Home > হিজবুত তাওহীদ > ইসলামী হুকুমত ও হেযবুত তওহীদের ভ্রান্তি:

ইসলামী হুকুমত ও হেযবুত তওহীদের ভ্রান্তি:

দ্বীনের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা। অর্থাৎ সেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর দেওয়া সকল বিধিবিধান মেনে নেওয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা। কিন্তু হেযবুত তওহীদ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি হলো-

১. সিরাতুল মুস্তাকিমই হলো দ্বীন কায়েম করা।
২. ইসলামের উদ্দেশ্য দ্বীন প্রতিষ্ঠা, ধর্ম পরিবর্তন নয়।
৩. ইসলামের মূল উদ্দেশ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা।
৪. মুসলিমদের প্রধান কাজ দ্বীন প্রতিষ্ঠা।
৫. সওয়াব নয়, ইসলামের মূল উদ্দেশ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা।
৬. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
৭. রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম না হলে এর কোনো দাম নেই।
৮. নামাজ,রোযা ইত্যাদী সব খিলাফতের ট্রেনিং।
৯. রাষ্ট্রে খিলাফত কায়েম না করে কোনো ইবাদত করা বৈধ নয়:
১০. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করা অনর্থক:
১১. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করলে কবুল হবে না:
১২. খেলাফত না করে ইবাদত করলে জান্নাত নেই:
১৩. দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ যারা করবে না তারা কাফের:
১৪. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করলে সে জাহান্নামী:
১৫. হুকুমত প্রতিষ্ঠা না করে ব্যক্তিগত ইবাদত শিরক:
১৭. খেলাফত প্রতিষ্ঠা না হওয়া মানেই বেঈমানের প্রমাণ:

এবার চলুন হেযবুত তওহীদের মতবাদগুলো প্রমাণের আলোকে দেখে নেওয়া যাক।

খিলাফত বা হুকুমত প্রতিষ্ঠা ও ইসলাম:
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের মূল দাবি হলো, খেলাফত বা ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করাই হলো দ্বীনের একমাত্র উদ্দেশ্য। তারা লিখেছে,

এক. সিরাতুল মুস্তাকিমই হলো দ্বীন কায়েম করা:
আল্লাহর সাথে ইবলিসের চ্যালেঞ্জ সালাহ (নামায) , সাওম (রোযা ) ,হজ্জ , যাকাত বা চুরি ডাকাতি ব্যভিচার ,খুন নিয়ে নয় । চ্যালেঞ্জটা এই সীরাতুল মোস্তাকিমকে নিয়েই । এই সীরাতুল মোস্তাকিম হল আল্লাহর খেলাফত করা। -এসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৭

দুই. ইসলামের উদ্দেশ্য দ্বীন প্রতিষ্ঠা, ধর্ম পরিবর্তন নয়:
মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের  উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনের ন্যায়-সুবিচার-শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। -আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই : পৃ. ১৮

তিন. ইসলামের মূল উদ্দেশ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা:
এই জীবন ব্যবস্থা কার্যকরী করা হলে মানব জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এই শান্তি প্রতিষ্ঠাই  হচ্ছে এসলাম। -ইসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১৩০

এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায়-সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৮

চার. মুসলিমদের প্রধান কাজ দ্বীন প্রতিষ্ঠা:
আল্লাহর জীবনব্যবস্থাকে সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে মুসলিমদের সর্বপ্রথম এবং সর্ব প্রধান কর্তব্য। -শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৯২

পাঁচ. সওয়াব নয়, ইসলামের মূল উদ্দেশ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা:
আজ দীনের উদ্দেশ্য করা হয়েছে আখিরাতের পুঁজি হিসেবে সওয়াব অর্জন করা। যেন মিজানের পরিমাপে এর পাল্লা ভারী হয়, আর পদ্ধতি করা হয়েছে উপাসনা। অথচ আল্লাহ দেওয়া ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। -ইসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৮৯

প্রিয় পাঠক, এগুলো হলো হেযবুত তওহীদের দাবি। অর্থাৎ উপরোক্ত দাবিসমূহের মৌলিক দাবি হলো, দ্বীনের মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রে আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। অথচ দ্বীনের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সকল বিধিবিধান মেনে তাঁর দাসত্ব বা ইবাদত করা।

ইসলাম কী বলে.
হেযবুত তওহীদ তাদের এ মতবাদটা মূলত আবিস্কার করেছে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী সাহেবের থেকে। কারণ হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব দীর্ঘদিন মওদুদী সাহেবের সংস্পর্শে সময় কাটিয়েছিলেন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১২৭

এই মওদুদী সাহেবই মূলত প্রথম এই কথার আবিস্কার করেন যে, ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো, রাষ্ট্রে ইসলামী খেলাফত কায়েম করা। চলুন মওদুদী সাহেবের বক্তব্যগুলো দেখে নেওয়া যাক।

দ্বীন সম্পর্কে মওদূদী সাহেবের কয়েকটিবক্তব্য নিরুরূপ:
এক. দ্বীনের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর খেলাফত কায়েম করা। আবুল আ’লা মওদুদী সাহেব বলেন,
اسلام کا مقصود حقیقی محتصر الفاظ میں تو صرف اتنا کہ دیناہی کافی ہے کہ وہ مقصد انسان پر  سے انسان کی حکومت  کو مٹا کر خدائے واحد کی حکومت قائم کرنا ہے اور اس مقصد کیلئے سردھڑی کی بازی لگا دینے اور جان توڑ کوشش کرنے کا نام جہاد ہے اور نماز روزہ حج زکوۃ سب اسی کام کی تیاری کی لیئے ہیں
ইসলামের মূল উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত কথায় মানুষের উপর মানুষের শাসন মিটিয়ে এক খোদার শাসন কায়েম করা। এর জন্যে মস্তক-মেরুদন্ডের বাজি লাগিয়ে আপ্রাণ চেষ্টার নাম জিহাদ। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এসব সে উদ্দেশ্যেরই প্রস্তুতির জন্যে। -খুতবাত : পৃ. ২৫৭

মওদুদী সাহেব দ্বীনের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে একটি নীতিদীর্ঘ ভূমিকার পর তিনি বলেন,
اس تشریح سے یہ بات صاف ہوجاتاہے کہ دین در اصل حکومت  کا نام ہے شریعت اس حکومت کا قانون ہے
উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, দ্বীন মূলতঃ রাষ্ট্রের নাম, শরীয়ত হল সে রাষ্ট্রের বিধান। -খুতবাত : পৃ. ২৬৮

দুই. ইসলাম একটি বৈপ্লবিক চিন্তাধারার নাম। মওদুদী সাহেব বলেন,
لیکن حقیقت یہ ہے کہ اسلام کسی مذہب کا اور  مسلمان کسی قوم کا نام نہیں ہے۔ بلکہ دراصل ایک انقلابی نظریہ ومسلک ہے۔
বাস্তব কথা হল ইসলাম কোন ধর্মের নাম নয়। এবং মুসলমান কোন জাতির নাম নয়। বরং মূলতঃ ইসলাম একটি বিপ্লবী চিন্তাধারা ও পদ্ধতি এবং মুসলমান সেই আন্তর্জাতিক বিপ্লবী বাহিনীর নাম। -তাফহীমাত : খ. ১ পৃ. ৭৭

তিন. নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত সবই জিহাদের ট্রেণিং। মওদুদী সাহেব বলেন,
عبادات ایک تربیتی کورس ہیں یہ نماز ، روزہ اور یہ زکوۃ اور حج در اصل اسی تیاری اور  تربیت کےلئے ہیں
ইবাদাত একটি ট্রেনিং কোর্স। নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্ব মূলতঃ তারই প্রস্তুতি ও ট্রেনিংয়ের জন্যে। -খুতবাত : পৃ. ২৬৪

سب سے بڑی غلطی یہی ہے کہ اپ نے نماز روزوں کے ارکان اور ان کی ظاہری صورت  ہی  کو اصل عبادت سمجہ رکہا ہے اور آپ اس خیال خام میں مبتلا ہو گئے ہیں کہ جس نے یہ ارکان پوری طرح ادا کر دیئے اس نے بس اللہ کی عبادت  کردی۔
সর্বাপেক্ষা বড় ভুল এই যে, আপনি নামায রোযার আরকান ও বাহ্যিক আকৃতিকেই আসল ইবাদত মনে করেছেন।এবং আপনি এই খাম খেয়ালীপনায় লিপ্ত যে-যে ব্যক্তি এই আরকান সমূহকে পূর্ণরূপে আদায় করলে সে আল্লার ইবাদত করে নিল। -খুতবাত : পৃ. ১৫৭

মওদূদী সাহেবের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ হলো-
(ক) দ্বীন মূলতঃ রাষ্ট্রের নাম।
(খ) রাষ্ট্র ছাড়া দ্বীন অস্তিত্বহীন ও কাল্পনিক চিত্রের ন্যয় নিরর্থক।
(গ) ইসলাম একটি বিপ্লবী চিন্তাধারার নাম। ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতকে ইবাদত মনে করা মারাত্মক ভুল। বরং নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি জিহাদ ও রাষ্ট্র কায়িমের জন্যে ট্রেনিং কোর্স মাত্র।

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদের উপরোল্লিখিত বক্তব্য ও মওদুদী সাহেবের এ বক্তব্যগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কী? নিশ্চয় না, বরং হেযবুত তওহীদের দাবিগুলো মওদুদী সাহেবের থেকেও আরও কঠোর ও চরম। মোটকথা মওদুদী সাহেব ও হেযবুত তওহীদের মতবাদ হলো, ‘রাষ্ট্রে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করাই হলো দ্বীনের মূল উদ্দেশ্য।

দ্বীন প্রতিষ্ঠা করাই কী ইসলামের মূল উদ্দেশ্য?
মওদূদী সাহেব ও হেযবুত তওহী দ্বীনের যে ব্যাখ্যা করেছেন তা আদৌ শরয়ী ব্যাখ্যা নয়। দ্বীন কী এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠারমৌলিক উদ্দেশ্য কী তা সবই পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নববীতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। চলুন দেখে নিই দ্বীন মানে কী?

দ্বীন হলো ইসলাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। -সুরা আলে ইমরান : ১৯

উক্ত আয়াত থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র ‘দ্বীন’ হচ্ছে ‘ইসলাম’।

ইসলাম কাকে বলে?
এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা. থেকে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিস তুলে ধরা হলো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جاءَ جِبريلُ ﷺ إلى النَّبيِّ ﷺ فقال يا مُحمَّدُ ما الإسْلامُ فقال تَعبُدُ اللهَ لا تُشرِكُ به شَيئًا وتُقيمُ الصَّلاةَ وتُؤْتي الزَّكاةَ وتَصومُ رَمَضانَ وتَحُجُّ البَيتَ قال فإذا فَعَلتُ ذلك فأنا مُسلِمٌ قال نَعَمْ قال صَدَقتَ
একদা নবিজি সাঃ-এর কাছে জিবরাঈল আ. এসে প্রশ্ন করলেন, হে মুহাম্মাদ, বলুন তো ইসলাম কী? তদুত্তরে নবীজি সা. বললেন, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন, তবে তাঁর সাথে কোনো শরীক করবেন না, এবং নামাজ কায়েম করবেন, যাকাত আদায় করবেন, রমাযানের রোযা রাখবেন এবং বাইতুল্লাহর হজ্ব করবেন। তিনি আরও বললেন, আমি যখন এটা করবো, তখনই আমি মুসলিম। হযরত জিবরাঈল আ. বললেন, হ্যাঁ। আপনি সত্য বলেছেন। -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং : ৫৮৫৬

আরেকটি হাদিসে এসেছে, হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল,
فأيُّ الإسلامِ أفضلُ قال الإيمانُ قال وما الإيمانُ قال أن تُؤمِنَ باللهِ وملائكتِه وكتبِه ورسلِه والبعثِ بعدَ الموتِ قال فأيُّ الإيمانِ أفضلُ قال الهجرةُ قال ما الهجرةُ قال أن تهجُرَ السُّوءَ
কোন ইসলাম উত্তম? নবীজি সা. বললেন, ঈমান। সাহাবী প্রশ্ন বললেন, ঈমান কী? নবীজি সা. বললেন, তুমি বিশ্বাস রাখবে, আল্লাহ’র উপর, তাঁর ফিরিস্তাদের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসুলদের উপর এবং মৃত্যুর পর পূনরুত্থানের উপর। অতপর তিনি প্রশ্ন করলেন, কোন ঈমান উত্তম? নবীজি সা. বললেন, হিজরত। সাহাবী প্রশ্ন করলেন, হিজরত কী? নবীজি সা. বললেন, খারাপ কাজ ছেড়ে দেওয়া। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ : খ. ১ পৃ. ৪৬

সুতরাং উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস দু’টি থেকে বুঝা গেলো, দ্বীন হলো, ইসলাম আর ইসলাম মানে হলো, আল্লাহপাকের সাথে শরীক বিহীন ইবাদত করা, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত আদায় করা এবং উত্তম ইসলাম হিসাবে আল্লাহ ও তাঁর ফিরিস্তাকুল, আম্বিয়ায়ে কেরাম রা. আসমানী কিতাবসমূহ এবং পূনরুত্থানে বিশ্বাস করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এগুলোকে বুঝানো হয়েছে।

মোটকথা আল্লাহ পাক বললেন যে, তার নিকট একমাত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। আর রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, আল্লাহ পাক একমাত্র ইলাহ ও মুহাম্মাদকে সা. তাঁর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেওয়া, নামায পড়া, যাকাত দেওয়া, রোযা রাখা ও হজ্ব করা হচ্ছে ইসলাম। সুতরাং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. এবং জিবরাঈল আ. এর কাছে দ্বীন হচ্ছে শিরক বিহীন ইবাদত, তাওহীদ ও রেসালাতের উপর ঈমান, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী। আর এ কারণে মুসলিম উম্মাহর আক্বীদাও তাই। অথচ মওদূদী সাহেব ও হেযবুত তওহীদের কাছে এগুলো দ্বীন নয়। দ্বীন হচ্ছে রাষ্ট্র ও জিহাদ” আর রাষ্ট্র অর্জনের ট্রেনিং হল নামায রোযা, হজ্ব, যাকাত। রাষ্ট্র ছাড়া এসব ইবাদাতও নিরর্থক ও অস্তিত্ববিহীন কাল্পনিক নক্‌শা। আল্লাহর ও তাঁর রাসূল এবং জিব্রাঈলের বর্ণনার বিপরীতে দ্বীনের এহেন ব্যাপারকে যদি অপব্যাখ্যা না বলা যায়, তাহলে অপব্যাখ্যা আর কোন বস্তুকে বলবে?

বস্তুতঃ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াত এবং রাসলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু হাদীসের দ্বারা একথা একদম পরিষ্কার যে দ্বীনের মূল বিষয় ঈমান, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদী। বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা‘আলার মূল চাওয়া এগুলোই। আরো কিছু ইবাদাত আছে তবে সেগুলো প্রাসঙ্গিক বা সম্পূরক। তাছাড়া বান্দাদের পরস্পরে  চলতে গেলে পারিবারিক বিষয়, সামাজিকতা-জাতীয়তা ও লেন-দেনের প্রসঙ্গ আসে। সেগুলোও যেন খোদার মর্জীতে হয়ে বান্দা আরামে জীবন-যাপন করতে পারে এজন্যে মুআমালাত, মুআশারাত, আখলাক ও সিয়াসাত বা হুকুমত তথা শাসন বিষয়ক বিধি-বিধান দেওয়া হয়েছে। আর মূল ইবাদত সহ অন্যান্য বিধি বিধান সূচারু রূপে আঞ্জাম দেওয়ার দ্বারা বান্দা হবে ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহর খলীফা তথা প্রতিনিধি। এ প্রতিনিধিত্ব যে মানবে না বা এতে যে বাধা দিবে তার বিরুদ্ধে মুসলমান জিহাদ করবে। এক কথায় ঈমান ও মৌলিক ইবাদাত তথা নামায রোযা, যাকাত, হজ্ব, এগুলোই দ্বীনের মূল ও কান্ড। আর জিহাদ সিয়াসত সহ অন্য সব বিধি-বিধান হল নিজ নিজ পজিশনভেদে শাখা-প্রশাখা।

হেযবুত তওহীদের প্রতি একটি প্রশ্ন:
আল্লাহর অভিপ্রায় যদি হতো, রাষ্টে আল্লাহর হুকমুত প্রতিষ্ঠা করা, তাহলে দুয়েকজন নবি ছাড়া কোনো নবীই কেন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন না? আশা করি এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করতে হেযবুত তওহীদকে কয়েকবার জন্ম নিতে হবে। তবুও উত্তর খুঁজে পাবে না। কারণ আল্লাহ পাকের মূল উদ্দেশ্য হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা নয়।

রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম না হলে এর কোনো দাম নেই?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
দীন যদি মানুষের সমষ্টিগত জীবনে প্রতিষ্ঠাই না হয় তবে দীনের আর কোন দাম নেই। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৩৯/৫৯

ইসলাম কী বলে?
ইসলাম হুকুমতের উপর নির্ভরশীল নয় যে, সর্বত্র হুকুমত প্রতিষ্ঠিত না হলে এর কোনো মূল্য থাকবে না। কারণ ইসলাম স্বস্থানে মূল্যবান ও কার্যকরী। যে বা যারা সেটাকে কবুল করবে, তারা উভয় জগতে ফল ভোগ করবে। যতি কেউ সেটা কবুল না করে তবুও ইসলামের মূল্য বিন্দু পরিমান হ্রাস পাবে না। যেমন ধরুন স্বর্ণ। কেউ যদি সেটা ব্যবহার না করে আলমারিতে রেখে দেয়, তাহলে স্বর্ণ কী মূল্যহীন হয়ে যায়? এটা তো পাগলেও বোঝে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ বোঝে না। কারণ তাদের মূল টার্গেটই হলো ইসলাম বিদ্বেষ। বিদ্বেষী চক্ষু দিয়ে কখনও ইসলামের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় না।

নামাজ,রোযা ইত্যাদী সব খিলাফতের ট্রেনিং?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
সেই সত্য দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্ব উপায়ে প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মো’মিনের অবশ্য কর্তব্য, ফরদ। এই দীন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মো’মেনের অবশ্যই কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুন লাগবে। সেই চারিত্রিক, মানসিক আত্মিক গুণ বৈশিষ্ট্য (Attributes) এটা যে সে অর্জন করবে কোথেকে অর্জন করবে? সেটার জন্য আল্লাহ তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছেন। সেটা হলো সালাহ সওম,হজ্ব,যাকাত এগুলো। এগুলোর মাধ্যমে তার চরিত্রে কিছু গুন অর্জিত হবে। তারপর সে আল্লাহর সত্যদীন পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করে মানবসমাজ থেকে অন্যায় অশান্তি দূর করতে পারবে যেটা উম্মতে মুহাম্মদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য। -সওমের উদ্দেশ্য : পৃ. ৪/৫/৮

আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ নবীকে শুধু নামাজ-রোজা হজ-জাকাত ইত্যাদি শেখাতে পাঠাননি। এগুলো তার সেই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে জাতির দরকার সেই জাতির চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া। উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য দীনুল কাইয়্যেমা,সেরাতুল মুস্তাকিমকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করা। -বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ৯

উপাসনা, আরাধনা আনুষ্ঠানিকতা করতে বাধা দেওয়া ইবলিশের লক্ষ্য নয়। কারণ ওসবের সাথে তার জয়-পরাজয় সরাসরি নির্ভর করে না। তার বিজয় কেবলমাত্র আল্লাহর তওহীদকে অস্বীকার করাতে পারলে’। -তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ৬/৪

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের কাছে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী সব কিছুই ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার ট্রেনিং মাত্র।

ইসলাম কী বলে?
এ বিষয়ে আগেই লিখেছি যে, ‘নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী হুকুমত প্রতিষ্ঠার ট্রেনিং’ এটা মওদুদী সাহেবের মতবাদ। মনে রাখতে হবে, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী ইসলামের মূল স্তম্ভ। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৮

কিন্তু মওদূদী সাহেব ও হেযবুত তওহীদ রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর এ ঘোষণার বিপরীতে হুকুমাত তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও জিহাদকে মূল দ্বীন আর নামায, রোযা, যাকাত, হজ্ব কে তার ট্রেনিং বলার মাধ্যমে শাখা-প্রশাখাকে মূল ও কান্ড, আর মূল ও কান্ডকে শাখা-প্রশাখা বানিয়ে দিলেন, যাতে রয়েছে আক্বীদার খারাবীসহ আরো বহুবিধ খারাবী, যা বিবেকবান মাত্রই বুঝতে পারছেন। অপর আয়াতে মহান রব আরও বলেন,
وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে । তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে; সালাত কায়েম করে এবং জাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন। -সুরা বাইয়িনা : ৫

উপরোক্ত আয়াতে একেবারে দিনের আলোর ন্যায় সুস্পষ্টভাবে মহান রব সঠিক দ্বীন হিসাবে উল্লেখ্য করলেন, একনিষ্ঠ ইবাদত ও নামাজ, যাকাতকে। এরপরও যদি কেউ বলে, ইবাদত, নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদী এগুলো দ্বীনের মৌলিক উদ্দেশ্য নয়, বরং খিলাফত প্রতিষ্ঠা হলো দ্বীনের মূল আর অন্যান্য ইবাদত হলো ট্রেনিং তাহলে এ মতবাদ কী সরাসরি কুরআনের আয়াত বিরোধি নয়?

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের বক্তব্য হলো, মানুষকে কি মসজিদে মন্দিরে গির্জা প্যাগোডায় গিয়ে বসে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে? না. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে সত্য ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য? -শিক্ষাব্যবস্থা : পৃ. ৯

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা।

ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআনে মহান রব বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। -সুরা যারিয়াত : ৫৬

সুতরাং বুঝা গেলো, মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্য হুকুমত প্রতিষ্ঠা নয়, বরং বান্দা সেচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আল্লাহ পাকের সকল বিধান অনুযায়ী তাঁর ইবাদত বা দাসত্ব করা। মনে রাখা দরকার, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার মূল টার্গেট হলো, ইসলামের ইবাদত প্রতিষ্ঠিত করা। মহান রব বলেন,
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে। -সুরা হাজ্ব : ৪১

সুতরাং আয়াতটি থেকে প্রমাণ হলো, রাষ্টে খিলাফত কায়েমের মূল টার্গেটই হলো নামাজ, যাকাত, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদী প্রতিষ্ঠিত করা। সুতরাং ইবাদতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই হুকুমতের বিধান, হুকুমতের ট্রেনিং নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত নয়।

খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও ইবাদত:
হেযবুত তওহীদ ইবাদত সম্পর্কে আরও কয়েকটি দাবি করেছে-

এক. রাষ্ট্রে খিলাফত কায়েম না করে কোনো ইবাদত করা বৈধ নয়:
এসলামে জাতীয় বিষয়ই প্রধান ও মুখ্য।  অর্থাৎ জাতীয় বিধানগুলি কে বাদ দিয়ে নফল অর্থাৎ  ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে থাকলে তা জায়েজ হবে না। যেমন জায়েজ হবে না ফরজ সালাহ বাদ দিয়ে রাতভর নফল নামাজ পড়লে। -শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৫০-৫১

প্রকৃত ইসলামের জীবনব্যবস্থার উদ্দেশ্য মানব জীবনের নিরাপত্তা সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি, আর বর্তমান ইসলামের উদ্দেশ্য ওসব কিছুই না বরং সময়মত নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া, হজ্ব করা, রোজা রাখা, দাড়ি রাখা, লম্বা পোশাক ও খাটো পায়জামা পরা ইত্যাদি। -হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : পৃ. ৭

দুই. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করা অনর্থক:
পৃথিবীতে সর্ব রকম অপরাধ বাড়ছে এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাহলে মানুষের এই যে ধর্ম পালন অতি নিষ্ঠার সাথে যার যার ধর্মের আনুষ্ঠিকতার অনুশীলন এসব করে কি লাভ হল? কিছুই না। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৭০

আল্লাহর তওহীদ সার্বভৌমত্ব যেখানে নেই আল্লাহ রাসুলের বর্ণনা মোতাবেক সেখানে তাহাজ্জুদ সওমের মতো একনিষ্ঠ আমলও বৃথা যাবে, সেখানে দাঁড়ি টুপি-পাগড়ি জোব্বার মত আমল গৃহীত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। -ইসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১৩৯

তিন. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করলে কবুল হবে না:
মানুষকে দু:খ কষ্টের মধ্যে নিমজ্জিত রেখে সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে, নিজের জীবন সম্পদ উৎসর্গ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না করলে কারো ব্যক্তিগত আমল কবুল হবে না। -সম্মানিত আলেমদের প্রতি : পৃ. ১৩

চার. খেলাফত না করে ইবাদত করলে জান্নাত নেই:
সমাজের অশান্তি দূর করার জন্য প্রচেষ্টা না করে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আমল করলে, এই স্বার্থপরতা আত্মকেন্দ্রিক ভালো মানুষের কোন জান্নাত নেই। -তাকওয়া ও হেদায়া : পৃ. ১০-১১

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবিনুসারে খিলাফত বা হুকুমত প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইবাদত বৈধ নয়, ইবাদত করলেও তা অনর্থক বা কবুল হবে না এবং খিলাফত ছাড়া ইবাদত করে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।

পাঁচ. দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ যারা করবে না তারা কাফের:
যারা দীন জাতীয় জিবনে প্রতিষ্ঠা করবে না তাদের তিনি ঈমান থাকা সত্ত্বেও মো’মেন বলে স্বীকার করবেন না। তারা মুসলিমও নয় উম্মতে মুহাম্মাদী তো নয়ই। -আকিদা : পৃ. ১০

হীনমন্যতায় বা আকিদা বিকৃতির জন্য যারা দীন জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করবে না, তাদের তিনি ঈমান থাকা সত্ত্বেও মোমেন বলে স্বীকার করবেন না, তারা মুসলিম নয়, উম্মতে মুহাম্মদী তো নয়ই। উদাহরণ বর্তমানে মুসলিম বলে পরিচিত জনসংখ্যাটি। -আকিদা : পৃ. ১০

ছয়. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করলে সে জাহান্নামী:
আল্লাহ সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষকে অশান্তির আগুনে জ্বলতে দেখেও যারা কাপুরুষের মতো করে লুকায় আর এবাদত মনে পড়ে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, নানা উপাসনায় মশগুল থাকে তাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। -ধর্মবিশ্বাস : পৃ. ৩

সাত. হুকুমত প্রতিষ্ঠা না করে ব্যক্তিগত ইবাদত শিরক:
আরবের মোশরেক অধিবাসীরা আল্লাহকে খুবই বিশ্বাস করত, আজ যেমন আমরা করি, কিন্তু আল্লাহর দেয়া দীন জীবন-বিধান মোতাবেক তাদের সমষ্ঠিগত জাতীয় জীবন পরিচালনা করত না। তাদের সামাজিক, জাতীয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, দন্ডবিধি এ সমস্তই পরিচালিত হতো হাবল, লা’ত মানাত ওজ্জা কোরায়েশ পুরোহিতদের তৈরি করা আইন-কানুন ও নিয়ম দিয়ে। তারা বুঝত না যে আল্লাহকে যতই বিশ্বাস করা হোক, ব্যক্তিগতভাবে যতই কঠিন এবাদত করা হোক, যতই তাক্ওয়া করা হোক, জাতীয় জীবন আল্লাহর দেওয়া দীন আইন-কানুন, দন্ডবিধি অর্থনীতি দিয়ে পরিচালিত না হলে সেটা আল্লাহর তওহীদ হবে না, সেটা হবে শেরক ও কুফর। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৫৭

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের মতবাদ হলো-
১. রাষ্ট্রে খিলাফত কায়েম না করে কোনো ইবাদত করা বৈধ নয়।
২. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করা অনর্থক।
৩. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করলে কবুল হবে না।
৪. খেলাফত না করে ইবাদত করলে জান্নাত নেই।
৫. দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ যারা করবে না তারা কাফের।
৬. দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করে ইবাদত করলে সে জাহান্নামী।
৭. ব্যক্তিগত ইবাদত শিরক।

ইসলাম কী বলে?
নবিজি সা. যখন কালেমার দাওয়াত নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেন, তখন কি তিনি সামষ্টিকজিবনে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত করে তারপর ব্যক্তিগত জিবনে ইবাদত করেছিলেন? নিশ্চয় না, বরং আমরা সবাই জানি যে, যখন মক্কায় ইসলামী হুকুমত কায়েম হয়নি, তখনই নামায ফরজ করা হয়েছিলো। পাশাপাশি দুয়েকজন নবী ছাড়া কোনো নবীই রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন না। তাহলে হেযবুত তওহীদের ফাতাওয়া অনুসারে নবীজি সা. সহ সকল নবী-রাসুলগণ এবং সাহাবায়ে কেরামও রা. কাফের, মুশরিক? তাঁদের আমলও আল্লাহর কাছে কবুল হয়নি? তারাও জাহান্নামী? তাঁদের ইবাদতও শিরক? আসতাগফিরুল্লাহ।
খেলাফত প্রতিষ্ঠা না হওয়া মানেই বেঈমানের প্রমাণ?

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের বক্তব্য হলো, ‘তাহলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৃথিবীর কর্তৃত্ব, আধিপত্য আমাদের হাতে নেই কেন? তাহলে সেই সর্বশক্তিমান কি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে অসমর্থ? (নাউজুবিল্লাহি মিন যালেক)?  এর একমাত্র জবাব হচ্ছে- আমরা যতই নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, যতই হাজার রকম এবাদত করি, যতই মুত্তাকী হই, আমরা মো’মেন নই, মুসলিম নই, উম্মতে মোহাম্মদী হবার তো প্রশ্নই ওঠে না। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ১১/১৯

পৃথিবীর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য হাতে না থাকলে এটাই বুঝতে হবে যে, আমরা যতই নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, যতই হাজার রকম ইবাদত করি, যতই মুত্তাকি হই।  আমরা মোমেন নই, মোসলেম নই, উম্মতে মোহাম্মদী হবার তো প্রশ্নই উঠে না। -যুগসন্ধিক্ষণে আমরা : পৃ. ৫

অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, খিলাফত প্রতিষ্ঠা না হলে বুঝে নিতে হবে আমরা মুসলিম নই।

ইসলাম কী বলে?
এটা নিতান্তই মুর্খতাসুলভ মন্তব্য। কারণ দুয়েকজন নবী ছাড়া কেউ হুকুমত প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি, অনেক সাহাবারাও রা. হুকুমত প্রতিষ্ঠার আগেই ইন্তেকাল করেছেন। তাহলে তারাও কী বেঈমান? যদি তাই হয়, তাহলে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী এবং বর্তমান এমাম সেলিমসহ সকল হেযবুত তওহীদের সদস্যরাও পাক্কা বেঈমান। কারণ তারা নিজেরাই লিখেছে,
আজ কোথাও তার প্রকৃত এবাদত অর্থাৎ খেলাফত নেই। এমনকি আমরা হেযবুত তাওহীদ যারা দীনুল হকে আছি, আমরাও প্রকৃত এবাদত কোরতে সমর্থ নই। -দাজ্জাল : পৃ. ৮৭

সুতরাং কার ফাতাওয়ায় কে কাফের? যার ফাতাওয়ায় সেই কাফের।

শেষ নোট:
রাষ্টে দ্বীন কায়েম করার প্রচেষ্টা করাও ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব রাখে। যার প্রতিদানও সীমাহীন। কিন্তু এটাকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি শব্দ প্রয়োগ দ্বীনের অপব্যাখ্যার শামিল।

Check Also

মানবতাই ধর্ম:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানতে নারাজ। তাদের কাছে ধর্ম হলো, ‘মানবতা’ বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.