মহান রব আল্লাহপাকের নাম সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ’য় যথেষ্ট বর্ণনা রয়েছে। অপরদিকে বিধর্মীদের কালচারকে না মানার জন্য বারবার তাকিদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আল্লাহপাকের কয়টা ও কী কী নাম রয়েছে সে সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ যে তথ্য দিয়েছে, সেগুলোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। অমুসলিমরা যাদেরকে প্রভু বলে স্বীকার করে ও তাদেরকে যে নামে ডাকে, সে নামগুলোকে আল্লাহ-র নাম বলে পরিচয় দেওয়া নিতান্তই ভ্রষ্টতার শামিল।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, মুসলমানদের আল্লাহ, খ্রিষ্টানদের গড, হিন্দুদের ব্রহ্মা সবই এক। সবাই তারই আনুগত্য করছে। দেখুন তারা লিখেছে,
সকলের আদিতে যিনি তিনিই স্রষ্টা, সবকিছুর শেষেও তিনি (কোরআন, সুরা হাদীদ ৩)। বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে- তিনিই আলফা, তিনিই ওমেগা । (Revelation 22:13). আল্লাহকে যে যে নামেই ডাকুক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে সেই মহান স্রষ্টার প্রশ্নহীন আনুগত্যই সকল ধর্মের ভিত্তি। -সকণ ধর্মের মর্মকথা সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ৪
অর্থাৎ তারা দাবি করতে চায়-
১. ব্রহ্মা, গড, ঈশ্বর ও আল্লাহ তাআলা একই সত্তা।
২. মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মাবলম্বীরা প্রশ্নহীনভাকে আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করছে।
ইসলাম কী বলে?
মুসলমানদের আল্লাহ, হিন্দুদের ব্রহ্মা ও খ্রিষ্টানদের আলফা-ওমেগা, গড বা ঈশ্বর কখনই এক নয়। অর্থাৎ মুসলমানদের আল্লাহ’র প্রতি যে বিশ্বাস তার সাথে হিন্দু ব্রহ্মা ও খ্রিষ্টানদের গড বা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস কখনই এক নয়, বরং আসমান যমীনের ব্যবধান। কারণ হিন্দুরা যাকে ব্রহ্মা মনে করে মুসলমানরা তাকে আল্লাহ মনে করেন না। দেখুন আল্লাহ তাআলা ও ব্রহ্মার মাঝে কতো তফাৎ!
হিন্দুদের ব্রহ্মা:
হিন্দুরা যাকে ব্রহ্মা মনে করেন, তার ব্যাপারে তাদের ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে,
সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী, দেবসেনা ও দৈত্যসেনা এঁর দুই কন্যা। ব্রহ্মা চতুর্ভুজ চতুরানন ও রক্তবর্ণ। প্রথমে তাঁর পাঁচটি মস্তক ছিলো; কিন্তু একদা শিবের প্রতি অসম্মানসূচক বাক্য উচ্চারণ করায় শিবের তৃতীয় নয়নের অগ্নীতে ব্রহ্মার একটি মস্তক দগ্ধ হয়। ব্রহ্মার বাহন হংস’। -পৌরনিক অবিধান পৃ. ৩৮৩
তাদের ধর্মগ্রন্থে আরও লেখা আছে,
শতরুপা, প্রথমা নারী। তিনি ব্রহ্মার কন্যা। মৎসপুরানে আছে, নয় জন মানসপুত্র সৃষ্টি করার পর ব্রম্মা এক কন্যা সৃষ্টি । এই কন্যাই শতরূপা, সাবিত্রী, গায়ত্রী, স্বরস্বতী, ও ব্রাহ্মণী নামে খ্যাতা। শতরূপার রূপে মুগ্ধ হয়ে সৃষ্টিকর্তা ব্রম্মা তার কন্যা শতরূপাকে গ্রহণ করেন। ব্রহ্মা তার কন্যার সঙ্গে অজাচারের ফলে প্রথম মনু সায়ম্ভুব-এর জন্ম হয়। -পৌরাণিক অভিধান, পৃ. ৪৯৫
অর্থাৎ হিন্দুরা যাকে ব্রহ্মা মনে করেন, তার ৫টি মাথা ছিলো, শিব একটি মাথা ধ্বংশ করে দেয়, তার কালার রক্তবর্ণ, তার সন্তান-স্ত্রী সবই আছে। এমন কি ব্রহ্মা নিজের মেয়ের সাথে কুকর্ম করে মনুকে জন্ম দেন। অথচ মুসলমানরা যাঁকে আল্লাহ মনে করেন, তিনি এ সব থেকে পবিত্র। আল্লাহ পাক ঈমানদের বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন,
وَأَنَّهُ تَعَالَى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا
এবং এই (বিশ্বাস করেছি) যে, আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সমুচ্চ। তিনি কোনও স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং কোন সন্তানও নয়। -সুরা জ্বিন : ৩
সুতরাং প্রমাণ হলো, হিন্দুদের ব্রহ্মা আর মুসলমানদের। আল্লাহ কস্মিনকালেও এক হতে পারে না।
খ্রিষ্টানদের গড বা ঈশ্বর:
তদ্রুপ খ্রিষ্টানরা যাকে আলফা ওমেগা বা গড-ঈশ্বর বলে তার প্রতি যে বিশ্বাস রাখে, সে বিশ্বাস মুসলমানদের হতেই পারে না। চলুন খ্রিষ্টানদের ঈশ্বর সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস কী তা দেখে নেওয়া যাক-
খ্রিষ্টানদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস:
১. ঈশ্বর অনেক কিছুই দেখেন না। -পয়দায়েশ ৩:৯, ১৮:২০-২১
২. ঈশ্বর না বুঝে কাজ করে পরে অনুশোচনা করেন। -পয়দায়েশ ৬:৫-৭
৩. ঈশ্বর অমঙ্গল বিধান দেন। -ইহিস্কেল ২০:২৫
৪. ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছেন। -পয়দায়েশ ১৮:১-১৮
৫. ঈশ্বর সাতটি বৃহৎ জাতিকে গণহত্যার মাধ্যমে নির্দয়ভাবে নির্মূল করতে বলেন এবং ক্ষমা করতে নিষেধ করেন। -দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১-২
৬. ঈশ্বর মানুষের পাপের শাস্তি তার সন্তান এবং স্ত্রীদের দেন। -হোশেয় ১৩:১৬
৭. ঈশ্বর ইবলিসের সাথে বিতর্কে জিততে বা নিজের কথা সত্যতা প্রমাণ করতে তার প্রিয় শয়তানের হাতে সমর্পণ করেন। -আইয়ুব ২:১-১০
৮. ঈশ্বর ব্যাভিচারের ব্যবস্থা করে দেন। -২ শমূয়েল ১২:১১
প্রিয় পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, খ্রিষ্টানরা যাকে ঈশ্বর মনে করেন এবং যার প্রতি এ রকম ধারণা বা বিশ্বাস রাখেন, এই ঈশ্বর আর মুসলমানদের আল্লাহ তাআলা কী কখনই এক হতে পারেন?
খ্রিষ্টানরা যাকে গড বা ঈশ্বর মনে করেন,তারা দাবি করেন যে, ঈশ্বরের পূত্র হলেন যিশুখ্রিস্ট। -যোহন ১০:২৫-৩৯
উপরন্তু খ্রিষ্টান যিশুখ্রিস্টকে ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করে থাকে। -যোহন ১:১-৪, ১০:৩০
প্রিয় পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, খ্রিষ্টানরা ঈশ্বর বলে যাকে অবিহিত করে, তাদের ঈশ্বর আর মুসলমানদের আল্লাহ কী কখনই এক হতে পারে?
আল্লাহ-র নাম নিয়ে সতর্কতা:
আল্লাহ তাআলার নামের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে কী বলা হয়েছে? যারা কোরআন ও হাদিসের সামান্য জ্ঞান রাখে তারাও জানেন যে, কোরআন-হাদিসে আল্লাহর অসংখ্য সুন্দর সুন্দর বর্ণিত হয়েছে। আর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সে সকল নামের ওসিলা দিয়ে দুআ করার এবং সে সব নাম ধরে ডাকার নির্দেশও দিয়েছেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلِلَّـهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
উত্তম নামসমূহ আল্লাহরই। সুতরাং তাকে সেই সব নামেই ডাকবে। যারা তার নামের ব্যাপারে বক্র পথ অবলম্বন করে, তাদেরকে বর্জন করো। তারা যা-কিছু করছে, তাদেরকে তার বদলা দেওয়া হবে। -সুরা আরাফ : ১৮০
অত্র আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহপাকের নামে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। হেযবুত তওহীদ কী এ আয়াতটি দেখে না? দেখবে কীভাবে? কুরআন শরীফ তো পড়তেও জানে না এ জাহেলরা।
আল্লাহর নাম:
আল্লাহ পাক তাঁর নামের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলেন,
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الأسْمَاءُ الْحُسْنَى
বলে দাও, তোমরা আল্লাহকে ডাকো বা রহমানকে ডাকো, যে নামেই তোমরা (আল্লাহকে) ডাকো, (একই কথা। কেননা) সমস্ত সুন্দর নাম তো তাঁরই। -সুরা ইসরা : ১১০
হাদিস শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ ، أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ
আমি আপনার সেই সকল নাম ধরে প্রার্থনা করছি, যে নামগুলো আপনি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। অথবা সৃষ্ট জগতের কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন, অথবা আপনার কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার নিজের কাছেই ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান)এ সংরক্ষিত রেখে দিয়েছেন। -মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং : ৩৭১২
সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলামে আল্লাহ পাকের নাম কী কী তা বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহপাকের নাম কতটি?
আল্লাহ তাআলার নামের সংখ্যার ব্যাপারে সহিহ হাদীসে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ
অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম অর্থাৎ- এক কমে একশটি নাম রয়েছে। যে লোক তা মুখস্ত বা আয়াত্ত করবে সে জান্নাতে গমন করবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৩
সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো, আল্লাহ তাআলা যে সকল নাম নিজের জন্য পছন্দ করেছেন, সেগুলো ধরে আহ্বান করা। এ ছাড়া অন্যান্য নাম বর্জন করা উচিৎ। অতএব আল্লাহ তাআলাকে বুঝাতে গড, ঈশ্বর ইত্যাদি শব্দ পরিত্যাগ করা উচিত। তবে অনারব ভাষায় তার নামের অর্থ ধরে আহ্বান করায় কোন আপত্তি নেই। যাহোক, ঈশ্বর, গড, ব্রহ্মা ইত্যাদী যেহেতু কুরআন-সুন্নাহ’ই বর্ণিত হয়নি, সেহেতু বিজাতীয়দের খুশি করতে আল্লাহ, গড, ঈশ্বর, ব্রহ্মা, আলফা-ওমেগা সব এক করার সুযোগ নেই।