আলেম-উলামা হলেন, পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট মানব। যাঁদেরকে নবিজি সাঃ সকল নবিদের আঃ ওয়ারিশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু যুগে যুগে সকল বাতিলের মূল টার্গেট ছিলো উলামায়ে কেরাম। কারণ তাঁদের থেকে জাতিকে আলাদা করতে পারলেই দ্রুতগতিতে ধোকা দিয়ে জাতিকে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট করা যায়। ঠিক একই পথে হেটেছে হেযবুত তওহীদ। কিন্তু উলামায়ে কেরামের সাথে হেযবুত তওহীদের বিদ্বেষটা অন্যদের তুলনায় অনেক গুন বেশি। আলেম-উলামা সম্পর্কে তারা এতটা বিশ্রিভাবে ব্যবহার করেছে যা অতীতের সকল রেকর্ড হার মানাবে। যেন আলেমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাই তাদের মূল টার্গেট।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
চলুন তাদের বক্তব্যগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-
১. আলেমরা কাফের।
২. আলেমরা ইহুদীদের পুরোহিদের মত।
৩. আলেমরা খ্রিস্টান যাজকদের মত।
৪. আলেমদের আবু জেহেলের মত।
৫. আলেমরা সবচে নিকৃষ্ট।
৬. আলেম তৈরি করে কোনো লাভ নেই।
৭. উলামাদের অনুসরণ করার কথা কুরআনে নেই।
৮. আলেমদের অনুসারীরা জাহান্নামী।
৯. আলেমদের কারণে জঙ্গী ও সন্ত্রাস তৈরি হচ্ছে।
১০. আলেমদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ নির্মুল হবে না।
১১. আলেমদের মাওলানা বলা যাবে না।
১২. আলেমরা মুর্খ।
১৩. আলেমরা কুয়ার ব্যঙ।
১৪. রাষ্ট্র চালানোর ক্ষমতা আলেমদের নেই।
১৫. আলেমরা ব্যার্থ।
১৬. আলেমরা ইসলামকে কঠিন করে তুলেছেন।
১৭. আলেমদের কাছে ইসলাম নেই।
১৮. মাদরাসায় ইসলাম নেই।
১৯. আলেমরা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নন।
২০. আলেমরা উল্টো দ্বীন প্রচার করছে।
২১. আলেমদের নামাজ হয় না।
২২. আলেমদের ফতোয়া দেওয়ার অধিকার নেই।
২৩. আলেমদের মাধ্যমে জাতি উপকৃত হচ্ছে না।
২৪. আলেম-উলামা দ্বীনের বাঁধা।
২৫. আলেমরা দ্বীনের বড় শত্রু।
২৬. আলেমদের হাতে ধর্ম রাখা যাবে না।
এগুলো হলো আলেমদের সম্পর্কে হেযবুত তহওহীদের মন্তব্যের সারাংশ। এবার চলুন প্রমাণসহ দেখা যাক। তাদের দাবি ছিলো,
এক. আলেমরা কাফের:
গত তেরশ বছরে যে এসলামটি এ জাতি আঁকড়ে ধরে আছে, আমাদের এমাম সেটিকে বোলেছেন, “এ এসলাম এসলামই নয়”। শুধু তা-ই নয়, এ বিকৃত এসলামের অনুসারীদেরকে তিনি বোলেছেন কার্যতঃ কাফের মোশরেক যার মধ্যে এ দীর্ঘসময়ের সকল আলেম-ওলামা পীর, দরবেশ, মোফাসসের, মোহাদ্দেসরা এসে যায়। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৪২
দুই. আলেমরা ইহুদীদের পুরোহিদের মত।
‘অন্যান্য দীনের পুরোহিতদের শ্রেণীর চেয়ে জুডিয় ধর্মে অর্থাৎ ইহুদী ধর্মের পুরোহিত শ্রেণীর সঙ্গে বর্তমান এসলাম ধর্মের পুরোহিত শ্রেণীর মিল বেশি। ধর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণে ও ফতোয়ায় (বিধানে) হিন্দু,খ্রিষ্টান,বৌদ্ধরাও কম যান না একেবারে উপাধীতে পর্যন্ত মিলে গেছে।এসলামের এ ই শ্রেণীর নাম মাওলানা আর ইহুদীদের রাব্বাই- একদম একার্থবোধক। মাওলা অর্থ প্রভু আর মাওলানা অর্থ আমাদের প্রভু। রব শব্দের অর্থও প্রভু। আর রাব্বাই মাওলা অর্থ প্রভু আর মাওলানা অর্থ আমাদের প্রভু। ইহুদী ধর্মের রাব্বাইরা যেমন তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের জন্য প্রচন্ড অহঙ্কারী,তেমনি বিকৃত এসলামের এ ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারাও তাই। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৩৫
তিন. আলেমরা খ্রিস্টান যাজকদের মত:
দীন বিক্রি ছাড়াও খ্রিস্টান যাজকদের মত চারিত্রিক অধঃপতনেও এই আলেম সম্প্রদায় কম যান না। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৩৭
পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসারী সম্প্রদায়গুলোর মত বর্তমানে বিকৃত ইসলামের ধর্মব্যবসায়ীরাও এর ব্যতিক্রম নন। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৩৮
চার. আলেমদের আবু জেহেলের মত:
‘রসুলুল্লাহর বিরোধিদের নেতৃত্বদানকারী আবু জেহেলের খেতাব ছিল আবুল হাকাম। যার অর্থ জ্ঞানীদের পিতা,ঠিক আজ যেমন আলেমরা নিজেদের নামের আগে লিখে থাকেন আল্লামা (মহাজ্ঞানী,Very hagh scholar)।যে পবিত্র মানুষগুলি স্বয়ং আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকেই ইসলামের আকিদা শিক্ষা করেছেন তাদের থেকে ইসলাম সম্পর্কে বেশি জানা কি সম্ভব? নিশ্চয়ই নযা। কিন্তু তাদের কেউ নামের আগে আল্লামা, মাওলানা জাতীয় কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন বলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না। এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৩৬
প্রিয় পাঠক, এগুলো ছিলো হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ট সন্তান ও জাতির বিবেক উলামায়ে কেরামের প্রতি মূল্যায়ন! আপনার কী মনে হয়? এত জঘন্য কথা কী অন্য কোনো নাস্তিকরাও জীবনে বলেছে? নিশ্চয় না। কিন্তু সময়ের গোপন নাস্তিক্যবাদ হেযবুত তওহীদ সেটা করতে সক্ষম হয়েছে। চলুন আলেমদের সম্পর্কে ইসলাম কী মূল্যায়ন করেছে একটু দেখে নেওয়া যাক।
ইসলাম কী বলে?
আলেম-উলামার মর্যাদা সম্পর্কে লিখতে গেলে বইটি অনেক লম্বা হয়ে যাবে। শুধু কয়েকটি আয়াত ও হাদিস নিন্মে পেশ করছি। মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে এবাদত করে, পরকালের আশংকা রাখে এবং তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না; বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। [সুরা যুমার : ৯]
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
হে মুমিনগণ, যখন তোমাদেরকে বলা হয়ঃ মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও। আল্লাহর জন্যে তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। যখন বলা হয়ঃ উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা করো। [সুরা মুজাদালাহ : ১১]
হযরত আবু উমামা বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ এবং আসমান-যমীনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিপড়া এবং পানির মাছ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দু’আ করে যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়। জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৬৮২
হযরত আবু উমামা বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ
তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির উপর আমার যতখানি মর্যাদা, ঠিক তেমনি একজন আলিমের মর্যাদা একজন আবিদের উপর। জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৬৮৫
হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিখে অপরকে শিক্ষা দেয়। সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৫০২৭
হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ
অবশ্যই আলিমগণ নবীদের ওয়ারিস। আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে কোন দীনার বা দিরহাম রেখে যাননি, বরং তারা রেখে গেছেন মীরাস হিসেবে ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম লাভ করেছে, সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে। জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৬৮২
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহ থেকে বুঝতে পারলাম, আলেম-উলামাদের মর্যাদা সবার সীমাহীন। কিন্তু কাফের, ইহুদী পণ্ডিতদের মতো ইত্যাদী শব্দগুলো কী আলেমদের সম্পর্তে আদৌ যায়? শুধু কী তাই? তারা আরো লিখেছে, আলেমরা সবচে নিকৃষ্ট।
পাঁচ. আলেমরা সবচে নিকৃষ্ট:
হেযবুত তওহীদ লিখেছে, ‘আখেরি জামানার এই আলেমদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল বলেছেন আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব। দীন বিক্রি ছাড়াও খ্রিস্টান যাজকদের মত চারিত্রিক অধঃপতনেও এই আলেম সম্প্রদায় কম যান না। -এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব : পৃ. ৩৭
সাহাবীরা এই যুগে এসে বর্তমান আলেমদের অবস্থা দেখলে ধিক্কার জানাবেন। -আকীদা : পৃ. ২২-২৩
দুটো হাদিস থেকে আখেরি যুগের আলেমদের সম্পর্কে বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি বলেছেন, প্রথমতঃ আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব। দ্বিতীয়তঃ দাজ্জালের থেকেও ভয়ংকর হবে আলমগণ, যে দাজ্জালকে মানবজাতির জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদ, সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে আখ্যায়ীত করেছেন। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১০
আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে নিকৃষ্টতম জীব। তাদের সৃষ্ট ফেতনা তাদের দিকে ধাবিত হবে (আলী রা: থেকে বাইহাকী, মেশকাত)। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৬
আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ। এই ওয়ারিশরাই হয়ে গেছে অপদার্থ ওয়ারিশ। যারা পার্থিব জীবন উপকরণের লোভে পড়ে দীনকে বিকৃত করে ধ্বংস করে ফেলেছে। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১৮
এই আলেমগণ সর্ব নিকৃষ্ট জীব কারণ তারা ধর্মের ধ্বজাধারী হয়েও মানুষকে সত্য মিথ্যার জ্ঞান দিচ্ছে না। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৩৮
অর্থাৎ তারা আলেমদের সর্বনিকৃষ্ট বলে দাবি করে থাকে।
ইসলাম কী বলে?
হেযবুত তওহীদ আলেমদের নিকৃষ্ট প্রমাণ করার জন্য একটি হাদিস বর্ণনা করে থাকে। সে হাদিসটি হলো, আহ্ওয়াস ইবনু হাকীম রহি. থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন,
سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ سلم عَنِ الشَّرِّ فَقَالَ: «لَا تَسْأَلُونِي عَنِ الشَّرِّ وَسَلُونِي عَنِ الْخَيْرِ» يَقُولُهَا ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: «أَلَا إِنَّ شَرَّ الشَّرِّ شِرَارُ الْعُلَمَاءِ وَإِنَّ خير الْخَيْر خِيَار الْعلمَاء
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মন্দ (লোক) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না, বরং ভালো সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি বলেন, সাবধান! ’আলিমগণের মধ্যে যে মন্দ, সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর ’আলিমগণের মধ্যে যে ভালো, সে মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম। -দারেমী, হাদিস নং : ৩৭০
হাদিসটির মান:
উক্ত হাদিসটি সহিহ নয়। কারণ আহ্ওয়াস থেকে দারিমী পর্যন্ত এর সনদের সবগুলো বর্ণনাকারী দুর্বল। এর উপর হাদীস মুরসালুত তাবি‘ঈ যা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং অগ্রহনযোগ্য একটা হাদিস দিয়ে আলেমদের সর্বনিকৃষ্ট প্রমাণ করার ব্যার্থ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। এরপরও যদি ধরে নেওয়া হয়, হাদিসটা সহিহ। তবুও কথা থেকে যায়। কারণ উক্ত হাদিসে আলেমদের যেমনিভাকে সর্বনিকৃষ্ট বলা হয়েছে, তেমনি সর্বউৎকৃষ্টও বলা হয়েছে। তাহলে শুধু আলেমদের সর্বনিকৃষ্ট বলা কী একপেশে আচরণ নয়?
মনে রাখা উচিত, আল্লাহপাক যার মঙ্গল চান তাকেই আলেম বানান। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবিজি সাঃ বলেছেন,
مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ
আল্লাহ্ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৭১
সুতরাং সহিহ আকিদার আলেম হওয়া সবার জন্যই মঙ্গলজনক। তাদেরকে নিকৃষ্ট বলা শয়তান ও তার পেতাত্মাদের কাজ।
আলেমরা উম্মতের আস্থাভাজন শ্রেণি:
হেযবুত তওহীদ আলেমদের উপর ক্ষিপ্ত হওয়ার মূল কারণ হলো, এই আলেমদের কারণেই মূলত তারা তাদের ধর্মব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছে না। কারণ যুগে যুগে কিছু আস্থাভাজন উলামায়ে কেরাম আগমন করেছেন, যারা বাতিলের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছেন। যাঁদের ব্যাপারে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, নবীজি সা. বলেন,
يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهُ يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلِينَ
এই ইলমকে ধারণ করবে প্রত্যেক প্রজন্মের আস্থাভাজন শ্রেণি। তাঁরা একে মুক্ত রাখবে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি থেকে, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার থেকে এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে। শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস নং : ৩৮৮৪।
সুতরাং প্রত্যেক যুগে আলেমরা বাতিলদের অপনোদন করবেই। এতে আমাদেরকে কে নিকৃষ্ট বলবে আর কে উৎতৃষ্ট বলবে সেটা কোনো ব্যাপার নয়। কারণ নবিজি সাঃ আমাদের ব্যাপারে বলেছেন আস্থাভাজন শ্রেণি। ফালিল্লাহিল হামদ।
ছয়. আলেম তৈরি করে কোনো লাভ নেই।
হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, আলেম তৈরি করে কোনো লাভ হচ্ছে না। তারা লিখেছে,
আমাদের মাদ্রাসা থেকে লক্ষ লক্ষ আলেম তৈরি হচ্ছে, মুফতি মুহাদ্দিস তৈরি হচ্ছে, আইনজ্ঞ বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু তা কি লাভ হচ্ছে? আমার ধর্ম বাঁচাতে পারছি না, জাতি বাঁচাতে পারছি না,কি মূল্য রইলো আমার আমলের? কি মূল্য রইলো আমার শিক্ষা-দীক্ষার? আমরা দুনিয়াতে চরম অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত, অপমানিত ও পরাজিত একটি জনগোষ্ঠি। অথচ আমরা বোকার স্বর্গে বাস করি এই ভেবে যে দুনিয়াতে যাই হোক পরকালে আমাদের জন্য জান্নাত অপেক্ষা করছে। আশা ভুলে যান ভায়েরা। যাদের দুনিয়ায় অসুন্দর, তাদের পরকালে হবে অসুন্দর। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ২০
আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা নেই, যে ব্যাপারে আল্লাহর কোন কথা আছে সেখানে অন্য কারোটা মানব না- ব্যস, এ কথাটি বোঝার জন্য কে আল্লামা বা মহা পন্ডিত হতে হয়? -তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৭
অর্থাৎ তারা বলে, আলেমদের মাধ্যমে ধর্ম ও জাতির কোনো ফায়দা হচ্ছে না। আর দীন বুঝতে আলেম হওয়া জরুরি নয়।
ইসলাম কী বলে?
আলেমদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, ইলমচর্চা করা। এই ইলম হলো, ইসলামের মৌলিক বিষয়ের অন্তুর্ভূক্ত। যেকারণে ইসলামের সূচনালগ্নে সর্বপ্রথম যে চর্চা করা হয়েছে, সেটাই ছিলো ইলম সংক্রান্ত। অর্থাৎ সর্বপ্রথম কুরআনী ওহীতেই ইলমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। হযরত জিব্রাঈল আঃ নবিজি সাঃ কে হেরা গুহায় এসে বললেন,
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَ، خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَق ، اِقْرَاْ وَ رَبُّكَ الْاَكْرَم، الَّذِیْ عَلَّمَ بِالْقَلَم، عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ یَعْلَمْ
পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন- সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। [সূরা আলাক : ১-৫]
ইলমের এতো গুরুত্ব এ কারণে যে, এই ইলম ছাড়া প্রকৃত কারো পক্ষেই মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে হযরত সুফিয়ান সাওরী রহি. থেকে বর্ণিত, তাবেঈ উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহি. বলেন-
من عمل على غير علم كان ما يفسد أكثر مما يصلح
যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া আমল করবে সে সঠিকভাবে যতটুকু করবে না করবে, বরবাদ করবে তার চেয়ে বেশি। সীরাতে উমার ইবনে আব্দুল আজিজ : পৃ. ২১৩
আর ইসলাম ধর্মে ইলম অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ। যে কারণে ইসলামে সর্বপ্রথম নবিজি সাঃ কে আলেম হিসাবে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন,
هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّٖنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ
তিনিই উম্মিদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে; তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; ইতিপূর্বে তো তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে। [সূরা জুমুআহ : ২]
এ জন্য ইলম বৃদ্ধির জন্য কুরআনে কারীমের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে দু’আ শিখিয়েছেন-
رَبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا
হে আমার রব, আমার ইলম বৃদ্ধি করে দাও। [সূরা ত্ব-হা : ১১৪]
উক্ত আয়াতসমূহ থেকে বুঝা যাচ্ছে ইলমচর্চা কতটা গুরুত্ববহ। অথচ এই ইলম অর্জনকে হেযবুত তওহীদ কতটা গুরুত্বহীন করে লিখেছে। বোকার দল বোঝেই না যে আল্লাহর বিধান জানতেই আলেম হওয়া জরুরি। উপরন্তু সন্তানকে আলেম বানালে তার বাবা মৃত্যুর পরও নেকি পেতে থাকে। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
যখন মানুষ মারা যায় তার সকল আমলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি রাস্তা খোলা থাকে। এক. ছদকায়ে জারিয়া। দুই. এমন ইলম, যা থেকে (মানুষ) উপকৃত হয়। তিন. নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৩১
এরপরও কী এ কথা বলা যায় যে, আলেম তৈরি করে লাভ কী হচ্ছে?
ইলম অর্জনের ফযিলত:
হাদীস শরীফে ইলম অন্বেষণের রাস্তাকেও আল্লাহর রাস্তা বলা হয়েছে। হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাঃ বলেন,
مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ العِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى يَرْجِعَ
যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের জন্য বের হল সে আল্লাহর রাস্তায় বের হল। -জামে তিরিমিযী, হাদীস নং : ২৬৪৭
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি,
مَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا لَمْ يَأْتِهِ إِلاَّ لِخَيْرٍ يَتَعَلَّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
যে ব্যাক্তি আমার এই মসজিদে কোন উত্তম বিষয় শিক্ষা দানের জন্য বা শিক্ষা লাভের জন্য আসে, সে আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদরত ব্যাক্তির মর্যাদাসম্পন্ন স্থানীয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং : ২২৭
হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَبْتَغِي فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الْحِيتَانُ فِي الْمَاءِ وَفَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ
যে ব্যক্তি ইলম তালাশের উদ্দেশ্যে পথ চলে আল্লাহ্ তা’আলা এর দ্বারা তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করেন। ইলম অন্বেষণকারীর সন্তুুষ্টির জন্য ফিরিশতাগণও তাদের পাখা নামিয়ে দেন। আসমানে যা কিছু আছে এবং যমিনে যা কিছু আছে, এমনকি পানির মৎস্য পর্যন্ত আলিমের জন্য ইস্তিগফার করে। একজন আবেদের উপর একজন আলিমের ফযীলত সেরূপ যেরূপ নক্ষত্রপুঞ্জের উপর চাঁদের ফযীলত। আলিমগণ হলেন আম্বিয়া কিরামের ওয়ারিছ। নবীগণ তো মীরাছ হিসাবে দীনার বা দিরহাম রেখে যান না। তাঁরা মীরাছ হিসাবে রেখে যান ইলম, যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে তো পূর্ণ হিস্যা লাভ করল। জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৬৮২
এতো এতো আয়াত ও হাদিস থাকার পরও কীভাবে বলা যায় যে, আলেম তৈরি করে কোনো লাভ হচ্ছে না? বরং তারা আরো বলে থাকে, আলেমদের অনুসরণ করা যাবে না, করলে সে জাহান্নামে যাবে।
সাত. উলামাদের অনুসরণ করার কথা কুরআনে নেই:
হেযবুত তওহীদ বুঝাতে চায়,
আলেমদের অনুসরণ করা যাবে না। কারণ আলেমদের অনুসরণ করার কথা পবিত্র কুরআনের কোথাও নেই। চলুন তারা কী বলে দেখা যাক। তারা লিখেছে,
সমগ্র কোরআন খুঁজলে একটা আয়াতও পাওয়া যাবেনা, যেখানে আল্লাহ কেবল একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে বলেছেন। আর অন্যদেরকে চোখ-কান বুজে সেই শ্রেণীর অনুসরণ করতে বলেছেন। -তওহীদক জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৫
একটি জাতির মধ্যে চালাক-বোকা, মূর্খ-জ্ঞানী সব ধরনের মানুষ থাকবে। সবার বুদ্ধিমত্তা সমান হবে না। কিন্তু আল্লাহর দেওয়া দীন তো সবার জন্য প্রযোজ্য,তাই নয় কি? দীন যদি এমন দুর্বোধ্য হয় যে সমাজের একটি বিশেষ অংশ সেটা বুঝতে পারল কিন্তু অন্যরা প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী না হবার কারণে বুঝতে পারল না তাহলে আখেরাত ও জান্নাত -জাহান্নাম অযৌক্তিক হয়ে যায়। -তওহীদ জান্নাতের চাবি : পৃ. ২৫
ইসলাম কী বলে?
একদল লোককে ইলম তলব করার নির্দেশ ও অন্যদেরতে তাদের কথানুযায়ী আমল করার কথা খোদ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন,
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةً فَلَوْلاَ نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُواْ إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
মুমিনদের সকলের একসঙ্গে অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ বহির্গত হয় না কেন, যাতে তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে। যাতে তারা সতর্ক হয়। [সূরা তাওবা : ১২২]
উপরন্তু অন্য আয়াতে মহান আল্লাহপাক বলেন,
فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে। [সুরা আম্বিয়া : ৭]
এর দ্বারা আম-সাধারণকে উলামাদের শরণাপন্ন হওয়ার তালিম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শরীআতের কোন বিষয় যার জানা থাকবে না, সে আন্দাজ-অনুমান ও নিজ যুক্তি বুদ্ধির পিছনে না পড়ে উলামাদের কাছ থেকে সমাধান জেনে নেবে। এর দ্বারা ইমামগণের তাকলীদ করার জরুরতও প্রমাণিত হয়। সুতরাং আলেম ও ফকিহদের মানার ব্যাপারে এমন সুস্পষ্ট আয়াত থাকার পরও যারা বলে আলেমদের থেকে জেনে আমল করার কথা পবিত্র কুরআনে নেই, তারা হয়তো মুর্খ নয়তো জ্ঞানপাপী। তারাও আরো জঘন্যভাবে বলেছে, এই আলেমদের যারা মানবে তারা জাহান্নামী:
আট. আলেমদের অনুসারীরা জাহান্নামী:
মানুষ ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকার হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারাচ্ছে। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৪২
ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারনায় পড়ে বিকৃত এসলাম পালনের জন্য পরকালীন তহবিলও শূন্য।দুনিয়ার জিবনে অন্যায়,অবিচার,অশান্তি আর পরকালীন জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে এই শ্রেণীটির অবধারিত গন্তব্য দাঁড়িয়েছে পাইকারী হারে জাহান্নাম। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১২৫
ইসলাম কী বলে?
আলেমদের অনুসরণের কথা সরাসরি পবিত্র কুরআনে রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
ياأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা وَأُولِوا الْأَمْرِ তাদের। [সুরা নিসা : ৫৯]
উপরেিউক্ত আয়াতে বর্ণিত وَأُولِوا الْأَمْرِ কারা? এ ব্যাপারে সাহাবী ও তাবেয়ীদের ব্যাখ্যা তুলে ধরলাম। রঈসুল মুফাসসিরিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও জাবের রা. বলেন,
هُمُ الفُقَهَاءُ والعلماءُ الَّذِينَ يعلِّمُونَ النَّاسَ معالم دينهم
তারা (أُولِوا الْأمر) হলেন ফক্বীহগণ এবং আলেমগণ, যারা মানুষদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিয়ে থাকেন। মা’আলিমুত তানযিল : খ. ২ পৃ. ২৩৯
বিশিষ্ট তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ রহি. বলেন,
عن مجاهد في قوله أطيعوا الله وأطيعوا الرسول وأولي الأمر منكم قال أولي الفقه منكم
মুজাহিদ রহি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, أُولِوا الْأمر মানে তোমাদের মধ্যে যারা ফিকহের জ্ঞান রাখেন। তাফসীরে কুরতুবী : খ. ৪ পৃ. ১৫২
ইবনে আবু নাজিহ রহি. বলেন,
أولي الفقه في الدين والعقل
আয়াতে أُولِوا الْأمر মানে দ্বীনের শারঈ ও আক্বলী জ্ঞানের অধিকারী। তাফসীরে কুরতুবী : খ. ৪ পৃ. ১৫২
আতা ইবনে সায়েব রহি. বলেন,
قال أولي العلم والفقه
আয়াতে أُولِوا الْأمر হলেন, উলামায়ে কেরাম ও ফকিহগণ। তাফসীরে কুরতুবী : খ. ৪ পৃ. ১৫২
হাসান বসরী রহি. বলেন,
عن الحسن في قوله وأولي الأمر منكم قال هم العلماء
আয়াতে أُولِوا الْأمر হলেন, উলামায়ে কেরাম। তাফসীরে কুরতুবী : খ. ৪ পৃ. ১৫২
আবুল আলিয়া রহি. বলেন,
عن أبي العالية في قوله وأولي الأمر منكم قال هم أهل العلم
আয়াতে أُولِوا الْأمر হলেন, উলামায়ে কেরাম। তাফসীরে কুরতুবী : খ. ৪ পৃ. ১৫২
প্রিয় পাঠক, উক্ত আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ এবং (أُولِوا الْأمر) তথা উলামায়ে কেরাম ও ফকিহদেরকে মান্য করার নির্দেশ খোদ আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন। এই আলেমদের মেনে মানুষ উভয় জগত হারাচ্ছে বা এদের শেষ পরিনতি জাহান্নাম যারা বলে, তাদের কথা কী কুরআন বিরোধি নয়?
নয়. আলেমদের কারণে জঙ্গী ও সন্ত্রাস তৈরি হচ্ছে:
তারা আরো লিখেছে,
মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে ধর্মব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের যতদিন ফেলে রাখা হবে, ততদিনে নতুন নতুন জঙ্গি দল, সুফিসাধক, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হবে আর সন্ত্রাস চলবে, প্রতারণা চলবে,যুদ্ধ চলছে। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ ও প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ১৬৭
ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের অন্যতম ফসল ‘সাম্প্রদায়িকতা’ যেন এক ঘুমন্ত বাঘ এবং ধর্মব্যবসায়ীরা তাকে জাগিয়ে তুলতে সদা উদগ্রীব। -আদর্শিক লড়াই : পৃ. ৭
ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণীর ফতোয়াবাজি, অপরাজনীতি আর পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমরা হাজারো ভাগে বিভক্ত হয়ে হানাহানি-মারামারি দলাদলি, হত্যা, রক্তপাতে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছি। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৮১
তারা (আলেমরা) ফতোয়াবাজি করে প্রগতি ও মুক্তচিন্তার সকল পথ রুদ্ধ করেছে’। শিল্প সংস্কৃতির চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের কথায় মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মঘাতী হচ্ছে, এখানে ওখানে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে, সন্ত্রাসী করছে। অপরদিকে পরাশক্তি এই জঙ্গিদেরকে নিজেদের সম্রাজ্যবাদ বিস্তারের গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে। -আদর্শিক লড়াই : পৃ. ৩
মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে, মিথ্যা গুজব রটিয়ে, কারো বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে, ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়, ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এই ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৮৬
দশ. আলেমদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ নির্মুল হবে না:
বর্তমানের আলেমদের দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে না। -আক্রান্ত দেশ ও ইসলাম : পৃ. ৮
বিকৃত ইসলামের অনুসারী ধর্মজীবী আলেমরা অন্ধ ও পথভ্রষ্ট, অপরপক্ষে জঙ্গিরা অন্ধ ও পথভ্রষ্ট। যদিও উভয়ের মধ্যে আদর্শিক ফারাক রয়েছে। একজন পথভ্রষ্ট অন্ধ কি কখনো আরেক পথভ্রষ্ট অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? পারে না। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট : পৃ. ৩৯
নোট:
আলেমদের শানে এই অভিযোগগুলো মূলত করে থাকে নাস্তিকরা। প্রশ্ন হলো, নাস্তিকদের দাবি হেযবুত তওহীদের মুখে কেন? অথচ হলিআর্টিজেনে হামলার পেছনে মূল দায়ি কারা ছিলো আলেমরা? নিশ্চয় না। ছাত্র সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি অস্ত্র চালানোর ইতিহাস কী আলেমদের? নিশ্চয় না। তাহলে আলেমদের উপর এ অভিযোগের ভিত্তি কী? অথচ হেযবুত তওহীদই মানুষকে জঙ্গিবাদি কাজে উস্কে দিচ্ছে। তারা লিখেছে,
যে যোদ্ধা নয়, যুদ্ধ জানে না, তার এই দীনুল এসলাম সমিতির প্রাথমিক সদস্যপদেরও (primary membership) যোগ্যতা নেই, ভালো সভ্য হওয়াতো দুরের কথা। এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৪০
যে মো’মেনের (ঈমানদারের) তলোয়ারের অর্থাৎ অস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক নেই তিনি কোনো দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে লিখতে গেলে শেষ নেই। -এসলামের প্রকৃত রুপরেখা : পৃ. ৪০
এ ধরণের অসংখ্য কথা তারা লিখেছে। তাহলে আপনারাই বলুন জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ড কারা করছে? আলেমরা না হেযবুত তওহীদ?
এগারো. আলেমদের মাওলানা বলা যাবে না?
আলেমদের মাওলানা বলার ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের যথেষ্ট চুলকানি দেখা যাচ্ছে। তারা বলছে,
অন্যান্য দীনের পুরোহিতদের শ্রেণীর চেয়ে জুডিয় ধর্মে অর্থাৎ ইহুদী ধর্মের পুরোহিত শ্রেণীর সঙ্গে বর্তমান এসলাম ধর্মের পুরোহিত শ্রেণীর মিল বেশি। ধর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণে ও ফতোয়ায় (বিধানে) হিন্দু,খ্রিষ্টান,বৌদ্ধরাও কম যান না একেবারে উপাধীতে পর্যন্ত মিলে গেছে।এসলামের এ ই শ্রেণীর নাম মাওলানা আর ইহুদীদের রাব্বাই- একদম একার্থবোধক। মাওলা অর্থ প্রভু আর মাওলানা অর্থ আমাদের প্রভু। রব শব্দের অর্থও প্রভু। আর রাব্বাই মাওলা অর্থ প্রভু আর মাওলানা অর্থ আমাদের প্রভু। ইহুদী ধর্মের রাব্বাইরা যেমন তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের জন্য প্রচন্ড অহঙ্কারী,তেমনি বিকৃত এসলামের এ ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারাও তাই। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৩৫
যে পবিত্র মানুষগুলি স্বয়ং আল্লাহর রাসুলের কাছ থেকে এসলামের আকীদা শিক্ষা কোরেছেন তাদের থেকে এসলাম সম্পর্কে বেশি জানা কি সম্ভব? নিশ্চয় নয়। কিন্তু তাদের কেউ নামের আগে আল্লামা, মাওলানা জাতীয় কোন খেতাব ব্যবহার কোরেছেন বোলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৩৬
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, মাওলানা শব্দটা কোনো সাহাবারা ব্যবহার করেননি। এহুল্র ইহুদী পণ্ডিতদের কাজ।
ইসলাম কী বলে?
একই প্রশ্ন যদি আমি করি? অর্থাৎ কোনো সাহাবী কী জিবনে নিজেকে এমামুজ্জামান শব্দ নিজেদের নামে ব্যবহার করেছেন? নিশ্চয় না। তাহলে এমামুজ্জামান বানাতে অসুবিধা নেই, মাওলানা বলাতে এত সমস্যা কেন? জানা উচিত। রাসুলুলুল্লাহ সাঃ হযরত যায়েদ বিন হারেসা রা. কে বলেছেন,
انت اخونا ومولانا
তুমি আমার ভাই এবং মাওলানা। সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৪২৫১
সুতরাং আলেমদের নামের শুরুতে মাওলানা, আল্লামা ইত্যাদী বলাতে ইসলামে কোনো অসুবিধা নেই। অসুবিধা শুধু তাদের যারা উলামা বিদ্বেষী। তারা আরো বলেছে, আলেমরা নাকি মূর্খ, তাদের রাষ্ট্রচালানোর যোগ্যতা নেই। দেখুন তারা কী বলে?
বারো. আলেমরা মুর্খ:
বর্তমানে যারা নিজেদের আলেম অর্থাৎ জ্ঞানী মনে করেন আল্লাহর দেয়া জ্ঞানীর সঙ্গায় তারা আলেম নন। কারণ শুধু দীনের জ্ঞানের বাইরে মানুষের অর্জিত জ্ঞানের সম্বন্ধে তাদের সামান্যতম জ্ঞান নেই এবং সেই জ্ঞান সম্বন্ধে পিপাসাও নেই। -দাজ্জাল : পৃ. ৬৬
তেরো. আলেমরা কুয়ার ব্যঙ:
এই জাতির ধর্ম ব্যবসায়ী আলেম সমাজ আজ কুয়োর ব্যাঙ। দুনিয়ার খবর যারা রাখেন তাদের চোখের অবজ্ঞার পাত্র, হাসির খোরাক। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ১৩২
চৌদ্দ. রাষ্ট্র চালানোর ক্ষমতা আলেমদের নেই:
নানাবিধ কারণে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন তা এদের (আলেমদের) মধ্যে গড়ে ওঠেনি। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট সমাধানের উপায় : পৃ. ৬৬
নোট:
মূলত এই অভিযোগটা করে থাকে নাস্তিকরা। সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষীদের এই অভিযোগটার পেছনে মূল টার্গেট হলো, যেন আলেমদের হাতে ক্ষমতা না আসে। কারণ যদি আলেমো ক্ষমতায় যায়, তাহলে তারা তো আর সমাজ বিনাশ করতে পারবে না, দুর্নিতি, চুরি, পক্ষপাতিত্বে নোবেল পাবে না। পৃথিবিতে ইসলামি আইন ছাড়া কেউ সোনালি সমাজ গঠন করতে পেরেছে এমন নজির নেই। পক্ষান্তরে সাম্প্রতিককালে আফগানিস্থানে এই মোল্লারাই সকল অনাচার বদলে দিয়ে ইতিহাস গড়ে চলেছেন। কিন্তু এগুলো তাদের চোখে পড়ে না। কারণ বিরোধিতার চশমা পরলে ভালো কিছু দেখা সম্ভব নয়। তারা আরো বলে থাকে, সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করতে ব্যার্থ হচ্ছে আলেমরা। দেখুন তারা কী বলে?
পনেরো. আলেমরা ব্যার্থ:
আলেমরা মানুষের মন থেকে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করতে, মানুষের আত্মাকে বিশুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ একজন অন্যায়কারী আরেকজন অন্যায়কারীকে অন্যায় থেকে নিবৃত করতে পারেন না। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১১
নোট:
অথচ ইতিহাস ও বাস্তবতা সাক্ষি, সমাজের চোর, ডাকাত, লম্পট, দুর্ণীতিবাজ যারাই ভালো হয়েছে, খবর নিয়ে দেখা গেছে, তার পেছনে কোনো আলেমের মেহনত রয়েছে। তারা আরো বলে, আলেমরা ইসলামকে কঠিন করে তুলেছেন। দেখুন তারা কী বলে,
ষোলো. আলেমরা ইসলামকে কঠিন করে তুলেছেন:
‘আলেম ওলামারা সহজ সরল দীনের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কোরে একে সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরে নিয়ে গেছেন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ২৭
নোট:
উম্মতের মুজতাহিদ আলেম ও ইমামগল ইসলামকে কঠিন করে তোলেন নি, বরং জাতিকে সহজভাবে দীন পালন করতে আজীবন মেহনত করে গেছেন। যদি তাঁরা এ মহান কাজটি না করতেন, তবে সেলিমদের মতো জাহিলদের পক্ষে হাদিস-কুরআন ঘেটে দুই রাকাত নামাজ পড়াও সম্ভব হতো না। অথচ এরাই আবার বলে, মাদরাসা ও আলেমদের কাছে ইসলাম নেই। দেখুন তারা কী বলে?
সতেরো. আলেমদের কাছে ইসলাম নেই:
প্রকৃত ইসলাম মোল্লাদের কাছে নেই। সেটা আল্লাহ দয়া করে হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ ও প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৫২
আঠারো. মাদরাসায় ইসলাম নেই:
এই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা আত্মাহীন মরা ইসলাম নিয়ে এরা কখনো ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। ইসলাম প্রতিষ্ঠা তো লক্ষ কোটি মাইল দূরের কথা। -মহাসত্যের আহ্বান (ছোট) : পৃ. ৫
নোট: যে মাদরাসায় আলেম তৈরি হয়, কুরআন-হাদিসের চারটা হয়, সেখানেও ইসলাম নেই, সে আলেমদের কাছেও ইসলাম নেই কথাটা শোনার পর আপনার প্রতিক্রিয়া কী? তারা সুস্থ না মানোসিক ভারসাম্যহীন, অসুস্থ? তারা আরো বলে, আলেমরা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নন, তারা উল্টো ইসলাম প্রচার করছে। দেখুন তারা কী বলে?
উনিশ. আলেমরা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নন:
যামানার এমাম প্রমান করে দিয়েছেন যে এই তথাকথিত আলেমরা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নন। তাদের কাছে যে ইসলামটি চালু আছে সেটাও একটি বিকৃত এবং বিপরীতমুখী ইসলাম। -জঙ্গীবাদ সঙ্কট সমাধানের উপায় : পৃ. ৩৯
এই আলেমগণ সর্ব নিকৃষ্ট জীব কারণ তারা ধর্মের ধ্বজাধারী হয়েও মানুষকে সত্য মিথ্যার জ্ঞান দিচ্ছে না। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৩৮
কুড়ি. আলেমরা উল্টো দ্বীন প্রচার করছে:
আমাদের সমাজে ধর্মজীবীরা ঠিক এমন ভাবে সুর করে ওয়াজ করেন যেন তারা আল্লাহ-রসূলের কথাই বলছেন। কিন্তু আদৌ তা নয়। তারা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী একটি ইসলামকে আল্লাহ নামে চালিয়ে দেন। তাদের কাজের ফলে দীন বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মুসলিম জাতি বহু আগেই পথ হারিয়ে ফেলেছে। এখন তারা বিগত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সংকটে পড়েছে। -প্রিয় দেশবাসী : পৃ. ৮৭
ইসলাম কী বলে?
একমাত্র আলেমরাই যুগে যুগে সকল বিকৃতি ও বিভ্রান্তির অপনোদন করেছেন। যা ইতিহাসের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু যারা মিথ্যায় ডুবে থাকে তারা সত্য ইতিহাস খুজে পাবে কীভাবে? এই সত্যনিষ্ঠ আলেমদের ব্যাপারে নবিজি সাঃ বলেছেন,
يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله، ينفون عنه تحريف الغالين، وانتحال المبطلين، وتأويل الجاهلين.
এই ইলমকে ধারণ করবে প্রত্যেক প্রজন্মের আস্থাভাজন শ্রেণী। তাঁরা একে মুক্ত রাখবে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি থেকে, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার থেকে এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে। -তারিখে দিমাশক খ: ৭ পৃ: ৩৯
সুতরাং বুঝা গেলো প্রত্যেক যামানায় এক শ্রেণির আলেম তৈরি হোন, যারা দীনের সকল বিকৃতির জবাব দিয়ে সত্য দীন জাতির সামনে তুলে ধরেন। কিন্তু হেযবুত তওহীদের কাছে সে আলেমরাই নাকি উল্টো ইসলাম প্রচার করছে। কী হাস্যকর! শুধু কী তাই, বরং তারা আরো দাবি করেছে, আলেমদের নাকি ফতোয়া দেওয়ার অধিকার নেই। দেখুন তারা কী বলে।
একুশ. আলেমদের নামাজ হয় না।
‘সবচে বড় কথা হচ্ছে,বর্তমান মুসলিম বলে পরিচিত এ জনগোষ্ঠীর পণ্ডিতগণ সালাহকে সামরিক প্রশিক্ষণ হিসাবে তো মানেই না বরং তারা সালাহকে যে ধ্যান বলে প্রচার করে তারা সেই ধ্যানও করে না অর্থাৎ ওরা ট্রেনিংও করে না আবার ধ্যানও করে না।তাদের কোনটাই হয় না। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৩৫
নোট.
এ ব্যাপারে নামাজ পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে প্রমাণ করা হয়েছে, নামাজ কোনো ট্রেণিং নয়, বরং আল্লাহ পাকের স্বতন্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সুতরাং নামাজের অপব্যাখ্যা করে উল্টো ‘আলেমদের নামাজ হয় না’ বলে দাবি নিতান্তই বিদ্বেষ ছাড়া কিছু নয়।
বাইশ. আলেমদের ফতোয়া দেওয়ার অধিকার নেই:
তারা লিখেছে,
আলেমরা ফতোয়া দেওয়ার অধিকার হারিয়েছেন। -আক্রান্ত দেশ ও ইসলাম : পৃ. ১৮
ইসলাম কী বলে?
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন,
إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ النَّاسِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يَتْرُكْ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا
অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে যে ইলম দান করেছেন তা তোমাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার মত তুলে নেবেন না। বরং ইলম-ওয়ালা (বিজ্ঞ) উলামা তুলে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন। এমতাবস্থায় যখন কেবল জাহেলরা অবশিষ্ট থাকবে, তখন লোকেরা তাদেরকেই ফতোয়া জিজ্ঞাসা করবে। ফলে তারা নিজেদের রায় দ্বারা ফতোয়া দেবে, যাতে তারা নিজেরা ভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও ভ্রষ্ট করবে। সহিহ বুখারী, হাদিস : ১০১
হযরত হাসান বসরী রহি. বলেন,
طالبُ العِلمِ بين الجُهّالِ كالحيِّ بين الأمواتِ
মূর্খদের থেকে ইলম অন্বেষণ করা মানে মৃতদার মাঝে জীবিত থাকান মতো। আল ইসাবাহ খ. ১ পৃ. ৪৯৩
সুতরাং বুঝা গেলো, ফাতাওয়া দেওয়ার যোগ্যতা ও অধিকার একমাত্র আলেমদেরই রয়েছে, কিন্তু মূর্খরা তা বোঝে না। তারা আরো বলে, আলেমদের মাধ্যমে জাতি উপকৃত হচ্ছে না, আলেম-উলামা দ্বীনের বাঁধা, আলেমরা দ্বীনের বড় শত্রু, আলেমদের হাতে ধর্ম রাখা যাবে না। দেখুন তারা কী বলে,
তেইশ. আলেমদের মাধ্যমে জাতি উপকৃত হচ্ছে না:
ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের উপর নির্ভরশীল। তাদের থেকে ধর্ম শিখে সওয়াবের আশায় ইসলামের উপকার হবে মনে করে তারা বারবার সমাজ ও জাতি বিনাশী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে। তারা ধর্মকর্ম মনে করে যে উপাসনা বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে তাতে না সমাজ উপকৃত হচ্ছে না জাতি উপকৃত হচ্ছে। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৪২
চব্বিশ. আলেম-উলামা দ্বীনের বাঁধা:
এই দীনের যে বিকৃতিগুলি এসেছে সেগুলিকে দূরীভুত করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হোচ্ছেন এই বিকৃত দীনেরর আলেম সমাজ।তারা দীনকে নিজেদের কুক্ষিগত কোরে রাখতে চান এবং এটাকে বিক্রি কোরে জীবিকা নির্বাহ কোরতে চান। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৪৯
তারা (আলেমগণ) সত্যকে প্রকাশ হোতে দিতে চান না।তারা ভাবেন এই সত্য প্রকাশ হোয়ে পড়লে তাদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হোয়ে যাবে এই আশংকায় সব সময় সত্যের বিরোধিতা করেন। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৪৯
পচিশ. আলেমরা দ্বীনের বড় শত্রু:
আলেমরা লেবাস দেখিয়ে দাড়ি-টুপি দেখিয়ে মানুষকে বোঝাতে চাইছে তারা ইসলামের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ইসলামের ঘোরশত্রু। তারা এই দীনটিকে বিক্রি করে খাচ্ছে। একে তারা যখন যেভাবে ইচ্ছা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। -মহাসত্যের আহ্বান : পৃ. ৩১
আমরা যদি নবী-রাসূলদের জীবনী পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখবো এই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। তাদের প্রায় সকলকেই পূর্ববর্তী বিকৃত ধর্মের পুরোহিত আলেম শ্রেণীর দ্বারা প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। চিরকাল এরাই ছিল সত্যের প্রকাশ্য শত্রু। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ৮৯
ছাব্বিশ. আলেমদের হাতে ধর্ম রাখা যাবে না:
ধর্মের নিয়ন্ত্রণ আর ধর্মজীবী শ্রেণীটির হাতে রাখা যাবে না। রাখলে তা পুনঃ পুনঃ একই রকম দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্ম দেবে। -গণমাধ্যমের করণীয় : পৃ. ৯২
ইসলাম কী বলে?
যুগে যুগে ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে উলামায়ে কেরামকেই মহান আল্লাহ ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, বরং উলামায়ে কেরামের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ ইলমে ওহীকে টিকিয়ে রেখেছেন। যেদিন আলেম সমাজ থাকবেন না সেদিন ইসলামের বিধিবিধানও টিকবে না। এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি,
إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে ’’ইলম উঠিয়ে নেন না, কিন্তু দ্বীনের আলিমদের উঠিয়ে নেয়ার ভয় করি। যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে। তাদের জিজ্ঞেস করা হলে না জানলেও ফাতাওয়া প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে। সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১০০
সুতরাং বুঝা গেলো, ইলমে ওহী টিকে আছেই আলেমদের মাধ্যমে। আলেমরা উঠে গেলেই ইলম উঠে যাবে। সুতরাং যারা বলে আলেম তৈরি করে লাভ নেই তারা মূলত ইসলামই ধ্বংশ করতে চায়।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝতে সক্ষম হলাম আলেম-উলামা উম্মতের শ্রেষ্ট সন্তান। যাদের মর্যাদা খোদ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ প্রদান করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ যে আলেমদের সীমাহিন সম্মানে ভূষিত করলেন, সে আলেমদের বিরোধীতা করতে হেযবুত তওহীদ বদ্ধপরিকর। আল্লাহ তাআলা এ নাস্তিকদের মুখপাত্র হেযবুত তওহীদ থেকে আমাদের হিফাযত করুন। আমীন!