ইবলিস মিথ্যা পছন্দ করে না:
ইবলিস একজন পাক্কা মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’য় স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বেরলবীদের গুরু আ’লা হযরতখ্যাত আহমাদ রেযা খান বেরলবীর বক্তব্য মতে ইবলিস মিথ্যা পছন্দ করতো না। দেখুন তিনি কী বলেছেন,
وہابیہ گمراہ نہ ہوں گے تو ابلیس بھی گمراہ نہ ہوگا کہ اس کی گمراہ ان سے ہلکی ہے وہ کذب کو اپنے لیے بھی پسند نہیں کرتا
ওহাবীরা পথভ্রষ্ট না হলে ইবলিসও পথভ্রষ্ট হবে না, কারণ তার (ইবলিসের) ভুল তাদের (ওয়াহীদের) চেয়েও হালকা কারণ সে তো নিজের জন্য মিথ্যা পছন্দ করতো না। -আহকামে শরীয়াত : পৃ. ১৩২; মাসআলা নাম্বার : ৩৯
ইসলাম কী বলে?
ইবলিস শয়তান মিথ্যাবাদী হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বর্ণনা খোদ আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে
وَيَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلاَ مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلاَ تَقْرَبَا هَـذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ
এবং হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী উভয়ে জান্নাতে বাস কর এবং যেখান থেকে (যে বস্তু) ইচ্ছা হয় খাও, তবে এই (বিশেষ) গাছটির কাছেও যেয়ো না। গেলে তোমরা (দু’জন) সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সুরা আরাফ : ১৯
অতপর শয়তান এসে আদম আ. এবং হাওয়া আ. কে মিথ্যা আশ্বাস দিলো। আল্লাহপাক বলেন,
فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَاتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـذِهِ الشَّجَرَةِ إِلاَّ أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ
অতঃপর (এই ঘটল যে,) শয়তান তাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিল, যাতে তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন রাখা হয়েছিল, তাদের পরস্পরের সামনে প্রকাশ করতে পারে। সে বলতে লাগল, তোমাদের প্রতিপালক অন্য কোনও কারণে নয়; বরং কেবল এ কারণেই এই গাছ থেকে তোমাদেরকে বারণ করেছিলেন, পাছে তোমরা ফিরিশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ী জীবন লাভ কর। সুরা আরাফ : ২০
শয়তানের এ কাজটা যে প্রতারণা ও মিথ্যা ছিলো সেটা খোদ আল্লাহপাকই বলেছেন,
فَدَلاَّهُمَا بِغُرُورٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْءَاتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ
এভাবে সে উভয়কে ধোঁকা দিয়ে নিচে নামিয়ে দিল। সুতরাং যখন তারা সে গাছের স্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের উভয়ের লজ্জাস্থান উভয়ের কাছে প্রকাশ হয়ে গেল। অনন্তর তারা জান্নাতের কিছু পাতা (জোড়া দিয়ে) নিজেদের শরীরে জড়াতে লাগল। সুরা আরাফ : ২২
আরও আশ্চর্য কথা হলো, শয়তান এ কাজটা করতে আল্লাহপাকের নামে মিথ্যা কসম করেছিলো। মহান রব বলেন,
وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِينَ
সে তাদের সামনে কসম খেয়ে বলল, বিশ্বাস করো, আমি তোমাদের কল্যাণকামীদের একজন। সুরা আরাফ : ২১
অথচ শয়তান মানুষের কল্যাণকামী নয়। মহান রব বলেন,
وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَا إِنَّ الشَّيْطَآنَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِينٌ
তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে বারণ করিনি এবং তোমাদেরকে বলিনি, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? -সুরা আরাফ : ২২
উক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে, ইবলিস দাবি করেছিলো, সে আদম-হাওয়ার জন্য হিতাকাংখি। অথচ সে ছিলো তাঁদের জন্য চরম দুশমন এবং তাঁদেরকে ইবলিস মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছিলো। এরপরও কী বলা যায় যে ইবলিস নিজের ক্ষেত্রে মিথ্যা পছন্দ করতো না?
উপরন্তু আদম আ. ও হাওয়া শয়তানের কাছে ধোকা খেয়েছিলেন এই কারণে যে, তাঁদের বিশ্বাস ছিলো, আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করা কী সম্ভব? এটা তাঁদের কল্পনাতেও ছিলো না। কিন্তু সেই কাজটাও ইবলিসের পক্ষে সম্ভব ছিলো। এজন্য ইমাম বগবী রহি. বলেন,
وإبليس أول من حلف بالله كاذبا
সর্বপ্রথম আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করেছিলো ইবলিস। -তাফসীরে বগবী : খ. ৩ পৃ. ২১৯
এ ছাড়াও অসংখ্য আয়াতে আছে ইবলিস অকৃতজ্ঞ ও ধোকাবাজ। মহান রব বলেন,
وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُورًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়। সে তো তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশা-আকাঙ্ক্ষায় লিপ্ত করে। (প্রকৃতপক্ষে) শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতিই দেয়, তা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। -সুরা নিসা : ১১৯-১২০
وَکَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّہٖ کَفُوۡرًا
আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ। -সুরা ইসরা : ২৭
প্রকাশ থাকে যে, অকৃতজ্ঞতা ও ধোকার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া অপরিহার্য। শুধু কী তাই মমুনাফিকদের উদহরণ দিতে গিয়ে মহান রব বলেন,
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ
তাদের তুলনা হল শয়তান। সে মানুষকে বলে, কাফের হয়ে যা। তারপর যখন সে কাফের হয়ে যায়, তখন বলে, তোর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি আল্লাহকে ভয় করি, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। -সুরা হাশর : ১৬
এখানে শয়তান যে মানুষকে মিথ্যা পথ দেখায় এবং নিজের ব্যাপারে দাবি করে যে সে আল্লাহকে ভয় পায়, এটা কী সুস্পষ্ট মিথ্যাচার নয়? এতো এতো আয়াতে যেখানে ইবলিসের ধোকাবাজী-প্রতারণা ও মিথ্যাচারকে খোদ আল্লাহ তাআলাই বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানে ইবলিসকে মিথ্যাবাদী না বানাতে বেলরবীর এতো শখ কেন? আল্লাহ যাকে মিথ্যাবাদী ঘোষণা দিলেন সে যদি মিথ্যাবাদী না হয়, তাহলে ফাযেলে বেরলবী নিশ্চয় মিথ্যুক।