Home > ওয়াজ > আবু বকর রা.

আবু বকর রা.

নবীজি সা. এর পাশে আবু বকর রা.।

এক.

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.) বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর নিকটে বললাম, মক্কার মুশ্রিক কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সর্বাপেক্ষা কঠোর আচরণের বর্ণনা দিন। তিনি বললেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বা শরীফের হিজর নামক স্থানে সালাত আদায় করছিলেন।

إِذْ أَقْبَلَ عُقْبَةُ بْنُ أَبِيْ مُعَيْطٍ فَوَضَعَ ثَوْبَهُ فِيْ عُنُقِهِ فَخَنَقَهُ خَنْقًا شَدِيْدًا فَأَقْبَلَ أَبُوْ بَكْرٍ حَتَّى أَخَذَ بِمَنْكِبِهِ وَدَفَعَهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَتَقْتُلُوْنَ رَجُلًا أَنْ يَّقُوْلَ رَبِّيَ اللهُ

তখন ‘উকবাহ ইবনু আবূ মু‘য়াইত এল এবং তার চাদর দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্ঠনালি পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলল। তখন আবূ বাকর (রাঃ) এগিয়ে এসে ‘উকবাহ্কে কাঁধে ধরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে হটিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এমন লোককে হত্যা করতে চাও যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহ্ই আমার রব।’’ (গাফিরঃ ২৮)
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৩৮৫৬

দুই. হযরত আনাস রা. বর্ণিত, তিনি বলেন,

لقد ضرَبوا رسولَ اللهِ صلّى اللهُ عليْهِ وسلَّمَ مرةً حتى غُشِيَ عليْهِ

একবার কাফেররা নবীজি সা. কে এত মারল যে, নবীজি সা. বেহুশ হয়ে গেলেন,

فقامَ أبو بكرٍ فجعلَ يُنادي: ويلَكم أتقتلونَ رجلًا أن يقولَ ربِّي اللهُ؟ فتركوهُ وأقبلوا على أبي بكرٍ

অত:পর আবু বকর রা. দাঁড়িয়ে গিয়ে বলতে লাগলেন, তোমরা ধ্বংস হও, এমন মানুষকে হত্যা করতে চাও যিনি বলেন, আমার রব আল্লাহ? অতঃপর তারা নবীজি সা. কে ছেড়ে দিয়ে আবু বতর রা. কে মারতে অগ্রসর হলো।
সূত্র: ফাতহুল বারী খ: ৭ পৃ: ২০৭ বাযযার হাদিস: ৭৫০৭

হযরত আইশা (রা ) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সা. -এর সাহাবীগণ রা. যখন একত্রিত হলেন, তখন তারা ছিলেন ৩৮ জন ৷ আবু বকর রা. ভালোবাসতেন নবীজির সা. নূর দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়ুক। ফলে

ألح أبو بكر على رسول الله صلى الله عليه و سلم في الظهور

হযরত আবু বকর রা. প্রকাশ্যে বের হওয়ার জন্যে রাসুলুল্লাহ্ সা. এর সাথে পীড়াপীড়ি শুরু করলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ বললেন,

يا ابا بكر إنا قليل

আবু বকর ! আমরা কিন্তু সংখ্যায় কম ৷ আবু বকর রা. প্রকাশ্যে বের হওয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি করতেই লাগলেন ৷ অবশেষে রাসুলুল্লাহ্ সা. প্রকাশ্যে বের হলেন ৷ অন্যান্য মুসলিমগণ মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ছাড়িয়ে পড়ে ৷ প্রত্যেকে নিজ নিজ গোত্রের মধ্যে অবস্থান নেয় ৷

وقام أبو بكر في الناس خطيبا ورسول الله صلى الله عليه و سلم جالس

হযরত আবু বকর রা. জনসমক্ষে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ সা. পাশে উপবিষ্ট ছিলেন ৷

فكان أول خطيب دعا إلى الله وإلى رسوله صلى الله عليه و سلم

বস্তুত হযরত আবু বকর রা. প্রথম বক্তা, যিনি প্রকাশ্যে লোকজনকে আল্লাহর প্রতি এবং তার রাসুলের প্রতি আহ্বান করেন ৷ মুশরিকগণ মূহুর্তেই হযরত আবু বকরের রা. উপর এবং মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷ মসজিদের বিভিন্ন স্থানে থাকা মুসলমানদেরকে তারা ভীষণ প্রহার করে ৷

وَوُطِئَ أبو بكر وضُرِبَ ضرباً شديدا ودنا منه الفاسق عتبة بن ربيعة

হযরত আবু বকর রা. কে তারা পায়ের নীচে ফেলে পিষ্ট করে এবং উৎবা তাকে বেদম মারপিট করে ৷ পাপিষ্ঠ উৎবা ইবনে রাবী’আ তাঁর কাছে আসে এবং

فجعل يضربه بنعلين مخصوفتين وَيُحَرِّفُهُمَا لوجهه، ونزا على بطن أبي بكر حتى ما يُعْرَفُ وَجْهُهُ من أنفه

পুরোনো ভারী দুটো জুতাে দিয়ে তাকে প্রহার করে, সেগুলো দিয়ে তাঁর চোখে, মুখে আঘাত করে এবং তার পেটের উপর উঠে দাঁড়ায় ৷ তাঁকে এমন প্রহার করা হয় যে, তাঁর নাক-মুখ চেনা যাচ্ছিল না ৷ সংবাদ পেয়ে বানু তায়মের লোকেরা দ্রুত সেখানে হাযির হয় এবং মুশরিকদের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করে ৷

وحملت بنو تيم أبا بكر في ثوب حتى أدخلوه منزله

একটি কাপড়ে মুড়িয়ে বলনু তায়মের লোকেরা তাঁকে তুলে নেয় এবং তাঁর বাড়ীতে নিয়ে পৌছায় ৷

ولا يشكون في موته

তাঁর মৃত্যু যে আসন্ন তাতে তাদের কোন সন্দেহ ছিল না ৷

এরপর বনু তায়ম গোত্রের লোকজন মসজিদে ফিরে গিয়ে মুশরিকদেরকে শাসিয়ে দিয়ে বলে,

والله لئن مات أبو بكر لنقتلن عتبة بن ربيعة

আবু বকর রা. এর মৃত্যু হলে আমরা উৎবা ইবনে রাবী’আকে খুন করে তাঁর প্রতিশোধ নেবো ৷ এবার তারা তাঁর নিকট ফিরে আসে এবং

فجعل أبو قحافة وبنو تيم يكلمون أبا بكر

আবু কুহাফা ও বনু তায়মের লোকেরা তাকে ডাকতে থাকে ৷ (তিনি বেহুশ ছিলেন যার কারণে জবাব দিতে পারছিলেন না) এক সময় তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন৷

حتى أجاب فتكلم آخر النهار

দিনের শেষ ভাগে তিনি কথা বলতে শুরু করেন এবং সর্বপ্রথম যে কথাটি বললেন, তা হলো,

ما فعل رسول الله صلى الله عليه و سلم

“রাসুলুল্লাহ্ সা. কোথায় , তিনি কেমন আছেন?” এ কথা শোনে লোকজন তাঁকে ভর্ৎসনা করে এবং একা রেখে চলে যায় ৷ তারা তাঁর মা উম্মুল খায়রকে বলে যায়, চেষ্টা করে দেখুন

أنظري أن تطعميه شيئا أو تسقيه إياه

ওকে কিছু খাওয়ানাে যায় কিনা ৷ তারা চলে যাওয়ার পর তিনি তাঁকে কিছু খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। আর আবু বকর রা. শুধু বলছিলেন,

ما فعل رسول الله صلى الله عليه و سلم

রাসুলুল্লাহ্ সা. কেমন আছেন ? তাঁর মা বললেন,

والله مالي علم بصاحبك

আল্লাহর কসম, তোমার বন্ধু সম্পর্কে আমি কিছু জানি না ৷ তিনি বললেন, আপনি খাত্তাবের কন্যা উম্মু জামীল এর নিকট যান এবং তার কাছ থেকে জেনে আসুন ৷ তিনি উম্মে জামীলের নিকট গেলেন এবং বললেন, “আবু বকর তো মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্ এর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে ৷ উম্মে জামীল রা. বললেন, আমি আবু বকরকেও চিনি না মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্কেও চিনি না ৷

وإن كنت تحبين أن أذهب معك إلى ابنك

আপনি যদি ভাল মনে করেন, তাহলে আমি আপনার সাথে আপনার ছেলের নিকট যেতে পারি৷ উন্মে খায়র বললেন, তবে চল ৷ উম্মে খায়রের সাথে উন্মে জামীল রা. এলেন ৷ তখন আবু বকর রা. শয্যাশায়ী মুমুর্ষ অবস্থায় ৷ উম্মে জামীল রা. তাঁর নিকটে এলেন এবং এই করুণ অবস্থা দেখে চিৎকার করে বললেন হায়,

والله إن قوما نالوا هذا منك لاهل فسق وكفر وإني لأرجو أن ينتقم الله لك منهم

কাফির ও পাপিষ্ঠের দল আপনার এ কি দুরবস্থা করেছে! আমি নিশ্চিত আশাবাদী যে, আপনার প্রতি জুলুমের প্রতিশোধ আল্লাহ তা’আলা তাদের
থেকে নেবেন ৷ হযরত আবু বকর রা. বললেন,

ما فعل رسول الله صلى الله عليه و سلم

রাসুলুল্লাহ্ সা. কেমন আছেন? উম্মে জামীল রা. বললেন, পাশে তো আপনার মা রয়েছেন, তিনি আমাদের কথাবার্তা শুনছেন ৷ আবু বকর রা. বললেন, তার জন্যে কোন অসুবিধা হবে না ৷ উম্মে জামীল জানালেন, রাসুলুল্লাহ্ সা. সুস্থ ও ভাল আছেন ৷ তিনি এখন কোথায় আছেন আবু বকর রা. জিজ্ঞেস করলেন ৷ উম্মে জামীল রা. জানালেন যে, তিনি এখন ইবনুল আরকাম রা. এর বাড়ীতে আছেন ৷ আবু বকর রা. বললেন,

فان لله علي أن لا أذوق طعاما ولا أشرب شرابا أو آتي رسول الله صلى الله عليه و سلم

আল্লাহর কসম, রাসুলুল্লাহ্ রা. এর সাথে সাক্ষাত না করা পর্যন্ত আমি কোন খাদ্য ও পানীয় মুখে তুলব না ৷ তারা দু’জনে তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেন ৷ কারণ মুসলমানদের অবস্থান ও নবীজির সা. অনুমতি ছাড়া যেতে চাননি।
অবশেষে সন্ধ্যাবেলা যখন পথচারীদের আনাগােনা কমে গেল, লোকজন নিজ নিজ গৃহে চলে গেল,

خرجتا به يتكئ عليهما حتى أدخلتاه على رسول الله صلى الله عليه و سلم

তখন তারা দু’জন আবু বকরকে রা. নিয়ে বের হলেন, তিনি পায়ে ভর করে চলছিলেন এবং তারা তাঁকে রাসুলুল্লাহ্ রা. এর নিকট পৌঁছিয়ে দিলেন ৷

فأكب عليه رسول الله صلى الله عليه و سلم فقبله

রাসুলুল্লাহ্ সা. তাঁর উপর ঝুকে পড়লেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন ৷ অন্যান্য মুসলমানগণও তাঁর প্রতি ঝুকে পড়লেন ৷ তাঁর অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ্ সা. অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন ৷ আবু বকর রা. বললেন, ইয় রাসুলাল্লাহ্,

بأبي وأمي يا رسول الله ليس بي بأس إلا ما نال الفاسق من وجهي

পাপিষ্ঠ উৎবা আমার মুখে যা আঘাত করেছে তা ব্যতীত অন্যত্র এখন আমার খুব একটা ব্যথা বেদনা নেই ৷ এই যে আমার আম্মাজান, তিনি তাঁর সন্তানের প্রতি স্নেহশীল ৷ আপনি তো ববকতময় সত্তা, তাঁকে আল্লাহর পথে আমার দাওয়াত দিন এবং আল্লাহর নিকট দু’আ করুন
আপনার মাধ্যমে যেন আল্লাহ তা’আল তাঁকে জাহান্নামের আগুন থেকে যুক্তি দেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ তাঁর জন্যে আল্লাহর দরবারে দু’আ করলেন এবং তাঁকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানালেন ৷ তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন ৷ তাঁরা একমাস রাসুলুল্লাহ্ সা. এর সাথে ঐ গৃহে অবস্থান করলেন ৷ তখন তাঁরা ছিলেন ৩৯ জন পুরুষ মুসলমান ৷ হযরত আবু বকর রা. যেদিন প্রহৃত হয়েছিলেন, সেদিন হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইসলাম গ্রহণ করেন ৷
সূত্র: আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ খ: ৪ পৃ: ৭৬-৭৭
আস সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ (ইবনে কাসীর) খ: ১ পৃ: ৪৩৯-৪৪০ আর রহীকুল মাখতুম পৃ: ৮০

আবু বকর রা. এর কবরস্থ করার সময় বিস্ময়কর ঘটনা।

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রা. বলেন, যখন আমার পিতা অসুস্থ হয়ে যান, তখন তিনি ওসিয়ত করলেন যে, আমার ইন্তেকালের পর আমাকে নবীজির সা. পবিত্র রওযা মুবারকের নিকটে নিয়ে গিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করতঃ একথা বলবেন যে,

هَذَا أَبُو بكر يدْفن عنْدك يَا رَسُول الله

“ইয়া রসূলাল্লাহ সা. ইনি হযরত আবু বরক ছিদ্দীক্ব রা.। তিনি নবীজি সা. এর পাশে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছুক।

فَإِن أذن لَكِن فادفنوني وَإِن لم يُؤذن لكم فاذهبوا بِي إِلَى البقيع

যদি তিনি তোমাদেরকে অনুমতি প্রদান করেন, তবে সেখানে আমাকে দাফন করবে। আর যদি অনুমতি না মেলে তাহলে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে নিয়ে দাফন করবে।

হযরত আলী রা. বলেন, আমি প্রথম দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,

يَا رَسُول الله هَذَا أَبُو بكر قد اشْتهى أَن يدْفن عِنْد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَقد أوصانا فَإِن آذن لنا دَخَلنَا وَإِن لم يُؤذن لنا انصرفنا

“ইয়া রসূলাল্লাহ, ইনি হলেন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রা. তিনি রাসুলুল্লাহ সা. এর নিকটে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছুক। আর তিনি আমাদেরকে অসিয়ত করে গেছেন যে, যদি আপনি আমাদেরকে অনুমতি দান করেন তবে আমরা প্রবেশ করবো। নতুবা আমরা ফিরে যাবো। হযরত আলী রা. বলেন,

َلم نر أحدا

আমি কাউকে পাশে দেখিনি, কিন্তু

فَرَأَيْت الْبَاب قد فتح فَسمِعت قَائِلا

আমি দেখলাম দরজা মুবারক এমনিভাবেই খুলে গেল। আর আমি একথা বলতে শুনলাম যে,

ادخُلُوا الحبيب إِلَى حَبِيبه فَإِن الحبيب إِلَى الحبيب مشتاق

বন্ধুকে বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দিন। কারণ একথা নিশ্চিত যে, বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে মিলনের আগ্রহী হন।
সূত্র: আল খাসায়িসুল কুবরা (জালালুদ্দিন সুয়ূতী রহ.)
খ: ২ পৃ: ৪৯১-৪৯২ (হাদিসটি যয়ীফ)

Check Also

সুরা ফাতিহার তাফসীর

الحمد لله رب العالمين সর্বদা নিয়ামত দেন: সর্বদার প্রশংসা: উক্ত আয়াত جملة اسمية কেন? কারণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.