Home > হিজবুত তাওহীদ > আমলের প্রয়োজন নেই:

আমলের প্রয়োজন নেই:

প্রিয় পাঠক! এ কথাটি সুস্পষ্ট যে, ইসলামের মূল বিষয় হলো ঈমান। অর্থাৎ তাওহীদ, রিসালাত, আম্বিয়ায়ে কেরাম আ. আসমানী সকল কিতাব, আখেরাত, তাকদীর ইত্যাদীর উপর ঈমান আনা।  ইসলামের পুরো কনসেপ্টের ভেতর কোনো একটি অস্বীকার করলে আর ঈমান থাকে না। জানার বিষয় হলো- শুধু এ তওহীদে বিস্বাস থাকলেই কি জান্নাতে যাওয়া যাবে? নাকি আল্লাহর আদেশ নিষেধও মেনে আমলও করতে হবে?

হেযবুত তওহীদের দাবি:

কুফরী সংগঠন হেযবুত তাওহীদের দাবি হলো, শুধু তাওহীদে বিশ্বাস থাকলেই জান্নাত নিশ্চিত। চলুন তাদের দাবিগুলো দেখা যাক। তারা লিখেছে,

‘আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দিলেন- আমার তাওহীদকে, আমার সার্বভৌমত্বকে যে বা যারা স্বীকার কোরে নেবে, তা থেকে বিচ্যুত হবে না তারা কত এবাদত কোরেছে, তারা কত গোনাহ কোরেছে, কিছুই আমি দেখবো না, তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো, তারা ব্যভিচার ও চুরি করলেও।’
সূত্র: দাজ্জাল পৃষ্ঠা-১৫

“শত নির্যাতন নিপীড়ন বিদ্রূপ অপমান উপেক্ষা করে, খেয়ে না খেয়ে, গাছের লতা-পাতা খেয়ে, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। এই সময় যেসব সাহাবী ইন্তেকাল করেন তারা ইসলাম বলতে কি পেয়েছিলেন? তার নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত ঈদ কোরবানি কিছুই পেয়েছিলেন কি? তারা পেয়েছেন শুধুমাত্র তাওহীদ এবং বলার অপেক্ষা রাখেনা তাওহীদই তাদের সফলকাম হয়ে জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট ছিল।”
সূত্র: তওহীদ জান্নাতের চাবি-১০

‘নবীজি কোন আমলের দাওয়াত দেন নি।’
সূত্র: প্রিয় দেশবাসী পৃ:৬৬

‘বিকৃত এসলামে নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত আত্মার পরিচ্ছন্নতার জন্য নানারকম ঘষামাজা আধ্যাত্মিক উন্নতির উপর গুরুত্ব প্রাধান্য দেওয়া হলো। কারণ এরা ঐ এবাদত উপাসনা নিয়ে যত বেশি ব্যস্ত থাকবে ব্রিটিশরা তত নিরাপদ থাকবে।’
সূত্র: এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃষ্ঠা: ১১২

‘নামাজ রোজা হজ্ব পূজা প্রার্থনা তীর্থযাত্রা মানুষের মূল এবাদত নয়। মানবজাতী যেন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে এ লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত।
সূত্র: জঙ্গিবাদ সংকট পৃ:৫৬

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত তাদের কয়েকটি বক্তব্য উল্লেখ্য করলাম, যেখানে তারা দাবি করলেন যে, শুধু তাওহীদ বা আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাসী হলেই জান্নাত নিশ্চিত। আমল করা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। এজন্যই দেখা যায় তাদের সদস্যদের মধ্যে আমলের প্রতি কোনো মনোনিবেশ নেই।

ইসলাম কি বলে?

মনে রাখতে হবে, শুধু আল্লাহর উপর ঈমান আনলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে এ কথা পবিত্র কুরআন ও হাদিস বিরোধী কথা। কারণ মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআন শরিফে এবং নবিজি স: পবিত্র হাদিসে যেখানেই ঈমানের কথা বলেছেন, সাথে সাথে আমলের কথাও বলেছেন। সুতরাং আমলকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে বা ‘আমল না করলেও জান্নাতে যাবে’ এমন দাবি করা প্রকাশ্য কুফরী। জান্নাতে যাওয়ার জন্য যে ঈমানের সাথে আমলও শর্ত এর কয়েকটি আয়াত এখানে উল্লেখ্য করা হলো। মহান রব বলেন,

وَبَشِّرِ الَّذِين آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ

অর্থ: আর হে নবী, সা. যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন।
সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫

وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أُولَـئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থ: পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।
সুরা বাকারা, আয়াত: ৮২

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ

অর্থ: নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।
সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৭

وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

অর্থ: কসম যুগের (সময়ের), নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।
সুরা আছর, আয়াত: ১-৩

এ সম্পর্কে আরও প্রমাণ চাই দেখুন,
সুরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৫৭ সুরা নিসা: ৫৭/১২২/১৭৩ সুরা মায়িদা, আয়াত: ৯/৯৩ সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৪২ সুরা ইউনুস, আয়াত: ৪/৯ সুরা হুদ, আয়াত: ২৩ সুরা রা’দ, আয়াত: ২৩ সুরা ইবরাহীম, আয়াত: ২৩ সুরা কাহাফ, আয়াত: ৩০/১০৭ সুরা ইারাহীম, আয়াত: ৯৬ সুরা হাজ্জ্ব, আয়াত: ১৪/২৩/৫০/৫৬ সুরা শুআরা, আয়াত: ২২৭ সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৭/৯/৫৮ সুরা রুম, আয়াত: ১৫/৪৫ সুরা লোকমান, আয়াত: ৮ সুরা আলিফ লাম মিম সিজদা, , আয়াত: ১৯ সুরা সাবা, আয়াত: ৪ সুরা ফাতির, আয়াত: ৭ সুরা ছোয়াদ, আয়াত: ২৪/২৮ সুরা মুমিন, আয়াত: ৫৮ সুরা হা-মি-ম সিজদা, আয়াত: ৮ সুরা শু’রা, আয়াত: ২২/২৩/২৬ সুরা জাসিয়া, আয়াত: ২১/৩০ সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২/১২ সুরা ফাত্হ, আয়াত: ২৯ সুরা ত্বলাক, আয়াত: ১১ সুরা ইনশিক্বাক, আয়াত: ২৫ সুরা বুরূজ, আয়াত: ১১ সুরা ত্বীন, আয়াত: ৬ সুরা বায়্যিনাহ, আয়াত: ৭

প্রিয় দ্বীনি ভাই, উক্ত আয়াতগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমানীত যে, জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমলের প্রয়োজনীয়তা কত বেশি। আমল ছাড়া যদি জান্নাতে যাওয়া যেতো, তাহলে মহান আল্লাহ ঈমানের সাথে সাথেই (حرف عطف (واو অর্থাৎ ‘এবং’ শব্দ দিয়ে আমলকেও শর্তযুক্ত করতেন না। যদি او তথা ‘অথবা’ শব্দ ব্যবহার করতেন, তাহলে বুঝা যেতো শুধু ঈমান হলেও চলবে। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা (حرف عطف (واو অর্থাৎ ‘এবং’ শব্দ দিয়ে আমলকেও শর্তযুক্ত করে এটাই বুঝালেন যে, আমল ছাড়া শুধু ঈমান দিয়ে জান্নাত নিশ্চিত করা যাবে না। জান্নাত নিশ্চিত করতে আমলও লাগবে।

নবীজির সা. নামে মিথ্যাচার:

প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদ তাদের এ জঘন্য মতবাদ প্রতিষ্ঠান লক্ষে খোদ নবীজি সা. এর উপরেও এক চরম মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে। তাদের দাবি হলো-

‘নবীজি কোন আমলের দাওয়াত দেন নি।’
সূত্র: প্রিয় দেশবাসী পৃ:৬৬

জবাব:

রাসুলাল্লাহ সা. সাহাবায়ে কেরামকে রা. হাতেনাতে সমস্ত আমল শিখিয়েছেন। এমনকি বাথরুমে কিভাবে যেতে হবে, কিভাবে পানাহার করতে হবে, এমনকি কাপড়-চোপড় কিভাবে পরিধান করতে হবে সেগুলো পর্যন্ত তিনি সাহাবায়ে কেরামকে রা. শিখিয়েছেন। যার প্রদাণ হাদিসের গ্রন্থসমূহে ভরপুর রয়েছে। এখানে ইসলামের স্তম্ব সংক্রান্ত প্রশিদ্ধ সেই হাদিসটির দিকে খেয়াল করুন।

عن عبدالله بن عمر ان النبي صلي الله عليه وسلم قال بُنِيَ الإسْلامُ على خَمْسٍ،شَهادَةِ أنْ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ وأنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ ورَسولُهُ وإقامِ الصَّلاةِ وإيتاءِ الزَّكاةِ وحَجِّ البَيْتِ وصَوْمِ رَمَضانَ

অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রদি. বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ তথা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার রাসুল—এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। নামায কায়েম করা। যাকাত দেয়া, হজ পালন করা এবং রমাযান মাসের রোযা রাখা।
সূত্র: সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৮ সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬

প্রিয় পাঠক! এই হাদিসের দিকে গভীর মনোযোগ দিলে বুঝতে পারবেন যে, হাদিসে বর্ণিত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মাত্র ১টি হলো ‘তাওহিদ’, বাকি চারটি হলো ইবাদত বা আমল সংক্রান্ত। সুতরাং যদি শুধু তাওহীদের স্বীকৃতিদানের দ্বারাই মানুষ জান্নাতে যেতে পারতো, তবে আমল সংক্রান্ত চার চারটি ইবাদত ইসলামের ভিত্তি হতো না।

আরেকটি হাদিসের দিকে দৃষ্টিপাত করুন।

عن جابر بن عبدالله ان النبي صلي الله عليه وسلم قال  بين العَبْدِ وبين الكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاةِ

অর্থাৎ হযরত জাবের রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, ঈমানদার এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্যকারী আমল হল নামায।
সূত্র: আবু দাউদ হাদিস-৪৬৭৮ নাসাঈ-৪৬৪ তিরমিযি-২৬২০ ইবনে মাযা-১০৭৮ (হাদিস : সহিহ)

عن عمرَ بنِ الخطّابِ قال لقد هممتُ أن أبعثَ رجالًا إلى هذِهِ الأمصارِ فلينظُروا كلَّ من كان له جِدَةٌ ولم يَحُجَّ فيضربوا عليهِمُ الجزيَةَ ما هم بِمسلِمينَ ما هم بِمسلِمينَ
السيوطي (ت ٩١١)، الدر المنثور ٣‏/٦٩٣  •  إسناده صحيح

 

এ হাদিস দুটিতে ঈমান এবং কুফরীর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয় হিসাবে নামাজ এবং হজ্বকে উল্লেখ্য করা হয়েছে। আর নামাজ ও হজ্ব যে ইবাদত এটা তো সুস্পষ্ট বিষয়। সুতরাং উপরোক্ত আয়াত-হাদিসগুলো দিয়ে আমরা বুঝতে পারলাম যে, গতানুগতিক শুধু তাওহিদের স্বীকৃতি দিলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে না, বরং আমলও করতে হবে।

মক্কী জিবনে নবীজি কোনো আমলের দাওয়াত দেননি?

হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, মক্কী জিবনে নবিজি সা. কোনো আমলের দাওয়াত দেননি। তারা লিখেছে,

‘নবীজি কোন আমলের দাওয়াত দেন নি।’
সূত্র: প্রিয় দেশবাসী পৃ:৬৬

অথচ নামাজের আইন চালু হয়েছিলো মক্কায় থাকাকালীন সময়ে। এটা সবাই জানেন যে, মি’রাজের রাতেই নামাজ ফরজ করা হয়েছিলো। যার প্রমাণ সহিহ মুসলিমের মি’রাজের লম্বা হাদিস, নবীজি সা. বলেন

فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَبَيْنَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ – حَتَّى قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ

অর্থাৎ এভাবে আমি একবার মূসা (আঃ) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬২

সুতরাং বুঝা গেলো, নামাজের আইন এসেছিলো মি’রাজের রাতে। আর মিরাজ হিজরতের আগেই যে সংগঠিত হয়েছিলো, এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।  সুতরাং নবীজি সা. আমল শিখাননি বলে যে দাবি হেযবুত তওহীদ করেছে, এটা কি নবীজির সা. নামে চরম মিথ্যাচার নয়? আর এ সকল মিথ্যুকদের ব্যাপারে হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস: ৩৪৬১

আমল না করলে জাহান্নামে যাবে:

প্রিয় পাঠক, আমল না করার ফলে যে মানুষ জাহান্নামে যাবে এর দু’টি আয়াত আগে দেখুন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

এক. আল্লাহ বলেন,

وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَا أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَاءكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ مِن نَّصِيرٍ

অর্থ: সেখানে তারা (জাহান্নামীরা) আর্ত চিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, বের করুন আমাদেরকে, আমরা সৎকাজ করব, পূর্বে যা করতাম, তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আস্বাদন কর। জালেমদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।
সুরা ফাত্বির, আয়াত: ৩৭

উক্ত আয়াতে আমল না করার জন্য জাহান্নামীরা আফসোস করবে বলে খোদ আল্লাহ জানিয়ে দিলেন।

দুই.

هَلْ يَنظُرُونَ إِلاَّ تَأْوِيلَهُ يَوْمَ يَأْتِي تَأْوِيلُهُ يَقُولُ الَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَاءتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَاء فَيَشْفَعُواْ لَنَا أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ قَدْ خَسِرُواْ أَنفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ

অর্থ: তারা কি এখন এ অপেক্ষায়ই আছে যে, এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হোক? যেদিন এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হবে, সেদিন পূর্বে যারা একে ভূলে গিয়েছিল, তারা বলবেঃ বাস্তবিকই আমাদের প্রতিপালকের পয়গম্বরগণ সত্যসহ আগমন করেছিলেন। অতএব, আমাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী আছে কি যে, সুপারিশ করবে অথবা আমাদেরকে পুনঃ প্রেরণ করা হলে আমরা পূর্বে যা করতাম তার বিপরীত কাজ করে আসতাম। নিশ্চয় তারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা মনগড়া যা বলত, তা উধাও হয়ে যাবে।
সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৩

উপরোক্ত দু’টি আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, জাহান্নামে যারা যাবে, তারা চিৎকার দিয়ে বলবে, হে রব, আমাদেরকে এ জাহান্নাম থেকে বের করুন, আমল করার জন্য আরেকবার সুযোগ দিন। তাহলে এর দ্বারা বুঝা যায় যে, জাহান্নামীরা কিয়ামতে বুঝবে যে আমল না করার কারণেই তারা জাহান্নামে গেছে। এটা তো পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণীত মহাসত্য।

আরও স্পষ্টরুপে অন্য আয়াতে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে যে, জাহান্নামীদেরকে যখন জিজ্ঞাসা করা হবে,

مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّين

অর্থাৎ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবে, আমরা নামায পড়তাম না। অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।
সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪২-৪৩

যারা যাকাত দেয়না, তারাও জাহান্নামী:

মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَـذَا مَا كَنَزْتُمْ لأَنفُسِكُمْ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার
সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৪-৩৫

নবীজির সা. সুন্নাত নামক আমল না মানলেও জাহান্নামী:

হযরত আবূ হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى

অর্থ: আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
সূত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস: ৭২৮০

প্রিয় পাঠক, এভাবে করে ইসলামের প্রত্যেকটি বিষয় প্রমাণ আনলে কিতাবটি অনেক দীর্ঘ হতে পারে। এজন্য আমল ছাড়ার পরিনাম যে জাহান্নাম এটা প্রমাণ করতে শুধু কয়েকটি উদহরণ পেশ করলাম। এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন, ‘শুধু ঈমান থাকলেই কি জান্নাতে যাওয়া যাবে? নিশ্চয় না। আমলও আবশ্যম্ভাবি। তবে আল্লাহ যদি কারো উপর বিশেষ রহম করেন, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু ইসলামের চুড়ান্ত বিধান হলো, জান্নাতে যেতে গেলে অবশ্যই আমল লাগবে।

Check Also

সংস্কৃতি ও ইসলাম এবং হেযবুত তওহীদের ভ্রান্তি:

ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গভাবে জিবন ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি বিষয়ের বিধি-বিধান ইসলাম জানিয়ে দিয়েছে। ছবি অঙ্কন, মুর্তি-ভাষ্কর্য নির্মান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.