঃ১৬
প্রিয় পাঠক! আমরা জানি নবিজি স: এর হাদিসের ও আমলে ভিন্নতার কারণে উম্মতের আমলেও ভিন্নতা এসেছ এবং এক মাযহাব এক হাদিসের উপর,অপর মাযহাব অন্য হাদিসের উপর আমল করেছেন। ফলে বেশ কিছু বিষয়ে উম্মতের মধ্যে বাহ্যিকদৃষ্টিতে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও এ ব্যাপারে কিন্তু সবাই একমত যে, ইসলাম আজও আসল এবং অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে, বিকৃত হয়নি।
অতএব নবিজির স: এ কথা যদি সত্য হয় অর্থাৎ “উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) কোনো বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না।”
তাহলে এ কথা বলতেই হয় যে, যেহেতু সমস্ত উম্মত ইসলাম ধর্ম বিকৃত না হওয়ার কথার উপর একমত, অতএব ইসলাম ধর্ম অবিকৃত এবং তার আসল রুপেই আমাদের মাঝে আজও রয়েছে।
অতএব সমস্ত মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ সীদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে যারা ‘ইসলাম বিকৃত হয়ে গেছে’ ‘এটা ভুল ইসলাম’ ইত্যাদী বলে বক্তব্য দিচ্ছে তারা কি প্রকারান্তেই পরোক্ষভাবে নবিজি স: কে মিথ্যুক বানানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেননি?
পাঁচ.
পাশাপাশি আরেকটি প্রশিদ্ধ বাক্য মনে পড়ে গেল, সত্য কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না। চোর চুরি করলেও কিন্তু ভুলক্রমে নিশানা কিছু রেখে যায়। তেমনিই হয়েছে হেযবুত তওহীদের বেলায়ও । তারা তাদের চল্লিশোর্ধ্ব কিতাবের সবখানে ‘ইসলাম বিকৃতি হয়ে গেছে’ দাবী করলেও ভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে দুয়েক জায়গায় বলেই ফেলেছেন,
“আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:) এর উপর অবতীর্ণ এই সত্যদীন আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মতই নিঁখুত ও অবিকৃত। আল্লাহর সৃষ্টি কেমন নিখুঁত….আল্লাহর দেওয়া সত্যদীনও এমনই নিখুঁত।”
সূত্র: আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই পৃষ্ঠা ১৯-২০
উপরন্তু তারা আলো লিখেছেন,
“মুক্তির পথ তো রসুল দেখিয়েই গেছেন আর শেষ বিধানও আল্লাহর দয়ায় অবিকৃত ছিল এবং আজও আছে।”
সূত্র: ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে পৃষ্ঠা-৯
প্রিয় পাঠক! সত্য কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না, ইসলাম ধর্ম যে অবিকৃত ছিলো এবং আছে, এটা আমাদের আর কোনো দলীল পেশ করা লাগবে না। কারণ হেযবুত তওহীদ নিজেরাই তাদের বইয়ে স্বীকার করে নিয়েছে যে, ‘ইসলাম অবিকৃত’ এরপরও যদি কেউ বলে ইসলাম ১৩০০ বছর আগেই বিকৃত হয়েছে, সে চরম মিথ্যুক ও বিকৃত মস্তিস্কের।