Home > হেযবুত তওহীদ > আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জন করা আবশ্যক নয়।

আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জন করা আবশ্যক নয়।

প্রিয় পাঠক, মহান আল্লাহ আমাদেরকে অহেতুক সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ চান যেন সকল বান্দা তাঁকে ভালোবাসেন, তাঁকে মহব্বত করেন। যারা রব থেকে দূরে সরে যায়, তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ
হে মানুষ! কোন জিনিস তোমাকে তোমার সেই মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে ধোঁকায় ফেলেছে? -সুরা ইনফিতার : ৬

সুতরাং বুঝা গেলো, আল্লাহর চাওয়া হলো, তাঁর বান্দারা  দুনিয়াপ্রীতি থেকে সরে তাঁর ভালোবাসা কামনা করুক। অতএব একথা চিরসত্য যে, সকল বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করাই হলো মূল টার্গেট।

হেযবুত তওহীদ কী বলে?
কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল বিষয়টি আবশ্যক নয় বলে দাবি করছে হেযবুত তওহীদ। তাদের বক্তব্য দেখুন-

আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা নফল:
প্রশ্ন আসে তবে কি আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের প্রয়োজনীয়তা এ দ্বীনে নেই? আছে, আগেই বলেছি এ দ্বীন ভারসাম্যযুক্ত, কাজেই দুটোই আছে। কিন্তু প্রথম হলো পৃথিবীতে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত কোরে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা কোরে, তারপর আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা। প্রথমটা ফরজ, দ্বিতীয়টা নফল। ফরদ নামায বাদ দিয়ে শুধু সুন্নত বা নফল নামায পড়লে শরিয়াহ মোতাবেকই তা যেমন নাজায়েয, ঠিক তেমনি বিশ্ব নবীর (দঃ) ওপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বকে পূর্ণ করার ফরদ্র কাজ বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রক্রিয়া অর্থাৎ নফল কাজ নিয়ে ব্যস্ত হোলে তা ঐ শরিয়াহ মোতবেকই জায়েয হবে না। প্রথমে ফরজ তারপর ওয়াজেব, তারপর সুন্নাহ, তারপর নফল ও তারপর মুস্তাহাব’। -এ ইসলাম ইসলামই নয় : পৃ. ১১০

আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জন করানোর দায়িত্ব নবিজি সা. এর নয়:
তাসাওয়াফের মাধ্যমে স্রষ্টার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে তাঁর নৈকট্যলাভের প্রক্রিয়া শিক্ষা দেওয়া মোহাম্মদের (সা.) লক্ষ্য নয়, তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে সেখানে নতুন আইন, নতুন সমাজ-ব্যবস্থা স্থাপন করা। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ : পৃ. ১৭

প্রিয় পাঠক, একটু ভেবে দেখুন তো কথাটি কতবড় ভয়ঙ্কর কথা। সুতরাং হেযবুত তওহীদের উক্ত বক্তব্য থেকে তারা দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে চেয়েছে।
ক. ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা ফরজ আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা নফল, তথা আবশ্যক নয়।
খ. আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জন করার শিক্ষা দেওয়া নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাজ নয়।
গ. ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার প্রচেষ্টা নাজায়েয।

ইসলাম কী বলে?
ক. আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জন করা ফরজ নয়?
মহান আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জন করা সর্বাবস্থায় ফরজ। এ সম্পর্কে পবিত্র  কুরআনের আয়াত এবং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসংখ্য হাদিস রয়েছে। চলুন কয়েকটি প্রমাণ দেখা যাক। মহান রব বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّهِ جَمِيعاً وَأَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ
এবং (এতদসত্ত্বেও) মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে (তাঁর প্রভুত্বে) অংশীদার সাব্যস্ত করে, যাদেরকে তারা ভালোবাসে আল্লাহর ভালোবাসার মতো। তবে যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকেই সর্বাপেক্ষা বেশি ভালোবাসে। হায়! এ জালিমগণ (দুনিয়ায়) যখন কোনও শাস্তি প্রত্যক্ষ করে, তখনই যদি বুঝতো যে, সমস্ত শক্তি আল্লাহরই এবং (আখিরাতে) আল্লাহর আজাব হবে সুকঠিন। -সুরা বাকারা : ১৬৫

প্রিয় দ্বীনি ভাই, উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ ঈমানদারদের পরিচয় বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ ঈমানদার হলো তারা, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। সুতরাং বুঝা গেলো ঈমানদার হলো, যাঁদের অন্তরে সবচে বেশি আল্লাহর ভালোবাসা থাকবে। সুতরাং যারা আল্লাহ-র নৈকট্যকে আবশ্যকীয় মনে করে না, তারা কখনও ঈমানদার হতে পারে না। আল্লাহপাব আরও বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য অছিলা সন্ধান করো। -সুরা মায়িদা : ৩৫

ওসীলা’ শব্দের অর্থ কী?
রঈসুল মুফাসসিরিন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এ ব্যাপারে মতামত পেশ করেছেন,
عَنْ عَطَاءٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَيِ الْقُرْبَةَ
বিশিষ্ট তাবেয়ী আতা রহি. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, (ওসীলা) অর্থ হলো, নৈকট্য অর্জন করা। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ৭৫

ইমাম ইবনে কাসীর রহি. আরও বলেন,
وَكَذَا قَالَ مُجَاهِدٌ وَعَطَاءٌ وَأَبُو وَائِلٍ وَالْحَسَنُ وَقَتَادَةُ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ كَثِيرٍ وَالسُّدِّيُّ وَابْنُ زَيْدٍ
এমনই মত পোষণ করেছেন (অসংখ্য তাবেয়ী, যেমন) হযরত মুজাহিদ, আতা, আবু ওয়ায়িল, হাসান বসরী, কাতাদাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে কাসীর, সুদ্দী এবং ইবনে যায়েদ রহি. প্রমুখ। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ৭৫

তাবেয়ী কাতাদাহ রহি. বলেন,
قوله فيها أى تقربوا إليه بطاعته والعمل بما يرضيه
আয়াতের অর্থ হলো- ‘তোমরা তাঁর আনুগত্য করার মাধ্যমে এবং যে সকল কাজ তিনি খুশী হন তার মাধ্যমে তাঁর (আল্লাহর) নিকটবর্তী হও। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ১০৩

এ কথাগুলো উল্লেখ করার পর ইমাম ইবন কাসীর রহি. বলেন,
وهذا الذى قاله هؤلاء الأئمة لا خلاف بين المفسرين فيه
এ সকল মহান ইমামগণ আয়াতের তাফসীরে এ কথাগুলোই বলেছেন। যে ব্যাপারে মুফাসসিরদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। -তাফসীরে ইবনে কাসীর : খ. ৩ পৃ. ১০৩

সুতরাং প্রমাণ হলো, ওসীলা শব্দের অর্থ হলো, নৈকট্য অর্জন করা। আর এ আয়াত দিয়ে প্রমাণ হলো যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নৈকট্য অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা ফরজ।

অভিযোগ ও জবাব:
হেযবুত তওহীদ হয়তো দাবি করতে পারে যে, এখানে ‘ওসীলা’ শব্দের অর্থ ‘নৈকট্য অর্জন করা’ এটা আমাদের মনগড়া ব্যাখ্যা। তাহলে নিন্মের আয়াতটি দেখুন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
এবং সিজদা করো ও নিকটবর্তী হও। -সুরা আলাক : ১৯

উক্ত আয়াতের তাফসীর কাতে গিয়ে ইমাম কুরতুবী রহি.বলেন,
واسجد أي صل لله واقترب أَيْ تَقَرَّبْ إِلَى اللَّهِ جَلَّ ثَنَاؤُهُ بِالطَّاعَةِ وَالْعِبَادَةِ
‘সেজদা করুন’ অর্থ হলো, ‘আল্লাহর জন্য নামাজ পড়ুন’ এবং ‘নৈকট্য অর্জন করুন’ অর্থ হলো, অনুসরণ ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। -তাফসীরে কুরতুবী : খ. ২০ পৃ. ১১৪

প্রিয় পাঠক, এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে নৈকট্য অর্জনের সরাসরি শব্দটিই আল্লাহ তাআলা ব্যবহার করেছেন। সুতরাং এখন তো আর অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং প্রমাণ হলো, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা এটা মহান রবের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট বিধান।

সুতরাং উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর নৈকট্য অর্জনের কথা বলতে গিয়ে صيغة الامر তথা আদেশসূচক বাক্য ব্যবহার করেছেন। আর পবিত্র কুরআনের সকল আদেশসূচক শব্দ ফরজ বা ওয়াজীবের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অবশ্য যেসব বিষয়ে ভিন্ন কোনো বিধান বর্ণিত হয়, সেগুলোর কথা ভিন্ন। কিন্তু এ আয়াতে বর্ণিত বিধানের বিপরীত ভিন্ন কোনো বিধান অন্য কোথাও নেই। সুতরাং মহান রবের নৈকট্য অর্জন করা ফরজ। এ ব্যাপারে একমাত্র হেযবুত তওহীদ ব্যতিত অন্য কারও দ্বিমত নেই।

খ. আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জনের শিক্ষা দেওয়া কী নবিজি সা.-এর কাজ নয়?
প্রত্যেক নবি আ.-এর মূল কাজ ছিলো, আল্লাহ-র পথভোলা বান্দাদেরকে আল্লাহ-র সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া। সে ধারাবাহিকতায় আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও কাজ ছিলো আল্লাহ-র নৈকট্য অর্জনের পথ দেখানো। এ বাপারে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে, হযরত আবূ উমামাহ্ রা. বলেন, আমর ইবনু আবাসাহ রা. আমার কাছে রিওয়ায়াত করেছেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনি বলতে শুনেছেন,
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الرَّبُّ مِنَ الْعَبْدِ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ الآخِرِ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمَّنْ يَذْكُرُ اللَّهَ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ فَكُنْ ‏
আল্লাহ তাআলা শেষ রাতে তার বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন। অতএব যারা এ সময় আল্লাহর যিকর করে (নামায পড়ে ও দু’আ করে), তুমি পারলে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাও। -জামে তিরমিযি : হাদিস নং : ৩৫৭৯

সুতরাং উক্ত হাদিস থেকে বুঝা গেলো, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই সাহাবাদেরকে উৎসাহ দিতেন। এছাড়াও অসংখ্য আয়াত-হাদিস রয়েছে। যা থেকে প্রমাণ হয় হেযবুত তওহীদের দাবিটা সর্বৈব মিথ্যা।

গ. ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার প্রচেষ্টা নাজায়েয?

তাদের দাবি ছিলো, ‘আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠান আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সকল প্রক্রিয়া তথা আমল নাজায়েয’।

ইসলাম কী বলে?
এক. উপরোক্ত আয়াতটিতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কোনো শর্তারোপ করা হয়নি। অর্থাৎ ‘ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যাবে কী যাবে না, এমন কোনো শর্তারোপ মহান আল্লাহ করেননি। অতএব বুঝা গেলো, আল্লাহর নির্দেশ হলো, সর্বহালতে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা লাগবেই। এটা আল্লাহর নির্দেশ, তথা ফরজ। সুতরাং কুরআনে কারীমের مطلق তথা শর্তহীন আয়াতকে مقيد তথা শর্তযুক্ত করার অধিকার পৃথিবির কারও নেই। অতএব আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রচেষ্টা করার আগে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করার শর্তারোপ করা কুরআনের অপব্যাখ্যার শামিল। সুতরাং ‘ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা নাজায়েয’ এটা একটি ডাহা মিথ্যাচার। ও খোদাদ্রোহীতার শামিল।

দুই. তাছাড়া উপরিউক্ত আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিলো। তখনও কিন্তু ইসলামি শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এর আগেই এ আয়াত নাজিল হয়েছিলো। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নিজেই তাঁর আইন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগেই তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সিজদা বা নামাজের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সুতরাং বুঝা গেলো, সর্বহালতে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তাঁর নৈকট্য অর্জন করা ফরজ। এর বিপরীতে গিয়ে যে কথা হেযবুত তওহীদ দাবি করেছে, এটা উক্ত আয়াতকে অস্বীকার করার অপরাধে তাদের মুসলিম বলার কোনো সুযোগ আছে কী?

তিন. হাদিসে কুদসীতে এসেছে, হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
إِذَا تَقَرَّبَ الْعَبْدُ إِلَيَّ شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِذَا تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَإِذَا أَتَانِي مَشْيًا أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً
আমার বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত নিকটবর্তী হয়, আমি তখন তার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হই। আর সে যখন আমার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হয়, আমি তখন তার দিকে দু’হাত নিকটবর্তী হই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাই। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৭৫৩৬

চার. আরেকটি হাদিসে কুদসীতে এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَىَّ عَبْدِي بِشَىْءٍ أَحَبَّ إِلَىَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَىَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطُشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَىْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ
আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যাক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শত্রুতা রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি। আমার বান্দা আমি যা তার উপর ফরয করেছি, সেই ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু সাওয়াল করে, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যে কোন কাজ করতে চাইলে এটাতে কোন রকম দ্বিধা সংকোচ করি-না যতটা দ্বিধা সংকোচ মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে করি। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার কষ্ট অপছন্দ করি। -সহিহ বুখারী : হাদিস নং : ৬৫০২

সুবহানাল্লাহ্! আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকারীরা কতো প্রিয় মহান রবের কাছে। অথচ এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি থেকে দূরে রাখার জন্য তারা কতো ভয়ঙ্কর ছক এঁকেছে।

পাঁচ. প্রিয় পাঠক, আপনার কমনসেন্সসকে একবার প্রশ্ন করুন তো, যিনি আমাদের সৃষ্টি করলেন, নিয়মিত লালন-পালন করে যাচ্ছেন, তাঁর নৈকট্য অর্জন করার জন্য কোনো দলিল প্রয়োজন হয়? এটা তো সর্বজনবিদিত বিষয় যে, গোলাম তাঁর মালিকের নৈকট্য অর্জন করবে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের নৈকট্য অর্জন করবে এবং করে থাকে। এটা নৈতিকতার দাবি। তাহলে রব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন আবশ্যকীয় নয়, এটা কী কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ বিশ্বাস করবে? আর যারা এমন কথা প্রচার করে যাচ্ছেন, তারা কিভাবে মুমিন-মুসলিম হয়, এটা পাঠকদের বিবেকের কাছে সোপর্দ করলাম।

Check Also

পন্নীর চেয়ে মুহাম্মাদ সা. এর এরিয়া কম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন সমস্ত বিশ্বসমূহের জন্য রহমত করে। আর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.